১.৫.১১ চেঙ্গিস খান (শাসনকাল : ১২০৬ সাল থেকে ১২২৭ সাল)

চেঙ্গিস খান (শাসনকাল : ১২০৬ সাল থেকে ১২২৭ সাল)

মোঙ্গল সাম্রাজ্য বারোশো শতকের শুরুতে মোঙ্গল সেনাপতি চেঙ্গিস খান প্রতিষ্ঠিত একটি বিশালাকার সাম্রাজ্য। বারোশো শতকের শেষে এসে প্রায় সমস্ত পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং মধ্য ইউরোপ পর্যন্ত এই সামাজ্য বিস্তৃত ছিল। এই সাম্রাজ্য ইতিহাসের সর্ববৃহৎ অবিচ্ছিন্ন স্থলসাম্রাজ্য। মোঙ্গল জাতি মৌখিকভাবে প্রজন্মান্তরে তাঁদের ইতিহাস সংরক্ষণ করেছে। চেঙ্গিস খানের আগে মোঙ্গলরা কোনো একক জাতি ছিল না। তাঁরা ছিল যাযাবর এবং সম্পদ কম থাকায় তাঁরা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ছোটখাটো হামলা করে থাকত। আধুনিক মঙ্গোলিয়ার এলাকা ইতিহাসজুড়ে বিভিন্ন চিনা সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। চেঙ্গিস খানই মোঙ্গল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। মোঙ্গলরা তাঁকে ‘জাতির জনক হিসেবে মান্য করে। তাঁর সম্বন্ধে সবথেকে প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায় ‘Secret history of Mongols’ গ্রন্থে। চেঙ্গিস খানের আদিনাম তিমুজিন। অনুসারে তিনি ছিলেন বর্তে চিনোর উত্তরপুরুষ। তাঁর পিতার নাম ইয়েসুকাই ও মাতার নাম হয়লুন। চেঙ্গিসের পিতার গোত্র ছিল বরজিগিন ও মাতার গোত্র ছিল অলখুনুত। বরজিগিন গোত্রই পরবর্তীতে মোঙ্গলদের রাজকীয় গোত্রে পরিণত হয়। ১৯৯০ সালের দিকে চেঙ্গিস খান মোঙ্গল জাতির একমাত্র নেতা (খান) হওয়ার সংকল্পে যুদ্ধ শুরু করেন। তাঁর সমরকুশলতা ও যথাযথ নীতির কারণে তিনি সব গোত্রকেই ধ্বংস অথবা বশীভুত করতে সক্ষম হন। অনেকবার তিনি তাঁর কাছের সহযোগীদেরও ছাড়েননি। তিনি তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধু জামুখাকেও পরাজিত করে হত্যা করেন। এভাবে তিনি মোঙ্গল জাতীর প্রধান খান হন ও চেঙ্গিস খান উপাধি গ্রহণ করেন। তাঁর অভিষেক হয় ১২০৬ সালে।

মোঙ্গল জাতির বিজয় অভিযান শুরু হয় চেঙ্গিস খানের আমলেই। তিনি চিনা সাম্রাজ্যসমুহ, খারিজমের শাহ, পশ্চিম এশিয়ার তুর্কি গোত্রসমূহের বিরুদ্ধে অভিযান করেন এবং জয়লাভও করেন। তাঁর বিজয়াভিযান ইউরোপ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। ১২২৭ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ২১ বছর তিনি ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশে ধ্বংসযজ্ঞ চালান ও নিজের জাতিকে সমৃদ্ধ করেন। চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পরও অভিযান থেমে থাকেনি। তাঁর উত্তরাধিকারিরা কোরিয়া থেকে পোল্যান্ড পর্যন্ত ভূভাগ নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসেন। তবে ১২৬০ সালে থেকেই তাঁদের ভাঙন শুরু হয় এবং ১২৯০ সালের মধ্যে এই বিশাল সাম্রাজ্য চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। মোঙ্গলদের উত্তরাধিকারের কোনো নীতিমালা ছিল না। চেঙ্গিস খানের উত্তরাধিকারীদের যে কেউ সিংহাসন দাবি করতে পারত। ফলে পরবর্তী দুই দশকে তাঁদের মধ্যে অনেকগুলো গৃহযুদ্ধ হয়। ১২৯৪ সালের মধ্যে তাঁদের সাম্রাজ্য চারভাগে বিভক্ত হয় –(১) ইউয়ান সাম্রাজ্য, (২) চাগতাই খানাত, (৩) সোনালি সাম্রাজ্য, (৪) ইলখানদের এলাকা। ১২০৬ সালে চেঙ্গিস খানের সময় থেকে ১৩০৯ সালের কুবলাই খানের সময়কাল পর্যন্ত প্রায় ২,৪০,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৯২,৬৬,৪৫২ বর্গমাইল) অঞ্চল ছিল মোঙ্গল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত।

মোঙ্গল সাম্রাজ্য ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড়ো সাম্রাজ্য। আর চেঙ্গিস খান ছিলেন বিশাল এ সাম্রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক ও সামরিক নেতা। ধারণা করা হয়, ১১৬২ সালে বা ১১৫৫ সালে মঙ্গোলিয়ার খেনতি পর্বতমালায় চেঙ্গিস খানের জন্ম। চেঙ্গিস খান যখন ৯ বছরের বালক তখন তাঁর বাবাকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়। মোঙ্গল জাতির পিতা হিসাবে পরিচিত চেঙ্গিস খান পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষের কাছে নির্মম ও রক্তপিপাসু হিসাবেও পরিচিত। মোঙ্গল গোষ্ঠীগুলোকে একত্রিত করে মোঙ্গল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর চেঙ্গিস খান ইউরেশিয়া দখলে পা বাড়ান। চেঙ্গিস খান ১২২৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর প্রায় ১৫০ বছর তাঁর উত্তরাধিকারীরা মোঙ্গল সাম্রাজ্য নিজেদের দখলে রাখেন। চেঙ্গিস খানের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল, কোনো রাজ্য জয়ের পর তিনি কখনোই পরাজিত সম্রাটকে বাঁচিয়ে রাখতেন না। তাঁর নিষ্ঠুরতার বর্ণনায় প্রচলিত আছে, শিশুদের হত্যা করতেও দ্বিধা করতেন না তিনি। দুর্ধর্ষ মোঙ্গল বাহিনীর মূল শক্তি ছিল তাঁদের ক্ষিপ্রতা এবং দ্রুতগামী ঘোড়াগুলো। এছাড়া ঘোড়ার উপর থেকে তীর ছুঁড়ে মারার বিশেষ দক্ষতা ছিল তাঁদের, যা ইউরোপ ও এশিয়ার সেনাবাহিনীগুলোর ছিল না। মোঙ্গল ধনুকগুলো ছিল হালকা, কিন্তু অসম্ভব শক্তিশালী। হালকা কিন্তু পাল্লা বেশি হওয়ায় ঘোড়ার উপর চড়েও ব্যবহার করা যেত ধনুকগুলো। মোঙ্গলদের আরেকটি স্ট্র্যাটেজি ছিল পর পর অনেকগুলো সারিতে বিন্যস্ত না-হয়েই যতটা সম্ভব পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হামলা চালানো, যাতে সুযোগ বুঝে। শত্রুবাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা যায়। বিভিন্ন সময় যেসব রাজ্য মোঙ্গলদের দখলে এসেছিল, এর মধ্যে আছে— চিন, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, ইরাক, ইরান, তুরস্ক, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, পাকিস্তান (পূর্বতন ভারত), তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, মলদোভা, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং কুয়েত। ১২০৬ সাল থেকে ১২৬০ সাল এই অর্ধশত বছরে তাঁরা একটি যুদ্ধেও হারেননি।

চেঙ্গিস খানকে কোথায় সমাহিত করা হয়েছে এ সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। ইতিহাসের এক ভয়ংকরতম ঘাতকের নাম হল চেঙ্গিস খান, যিনি তকালীন বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে হত্যা করেছিলেন। যদিও চেঙ্গিস খানের ইতিহাস ভারতে পড়ানো হয়, সেই কারণে বলা প্রয়োজন তিনি কোনোদিনই ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তার করেননি। বর্তমানে পাকিস্তানের দিকে কিছুটা এগিয়ে ছিলেন বটে। চেঙ্গিস খানের পুত্র মোঙ্গল শাসক হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণ ও ধ্বংস করেন। পারস্যের গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের ক্ষমতা বিলোপ করার পর ১২৫৬ সালের জানুয়ারি মাসে হালাকু খান বাগদাদ অবরোধ করেন। এ সময় বাগদাদের খলিফা ছিলেন আল-মুস্তাসিম বিল্লাহ। খলিফা গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় দমনের ব্যাপারে হালাকু খানকে সাহায্য প্রদানে বিরত ছিলেন। এর ফলে হালাকু খান খলিফার প্রতি ক্রুদ্ধ হন এবং এটাই তাঁর বাগদাদ আক্রমণের কারণ ছিল। গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়কে দমন করার পর হালাকু খান বাগদাদের দিকে ছোটেন। পথে তিনি বাগদাদের বহিঃপ্রাচীর ধ্বংস করে খলিফাঁকে অবিলম্বে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। খলিফা এতে কর্ণপাত না-করলে হালাকু খান বাগদাদ নগরী অবরুদ্ধ করেন। মোঙ্গলবাহিনী একযোগে পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে আক্রমণ চালায়। খলিফার ক্ষুদ্র সেনাবাহিনী হালাকু খানের বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে বাগদাদ রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে খলিফা পুত্র পরিজন ও অনুচরবর্গসহ জীবনরক্ষার জন্য আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। কিন্তু এতে বাগদাদ নগরী হালাকু খানের প্রমত্ত ধ্বংসকাণ্ড থেকে নিস্তার পায়নি। হালাকু খান বাগদাদ নগরীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে খলিফা ও খলিফার আত্মীয় পরিজনসহ নগরীর অসংখ্য নরনারীকে হত্যা করেন। প্রাণভয়ে ভিত বাগদাদের অগণিত নারী-পুরুষের করুণ আর্তিকে উপেক্ষা করে মোঙ্গলবাহিনী বীভৎস হত্যালীলা ও অত্যাচার করে। শুধু হত্যালীলার মধ্য দিয়েই মোঙ্গলবাহিনীর অত্যাচার শেষ হয়নি, তাঁদের আক্রমণে যুগ যুগ লালিত মুসলিম সাহিত্য-শিল্প ও সংস্কৃতিরও বিলুপ্ত ঘটে। তাঁদের আক্রমণের ভয়ংকরতায় মুসলিম জাতির গৌরবকীর্তি, মুসলিম জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা-সংস্কৃতির উজ্জললতম নিদর্শন বাগদাদ নগরী এক মহাশ্মশানে পরিণত হয়। মোঙ্গলদের নিষ্ঠুর আক্রমণে অসংখ্য মসজিদ, প্রাসাদ, অট্টলিকা প্রভৃতি নিশ্চিহ্ন হয়েছিল। তিনদিন ধরে শহরের পথে রক্তের স্রোত প্রবাহিত হয়েছিল এবং তাইগ্রিস নদীর জল মাইলের পর মাইল রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল। ইবনে খলদুনের মতে, মোঙ্গলদের আক্রমণের ফলে ১,৬০,০০০ লোক প্রাণ হারায়, মতান্তরে ২০,০০,০০০ অধিবাসীদের ১৬,০০,০০০ লোক মারা যায়। বাগদাদ আক্রমণের ফলে বহু স্মৃতিসৌধ, প্রাসাদ ও মসজিদ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এই আক্রমণের ফলে বাগদাদ মোঙ্গলদের অধিকারভুক্ত হয় এবং মুসলিম বিশ্ব কিছুকালের জন্য খলিফা শূন্য হয়ে পড়ে। ১২৬০ সালে হঠাৎই থেমে গেল অপ্রতিরোধ্য মোঙ্গলদের বিজয় রথ। এক অসাধ্য সাধন হল ফিলিস্তিনের গাঁজার অদূরে আইনজালুত প্রান্তরে।

শুধু বাগদাদ ধ্বংস করেই হালাকু খানের বাহিনী থেমে থাকেনি। ইরাক থেকে সিরিয়া হয়ে তাঁরা এগিয়ে চলছিলেন মিশরের দিকে। পথে সিরিয়ার দামেস্ক ও আলেপ্পোর পতন হয় তাঁদের হাতে। মোঙ্গলদের ভয়ে সিরিয়া থেকে পালিয়ে তখন দলে দলে মানুষ আশ্রয় নিচ্ছিল মিশরে। এদিকে হালাকু খানের পরবর্তী পরিকল্পনা ছিল মিশর দখল করা। কেননা তখনকার সময়ে মিশর জয় করার অর্থ সমগ্র উত্তর আফ্রিকা জয় করে ফেলা। আর উত্তর আফ্রিকা থেকে জিব্রাল্টার হয়ে একবার স্পেনে ঢোকার মানে হল নিমিষেই ইউরোপকে পদানত করা। সেটি করতে পারলেই পূর্ণ হবে পিতামহ চেঙ্গিসের বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন। কিন্তু মোঙ্গলদের বিশ্ব জয়ের স্বপ্নে একমাত্র বাঁধা তখন মিশরের তরুণ মামলুক সুলতান সাইফউদ্দিন কুতুজ। সিরিয়া থেকে মিশর আক্রমণের পূর্বে হালাকু খান মোঙ্গলদের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতা ‘হয় আত্মসমর্পণ, নয় ভয়াবহ মৃত্যু এই হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠালেন মিশরের সুলতানের কাছে। সাইফউদ্দিন কুতুজ ভালোভাবেই জানতেন ইতিপূর্বে যাঁরা বিনাযুদ্ধে মোঙ্গলদের ভয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল তাঁদের কী করুণ পরিণতি হয়েছিল। তাই কাপুরুষের মতো বিনাযুদ্ধে অপমানের সঙ্গে মারা পড়ার চেয়ে এই বর্বর বাহিনীকে মোকাবিলা করাই উচিত। চিঠির উত্তরটা সুলতান কুতুজ দিয়েছিলেন মোঙ্গল দূতের শিরচ্ছেদ করে। অতএব স্বভাবই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। সেই যুদ্ধে হালাকু খানের ভাই মঙ্গের মৃত্যু হয়। হালাকু খান ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ৬ লক্ষ সৈন্যের প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ সৈন্য নিজের সঙ্গে নিয়ে তিনি মঙ্গোলিয়া ফিরে গেলেন গ্রেট খানের শেষকৃত্যে যোগ দিতে। বাকিদের তিনি রেখে গেলেন তাঁর বিশ্বস্ত ও দক্ষ সেনাপতি কিতবুকার অধীনে মিশর আক্রমণের জন্য। সুলতান কুতুজ নিজেই সৈন্য নিয়ে এগিয়ে গেলেন তাঁদের মোকাবিলা করার জন্য এবং বেছে নিলেন ফিলিস্তিনের তাবারিয়ার আইনজালুত প্রান্তর। যুদ্ধের এক পর্যায়ে তাঁদের মোঙ্গল সেনাপতি কিতবুকা মারা যান। তারপরই ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে মোঙ্গল সেনাবাহিনী। পালিয়ে যেতে থাকে দিগ্বিদিক বিক্ষিপ্ত মোঙ্গলরা। কুতুজের সৈন্যরা প্রায় ৬০০ কিলোমিটার তাড়িয়ে শেষ হানাদার সৈন্যটিকেও হত্যা করে। শেষ হয় মোঙ্গল আধিপত্য।

শুরুতে মোঙ্গলরা ছিল বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। এছাড়া ধর্ম ছিল তেংগিরনিজম, শামানিজম। ইলখানি বংশের প্রতিষ্ঠাতা মঙ্গু খানের মৃত্যুর পর মহান খান’ কুবলাই খান প্রধান মোঙ্গল সাম্রাজ্যের অধিপতিরূপে স্বীকৃতি লাভ করেন। কুবলাই খান হালাকু খানের ভ্রাতা ছিলেন। তুর্কি ‘ইলখানি’ শব্দের ব্যাখ্যা করলে দাঁড়াবে ‘ইল’ অর্থ গোত্র এবং ‘খান’ অর্থ ‘প্রভু’; অর্থাৎ গোত্রীয় প্রভু। এর তাৎপর্য এই যে, ইলখানি নৃপতিরা মোঙ্গলীয় মহান খান অথবা খাকানের আনুগত্য স্বীকার করতেন। হালাকু খানের পর তাঁর সাতজন বংশধর ‘ইলখানি’ উপাধি ধারণ করেন। ইলখানি নৃপতিরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন, কিন্তু তৃতীয় নৃপতি তাণ্ডদার (আহমদ) ১২৮১-৮৪ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তবে কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন তাণ্ডদার (আহমদ) নন, মোঙ্গলদের প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন বারকে খান। তিনি ছিলেন চেঙ্গিস খানের নাতি। অর্থাৎ জসি বা জচির পুত্র। তবে জসি প্রকৃতই চেঙ্গিস খানের সন্তান ছিল কি না এ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে মতানৈক্য আছে। আধুনিক কাজাকিস্তান থেকে দূরে সারায় জুক নামক শহরে বুখারা থেকে আগত এক বনিক দলের সঙ্গে বারকে খানের সাক্ষাৎ হলে তিনি তাঁদের ধর্ম সমন্ধে জানতে চান। বিস্তারিত শুনে তিনি সুফি শায়েখের কাছে ইসলাম গ্রহণ করেন। বারকের ভাই তুক-তিমুরও একই সময়ে ভাইয়ের সঙ্গে ইসলামের দীক্ষা লাভ করেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *