নবম পরিচ্ছেদ
ওসিআর ভার্সন। ভুল সংশোধন করা হয়নি।
সেদিন সমস্ত রাত ধরে জেগে অনুপস্থিত স্বামীকে উমা এই কথাটাই বার বার বলতে লাগল, ‘বেশ করব যাবো। আমার যা খুশি করব। না বরং তুমি বারণ করেছ বলেই করব। কেন, কেন তুমি আমাকে বারণ করবে? কি অধিকারে? আমাকে তুমি কোন্ অধিকার দিয়েছ? একদিনের জন্যও ত গ্রহণ করো নি তবে কেন তোমার মান- মর্যাদা নিয়ে আমি মাথা ঘামাব?’
এটা সে বোঝে নি যে তার অন্তরের মধ্যে স্বামীর অনুরোধ নিষেধাজ্ঞা রূপে মেঘমন্দ্র স্বরে ধ্বনিত হচ্ছে, কিন্তু অন্তরের অবচেতনে এটা বুঝেছে যে সে অনুরোধ অমান্য করার শক্তি তার নেই সেই জন্যই বার বার সে নিজের মনেই এত আস্ফালন করছে। এ যে একেবারেই দুর্বলের স্পর্ধা এটা বোঝবার মত আত্মবিশ্লেষণ-শক্তি তার ছিল না। কিন্তু সকালে উঠে নিজের কাছেই এটা স্বীকার করতে সে বাধ্য হল শেষ পর্যন্ত। নিশীথ অন্ধকারে অনেক সময় মানসিক বৃত্তিগুলোও বাহ্যপ্রকৃতির মত অস্পষ্টতা বা জড়তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সূর্যাদয়ে তা আবার স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। উমাও নিজের মনের মধ্যেকার সত্যটাকে পরিষ্কার দেখতে পেলে। যে স্বামী একদিনের জন্যও ওকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয় নি, যে স্বামী অত্যন্ত তুচ্ছ কারণে ওর জীবনটাকে নষ্ট ক’রে দিয়েছে যার কাছ থেকে নির্মম উপেক্ষা এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে অবহেলাই মাত্র ও পেয়ে এসেছে তারই অন্যায় ও অসঙ্গত অনুরোধ ও ওর কাছে অনুক্ষেণীয়। শুধু নিজের অসহায় অবস্থার কথা মনে ক’রেই সকালবেলা ও কেঁদে ফেললে। সে অশ্রু ক্ষোভ ও অভিমানের
নিজের ওপরও বোধ হয়।
বিকেলবেলা পদ্ম-ঝি এল ডাকতে।
তার আগেই উমা মাকে বলে রেখেছিল
་ ལ་མས་ན་ ག་ཨི་ང་། R
অদৃষ্টের ওপর অভিমান, অভিমান
মা স্পষ্ট দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, ‘মা, তুমি
মুস্তফী মশাইকে ওর নমস্কার জানিয়ে ব’লো যে ওর দ্বারা ও-কাজ হবে না, ওকে যেন তিনি মাপ করেন।’
ঝি আরও কি বলতে যাচ্ছিল, বাধা দিয়ে রাসমণি বললেন, ‘না না রাজী হওয়াটাই ওর মস্ত ভুল হয়েছিল অল্পেই সে ভুল ভেঙেছে, এই ভাল।গুরু রক্ষা করেছেন। আমি আর এ সম্বন্ধে কোন কথাও কইতে রাজী নই, তাঁকে বলে দিও।’
তাঁর মুখের রেখার দিকে চেয়ে পদ্ম-ঝির আর কোন কথা বলতে সাহস হ’ল না।
দুই
শ্রাবণের মাঝামাঝি রাসমণির বড়দি এসে হাজির হলেন। সঙ্গে তাঁর সেই অদ্বিতীয় ঘটিটি, আর বগলে খান-তিনেক থানকাপড় গামছায় জড়ানো। এসেই বললেন, ‘মরতে এলুম রে রাসু! তোর কাছে মরব–এ কথাটা বরাবরই মনে ছিল। মরার সময়ই মানুষের শেষ বাহাদুরি। বলে–জপো তপো করো কি মরতে জানলে হয়!… ভগবানকে ত তাই অষ্টপ্রহর বলি, জন্ম এস্তক ত আমার পেছনে লেগেছ–মরণটাতে আর জ্বালিও না। রাসুর কাছে যেন মরতে পারি–আর যার কাছে যাবো সে-ই আপদবালাই করবে।’
—
উমা অবাক হয়ে চেয়ে থাকে তাঁর দিকে। এই ত দিব্যি শক্ত-সমর্থ চেহারা! বয়স অবশ্য ষাট হয়েছে কি আরও বেশি, কিন্তু না পড়েছে একটি দাঁত না পেকেছে বেশি চুল। বার্ধক্যের ছোপের মধ্যে একটু যেন কোমরটা বেঁকেছে কিন্তু সে সামান্যই। আর ত কোথাও একটা রোগেরও চিহ্ন নেই। এই লোক মরবে!
‘অমন ক’রে চেয়ে আছিস কেন্ লা?’ হেসেই জিজ্ঞাসা করেন বড় মাসিমা। ‘আপনার কি অসুখ বড় মাসিমা?’
‘অসুখ! এখন কিচ্ছু না। অসুখ হ’লে চলবে কেন? এতটা পথ কি তাহলে আসতে পারতুম? ছিলুম ত মেজ ভাইপোর কাছে সেই মালদয়। এই রেল ইস্টিমার ক’রে দুদিন খাড়া উপোস দিয়ে আসছি।’
‘তবে?’ আরও অবাক্ হয়ে প্রশ্ন করে উমা।
‘কি তবে? মরবার কথা বলছি, তাই? ও আমি টের পেয়েছি। ধানের চালের ভাত তেতো লেগেছে আর আমি বেশি দিন বাঁচব না এটা ঠিক। বড় জোর ছ মাস। হ্যাঁ, অসুখ একটা করবে বৈকি। যাহোক একটা হবে হয় জ্বর হবে, নয় পেট ছাড়বে। নইলে দুটোই। তারপর ব্যস ফেঁসে যাবো, অক্কা!’
―
রাসমণি মেয়েকে ধমক দিয়ে ওঠেন, ‘আগে একটু পায়ে জল দে, নাইবার যোগাড় ক’রে দে, তা নয় –দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাজে কথা!’
অপ্রতিভ উমা তাড়াতাড়ি একঘটি জল এনে আলগোছে পা ধুইয়ে দেয়। মাথায় দেবার তেল এনে বাটি করে রাখে চৌবাচ্চার পাড়ে। তারপর রাসমণির একটা ফরসা কাপড় এনে হাতে ক’রে দাঁড়ায়। বড় মাসিমা সঙ্গে যে কাপড় এনেছেন তা রেলে এসেছে– সবই কেচে দিতে হবে।
চান ক’রে উঠে কাপড় ছাড়ছেন তিনি, উমা আবারও প্রশ্ন করে ফিফিস্ ক’রে, ‘আচ্ছা, মা ছাড়া যদি আর কেউ যত্ন করবেন না জানেন ত মার কাছেই থাকেন না কেন? এই বয়সে এখান ওখান ঘোরেন কেন?’
রন কে
‘আমি কি এত বোকা রে!’ চতুরের হাসি ফুটে ওঠে ওঁর মুখে, ‘আমার স্বভাব জানি, যেখানেই কিছুদিন থাকব তারাই ত জ্বলেপুড়ে থাক্ হয়ে যাবে। এইটে হ’ল আমার মরণকালের আস্তানা, একে কি চটিয়ে রাখতে পারি, তাহলে মরবার সময় দাঁড়াবো কোথা, দেখবে কে? শেষ আশ্রয় কি নষ্ট করতে আছে রে? চিরদিন থাকলে যত রাগ জমা হয়ে থাকে সব মরণকালে শোধ নেবে। উঁহু, সে বান্দা আমি নই!’
বলেন আর হাসেন আপন মনে।
উমা বড় মাসিমাকে পেয়ে যেন বেঁচে গেল। তবু যাহোক একটা কাজ পেলে। সঙ্গে সঙ্গে ঘোরে, দফায় দফায় সেবা যোগায় এবং কারণে অকারণে বকুনি খায়। তাও যেন ভাল লাগে উমার। একান্ত নিষ্ক্রিয়তার চেয়ে এ-ও ভাল। তা ছাড়া সে যেন নিজেকে দিয়ে বুঝেছে বড় মাসিমার কষ্টটা তাঁর অন্তরের জ্বালাটা। এই অল্প সময়ের মধ্যেই সে যেন পাগল হয়ে উঠেছে, আর বড় মাসিমা দীর্ঘ এত কাল সহ্য করছেন! অন্তরে যে অনির্বাণ আগুন জ্বলছে তার কিছু উদগারিত হবে–বৈ কি।
রাসমণিও তা বোঝেন। তবু এক এক সময় অসহ্য হয়ে ওঠে। রান্নাঘরের চৌকাঠ চেপে বসে যে বিষ বড়দি ঢালতে থাকে, একেবারে নীলকণ্ঠ না হ’লে তা সহ্য করা শক্ত। সুতরাং সেই সব অসহ অসতর্ক মুহূর্তে দুজনায় ঝগড়া বেধে ওঠে। রাসমণি কথা বলেন কম যা বলেন তা কিন্তু মর্মান্তিক। বড় মাসিমা একেবারে জ্বলে ওঠেন চেঁচিয়ে গালাগালি দিয়ে রাফিয়ে কেঁদে-কেটে পাগলের মত হয়ে ওঠেন। খানিকটা চেঁচাবার পর ও-পক্ষ থেকে সাড়া না এলে তরতর করে হয়ত ঘটিটা নিয়ে নেমে আসেন। সে সময় উমার মনে হয় রাগ ক’রে বুঝি চলেই যাবেন। কিন্তু তা তিনি যান না, সদরের কাছে গিয়ে ধপাস্ ক’রে বসে পড়েন, আপন মনে খানিকটা কাঁদেন বিনিয়ে বিনিয়ে তারপর আবার উঠে আসেন। বলেন বোনকে উদ্দেশ করে, ‘ভেবেছিস এমনি জ্বালাবি আর আমি চলে যাবো! কোথাও যাবো না, গেলে আমার চলবে কেন? মরবার কালে সেবা খাব, মরব, তবে বেরোব এ বাড়ি থেকে!
ভাদ্রের শেষে সত্যি-সত্যিই বড়মাসিমা শয্যা নিলেন। প্রথমে জ্বর, তারপর পেট ছাড়ল। দুটোই চলল সমানে। রাসমণি দিন তিনেক দেখে ডাক্তার ডাকতে পাঠালেন। বড় মাসিমা জানতেন না, ডাক্তার আসতে সেই জ্বরের ঘোরেই উঠে বসলেন তড়বড় ক’রে, ‘হ্যালা রাসু, তোর মতবল কি? আমাকে বিনা চিকিচ্ছেয় মেরে ফেলবি?’
রাসমণি অবাক্।
‘তাই ত ডাক্তার ডেকেছি বড়দি!’
‘বেশ করেছে, কেদাত্ত করেছ একেবারে। চারকাল পেরায় গিয়ে সিকি কালে ঠেকেছে, কখনও যা করলুম না– তাই করব, ঐ মড়াকাটা ডাক্তারের ওষুধ খাব! ডাক কবরেকে?’
কবিরাজ এসে নাড়ী টিপে বললেন, ‘জ্বরাতিসার!’
তাঁকেও ধমক দিলেন বড় মাসিমা, ‘সে ত ঐ দুধের বাচ্চা মেয়েটাও জানে। জ্বর আর অতিসার হ’লে জ্বরাতিসারই হয়
কবিরাজ সান্ত্বনা দিয়ে বলতে গেলে,
ভরা নই, ভাল হয়ে যাবেন।’
নেই,
‘ছাই হবো! তুমি যা পন্ডিত তা বুঝে নিয়েছি। দেখতে পাচ্ছ না যে, মরণ-রোগ ধরেছে! তার জন্যে নয়, ভালো আমি হবো না–তবে তুমি ওষুধ দাও। ওষুধ খাবো না কেন? মরব বলে কি আর বিনা চিকিচ্ছেয় মরব?
দিন দশেক পরে খুবই বাড়াবাড়ি হ’ল। ক্রমশঃ হাত-পা ফুলতে শুরু হল। পূজোর ষষ্ঠীর দিন ভোরবেলা বোনকে ডেকে বললেন, ‘বেশীদিন আর ভোগাতে পারলুম না রে! অল্পে অল্পে বেঁচে গেলি!’
রাসমণি না বুঝে চেয়ে থাকেন ওঁর দিকে।
‘বুঝতে পারলি না? ডাক এসেছে। লোকজন ডাক্– গঙ্গাযাত্রার ব্যবস্থা কর্।’
উমা কিছুই বুঝতে পারে না। মৃত্যু কি মানুষ এমনি করে আগে থাকতে বুঝতে পারে? এমনি নিঃসংশয়ে এত নির্ভয়ে তার সম্মুখীন হয়? তার চোখে জল ভরে আসে, এই দুর্মুখ কলহপরায়ণা বৃদ্ধার জন্যও সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কে মন শিউরে ওঠে,
তারও কি তাহলে এই পরিণাম?
কমলাকে খবর দিতে বড় জামাই এলেন, আরও লোকজন জড় হ’ল। খাটে তোলবার সময়ও বড় মাসিমা যারা তুলছিল তাদের অনবধানতার জন্য তিরস্কার করলেন। ঘটিটা দিয়ে গেলেন বোনকে, বললেন, ‘সব বন্ধন মুক্ত হয়ে যেতে হয় নইলে আবার কি ফিরে আসব! তা বন্ধনের মধ্যে ত ঐ ঘটিটা –তুইই নিস রাসু।। ব্যস্ এইবার আমার ছুটি। গঙ্গা, গঙ্গা –হরিবোল হরিবোল!’
সমস্ত পথটা ইষ্টনাম জপ করতে করতে গেলেন। গঙ্গার ঘাটে গিয়ে একবার খাটসুদ্ধ জলের ধারে নামানো হ’ল, রাসমণি জল দিলেন মুখে– সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে। গঙ্গামৃত্তিকা নিয়ে কপালে বুকে লেপে দিলেন। বড় মাসিমা চোখ বুঝেই পড়ে ছিলেন, এই সময় শুধু একবার বললেন, পেটটা– পেটটাও লেপে দে। আহা ঠান্ডা হোক! বড় জ্বলছে!’
তারপর ওঁকে এনে গঙ্গাযাত্রীর ঘরে রাখা হ’ল। তখন নিমতলার ঘাটে এই ঘরটির অবস্থা ছিল শোচনীয়। ভাঙা ঘর, কোন দিকে দোর নেই– বৃষ্টির জল বাইরের চেয়ে ভেতরেই বেশি পড়ে। সেই নির্জন শ্মশানের মধ্যে ভাঙা ঘরের আবহাওয়া দিনের বেলাই থমথমে, ভয়াবহ। তবু সেখানে রাখা ছাড়া উপায় কি? যারা এনেছিল তারা স্নান ক’রে চলে গেল রাসমণি একা রইলেন তাঁকে নিয়ে। কথা হ’ল বড় জামাইয়ের চাকর মধ্যে মধ্যে এসে খবর নিয়ে যাবে। তিনি নিজে সকাল বিকেল আসবেন।
বড় মাসিমা ঘরে আসার পর মাত্র একটা কথাই বলেছিলেন, ‘গঙ্গাতীরে আর কোন নোংরা কাজ করব না রাসু তুই নিশ্চিন্তি থাক্। তবে প্রাণটা বেরোতে যা দেরি!’ তারপরই অজ্ঞান হয়ে গেলেন।
সেই ভাবেই সারাদিন কাটল। বিকেলে আরও দুএকজন এলেন খোঁজ করতে। একজন মহিলা বললেন, ‘পাট করো, পাট করো নইলে কড়ে রাড়ী সহজে মরবে না!’ পাট করার অর্থ ডাব পান্তাভাত ঘোল এই সব খাওয়ানো। গঙ্গাযাত্রার এই বিধি
যেমন করে হোক মেরে ফেলা। এ রুগী ফিরিয়ে নিয়ে যেতে নেই।
কিন্তু রাসমণি ঘাড় নেড়ে বললেন, ‘বোল হ’রে গেছে, দাঁতি লেগেছে। খাওয়াবো কাকে! ডাব কিনে দিয়ে যাও, পারি ত ঐ একটু মুখে দেবো
সন্ধ্যার পর থেকে যেন প্রলয়ের বর্ষা নামল। সারারাত চলল অবিশ্রাম, বর্ষা। জল প’ড়ে রাসমণি নিজেও ভিজলেন, মুমূর্ষুও ভিজতে লাগল। কোথাও এমন একটু শুকনো জায়গা নেই যেখানে সরে যান। আলোর মধ্যে একটা ছোট প্রদীপ –সেটাও বাইরের হাওয়ায় বার বার নিভে যাচ্ছে। দেশলাই জ্বলে না। তখন রাসমণি প্রাণপণে প্রার্থনা করছেন যে অন্তত কেউ মড়া পোড়াতেও আসুক। কিন্তু সে দুর্যোগে কেউ মড়া নিয়েও বেরোতে সাহস করলে না। একা সেই অন্ধকারে অচৈতন্য মৃত্যুযাত্রিণীকে নিয়ে সেই ভাবেই কাটালেন সারারাত।
উমাকে আগলাবার জন্য কমলা এসে এ বাড়িতে ছিল। সে আর উমা দু’জনেই ঘুমোতে পারল না। এই অন্ধকার দুর্যোগের রাতে মা একা শ্মশানে বসে আছেন মনে ক’রে উমা নিজেই ঠক্ঠক্ করে কাঁপতে লাগল।
সপ্তমীর দিন সকালেও জল থামল না। তেমনি হু-হুঁ বাতাস, মেঘের গুরু গুরু শব্দ আর অবিশ্রাম মুষলধারে বর্ষণ। এরই মধ্যে উমা এবং কমলা গাড়ি ডেকে গিয়ে হাজির হ’ল শ্মশানে। বুড়ী তখনও আছে। নাভিশ্বাস উঠেছে, হয়ত শীগগিরই মরবে। রাসমণি ওদের তিরস্কার করলেন, ‘তোরা কি করতে এলি! যা, গিয়ে চান করে ফেলগে যা!’
বড় জামাই এলেন। তিনিও চলে যেতে বাধ্য হলেন খানিক পরে। আবার সেই একা। গঙ্গার জল কূলে কূলে ভরে উঠেছে, হয়ত বা কূল ছাপিয়েই উঠবে। দুশ্চিন্তায় সকলের মুখেই ভ্রুকুটি ঘনিয়ে এল। কিন্তু উপায় কি? তীরস্থ যাত্রীকে ঘরে ফিরিয়ে নিতে নেই।
সারাদিন পরে সন্ধ্যায় বর্ষণের বেগ কমল কিন্তু বন্ধ হ’ল না। বরং ঝড়ের বেগ বাড়ল আরও। ফাঁকা ভাঙা ঘরে আলো জ্বালার চেষ্টাও করলেন না রাসমণি। আগের রাতের মতই অন্ধকারে বসে একমনে ইষ্টমন্ত্র জপ করতে লাগলেন। সারাদিন কিছুই খাওয়া হয় নি; স্নান ক’রে উঠে
জলে দাঁড়িয়েই একটা ডাব খেয়েছিলেন মাত্র। বড়দিকেও কিছু খাওয়ানো যায় নি, ডাবের জল দেবার চেষ্টা করেছিলেন, কশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে গিয়েছিল।
অষ্টমীর দিন শেষরাত্রে সেই নাভিশ্বাস কণ্ঠে এসে পৌঁছল, নবমীর দিন প্রত্যূষে শেষ। তিনদিন তিনরাত্রি একভাবে একা সেই ভাঙা ঘরে নাভিশ্বাস ওঠা রোগিণীর সঙ্গে কাটালেন রাসমণি। তখন তাঁর মুখ দেখে কোন চিত্তবৈলক্ষণ্য বোঝা যায় নি কিন্তু পুড়িয়ে স্নান ক’রে বাড়িতে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি মুর্ছিত হয়ে পড়লেন। সে মুর্ছা ভাঙল দু-তিন ঘণ্টা পরে।
তিন
বড় মাসিমার মৃত্যু উমাকে নতুন ক’রে ভাবিয়ে তুললে। বড় মাসিমার স্বভাবটাও সে লক্ষ্য করেছিল। যে জ্বালা ছড়ায় সে আগে জ্বলে। আগুনে তাঁর সমস্ত অন্তর পূর্ণ ছিল। ঐ আগুন কি তার অন্তরেও জ্বলছে না! এখনও ইন্ধন কাঁচা, তাই সে অগ্নি আছে সঙ্গোপনে, কিন্তু এই ব্যর্থতার বাতাস যদি তাতে অবিরত লাগে তবে একদিন কি দশা হবে! বড় মাসিমার তবু আত্মীয়স্বজন ছিল –দাঁড়াবার জায়গাও ছিল অন্নের জন্য ভিক্ষা করতে হবে।
308
তার যে দুটি
আর ঐ অবস্থা!
সকলে ধিক্কার দেবে, বিদ্রূপ করবে, সকলে চাইবে এড়িয়ে চলতে।
না– তার আগেই উমা খুঁজে নেবে তার সার্থকতার পথ।
আজকাল উমা প্রায় সারাদিন এবং সন্ধ্যায়ও অনেকখানি কাটায় তাদের ছাদের এক কোনে যেখানটা থেকে ওদের গলিটার মোড়ে বড় রাস্তার একফালি দেখা যায়, নতুন থিয়েটার-বাড়ির সামনেটা।
ওর বিশ্বাস সেদিন সন্ধ্যায় যে শরৎকে দেখা গিয়েছিল সেটা কোন আকস্মিক ঘটনা নয়
নিশ্চয় এ রাস্তা দিয়ে সে যাতায়াত করে। আর এক দিনও যদি দেখতে পায় ত ঝিকে পাঠিয়ে ডাকিয়ে আনাবে। একবারও কি তিনি আসবেন না পাঁচ মিনিটের জন্যেও? অন্তত তাঁর ভুলটা ত সে ভাঙিয়ে দিতে পারবে। তাঁর সেদিনের ভুল বোঝাটা কাঁটার মত বিধছে উমার অন্তরে দিনরাত্রিকে বিষাক্ত ক’রে দিয়েছে সেই একটিমাত্র ধিক্কারের স্মৃতি।
–
কিন্তু চেয়ে থেকে থেকে চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে, রোদে আর ঝাঁজে মাথা ধরে ওঠে প্রত্যহই তার প্রতীক্ষার শেষ হয় না। একদিন রাসমণি বকলেন খুব, ‘অমন ক’রে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকিস্ সোমত্ত মেয়ে, পাড়ায় ডবগা ছেলের অভাব আছে কিছু? শেষে একটা দুর্নাম উঠবে যে!’
উমা ম্লান হেসে জবাব দিলে, ‘আমার আর সুনাম দুর্নাম কি মা! আপনাদের যদি কিছু অসুবিধে হয় সে আলাদা কথা। সে রকম দুর্নাম যেদিন উঠবে সেদিন একগাছা দড়ি কিনে দেবেন, তাহ’লেই বুঝব। শেষ ক’রে দিয়ে যাব সব জ্বালা আপনাদের!’
এ কথার পর রাসমণি আর কিছু বলতে পারেন নি। এর মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে যে প্রচ্ছন্ন অভিযোগ ছিল তা তিনি অস্বীকার করেন কি ক’রে?
―
দুর্নাম কিছু রটেছিল কেন না অমন ক’রে বড় রাস্তার দিকে চেয়ে অত বড় মেয়ের সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকাটা আদৌ শোভন নয়। বিশেষ ক’রে যে মেয়েকে স্বামী নেয় না তার। কিন্তু রাসমণির একটা সুবিধা ছিল যে পাড়ার কারও সঙ্গে তিনি
মিশতেন না। সে দুর্নাম কানে আসার সম্ভাবনা ছিল কম।
দিন সপ্তাহ মাস কেটে যায়
দীপ্ততর হয়ে।
প্রতীক্ষার একাগ্রতা ক্ষুণ্ণ হয়, অন্তরের অগ্নি ওঠে
উমা একদিন মাকে এসে বললে, ‘মা, আমি যদি থিয়েটারই করি, ক্ষতি কি?’
রাসমণি তীব্রকণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘তার মানে?’
আগে হ’লে সে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে উমা ভয় পেত আজ আর পেল না, বললে, আমাকে
ত একটা কিছু করতে হবে। মানুষের জীবন-মৃত্যুর কথা কে বলতে পারে
হঠাৎ হ’লে কোথায় দাঁড়াব আমি?
রাসমণি একটু চুপ ক’রে থেকে বললেন, ‘আজকাল
ভবিষ্যৎ ভাবছ উমা! সেই সঙ্গে আমার মৃত্যু!’
আপনার
বড় বেশি নিজের
‘ভাবাই ত উচিত মা। অপর কেউ ভাবার থাকলে আমি ভাবতুম না। আর মৃত্যু ত অবধারিত, তার জন্য সঙ্কোচে চুপ ক’রে থাকার কোন মানে হয় না।’
So
সমস্ত দ্বিধা, সমস্ত সঙ্কোচ যেন কোথায় ভেসে চলে যায় উমার। কোথা থেকে এতখানি মনের বল সে পায় তা সে নিজেই বুঝতে পারে না।
খানিক পরে রাসমণি চুপ ক’রে থেকে বললেন, ‘তেমন যদি হয় কমলা কি তোমাকে ভাসিয়ে দেবে?’
‘না, তা হয়ত দেবে না। কিন্তু সেখানে কি ভাবে আমি থাকব? আমি ত আগেই বলেছি আপনাকে, হয় গলগ্রহ হয়ে লাঞ্ছনা খেতে হবে নয়ত বিনা মাইনের দাসীবৃত্তি
করতে হবে।
‘কিন্তু বেশ্যাবৃত্তি নেওয়ার থেকে সেটাও বাঞ্ছনীয় নয় কি?’
যে যেমন ভাবে মা। বেশ্যাদের সঙ্গে মিশলেই যে বেশ্যাবৃত্তি নিতে হবে তার ত কোন মানে নেই। তাছাড়া উপায়ই বা কি!’
—
তারপর কিছুক্ষণ স্তব্ধ থেকে, যেন চরম সাহসে ভর ক’রে বলে, ‘আর এক উপায় আছে মুসলমান হয়ে আর একটা বিয়ে করা কিন্তু তাতেই যে আমি সুখী হবো তারও ত ঠিক নেই। কোন অবস্থাতেই আপনি আর আমাকে ঠাঁই দিতে পারবেন না তা জানি তবে এ-ও আপনাকে বলে দিচ্ছি মা, আপনি যদি অন্য পথ আমাকে দেখাতে না পারেন ত থিয়েটারেই আমাকে যেতে হবে। বড় মাসিমার মত হুতাশন হয়ে থাকতে আমি পারব না। সুখ না পাই, স্বাধীন ভাবে বাঁচবার পথ ত পাবো!
রাসমণি আড়ষ্ট হয়ে বসে থাকেন ওর কথা শুনে।
–
এত সাহস যে উমার হবে এমন কথা ওর মুখের ওপর বলবে তা তিনি কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেন নি –কিন্তু সত্যিই যখন বললে তখন ভর্ৎসনা করবারও শক্তি রইল না তাঁর। মেয়ে যে কি জ্বালায় জ্বলে এতখানি ধৃষ্ট হ’তে পেরেছে তা মায়ের প্রাণে উপলব্ধি ক’রে তিনি স্তব্ধ হয়ে গেলেন।
চার
তিন-চারদিন কেউ কারও সঙ্গে কথা কইলেন না। সে এক বিচিত্র অবস্থা। একটা দোতলা বাড়িতে ঝিকে নিয়ে তিনটি প্রাণী। ঝির সঙ্গে দু’একটা কথা হওয়ায় যা কিছু শব্দ হয় এ বাড়িতে। তাও সে দুবেলা অন্য বাড়িতে ঠিকেকাজ করতে যায়, সে সময় মনে হয় বাড়ি সম্পূর্ণ খালি।
এই গুমোট আবহাওয়া যখন প্রায় অসহ্য হয়ে উঠেছে অকস্মাৎ শ্যামা তার ছেলেমেয়ে নিয়ে এসে হাজির হ’ল একদিন।
প্রথমটা ওরা কেউ চিনতে পারে নি।
তারপর উমা ছুটে এসে শ্যামাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল, রাসমণি দু’হাতে নিজের কপালে কঠিন আঘাত করতে লাগলেন।
যেন দুর্ভিক্ষের দেশ থেকে এসেছে ওরা, মূর্তিমান দুর্ভিক্ষ-অবতার!
কঙ্কালসার চেহারা, রুক্ষ চুল
জট পাকানো, ময়লা ছেঁড়া কাপড়। অমন দুধে- আলতা রং পুড়ে কালি হয়ে গেছে একেবারে। ছেলেমেয়ে দুটোকে দেখলেও আঁতকে
উঠতে হয়, হেমটা ত রীতিমত ধুকঁছে। মনে হয় প্রাণশক্তি কে নিংড়ে বার ক’রে নিয়েছে ওদের মধ্যে থেকে।
‘এ কি অবস্থা রে তোর! এমন হ’ল কি করে? আমাদের চিঠি লিখতে পারিস নি!’ এক নিশ্বাসে উমা প্রশ্ন করে।
শ্যামার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। ক্ষীণকণ্ঠে বলে, ‘একটু বসি আগে। একঘটি জল দে। সারা পথ হেঁটে এসেছি–এই চার ক্রোশ পথ। তার ওপর কোলে মেয়ে। আমি আর পারছি না
উমা তাড়াতাড়ি শরবৎ ক’রে এনে দেয়। দুধ গরম ক’রে এনে ছেলেমেয়ে দুটোকে খাওয়াতে বসে।
শ্যামা তখন শুয়ে পড়েছিল নিচের রকেই। ওরই মধ্যে হাঁ-হাঁ করে উঠল, ‘একটু জল মিশিয়ে নে, জল মিশিয়ে দে নইলে যে পেট ছেড়ে দেবে! কদিন উপোসের পর খাঁটি দুধ খেতে পারে? এক ভাগ দুধ তিন ভাগ জল —
নিজেরই করাঘাতে রাসমণির কপাল ফুলে উঠেছিল এর মধ্যে। তিনি এইবার নিঃশব্দে উঠে রান্নাঘরে চলে গেলেন। মেয়ের এ অবস্থা কেন হল তা প্রশ্ন করবার ও প্রবৃত্তি ছিল না তাঁর।
অবশ্য শ্যামা নিজেই ক্রমশঃ সব বললে। বলবার কিছুই নেই। মধ্যে মধ্যে নরেন যেমন ডুব মারে তেমনই– এবার বেশিদিন ডুব মেরেছ। ঠিকে পূজারী পূজো ক’রে আগে শুধু সকালের চাল নিত, এখন বিকেলের দুধটাও নেয়। বলে, ‘তোমরা ত মিছামিছি ঘরজোড়া ক’রে রেখেছ। কাজ আমি করব ষোল আনা, তোমাদের ভাগ দেব কেন?’ প্রথম প্রথম সরকারগিন্নী বা পাড়ার লোক দয়াধর্ম করত, এখন কেউ খবর পর্যন্ত নেয় না সাহায্য করবার ভয়ে। যা সামান্য সোনা-রূপো ছিল তা গেছে, বাসনকোসনসুদ্ধ বাঁধা পড়েছে, তারও পরে সাতদিন উপবাসে কাটিয়ে আজ মরিয়া হয়ে বেরিয়ে পড়েছে শ্যামা। ঘরে চাবি দিয়ে এসেছে, তাও ফিরে গিয়ে দখল পাবে কিনা সন্দেহ। ইত্যাদি
বিকেলে খাওয়া-দাওয়া সারা হয়েছে, রাত্রের আর ঝঞ্ঝাট নেই। উমা ছাদে শুয়েছে মাদুর পেতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে। ঝি বাইরের কাজ সেরে আসতে শ্যামাই গেছে তাকে ভাত বেড়ে দিতে। ঝি খেতে খেতে গল্প করছে, তাদের কথা বলার একটা অস্পষ্ট গুঞ্জন কানে আসছে। রাসমণির কোন দিকে মন ছিল না। তিনি সারা সন্ধ্যাটাই অন্ধকার ঘরে কেমন একটা স্বপ্নাচ্ছন্ন ভাবে বসেছিলেন
এমন সময় শ্যামার তীব্র কণ্ঠস্বর
কানে গেল, ‘মা, এসব কি শুনছি?’
চমকে উঠলেন রাসমণি, ‘কেন, কী হয়েছে? কী শুনেছিস?’
গলাটা খানিক নামিয়ে অথচ বেশ তীক্ষ্মকণ্ঠেই শ্যামা বলে, ‘উমি নাকি থিয়েটারে যাচ্ছে
ও নাকি থিয়েটার করবে?’
ওর বলার ধরনে রাসমণি চটে উঠলেন, ‘বেশ ত, কী হয়েছে তাতে?’
‘তাহ’লে ত আর আমার এক দন্ডও এ-বাড়ি থাকা হয় না। এই মুহূর্তে চলে যেতে হয়। আমার স্বামী শুনলে আমার মুখ দেখবেন না।
309
রাসমণি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমি ত তোমাকে এরে-বেরে আনতে চাইনি মা, যে-তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছ! তোমার স্বামীর আশ্রয়েই যাও না —
,
‘সে যাই হোক্ মা, সে-ই আমার আশ্রয়। এই শিক্ষাই ত এতকাল দিয়েছেন। আমি এখনই যাবো —
উমা ছুটে এসে ওর দুটো হাত চেপে ধরলে, ‘তুই কি পাগল হলি রে! আগে সব কথা শোন্–’
না ভাই, ঢের শুনেছি। তুই ছাড়
অবুঝ হ’স নি ছোড়দি, শোন্
তোর দু’টি পায়ে পড়ি
শ্যামাকে সে ছাদে টেনে নিয়ে গিয়ে সব কথা খুলে বলে। তখন খানিকটা সুস্থ হয় শ্যামা। কিন্তু বলে, ‘ভাই, তুই যদি এ কাজ করিস, মা তোকে ত্যাগ করতে পারবেন না
–তাহলে আমার আর এই সময়ে অসময়ে এসে দাঁড়াবার আশ্রয়ও থাকবে না। ছিল, তাই ছেলেমেয়েগুলো বাঁচল নইলে সত্যিই শুকিয়ে মরত।’
উমা চুপ ক’রে রইল, একটা বিদ্রোহ, একটা অভিমান আকণ্ঠ ফেনিয়ে উঠেছে ওর। খানিক পরে বললে, ‘তোর আশ্রয়ের কথাই ত ভাবছিস, আমার কথা ভেবে দেখেছিস?’
শ্যামা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বললে, ‘আমার কথায় তুই রাগ করিস নি উমি, কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে যত নির্যাতনই হোক্, স্বামী যেমনই হোন সেইখানটা মেয়েমানুষের আগে। তোর উচিত পায়ে-হাতে ধরে সেখানেই যাওয়া। ভদ্রঘরের মেয়ে থিয়েটারে যাবে কি ছি! এই দেহটাই কি এত বড়? না ভাই, সে হ’লে আমাদের আর সম্পর্ক রাখা সম্ভব হবে না। শ্বশুরবংশের নামে আমি কালি মাখতে পারব না।
বড় মাসিমার বুকের আগুনের খানিকটা আন্দাজ পায় কি উমা?
অন্ধকারে শ্যামা দেখতে পায় না কি বিচিত্র হাসি ফুটে ওঠে উমার মুখে! স্বামীকে যদি একেবারেই না পেত শ্যামা, তাহ’লে কেমন ক’রে এ কথা বলত সে– তাই বুঝতে চায় উমা। শ্বশুরবংশের প্রতি এ প্রীতি থাকত কি না!
শ্যামা আবারও বলে ‘না না, বুঝছিস না! ছেলেমেয়ে বড় হবে, তাদের একটা পরিচয় আছে আমার কথাটা ভাব্ একবার!’
–
তা বটেই ত।
উমা একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে গিয়ে বলে, ‘ভয় নেই তোর, তোদের আশ্রয় আমি নষ্ট করব না। যা, তুই শুতে যা এদের নামিয়ে নিয়ে যা।’
‘আর তুই?’
‘আমার দেরি আছে।’
অন্ধকার নিস্তব্ধ রাত্রে, সেই তারাভরা আকাশের দিকে চেয়ে প্রাণপণে যেন শুধু জীবনের সম্বল খোঁজবার চেষ্টা করে উমা। ওর অন্তরে বেদনা চারিদিকের নৈঃশব্দ্যসাগরে কিসের ঢেউ জাগায় কে জানে!
প্রহরের পর প্রহর উত্তীর্ণ হয়ে যায়। ওপরে জাগে
বই
জাগেন রাসমণি।