০২. নরেনদের বাড়িটা

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

কিছু দিন পরে সংবাদ এল নরেনদের বাড়িটা সরকার বাহাদুর কিনে নিচ্ছেন। খিদিরপুর ডকে পড়বে –শুধু ও বাড়িটা নয়, ও অঞ্চলের আরও অনেক বাড়ি।

এ খবর নাকি বহুদিন আগেই পাওয়া গেছে, কিন্তু না বড় ভাই, না ছোট ভাই, কেউ কোন ব্যবস্থা করে নি। যখন আর সাত আট দিন মাত্র বাকি আছে দখল করার, তখন চৈতন্য হ’ল। কোথায় যাওযা যায় এ এক সমস্যা! জিনিসপত্র বিস্তর। বাসনকোসন খাট- বিছানা সিন্দুক-বাক্স –গুরুগিরি প্রাপ্য বহু জিনিস জমছে বংশপরম্পরায়।

ক্ষমা এলেন দেখা করতে রাসমণির কাছে।

‘তুমি যদি ভাই কিছু রাখো—’

রাসমণি অল্প কথার মানুষ। তিনি কথা শেষ করতে না দিয়েই বললেন, সে হয় না দিদি, একে আমি ভাড়াটে বাড়িতে বাস করি, স্থান কম– তার ওপর কুটুমের জিনিস আমি রাখতে পারব না। এ নিয়ে ভবিষ্যতে অনেক কথা হতে পারে। আমাকে মাপ করুন।’

অগত্যা ক্ষমাকে চেপে যেতে হ’ল।

চলে আসার সময় রাসমণি পরামর্শ দিলেন, ‘দিদি একটা কথা বলি, মনে কিছু করবেন না। ছেলেগুলি আপনার কেউ ভাল নয় অনেক দুঃখ পেতে হবে ওদের নিয়ে। অত জিনিস আপনি কি করবেন? যত বড় সংসার হোক অত জিনিস লাগবে না কখনই। মিছিমিছি এখান ওখান, করায় বিস্তর লোকসান হবে দেখবেন। বরং এক কাজ করুন, কিছু কিছু নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বেচে দিন, টাকাটা নিজের কোন বিশ্বাসী লোকের কাছে রেখে যান। এর পর ঢের কাজে দেবে।

কথাটা ক্ষমার পছন্দ হ’ল না। যেমন বহু সৎপরামর্শই বহু লোকের হয় না।

স্থির হ’ল যে কিছু জিনিসপত্র এবং এক সিন্দুক বাসন বৌবাজারে এক শিষ্যবাড়ি রাখা হবে এবং বাকি জিনিসপত্র দুটি নৌকোয় বোঝাই দিয়ে ওরা চলে যাবেন গুপ্তিপাড়ায়। সেখানে ওঁদের এক যজমানের বাড়ি পড়ে আছে, থাকার কোন অসুবিধাই হবে না। শুধু পুরুষ দুজন কলকাতায় থাকবে একটা ঘর ভাড়া ক’রে, সরকারী টাকাটা হাতে পেলেই জমি কিনে অন্যত্র বাড়ি আরম্ভ করবে। মেয়েরা একেবারে ফিরবে নতুন বাড়িতে। ক্ষমা যাবার সময় বার বার দুই ছেলের হাতে ধরে বলে গেলেন, ‘দেখিস বাবা, তোরা যেন নিশ্চিন্ত হয়ে থাকিস্ নি আমাদের সেই জঙ্গলে পাঠিয়ে। তাছাড়া নগদ টাকা হাতে বেশী দিন না, খচর হয়ে গেলে আর বাড়ি করাই হবে না। আর দেখিস্–দুই ভাই রইলি, সদ্ভাবে থাকিস্ –দোহাই তোদের।’

নরেনই ওদের পৌঁছে দিতে গিয়েছিল, আসবার সময় বিশেষ ক’রে তাকে বলে দিলেন, ‘দাদাকে মান্য করবি, অমন করে যখন-তখন ঝগড়াঝাঁটি করিস্ নি। বুঝলি? আর যত শিগগির পারিস আমাদের নিয়ে যাস্। এই নিবান্দা-পুরীতে তিনটি মেয়েছেলে রইলুম।’

‘নিশ্চয়ই মা! সে কথা বলতে। দ্যাখো না তিনি মাসের মধ্যেই বাড়ি শেষ ক’রে নিয়ে যাচ্ছি তোমাদের।’

সরবে আশ্বাস দেয় নরেন।

এর পরের ইতিহাস অত্যন্ত অস্পষ্ট।

বাড়ির টাকাটা পাওয়া গিয়েছিল মাস-কতকের মধ্যেই, ক্ষমা তা জানেন। এর ভেতর দু ভাই-ই নিয়মিত আসত। কিন্তু টাকা পাওয়ার পরই ওদের দেখা পাওয়া দায় হয়ে উঠল।

টাকাটা পাওয়ার দিন পনরো পরে প্রথম একদিন নরেন এল অত্যন্ত সেজেগুজে। দামী সিল্কের পাঞ্জাবি, পকেটে সোনার ঘড়ি, ভাল পাম্পশু জুতো। ক্ষমা ছেলের রকম- সকম দেখে সন্দিগ্ধ হয়ে উঠলেন। বললেন ‘হ্যাঁরে টাকা পয়সা ওড়াচ্ছিস্ না ত দু’ হাতে? এত সাজগোজ কেন? এ সব এল কোথা থেকে?’

নরেন রাগ ক’রে বললে, ‘তোমার এক কথা! আমি বুঝি রোজগার করতে পারি না?’

‘হ্যাঁ, তুই আবার রোজগার করবি! মুর্খর ডিম।’

‘কী বলব অবোধ মেয়েমানুষ, তায় মা, নইলে এ কথা অন্য কেউ বললে এক চড়ে মুন্ডু ঘুরিয়ে দিতুম!’

অপমানের ভয়ে ক্ষমা চুপ ক’রে গেলেন। শ্যামা কিন্তু ছাড়লে না, রাত্রে জিজ্ঞাসা করলে, ‘হ্যাঁগা, মাকে ত খুব বড় কথা বলে ধমকে দিলে, মোটা টাকাটা কিসে রোজগার করলে তা ত বললে না?

‘তুই থাম! তুই কি বুঝবি?

‘তবু শুনিই না। বুঝি না বুঝি কানে শুনেই জীবন সার্থক করি।’

খানিকটা চুপ ক’রে থেকে নরেন বললে, ‘ফাঁকা খেলে জিতেছি।’

‘খেলায় আবার টাকা জিতবে কিগো?’

‘হু।’

‘তাকেই বুঝি জুয়ো বলে?’ কতকটা ভীত-কণ্ঠেই প্রশ্ন করে শ্যামা।

‘সব তাতেই বড্ড-ফ্যাচ্ ফ্যাচ্ করিস্ ছোট বৌ। চুপ কর।’

এর পরে চুপ না করলে কী হবে শ্যামা তা জানত, সে চুপ ক’রেই গেল।

নরেন তার পরের দিনই কলকাতা ফিরে গেল। বহু অনুরোধেও থাকতে রাজী হল না। বলল, ‘দিন রাত জমি খুঁজতে হচ্ছে। তোমাদের এই অবস্থায় ফেলে রেখেছি–আমার একটা আক্কেল আছে ত! দাদার আর কি, না করবে খোঁজ, না করবে দেখাশুনো। যা করব সব আমি।

ক্ষমা ভয়ে ভয়ে তবু বললেন, ‘হ্যাঁরে, তা এত জমি কলকাতায় খুঁজতে হচ্ছে –কেন তবে?’

‘তবে আর মেয়েমানুষের বুদ্ধি বলেছে কেন? জমি অমনি কিনলেই হ’ল? পাড়া ভাল হবে, জমি সস্তা হবে নির্দায় নির্দোষ, তবে ত দেখে-শুনে কিনব! যা তা একটা জমি কিনি, আর টাকা-কড়ি খরচা হওয়ার পর তার ফ্যাকড়া বেরুক! ওসব কাজ আমার দ্বারা হবে না।’

এর পর কিন্তু মাসখানেক আর কোন ভাইয়ের পাত্তা রইল না। ক্ষমা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন। খরচপত্র তাঁর কাছে ছিল সামান্যই, সে সব ফুরিয়ে এসেছে তার চেয়েও বড় কষ্ট বাজার-হাট করে কে? দুটি অল্প-বয়সী বধূ নিয়ে তিনি একা স্ত্রীলোক। প্রকাণ্ড বাগানের মধ্যে বাড়ি, কাউকে ডাকলে সহসা সাড়া পাবার উপায় নেই। একটি মেয়ে বাইরের তোলা-কাজ ক’রে দিয়ে যায়, তাকে দিয়ে হাট করানো যায় না। সে যদি দয়া ক’রে কোন ছেলেপুলেকে ডেকে দেয় এবং দয়া ক’রে হাট ক’রে দেয় ত হয়, নইলে হয় না। ইতিমধ্যেই দিন-দু’তিন করে চার-পাঁচবার উপোস করতে হয়েছে সবাইকে। বিরাট বিরাট কুমড়ো হয় বাগানে, শুধু কুমড়োর ডালনা রেঁধে খেয়ে কাটিয়েছে। অবশ্য ফলমূল বিস্তর, শাক-ডাঁটারও অভাব নেই কিন্তু ভাত-ছাড়া এসব খাওয়া অর্থ কি ওদের কাছে?

শেষে পুরো এক মাস হয়ে যেতে শ্যামাকে দিয়ে চিঠি লেখানো হ’ল। রাধারাণী ও নিজের জবানীতে দেবেনের নামে একখানা চিঠি লিখিয়ে নিলে।

দিন কতক পরে উত্তর এল দেবেনেরই; সে লিখেছে মার নামে চিঠি। প্রণামাদি সম্ভাষণের পর লিখেছে–

‘পরে বিস্তারিত লিখি এই যে শ্রীমান নরেন সরকার বাহাদুরের নিকট হইতে অর্থপ্রাপ্তির পরই জোর করিয়া তাহার অর্ধাংশ লইয়া নিজের হেপাজতে রাখে। আমি পাছে তাহার তঙ্কাও খরচ করিয়া ফেলি বা পরে অস্বীকার হই, শ্রীমানের সেই আশঙ্কা। তাহার পর হইতে অর্থাৎ তঙ্কা হস্তগত হওয়ার পর শ্রীমানের সাক্ষাৎ মেলাও দুর্ঘট হইয়া উঠিয়াছে। কোথায় থাকে, কি করে তাহা আমরা কেহই অবগত নহি। বাসায় আসে কদাচিৎ, আসিলেও ব্যস্তভাবে আসে এবং ব্যস্তভাবেই চলিয়া যায়। জিজ্ঞাসা করিলে বলে জমির সন্ধানে দিবারাত্র ঘুরিতে হইতেছে। সে সব জমি কোথায় এবং তাহার বিশদ বৃত্তান্তই বা কি জিজ্ঞাসা করিলেও ভাল রকম জবাবদিহি করিতে পারে না। ইতিমধ্যে আমি কয়েকটি বাটি ও জমি দেখিয়াছিলাম, তাহাদের মূল্যও সুলভ বলিয়া বোধ হয় কিন্তু অদ্যাপি শ্রীমানকে সে সব দেখাইতে পারি নাই। অথচ তাহার সম্মতি-ব্যতিরেকে কিনাও আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। কারণ বাটি- বিক্রয়ের মূল্য আমার হাতে যে অর্ধাংশ আছে তাহা যথেষ্ট নহে। এমতাবস্থায় কী যে করি ভাবিয়া ঠিক করিতে পারিতেছি না। এধারে আমি যে মোকামে চাকুরি করিতাম তাহাদের অবস্থা খারাপ হইয়া পড়ায় আমার চাকুরিও গিয়াছে। এক্ষণে চাকুরি খুঁজিব, না শ্রীমানেরই খোঁজ করিয়া বেড়াইব কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না। এক্ষণে সেবকের প্রতি আপনার আজ্ঞা কি জানিতে পারিলে সুখী হইতাম। প্রণামান্তে নিবেদনমিতি—’

চিঠি শুনে ক্ষমা কাঠ হয়ে উঠলেন। অনেকক্ষণ চুপ ক’রে থেকে শুধু বললেন, ছোট বৌমা, সে সব ঘড়ি আংটি জামা কোথা থেকে করলে নরেন আমাকে ত বললে না, তোমাকে কি কিছু বলেছিল?

শ্যামা নত মুখে উত্তর দিলে, ‘বলেছিলেন কী এক জুয়া খেলায় জিতেছেন –কিন্তু সে আমার ঠিক বিশ্বাস হয় না মা।’

ক্ষমার বুক ফেটে যেন একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে। তিনি একটা উত্তরও আর দিতে পারেন না!

এর পর দুটো দিন সেই তিনটি প্রাণীর কাটল অবর্ণনীয় দুশ্চিন্তার মধ্যে। দেবেনকে কী লিখবেন ক্ষমা তাও ভেবে পান না। কিন্তু তৃতীয় দিনের দিন অকস্মাৎ নরেনের এক চিঠি এসে গেল।

সে চিঠিও মায়ের নামে। কারণ গুরুজনরা থাকতে স্ত্রীকে চিঠি লেখা তখন নির্লজ্জতা বলেগণ্য হ’ত। আঁকা-বাঁকা হরপে বিশ্রী লেখা, অসংখ্য বানান-ভুলে ভর্তি।

‘দাদাকে জমীর সন্দান দিয়া দিয়া হয়রান হইয়া গেলাম। না হয় দাদার পসন্দ, না হয় মতীর স্থির। এমতাবস্থায় কী করিব লিখিবেন। এধারে তঙ্কা সব জলের মত খরচ হইয়া যাইতেছে। তাহা ছাড়া আপনার নিকট লিকিতে লয্যা হয়, দাদার শভাব চরিত্রও বোধ হয় খারাপ হইয়া যাইতেছে। দাদা হামেশাই রাত্রে বাসায় ফেরেন না।’ ইত্যাদি

শ্যামা চিঠি পড়া শেষ করতেই রাধারাণী ডাক ছেড়ে কেঁদে উঠল। ক্ষমা ব্যাকুল হয়ে ওকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করতে লাগলেন, কিন্তু শ্যামা জোর ক’রে বলে উঠল, ‘কেন দিদি মিথ্যে মন খারাপ করছ, এ সমস্ত মিছে কথা– বুঝতে পারছ না!’

তবু বহুক্ষণ পর্যন্ত রাধারাণীর চোখের জল থামল না। তার নিজের স্বামীর ওপরও বিশেষ আস্থা ছিল না।

ক্ষমা সারারাত ভেবে পরের দিন ভোরবেলা উঠে শ্যামাকে বললেন, ‘ছোট বৌমা, তুমি আমার জবানীতে ও দুই বাঁদরকেই চিঠি লিখে দাও, এখানে পত্রপাঠ চলে আসতে। লিখে দাও যে আমার খুব অসুখ বাঁচবার আশা নেই। এসে পড়লে যেমন ক’রেই হোক আটকাতে হবে আর আমার কলকাতায় বাড়িঘরে দরকার নেই, এখানে কিছু ধান জমি ক’রে একটা চালা তুলে নিক। শেষে কিছুই আর থাকবে না।’

শ্যামা একটু ইতস্তত ক’রে শেষ পর্যন্ত (ভাশুরকে পরের জবানীতে চিঠি লেখাও বড় লজ্জার কথা) সেই মর্মে চিঠি লিখে দিলে। পাশের বাড়ির তাঁতি ছেলেটিকে দিয়ে অনেক কষ্টে সে চিঠি ফেলানোও হ’ল। তারপর তিনজনে সেই নির্জন বিরাট বাড়িতে সংশয়-কণ্টকিত চিত্তে প্রতীক্ষা করতে লাগল মানুষের বা অন্তত একটা উত্তরের। কিন্তু একটির পর একটি ক’রে দীর্ঘ দিন দীর্ঘতর রাত্রির সঙ্গে গ্রথিত হতে লাগল শুধু, না এল মানুষ আর না এল উত্তর।

মাসখানেক দেখে পাড়ার লোকদের ধরে একজনকে ক্ষমা কলকাতা পাঠালেন সে ফিরে এসে বললে, ‘ও বাসায় কেউ থাকে না। কোথায় থাকে তাও কেউ বলতে পারলে না।

দুই

এর পর স্ত্রীলোক তিনটির যে ভাবে দিন কাটতে লাগল তা সহজেই অনুমেয়।

ক্ষমার সম্ভ্রম-বোধ ছিল অসাধারণ। এখানে আশ-পাশে প্রতিবেশী বলতে ব্রাহ্মণেতর জাতিই বেশি; ক্ষমা এসে পর্যন্ত এদের সঙ্গে একটা ব্যবধান রেখেই চলতেন, তারাও সম্ভ্রমের সঙ্গে সে দূরত্বকে মেনে নিত।

এখন কিন্তু আর ব্যবধান রাখা গেল না। এমন হ’ল যে পর পর তিনদিন কুমড়ো সিদ্ধ খেয়ে তিনজনে দিন কাটালেন। তাও না হয় সম্ভব, কিন্তু রাধারাণীর শিশু পুত্রটিকে বাঁচানো যায় কি ক’রে এই হ’ল তাঁদের সমস্যা। শেষে প্রতিবেশীদের দ্বারস্থ হ’তে হ’ল। ব্রাহ্মণ কায়স্থ ছাড়া আর কারুর কাছে তাঁরা প্রতিগ্রহ করেন নি কখনও, একথা ক্ষমা প্রায়ই গর্ব করে বলতেন কিন্তু সে গর্ব আর বজায় রাখা গেল না। চালের জন্যই পরের বাড়ি যেতে হ’ল। প্রথমটা বাসন-কোসন বেচে চালাবার চেষ্টা করলেন কিন্তু ব্রাহ্মণের বাসন কেউই কিনতে রাজী হ’ল না। ধান চাল প্রায় সকলের বাড়িতেই যথেষ্ট, একটা সিধা দেওয়া ঢের সোজা। ক্ষমার কাছে সব কথা শুনে অনেকেই সিধা পাঠালেন। ছেলের জন্যে দুধও একজন নিয়মিত এক ঘটি ক’রে পাঠাতে লাগলেন।

তাতে উপবাসটা কিছুদিনের জন্য বন্ধ হল বটে, তবে তাও একেবারে নয়। কারণ দানের জন্য তাগাদা করতে পারতেন না ক্ষমা। সিধা যারা পাঠাত তারাও অত নির্ভুল হিসাব ক’রে পাঠাতে পারত না। ফলে যখন ভাঁড়ার খালি হয়ে আসত তখন শিশুর জন্য কিছু রেখে তিন শাশুড়ী-বৌয়ে উপবাস করতেন।তাল পাকার সময় তাল খেয়ে অনেকদিন কেটে যেত। সজনে ডাঁটা বা অযত্ন-বর্ধিত পুঁই-ডাঁটা সেদ্ধ ক’রে নুন দিয়ে খাওয়া চলত কোন কোন দিন। তরুণী বধুদের সবই সইত অবশ্য, কিন্তু ক্ষমারই শরীর ভেঙে আসতে লাগল। নানা রকম পেটের গোলমাল হতে লাগল। তবু ক্ষমা ভিক্ষায় বার হ’তে পারলেন না। শুধু যখন খুব অসহ্য হ’ত এক এক সময় ওপরের দিকে চোখ তুলে দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন, ‘ওরে কী ছেলেই পেটে ধরেছিলুম রে, তিলে তিলে মাতৃহত্যা করছে।’

বৌদের মুখের দিকে তিনি তাকাতে পারতেন না, লজ্জায় মাথা কাটা যেত তাঁর। মাঝে মাঝে কেঁদে ফেলে বলতেন, ‘এমন জানলে কিছুতে ওদের বিয়ে দিতুম না মা, তোমাদের মুখের দিকে যে চাইতে পারি না! আমাকে তোমরা মাপ করো।’

মাস দুই এমনি কাটাবার পর ক্ষমা প্রস্তাব করলেন, ‘আমার অদৃষ্টে যা আছে হবে মা, তোমরা বাপের বাড়ি চলে যাও। আর কতদিন এভাবে কাটাবে?

সে প্রস্তাবে ওরা কেউ রাজী হ’ল না। রাধারাণীর বাপের বাড়ির অবস্থা বিশেষ ভাল নয়– তার ওপর দেবেন ইতিপূর্বে এমন ঝগড়াঝাঁটি করেছে যে তাদের সঙ্গে মুখ দেখাদেখি বন্ধ। যদি বা দেবেন কোনদিন এখানে আসে ত বাপের বাড়ি থেকে যে স্ত্রীকে সে আনতে যাবে না, এটা রাধারণী নিশ্চিত জানে।

আর শ্যামা! তার ও ওই অবস্থা। তার মা তাকে আশ্রয় দিতে পারতেন হয়ত, কিন্তু সে যে একরকম জোর ক’রেই শ্বশুর-ঘর করতে এসেছে। এখন আবার কোন্ মুখে সেখানে ফিরে যাবে?

মুখে বললে, ‘সে হয় না মা, আপনাকে এই অবস্থায় ফেলে কোথায় যাবো?’

আনন্দে স্নেহে বিগলিত হয়ে ক্ষমা ওকে বুকে চেপে ধরলেন।

ওদের এই জীবনে আনন্দ ও আশার দিন হয়ে উঠেছিল পাড়ার নিমন্ত্রণের দিনগুলি। আগে ক্ষমা এখানে কোন নিমন্ত্রণ নেন নি কিন্তু এখন আর বৌদের আটকান না। উপবাস ত লেগেই আছে, বেচারারা এক-আধদিনও যদি পেট ভরে খেতে পায় ত সেই ভাল। বিয়ে বা অন্নপ্রাশন উপলক্ষ হ’লেই বিপদ হয়, যৌতুক করার প্রশ্ন ওঠে ক্ষমা অতি কষ্টে লক্ষ্মীর কৌটো ঝেড়েঝুড়ে সিঁদুরমাখা আধুলি বা সিকি বার করেন। শ্যামা প্রথম প্রথম একটু অপ্রস্তুত হ’ত, কারণ তার শহরের জীবনের অভিজ্ঞতায় এক টাকার কম যৌতুক করার কথা জানে না সে। তবে এখন এখানে দেখে যে সিকি আধুলি কেন, দুআনিও যৌতুক করে অনেকে। পাড়ার গরীব দুঃখী বা নিম্নশ্রেণীর যারা খেতে আসে তাদের অনেক সময় দয়া ক’রেই খেতে বলা হয়, কিন্তু সে দয়া তারা গ্রহণ করতে চায় না, সামাজিক মর্যাদা না পেলে খেতে প্রস্তুত নয়। সেই জন্যই দুআনি পর্যন্ত যৌতুক নিতে হয়।

অবশ্য বিয়ে বা অন্নপ্রাশন (উপনয়নও বটে তবে সে কদাচিৎ, কারণ নিকটে ব্রাহ্মণ-বসতি কম) ছাড়া অন্য নিমন্ত্রণগুলিই লোভনীয়। অসংখ্য ব্রত ও পার্বণ লেগেই আছে। ব্রাহ্মণের সধবা চাই-ই সে সব কাজে। এ উপলক্ষে শুধু খাওয়াই নয়, সিঁদুর আলতা দক্ষিণা মিষ্টি পান সুপারি এ ত আছেই, সময়ে সময়ে গামছা ও কাপড়ও মেলে। রীতিমত রোজগার। উপার্জন করার যে কি আনন্দ, সে স্বাদ শ্যামা প্রথম পায় ঐ ভাবেই।

বেশ মনে আছে ওর প্রথম দিনকার কথা। তাঁতিগিন্নী এসে হাতজোড় করে ক্ষমার কাছে বললেন, ‘বামুন মা, বলতে সাহস হয় না, কাল আমার বড় বৌয়ের নিসিঁদুরের ব্রত উদ্‌যাপন; দ্বাদশটি ব্রাহ্মণ সধবা অন্তত খাওয়াতে হবে। বৌমারা যদি দয়া করে যান–। আরও অনেকে ত আসবে!’

ক্ষমা অনেকক্ষণ চুপ ক’রে রইলেন। বোধ করি নিজের মনের সঙ্গেই একটা প্রবল দ্বন্দ্ব চলছিল। কালই এই তাঁতিগিন্নী এক ধামা চাল পাঠিয়ে দিয়েছেন তবে চার দিনের পর পেটে ভাত গেছে। দান যখন নিয়েইছেন তখন আর মানুষটাকে মনঃক্ষুণ্ণ ক’রে লাভ কি?

প্রায় মিনিট-দুই পরে শুধু প্রশ্ন করলেন, ‘আয়োজন সেই ভাবেই ত হচ্ছে?’

প্রবলভাবে মাথা হেলিয়ে জিভ কেটে তাঁতিগিন্নী বললেন, ‘নিশ্চয়ই, আমার প্রাণে ভয় নেই মা? বাপরে! বামুনের মেয়ে নিয়ে যাবো–এ যে গোখরো সাপ নিয়ে খেলা!’

আয়োজনটা কিভাবে হওয়া দরকার, অনেক ভেবেও শ্যামা বুঝতে পারলে না। রাধারাণীকে প্রশ্ন ক’রেও সদুত্তর পাওয়া গেল না। অথচ শাশুড়ীকে জিজ্ঞাসা করতেও লজ্জা হয়। মনে হয় বামুনের মেয়ে নিয়ে গেলে কি করা দরকার তা বামুনের মেয়ের অন্তত জানা উচিত। ‘জানি না’ শুনলে তিনি কি ভাববেন?

অবশ্য বোঝা গেল তার পরের দিনই।

তাঁতিগিন্নী বেলা দুটো নাগাদ নিজে এসে ওদের ডেকে নিয়ে গেলেন। আয়োজন বেশ বড় রকমেরই। বিরাট আটচালা বাঁধা হয়েছে। বামুন বৈষ্ণব অনেক বসেছে, সধবাও জন-বারো, তার সঙ্গে ছেলেমেয়ে যে কত তার হিসেব নেই। তাঁতিগিন্নীর বড় বৌ নিজে হাতে ওদের পিঁড়িতে দাঁড় করিয়ে পা ধুইয়ে সেই পাদোদক জল একটা বাটিতে সংগ্রহ করলে, তারপর নতুন গামছা দিয়ে পা মুছিয়ে আতা পরিয়ে দিলে। এরপর প্রত্যেককে এক এক কাঠের কৌটো বোঝাই নতুন সিঁদুর দিয়ে অনুমতি নিয়ে সিঁথিতে ও লোহার ধারে একটু ক’রে সিঁদুর পরিয়ে দিলে। বামুনের মেয়ের মাথায় হাত দেবে এই জন্যে অনুমতি। তারপর একখানা ক’রে কোরা কাপড় পরিয়ে ওদের হাত ধরে নিয়ে গিয়ে আসনে বসালে।

তবু তখনও বিশেষ আয়োজনটা যে কি বুঝতে পারে নি শ্যামা। খেতে বসে বুঝলে। পাতে পড়েছে খান আষ্টেক ক’রে লুচি, বেগুন ভাজা, পটোল ভাজা আর কুমড়োর ডালনা। আর একরাশ করে নুন। কুমড়োর ডালনার চেহারাটা যেন কেমন সাদা-সাদা–মুখে দিয়ে দেখলে নুন নেই। অর্থাৎ ব্রাহ্মণেতর জাতের বাড়িতে ব্রাহ্মণরা নুন-হলুদ দেওয়া তরকারি খাবে না। আলাদা ক’রে নুন দিলে এবং সে নুন নিজে মেখে খেলে দোষ নেই। যাক্–লুচির স্বাদ যে কি তা শ্যামা প্রায় ভুলে যেতেই বসেছিল। এতদিন পরে সে বেশ তৃপ্তি ক’রেই খেল। এরপর পাতে পড়ল ক্ষীর ও উৎকৃষ্ট কাঁচাগোল্লা। খেয়ে যখন ফিরছে ওরা শুনলে বামুনরা বলাবলি করতে করতে যাচ্ছে, এমন পাকা ফলার এ অঞ্চলে অনেকদিন হয় নি। কলকাতার সে সব আয়োজন–মতিচুর দরবেশ অমৃতি খেলে এরা না জানি কি বলত। আর মাছের কালিয়া! হলুদ দেওয়া তরকারিই খায় না ত মাছ! নিজের অজ্ঞাতসারেই শ্যামার একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস পড়ল–মাছের কথা প্রায় ভুলে যেতেই বসেছে। হাতে সদ্য দক্ষিণা পাওয়া দুআনিটা ছিল, শ্যামা স্থির করলে পরের দিন কাউকে খোশামুদি করে নদীর ধারে পাঠাবে মাছের জন্য।

এর দিন কতক পরেই এক কায়স্থ বাড়ি ওদের নিমন্ত্রণ হ’ল। সে আর এক বিস্ময়! কারণ এইবার আলুনি কুমড়োর ডালনা ঠিক থাকলেও লুচি পড়ল পাতে তেলেভাজা। মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এনে তেলেভাজা লুচি খাওয়ায় কেউ, তা কলকাতার মেয়ে শ্যামা এতদিন ভাবতেও পারত না। খেতে কিন্তু ভালই লাগল। ঘরে ভাজা টাকা তেলেভাজা লুচি –যেমন সুগন্ধ, তেমনি স্বাদ। ভয় ছিল একটু যে খেয়ে হয়তো অসুখ করবে কিন্তু কিছুই হ’ল না। ওরা আবার ষোলটা মোন্ডা সন্দেশ ছাঁদা দিলে দুই জা-কে। ক্ষমার কথা মনে ক’রে খুশী মনেই নিয়ে এল শ্যামারা। তাঁর ত আর অন্য উপায় নেই।

গোটা বৈশাখ মাসটাই চলল ওদের নিমন্ত্রণ। ওরা যে ‘ভিন্ন জাতে’র বাড়ি খেতে যাচ্ছে এই কথাটা একবার ছড়িয়ে পড়াতে অনেকেই সাহস ক’রে বলতে এল। ফলে কতরকম যে অভিজ্ঞতা হ’ল শ্যামার! কলু-বাড়ি খেতে গিয়ে দেখে রান্না-বান্নার কোন বালাই-ই নেই। একটা ক’রে বড় পাথরের খোরাতে দই ঢেলে দিলে এক এক কাতান, তাতে মর্তমান কলা চার-পাঁচটা ক’রে, পাঁচ-সাত জোড়া মোন্ডা আর আলগোছে খই ঢেলে দিতে লাগল। অর্থাৎ ফলার মেখে খাও। শেষে এক বাটি ক’রে ক্ষীর। তবে পাওনা ওদের ওখানেই সবচেয়ে বেশি হয়েছিল। নতুন গামছা, একটা করে নতুন পেতলের সরার এক-সারা মোন্ডা, আবার দুআনি দক্ষিণা।

বৈশাখ মাসের পর নিমন্ত্রণ কমে এলেও জ্যৈষ্ঠ মাসটা আম খেয়ে এবং দু’চার দিন নিমন্ত্রণ খেয়ে এক রকম কাটল। কিন্তু শ্রাবণে আবার দুর্গতি। ওদের বাড়ির বিরাট আম-কাঁঠালের বাগানখানা আচ্ছন্ন ক’রে অন্ধকার ঘনিয়ে আসত যখন, বাইরে অবিশ্রাম বর্ষণ, কাদা জল থৈ-থৈ করত এবং ভেতরে স্যাঁতসেঁতে ভিজে আবহাওয়া তখন শ্যামার প্রাণ যেন হাঁপিয়ে উঠত। ইচ্ছা করত এক একদিন আত্মহত্যা করতে কিন্তু গর্ভের সন্তানের কথা স্মরণ হ’তে আর সাহসে কুলোত না। দেহ ভারী হয়ে আসছে ক্রমশ, কেমন যেন দুর্বল বোধ হয়। হাতে প্রায়ই খিল লাগে। এই সময় ভাল করে খাওয়ার কথা, সে জায়গায় অর্ধেকেরও ওপর দিন কিছুই খাওয়া হয় না। এই ঘোর বর্ষায় কে কার খবর রাখে, কে-ইবা চাল পাঠায়। তাল এবং কুমড়ো ও ডুমুর সেদ্ধ খেয়ে খেয়ে ওদের অরুচি হয়ে গেছে। তার ওপর এই অন্ধকার। প্রদীপ জ্বালবারও তেল নেই। কোনমতে সন্ধ্যা দেখিয়ে প্রদীপ নিভিয়ে দেওয়া হয়। এখানে আসবার আগে ডাকাতির ভয়ে কলকাতাতেই এক যজমানবাড়ি সব গহনা খুলে রেখে আসা হয়েছে। যা আছে তা নাম-মাত্র। তবু তারই মধ্যে একটা আংটি ও এক জোড়া মাকড়ী বিক্রি করতে হয়েছে। একটি অনুগত চাষী ছেলেকে দিয়ে অনেক কষ্টে বিক্রি করানো হয়েছে –কিন্তু তাতেই বা ক’দিন চলে?

সব চেয়ে মজা হচ্ছে এই এত দুঃখের মূল যে, সেই স্বামীর ওপর শ্যামার রাগ যত হয় তার চেয়ে ঢের বেশি মন-কেমন করে। এক একটা দুর্যোগের রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে ওর যেন রাত আর কাটে না। ওর সেই বলিস্ট সুন্দর স্বামী। কোথায় আছে, কী করছে কে জানে! যদি অসুখই ক’রে থাকে? হয়তো ওরা যা ভাবছে তা নয়। হয়ত রোজগার করতেই সে কোন্ দূর দেশে গিয়ে পড়েছে যেখান থেকে চিঠি আসে না। ওর মন স্নেহশীল জননীর মতই একান্ত স্নেহে স্বামীর সব দোষ ঢেকে দিতে চাইত–অনুপস্থিত কোন প্রতিপক্ষের সঙ্গে তর্ক ক’রে ক’রে ক্লান্ত হয়ে পড়ত। কাকে যে সে বোঝাচ্ছে, কার কাছে নরেনের দোষ-স্খালনের চেষ্টা করছে তা সে নিজেই জানে না, তবু ওর মনের দ্বন্দ্বের ও যুক্তি-সৃষ্টির বিরাম থাকত না।

মাঝে মাঝে প্রাণ যখন খুব আকুলি-বিকুলি ক’রে উঠত–তখন বেদনার অসহ্য তীব্রতায় শ্যামা জোরে আঁকড়ে ধরত শাশুড়ীকেই। ক্ষমা হয়ত ঘুম ভেঙে প্রশ্ন করতেন, ‘কী হয়েছে ছোট বৌমা, ভয় পেয়েছ মা? এই যে আমি আছি মা–ঘুমের ঘোরে বুঝি কি স্বপন দেখেছে বাছা আমার। ষাট্‌ ষাট্!

অপ্রস্তুত হয়ে শ্যামা বলত, ‘না না।’ পাশ ফিরে শান্ত, সংযত হয় শুত। ঘুম আসত না ওর তবুও।

বাইরে অন্ধ তামসী নিশি মাতামাতি ক’রে চলত অবিশ্রান্ত। তাল ও নারকেল গাছের মাথাগুলোয় প্রতিহত হয়ে বাতাস গোঁ গোঁ শব্দ করত। বন্ধ খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে চোখে বিদ্যুৎ-চমকের আভাস লাগত ক্ষণে ক্ষণে, মেঘের গর্জন চমকে দিত সেই অন্যমনস্কতার মধ্যেই। শুয়ে শুয়ে ভাবত স্বামীর কথা। সে সময় ওর নিজের দুঃখের একটি কথাও মনে পড়ত না। অন্তরের সমস্ত বর্ষণ চলত একটি মাত্র লোককে কেন্দ্র ক’রেই।

হয়ত অনেকক্ষণ পরে চোখের জল ধারায় ধারায় নিঃশব্দে ঝ’রে পড়তে শুরু হ’ত। অবশেষে শ্রান্ত হয়ে শ্যামা ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়ত।

তিন

ভাদ্রের প্রথমেই অপ্রত্যাশিতভাবে পনেরোটা টাকা মনিঅর্ডারে এল দেবেনের কাছ থেকে। তাতে দু’ছত্র চিঠি লেখা শুধু–‘বিশেষ ব্যস্ত থাকায় সংবাদ লইতে পারি নাই। শীঘ্রই যাইতেছি।’

তার মধ্যে নরেনের কোন কথা নেই। তা না থাক্‌ নতুন ক’রে যেন একটা আশার জোয়ার এল মনে। রাধারাণী, ওদের দুজনের স্বামীই সমান স্তরে নেমে এসেছে এই চিন্তাতেই যেন বেশি রকম মুষড়ে ছিল, এইবার হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। ওর সমস্ত কথাবার্তায় নতুন-ক’রে ফিরে-পাওয়া স্বামী-সৌভাগ্যের অহংকার যেন নতুন পালিশ করা চুড়ির ঝিলিকের মত অনবরত ঠিকরে বেরোতে লাগল। ছোট জায়ের প্রতি সহানুভূতির শেষ রইল না ওর। সে সহানুভূতির সরল অর্থ হ’ল ছোট জাকে জানিয়ে দেওয়া যে, এই ক’ মাসে যা ধারণা করেছিলে তা ঠিক নয়–আমার স্বামী হাজার হোক তোমার স্বামীর চেয়ে ঢের ভাল।

তা হোক্‌–শ্যামা তাতে তত দুঃখিত নয়। সে-ও একান্ত মনে ভাশুরের আগমনের জন্যে দিন নয়–প্রহর গুনতে লাগল। ওর আশা যে ভাশুর এলে স্বামীর খবর ও একটা পাবেই। শুধু সেই আশায় ও সমস্ত অপমান সইতে পারে অনায়াসেই।

কিন্তু তার আগেই একটি স্মরণীয় ঘটনা ঘটে গেল।

ভাদ্রের মাঝামাঝি শ্যামা একদিন শাশুড়ীকে ডেকে বললে, ‘মা, পেটটা কেমন করছে। একটু উঠুন না।

তখনও ক্ষমা বুঝতে পারেন নি। তিনি তাড়াতাড়ি উঠে আলো জ্বাললেন।

কিন্তু বাইরে থেকে ঘুরে এসে শ্যামা যন্ত্রণায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল।

কী তীব্র অসহ্য যন্ত্রণা পেটে— মনে হল যেন সাঁড়াশি দিয়ে কে ওর পেটের মাংস টেনে টেনে ছিঁড়ছে।

‘ওকি বৌমা? ওমা কি হবে! এরই মধ্যে তোমার ছেলেপুলে হবে নাকি? সাধ হ’ল না যে এখনও! দাইকেই বা কে খবর দেয়? অ বড় বৌমা, কি হবে মা, ওঠো না একবার!’

উঃ! বাপ রে! শ্যামার মুখ বিবর্ণ, চোখ ঠেলে বেরোচ্ছে। যন্ত্রণায় সমস্ত দেহ কুঁচকে কুঁচকে উঠছে। তবু সম্ভাবনাটা মাথায় আসার পর থেকে যেন কী একটা আনন্দও হচ্ছে ওর, ঐ যন্ত্রণার মধ্যেই।

ক্ষমা তাড়াতাড়ি ছুটলেন পাশের বাড়িতে। অন্ধকারে, জঙ্গলের মধ্য দিয়ে, জ্ঞানশূন্য হয়ে। পাশের বাড়ির গিন্নীটি অবশ্য খুব ভাল বলতে হবে। তিনি তখনই নিজের বড় ছেলেকে দাইয়ের সন্ধানে পাঠিয়ে ক্ষমার সঙ্গে চলে এলেন। কিন্তু ততক্ষণে শ্যামার ছেলে হয়ে গেছে, টুকটুকে কোল-আলো-করা পুত্র-সন্তান। শান্তিতে শ্যামা চোখ বুজেছে।

ক্ষমা তাড়াতাড়ি ছুটে এসে খোকাকে কোলে তুলে নিলেন।

হতভাগাটা কোথায় আছে, কী করছে কে জানে। পুত্র-সন্তানের মুখ প্রথম তারই দেখার কথা। তা সে ভাগ্যি কি আছে! ক্ষমার মনে মনে পরিতাপের শেষ রইল না।

আশ্বিন মাসের গোড়ার দিকে সত্যিই দেবেন এসে হাজির হ’ল একদা।

তাকে দেখে ক্ষমার চোখের জল আর বাঁধ মানে না; তাঁর অমন সুন্দর ছেলের কী হাল হয়েছে! নরেন তবু একটু ময়লা, দেবেনের রং ছিল কাঁচা সোনার মত। সে রং পুড়ে কালো হয়ে গেছে। চোখ কোটরগত, দৃষ্টি নিষ্প্রভ। গাল চড়িয়ে, রোগা হয়ে একেবারে যেন বুড়ো হয়ে গেছে। হাতে পায়ে কি ঘা হয়েছিল, এখনও সব সারে নি।

রাধারাণীও বার বার চোখ মুছতে লাগল।

দেবেন বললে, ‘কী করব? ছোটবাবুর তো ঐ অবস্থা। কোন পাত্তাই নেই। এধারে আমার চাকরিটি গেল—’

‘সেই কি রে, তোর যে পাকা চাকরি শুনেছিলুম।’ ক্ষমা বাধা দিয়ে বলেন।

‘তুমি ক্ষেপেছ মা! চাকরি আবার পাকা! বিশেষ আজকালকার বাজারে! সে থাক। এখন ঐ ত অবস্থা, বাড়ি কেনা হয় না, অথচ হাতে যা টাকা আছে, বসে বসে খেলে আর কদিন বলো? কী করব ভাবছি, এক বন্ধু পরামর্শ দিলে উড়িষ্যায় গিয়ে হরতুকির ব্যবসা করতে। নৌকো আর হাঁটা পথে সেখানে যেতে হয় কিন্তু খুব নাকি পয়সা কারবারটায়। তার ভোচ্‌কানিতে ভুলে সেই কারবার করতে গিয়ে হাড়ির হাল একেবারে। দেখ না, পথে ডাকাতি হয়ে যথাসর্বস্ব গেল, তারপর পড়লুম রোগে, তিন মাস হাসপাতালে পড়ে। একটু ভাল হয়ে উঠতেই সেখান থেকে ছাড়া পেলুম বটে কিন্তু কোন্ মুখে তোমাদের কাছে এসে দাঁড়াব শুধু হাতে?

‘তাই ওখান থেকে চলে গেলুম আবার—’

‘সে আবার কোথা রে?’

‘সে আছে, বহু দূরে, পশ্চিমে। সেই কাশীর কাছাকাছি। ওখানে গিয়ে আর এক বন্ধুর পরামর্শ শুনে লাগিয়ে দিলুম ডাক্তারি। তা বলতে নেই, এখন একরকম জমিয়ে বসেছি।’

‘ডাক্তারি? তুই কি ডাক্তারি করবি রে? শুনেছি পড়তে হয়, পাস করতে হয়!’

‘সে তুমি জানো না। ওসব বন-দেশ, ওখানে কে পাস করা ডাক্তার যাবে? পাঁচ সাত রকম মোটামুটি ওষুধ নিয়ে গিয়ে ওখানে বসেছি, তাইতেই চলে যায়। ওরা তাতেই খুশী।’

‘তারপর মানুষ-টানুষ মারবি না ত রে? শেষে কি হাতে দড়ি পড়বে?’

কৈ, এই ত ছ মাস কাটিয়ে এলুম। এখন সবাই আসছে আমার কাছে।’

মুখে মুখে এমনি উপন্যাস রচিত হয়ে গেল। আসলে দেবেনের এই শেষের ডাক্তারী করার গল্পটাই ঠিক। আগেরটা সর্বৈব মিথ্যা। মূর্খের হাতে টাকা পড়লে যা হয় তাই হয়েছিল ওরও। কয়েকটি হিতাকাঙ্ক্ষী বন্ধু জুটেছিল। তারপর দিনকতক একটু ফূর্তি না করতে করতেই টাকা কটা যেন পাখায় ভর করে উড়ে গেল। রেখে গেল শুধু নানাপ্রকারের কুৎসিত রোগ।

হাসপাতালে যাওয়ার কথাও অবশ্য ঠিক। নইলে উপায় ছিল না। সেখান থেকে বেরিয়ে পাঁচ-সাত টাকা ধার ক’রে ও আবার চলে যায়। ওষুধ ছিল না একটাও, কেনবার টাকা কোথায়? ছিল এক বোতল সিরাপ আর রঙীন কাঁচের শিশিতে জল। আর শুধু ছিল একটু সোডা, সেও ঐ বন্ধুর পরামর্শ। ‘ডালরুটি খায় ব্যাটারা সোডা একটু ক’রে দিস জলের সঙ্গে মিশিয়ে, তাতে উপকারই হবে। রোগ যা ভাল হবার তা আপনিই হয়, যা হবে না তা কি আর ডাক্তারই ভাল করতে পারবে? ডাক্তারের হাতেই কি সব রুগী বাঁচে? তবে আর ভাবনা কি?’

এই বন্ধুটি সৎ-পরামর্শই দিয়েছিল। শহরে চার আনা ক’রে ফি নেয় দেবেন, গ্রামে গেলে আট আনা থেকে একটাকা পর্যন্ত। গম্ভীরভাবে নাড়ী দেখে, চোঙ্গা ফিরে এসে ওষুধ পাঠিয়ে দেয়। এক শিশি ওষুধ দু আনা। রোগ সেরে গেলে লাউটা কুমড়োটা কপিটা ডাল কড়াই গম, এসব ত আছেই। ফলে এই দু’তিন মাসেই দেবেন একটা খস্তর কিনেছে, এখন তাইতে চেপে দেহাতে ডাক্তারী করতে যায়।

দিন-তিনেক পরে মার কাছে বসে মাথাটাথা চুলকে দেবেন বললে, ‘মা, আমাকে ত ফিরতে হয় এবার।’

সে কি রে? এরি মধ্যে?’

‘নইলে রুগীপত্তর যা হাতে এসেছে অন্য ঘরে চলে যাবে যে! এই কি আমার আসা উচিত হয়েছে। নেহাত তোমাদের জন্যে প্রাণটা ছটফট করছিল তাই।’

‘তা তবে যা। কিন্তু আমাদের কি গতি হবে?’

আর একটু ইতস্তত করে দেবেন বললে, ‘ওখানে একটা ঘর নিয়েছি বটে– কিন্তু খাওয়াদাওয়ার অসুবিধা হচ্ছে। খেটেখুটে এসে হাত পুড়িয়ে রেঁধে খাওয়া– সে আর পোষায় না।’

‘কেন ওখানে ঠাকুর ঠাকুর—’

‘তুমি ক্ষেপেছ মা! এতকাল পরে ঐ খোট্টা বামুনের হাতে খাব আমি? ওদের কি জাতের ঠিক আছে! মাঠ থেকে ফিরে এসে কাপড় ছাড়ে না!’

ক্ষমা কল্পনাও করতে পারবেন না কোনদিন যে পতিতালয়ের ভাত ও মাংস দুইই দেবেনের চলে গিয়েছে ইতিমধ্যে। সেটা জেনেই দেবেন নিশ্চিন্ত হয়ে কথাটা বলতে পারলে।

ক্ষমা একটুখানি চুপ করে থেকে চিন্তিতভাবেই বললেন, ‘তা হ’লে তুই কি আমাদের নিয়ে যেতে চাস? কিন্তু নরো ত কোন খবরই রাখছে না, কোনদিন যদি ফিরে আসে আমাদের খোঁজটা পর্যন্ত পাবে না!’

দেবেন চীৎকার ক’রে উঠল, ‘ও হারামজাদার নাম করবে না আমার সামনে এই বলে দিলুম, ব্যস্। নইলে খুনোখুনি হয়ে যাবে। চিরদিন তোমার এক ভাবেই গেল। তোমার যেন একটা অযথা স্নেহ ওর ওপরে, তোমার প্রশ্রয়েই ত ও এতটা উচ্ছন্ন যেতে পারলে! নচ্ছার, বোম্বেটে বদমাইশ, বেজম্মা কোথাকার!’

শ্যামা আড়াল থেকে শিউরে উঠল। ওর চোখে জল এসে গিয়েছিল ভাশুরের কথার মধ্যে যে সংশয়টা প্রচ্ছন্ন ছিল সেটা অনুমান ক’রে।

ক্ষমাও ছেলের রাগ দেখে তাড়াতাড়ি কথাটা চেপে গিয়ে বললেন, ‘তা সে তার যা খুশি হোক গে, এখানে না পায় বৌমার মার কাছে ত একবার খবর নেবে। কী আর করা যাবে।

দেবেন মুখখানা গোঁজ করে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বললে, ‘সব সুদ্দু যাবার কথাই বা কে বলেছে? আমার নতুন ডাক্তারী, এতগুলো লোককে ঘাড়ে নিয়ে গিয়ে চালাবো কি ক’রে? থাকি তো একখানা ঘরে।’

অবাক হয়ে ক্ষমা প্রশ্ন করেন, ‘তবে?’

এখনকার মত তোমার জ্যেষ্ঠা পুত্রবধুঁকেই শুধু নিয়ে যাব।’

দেবেন উদাসীনভাবে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল।

কিছুক্ষণ পর্যন্ত বিস্ময়ে ক্ষমার মুখ দিয়ে কথাই বেরোল না। তারপর শুধু আস্তে আস্তে প্রশ্ন করলেন, ‘তা হ’লে আমাদের কি হবে? এই নির্জন নিবান্দাপুরীতে দুটো মেয়েছেলে পড়ে থাকব? আমি ত এই বুড়ো হয়েছি, যদি ভালমন্দ কিছু হয়? ও ত দুধের মেয়ে–তায় সঙ্গে একটা বাচ্চা, কি করে সামলাবে? আমরা খাবোই বা কি তাও ত জানি না। সব ত উড়িয়ে পুড়িয়ে দিলি!’

দেবেন বললে, ‘তা ব’লে কি সবাই চলে যাওয়াই ঠিক হবে? এই ত নিজেই বলেছিলে যদি নরো ফিরে আসে–সে কাউকে খুঁজে না পেয়ে কী করবে সেটা ভেবে দেখেছ? তাকে কি একেবারে ভাসিয়ে দেওয়া ঠিক? তুমি ত তারও মা।’

ক্ষমার আর বেশি বিস্মিত হবার অবস্থা ছিল না। তিনি শুধু ওর দিকে চেয়েই রইলেন। দেবেন একটু থেমে বললে, ‘না হয় বৌমাকে কলকাতাতে ওর মায়ের কাছে পাঠিয়ে দাও। তুমি থাকো এখানে–একটা ঝি-টি দেখে নাও। আমি না হয় চার পাঁচ টাকা ক’রে পাঠাবো’খন্। না হয় চার পাঁচ মাস দ্যাখো অন্তত, তখনও নরো না ফেরে আমি তোমাকে এসে নিয়ে যাবো এখন।’

‘তোমাকে’ শব্দটার ওপর অতিরিক্ত জোর দিলে দেবেন।

ক্ষমা একটুখানি চুপ ক’রে থেকে উঠে অন্যত্র চলে গেলেন। যাবার সময় শুধু শান্ত ভাবেই বলে গেলেন, ‘সে আমরা যা হয় করব এখন তোমার যাওয়ার দরকার, ভাল দিন দেখে চলে যাও। আমাদের জন্য ভাবতে হবে না তোমাকে।’

‘ঐ ত– সে ত জানি চিরদিন। নরোর সাত খুন মাপ। আমি যদি ভাল করতে যাই ত সেও খারাপ। বেশ তাই করব। কালই নিয়ে যাব। তার মা নয়? আমার একার মা? আমিই বা বইব কেন? আমি উড়িয়ে দিয়েছি পয়সে সে ওড়ায় নি? বেশ করেছি উড়িয়েছি, আমার পৈতৃক সম্পত্তি আমি উড়িয়েছি।

চীৎকার ক’রে দেবেন গজরাতে লাগল বহুক্ষণ পর্যন্ত।

রাধারাণী অভিশাপের ভয়ে শাশুড়ীর পায়ে হাত দিয়ে ছলোছলো চোখে বললে, ‘আমাকে মাপ করুন মা– উনি যে এমন কথা বলবেন তা আমি স্বপ্নেও ভাবি নি। না বলবারও যো নেই, জানেন ত মানুষটাকে। আমার যেন মাথা কাটা যাচ্ছে মা লজ্জায়।’

সস্নেহে ওকে বুকে টেনে নিয়ে চুমু খেয়ে ক্ষমা বললেন, ‘তোমার লজ্জা কি মা’ তোমার দোষই বা কি? ওকে কি আর চিনি না। অমানুষ ছেলে পেটে ধরেছি, তার ফল ভোগ ত আমাকেই করতে হবে। তোমাদেরও এই শাস্তির মধ্যে ফেললুম- সেই আমার সব চেয়ে বড় লজ্জা। বিয়ে যখন হয়েছে মা, স্বামী যেখানে নিয়ে যাবে, তোমাকে ত যেতেই হবে।’

রাধা জায়ের হাত ধরে কেঁদেই ফেললে। এতদিনের একান্ত সাহচর্যে সে জাকে ভালই বেসেছিল একটু। বললে, ‘ভাই, এ আমার সুখের যাওয়া নয় বিশ্বাস কর।’

তারপর একটু থেমে মাথা নীচু ক’রে বললে, ‘আমার সন্দেহ হচ্ছে ভাই, ও খারাপ রোগ-টোগ কিছু নিয়ে এসেছে। বড্ড ভয় করছে।

শ্যামা অবাক হয়ে বললে, ‘খারাপ রোগ কি দিদি? সে কেমন ক’রে হয়?’

‘তা ঠিক জানি নে ভাই, তবে শুনেছি লোকের মুখে, খারাপ মেয়ে-মানুষের কাছে গেলে নাকি কী হয়! তোমাকে যেন কোনদিন জানতেও না হয়। কিন্তু আমার যেন কেমন লাগছে!’

দেবেন পরের দিনই রাধারাণীকে নিয়ে চলে গেল। যাবার সময় মাকে প্রণাম ক’রে পায়ের কাছে তিনটি টাকা রেখে গেল। ওপাশের দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললে, ‘এখন আর নেই হাতে, এতটা পথ যেতে হবে, খালি হাতে ত যাওয়া যায় না। গিয়ে বরং দু-একদিনের মধ্যে কিছু পাঠাব এখন—’

ক্ষমা সারাদিন রান্নাঘরে বন্ধ হয়ে ছিলেন কিন্তু যাত্রার সময় পুত্রবধু, বিশেষত পৌত্রের কল্যাণের কথা স্মরণ ক’রেই না বেরিয়ে থাকতে পারলেন না। তেমনি আর একটি পুত্রবধূর কথা স্মরণ ক’রেই টাকাটা ছুঁড়ে ফেলে দেবার লোভ সংবরণ করলেন। শুধু বললেন, ‘ওকে বলো বড় বৌমা, পথেঘাটে যদি দরকার হয় ত ওটাও নিয়ে যাক। যখন ভাল বুঝবে পাঠাবে। আমাদের এতকাল যেভাবে কেটেছে সেই ভাবেই কাটবে।’

দেবেন ততক্ষণে গরুর গাড়িতে গিয়ে উঠেছে– সে আর উত্তর দিলে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *