1 of 2

২৮. ওই দ্যাখো পাহাড়

আঠাশ

অনিমেষ বলল, ‘ওই দ্যাখো পাহাড়। হিমালয়।’ বলে হাত তুলে মাধবীলতাকে সামান্য ঠেলল। মাঝের বাঙ্কে মাধবীলতা চোখ খুলে শুয়েছিল। একটু শীত শীত লাগছে, উপুড় হয়ে জানলার বাইরে ফ্যাকাশে আলো দেখতে পেল। আর তখনি ওপরের বাঙ্ক থেকে তড়াক করে লাফিয়ে নামল অর্ক। নেমে জিজ্ঞাসা করল, ‘কোথায়?’

মাঝের বাঙ্কটা টাঙানো থাকায় অনিমেষ নিচে কাত হয়ে শুয়েছিল। মাথাটা জানলার শিকে হেলানো, দৃষ্টি বাইরে। অর্কর প্রশ্নে চোখের ইশারা করল। অর্ক জানলায় ঝুঁকে এল। মাঠ, দূরের রাস্তা পেরিয়ে দিগন্তের ওপরে আকাশের গায়ে ঝাপসা রেখা, সেটা পাহাড় কিনা তা বুঝল না। বুঝল না কিন্তু রোমাঞ্চিত হল। এবং সেই আবেগে জিজ্ঞাসা করল, ‘জলপাইগুড়ি কি পাহাড়ী শহর?’

অনিমেষ মাথা নাড়ল, ‘না। তবে জলপাইগুড়ি জেলায় পাহাড় আছে।’ মাধবীলতা নেমে এল। অনিমেষ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘রাত্রে ঘুমাওনি?’

মাথা নাড়ল মাধবীলতা, ‘নাঃ, ঘুম এল না। কই, কোথায় পাহাড়, দেখি?’

অর্ক বলল, ‘একটু দাঁড়াও, এটাকে নামিয়ে দিই। বাবা, তুমি সরে এস খানিকটা, হ্যাঁ।’ শেকল খুলে দেওয়ার পর ওরা তিনজন আরাম করে পাশাপাশি বসল। ট্রেনটা তখন হু হু করে ছুটে যাচ্ছে। অদ্ভুত একটা হিম বাতাস বইছে পৃথিবীতে। যেন খুব আরামের নিঃশ্বাস শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে। সকাল এখনও হয়নি। দূরের গাছের মাথাগুলোয় কালো ছোপ মাখানো। অনেক দূরের আকাশের গায়ে এখন পাহাড়ের অস্তিত্ব স্পষ্ট। ওরা তিনজনে খানিকক্ষণ নিষ্পলক তাকিয়ে থাকল বাইরে। শেষ পর্যন্ত অনিমেষই কথা বলল, ‘এই রকম দৃশ্য কতকাল দেখিনি!’ মাধবীলতা মাথাটা পেছনের কাঠে হেলিয়ে দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। ওর ঠোঁট সামান্য কাঁপল কিন্তু কোন কথা বলল না। অর্ক খুব নিচু গলায় বলল, ‘আমি কোনদিন দেখিনি।’

কথাটা শুনেই অনিমেষ চমকে তাকাল ছেলের দিকে। তারপর ম্লান হেসে বলল, ‘দেখবি কি করে! কলকাতায় এসব দেখা যায় না।’ এবং এই সময় তার খেয়াল হল সে অর্কর চেয়ে ভাগ্যবান। পনেরো বছর অন্ধকূপে বাস করেছে বলে যে হতাশা আসছিল তা মুহূর্তেই সরে গেল। ওর মনে হল, জীবনে পাইনি পাইনি করেও কিছু পেয়েছে যা অর্ক এখনও পেল না। পরবর্তী জীবনে অর্ক যাই পাক না কেন সেই সোনার ছেলেবেলাটাকে কখনই পাবে না। এ ব্যাপারে সে অনেক ধনী।

কামরায় এতক্ষণ স্থিরঘুম ছিল, এবার শব্দ শোনা যেতে লাগল। সামনের তিনটি বাঙ্কে তিনজন যাত্রীই ঘুমে কাদা। একটা অলস আবহাওয়া এখানে।

মাধবীলতা উঠল। ব্যাগ থেকে তোয়ালে আর পেস্ট বের করে অনিমেষের দিকে তাকাল, ‘বাথরুমে যাবে না?’

অনিমেষ বলল, ‘থাক। রানিং ট্রেনে সুবিধে হবে না।’

মাধবীলতা বলল, ‘খোকা তোমাকে ধরুক। ওখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে কটা বাজবে জানি না ততক্ষণ বাসিমুখে বসে থাকবে?’

অনিমেষ বলল, ‘ঠিক আছে, তুমি ঘুরে এস আগে।’

মাধবীলতা চলে গেলে অর্ক দেখার সুবিধের জন্যে অনিমেষের পাশে এসে বসল। অনিমেষ বলল, ‘চেয়ে দ্যাখ, এদিকের গাছপালা মাঠের চেহারা একদম আলাদা। যত এগোবি তত প্রকৃতির চেহারা পাল্টাবে, মানুষেরও।’

অর্ক চট করে কোন পার্থক্য বুঝতে পারছিল না। কিন্তু হঠাৎ সে দু’দিন ধরে ভাবা প্রশ্নটা এখন করে বসল, ‘তুমি কেন আসতে চাইছিলে না বাবা?’

অনিমেষ অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকাল, একটু ভাবল, তারপর বলল, ‘তুই বুঝবি না।’

‘তুমি বললে নিশ্চয়ই বুঝব। আমি ছোট নই।’

অনিমেষ ঘাড় নাড়ল, ‘না। তুই যদি সত্যি বড় হয়ে থাকিস তাহলে ওখানে গিয়ে বুঝতে পারবি আমি কেন আসতে চাইছিলাম না। আমাকে কিছু বলতে হবে না। আমার বাবার সঙ্গে চিরদিনই দূরত্ব ছিল কিন্তু তাই বলে তাঁর অসুস্থতার খবর পেয়েও আসব না এমন অবস্থা নয়। তবু আমার দ্বিধা হচ্ছিল। কেন হচ্ছিল সেটা ওখানে গিয়ে তোকে বুঝে নিতে হবে।’

অর্ক অনিমেষকে দেখল। তারপর নিচু স্বরে বলল, ‘আমাদের সঙ্গে ওরা কেমন ব্যবহার করবে কে জানে। কোনদিন দ্যাখেনি তো।’

অনিমেষ বলল, ‘যাই করুক, তুই যেন কখনও খারাপ ব্যবহার করিস না। যা করতে বলবে তা বিনা প্রতিবাদে করবি। মনে রাখিস, মানুষ তার ব্যবহার দিয়েই মানুষকে আপন করে নেয়। আর একটা কথা, তোর ওই রকের ভাষা যেন ওখানকার কেউ শুনতে না পায়।’

অর্ক প্রতিবাদ করল, ‘কি আশ্চর্য। আমি কি তোমাদের সঙ্গে রকের ভাষায় কথা বলি? তোমার কি মনে হয় না আমি ঠিক আগের মত নই!’

অনিমেষ মাথা নাড়ল কয়েকবার। সেটা অর্কর কথাকে মেনে নেওয়া বলেই মনে হল। তারপর বলল, ‘কলকাতার পথেঘাটে যেসব কথা শুনতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি জলপাইগুড়িতে সেটা চূড়ান্ত অশ্লীল। ওই ভাষায় ওখানে কেউ কথা বলার কথা ভাবতেও পারে না। জানি না এর মধ্যে কোন পরিবর্তন হয়েছে কি না! তুই তো কখনও ওই পরিবেশে থাকিসনি তাই বললাম।’

এই সময় সামনের সিটের ভদ্রলোক আড়মোড়া ভেঙ্গে বললেন, ‘ডালখোলা চলে গেছে?’ অনিমেষ ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলল।

সঙ্গে সঙ্গে লোকটা ‘আই বাপ’ বলে তড়াক করে উঠে বসতে গিয়ে মাথায় ধাক্কা খেলেন। ওপরের বাঙ্কটার কথা খেয়াল ছিল না তাঁর। হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, ‘ভেরি ব্যাড সিস্টেম।’

অর্ক আর কথা বলতে পারল না। কিন্তু ওর মনে একটা চিন্তার উদয় হল। সে চিরকাল বস্তিতে থেকে এসেছে বলে কি বাবা তার সম্পর্কে ভয় পাচ্ছে? তার আচার ব্যবহারে কি বস্তির ছাপ আছে? অদ্ভুত একটা জ্বালা এবং হতাশাবোধ এল। কিন্তু এই নিয়ে বাবার সঙ্গে তর্ক করার পরিবেশ যে এটা নয়। এই সময় মাধবীলতা ফিরে এল পরিষ্কার হয়ে, এসেই বলল, ‘তাড়াতাড়ি যাও, এখনও সবাই ঘুম থেকে ওঠেনি। ভিড় হয়ে গেলে বিপদে পড়বে।’

অনিমেষ ক্রাচ দুটো আঁকড়ে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করল! সমস্ত শরীর টলছে। দ্রুত ছুটে যাওয়া ট্রেনের কামরা তাকে ভারসাম্য রাখতে দিচ্ছে না। সে মাথা নাড়ল, ‘না, আমি পারব না।’ মাধবীলতারও তাই মনে হয়েছিল। এমনি সমান মাটিতে ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটা এক জিনিস আর ছুটন্ত গাড়িতে আর এক জিনিস। একটু অভ্যেস না থাকলে হয় না। কিন্তু অর্ক ছাড়তে নারাজ। অনিমেষের যে পা একটু ওজন সইতে পারে সেদিকের ক্রাচ রেখে দিয়ে অর্ক বলল, ‘তুমি আমাকে ধরে চল।’

এভাবে যাওয়া সম্ভব হল। একদিকে অর্ক অন্যদিকে ক্রাচে ভর দিয়ে অনিমেষ এগিয়ে গেল। এখনও এই দেশে খোঁড়া কিংবা অন্ধ মানুষকে সবাই মমতা দেখায়, ফলে ওদের পক্ষে বাথরুমের দরজায় পৌঁছাতে অসুবিধে হল না। অর্ক লক্ষ্য করল চারধারে বিছানাপত্র গুটিয়ে মানুষেরা তৈরি হচ্ছে।

পরিচ্ছন্ন অনিমেষকে আসনে ফিরিয়ে দিয়ে এবার অর্ক পেস্ট নিয়ে গেল। বাথরুমের সামনে এর মধ্যেই লাইন পড়ে গেছে। ঠিক বস্তির মত। কাল রাত্রে শিয়ালদায় এই মানুষগুলো কি ভীষণ ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল নিজের নিজের আসন দখল করার জন্যে। সারা রাত সেই অপরিচিত পরিবেশে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে একটু বাদেই চিরকালের মত ছেড়ে চলে যাবে। অর্কর মনে হল এই লোকগুলো সে সব কথা ভাবছে না। হঠাৎ তার খেয়াল হল তাকে ডিঙ্গিয়ে একটা মোটা লোক এগিয়ে গেল। সে খুব ভদ্র গলায় বলল, ‘আপনার আগে আমি আছি। আপনি পেছনে যান।’

লোকটা তার দিকে না তাকিয়ে বলল, ‘আমি আগে ছিলাম, আছি।’

লোকটা বেমালুম মিথ্যে কথা বলছে। অর্কর মাথার ভেতরটা চিনচিন করে উঠল। সে ডান হাত বাড়িয়ে লোকটার কাঁধ স্পর্শ করল, ‘এই যে!’

লোকটা একটু বিরক্তি নিয়ে মুখ ফেরাতেই অর্ক চোখ স্থির রেখে বলল, ‘পেছনে যান।’ লোকটা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, ‘পেছনে যান, মাস্তানি হচ্ছে? বললেই যেন আমাকে পেছনে যেতে হবে। লাটের বাট এসেছে। হুঁ।’

এই সকালে লোকটা যেরকম কুৎসিত মুখভঙ্গী করল তাতে অর্ক আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। ওর গলার মধ্যে বসে যেন খুরকি কথা বলে উঠল, ‘আব্বে, খুব নকশা হচ্ছে?’

তৎক্ষণাৎ লোকটার মুখের চেহারা পাল্টে গেল। চোয়াল ঝুলে গেল যেন, চোখও বড়। এবং চোরের মত সুড়ুৎ করে সামনে থেকে পেছনে চলে এল লোকটা। তারপর ফিসফিস করে বলল, ‘একই ট্রেনে যাচ্ছি, কেউ আগে কেউ পরে, এ তো হবেই।’

লোকটার ভাবভঙ্গী দেখে হাসি পেয়ে গেল অর্কর। রাগটা যেমন এসেছিল আচম্বিতে তেমনি মিলিয়ে গেল। সে খিস্তি করেনি কিন্তু বলার ধরন দেখেই গুটিয়ে গেল লোকটা। এক নম্বরের ভেড়ুয়া। তারপরেই মনে হল এ নিশ্চয় কলকাতার লোক নয়। এই রকম গলার কথা শুনতে কলকাতার লোক অভ্যস্ত। কিন্তু এখন আর কথা না বলাই বুদ্ধিমানের কাজ তবু কৌতূহল চাপতে পারল না সে, ‘আপনি কোথায় থাকেন?’

‘আমি? আলিপুরদুয়ারে। কেন?’

অর্ক আর জবাব দিল না। সে খুশি হল কারণ তার ধারণাই ঠিক। ওর মনে হল বাবা-মা যাই বলুক এই পৃথিবীতে গায়ের অথবা গলার জোর না দেখালে কেউ খাতির করবে না, সব সময় অন্যায়কে মেনে নিতে হবে।

চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে উজ্জ্বল মুখে অনিমেষ বলল, ‘আর মিনিট দশেকের মধ্যে নিউ জলপাইগুড়ি এসে যাবো।’

‘কি করে বুঝলে?’ মাধবীলতা চুল ঠিক করছিল।

‘আমি বুঝতে পারব না?’ অনিমেষের গলায় একটু অহমিকা। সেটা লক্ষ্য করে মাধবীলতা হাসল। অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, ‘হাসলে কেন?’

‘নাঃ।’ তারপরই ওর গলা পাল্টে গেল, ‘আমার খুব ভয় করছে।’

‘ভয় করছে?’ অনিমেষ অবাক হল।

‘আমাকে কিভাবে নেবেন ওঁরা? নতুন বউও নয়, একেবারে পনেরো ষোল বছরের ছেলে সমেত পুত্রবধূ।’

‘আমার জন্যে তো তুমিই ব্যস্ত হয়েছিলে। এত যদি ভয় তাহলে এলে কেন?’

অনিমেষ মুখ ফিরিয়ে নিল। ‘খাবার আছে আর? খিদে পেয়েছে!’

কাল ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগে পরমহংস সন্দেশ আর রুটি দিয়ে গিয়েছিল। পরিমাণে প্রচুর, এখনও তার কিছু রয়েছে। মাধবীলতা একটা বড় সন্দেশ বের করে অনিমেষের হাতে দিল। দিয়ে বলল, ‘পরমহংসের মত বন্ধু হয় না।’

আর তখনই দূরের ঘরবাড়ি এবং অনেকগুলো রেল লাইন চোখে পড়ল। অনিমেষ যেন এক বুক নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, এসে গেছি।’

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে ওরা চারপাশে তাকাল। মাধবীলতা বলল, ‘তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। আগে সবাই বেরিয়ে যাক তারপর না হয় যাওয়া যাবে। অর্ক তুই জিজ্ঞাসা করে আয় জলপাইগুড়ি যাওয়ার কোন ট্রেন আছে কিনা।’ তারপর অনিমেষকে বলল, ‘তুমি তো অনেক দিন আসোনি, ভুল করতেও পার।’

অনিমেষ দুটো ক্রাচে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। স্টেশনটাকে তার একদম অচেনা মনে হচ্ছে। তার স্মৃতিতে জলপাইগুড়িতে যে ট্রেনটা যায় সেটা এখান থেকে ন’টার আগে ছাড়ে না। নিয়মটা যদি এখনও চালু থাকে তাহলে ঘণ্টা দুয়েক চুপচাপ বসে থাকতে হবে।

অর্ক একটা কালো কোর্ট-পরা লোককে জিজ্ঞাসা করল কয়েক পা এগিয়ে। লোকটা তড়িঘড়ি করে বলল, ‘বাসে চলে যান। স্টেশনের বাইরে মিনিবাস পাবেন। না হলে রিকশা নিয়ে জলপাইগুড়ির মোড়ে গেলে সব পাবেন। ট্রেনের জন্যে বসে থাকবেন না। কাল থেকে গোলমাল চলছে।’

অর্ক বলল, ‘আজ কি ট্রেন যাবে না?’

এই সময় মাইকে ঘোষণা করা হল কামরূপ এক্সপ্রেস দেরিতে আসছে। লোকটা ছাড়া পাওয়ার জন্যে বলল, ‘কামরূপে চলে যান। জলপাইগুড়ি রোডে নেমে রিকশা নেবেন।’ অর্ককে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে লোকটা হাওয়া হয়ে গেল।

দার্জিলিং মেলের প্যাসেঞ্জাররা ততক্ষণে প্লাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। অর্ক ওভারব্রিজের দিকে তাকাল। অনিমেষের পক্ষে ওই উঁচুতে ওঠা সম্ভব নয়। সে ফিরে এসে বলল, ‘এখনই যে ট্রেনটা আসবে সেটায় যাওয়া যাবে।’

অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, ‘কোন ট্রেন? জলপাইগুড়িতে কোন দূরের গাড়ি যায় না।’

অর্ক প্রতিবাদ করল, ‘রেলের লোক বলল যাবে!’

মাধবীলতা মাথা নাড়ল, ‘নে ব্যাগটা তোল, একটু চা খাই।’

বাক্স-দোকান থেকে চা বিস্কুট খাওয়া শেষ হতেই ট্রেনটা এসে পড়ল পাশের প্লাটফর্মে। চিৎকার চেঁচামেচি শেষ হলে অর্ক গিয়ে জেনে এল ওই ট্রেন জলপাইগুড়ি শহরের পাশ ছুঁয়ে যাবে। সেখান থেকে খুব সহজেই শহরের মধ্যে যাওয়া যায়। অনেক লোক নিউ জলপাইগুড়িতে নেমে যাওয়ায় ট্রেনটা বেশ খালি হয়ে গেল। কামরূপ এক্সপ্রেসে খুব ধীরেসুস্থে ওরা অনিমেষকে তুলল। প্লাটফর্ম উঁচু থাকায় এখন আর কুলির সাহায্য দরকার হল না, অর্ক একাই পারল। গুছিয়ে বসে অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, ‘দ্যাখো তো আমাদের টিকিট কতদূর পর্যন্ত! মনে হচ্ছে নিউ জলপাইগুড়ি লেখা ছিল।’

মাধবীলতা বলল, ‘ওখানে যখন যাচ্ছি তখন অন্য জায়গা কেন হবে?’ ব্যাগ খুলে টিকিট বের করে চোখের সামনে ধরে অস্ফুটে বলল, ‘ওমা, সত্যি তো, এ যে নিউ জলপাইগুড়ি লেখা। কি হবে?’

অনিমেষ বলল, ‘জলপাইগুড়ি পর্যন্ত টিকিট কাটতে হবে। অর্ক, দ্যাখ তো পারিস কিনা টিকিট কাটতে?’

মাধবীলতা জিজ্ঞাসা করল, ‘এখান থেকে কত ভাড়া?’

অনিমেষ হাসল, ‘কতকাল আসিনি, আমার তো ভুলও হতে পারে। একটা মানুষের সঙ্গে বহুদিন বাদে দেখা হলে তার মনের অনেকটাই অচেনা হয়ে যায় আর এ তো রেলের ভাড়া, বছরে বছরে পাল্টায়। কুড়ি টাকা দাও, ওতে হয়ে যাবে বোধহয়।’

টাকা নিয়ে অর্ক আবার প্লাটফর্মে নামল। টিকিটঘর কোনদিকে? সে একটা কুলিকে জিজ্ঞাসা করতেই জবাব পেল, ‘ওভারব্রিজসে যাইয়ে, একদম বাহার।’ অর্ক যখন ওভারব্রিজের ওপরে ঠিক তখন ওর চোখে পড়ল রঙিন ছোট ছোট কামরা নিয়ে ছোট ইঞ্জিন দাঁড়িয়ে আছে ওপাশে। দার্জিলিং-এর গাড়ি বোধহয়। এখান থেকে দার্জিলিং কতদূর! সে ডানদিকের আকাশে তাকাতেই চমকে গেল। অনেক দূরে পাহাড়ের গায়ে সাদা সাদা চুড়ো, আবছা, কিন্তু বোঝা যায়। ওগুলো কি বরফ? আর তখনি নিচের ট্রেনটা হুইসল বাজিয়ে নড়ে উঠল। অর্ক মুখ নামিয়ে দেখল ট্রেনটা চলা শুরু করেছে। জীবনের শ্রেষ্ঠ দৌড়টা দিল সে। ট্রেনটা তখন প্লাটফর্মের অর্ধেক ছেড়ে গেছে। অর্ক বুঝতে পারছিল না কোন কামরাটা ওদের! এবং এই সময় মাধবীলতার গলা শুনতে পেল। দরজায় দাঁড়িয়ে তার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকছে। একটার পর একটা কামরা সরে যাচ্ছে সামনে থেকে, মায়ের চেহারাটা আরও দূরে চলে যাচ্ছে। অর্ক মরিয়া হয়ে আবার দৌড়াল এবং শেষ পর্যন্ত কামরার হাতলটা ধরে উঠে পড়তেই মাধবীলতা তাকে জড়িয়ে ধরল। অর্ক তখন জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে, চোখ বড় হয়ে গিয়েছে। মাধবীলতা সেই অবস্থায় বলল, ‘ভয়ে আমার বুক হিম হয়ে গিয়েছিল।’

অনিমেষ বলল, ‘ওকে টিকিট কাটতে পাঠানো ভুল হয়ে গিয়েছিল। ট্রেনটা যে চট করে ছেড়ে দেবে ভাবতে পারিনি।’

একটু সুস্থ হয়ে অর্ক বলল, ‘মা, ছোট ট্রেন দেখে এলাম।’

অনিমেষ বলল, ‘ওগুলো দার্জিলিং-এ যায়।’

মাধবীলতার মুখ উজ্জ্বল হল এখন, ‘একবার দার্জিলিং-এ গেলে বেশ হয়, না?’

অনিমেষ ম্লান হাসল, ‘বেশ তো, তোমরা দুজন না হয় ঘুরে এস।’

ততক্ষণে ট্রেনটা দুপাশে মাঠঘাট রেখে ছুটে চলেছে। অনিমেষ বাইরে তাকিয়ে আবার উদাস হল, ‘এদিকের স্টেশনগুলোর নাম খুব অদ্ভুত। বেলাকোবা, আমবাড়ি-ফালাকাটা।’

মাধবীলতা জিজ্ঞাসা করল, ‘কতক্ষণ লাগবে?’

‘এক ঘণ্টার বেশী লাগা উচিত নয়।’ অনিমেষ খুব বিজ্ঞের মত বলল।

পরের স্টেশনটা আসতে অর্ক উঠে গিয়ে দরজায় দাঁড়াল। এখন বুকের ভেতরটা ঠাণ্ডা কিন্তু উত্তেজনাটার ছায়া মনে রয়ে গেছে। মায়ের শরীরটা কিভাবে দ্রুত চোখের সামনে থেকে দূরে চলে যাচ্ছিল। যদি সে ট্রেনটা না ধরতে পারত! একটু ঝামেলা হত কিন্তু সে তো আর হারিয়ে যেত না!

এই সময় ট্রেনটা ছাড়ল আর একজন টিকিট চেকার উঠে এল। খুব নিরীহ চেহারার ভদ্রলোক। কিন্তু ওঁকে দেখে অর্কর খেয়াল হল ওদের এই পর্বের টিকিট কাটা হয়নি। বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করলে জরিমানা এবং জেল দুই হতে পারে—এরকম একটা বিজ্ঞাপন কোথায় যেন দেখেছিল। সে পেছন ফিরে তাকাল, মা এবং বাবাকে এখান থেকে দেখা যাচ্ছে না। চেকার দরজায় দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালেন। অর্ক ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিল। ওর মনে হল টিকিট না থাকার কথা চেকারকে আগেই বলা দরকার। সে সরাসরি বলে ফেলল, ‘শুনুন, আমরা কলকাতা থেকে আসছি। জলপাইগুড়িতে যাব।’

‘ভাল কথা। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে নেমে যেও। এক মিনিট থামে।’ ভদ্রলোক নির্বিকার ভঙ্গীতে বললেন।

‘কিন্তু আমাদের টিকিট ছিল নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত। ওখানে দৌড়ে গিয়েও আমি টিকিট কাটতে পারিনি।’

‘কই দেখি টিকিট?’

‘আমার মা-বাবার কাছে আছে, নিয়ে আসব?’

‘থাক, ছেড়ে দাও।’

‘আমাদের টিকিটটা—।’

‘বলেছ এই ঢের! কজনই বা বলে? আমার কাছে রসিদ বই নেই না হলে টিকিট কেটে দিতাম। আর জলপাইগুড়ি রোডে কেউ চেক-ফেক সাধারণত করে না। যদি করে তখন বলবে মিত্তিরবাবুর সঙ্গে কথা হয়েছে।’ কথা শেষ। ভদ্রলোক ঠিক তেমনি চুপচাপ সিগারেট খেতে লাগলেন। অর্ক ফিরে এসে অনিমেষকে ঘটনাটা বলল। অনিমেষ যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না, ‘সত্যি বলছিস?’

‘হ্যাঁ। বললেন টিকিট কাটতে হবে না।’

একটু ইতস্তত করে অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, ‘তোর কাছে টাকা চায়নি?’

‘না তো। বললেন রসিদ নেই তাই টিকিট কাটতে পারবেন না।’

‘সে তো বুঝলাম, এমনি টাকা চাইল না?’

‘না।’

অনিমেষ মাধবীলতার দিকে তাকাল, ‘আমার সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। ভারতবর্ষে এরকম মানুষ তাহলে এখনও আছে, অদ্ভুত ব্যাপার।’

মাধবীলতা বলল, ‘ভদ্রলোকের সঙ্গে কাগজপত্র নেই বলে গা করেননি।’

অনিমেষ মাথা নাড়ল, ‘উঁহু। এই লোকটা ব্যতিক্রম। ভাবতে পারছি না।’

পাশে বসা একজন যাত্রী এইবার কথা বললেন, ‘মিত্তিরবাবু ঘুষ খান না।’

অর্ক লোকটির দিকে তাকাল। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে উঠেছেন, খুব দীন দশা। অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনি ওঁকে চেনেন?’

‘চিনব না? রোজ এই লাইনে যাতায়াত করি।’

মাধবীলতা ঠাট্টার গলায় বলল, ‘বাটিরা ভাল মানুষ হয় মনে হচ্ছে।’

‘বাটি?’

‘তাই তো! নর্থ বেঙ্গলের লোক বাঙাল আর ঘটি মিশিয়ে।’

অনিমেষ হেসে ফেলল। তারপরই উত্তেজিত গলায় বলল, ‘ওই দ্যাখো চা গাছ।’

গাড়িটা তখন চা বাগান চিরে চলেছে। মাধবীলতা আর অর্ক অবাক হয়ে দেখতে লাগল চায়ের গাছ। অনিমেষ বলল, ‘এ আর এমন কি! আমাদের স্বর্গছেঁড়া চা বাগানে যদি যাও তাহলে চোখ জুড়িয়ে যাবে।’

অর্ক বলল, ‘সেখানে যাবে বাবা?’

তখনি অনিমেষের খেয়াল হল স্বৰ্গছেঁড়ায় এখন কারো থাকার কথা নয়। মহীতোষ জলপাইগুড়িতে চলে এসেছেন। সেই বাগানের কোয়াটার্সে নিশ্চয়ই এখন অন্য লোক রয়েছে। সমস্ত ছেলেবেলাটা জুড়ে যে স্বৰ্গছেঁড়া অটুট ছিল আজ সেখানে গিয়ে দাঁড়াবার কোন সুযোগ নেই। এতদিনে স্বর্গছেঁড়ায় কোন হোটেল হয়েছে? কে জানে! সে মুখে বলল, ‘দেখি!’

নিউ জলপাইগুড়ি রোডের প্লাটফর্ম এত নিচুতে যে অনিমেষের পক্ষে নামা অসম্ভব। সহযাত্রীটি বলেছিলেন ট্রেন এখানে এক মিনিটের বেশী থামে না। তাড়াহুড়ো করে জিনিসপত্র নামিয়ে অর্ক অনিমেষকে প্রায় কোলে করে নিচে নিয়ে এল। এবং তখনই ট্রেনটা ছেড়ে দিল। শব্দটা মিলিয়ে গেলে অনিমেষ মাধবীলতাকে বলল, ‘লাঠি দুটো দাও।’ তারপর ম্লান হাসল, ‘আমার দেশের মাটিতে আমি তোর কোলে চেপে নামলাম।’ ওকে খুব বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল।

মাধবীলতা ক্রাচ এগিয়ে দিয়ে উজ্জ্বল চোখে চারপাশে তাকাচ্ছিল। একটা মাঝারি কিন্তু ন্যাড়া স্টেশন। কোন মানুষজন নেই, দোকানপাট নেই। এমন কি বাইরে তাকালে শুধু মাঠ ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না। সে অর্ককে বলল, ‘দ্যাখ স্টেশনের কি অবস্থা! একদম মরুভূমি।’

অনিমেষ সামলে নিয়েছিল এর মধ্যেই। এতক্ষণ ট্রেনে সে একরকম ছিল। কিন্তু জলপাইগুড়িতে পা দেওয়ামাত্র বুকের ভেতর কেমন করে উঠেছিল। নিজেকে সংযত রাখার আপ্রাণ চেষ্টায় সে বলল, ‘আসলে এটা জলপাইগুড়ির আসল স্টেশন নয়। শহরটাও অন্যদিকে। চল, আর দাঁড়িয়ে থেকে লাভ কি!’

অর্ক অবাক হয়ে দেখল গেটে কোন লোক নেই যে তাদের কাছে টিকিট চাইবে। চমৎকার! এই এতটা পথ তারা দিব্যি বিনা টিকিটে চলে এল? বাইরে দুটো রিকশা দাঁড়িয়ে আছে। বাকিরা যাত্রী নিয়ে রওনা হয়ে গিয়েছে। অনিমেষকে রিকশায় তুলতে এবার রিকশাঅলার সাহায্য দরকার হল। আর এসব যত হচ্ছে তত মেজাজ খিঁচড়ে যাচ্ছে ওর। মাধবীলতা পাশে উঠে বসতেই চাপা গলায় বলল, ‘এই জন্যে আসতে চাইনি!’

‘কেন, আমাদের তো কোন অসুবিধে হচ্ছে না। তুমি মিছে ভাবছ!’

রিকশা দুটো সরু পিচের রাস্তা দিয়ে মিনিট দশেক ছুটে এল দুপাশে মাঠ আর চাষের ক্ষেত রেখে। তারপর সামান্য কিছু ঘরবাড়ি যাদের শহুরে বলে মনে হয় না। অর্ক জিনিসপত্র নিয়ে আগের রিকশায় যাচ্ছিল। সে কোনদিন কলকাতার বাইরে আসেনি এবং ততক্ষণে তার মনে হল জলপাইগুড়ি নেহাতই একটা গ্রাম। অথচ বাবা এই শহর নিয়ে কত না কথা বলত! হঠাৎ তার চোখে পড়ল একটা বিশাল ন্যাড়া সিমেন্টের গেট। তার ফাঁক দিয়ে দূরে প্রাসাদ দেখা যাচ্ছে। এরকম বাড়ি কলকাতাতেও কম দেখা যায়। সে মুখ ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘বাবা, এটা কি?’

অনিমেষ চেঁচিয়ে জবাব দিল, ‘ওটা জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি। এখানে এককালে বিরাট মেলা বসত। এখন তো রাজারা নেই, মেলা হয় কিনা কে জানে।’

রিকশাঅলা বুড়ো। খানিকটা যাওয়ার পর লোকটা বলল, ‘এটা রায়কত পাড়া।’ অর্ক এবার ধারণাটা পাল্টালো। না, সত্যিই শহর। যদিও বেশীর ভাগই একতলা বাড়ি কিন্তু আর গ্রাম বলে মনে হচ্ছে না। রিকশাঅলা নিজের মনে বলে যাচ্ছে, ‘ওইটে জেলখানা, ওই রাস্তায় দিনবাজার।’ আর তখনই পেছনের রিকশাঅলা চেঁচিয়ে ওদের থামতে বলল। অর্ক মুখ ঘুরিয়ে দেখল মাধবীলতা তাকে হাত নেড়ে ডাকছে। সে রিকশা থেকে নেমে এগিয়ে যেতেই মাধবীলতা বলল, ‘দ্যাখ তো এখানে মিষ্টির দোকান আছে কিনা! তাহলে সন্দেশ কিনে আন।’ সে ব্যাগ খুলতে যেতেই অর্ক বলল, ‘আমার কাছে তো টাকা আছে, টিকিটের জন্যে দিয়েছিলে।’

খোঁজ করে করে একটা নদীর ওপর দিয়ে ওপারে গিয়ে সে সন্দেশ কিনে আনল। জায়গাটায় বেজায় ভিড়। রিকশা আর সাইকেলে ঠাসাঠাসি। ও ফিরে আসার সময় নদীটাকে দেখল। ছোট্ট মজা নদী শহরটার মধ্যে দিয়ে গেছে। এই জায়গাটা খুব ঘিঞ্জি। বাবার বর্ণনার সঙ্গে মিলছে না। মায়ের হাতে প্যাকেট দিতে গিয়ে শুনল, ‘তুই রাখ।’

মাধবীলতা হঠাৎ আবিষ্কার করল সে কেমন জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছে। অনিমেষের পাশে বসে আছে রিকশার স্বল্প পরিসরে কিন্তু গায়ে যেন জোর নেই। সে টের পাচ্ছিল যে শরীর ঘামছে। অনিমেষ বলল, ‘এটা সদর হাসপাতাল। এরপরেই হাকিমপাড়া, আমরা এসে গেছি।’

এসে গেছি শুনে মাধবীলতার হাত কেঁপে উঠল। ডান হাত কাঁপছে, অলক্ষণ। অনিমেষ চারপাশে উদগ্রীব চোখে তাকাচ্ছিল। একটাও চেনা মুখ দেখতে পাচ্ছিল না। হাকিমপাড়া চিরকালই নির্জন, শান্ত। হঠাৎ সে আবিষ্কার করল তার মধ্যে আর কোন উত্তেজনা নেই, যেন যা হবার তা হবে এইরকম একটা মানসিকতায় সে পৌঁছে গেছে। রিকশাঅলাকে নির্দেশ দিল সে বাড়িটার কাছে পৌঁছে যেতে। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে দরজা বন্ধ। অজস্র গাছগাছালিতে বিরাট বাড়িটা ছেয়ে আছে। দীর্ঘদিন চুনকাম না করানোয় একটা স্যাঁতসেঁতে ভাব দেওয়ালে। অর্ক এবং রিকশাঅলা অনিমেষকে ধরে ধরে নামাল। ক্রাচ দুটো বগলে নিয়ে অনিমেষ বলল, ‘ওই বাড়ি!’

অর্ক তাকাল। গাছপালার ফাঁকে যে বাড়িটা দেখা যাচ্ছে সেটা তাদের বাড়ি! এত বড়! অনিমেষ শান্ত গলায় বলল, ‘তুই এগিয়ে গিয়ে নক্ কর, আমরা ভাড়া মিটিয়ে আসছি।’

মিষ্টির বাক্স, সুটকেস আর ব্যাগ দু’ হাতে তুলতে তুলতে অর্ক দেখতে পেল মায়ের আঁচল মাথায় উঠে যাচ্ছে। মুখ ভরতি ঘাম, খুব ভীরু বউ-এর মত মাধবীলতাকে দেখাচ্ছে।

মায়ের এই রূপ সে কখনও দ্যাখেনি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *