চৌদ্দ
গলির ভেতরটায় তেমন মানুষজন নেই। দুধারে বেশ পুরোনো ধরনের বাড়ি। কেমন ঘুম ঘুম ভাব। নম্বর মিলিয়ে হাঁটতে গিয়ে অসুবিধেয় পড়ল অর্ক। তিন-এর পরেই আঠাশের এক। কয়েকজন বয়স্ক লোক এক জায়গায় গুলতানি করছিল। অর্ক তাদের সামনে গিয়ে নম্বরটা জিজ্ঞাসা করল।
‘বাঁক ঘুরেই ডানহাতি লাল বাড়ি।’ ওদের মধ্যে যে সবচেয়ে বুড়ো সে কথাটা বলল। অর্ক পা বাড়াতেই আবার প্রশ্ন হল, ‘কার ঘরে যাবে?’
অর্ক ভাবল উত্তর দেবে না। তারপরেই মত পাল্টালো। বেপাড়ায় ঢুকে কোনরকম রোয়াবি দেখানো উচিত হবে না। কিন্তু কোন মেয়ের নাম বলা কি ঠিক হবে? অথচ উপায়ও তো নেই। সে নরম গলায় বলল, ‘ওখানে মিস টি বলে একজন আছে, তাকে খবর দিতে হবে।’
‘কি খবর?’
চটপট মিথ্যে কথা বলল সে, ‘ফাংশনের।’ ঝুমকি বলেছিল মিস টি এখন চারধারে নেচে বেড়ায়।
‘ফাংশন?’ বুড়ো মুখ বিকৃত করল, ‘এই শালা এক কায়দা হয়েছে। পাড়ার মেয়েরাও এইভাবে বেহাত হয়ে যাবে, তোরা দেখিস!’
‘কি করবে বল, দিনকাল এখন অন্যরকম!’ আর একজন আফসোসে মাথা নাড়ল।
‘তাই বলে এরকম চললে আমাদের পেটে হাত দিয়ে বসতে হবে।’
অর্ক তখনও দাঁড়িয়ে আছে দেখে দ্বিতীয় লোকটি বলল, ‘তুমি যাও ভাই, ফাংশন করো।’ শেষ কথাটায় এমন একটা টিপ্পনি ছিল অন্যান্যরা হেসে উঠল।
বাঁক নিতেই লাল বাড়িটা চোখে পড়ল। একটা বুড়ি ঝাঁটা আর বালতি হাতে সদর দরজায় দাঁড়িয়ে কারো মুণ্ডপাত করছে। দোতলা বাড়িটা খুব পুরোনো বলে মনে হচ্ছে না। অর্ক ধীরে ধীরে কাছে এগিয়ে যেতেই বুড়ি মুখ থামিয়ে হাঁ করে তার দিকে তাকাল, ‘ওমা, এটা আবার কে রে? কি চাই?’
অর্ক নম্বরটা যাচাই করতে চাইল। বুড়ির গলা আবার গন্গনে হল, ‘লম্বরে কি দরকার! গোটা সোনাগাছি জানে এটা বীণাপাণির বাড়ি। এই সাতসকালে কি ধান্দায় এয়েচ বল তো ছোঁড়া?’
‘একজনের সঙ্গে আমার দরকার আছে।’ অর্ক বিরক্ত হল বুড়ির চিৎকারে।
‘আরে বাবা এখানে কেউ দরকার ছাড়া আসে? মন্দির শ্মশান সোনাগাছি, প্রয়োজনে হাজির আছি। ঘুরে এসো নদের চাঁদ। দিন ফুরোলে সন্ধ্যে হলে গায়ে গতরে বা একটু বাড়লে। এই এঁচোড় বয়সে ভর সকালে কে তোমাকে নাড়ু খাওয়াবে গোপাল? ঝেঁটিয়ে ফুটুনি বের করে দেব, যা ভাগ্। আচমকা গলা সপ্তমে উঠল বুড়ির।
অর্ক গম্ভীর গলায় বলল, ‘আপনি এইভাবে কথা বলছেন কেন?’
‘কি ভাবে? কথা বলাও তোর কাছে শিখব নাকি! যখন যৈবন ছিল তখন কত বড় বড় বাবু এসে কান পেতে থাকতো দুটো মধু শুনবে বলে।’
এইসময় আর একটি গুলা শোনা গেল, ‘ও মাসী, ধমকাচ্ছো কাকে?’
‘এই দ্যাখোদিকিনি! গোঁফ উঠেছে কি ওঠেনি এখনই তা দেবার শখ। এগারটার সময় প্রয়োজন মেটাতে এসেছে, আর সময় পেল না। এটা হাসপাতাল নাকি? গেলেই ওষুধ লাগিয়ে দেবে।’ বুড়ি সদরে জল ঢেলে দিয়ে দ্রুত হাতে ঝাঁটা চালাতে লাগল। জলের ছিটে লাগছে দেখে লাফিয়ে সরে দাঁড়াল অর্ক। তখনই সে মধ্যবয়সিনীকে দেখতে পেল। মোটাসোটা, গোল মুখ, চোখ এখনও ফুলো, মাথার চুল পিঠময় ছড়ানো। ঠোঁটে পানের শুকনো দাগ, কথা বলার সময় লালচে দাঁত দেখা গেল, ‘কি চাই?’
এই কি মিস্ টি? অর্ক মনে মনে মাথা নাড়ল। দূর! ওই শরীরে নাচ হয়? মিস্দের যে সব ছবি বিজ্ঞাপনে সে দেখেছে এ তার ধারে কাছে যায় না। কিন্তু বুড়ির চেয়ে মহিলা অনেক ভদ্র। সে বুড়িকে এড়িয়ে কাছে এসে বলল, ‘উনি আমাকে মিছিমিছি আজে বাজে কথা বলছেন। আমি—।’
চট করে ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে ইঙ্গিত করল মহিলা, তারপর ইশারায় ভেতরে ঢুকতে বলল। বুড়ির গলা তখন চিরে যাচ্ছে, ‘ছা ছ্যা, এত পয়সার লোভ, ভর সকালে ঘরে তুললি? এক কাপ চা খেতে চাইলে ঘুরিয়ে নাক দেখাস। আজ আমি কোন কথা শুনছি না। দুটো টাকা না দিলে কুরুক্ষেত্র করব।’
একতলার ভেতরে বাঁধানো উঠোন। তার ধার ঘেঁষা বারান্দা দিয়ে মহিলার পেছন পেছন পা ফেলতেই অবাক হয়ে গেল সে। বিভিন্ন বয়সের মেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁত মাজছে কাপড় কাচছে উঠোনের কলে। অর্ককে দেখতে পেয়েই একজন কি টিপ্পনি কাটতেই সবাই হেসে গড়িয়ে পড়ল। একটি কালো মেয়ে বেসুরো গলায় চিৎকার করল, ‘আ গিয়া মেরে লাল, কর দিয়া কামাল।’
এসব যে তার উদ্দেশ্যেই বুঝতে অসুবিধে হবার কথা নয়। হঠাৎ কেমন অসহায় বোধ করতে লাগল অর্ক। এটা যে খারাপ মেয়েদের বাড়ি তাতে আর সন্দেহ নেই। খান্না সিনেমার সামনে দাঁড়ানো মেয়েদের সে দেখেছে। এই বাড়িতে মিস টি থাকে এবং ঝুমকি তার কাছে এসেছে, কি আশ্চর্য! একটা বাচ্চা মা মা বলে কাঁদতে কাঁদতে আর একজনের আঁচল ধরল। তাকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে অর্ক প্রবল নাড়া খেল। খুরকিরা প্রায়ই বলে, খানকির বাচ্চা! ওই উদোম বাচ্চাটিকে দেখে সে কথা কি বলা যায়?
ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে মহিলা বলল, ‘এসো।’ তারপর ঘরে ঢুকে মেঝেয় পাতা বিছানা গুটিয়ে নিতে লাগল। অর্ক দেখল, এক চিলতে ঘরের দেওয়ালে শিব ঠাকুরের ছবি। বিছানা বাদ দিলে পা ফেলার যেটুকু জায়গা তাতেই কুঁজো আর হাঁড়ি-কুঁড়ি স্তুপ করে রাখা। চ্যাপ্টা বালিস ফোলাতে ফোলাতে মহিলা বলল, ‘দাঁড়িয়ে রইলে কেন, বসো ভাই। নইলে এক্ষুনি ফ্যান চলে যাবে।’
অর্ক দেখল দেওয়ালের কোণে একটা ছোট্ট ফ্যান আটকানো। শব্দ করে তার ব্লেড ঘুরছে। মহিলা বলল, ‘কি গো, ঘর পছন্দ হচ্ছে না?’
অর্ক পেছন ফিরে মেয়েগুলোকে দেখল। তারা আর এদিকে নজর দিচ্ছে না। সে বলল, ‘আমি অন্য একজনকে খুঁজছিলাম।’
‘অন্য একজন?’ সঙ্গে সঙ্গে মহিলার মুখ কালো, ‘কেন আমি কি ফ্যালনা?’
‘এখানে মিস টি বলে কেউ আছেন?’
‘ও! তুমি তাহলে আমার এখানে বসবে না? ওই মাগীর কাছে এসেছ? মুরোদ আছে ওর কাছে ঘেঁষার?’ হিসহিসিয়ে উঠল মহিলা।
‘আপনি এসব কি বলছেন?’ প্রায় আর্তনাদ করে উঠল অর্ক!
‘ন্যাকা! পাঁচজনে দেখল তুমি আমার ঘরে এসেছ। এখন চলে গেলে ইজ্জত থাকবে?’ উঠে দাঁড়াল মহিলা।
‘আপনি বিশ্বাস করুন আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই। আমি খুব প্রয়োজনে এখানে এসেছি।’ মিনতি করল অর্ক।
‘ওসব বাজে কথা রাখ। আমার বউনি হয়নি এখনও। এখন তোমাকে ছেড়ে দিলে দিনটাই নষ্ট হয়ে যাবে। প্রয়োজন! বুড়ি ঠিকই বলেছিল।’
অর্ক কি বলবে বুঝতে পারছিল না। শেষতক বলে বসল, ‘মিস টি-এর সঙ্গে কথা না বললে আমার জেল হয়ে যেতে পারে!’
‘জেল!’ শব্দটা শোনামাত্র মুখের চেহারা পাল্টে গেল মহিলার। বড় বড় চোখে অর্কর দিকে তাকিয়ে সে জিজ্ঞাসা করল, ‘এর মধ্যে পুলিশের ব্যাপার আছে নাকি?’
নীরবে মাথা নাড়ল অর্ক, হ্যাঁ।
একটু বিব্রত হল মহিলা। তারপর হাত বাড়িয়ে বলল, ‘দশটা টাকা দাও।’
‘কেন?’ ভীষণ অবাক হল অর্ক।
‘ঘরে না বসলে দিতে হবে।’ কঠিন মুখে জানাল মহিলা।
অর্ক বুঝল এর হাত থেকে কোনমতে পরিত্রাণ নেই। সে পকেটে হাত ঢুকিয়ে সন্তর্পণে টাকার গোছা থেকে একটা দশ টাকার নোট বের করে প্রসারিত হাতে ফেলে দিল। তৎক্ষণাৎ পেছনে জলতরঙ্গ বেজে উঠল প্রথমে, তারপর দু’তিনটে সিটি এবং উদ্ভট চিৎকার। মেয়েরা হাততালি দিচ্ছে।
মহিলা টাকাটায় চুমু খেয়ে বলল, ‘ওই সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে ডান দিকের ফেলাট।’ বলে টাকাটাকে পাখার মত করে হাওয়া খেতে লাগল। একজন চেঁচিয়ে উঠল, ‘শোভাদি, বেশ টুপি পরালে সাত সকালে!’
চোখ ঘুরিয়ে দোতলা দেখিয়ে শোভা বলল, ‘দুধ দুইতে এলে তো ভাই একটু আধটু চাঁট সইতেই হবে।’
মেয়েটি বলল, ‘ওমা! মেমসাহেবের ঘরে নাকি?’
‘তাই তো বলছে।’
‘একটু আগে আর একজন ওপরে উঠল। হবু মেমসাহেব!’
অর্ক ততক্ষণে সিঁড়িতে পা রেখেছে। কিন্তু শেষ সংলাপ তার কান এড়ায়নি। যে উঠেছে তাকে এরা পছন্দ করছে না। সে কি ঝুমকি? হবু মেমসাহেব, হাসি পেল অর্কর। তিন নম্বর ঈশ্বরপুকুর লেনে ঝুমকিকে কেউ মেমসাহেব বলে চিন্তাও করতে পারবে না। ধর্মতলায় না গেলে সে নিজেও বিশ্বাস করত না। দোতলায় উঠেই ডান দিকে একটা কোলাপসিব্ল গেট। ভিতরে তালা ঝুলছে। তার পেছনে কাঠের বন্ধ দরজা। বাঁ দিকের বারান্দা খালি। অর্ক দেখল কোলাপসিব্ল গেটের ফাঁকে কলিং বেলের বোতাম, টিপতেই যেন বাজ ডাকল। দরজার গায়ে সুন্দর অক্ষরে লেখা মিস টি।
তিরিশ সেকেণ্ড পরে কাঠের কপাট খুলল। একটি আধাবুড়ো লোক মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘কি চাই?’
‘মিস টি আছে?’
দ্রুত মাথা নাড়ল লোকটা, না, নেই।
যাচ্চলে! ঝুমকি বলেছিল ফাংশনে গিয়েছে কিন্তু সকালেই ফিরে আসার কথা। লোকটা এবার দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছে দেখে সে তাড়াতাড়ি বলে উঠল, ‘আচ্ছা, ঝুমকি, মানে মিস ডি এসেছে? আমি একটা ফাংশনের জন্যে এসেছি।’
এবার বুড়োর মুখ নরম হল। কাঠের দরজাটাকে আধভেজিয়ে ভেতরে চলে গেল লোকটা। ব্যাপার-স্যাপার দেখে অর্কর মনে হচ্ছিল নিচে যাদের দেখে এল তাদের সঙ্গে এই ঘরের বাসিন্দাদের প্রচুর পার্থক্য আছে। এত পাহারা, সতর্কতা!
দরজায় এসেই চমকে উঠল ঝুমকি, ‘তুমি!’
সঙ্গে সঙ্গে মুখচোখে ক্রোধ ফুটে উঠেছিল অর্কর, কিন্তু পেছনে বুড়োটাকে দেখতে পেয়ে সামলে নিল, ‘দেরি হয়ে গিয়েছিল।’
‘তৃষ্ণাদি এখনও ফেরেনি।’ ঝুমকি যে তাকে কাটাতে চাইছে তা স্পষ্ট।
‘জানি। আমি অপেক্ষা করব।’
ঝুমকি খুব অস্বস্তিতে পেছন ফিরে বুড়োর দিকে তাকাল। তারপর সামনে মুখ ফিরিয়ে বলল, ‘কোন সুবিধে হবে না।’
‘সেটা আমি বুঝব। যা কথা ছিল তাই কর।’
অগত্যা নিতান্ত উপায় নেই বলেই যেন ঝুমকি বুড়োকে বলল, ‘খুলে দাও, তৃষ্ণাদির সঙ্গে দেখা করে যাবে।’
বুড়ো লোকটার বোধহয় অর্ককে ঢুকতে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু ঝুমকি দ্বিতীয়বার ইশারা করায় বাধ্য হল তালা খুলতে। কাঠের দরজা পেরিয়ে একটা ভারী পর্দা দেওয়াল থেকে ও দেয়ালে চলে গেছে। তার ফাঁক দিয়ে ঝুমকির পেছন পেছন অর্ক যে ঘরে এল সেখানে সূর্যের আলো ঢোকে না। নীলচে দুটি বাল্ব দু কোণে জ্বলছে। পায়ের তলায় বেশ পুরু কার্পেট, এক কোণে ছয় জন বসতে পারে এমন সাফা। ঘরের অনেকটাই খালি।
ঝুমকি ইঙ্গিত করতেই অর্ক সোফায় আরাম করে বসল। এই ফ্ল্যাটের মালিক বেশ মালদার বোঝা যাচ্ছে। ভেতরে আর একটা ঘর রয়েছে যে ঘরে সূর্যের আলো ঢোকে। বুড়োটা ভেতরে চলে গিয়েছে। ঝুমকি দাঁড়িয়েছিল বেশ জড়সড় হয়ে। অর্ক বলল, ‘তুমি আমাকে কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলে নইলে দশ মিনিট অপেক্ষা করতে পারতে।’
ঝুমকি বলল, ‘না, তুমি ঠিক সময়ে আসনি। তাছাড়া আমি চাইনি তুমি এখানে আসো।’
‘কেন? তুমি আসতে পারো, আমার বেলায় কি দোষ।’
‘জায়গাটা খারাপ।’
‘তুমি এসেছ কেন?’
‘আমি তো খারাপ, পাড়ায় ভাল হয়ে থাকি।’
অর্ক এবার আড়ষ্ট হল। ওর জানাশোনা কেউ নিজেকে কখনও খারাপ বলেনি। হাত উল্টে সে বলল, ‘জেনেশুনে খারাপ হওয়ার কি দরকার?’
হাসল ঝুমকি, ‘নইলে শুধু হাওয়া খেয়ে বাঁচতে হয়। আর কদিন যাক, এই তৃষ্ণাদির মত নাম হয়ে গেলে কোন চিন্তা থাকবে না। তুমি এই জায়গার কথা পাড়ায় গিয়ে কাউকে বলো না।’
অর্ক হাসল, যদি বলে দিই?’
ঝুমকি বলল, ‘জানি না কি হবে। হয়তো তখন আর কাউকেই কেয়ার করব না।’
অর্ক খুঁটিয়ে দেখল ঝুমকিকে। আর পাঁচটা মেয়ের সঙ্গে ওর কোন তফাত নেই। এই বাড়ির নিচের তলায় যারা রয়েছে তাদের দিকে তাকালেই মনের মধ্যে কিরকম যেন হয়। কেমন নির্লজ্জ বেলেল্লাপনা ওদের হাবভাবে। ঝুমকি তার ধারে কাছেও যায় না। কিন্তু তবু ঝুমকি বলছে ও খারাপ! কথাটা মনে আসতেই সে সরাসরি জিজ্ঞাসা করল, ‘খারাপ মানে কি?’
হাসল ঝুমকি, ‘তুমি দেখতেই বড়, বয়স হয়নি।’ তারপর গম্ভীর মুখে জানাল, ‘আমি পয়সা নিয়ে ব্যাটাছেলেদের শরীর দিই।’
‘রোজ?’
‘না। সপ্তাহে দুদিন। নাচ শেখা হয়ে গেলে এই ছ্যাঁচড়ামিটা ছেড়ে দেব।’
‘তখন কি করবে?’
‘কেন নাচব! হোটেলে, থিয়েটার হলে, বিজ্ঞাপন দ্যাখোনি? ওতে এখন খুব ভাল পয়সা।’
‘শরীর দেবে না?’
‘ভাল দাম পেলে অন্য কথা তৃষ্ণাদি প্রাইভেট নাচের জন্যে হাজার টাকা নেয়। হোটেলে নাচলে মাসে দুহাজার মাইনে। কেউ যদি রাত কাটাতে চায় তৃষ্ণাদির সঙ্গে তাকে বেশ মাল ছাড়তে হয়। তৃষ্ণাদি আমায় শেখাচ্ছে।’
‘হবু মেমসাহেব!’ কথা মনে পড়ায় এখন উগরে দিল অর্ক, ‘নাম হলে তুমি আর আমাদের পাড়ায় নিশ্চয়ই থাকবে না। তা তোমার তৃষ্ণাদির তো অনেক পয়সা, এই খানকিপাড়ায় থাকে কেন?’
‘সে তুমি বুঝবে না।’
‘বোঝালেই বুঝব।’
‘অন্য পাড়ায় বড় বাড়ি পাওয়ার খুব ঝামেলা। তাছাড়া নাচগান হলে পাড়ার লোক পিছনে লাগে। পুলিশ এসে হিস্যা চায়। এখানে সব ধরাবাঁধা ব্যাপার। মাঝে মাঝেই নিচতলায় পুলিশ আসে রেড করতে কিন্তু ওপর তলায় ওঠে না। তৃষ্ণাদির এখানে বাজে খদ্দের কক্ষনো ঢুকবে না। যারা আসে তারা খুব নামী-দামী লোক। এপাড়ায় থাকলে, কাউকে পরোয়া না করলেই চলে। শুধু পুলিশ আর পাড়ার গুণ্ডাকে টাকা দিলেই হল।’
কথা বলতে বলতে কানখাড়া করেছিল ঝুমকি শেষ করে পাশের ঘরে ছুটে গেল। এখন অর্ক ঘরে একা। নীলচে আলোয় সে ঘরখানার দিকে তাকাল। তারপর উঠে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। সোফার পেছনে একটা দেওয়াল আলমারি। নানান রকম জিনিস রয়েছে সেখানে। সব শখের ব্যাপার। হঠাৎ ওর চোখ আটকে গেল ছয় ইঞ্চি লম্বা একটি ধাতব বস্তুর ওপর। ওটা কি? সন্তর্পণে কাঁচ সরিয়ে জিনিসটাকে বের করে আনল সে। ইস্পাতের ওপর মসৃণ হাড় বসানো হাতল। দুপাশে দুটো বোতাম। একটা টিপতেই সরু ফলা বেরিয়ে এল ইঞ্চি পাঁচেক। মুখটা সামান্য বাঁকানো কিন্তু প্রচণ্ড ধার। বোতাম টিপতেই ওটা লুকিয়ে গেল হাতলের আড়ালে। অন্য বোতামটা টিপতেই ডট পেনের মুখ বেরিয়ে এল, ডটার সমেত।
এইসময় পায়ের শব্দ পাওয়া মাত্র অর্ক জিনিসটাকে পকেটে ঢুকিয়ে দিল। দারুণ জিনিস পাওয়া গেল। এইরকম একটা মালের সন্ধানে ছিল সে এতদিন, এটা সঙ্গে রাখলে মনের জোর অনেক বেড়ে যাবে।
ভেতরের দরজায় তখন ঝুমকি দাঁড়িয়ে আছে। বোধহয় অর্ককে দেখে ওর মনে কিছু সন্দেহ জেগেছিল, চোখাচোখি হতেই বলল, ‘তৃষ্ণাদি এসেছে।’
চট করে সোফায় গিয়ে বসল অর্ক। না জিনিসটা পকেটের ভেতর কোন অসুবিধে করল না। ঝুমকির চোখে তখনও সন্দেহ লেগে ছিল, ‘তুমি কি করছিলে?’
‘কিছু না।’
‘শোন, তোমার পায়ে পড়ি, তৃষ্ণাদির সঙ্গে কোনরকম ঝামেলায় যেও না। ফাংশন করে এলে তৃষ্ণাদির মাথা খুব গরম থাকে।’
‘মাল কামালে তো মানুষের মাথা ঠাণ্ডা হওয়া উচিত।’
আর তখনই সেই বাজ ডাকার শব্দ হল। বুড়ো লোকটা ছুটে এল ভেতর থেকে। ঝুমকি ওর পিছু নিল। গলা পেল অর্ক, ‘ঘুমুচ্ছিলে? গণ্ডা গণ্ডা টাকা দিচ্ছি কি মুখ দেখতে? ট্যাক্সি এলে মাল নামাতে যেতে পারো না। এই যে, তুমি যখন উদয় হয়েছ তখন কি করছিলে? এত করে বলেছি নিচের তলায় সব ডাইনিরা নখ বের করে আছে তবু তোদের হুঁশ হয় না।’
কথা শেষ হওয়ামাত্র যিনি ঝড়ের মত পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকলেন তাকে দেখে চমকে গেল অর্ক। হাতির দাঁতের মত গায়ের রঙ, মাঝারি উচ্চতায় ছিপছিপে শরীরে আটকে আছে জিনসের প্যাণ্ট আর ঢিলে ফুলশার্ট। হাঁটতে হাঁটতে উঁচু হিল জুতো ছুঁড়ে ফেলল ঘরের দু দিকে, মাথার টানটান চুল পাছার ওপর নাচছে এবং অর্ক অদ্ভুত সুন্দর একটা গন্ধ পেল আচমকা। অর্ক যে ঘরে বসে আছে সে খেয়াল নেই, সটান ঢুকে গেল পাশের ঘরে। যেটুকু দেখা গেল তাতেই অর্কর মনে হল মেমসাহেব একেই বলে। নিচের মেয়েগুলো কিংবা ঝুমকির সঙ্গে এর আকাশপাতাল তফাত। বরং বিলাস সোমের মেয়ে যদি—। না। মাথা নাড়ল অর্ক। বিলাস সোমের মেয়ের মধ্যেও এই ঝিলিক নেই। ঝিলিক শব্দটা ভাবতে পেরে নিজেরই মজা লাগছিল। বুড়ো লোকটা ততক্ষণে জুতোজোড়া কুড়িয়ে নিয়ে ভেতরে ছুটেছে। ঝুমকি ভারী পায়ে ভেতরের দরজায় গিয়ে দাঁড়াল। তারপরেই সংলাপ শুরু হল।
‘কখন এসেছিস?’
‘একটু আগে।’
‘হঠাৎ?’
‘এমনি।’
‘না। এমনি আসার মেয়ে তুমি নও। কাল তো অত টাকা নিয়ে গেলি আজ আবার কি দরকার? আমি তোকে বলেছি একা একা এখানে আসবি না। পেছন পেছন মাতালগুলো ছুটবে। এই বেশ্যাপাড়ায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। ও হ্যাঁ, এসেছিস ভাল করেছিস। পরশু রাত্রে বজবজে একটা ফাংশন আছে। আর একজনকে নিয়ে যেতে হবে। তুই যাবি?’
‘যাব।’
‘কাল দুপুরে বাদল আসবে, মিউজিক-এর সঙ্গে রিহার্সাল দিবি।’
‘আচ্ছা।’
‘দুশো টাকা কম দিয়েছে। হারামির ঝাড় সব। নাচ শুরু করতে না করতেই হামলে পড়ে। শরীরটার আর কিছু বাকি নেই। পুতুলের মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
‘তৃষ্ণাদি!’
‘কি হল? ন্যাকামি করবি না। আমার মেজাজ গরম আছে।’
‘একজন তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে!’
‘কে কোথায়?’
‘বাইরের ঘরে। আমার পাড়ার ছেলে।’
‘ছেলে। পাড়ার ছেলেকে এখানে এনেছিস? আমার সঙ্গে তার কি দরকার?’
‘ওই হার—।’
‘কি হার?’
‘যেটা কাল তোমাকে দিয়েছি।’
‘তার জন্যে তো টাকা দিয়েছি। আমি নেই আর ছোঁড়া এনে তুলেছিস। কোথায় গেল বুড়ো, পই পই করে বলেছি আমি না থাকলে দরজা খুলবে না। উফ্! আর তারপরেই অসম্ভব উত্তেজিত একটি মূর্তি বুমকিকে সরিয়ে দিয়ে এই ঘরে ঢুকল। এতক্ষণ তৃষ্ণা পালের কথার ঝাঁঝ পাচ্ছিল অর্ক এখন পুরো শরীরটাকেই তার ধারালো বলে মনে হল। ইতিমধ্যে প্যাণ্ট শার্ট দূর হয়ে হাত কাটা ঢোলা সেমিজের মত ম্যাক্সি অঙ্গ ঢেকেছে। হাঁটুর সামান্য নিচেই তার শেষ। দুটো সুডৌল হাত আর নিটোল পা শঙ্খিনীর মত শরীর কাঁপাচ্ছে। তীক্ষ্ণ চোখে অর্ককে দেখে তৃষ্ণা জিজ্ঞাসা করল, ‘কি চাই?’
অর্ক প্রথমে ভেবেছিল উঠে দাঁড়িয়ে নমস্কার করবে। কিন্তু প্রশ্ন করার ধরন দেখে মত পাল্টালো। সোফায় হেলান দিয়েই বলল, ‘হার।’
‘তুমি কে?’
‘ঝুমকির পাড়ায় থাকি।’
‘কি নাম?’
‘অর্ক।’
‘অর্ক? এরকম নাম কখনও শুনিনি। এই হার তোমার?’
ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল অর্ক।
‘কিন্তু এটা আমি কিনে নিয়েছি।’ বুকের ওপর থেকে আঙ্গুলের ডগায় লকেটটা তুলে নিল তৃষ্ণা, ‘একবার কিনে নিলে আর তো ফেরত দিই না।’
‘ওটা ঝুমকি বন্ধক রেখেছে, টাকাটা ফেরত দিচ্ছি।’
‘না। আমি বন্ধকের কারবার করি না। যা নিই একেবারেই নিয়ে নিই। কিন্তু এই হার তুমি পেলে কোথায়?’ লকেটটাকে ঠোঁটে চেপে তৃষ্ণা হাঁসের মত এগিয়ে এল সামনে। তারপর উল্টোদিকের সোফায় পা তুলে শরীরের ভর রেখে দাঁড়াল। হঠাৎ অর্কর কান লাল হয়ে গেল। এরকম বিশাল, বাঁধ উপচে পড়া বুক সে কখনও দ্যাখেনি। সোফার ওপরে পা তোলা থাকায় সেদিকেও তাকানো যাচ্ছে না। তৃষ্ণা মুখ ফিরিয়ে ঝুমকিকে বলল, ‘তুই ভেতরে যা। আমি ডাকলে তবে আসবি।’ ঝুমকি আড়ালে চলে যেতে আবার প্রশ্নটা শুনতে পেল অর্ক, ‘তুমি এই হার কোথায় পেয়েছ?’
অর্ক বুঝতে পারছিল সে একটা ফাঁদের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। একটু মরিয়া হয়েই বলল, ‘পেয়েছি। এখন আমার হার। ওটা ফেরত দিন।’
‘মিথ্যে কথা। তুমি এই হার চুরি করেছ।’
‘মুখ সামলে কথা বলবেন। আমি চোর নই।’ ফুঁসে উঠল অর্ক।
‘চুপ করো। এখানে মাস্তানি দ্যাখাতে এসো না। আমি ইচ্ছে করলে—! যা জিজ্ঞাসা করছি তার জবাব দাও।’
‘আমি কারো চাকর নই।’ উঠে দাঁড়াল অর্ক, ‘বেশী বাতেলা না করে মালটা খুলে দিন।’ তারপর পকেট থেকে ঝুমকির দেওয়া টাকাগুলো বের করে ছুঁড়ে দিল টেবিলের ওপর।
চোখ ছোট করে ওকে দেখল তৃষ্ণা, ‘তুমি খুব ছোট। নইলে এতক্ষণে কথা বন্ধ করে দিতাম। আমি তুড়ি বাজালে এই গলির গুণ্ডারা কুকুরের মত ছুটে আসে। এই হার তুমি চুরি করোনি?’
‘না।’
‘কোথায় পেয়েছ?’
‘বলব না।’
‘এই হার তোমার?’
‘হ্যাঁ।’
‘কি লেখা আছে এর লকেটের ভেতরে?’
এইবার হোঁচট খেল অর্ক। অ্যাকসিডেণ্টের পর কখনও ভাল করে হারখানা সে দেখার সুযোগ পায়নি। ভেতরে কি লেখা আছে তা ওর জানা সম্ভব নয়।
‘যা ইচ্ছে লেখা থাকতে পারে, তার মানে এই নয় যে আমি চুরি করেছি!’
তৃষ্ণা হাসল। তারপর ধমকের গলায় ডাকল, ‘এদিকে এসো!’
অর্ক বিরক্ত চোখে তাকাল।
‘এদিকে আসতে বলছি।’
এবার আর অপেক্ষা করতে পারল না অর্ক। ধীরে ধীরে কাছে গিয়ে দাঁড়াল! যত কাছে যাচ্ছিল সেই মিষ্টি গন্ধটা তত বাড়ছিল। গলা তুলে তৃষ্ণা বলল, ‘লকেটটা দ্যাখো, এই হারখানা?’
মুখ নামিয়ে তাকাতেই নিঃশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম। হলদে মাখনের দুই গোল বলের ভাঁজে যে হার এবং তার লকেট সেটা চিনতে ভুল হল না। কোনরকমে মাথা নাড়ল সে, হ্যাঁ।
তৃষ্ণা মাথাটা পেছনে হেলিয়ে লকেটটায় চাপ দিতেই ওটা খুলে গেল। সিরসিরে গলা কানে এল, ‘বুকের দিকে তাকাতে হবে না, লকেটে কি লেখা আছে?’
অর্ক পড়ল, তৃষ্ণা পাল। পড়ামাত্র বোবা হয়ে গেল অর্ক। মিস টি-এর গলায় যে হার সেটা যদি বিলাস সোমের হার হয় তাহলে ওর লকেটে কি করে তৃষ্ণা পাল লেখা থাকবে। সঙ্গে সঙ্গে সন্দেহটা এল; নামটা হার পাওয়ার পরে লেখানো হয়নি তো? মালটা নিজের করে নেওয়ার এটা কায়দাও হতে পারে। সে ঠোঁট কামড়ালো, ‘এটা তো আপনি কাল রাত্রেও লেখাতে পারেন।’
‘তাই? যেন মজা পেয়েছে কথা শুনে এমন ভঙ্গী তৃষ্ণার।
‘হার দিন, আমি চলে যাব।’
মাথা নাড়ল তৃষ্ণা, ‘চলে যাবে মানে? তোমাকে আমি পুলিশে দেব।’ খপ করে হাত ধরল তৃষ্ণা, তারপর ঠেলে অর্ককে বলল, ‘বসো এখানে চুপ করে।’
ক্রমশ একটা ভয় অর্ককে আচ্ছন্ন করে ফেলল। সে চাপা গলায় বলল, ‘আপনি আমায় বিপদে ফেলবেন না, এই হার বিলাসবাবুর।’
‘বিলাস! বিলাসকে তুমি চেন?’
‘একদিন আলাপ হয়েছিল। উনি জানেন হারখানা আমার কাছে আছে। পকেট থেকে পড়ে যাওয়ায় ঝুমকি কুড়িয়ে আপনার কাছে বন্ধক রেখেছে।’
তৃষ্ণা ওর মুখের দিকে তাকাল কিছুক্ষণ। তারপর চেঁচিয়ে ডাকল, ‘ঝুমকি!’ পেছনের দরজায় ঝুমকি আসতেই তৃষ্ণা বলল, ‘ওঘর থেকে তো সব গিলছিস, এ যা বলছে সত্যি?’
‘হ্যাঁ।’ ঝুমকি উত্তর দিল।
‘যা।’
ঝুমকি চলে যাওয়ার পর তৃষ্ণা ওর চোখে চোখ রাখল, ‘বিলাস তোমাকে কেন হার দিতে যাবে?’
আর তখনই অর্ক প্রবল নাড়া খেলো। সেদিন রাত্রে মাল খেয়ে গাড়িতে বিলাস সোম যার নাম বলেছিল সেও তো তৃষ্ণা। এই বাড়ি থেকে বেশী দূরে ওঁর গাড়ি খারাপ হয়নি। যা শুনে মিসেস সোম ফুঁসে উঠেছিলেন স্ট্রীট গার্ল বলে। বিলাস সোমের সম্বন্ধে একটা খারাপ ইঙ্গিত ফুটে উঠেছিল ওঁর গলায়। এবং হ্যাঁ, মনে পড়ছে, হাসপাতালে শুয়েও এই হারখানার ব্যাপার বিলাস চেপে যেতে চেয়েছিলেন ওঁর স্ত্রীর কাছে। অর্কর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, ‘আপনিই তৃষ্ণা?’
‘আমি তৃষ্ণা মানে?’
‘বিলাসবাবু সেদিন আপনার কথা বলেছিলেন।’
‘কবে?’
দিনটা বলল অর্ক। তারপর জুড়ে দিল, ‘ওঁর স্ত্রী আপনার ওপর খুব চটা!’
সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটল মুখের। তৃষ্ণা দ্রুত তার পাশে এসে বসল, ‘তুমি বিলাসের বউকে চেন?’
মাথা নাড়ল অর্ক, হ্যাঁ। তৃষ্ণা এখন ওর গা ঘেঁষে বসে। হারটা বুকের ওপর নেতিয়ে, ‘আচ্ছা, ওর বউকে কি রকম দেখতে?’
‘ভাল। বড়লোকের বউরা যেমন দেখতে হয়।’
‘আঃ। আমার চেয়েও ভাল কিনা তাই বল!’
অর্ক আর একবার দেখল তৃষ্ণাকে। কিন্তু সে নিজেও ঠিক ঠাওর করতে পারল না কে বেশী সুন্দরী। কিন্তু যে সামনে বসে আছে তাকে বেশী সম্মান দেওয়াই ভাল, ‘উনি একটু মোটা, আপনার মত ফিগার—।’
ওকে থামিয়ে দিল তৃষ্ণা, ‘ঠিক আছে। বিলাস তোমাকে কেন হার দিয়েছিল সেটা বলো।’
‘আমাকে না দিয়ে ওঁর কোন উপায় ছিল না।’
‘বউ-এর ভয়ে? কাওয়ার্ড। দোকান থেকে ডেলিভারি নিয়ে আমাকে দিতে এসেছিল সেদিন। অথচ ঘরভর্তি লোক তখন। বসে বসে নেশা করে হারখানা নিয়ে চলে গেল। কত সাধলাম দিল না। বলল, যেদিন তোমাকে একা পাবো সেদিনই পরিয়ে দেব। আর বাইরে বেরিয়েই তোমাকে দিয়ে দিল? আসুক এবার। বউকে এত ভয়!’
অর্ক তাকাল। তারপর মৃদুস্বরে বলল, ‘আপনি আমার একটা উপকার করবেন?’
‘কি?’… তৃষ্ণা তখনও ফুঁসছিল।
‘একটা কাগজে লিখে দেবেন ওঁকে যে হারখানা পেয়েছেন।’
ঠোঁটে হাসি ফুটল তৃষ্ণার, ‘বেশ। ঠিক জবাব হবে।’ তারপর উঠে দেওয়াল আলমারি থেকে কাগজ নিয়ে ক’লাইন লিখে অর্ককে দিয়ে দিল। অর্ক পড়ল, ‘তুমি না দিলেও আমার জিনিস ভগবান পাইয়ে দিয়েছেন। হারখানা সত্যি সুন্দর। তুমি না খুলে নিলে খুলব না। তৃষ্ণা।’
চিঠিটা পড়ার পর অর্ক অনেক চেষ্টা করে নিজেকে সামলালো। না, অ্যাকসিডেণ্টের খবরটা সে দিতে পারবে না। তাছাড়া উনি যখন ভাল হয়ে উঠেছেন তখন আর দিয়েই বা লাভ কি! তার হাত ধরে তৃষ্ণা বলল, ‘তুমি রাগ করো না ভাই, আমি তো জানতাম না তাই তোমাকে আঘাত দিয়েছি। বড্ড মাথা গরম আমার!’