১৬. অনাপেক্ষিক ও আপেক্ষিক উদ্বৃত্ত-মূল্য

পঞ্চম বিভাগ–অনাপেক্ষিক ও আপেক্ষিক উদ্বৃত্ত মূল্যের উৎপাদন

ষোড়শ অধ্যায় –অনাপেক্ষিক ও আপেক্ষিক উদ্বৃত্ত-মূল্য

শ্ৰম-প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনুসন্ধানের সূচনায় আমরা তাকে আলোচনা করেছিলাম অমূর্ত ভাবে, তার ঐতিহাসিক রূপগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে, মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে একটি প্রক্রিয়া হিসাবে (সপ্তম অধ্যায় দ্রষ্টব্য)। সেখানে বলেছিলাম, “সমগ্র প্রক্রিয়াটিকে যদি আমরা পরীক্ষা করি তার ফলের তথা উৎপন্ন দ্রব্যের দৃষ্টিকোণ থেকে, তা হলে এটা স্পষ্ট হয় যে, শ্রমের যন্ত্রপাতি ও তার বিষয় উভয়ই হল উৎপাদনের উপায় এবং শ্রম নিজেই হল উৎপাদনশীল শ্রম।” এবং ঐ একই পৃষ্ঠায় ২নং টীকায় আমরা আরো বলেছিলাম, “উৎপাদনশীল শ্রম কি তা এককভাবে শ্রম-প্রক্রিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে নির্ধারণের পদ্ধতিটি কোনক্রমেই প্রত্যক্ষত ধনতান্ত্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।” এখন আমরা এই বিষয়টির আরো বিস্তার-সাধন করব।

যতদূর পর্যন্ত শ্রম-প্রক্রিয়া ব্যক্তিগত, ততদূর একই শ্রমিক তার মধ্যে সংযুক্ত করে সব কটি কাজ, যা পরবর্তীকালে বিযুক্ত হয়ে যায়। যখন একজন ব্যক্তি তার জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রকৃতি-প্রদত্ত বিষয়গুলি আত্মসাৎ করে, তখন সে নিজে ছাড়া আর কেউ তাকে নিয়ন্ত্রণ করে না। একজন একক ব্যক্তি প্রকৃতির উপরে কাজ করতে পারে না তার নিজেরই মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণে তার নিজেরই পেশীসমূহকে কাজে না লাগিয়ে। যেমন একটি স্বাভাবিক দেহে মাথা এবং হাত পরস্পরের উপরে নির্ভর করে, তেমনি শ্রম-প্রক্রিয়া মাথার শ্রমকে হাতের শ্রমের সঙ্গে সংযুক্ত করে। পরবর্তীকালে তারা বিযুক্ত হয়ে যায়, এমনকি পরস্পরের সাংঘাতিক শত্রুতে পরিণত হয়। উৎপন্ন দ্রব্যটি আর ঐ ব্যক্তির উৎপন্ন দ্রব্য থাকে না, সেটি পরিণত হয় একটি সামাজিক উৎপন্ন দ্রব্যে, য। উৎপাদিত হয় সমষ্টিগত ভাবে একজন যৌথ-শ্রমিকের দ্বারা অর্থাৎ শ্রমিকদের একটি সংযোজনের দ্বারা, যাদের প্রত্যেকে তাদের শ্রমের বিষয়টিকে একটি নির্দিষ্টরূপে রূপায়িত করার জন্য কেবল একটি আংশিক ভূমিক। মাত্র গ্রহণ করে, তা সে ভূমিকা একটু বড়ই হোক বা একটু ছোটই হোক। শ্রম-প্রক্রিয়ার সহযোগমূলক চরিত্রটি যতই বেশি বেশি করে প্রকট হয়ে ওঠে, ততই তার আবশ্যিক ফলশ্রুতি হিসাবে উৎপাদনশীল শ্রম সম্পর্কে এবং তার যে প্রতিনিধি, উৎপাদনশীল শ্রমিক, তার সম্পর্কে আমাদের ধারণাও বিস্তার লাভ করতে থাকে! উৎপাদনশীল ভাবে শ্রম করতে হলে এখন আর গপনার নিজের পক্ষে দৈহিক শ্রম করার প্রয়োজন পড়ে ন’; আপনি যদি ঐ যৌথ-শ্রমিকের একটি অঙ্গ-মাত্র ২ন এন, তার যে-কোনো এক অধীনস্থ কাজ করেন, তা হলেই যথেষ্ট। উংপাদনশীল শ্রমের যে প্রথম সংজ্ঞাটি উপরে দেওয়া হয়েছে, যা নির্ণীত হয়েছিল বস্তুগত বিষসমূহের উৎপাদনের নিজস্ব প্রকৃতি থেকেই, সেই সংজ্ঞা এখনো যৌথ-এ.কে. ক্ষেত্রেও সঠিকই আছে, যদি আম। যৌথ-শ্রমিককে সমগ্র ভাবে একটি সত্তা হবে বিবেচনা করি। কিন্তু ঐ যৌথ-শ্রমিকের প্রত্যেকটি সদস্যকে যদি আলাদ। আলাল ভাবে চেন, করা হয়, তা হলে এটি আর খাটে না।

অন্য দিকে, অবশ্য, উৎপাদনশীল শ্রম-সম্পকে আমাদের ধারণা সঠিক হয়ে যায়। ধনতান্ত্রিক উৎপাদন কেবল পণ্যদ্রব্যেরই উৎপাদন-মাত্র নয়, মূলত তা উদ্বৃত্ত-মূল্যের উৎপাদন। শ্রমিক তার নিজের জন্য উৎপাদন করে না, উৎপাদন করে মূলধনের জন্য। সুতরাং, সে যদি কেবল উৎপাদাই করে, তা হলেই যথেষ্ট হয়। তাকে অবশ্যই উৎপাদন করতে হবে উদ্বৃত্ত-মূল্য। একমাত্র সেই একই উংপাদনশীল, যে ধনিকের জন্য উদ্বৃত্ত-মূল্য উৎপাদন করে, এবং এই ভাবে মূলধনের আত্মবিস্তারের জন্য কাজ করে। বস্তুগত বিষয়ের উৎপাদন-পরিধির বাইরে থেকে যদি একটা দুষ্টান্ত নেওন্না যায়, তা হলে বলা যায় যে, একজন মাস্টারকে তখন উৎপাদনশীল শ্রমিক বলে গণ্য করা হবে যখন তিনি তার ছাত্রদের মাথার উপরেই কেবল গায়ের জোর খাটাবেন না, সেই সঙ্গে তিনি স্কুল-মালিককে ধনী করার জন্য ঘোড়ার মত কাজ কবেন। সসেজ-কারখানায় না খাটিয়ে ঐ মালিকটি যে স্কুল-কারখানায় টাকা খাটাচ্ছে, তাতে কোনো ইতর-বিশেষ হয় না। সুতরাং উৎপাদনশীল শ্রমিকের ধারণা কেবল কাজ এন তার কার্যোপযোগ ফলের মধ্যেকার, শ্রমিক এবং তার মোৎপন্ন দ্রব্যের মধ্যেকার সম্পর্ককেই বোঝায় না, সেই সঙ্গে তা বোঝায় উৎপাদনের একটি নির্দিষ্ট সামাজিক সম্পর্ককে-যে-সম্পর্কটির উদ্ভব ঘটে ইতিহাসের প্রক্রিয়ায় এবং শ্রমিককে ছাপ মেরে দেয় উদ্বৃত্ত-মূল্য উৎপাদনের প্রত্যক্ষ উপায় হিসাবে। সুতরাং, উৎপাদনশীল শ্রমিক হওয়া আজ আর ভাগ্যে কথা নয়, দুর্ভাগ্যের কথা। চতুর্থ গ্রন্থে, যেখানে আলোচনা করা হবে এই তত্ত্বটির ইতিবৃত্ত, সেখানে আরো পরিষ্কার ভাবে দেখা যাবে যে, চিরায়ত অর্থনীতিবিদরা বরাবরই উদ্বৃত্ত-মূল্যের উৎপাদনকে উৎপাদন শীল শ্রমিকের পার্থক্যমূলক বৈশিষ্ট্য হিসাবে দেখিয়ে এসেছেন। অতএব, উদ্ধত্ত মূল্য সম্পর্কে তাদের ধারণা পরিবর্তিত হবার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনশীল শ্রমিক সম্পর্কে তাদের সংজ্ঞারও পরিবর্তন ঘটে যায়। এই প্রকৃতি-তান্ত্রিক অর্থতাত্ত্বিকেরা ( ‘ফিজিওক্র্যাটস) সজোরে বলতেন যে, একমাত্র কৃষি-শ্রমই হচ্ছে উৎপাদনশীল, কেননা, তাদের মতে, একমাত্র কৃষি-এমই উদ্বৃত্ত-মূল্য প্রদান করে। এবং তারা একথা বলেন কারণ তাদের কাছে খাজনার রূপে ছাড়া উদ্বৃত্ত-মূল্যের অন্য কোনো রূপে কোনো অস্তিত্বই নেই।

শ্রমিক যতটা সময় খাটলে তার শ্রমশক্তির মূল্যের ঠিক সমান পরিমাণ উৎপন্ন কর যেত, ততটা সময়ের বাইরে শ্রম-দিবসের দীর্ঘত-সাধন এবং সেই উদ্ম-শ্রমের ফুলকে মূলধন কর্তৃক আত্মীকরণ—এটাই হল অপেক্ষিক উদ্বৃত্ত-মূল্যের উৎপাদন। এই অপেক্ষিক উদ্বৃত্ত-মূল্যের উৎপাদনই ধনতাকি ব্যবস্থার সাধারণ ভিত্তিভূমি রচনা করে এবং আপেক্ষিক উদ্বৃত্ত-মূল্য উৎপাদনের সূত্রপাত করে। ‘আপেক্ষিক উদ্বৃত্ত-মূল্যের পূর্বশর্ত হল শ্রম-দিবসের দুটি ভাগে বিভাজন, আবশ্যক শ্রম এবং উদ্বৃত্ত-শ্রম। উদ্ধত্ত শ্রমকে দীর্ঘায়িত করার জন্যে, আবশ্যিক শ্রমকে এমন সব পদ্ধতি দিয়ে হস্থায়িত করা হয়, যার ফলে প্রদেয় মজুরি সমপরিমাণ মূল্য উৎপাদিত হয়। তল্পতর সময়ে। অপেক্ষিক উদ্বৃত্ত-মূল্যের উৎপাদন একান্তভাবে ন করে শ্রম দিবসের দৈর্ঘ্যের উপরে; অনাপেক্ষিক উও-মূল্যের উৎপাদন শ্রমের কারিগরি প্রক্রিয়াগুলিতে এবং সমাজের গঠন-বিন্যাসে পুরোপুরি প্লিব ঘটিয়ে দেয়। সুতরাং, তার পূর্বশর্ত হল একটি বিশেষ প্রণালীর, ধনতান্ত্রিক উৎপাদন প্রণালীর অস্তিত্ব-যে প্রণালীটি মূলধনের কাছে শ্রমের আনুষ্ঠানিক বশ্যতার ভিত্তিতে নিজের রীতি-পদ্ধতি, উপায়-উপকরণ ও অস্থাবলী সমেত—আপনা-আপনি গতে ওঠে ও বেড়ে ওঠে। এই বিকাশের পথে আনুষ্ঠানিক বশ্যতার স্থান গ্রহণ করে আসল বশ্যত।

উৎপাদনকারীর উপরে প্রত্যক্ষ জবরদস না খাটিয়ে কি ব; মূলধনের কাছে স্বয়ং উৎপাদনকারীকে আনুষ্ঠানিকভাবে অধীনস্থ না করে, উদ্বৃত্ত-শ্রম আদায় করে নেবার কয়েকটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার উল্লেখ করাই যথেষ্ট হবে। এই ধরনের ব্যবস্থাগুলিতে মূলধন তখনো পর্যন্ত শ্রম-প্রক্রিয়ার উপরে প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেনি। পুরাতন চিরাচরিত উপায়ে হস্তশিল্প ও কৃষিকর্ম পরিচালনা করে এমন স্বাধীন উৎপাদনকারীদের পাশাপাশি, সেখানে দাড়িয়ে থাকে তার তেজারতি মূলধন বা সওদাগরি মূলধন নিয়ে কুসিদজীবী বা সওদাগর—যে তাদের উপরে পুষ্ট হয় পরগাছার মত। যে সমাজে শোষণের এই রূপটির আধিপত্য থাকে সেখানে তা ধনতান্ত্রিক উৎপাদন-পদ্ধতিকে স্থান দেয় না। তবে এই রূপটি ঐ পদ্ধতিটির অভিমুখে একটি ক্রান্তিকালীন পর্যায় হিসাবে কাজ করতে পারে। যেমন করেছিল মধ্যযুগের শেষ দিকে। সর্বশেষে, আধুনিক “গৃহশিল্প থেকে যে ঘটনাটা প্রতিপন্ন হয়, আধুনিক শিল্পের পটভূমিকায় কিছু অন্তর্বর্তী রূপ এখানে সেখানে পুনরুৎপাদিত হয়, যদিও তাদের চেহারা সম্পূর্ণ পালটে যায়।

যদি, এক দিকে, মূলধনের কাছে শ্রমের কেবল আনুষ্ঠানিক অধীনতাই অনাপেক্ষিক উদ্বৃত্ত-মূল্য উৎপাদনের পক্ষে যথেষ্ট হয়, দৃষ্টান্ত হিসাবে, যদি, যে-হস্তশিল্পীরা পূর্বে স্বাধীন ভাবে বা কোন মনিবের অধীনে শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করত, তারা এখন কোন ধনিকদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণের অধীনে মজুরি-শ্রমিক হিসাবে কাজ করে, তা হলে, অন্য দিকে, আমরা দেখেছি, কিভাবে আপেক্ষিক উদ্বৃত্ত-মূল্য উৎপাদনের পদ্ধতিগুলি সেই সঙ্গে আপেক্ষিক উদ্বৃত্ত-মূল্য উৎপাদনের পদ্ধতি হয়ে ওঠে। অধিকন্তু, শ্রম দিবসের অতিরিক্ত দীর্ঘতী-সাধন আধুনিক শিল্পের স্ববিশিষ্ট অবদান হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। সাধারণ ভাবে বলা যায়, সুনির্দিষ্টভাবে ধনতান্ত্রিক উৎপাদন-পদ্ধতি আর তখন আপেক্ষিক উদ্বৃত্ত-মূল্য উৎপাদনের নিছক উপায়মা থাকে না, যখন তা উৎপাদনের একটি সমগ্র শাখাকে জয় করে ফেলেছে। আরো থাকে না যখন তা সমস্ত গুরুত্বপূর্ন শাখাগুলি জয় করে ফেলেছে। এটা তখন পরিণত হয় সাধারণ, সামাজিক ভাবে আধিপত্যশীল রূপ আপেক্ষিক মূল্য উৎপাদনের একটি বিশেষ পদ্ধতি হিসাবে তখন তা কার্যকর থাকে, প্রথমত, যতদূর পর্যন্ত তা সেইসব শিল্পে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে, যেগুলি পূর্বে ছিল কেবল আনুষ্ঠানিক ভাবে মূলধনের অধীনে, অর্থাৎ যতদূর পর্যন্ত তা পালন করে ধর্মান্তর-সাধনকারী’-র ‘প্রাপাগাণ্ডিস্ট’-এর) ভূমিকা; দ্বিতীয়তঃ যতদূর পর্যন্ত তা যেসব শিল্প অধিগ্রহণ করেছে, সেগুলি উৎপাদন-পদ্ধতিতে পরিবর্তনের দ্বারা বিপ্লবাত হতে থাকে।

এক দিক থেকে, অনাপেক্ষিক এবং আপেক্ষিক উদ্বত্ত-মূল্যের মধ্যে যে-কোনো পার্থক্যকে মনে হয় অলীক। আপেক্ষিক উদ্বৃত্ত মূল্যই অনাপেক্ষিক উদ্বৃত্ত মূল্য, কেননা তা শ্রমিকেরা নিজের অস্তিত্বের জন্য যে শ্রম-সময় আবশ্যক, তার বাইরেও শ্রম দিবসের অনাপেক্ষিক দীর্ঘায়ন ঘটায়। অনাপেক্ষিক উদ্বৃত্ত মূল্যই আপেক্ষিক উদ্বৃত্ত মুল্য, কেননা, তা শ্রমের উৎপাদনশীলতার এতটা অগ্রগতি আবশ্যক করে তোলে যে আবশ্যক শ্রম-সময়কে শ্রম-দিবসের একটি অংশমাত্রে সীমিত করা যায়। কিন্তু আমরা যদি উদ্বৃত্ত মূল্যের আচরণকে স্মরণে খি, তাহলে এই একাত্মতা অন্তর্হিত হয়ে যান। ধনতান্ত্রিক উৎপাদন-পদ্ধতি একবার যদি প্রতিষ্ঠিত ও পরিব্যাপ্ত হয়ে যায়, তা হলে যখনি উদ্বৃত্ত-মূল্যের হার বৃদ্ধির প্রশ্ন উঠবে, তখনি অনাপেক্ষিক ও আপেক্ষিক মূল্যের মধ্যকার পার্থক্য প্রকট হয়ে উঠবে। শ্রমশক্তিকে তার যা মূল্য তাই মজুরি হিসাবে দেওয়া হয়, এটা ধরে নিলে আমরা এই বিকল্পের মুখোমুখি হই : শ্রমের উৎপাদন শীলতা এবং তার স্বাভাবিক তীব্রতা নির্দিষ্ট থাকলে, উদ্বৃত্ত মূল্যের হার বৃদ্ধি করা যার কেবল মাত্র একদিকে সত্য সত্যই দীর্ঘায়িত করে; অন্য দিকে, শুম-দিবসের দৈৰ্য যদি নির্দিষ্ট থাকে, তা হলে উক্ত মূল্যের হার বৃদ্ধি করা যায় কেবলমাত্র শম দিবসের দুটি উপাদানের অর্থাৎ আবশ্যিক শ্রম ও উদ্ধত্ত শ্রমের আপেক্ষিক আয়তনে পরিবর্তন ঘটিয়ে এমন একটি পরিবর্তন যার পূর্বশর্ত হল হয়, শ্রমের উৎপাদনশীলতায় আর নয়তো তার তীব্রতার পরিবর্তন সাধন-যদি মজুরিকে শ্রমশক্তির নীচে নেমে যেতে না হয়।

শ্রমিক যদি তার নিজের ও তার বংশের জন্য জীবনধারণের আবশ্যিক উপকরণাদি উৎপাদন করতেই তার গোটা সময়টা লাগিয়ে দেয়, তা হলে অন্যান্যের জন্য মুফতে কাজ করার মত কোনো সময় বাকি থাকে না। তার শ্রমে একটা বিশেষ মাত্রায় উৎপাদনশীলতা ছাড়া, তার হাতে কোনো বাড়তি সময় নাই; এই বাড়তি সময় ছাড়া, কোনো উদও শ্রম নয় এবং কোনো ধনিকও নয়, কোনো গোলাম মালিকও নয় কোনো সামন্ত প্রভুও নয়, এক কথায়, বৃহৎ স্বত্বাধিকারীদের কোনো শ্ৰেণীই নয়।[১]

অতএব, আমরা বলতে পারি যে উদ্বৃত্ত-মূল্য দাঁড়ায় একটি প্রাকৃতিক ভিত্তির উপরে; কিন্তু এটা মেনে নেওয়া যায় কেবল এই অতি ব্যাপক অর্থে যে, তার নিজের অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রম থেকে নিজেকে ভারমুক্ত করা এবং অন্য কাউকে তারা ভারমুক্ত করা থেকে কোন মানুষকে অনাপেক্ষিক ভাবে নিবারণ করার পথে কোনো প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধক নেই, যেমন অন্য মানুষের মাংস ভক্ষণ করা থেকে কোন মানুষকে নিবারণ করার পথে নেই কোনো অজেয় প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধক।[২] ইতিহাসের প্রক্রিয়ার বিকশিত শ্রমের এই উৎপাদনশীলতার সঙ্গে কোনক্রমেই কোনো রহস্যময় ধ্যান-ধারণা যুক্ত করা উচিত নয়। মানুষ যখন নিজেদেরকে জন্তু-জানোয়ারের স্তর থেকে উর্বে তুলতে সক্ষম হয়েছে, অতএব যখন তাদের শ্রম কিছুটা মাত্রায় সমাজীকৃত হয়েছে, কেবল তার পরেই এমন একটা পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে, যেখানে একজনের উদ্ধত্ত শ্রম আর একজনের অস্তিত্বের শর্ত হয়ে ওঠে। সভ্যতার প্রত্যুষকালের শ্রমের উপার্জিত উৎপাদনশীলতা ছিল সামান্য, কিন্তু তখন অভাবও ছিল স্বল্প, যা বিকাশ লাভ করে তাদের পরিপুর্তি-সাধনের সঙ্গে সঙ্গে এবং মাধ্যমে। তা ছাড়া, সেই প্রত্যুষকালে, সমাজের যে-অংশ অন্যান্যের শ্রমের উপরে বেঁচে থাকত, তার আয়তন ছিল প্রত্যক্ষ উৎপাদনকারিদের বিপুল সমষ্টির তুলনায় নিরতিশয় ক্ষুদ্র শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবার সঙ্গে সঙ্গে সমাজের এই ক্ষুদ্র অংশটিও অপেক্ষিক ও আপেক্ষিক উভয় ভাবেই বৃদ্ধি পায়।[৩] তা ছাড়া, তার আনুষঙ্গিক সম্পর্কসমূহ সহ মূলধনেরও উদ্ভব ঘটে-উদ্ভব ঘটে এমন একটি অর্থ নৈতিক ভূমি থেকে, যা এক দীর্ঘ বিকাশ-প্রক্রিয়ার ফল। তার ভিত্তি ও সূচনা-বিন্দু হিসাবে কাজ করে যে শ্রমের উৎপাদনশীলতা তা প্রকৃতির দান নয়, সহস্র সহস্র শতাব্দীর ইতিহাসের দান।।

সামাজিক উৎপাদনের রূপটিতে বিকাশের কম বা বেশি মাত্রা ছাড়া, শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাস্তব অবস্থাবলীর দ্বারা শৃংখলিত। এই সব অবস্থা স্বয়ং মানুষের গঠন (বংশ ইত্যাদি) এবং চতুস্পার্শ্বস্থ প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত। বাইরেকার বাস্তব অবস্থাগুলি দুটি বৃহৎ অর্থ নৈতিক শ্রেণীতে বিভক্ত: (১) জীবনধারণের উপায় সমূহে প্রাকৃতিক সম্পদ, যথা ফলে ভরা মাটি, মাছে ভরা জল ইত্যাদি শ্রমের উপকরণাদিতে প্রাকৃতিক সম্পদ, যথা ঝরনা, নাব্য নদ-নদী, বন, ধাতু, কয়লা ইত্যাদি। সভ্যতার প্রত্যুষে প্রথম শ্রেণীটিরই প্রাধান্য থাকে; বিকাশের একটি উচ্চতর পর্যায়ে প্রাধান্য করে দ্বিতীয় শ্রেণীটি। দৃষ্টান্ত হিসাবে, ইংল্যাণ্ডের তুলনা করুন ভারতের সঙ্গে, অথবা প্রাচীন যুগে, অথেন্স ও কোরিন্থের সঙ্গে কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী দেশগুলির।

অবশ্যই পূরণ করতে হবে এমন স্বাভাবিক অভাবের সংখ্যা যত অল্প হবে এবং ভূমির স্বাভাবিক উবরতা এবং জলবায়ুর আনুকূল্য যত অধিক হবে, উৎপাদনকারীর ভরণ-পোষণ ও পুনরুৎপাদনের জন্য তত কম শ্রম-সময়ের আবশ্যক হবে। সুতরাং নিজের জন্য তার শ্রমের তুলনায় অন্যান্যের জন্য তার শ্রমের আধিক্য ঢের বেশি হতে পারে। প্রাচীন মিশরীয়দের সম্পর্কে ‘ডিয়োডারাস অনেক কাল আগে এই মন্তব্য করেছিলেন : “এটা সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য, তাদের শিশু-সন্তানের প্রতিপালনের জন্য তাদের কত সামান্য ঝামেলা পোয়াতে হয় এবং খরচ পোষাতে হয়। তাদের জন্য তারা রান্না করে হাতের কাছে প্রথম পাওয়া সাদামাটা খাবার; নল-খাগড়ার নিচের দিকটা আগুনে সেঁকে তারা তাদের খেতে দেয়; জলজ গাছপালার ডাটা ও শিকড়ও তারা দেয় কোনটা কাঁচা কোনটা সেদ্ধ করে কোনটা সেঁকে। বাতাস এত স্নিগ্ধ যে অধিকাংশ শিশুই পায়ে জুতো বা গায়ে কাপড় পরে না। সুতরাং যত কাল পর্যন্ত শিশু বড় না হচ্ছে, তত কাল তার জন্য তার মা-বাবার সর্বসাকুল্যে কুড়ি ‘ড্র্যাকমা’-রও বেশি খরচ লাগে না। মিশরের জনসখ্যা যে এত সুবিপুল এবং, অতএব, সেখানে এত বিরাট বিরাট কর্মকাণ্ড গ্রহণ করা সম্ভব হত, এটাই তার প্রধান কারণ।”[৪] যাই হোক, প্রাচীন মিশরের মহং নির্মাণ কার্যগুলির প্রধান কারণ এটা নয় যে তার জনসংখ্যা ছিল সুবিপুল, প্রধান কারণ এই যে, এই জনসংখ্যার একটা বৃহৎ অনুপাতই ছিল অবাধে ব্যবহার্য। যেমন কোন ব্যক্তিগত শ্রমিকের বেলায় তার আবশ্যিক শ্রম-সময় যত কম হয়, সেই অনুপাতে সে বেশি উদ্ধত্ত শ্রম করতে পারে, একটি শ্রমজীবী জন সংখ্যার বেলায়ও তেমনি। জীবনধারণের আবশ্যিক উপকরণসমূহ উৎপাদনের জন্য শ্রম-সময়ের যত কম অংশের প্রয়োজন হয়, তার তত বেশি অংশ অন্য কাজে নিয়োগ করা যায়।

ধনতান্ত্রিক উৎপাদন একদা ধরে নিত যে, তখন, অন্যান্য অবস্থা যদি অপরিবর্তিত থাকে এবং শ্রম-দিবসের দৈর্ঘ্য যদি নির্দিষ্ট থাকে, তা হলে উত্ত-শ্রমের পরিমাণ শ্রমের বাস্তব অবস্থাবলীর সঙ্গে, বিশেষ করে, মৃত্তিকার উৎপাদিকা শক্তির সঙ্গে, পরিবর্তিত হবে। কিন্তু এ থেকে কোনক্রমেই এই সিদ্ধান্তে আসা যায় না। যে সবচেয়ে, সুফলা মৃত্তিকাই ধনতান্ত্রিক উৎপাদন-পদ্ধতির উদ্ভব ও বিকাশের পক্ষে সবচেয়ে উপযুক্ত। এই পদ্ধতিটির ভিত্তি হচ্ছে প্রকৃতির উপরে মানুষের আধিপত্য। যেখানে প্রকৃতি অতিরিক্ত অমিতব্যয়ী, সেখানে সে তাকে হাতে রাখে দড়িতে বাঁধা শিশুর মত।” সে তার উপরে নিজেকে বিকশিত করার কোনো আবশ্যকতা আরোপ করে না।[৫] উদ্ভিজ্জ সুসমৃদ্ধ গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চল সমূহ নয়, কিন্তু নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলই হচ্ছে মূলধনের মাতৃভূমি। কেবল মৃত্তিকার উর্বরতাই নয়, মৃত্তিকার বিভিন্নতা তার প্রাকৃতিক উৎপন্নগুলির বিচিত্রতা, ঋতুক্রমিক পরিবর্তনশীলতা—এই সমস্তই রচনা করে সামাজিক শ্রম-বিভাজনের বাস্তব ভিত্তি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে পরিবর্তন ঘটিয়ে মানুষকে প্রণাদিত করে তার অভাব, তার সামর্থ্য, তার শ্রমের উপায় ও উপকরণ ইত্যাদিকে বহুগুণিত করতে। একটি প্রাকৃতিক শক্তিকে সমাজের নিয়ন্ত্রণে আনা, ব্যয়-সংকোচ করা, মানুষের হাতের কাজের সাহায্যে তাকে বৃহদায়তনে আত্মীকৃত বা বশীভূত করার আবশ্যকতাই শিল্পের ইতিহাসে সর্বপ্রথমে চুড়ান্ত ভূমিকা গ্রহণ করে। মিশর লোম্বাভি ও হল্যাণ্ডে কিংবা ভারত ও পারস্যে সেচ-ব্যবস্থাগুলি তার নিদর্শন।[৬] সেখানে কৃত্রিম খালগুলি কেবল জমিতে অত্যাবশ্যক জলই যোগায় না, সেই সঙ্গে পাহাড় থেকে পলি হিসাবে খনিজ সারও বয়ে নিয়ে যায়। আরবদে রাজত্বে স্পেন ও সিসিলিতে শিল্পের সমৃদ্ধ অবস্থার রহস্য নিহিত ছিল তাদের সেচকার্য সমূহের মধ্যে।[৭]

অনুকূল প্রাকৃতিক অবস্থা একক ভাবে কেবল উত্তমের সম্ভাবনাই সৃষ্টি করে, বাস্তবে উত্তম সৃষ্টি করে না এবং স্বভাবতই উদ্বৃত্ত-মূল্য ও উদ্ধত্ত উৎপন্ন সৃষ্টি করে। না। প্রাকৃতিক অবস্থায় পার্থক্যের ফল হল এই যে, একই পরিমাণ শ্রম বিভিন্ন দেশে, একগাদা ভিন্নতর প্রয়োজন পূরণ করে[৮] এবং কাজে কাজেই, অন্যান্য দিক থেকে অনুরূপ এমন অবস্থাতেও আবশ্যিক শ্রম-সময় হয় ভিন্নতর। এই অবস্থাগুলি উদ্বৃত্ত এমকে প্রভাবিত করে কেবল প্রাকৃতিক সীমারেখা হিসাবে অর্থাৎ সেই মাত্রাগুলিকে বেঁধে দিয়ে, যেখান থেকে অপরের জন্য শ্রম শুরু করা যেতে পারে। শিল্প যে-অনুপাতে অগ্রসর হয় এই প্রাকৃতিক সীমারেখাগুলি সেই অনুপাতে পিছিয়ে যায়। আমাদের ইউরোপীয় সমাজে, যেখানে শ্রমিক তার নিজের জীবিকার জন্য কাজ করার অধিকার ক্রয় করে কেবল উদ্বৃত্ত-শ্রমের অঙ্কে তার মূল্য দিয়ে সেখানে এই ধারণাটি অনায়াসে শিকড় বিস্তার করে যে, উদ্ধত্ত-উৎপন্ন সরবরাহ করাটা হচ্ছে মনুষ্য-শ্রমের একটি অন্তর্নিহিত গুণ।[৯] কিন্তু, নমুনা হিসাবে, এশীয়-দ্বীপপুঞ্জের পুব দিককার দ্বীপগুলির কথা ভেবে দেখুন, যেখানে সাগু বনের মধ্যে ইতস্ততঃ বিপুল পরিমাণে জন্মায়। “একটি গাছের ভিতরে গর্ত করে অধিবাসীরা যখন নিশ্চিত হয় যে তার অন্তর্বস্তু পেকে গিয়েছে, তখন কাণ্ডটিকে কেটে ফেলা হয় এবং কয়েক খণ্ডে ভাগ করা হয়; ভিতরের বস্তুটিকে বের করে জলের সঙ্গে মিশিয়ে হেঁকে নেওয়া হয়। এই ভাবেই তাকে সাণ্ড হিসাবে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত করে নেওয়া হয়। একটা গাছ থেকে পাওয়া যায় ৩০০ পাউণ্ড; কখনো কখনো ৫০০ থেকে ৬০০ পাউণ্ড। তা হলে, সেখানে মানুষ বনে যায় এবং রুটি কেটে আনে ঠিক যেমন আমাদের লোকেরা জ্বালানি কেটে আনে।”[১০] এখন ধরে নিন যে এই ভাবে পুব দেশের একজন রুটি-কাটিয়ের লাগে তার সব অভাব পূরণের জন্য সপ্তাহে ১২ ঘণ্টা কাজ। প্রকৃতি তাকে প্রত্যক্ষভাবে দিয়েছে প্রচুর বিশ্রামের সময়। যাতে সে এই বিশ্রামের সময়টাকে তার নিজের জন্য উৎপাদনশীল হিসাবে ব্যবহার করতে পারে, তার জন্য আগে ঘটা দরকার গোটা এক প্রস্ত ঐতিহাসিক ঘটনাক্রম; বহিরাগতদের জন্য উদ্বৃত্ত শ্রমে সেই সময় ব্যয় করার আগে প্রয়োজন বাধ্যতা-আলোপ। যদি ধনতান্ত্রিক উৎপাদন প্রবর্তন করা যেত, তা হলে সেই ভাল মানুষটিকে একটি শ্রম-দিবসের ফল নিজের জন্য আত্মকৃত করতে সম্ভবত সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করতে হত। প্রকৃতির দাক্ষিণ্য থেকে ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না কেন তাকে সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করতে হবে কিংবা কেন তাকে ৫ দিন উদ্বৃত্ত-শ্রম যোগাতে হবে। এ থেকে কেবল এই ব্যাখ্যাটাই পাওয়া যায় যে, তার আবশ্যিক শ্রম সময় কেন সপ্তাহে মাত্র এক দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হবে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই তার উদ্বৃত্ত-উৎপন্ন মনুষ্য-শ্রমের অন্তনিহিত কোনো গৃঢ় গুণ থেকে উদ্ভূত হয় না।

এই ভাবে, কেবল ইতিহাসের প্রক্রিয়ায় বিকশিত শ্রমের সামাজিক উৎপাদন শীলতাই নয়, এমনকি, তার স্বাভাবিক উৎপাদনশীলতাও প্রতিভাত হয় মূলধনের উৎপাদনশীলতা বলে- যে-মূলধনের সঙ্গে শ্রম-সংবদ্ধ !

উদ্বৃত্ত-মূল্যের উদ্ভব নিয়ে রিকার্ডো কখনো মাথা ঘামান না। তিনি তাকে গণ্য করেন ধনতান্ত্রিক উৎপাদন-পদ্ধতির অন্তর্নিহিত একটি জিনিস হিসাবে, যে-পদ্ধতিটি, তার চোখে সামাজিক উৎপাদনের স্বাভাবিক রূপ। যখনি তিনি শ্রমের উৎপাদন শীলতা সম্পর্কে আলোচনা করেন, তখনি তিনি তার মধ্যে সন্ধান করেন, উদ্বৃত্ত-মূল্যের কারণ নয়, তিনি সন্ধান করেন সেই কারণটিকে যা নির্ধারিত করে মূল্যের আয়তন। অন্য দিকে, তার ভক্তমণ্ডলী খোলাখুলিই ঘোষণা করে দিয়েছেন মুনাফার (পড়ুন ‘উদ্বৃত্ত-মূল্যের) উৎপত্তি-কারক কারণ হল শ্রমের উৎপাদনশীলতা। যাই হোক, বাণিজ্যবাদীদের তুলনায় এটা একটা অগ্রগামী পদক্ষেপ কেননা, তারা কোন দ্রব্যের উৎপাদনব্যয়ের তুলনায় তার দামের আধিক্যকে দেখতেন বিনিময়-ক্রিয়ার ফল হিসাবে, তার মূল্যের তুলনায় তাকে বেশি দামে বিক্রয়ের ফল হিসাবে। কিন্তু রিকার্ডোর ভক্ত-মণ্ডলী সমস্যাটিকে সোজাসুজি পরিহার করে চলেন, তারা তার সমাধান করেননি। বস্তুতঃপক্ষে, এই বুর্জোয়া অর্থতাত্ত্বিকেরা তাদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী বুঝতে পেরেছিলেন, এবং সঠিকভাবেই পেরেছিলেন, যে উদ্বৃত্ত-মূল্যের উৎপত্তির জ্বলন্ত প্রশ্নটিকে নিয়ে বেশি গভীরে যাওয়া খুবই বিপজ্জনক। কিন্তু জন স্টুয়ার্ট মিল সম্পর্কে আমরা কি ভাবব, যিনি রিকার্ডোর অর্ধ-শতাব্দী পরে, রিকার্ডোর প্রথমতম ব্যাখ্যা কারীরা যেসব প্রশ্ন শোচনীয় ভাবে এড়িয়ে গিয়েছিলেন, সেগুলিকে পুনর্বার নির্লজ্জভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন, অথচ গম্ভীরভাবে দাবি করেছেন যে, তিনি নাকি বাণিজ্যবাদীদের তুলনায় উৎকর্ষ ঘটিয়েছেন।

মিল বলেন, “মুনাফার কারণ এই যে, নিজের ভরণপোষণের জন্য যতটা প্রয়োজন শ্রম তার চেয়ে বেশি উৎপাদন করে। এই পর্যন্ত পুরনো কাহিনী ছাড়া আর কিছু নয়; কিন্তু মিল চান নিজের কিছু যোগ করতে এবং তাই তিনি আরো বলেন, “উপপাদ্যটির রূপ বদলে এইভাবে খা যায় যে, মূলধন কেন মুনাফা দেয় তার কারণ এই যে খাদ্য, পরিধেয় দ্রব্যসামগ্রী ও হাতিয়ারসমূহকে উৎপাদন করতে যত সময় লেগেছিল, তারা তার থেকে দীর্ঘতর কাল টিকে থাকে।” মিল এখানে শ্রম-সময়ের স্থায়িত্বকালকে তার উৎপন্ন দ্রব্যসামগ্রীর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন। এই মত অনুসারে, যেহেতু একজন রুটি প্রস্তুতকারকের উৎপন্ন দ্রব্যটি কেবল একদিন স্থায়ী হয় এবং একজন মেশিন প্রস্তুতকারকে উৎপন্ন দ্রব্যটি স্থায়ী হয় ২০ বছর বা তারও বেশি কাল, সেহেতু একজন মেশিন-প্রস্তুতকারক তার শ্রমিকদের কাছ থেকে যে পরিমাণ মুনাফা আদায় করে নেয়, একজন রুটিপ্রস্তুতকারক তার শ্রমিকের কাছ থেকে সেই একই পরিমাণ মুনাফা আদায় করে নিতে পারে না। অবশ্য, এটা খুবই সত্য যে, একটা বাসা তৈরি করতে একটা পাখি যে সময় নেয়, বাসাটি যদি তার চেয়ে বেশি সময় টিকে না থাকত, তা হলে বাসা ছাড়াই পাখিদের কাজ চালাতে হত।

এই মৌল সত্যটি একবার প্রতিষ্ঠিত করেই মিল বাণিজ্যবাদীদের উপরে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন। তিনি আরো বলেন, “অতএব, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বিনিময়ের ঘটনা থেকে মুনাফার উদ্ভব হয় না, উদ্ভব হয় শ্রমের উৎপাদিকা শক্তি থেকে, এবং শ্রমের উৎপাদিকা শক্তি যা তৈরি করে, সর্বদা তাই হচ্ছে একটি দেশের সামগ্রিক মুনাফ-কোনো বিনিময় ঘটুক আর নাই ঘটুক। যদি কোন কর্ম বিভাগ না থাকত, তা হলে কোন ক্রয়-বিক্রয় থাকত না, কিন্তু তবু মুনাফা থাকত।” সুতরাং মিল-এর কাছে, বিনিময়, ক্রয় ও বিক্রয় ধনতান্ত্রিক উৎপাদনের এই সাধারণ অবস্থাবলী আনুষঙ্গিক ঘটনা মাত্র এবং এমনকি শ্রমশক্তির ক্রয় বিক্রয় ছাড়াও সব সময়েই মুনাফা হবে।

তিনি আরো বলেন, “যদি দেশের শ্রমিকেরা সমষ্টিগত ভাবে তাদের মজুরির তুলনায় শতকরা ১০ ভাগ বেশি উৎপাদন করে, তা হলে মুনাফা হবে শতকরা ২০ ভাগ–দাম যা-ই হোক বা না হোক।” এক দিকে, এটা ‘থোড়-বড়ি-খাড়া, খাড়া-বড়ি থোড়’-এর একটি বিরল নমুনা, কেননা শ্রমিকেরা যদি ধনিকের জন্য শতকরা ২০ ভাগ। উদ্বৃত্ত-মূল্য উৎপাদন করে, তা হলে, তার মুনাফা শ্রমিকদের মোট মজুরির অনুপাতে হবে ২০ : ১০০। অন্য দিকে কিন্তু একথা বলা যে “মুনাফা হবে শতকরা ২০ ভাগ” সম্পূর্ণ ভাবে মিথ্যা। মুনাফা হবে সব সময়েই অপেক্ষাকৃত কম, কেননা তা গোনা হয় অগ্রিম-প্রদত্ত মূলধনের মোট সমষ্টির উপরে। দৃষ্টান্ত হিসাবে ধরা যাক, ধনিক অগ্রিম দিয়েছে ৫০০ পাউণ্ড, যার মধ্যে ৪০০ পাউণ্ড বিনিয়োজিত হয়েছে উৎপাদনের উপায়-উপকরণে এবং ১০০ পাউণ্ড মজুরিতে এবং ধরা যাক, উদ্বৃত্ত মূল্যের হার ২০%, তা হলে মুনাফার হার হবে ২০:৫০ ০ অর্থাৎ ৪%; ২০% নয়।

তার পরে আসে সামাজিক উৎপাদন বিভিন্ন ঐতিহাসিক রূপ নিয়ে মিল-এর আলোচনার একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত। “আমি আগাগোড়াই এমন একটি পরিস্থিতি ধরে নিচ্ছি যা-যেখানে ধনিকেরা এবং শ্রমিকের দুটি ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী, সেখানে সামান্য কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া সর্বত্রই বিশ্বজনীন ভাবে বিদ্যমান। সেই পরিস্থিতিটি এই যে শ্রমিকের সমগ্র পারিশ্রমিক-সহ সমস্ত খরচই ধনিক অগ্রিম দেয়। যে পরিস্থিতিটি এখনো পর্যন্ত এই পৃথিবীতে বিরাজ করে কেবল ব্যতিক্রম হিসাবে তাকে সর্বত্র দেখতে পাওয়া একটি অপূর্ব দৃষ্টিবিভ্রম! যাক, আগে আমরা শেষ করে নিই মিল স্বীকার করতে রাজি আছেন যে, “সে যে এই রকম করবে তা কোনো অন্তর্নিহিত আবশ্যিকতার ব্যাপার নয়।*[* ১৮৭৮ সালের ২৮শে নভেম্বর মার্ক এন এফ ড্যানিয়েলসনকে যা লিখেছিলেন, তদনুযায়ী “যে-পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত এই পৃথিবীতে বিরাজ করে তা কোনো অন্তর্নিহিত আবশ্যিকতার ব্যাপার নয়”-উল্লিখিত এই অনুচ্ছেদটি এইভাবে পড়া উচিত : “মিঃ মিল একথা স্বীকার করতে রাজি যে তার পক্ষে এই রকম হওয়াটা চূড়ান্ত ভাবে আবশ্যিক কিছু নয়—এমন কি যেখানে শ্রমিকেরা এবং ধনিকেরা দুটি ভিন্ন শ্রেণী, সেই অর্থনীতির অধীনেও নয়”-রুশ সংস্করণে ইনষ্টিটিউট অব মার্কসিজম লেনিনিজম’-এর টাকা।] বরং বিপরীত, “নিছক প্রাণ-ধারণের জন্য অপরিহার্য অংশটি বাদে মজুরির বাকি সকল অংশের জন্য শ্রমিকের উৎপাদন সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে, এমনকি, সমগ্র মজুরির জন্যও অপেক্ষা করতে হতে পারে—যদি নিজের সাময়িক গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য যথেষ্ট অর্থ তার হাতে থাকে। কিন্তু এই শেষোক্ত ক্ষেত্রে শ্রমিক সেই মাত্রা পর্যন্ত, বাস্তবিক পক্ষে, একজন ধনিক, কেননা কারবারটি চালিয়ে নেবার জন্য সেও প্রয়োজনীয় অর্থের একটি অংশ সরবরাহ করেছে।” মিল আরো একটু এগিয়ে যেতে এবং এই কথা কটি জুড়ে দিতে পারতেন যে, যে-শ্রমিক নিজেকে কেবল প্রাণ-ধারণের উপকরণই নয় উৎপাদনের উপকরণও অগ্রিম দেয়, সেই শ্রমিক বস্তুত পক্ষে নিজের মজুরি-শ্রমিক ছাড়া কিছু নয়। তিনি একথাও বলতে পারতেন যে, আমেরিকার ক্ষুদ্র-চাষী-মালিক ভূমি-দাস ছাড়া কিছু নয়, কেননা সে তার প্রভুর বদলে নিজের জন্য বাধ্যতামূলক শ্রম করে।

এইভাবে প্রাঞ্জল ভঙ্গিতে প্রমাণ করে দেবার পরে যে, এমনকি যদি ধনতান্ত্রিক উৎপাদনের কোনো অস্তিত্ব না থাকত, তা হলেও তা সব সময়েই অস্তিত্বশীল থাকত, মিল খুব সঙ্গতভাবেই দেখিয়েছে যে এমনকি যখন তা অস্তিত্বশীল থাকে না, তখন তার অস্তিত্বও থাকে না। “এবং প্রথমোক্ত ক্ষেত্রে (যখন শ্রমিক হচ্ছে একজন মজুরি শ্রমিক যাকে ধনিক প্রাণ-ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী অগ্রিম দেয়, তখন তাকে অর্থাৎ সেই শ্রমিককে দেখা যেতে পারে একই আলোকে” (অর্থাৎ ধনিক হিসাবে), কেননা, বাজার-দর থেকে কমে সে তার শ্রম দান করায় (!), তাকে গণ্য করা যেতে পারে এমন একজন হিসাবে যে তার নিয়োগকর্তাকে “পার্থক্যটি” (?) ধার দিচ্ছে এবং সুদ-সমেত তা ফেৎ পাচ্ছে।”[১১] আসলে, শ্রমিক, ধরা যাক, এক সপ্তাহের জন্য ধনিককে মুফতে আগাম দেয় তার এম এবং সপ্তাহের শেষে পায় তার তার বাজারদর আর, মিলের মতে, এটাই তাকে রূপান্তরিত করে ধনিকে। সমতল ভূমিতে, সাদামাঠা টিপিগুলিকে মনে হয় পাহাড় বলে এবং বর্তমানে বুর্জোয়া শ্রেণীর মানসিক জড়তার সমল থেকে পরিমাপ করতে হয় তার মহান মনীষাদের উচ্চতা।

————

১. “একটি স্বতন্ত্র শ্রেণী হিসাবে মালিক-ধনিকদের খোদ অস্তিত্বটাই শিল্পের উৎপাদনশীলতার উপরে নির্ভরশীল।” (ব্যামসে, “অ্যান এসে অন দি ডিষ্ট্রিবিউশন অব ওয়েলথ,” ১৮৩৬, পৃঃ ২৫৬)। “যদি প্রত্যেকটি মানুষের শ্রম কেবল তার নিজের খাদ্যের পক্ষে যথেষ্ট হত, তা হলে কোনো সম্পত্তি হতে পারত না।” (ব্ল্যাভেনস্টোন, থটস অন দি ফাণ্ডি সিস্টেম এ্যাণ্ড ইটস্ এফেক্টস, পৃঃ ১৪, ১৫)।

২. একটি সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীর যেসব অঞ্চল ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে, সেখানে এখনো অন্তত ১০,৩,০০০ রাক্ষস আছে।

৩. “আমেরিকার বন্য ইণ্ডিয়ানদের মধ্যে, প্রায় সব কিছুই শ্রমিকের, ৯৯ শতাংশই পড়ে শ্রমের ভাগে। ইংল্যাণ্ডে শ্রমিক বোধ হয় দুই-তৃতীয়াংশও পায় না। (“দি অ্যাডভান্টেজেস অব দি ইস্ট ইণ্ডিয়া ট্রেড”, ইত্যাদি, পৃঃ ৭৩)।

৪. ডিওডোরাস হিস্টোরিশে বিবলিওথেক” খণ্ড ১, ৩, ১৮২৮, ৮০।

৫. “প্রথমটি (প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন তা অত্যন্ত মহৎ ও সুবিধাজনক, তেমন তা মানুষকে করে দেয় অসতর্ক, অহংকারী এবং আতিশয্যপ্রবণ; অপর পক্ষে, দ্বিতীয়টি সৃষ্টি করে সতর্কতা, সাহিত্য, শিল্পকলা ও কর্মনীতি।” (“ইংল্যাণ্ড’স ট্রেজার বাই ফরেন টেড”, লণ্ডনের বণিক টমাস মান কর্তৃক লিখিত এবং এখন জনহিতার্থে তার পুত্র কর্তৃক প্রকাশিত। ১৬৬৯, পৃঃ ১৮১, ১৮২)। যেখানে জীবনধারণের দ্রব্য-সামগ্রী ও খাদ্যের উৎপাদন বহুলাংশে স্বতঃস্ফুর্ত এমন জলবায়ু এমন যে পোশাক বা আবরণের প্রয়োজন হয়না: অন্য দিকে হতে পারে চরম, তেমন এক ভূখণ্ডে নিক্ষিপ্ত হবার তুলনায় বৃহত্তর কোন অভিশাপ কোনো জনসমষ্টির পক্ষে আমি কল্পনা করতে পারি না। শ্রমের দ্বারা উৎপাদনে অক্ষম যে ভূমি তা সেই ভূমির মই মন্দ যা কোনো শ্রম ছাড়াই উৎপাদন করে প্রচুর।” (“অ্যান ইনকুইরি ইনটু দি কজেস অব দি প্রেজেন্ট হাই প্রাইস অব প্রভিশনস”, লণ্ডন ১৭৬৭ পৃঃ ১০)।

৬. নীলনদের জোয়ার-ভাটা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার আবশ্যকতা থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্ম হল এবং তার সঙ্গে হল কৃষি-কর্মের নির্দেশক হিসাবে পুরোহিতদের আধিপত্যের। “Le solstice est le moment. de lannee ou commence la crue du Nil, et celui que les Egyptiens ont du observer avec le plus d’attentention…C’etait cette anne tropique qu’il leur importait de marquer pour se diriger dans leurs operations agricoles. Ils durent donc chercher dans le ciel un signe apparent de son retour.” (Cuvier : “Discours sur les revolutions du globe”. ed. Hoefer, Paris, 1863, p. 141).

৭. ভারতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংবদ্ধ উৎপাদনকারী সমাজ-সজাগুলির উপরে রাষ্ট্রের ক্ষমতার অন্যতম ভিত্তি ছিল জল-সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ। ভারতের মুসলমান শাসকেরা এটা তাদের ইংরেজ উত্তরাগতদের চেয়ে ভাল বুঝেছিলেন। ১৮৬৬ সালের দুর্ভিক্ষের কথা মনে করাই যথেষ্ট, যে দুর্ভিক্ষে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত উড়িষ্যায় মারা গিয়েছিল ১০ মিলিয়নের ( এক কটি ) বেশি হিন্দু (অর্থাৎ ভারতীয়—বাং অনুবাদক)।

৮. এমন দুটি দেশ নেই যা সমান প্রাচুর্য সহকারে সমান সংখ্যক জীবন-ধারণের জন্য আবশ্যক দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহ করে—এবং সমান পরিমাণ শ্রমের ফলে। যে-জলবায়ুতে মানুষ বাস করে, তার তীব্রতা বা নাতিশীতোষ্ণতার সঙ্গে তাদের অভাব বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়; সুতরাং, বিভিন্ন দেশের অধিবাসীরা অভাবের দরুন বাধ্য হয়ে যেসব ব্যবসা করে তার অনুপাত একই হতে পারে না; পরিবর্তনের মাত্রাও তাপ ও শৈত্যের মাত্রার তুলনায় বেশি দূর নির্ণয় করা যায় না; যা থেকে কেউ এই সাধারণ সিদ্ধান্তে আসতে পারেন যে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমের ঠাণ্ডা জলবায়ুতে সবচেয়ে বেশি, গরম জলবায়ুতে মানুষই কেবল বেশি জামা-কাপড় চায় না, মাটিও চায় বেশি কর্ষণ।” (“অ্যান এসে অন দি গভর্নিং কজেস অব দি ন্যাচারাল রেট অব ইন্টারেস্ট, ১৭৫, পৃঃ ৫৯)। এই যুগান্তকারী অনামী গ্রন্থটির লেখক হলেন জে ম্যাসি। হিউম তাঁর সুদের তত্ত্বটি এখান থেকে নিয়েছিলেন।

৯. “Chaque travail doit (This appears also to be part of the droits et devoirs du citoyen ) laisser un excedant.” Proudhon.

১০. F. Schouw: “Die Erde, die pflanzen und der Mensch” 2 Ed. Leipz 1854, P. 148.

১১. জন স্টুয়ার্ট মিল, “প্রিন্সিপলস অব পলিটিক্যাল ইকনমি”, ১৮৬৮, পৃঃ ২৫২-২৫৩।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *