1 of 2

২৭. ছুটির দরখাস্ত লিখতে গিয়ে

সাতাশ

ছুটির দরখাস্ত লিখতে গিয়ে মাধবীলতা দ্বিধায় পড়ল। দিন পনের ছুটি চাইতে গেলে সঠিক কারণ দেখাতে হবে। জলপাইগুড়িতে যাচ্ছে, শ্বশুর খুব অসুস্থ, এইটুকু লিখতে যে জড়তা ছিল তা মাধবীলতা ঝেড়ে ফেলতে পারল শেষ পর্যন্ত। জড়তা আসার কারণ এতকাল যাদের সঙ্গে কাজ করছে তারা জানে সে বাপের বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন। দু’একজন আরো বেশী জানে, অনিমেষের সঙ্গে তার পরিবারের কোন যোগাযোগ নেই এবং মাধবীলতা একাই সব দায় বহন করছে। আজ এতদিন বাদে বউ শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে এটা সহকর্মীদের কাছে আলোচনার ব্যাপার হবে। এবং হলও তাই। দরখাস্ত দেওয়ার মিনিট পনের পরেই সৌদামিনী সেনগুপ্তা ডেকে পাঠালেন। ঘরে ঢোকামাত্র চোখ তুললেন, ‘কি হল?’ মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল মাধবীলতা। দরখাস্ত না ভূত দেখছেন বোঝা যাচ্ছে না। সে বলল, ‘আমাকে ছুটি দিতে হবে।’

‘তা তো বুঝলাম। কিন্তু তুমি শেষ পর্যন্ত সারেণ্ডার করলে,’ বিস্ময় স্পষ্ট প্রধান শিক্ষিকার গলায়। মাধবীলতার মনে হল কণ্ঠস্বরে কিছুটা আফসোসও আছে।

‘সারেণ্ডার কেন বলছেন? ওঁর যাওয়ার খুব প্রয়োজন, তাই—।’

‘কি হয়েছে?’

ব্যাগ থেকে টেলিগ্রামটা বের করে দিল সে। সৌদামিনী পড়লেন। তারপর নিজের মনেই বললেন, ‘মৃত্যু মানুষকে দুর্বল করে দেয়! কিন্তু তুমি যদি অ্যাকসেপ্টেড না হও, ধরো ওরা যদি জোর করে তাদের পঙ্গু ছেলেকে আটকে রেখে দেয়? তাহলে তুমি কি করবে?’

মাধবীলতা বলল, ‘এসব কিছু হবে না।’

কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই টিচার্সরুমে ঢুকে নীপা চেঁচিয়ে উঠল সবার সামনে, ‘এই, তুমি খবরটা চেপে গিয়েছিলে? শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছ?’

সঙ্গে সঙ্গে সবকটা মুখ তার দিকে ফিরতেই সে লজ্জা পেল। এই লজ্জা কেন আসে তা বোঝা মুশকিল কিন্তু মেয়ে হয়ে জন্মালে এই লজ্জাটুকুই খুব আনন্দের হয়। তবু মুখ গম্ভীর করল মাধবীলতা, ‘আর নাটক করো না। ষোল বছরের ছেলেকে নিয়ে আমি যেন নতুন বউ যাচ্ছি, কি যে বলো! ওঁর বাবা খুব অসুস্থ, দেখতে চেয়েছেন, না গিয়ে উপায় নেই।’

নীপা পাশে বসে বলল, ‘যাক মরণকালে চৈতন্য হয়েছে তাহলে!’

মাধবীলতা সঙ্গে সঙ্গে মুখ খুলল, ‘ছি! এভাবে বলো না।’

নীপার কথাটা ভাল লাগল না, ‘বাজে কথা বলো না। এত বছর ধরে ছেলে, ছেলের বউ, নাতির খবর রাখল না, আজ বিপদের সময়—, আমি হলে যেতাম না।’

সুপ্রিয়া বললেন, ‘নীপা, তোমার তো বিয়ে হয়নি, তুমি বুঝবে না।’

আর যাই হোক, সবাই তার দিকে নতুন চোখে এই যে তাকিয়ে আছে সেটা স্বস্তি দিচ্ছিল না ওকে। টিচার্সরুম ছেড়ে সে সোজা অফিসে চলে এল। আজ স্কুলে এসেই দরখাস্ত করেছিল টাকার জন্যে। হাত একদম খালি, নতুন জায়গায় যাচ্ছে, সেখানে অসুস্থ লোক, কিরকম খরচ হবে তা কে জানে।

যা চেয়েছিল তা পাওয়া গেল না স্কুল থেকে। ফলে সুপ্রিয়া করের কাছ থেকে আবার ধার করতে হল। এখন তিনজনের যাওয়া আসায় চারশ বেরিয়ে যাবে। আর পরমহংস যদি যায় তাহলে ওর ভাড়াটাও দেওয়া উচিত। দেড় হাজার টাকা ব্যাগে নিয়ে যখন মাধবীলতা বাড়িতে ফিরল তখন বেলা একটা। টাকাটার জন্যে সুপ্রিয়ার বাড়িতে যেতে হয়েছিল তাকে। এসে দেখল অর্ক স্কুলে গিয়েছে, অনিমেষ চিৎ হয়ে শুয়ে কি ভাবছে। স্টোভের পাশে ভাত তরকারি নামানো। ঘর অগোছানো। অনিমেষ মুখ ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘এত দেরি হল?’

মাধবীলতা বলল, ‘হয়ে গেল।’ সে দেখল কোনরকম গোছগাছ হয়নি। যাওয়ার কোন প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না। সে ব্যাগটা টেবিলে রেখে চেয়ারে শরীর ছেড়ে দিয়ে আঁচলে মুখ মুছল। তারপর স্পষ্ট গলায় জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার কি ইচ্ছে?’

‘কিসের?’ অনিমেষ চোখ বন্ধ করল।

‘সকালে বের হবার আগে বলে গেলাম শুনতে পাওনি।’

‘ও। আরে দ্যাখো পরমহংস টিকিট পায় কিনা। অত সোজা নয়, গেলেই যেন রিজার্ভেশন পাওয়া যাবে। কাগজে অত লেখালেখি হচ্ছে দ্যাখোনি!’

‘যদি পায়?’

‘আগে পাক! তাছাড়া এভাবে ভিখিরির মত যাওয়ার কোন মানে হয় না।’

‘তোমার বাবা যেতে বলেছেন!’

‘বলেছেন কিন্তু কাল থেকে তোমাকে বোঝাতে পারছি না আমি গিয়ে কি করব। কোনরকম আর্থিক কায়িক সাহায্য করার ক্ষমতা আমার নেই। আমার মুখ দেখলেই ওঁর সব অসুখ সেরে যাবে? ভেবেচিন্তে কথা বল।’

‘পরিশ্রম আমি করতে পারি, অর্ক পারে। আর টাকার জন্যে চিন্তা না করলেই হবে। হাজার খানেক টাকা ওখানে খরচ করতে পারব।’

অনিমেষ চোখ খুলল, ‘তুমি আবার ধার করলে?’

মাধবীলতা উত্তর দিল না। চেয়ার ছেড়ে উঠে আলনার দিকে এগিয়ে গেল। এই সময় অনিমেষ অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলল, ‘খুব অন্যায় করেছ। আজ বাদে কাল তোমাকে নতুন বাড়ির টাকা দিতে হবে সে খেয়াল আছে?’—

‘নতুন বাড়িতে যাওয়ার চেয়ে এইটে বেশী জরুরী।’

‘আশ্চর্য! তুমি বাড়িটা ছেড়ে দেবে?’

‘পেরে না উঠলে ছেড়ে দিতে হবে।’

অনিমেষ কিছুক্ষণ মাধবীলতার পিঠের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘নিজের সর্বনাশ করে অন্যের উপকার করতে যাওয়ার কোন যুক্তি নেই।’

এবার মাধবীলতা ঘুরে দাঁড়াল। এইসব কথা যে তাকে আলোড়িত করছে তা তার মুখের অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট। ভাঙ্গা গলায় সে বলল, ‘আমাকে তোমার খুব হ্যাংলা মনে হচ্ছে, না?’

এই সময় দরজায় ছায়া পড়ল। প্রশ্নটা করেই মাধবীলতা দেখল অর্ক দাঁড়িয়ে আছে। নিজেকে সংবরণ করতে যেটুকু সময় লাগল তাতেই মাধবীলতার মনে হল এর চেয়ে মরে যাওয়া ভাল ছিল। যে মুখভঙ্গীতে সে কথাগুলো উচ্চারণ করেছে তা কি ছেলের চোখে পড়েছে, মাধবীলতা নিশ্চিত ছিল না। কিন্তু তৎক্ষণাই সে বলতে পারল, ‘কিরে, এত তাড়াতাড়ি চলে এলি?’

‘বা রে। যদি যেতে হয় গোছগাছ করতে হবে না?’ অর্ক বইপত্র টেবিলে রেখে অনিমেষকে জিজ্ঞাসা করল, ‘একি, তোমার এখনও স্নান হয়নি?’

‘আমার আজ স্নান করতে ইচ্ছে করছে না। শরীরটা ঠিক নেই।’ অনিমেষ উঠে বসল, তাছাড়া যাব যাব করে নাচলেই হয়ে যাবে? তোমার স্কুল নেই? এক বছর নষ্ট হয়েছে তবু খেয়াল হচ্ছে না?’

অর্কর কপালে ভাঁজ পড়ল। সে মাধবীলতার দিকে একবার তাকিয়ে আবার অনিমেষকে দেখল, ‘আমার জন্যে চিন্তা করতে হবে না।’

‘মানে?’ আঁতকে উঠল যেন অনিমেষ।

‘আমি আর স্কুল করব না।’

‘স্কুলে পড়বে না? কি অশ্বডিম্ব করবে?’

‘এক্সটারনাল ক্যাণ্ডিডেট হিসেবে ফাইন্যাল দেব। সামনের বছরেই। আমার যদি এক বছর নষ্ট না হত তাহলে ওই সময়েই পাশ করতাম।’

অনিমেষের যেন চিন্তাভাবনা এসব ঢুকছিল না। এই সময় মাধবীলতা বলল, ‘যা স্নান করে আয়।’

অর্ক বলল, ‘মা, তোমরা যাবে না?’

‘তোর বাবার ইচ্ছে নয়।’

‘বাবা তো কোথাও যেতে চায় না। কিন্তু নিজের বাবা মরে যাচ্ছে আর তা শুনে দেখতে যাবে না, আশ্চর্য!’ অর্ক নিচু গলায় বললেও কথাগুলো অনিমেষের কানে সরাসরি চলে এল। সে চিৎকার করে উঠল, ‘তুমি ছেলেটাকে তাতাচ্ছ কেন? আমি যাব না স্পষ্ট করে বলেছি?’

‘আমি তাতাচ্ছি!’ মাধবীলতা যেন জমে গেল।

‘বাঃ, বাবার ইচ্ছে নয় বলার কি দরকার? আমি তোমাকে নেগেটিভ দিকটা দেখাচ্ছিলাম। এতে ভবিষ্যতে সুবিধে হয়। তুমি চট করে কথাটাকে—!’

‘আমি তোমাকে বলেছি যে তুমি যা চাও তাই হবে।’

‘আমি কি চাইব?’ অনিমেষ মুখ তুলে দরজার বাইরে তাকাল, ‘আমার কিছু চাওয়ার নেই।’

তারপর খুব দ্রুত স্নান খাওয়া সারা হয়ে গেল। ঘরের বাইরে গিয়ে এক বালতি জলে মাথা ধুয়ে নিল অনিমেষ। তারপর খাওয়া শেষ করে খাটের ওপর উবু হয়ে বসে দেখল মা ছেলেতে মিলে গোছগাছ করছে। একটা সুটকেসে সব ধরে গেল কিন্তু এতদিন অব্যবহারে ডালাটা ঠিক বসছে না। অর্ক অনেক কসরৎ করেও ওটাকে বাগ মানাতে পারছিল না। শেষে বলল, ‘এসব আর চলে না।’

মাধবীলতা বলল, ‘একটা নতুন সুটকেসের দাম কত জানিস?’

অর্ক মুখ তুলে বলল, ‘আমরা ওখানে কদ্দিন থাকব?’

‘জানি না। তবে বেশীদিন তো থাকা যাবে না।’

‘বিছানাপত্র নেবে না?’

ছেলের প্রশ্নটা শুনে মাধবীলতা হতভম্বের মত খাটের দিকে তাকাল। ওইসব নিয়ে রাস্তাঘাটে বের হওয়া যায় না। জলপাইগুড়ির বাড়িতে তাদের জন্যে বিছানাপত্র পাওয়া যাবে কিনা তাও সে জানে না। অনিমেষকে জিজ্ঞাসা করেও তো কোন লাভ নেই। সে মাথা নাড়ল, ‘নাঃ। যদি দরকার হয় ওখান থেকে কিনে নেব। বড় শহর, সব পাওয়া যায়, আগে থেকে বয়ে নিয়ে গিয়ে কি হবে।’

গায়ের জোরে শেষ পর্যন্ত সুটকেসটা বশ মানল। একটা সুটকেস আর একটা হাতব্যাগ। চারটে বাজতে যেন খুব দেরি হচ্ছে আজ। এই ঘরে তালা দিয়ে যেতে হবে। দামী জিনিসপত্র বলতে কিছুই নেই তবু যা আছে ফিরে আসার পর তা পাওয়া দরকার। মাধবীলতা বলল, ‘ন্যাড়ার বাবাকে একটু বলবি? আমরা যখন থাকব না তখন যেন এদিকটা দ্যাখে।’

‘দূর! ওকে বলে কি হবে।’ অর্ক মাথা নাড়ল, ‘দাঁড়াও দেখছি।’ অর্ক মাঝে মাঝেই অনিমেষকে দেখছিল। বাবা যে কোন কথা বলছে না এটা লক্ষ্য করছিল। সে বুঝতে পারছিল জলপাইগুড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে বাবার নেই; মায়ের আছে। তারও এতদিন কোন ইচ্ছে হত না, হঠাৎ এখন হচ্ছে। কেন হচ্ছে সে জানে না।

বাইরে বেরিয়ে এসে ও চারপাশে তাকাল। গলির মুখে মোক্ষবুড়ি বসে আছে। আজকাল কোন সাড়াশব্দ করে না। শরীরটা আরও শুকিয়ে শুধু হাড়ের গায়ে চামড়া আটকে আছে। সেই চিৎকার করা গালাগাল এই গলিতে আর ভাসে না। অর্ক দেখল ন্যাড়া আসছে। খুব কায়দা দেখানো শার্ট পরেছে। এরকম মূল্যবান শার্ট ও কোত্থেকে পেল কে জানে!

অর্ক বলল, ‘এই ন্যাড়া, শোন!’

ন্যাড়া যেন বিরক্ত হল। কাঁধ নাচিয়ে বলল, ‘ঝটপট বল, টাইম নেই।’ অর্কর মাথায় যেন রক্ত উঠে গেল। ওইটুকুনি পুঁচকে কথা বলছে ঠিক কোয়ার ভঙ্গীতে। ওর সঙ্গে ঝামেলা করে লাভ নেই। সে নিজেকে ঠাণ্ডা করে বলল, ‘আমরা সাতদিন এখানে থাকব না। ঘরটাকে দেখিস।’

‘থাকবে না? কোথায় যাবে?’

‘আমাদের দেশে।’ কথাটা বলার সময় বেশ আরাম লাগল অর্কের।

‘যা ব্বাবা। তোমারও দেশ আছে? চাবি দাও।’

‘কিসের চাবি?’

‘ঘরের।’

‘চাবি নিয়ে কি করবি?’

‘ওখানেই তাস খেলব তাহলে আর কোন ভয় নেই।’

‘দেখার হলে দূর থেকে দেখিস। আমি এসে যদি দেখি গোলমাল হয়েছে তাহলে কেস খুব খারাপ হয়ে যাবে। ফোট্‌।’ অর্ক হাত নাড়ল। এবং তখনই দূরে পরমহংসকে দেখতে পেল। খুব হন্তদন্ত হয়ে আসছে। ন্যাড়া অর্কর হাত নাড়ার সময় সরে গিয়েছিল এবার চিৎকার করে বলল, ‘দেখতে বলছ দেখব কিন্তু আমি কোন জিম্মা নিচ্ছি না।’

পরমহংস ততক্ষণে এসে গেছে কাছে। বলল, ‘এখানে দাঁড়িয়ে?’

‘এমনি। টিকিট পেয়েছেন?’

মাথা নাড়ল পরমহংস, ‘চল, ঘরে চল বলছি। মা আছে?’

‘হ্যাঁ।’

পরমহংস খুব তাড়াহুড়ো করে হেঁটে চলল আগে আগে। খাটো এবং মোটা শরীর ধুতি এবং পাঞ্জাবিতে এই ছুটে যাওয়া মানাচ্ছিল না। ন্যাড়ার পাশ দিয়ে পরমহংস চলে যাওয়ার পর সে চোখ নাচাল অর্কর দিকে তাকিয়ে। অর্ক উত্তর দিল না কিন্তু বুঝতে পারল এবার ন্যাড়ারা পরমহংসের পেছনে লাগবে। মা মারা যাওয়ার পর খুব দ্রুত ছেলেটা যেন মিনি-মাস্তান হয়ে উঠেছে। সে গম্ভীর গলায় ন্যাড়াকে বলল, ‘আমার কাকা, ফালতু ঝামেলা করবি না।’

পরমহংসকে দেখে মাধবীলতা উদ্বেগ নিয়ে বলল, ‘টিকিট পাওয়া যায়নি?’ পরমহংস অনিমেষের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ল, ‘মাইরি, জব্বর একখানা বউ যোগাড় করেছিস। নিজের ধান্দা ছাড়া অন্য কিছু বোঝে না। আমি শালা এত খেটেখুটে এলাম, কোথায় বসতে বলবে চা খাওয়াবে তা নয়—।’ কথা বলবার সময় পরমহংস যে মুখভঙ্গী করছিল তাতে নিশ্চিন্ত হল মাধবীলতা। বলল, ‘চায়ের জল বসিয়েছি। ট্রেন ক’টায়?’

‘সাতটা । শিয়ালদায়।’ পরমহংস চেয়ারে পা ঝুলিয়ে বসল, ‘তোমাদের জিনিসপত্র গোছানো হয়ে গিয়েছে?’

‘হ্যাঁ।’

পরমহংস পকেট থেকে তিনটে টিকিট বের করল, করে অনিমেষের হাতে দিল, ‘ভি আই পি কোটা থেকে বার করিয়ে এনেছি। নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত কাটা আছে। ওখান থেকে ট্রেন পেলে এক্সটেণ্ড করে নিস।’

অনিমেষ বলল, ‘ট্রেনেই যেতে হবে। কিন্তু ওভারব্রিজ পেরোতে হলে হয়ে গেল। কি যে করব বুঝতে পারছি না। তুই যাবি না?’

‘তিনটের বেশী পাওয়া গেল না।’ বলেই মাধবীলতার দিকে তাকিয়ে হাত তুলল, ‘অনেস্টলি বলছি। তাছাড়া না পেয়ে ভালই হয়েছে। অফিসে ছুটির ঝামেলা ছিল। হাতেও বেশী পয়সাকড়ি নেই। মাইনে পেলে না হয় একটা কথা ছিল।’

অর্ক এর মধ্যে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিল, বলল, ‘আপনি ইচ্ছে করলে যেতে পারতেন। আমি নাহয় রিজার্ভেশন ছাড়াই যেতাম।’

পরমহংস মাথা নাড়ল, ‘না রে। অনেক সময় ইচ্ছে থাকলেও যাওয়া যায় না। তোমরা একজন অসুস্থ মানুষের কাছে যাচ্ছ। ওখানে গিয়ে তোমাদের কাজকর্ম শেষ হলে আমাকে জানিও তখন না হয় ঘুরে আসা যাবে।’

মাধবীলতা বুঝল পরমহংস ঠিকই বলছে। ইচ্ছে থাকলেও এই সময়ে যাওয়াটা যে শোভন নয় তা পরমহংস বুঝেছে। অনিমেষকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সুবিধে হবে বলেই সে এতক্ষণ জোর করছিল।

ঠিক হল পরমহংস বাড়িওয়ালাকে বলেকয়ে ওরা না ফেরা পর্যন্ত সামলে রাখবে, যদি হাতছাড়া হবার উপক্রম হয় তাহলেই অ্যাডভান্স ভাড়া দিয়ে দেবে। তিনটে টিকিটের দাম দিয়ে দিল সে পরমহংসকে। মাধবীলতা পাশের ঘরগুলোর মানুষকে কদিন দেখাশোনার জন্যে বলতে বেরিয়ে গেলে পরমহংস অনিমেষকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তুই মুখ গোমড়া করে আছিস কেন?’

‘ভাল লাগছে না।’ অনিমেষ মাথা নাড়ল, ‘এভাবে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না!’

‘পরিস্থিতির সঙ্গে মানাতে হয় রে।’

‘বুঝলাম। কিছু রাজত্বের লোভে বেরিয়ে এসেছিলাম এখন ভিখিরির মত ফিরতে কারো ইচ্ছে হয়?’

‘থাক! একমাত্র তুই ওখানকার সব জানিস, তোর ভরসায় এরা যাচ্ছে, তাই তোর শক্ত হওয়া উচিত! এত ভাবপ্রবণ হবার কোন মানে হয় না। আর হ্যাঁ, আমার কাছে শ’ পাঁচেক টাকা আছে। দরকার হলে নিতে পারিস।’ পরমহংস পকেটে হাত দিল। অনিমেষ চিন্তা করল একটু, তারপর। মাথা নেড়ে বলল, ‘দরকার নেই।’

পরমহংস বলল, ‘সঙ্কোচ করিস না। দ্যাখ—।’

অনিমেষ মাথা নাড়ল, ‘আর বোঝা বাড়িয়ে কি হবে। ও যা নিয়েছে তাতেই হয়ে যাবে।’

পরমহংস আর জোর করল না। তারপর পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে অর্ককে দিল, ‘এটা রেখে দিও সঙ্গে। যদি প্রয়োজন মনে করো তাহলে আমায় লিখো।’ অর্ক দেখল সাদা কাগজটায় পরমহংস আগে থেকেই নিজের ঠিকানা লিখে এনেছে।

পৌনে ছ’টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে ট্রাম রাস্তার কাছে আসতেই অর্ক কোয়াকে দেখতে পেল। সে এসেছিল ট্যাক্সির খোঁজে। কলকাতা থেকে প্রথমবার সে বাইরে যাবে, ‘আ বে অক্ক! তোর সঙ্গে কথা আছে।’

অর্ক মুখ ফেরাল। এই বিকেলেই কোয়া রঙিন হয়ে আছে। এরই মধ্যে কোয়ার যে অবস্থা পাল্টেছে তা ওর পোশাক দেখলেই বোঝা যায়। তার মানে খুরকি-কিলা ভোগে যাওয়ার পর কোয়া এখন রাজত্ব করছে। সে হাত নাড়ল, এখন আমার সময় নেই।’

‘সময় নেই?’ কোয়া যেন হতবুদ্ধি হয়ে গেল। অর্ক ততক্ষণে ট্যাক্সির দর্শন পেয়েছে। বেলগাছিয়া থেকে বেরিয়ে সেটা একটা চায়ের দোকানের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্ক ছুটল। শিয়ালদার নাম শুনে ট্যাক্সিওয়ালা মাথা নাড়ল, ‘না দাদা, ওদিকে যাব না। হেভি জ্যাম।’

‘কিন্তু আমাদের স্টেশনে যেতে হবে। আমার বাবা ইনভ্যালিড, ট্যাক্সি ছাড়া যাব কি করে? চলুন না—।’ অর্ক প্রায় অনুনয় করল।

‘না মশাই, অন্য ট্যাক্সি দেখুন।’

ঠিক সেই সময় চিৎকারটা ভেসে এল। কোয়া উন্মত্তের মত চিৎকার করতে করতে এগিয়ে আসছে! ‘কি! আমাকে ধ্‌‌ক! বল শালা খানকির বাচ্চা তুই আমাকে গুরু বলবি কিনা!’

সঙ্গে সঙ্গে অর্কর সমস্ত শরীরে আগুন জ্বলে উঠল । রাস্তার লোকজন এখন হাঁ করে কোয়াকে দেখছে। ট্যাক্সিওয়ালাও যেন ভয় পেয়ে গেল, ‘যাঃ শালা! কি ঝামেলায় পড়া গেল!’ বলে ইঞ্জিন চালু করতে যেতেই অর্ক ওর কাঁধ চেপে ধরল। লোকটা থতমত হয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করতেই অর্ক ঘুরে দাঁড়াল। কোয়া আজ সামনে, সমানে খিস্তি করে যাচ্ছে। তার বক্তব্য, সে এখন ঈশ্বরপুকুরের এক নম্বর, সবাই তার বশ মেনেছে, বিলু হাওয়া হয়ে গেছে কিন্তু অর্ককে তার বশ্যতা স্বীকার করে সঙ্গে থাকতে হবে। এসব বলতে বলতে কোয়া হাত বাড়াল অর্কর কলারের দিকে। কিন্তু ওর শরীর টলছে। বোধ হয় মাথাও কাজ করছে না। অর্ক খুব ধীর মাথায় একটা ঘুষি মারল। কোয়ার বাঁ দিকের চোয়ালের নিচে। মারটা খাওয়া মাত্র কোয়ার কথা বন্ধ হয়ে গেল। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সে টলতে লাগল কয়েক সেকেণ্ড তারপর কাটা গাছের মত লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। অর্ক ঘুরে দাঁড়াল। রাস্তায় লোকজন যে হাঁ করে তাকিয়ে আছে তার দিকে তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ না করে সে ট্যাক্সিওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তাহলে যাবেন না?’

‘বসুন।’ ড্রাইভার পেছনে ঝুঁকে দরজার লক খুলে দিতে অর্ক নিঃশব্দে উঠে বসল। তারপর বলল, ‘ওই গলিতে চলুন। সঙ্গে জিনিসপত্র আছে।’

ট্যাক্সিওয়ালা বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ না করে গাড়ি ঘোরাল। অর্ক একবারও পেছন ফিরে তাকাল না। কোয়া নিশ্চয়ই তাকে ছাড়বে না। দেখা যাবে, ফিরে এসে দেখা যাবে। ওর শরীরে তখনও উত্তেজনা ছিল। এই প্রথম কেউ তাকে ওই বিশ্রী গালাগালটা দিল। কোয়া যদি না পড়ে যেত তাহলে সে একটাতেই থেমে যেত না। পড়ে যাওয়ামাত্র কেমন একটা ঘেন্না হল।

সুটকেস ব্যাগ তোলা হলে অনিমেষকে নিয়ে পরমহংস বেরিয়ে এল বস্তি থেকে, পেছনে মাধবীলতা। পুরো বস্তিটাই এখন ভেঙ্গে পড়েছে ফুটপাথে। প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল অর্ক। তারা এখান থেকে চিরকালের মত উঠে যাচ্ছে না আবার ফিরে আসবে এটাই সবার চিন্তা। অনিমেষকে যখন ধরাধরি করে গাড়িতে তোলা হচ্ছে তখন একটা কান্না ছিটকে উঠল। জনতা অবাক হয়ে দেখল গলির মুখে পুঁটলির মত বসে থাকা মোক্ষবুড়ি কাঁদছে। একটা গোঙানি, টানা টানা। অর্ক দাঁড়িয়ে পড়ল। মোক্ষবুড়ি তো আজকাল কোন কথাই বলে না। তাদের সঙ্গে ওর কোন সম্পর্কই তৈরি হয়নি, তাহলে কাঁদছে কেন?

বস্তির দু-একজন মহিলা ঠাট্টা করল, ‘ও দিদিমা কাঁদছ কেন?’

বুড়ির গলা ভাঙ্গা এবং বসা। তবু বুঝতে অসুবিধে হল না কথাগুলো, ‘চলে গেল, সবাই চলে গেল, আমি কবে যাব?’

‘তুমি আবার কোথায় যাবে?’ একজন হেসে উঠল।

বুড়ি সে কথায় কান দিল না, ‘তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে না, অ মাস্টারনি, আমাকে এখন কে খেতে দেবে, দুপুরে আমি কার কাছে খাব। হায় ভগবান, এত খেয়েও কেন নোলা যায় না।’ শব্দগুলো বিকৃত হয়ে একটা সুরের মধ্যে ডুবে গেল।

অর্ক চট করে মুখ ঘুরিয়ে মাধবীলতার দিকে তাকাল। মা ওই বুড়িকে রোজ দুপুরে খেতে দিত? স্কুলের দিন হলে আলাদা কথা কিন্তু ছুটির দিনেও সে ব্যাপারটা টের পায়নি কখনো।

এখন বস্তির সমস্ত মানুষ খানিকটা বিস্ময়ে ট্যাক্সির দিকে তাকিয়ে আছে। অনিমেষ বসেছিল তার পাশে মাধবীলতাও উঠে পড়েছে। পরমহংস সামনের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে। প্রত্যেকেই যে এখন মাধবীলতাকে দেখছে সেটা স্পষ্ট। মাধবীলতার চেহারাটা যেন সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছিল। সে চট করে হাতের ব্যাগটা খুলে একটা দশ টাকার নোট বের করে অর্ককে ডাকল, ‘এটা ওকে দিয়েই চলে আয়। আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

অর্ক আদেশ পালন করল। ভিড়টা দু’পাশে সরে গেল। অর্ক মোক্ষবুড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘এই নাও, মা দিল।’

মোক্ষবুড়ি কেঁদেই যাচ্ছে এবং অর্কর কথা তার কানে ঢুকল না। অর্ক অস্বস্তি নিয়ে চারপাশে তাকাল। তারপর ঝুঁকে মোক্ষবুড়ির হাতে টাকাটা গুঁজে দিয়ে সটান ফিরে এল। ওদের গাড়ি যখন তিন নম্বর ছেড়ে যাচ্ছে তখনও গোঙানিটা ভেসে ছিল বাতাসে তারপর কানের পর্দায় আঠার মত সেঁটে গেল। পরমহংস বলল, ‘লুকিয়ে দান করা হয় বুঝি।’

মাধবীলতা কোন উত্তর দিল না। অনিমেষ বলল, ‘আমিই জানতাম না।’

মাধবীলতা এবার একটু নড়ে চড়ে বসল, ‘থাক এসব কথা। একটা জিনিসের কথা আমি একদম ভুলে গিয়েছি। ট্রেনে খাবার পাওয়া যাবে?’ পরমহংস বলল, ‘দার্জিলিং মেলে খাবার পাওয়া মুশকিল। বর্ধমান স্টেশন থেকে কিনে নিতে পারো। তবে সঙ্গে নিলে ভাল করতে।’

‘গাড়ি ছাড়ার আগে যদি সময় পাওয়া যায়—।’ মাধবীলতা অর্কর দিকে তাকাল, ‘তুই শিয়ালদা থেকে কিছু কিনে আনিস।’

অর্কর হতভম্ব ভাবটা এখন কমেছিল। সে বলল, ‘কি কিনব?’

‘রাত্রে যা খাবি। শুকনো কিছু নিস। পাউরুটি মাখন আর মিষ্টি।’

‘তোমার তো কাঁচা রুটি খেলে অম্বল হয়।’ অনিমেষ বলল।

পরমহংস হাত নাড়ল, ‘ঠিক আছে, আমি দেখছি।’

‘দেখছি মানে?’ মাধবীলতা প্রতিবাদ করল, তোমার টাকায় আমরা খাব না।’

কাঁচুমাচু ভঙ্গী করল পরমহংস, ‘আমি যে এতবড় নরাধম তা জানতাম না।’

অনিমেষ আর মাধবীলতা হেসে উঠল। কিন্তু অর্ক তখনও চেয়ে ছিল মাধবীলতার দিকে। ওর হঠাৎ মনে হল, কোয়ারা বোধ হয় ওদের মাকে কখনও দ্যাখেনি।

অনিমেষকে তুলতে খুব অসুবিধে হল। প্লাটফর্ম থেকে গাড়ির মেঝেতে ওর নিজের পক্ষে কিছুতেই ওঠা সম্ভব নয়। গাড়ির দরজাটা এক মুহূর্তের জন্যে খালি পাওয়া যাচ্ছে না। যত লোক যাচ্ছে তার দ্বিগুণ লোক যেন তুলতে এসেছে। শেষ পর্যন্ত একটা কুলির সাহায্যে অনিমেষকে ওপরে তুলল অর্ক। থ্রিটিয়ারের পাশাপাশি তিনটে আসন ওদের দখলে। জানলার পাশে ক্রাচ দুটোকে রেখে অনিমেষ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘দ্যাখো তো কি ঝকমারি।’

‘ঝকমারি ভাবলেই ঝকমারি নইলে কিছুই নয়। তোমরা বসো আমি এখনি ঘুরে আসছি।’ পরমহংস কথাটা বলে গাড়ি থেকে নেমে গেল। অর্কর বেশ মজা লাগছিল। চারধারে যাত্রীদের চিৎকার, কুলিদের হাঁকাহাঁকি। এই প্রথম সে ট্রেনে উঠল। জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখে সে বাইরে বেরিয়ে এল। প্লাটফর্মে এখন বেশ শোরগোল। মাইকে অবিরাম ঘোষণা চলছে। এই ট্রেন তাদের কলকাতা থেকে নিউ জলপাইগুড়িতে নিয়ে যাবে। একটু এগিয়ে গিয়ে সে কামরাটার মুখোমুখি দাঁড়াল। সামনে পত্রিকার স্টল, চায়ের দোকান। হঠাৎ তার নজর পড়ল জানলায়। অনিমেষ গালে হাত দিয়ে বসে আছে। খানিক তফাতে মাধবীলতা চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে রয়েছে। মায়ের দিকে তাকিয়ে অর্কর বুকের ভেতরটা নড়ে উঠল। মাধবীলতার ভঙ্গী এমন যে খুব কষ্ট না পেলে মানুষ অমনভাবে চোখ বন্ধ করতে পারে না। অর্ক ঠিক বুঝতে পারছিল না মা ওইভাবে রয়েছে কেন? সে দ্রুত জানলার কাছে চলে এসে ডাকল, ‘মা!’

মাধবীলতা প্রথমে শুনতে পায়নি। একটুও নড়ল না মুখ। অনিমেষ তার হাত ছুঁয়ে বলল, ‘তোমাকে ডাকছে!’

মাধবীলতা যেন চমকে উঠল। বলল, ‘কি রে?’

অর্ক তখনই আবিষ্কার করল সে কি বলবে তা জানে না। মাধবীলতা আবার জিজ্ঞাসা করল, ‘কি?’

খোলা চোখের কোলের দিকে তাকিয়ে অর্ক প্রচণ্ড ধাক্কা খেল। দু ফোঁটা শিশিরের কণা সেখানে জমে আছে। এবং এই জমে থাকার কথা মাধবীলতা নিজেই জানে না। অর্ক বুঝল তাকে কিছু বলতে হবে, এইমাত্র। সে একটা পানওয়ালাকে আসতে দেখে বলে ফেলল, ‘পান খাবে?’

‘পান?’ মাধবীলতার মুখে বিস্ময় স্পষ্ট।

অনিমেষ হেসে বলল, ‘তোর মা কি পান খায়!’

সঙ্গে সঙ্গে মাধবীলতা মাথা নাড়ল, ‘না না খাব। ভাল করে একটা পান সাজতে বল তো। জর্দা দিয়ে।’

অনিমেষ বলল, ‘জর্দা?’

মাধবীলতা হাসল, ‘হ্যাঁ। একটু নেশা হোক না।’ বলতে বলতেই তার খেয়াল হল গালের ওপর দিয়ে কিছু গড়িয়ে পড়ছে। আর তখনই ট্রেনটা হুইসল দিয়ে উঠল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *