০১. কলকাতার কাছে–খুবই কাছে

কলকাতার কাছেই – গজেন্দ্রকুমার মিত্র

ভূমিকা

এই উপন্যাসের পাত্র-পাত্রী ও ঘটনা–সবই কাল্পনিক। কোন বাস্তব ঘটনা বা মানুষের সঙ্গে যদি দৈবাৎ কোন চরিত্র বা ঘটনার সাদৃশ্য লক্ষিত হয় তাহলে বুঝতে হবে তা নিতান্তই কাকতালীয় ব্যাপার। এই পাত্র-পাত্রীদের নিয়ে আরো দু-একখানি উপন্যাস রচনার ইচ্ছা আছে, কিন্তু সে অনেক পরের কথা।

লেখক
৭ই আষাঢ়
১৮৭৯ শকাব্দ

প্রথম পরিচ্ছেদ

কলকাতার কাছে–খুবই কাছে। শহরের এত কাছে যে এমন দেশ আছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত। অথচ হাওড়া থেকে বি. এন. আর-এর গাড়িতে চাপলে আট ন মাইলের বেশি নয়। বার-দুই বদল করতে যদি রাজী থাকেন ত বাসেও যেতে পারেন–অবশ্য বর্ষাকাল বাদ দিয়ে, কারণ সে রাস্তা বর্ষায় অগম্য হয়ে ওঠে।

স্টেশন থেকে নেমে সোজা যে রাস্তা চলে গেছে, সেই রাস্তা ধরে মিনিট তিন-চার হাঁটলেই আপনার মনে হবে যে আপনি কোন গহন অরণ্যে প্রবেশ করছেন। রাস্তা এবড়োথেবড়ো–খানা-খন্দে লুপ্তপ্রায়। এ নাকি পাকা রাস্তাই কিন্তু আজ আর তার কোন চিহ্ন কোথাও খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। বর্ষায় কাদা হয় হাঁটু সমান, তারই মধ্যে গোরুর গাড়ি ও ভারী ভারী লরি গিয়ে দুধারে যে গর্ত হয়, বর্ষার শেষে সেটা শক্ত পাহাড়ের পাশে খাদের মত হয়ে থাকে, আর চৈত্র-বৈশাখ নাগাদ সবটা ভেঙে গুঁড়িয়ে ময়দার মত মিহি নরম ধূলোর দীঘিতে পরিণত হয়, পায়ের গোছ পর্যন্ত ডুবে যায় তার ভিতর। রাস্তার আশেপাশে অসংখ্য পানা-ভর্তি ডোবা আপনার নজরে পড়বে–এক-আধটা পুকুর চোখে পড়াও বিচিত্র নয়। বাড়ি-ঘর আছে, তার অস্তিত্ব টের পাবেন কিন্তু চোখে দেখবেন কদাচিৎ, কারণ আপনার দৃষ্টি এবং সে সব বাড়ির মধ্যে নুয়ে-পড়া নিবিড় বাঁশবন ও তেঁতুল-জামরুল প্রভৃতি গাছের জড়াজড়ি, তাতে কত কি অসংখ্য বুনো লতা উঠেছে। সেই সব বাঁশের দু-একটা রাস্তার ওপরও নুয়ে এসে পড়েছে; পথিকরা নিত্য যাওয়া-আসার সময় মাথা হেঁট ক’রে যায়, তবু সেগুলো কাটবার বা কাটাবার কথা কারও মনে পড়ে না।

রাস্তার ধারে ধারে প্রকান্ড প্রকান্ড পগার বর্ষার জলে এবং তারপর বহুদিন পর্যন্ত পাঁক ও কাদায় ভর্তি থাকে। অনেকের বাড়ি থেকেই ময়লা পড়বার এ-ই পথ, কিন্তু বেরোবার নয়। ফলে একটা চাপা ভ্যাপ্‌সা দুর্গন্ধ বাড়ির বাতাসকে সর্বদা ভারী ক’রে রাখে। এই সব পগার গোসাপ ভাম ও ভোঁদড়ের আড্ডা। কুৎসিত ভয়ঙ্কর গোসাপগুলো এঁকেবেঁকে প্রকাশ্য দিবালোকেই চলাফেরা করে। মশা এখানে দিনের বেলাতেও আত্মগোপন করা আবশ্যক মনে ক’রে না, দিবারাত্রির প্রতিটি মুহূর্তেই ম্যালেরিয়ার সর্বনাশা বিষ ছড়িয়ে বেড়ায়।

ফলে যে মানুষগুলো সদা-সর্বদা এখানে বাস করে তারা সবাই অর্ধমৃত; ম্যালেরিয়া ও পেটের অসুখ ওদের জীবনশক্তিকে যেন নিঙড়ে বার করে নিয়েছে। জীবনকে ওরা যেন প্রতিমুহূর্ত ব্যঙ্গ করে চলেছে। যারা অফিস করে তারাও যে খুব সুস্থ তা নয়-তবে জ্বর হলেও কাঁপতে কাঁপতে তাদের অফিস যেতে হয়–বিকেলে আসবার সময় যথারীতি বাজারের থলিও সঙ্গে থাকে–সুতরাং ঐটুকু প্রাণের লক্ষণ তাদের আজও যায় নি। তারই মধ্যে যারা একটু ভাল চাকরি করে, অর্থাৎ যাদের ডি. গুপ্ত কিংবা এডওয়ার্ডস্ টনিক কিনে খাবার সঙ্গতি আছে তাদের অবস্থা একটু ভাল; আরও ভাল চাকরি করে যারা তারা এখানে থাকে না- বেকার আত্মীয়দের বাড়ি ছেড়ে দিয়ে কলকাতায় গিয়ে বাসা নিয়েছে।

অথচ এখানে রাজা আছেন, রাজার চেয়েও ধনী জমিদার আছেন। তাঁরা নাকি প্রজাদের কষ্ট হবে বলেই মিউনিসিপ্যালিটি হ’তে দেন না। রাজারা এখানে থাকেন না–জমিদারদেরও অনেকেই বালিগঞ্জে বাড়ি নিয়েছেন। অবশ্য গ্রামবাসীরা চেষ্টা করলে তাঁরা বাধা দিতে পারতেন না এটা ঠিকই, কিন্তু সে চেষ্টা করবে কে? বছরে ন মাসই তারা অসুস্থ থাকে। এখন সম্প্রতি যুদ্ধের দৌলতে কিছু লোক এসেছে, বাস্তুহারাও কিছু কিছু দেখা দিয়েছে বটে, রাস্তাঘাটে লোক দেখা যায়, জোর হাসির আওয়াজ শোনা যায় মাঝে মাঝে, তাই বলে যদি মনে ক’রে থাকেন যে রাস্তাঘাটের কিছু উন্নতি হয়েছে কিংবা বনজঙ্গল কিছু কমেছে ত সে আপনার ভুল। সে ভুল, এখনও যদি আপনি চার আনা দিয়ে টিকিট কিনে ওখানে একবার যেতে রাজী থাকেন ত ভাঙতে বেশি দেরি হবে না।

তবে পথে যেতে যেতে দু-চারখানা বাড়ি বেশি নজরে পড়বে এটা ঠিক। কিন্তু বনজঙ্গল তাতে এমন কিছু কমে নি। খানিকটা এগিয়ে খালের পুল পার হয়ে রাজার বাড়ি ডাইনে রেখে বাজারের পাশ কাটিয়ে আরও যদি চলতে থাকেন ত একসময় আপনার মনে হবে দুপুরেই বুঝি সূর্য অস্ত গেছে– ভ্যাপসা গন্ধ আপনার নিঃশ্বাস রোধ ক’রে আনবে। বুঝবেন—আপনি এইবার শ্যামাঠাকরুনের বাড়ির কাছাকাছি এসেছেন।

অনেকখানি জমি নিয়ে ওঁর বাড়ি। ওঁরই নিজস্ব বাড়ি, স্বামীর নয় কিংবা ছেলে- মেয়েদেরও নয় এখনও পর্যন্ত। পুকুর আছে, তেইশটা নারকেল গাছ, প্রায় শতখানেক ঝাড় কলা, আম-জাম-জামরুল-আমড়া-সুপুরি আরও কত যে গাছ তার ইয়ত্তা নেই। বাঁশঝাড়ও আছে ওর মধ্যে। শ্যামা-ঠাকরুন তাঁর জমির এক বিঘত স্থানও বৃথা ফেলে রাখতে প্রস্তুত নন, ফলে গাছগুলি এত ঘনসন্নিবিষ্ট যে কোন গাছেই আজ আর ভাল ফলন হয় না। শ্যামাঠাকরুন প্রতিবেশীদের গাছে গাছে ফল দেখেন, লাউ-মাচায় লাউ, মাটিতে কুমড়ো দেখেন আর নেজের অদৃষ্টকে ধিক্কার দেন, ‘মরণ আমার, মরণ! পোড়া কপাল হলে কি গাছপালাও পেছনে লাগে রে! কেন, কেন, আমি কি করেছি তোদের? ঐ সব চোখখাকী, শতেক খোয়ারীদের বাড়ি মরতে যেতে পারো আর আমার কাছে আসতে পারো না?’

রাগে দাঁত কিড়মিড় করে ওঠেন তিনি। দাঁত তাঁর এখনও অনেকগুলো আছে, সামনের প্রায় সবগুলোই আছে, যদিও উনআশি বছর বয়স হল তাঁর! কিন্তু কোমরটা ভেঙে গেছে, রাস্তায় চলেন একেবারে যেন রাস্তার ওপর উপুড় হয়ে হয়ে। যখন খুব কষ্ট হয় মধ্যে মধ্যে একবার কোমরে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করেন, কিন্তু সবটা সোজা হয় না, কেমন একটা অদ্ভূত ত্রিভঙ্গ আকার ধারণ করেন।

তাই বলে তিনি চলাফেরাও বড় কম করেন না। এখান থেকে হেঁটে পোড়া শালিমার শিবপুর পর্যন্ত সুদ আদায় করতে যান মাসে তিন-চার দিন। যেতে-আসতে দিন কেটে যায়, কারও বাড়ি কিছু জুটলে আহার করেন, নইলে উপবাসী থেকেই ফেরেন। সবাইয়ের বাড়ি খেতেও পারেন না, কারণ এখনও ওঁর জাতের সংস্কার যায় নি–খুব ছোট জাত ব’লে যাদের মনে করেন তাদের বাড়ি জলও খান না। …এ ছাড়া বাড়িতে থাকলেও তিনি এক মিনিট বসে থাকেন না– শুকনো লতাপাতা, কলার বাস্না, নারকেল-সুপুরির বেল্‌দো– এই সব সংগ্রহ ক’রে বেড়ান সারাদিন, অবিশ্রান্ত। জমেছে বিস্তর, বাড়ির একখানা ঘর, রক দালান বোঝাই, তবু সংগ্রহের বিরাম নেই। বলেন, ‘কেউ কি আমাকে এক মণ কাঠ কি কয়লা কিনে দিয়ে সাহায্য করবে, এ আমার সম্বচ্ছরের জ্বালানি হয়ে থাকবে। বর্ষার সময় কি তোদের মত ছ আনা শ দিয়ে ঘুঁটে কিনব?’

যদি কেউ প্রশ্ন করত, ‘ও বামুন মা, তোমার গত বছরের পাতাই যে রয়েছে—’ তিনি বেশ একটু ঝেঁজেই জবাব দিতেন, ‘থাক্ না বাছা, পাতায় নজর দাও কেন? এক বছর যদি বর্ষা বেশিই হয়, তখন কার কাছে ধার করতে ছুটব বলো?’

শুকনো পাতা আর টাকার সুদ, এ ছাড়া অন্য কোনও চিন্তা ওঁর ছিল না। সুদের লোভে আসল তাঁর অনেক বারই ডুবেছে। এমন সব জামিনে টাকা ধার দিয়েছেন যা আদায় হওয়া বা আদায় করা সম্ভব নয়। ঘটি বাটি বাসন রেখে বিস্তর টাকা ধার দিয়েছেন, সে সব স্তূপাকার হয়েছে খাটের নিচে। কোন্‌টা কার এবং কত টাকা বা কত আনায় বাঁধা আছে সে হিসাবও আর করতে পারেন না– ফল যে হয়ত এক টাকা ধার নিয়েছিল সে আট আনার ওপর সুদ হিসেব ক’রে সুদ-আসল দিয়ে বাসনটা ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

অবশ্য তাতে যে ওঁর বিশেষ কিছু ক্ষতি-বৃদ্ধি আছে তা নয়। তিন ছেলে তাঁর, তিন মেয়ে; অসংখ্য নাতি নাতনী। নাতনীদেরও ছেলে-মেয়ে হয়ে গেছে। চাঁদের হাট বসবার কথা বাড়িতে। তবু আজ কেউ নেই তাঁর। এত বড় বাড়িটায় তিনি একা। সম্পূর্ণ একা। ঘরের জানলার পাশে অসংখ্য লতা, উঠানে এত গাছপালা যে একবিন্দু বাতাস কি একটুকরো আলো কোথাও দিয়ে ঢোকে না। চৈত্র-বৈশাখে যখন দম্‌কা দক্ষিণ বাতাসে নারকেল গাছের মাথাগুলো মাতামাতি করে, বাঁশঝাড়ে বড় পাকা বাঁশের ডগাগুলো নুয়ে নুয়ে পড়ে তখন এ-বাড়ির ঘরে বা রকে একটুও হাওয়ার আভাস টের পাওয়া যায় না। বেলা চারটে বাজলেই এ-বাড়িতে আলো জ্বালবার প্রয়োজন হয়, মশার গর্জন শুরু হয়ে যায় ঘরের কোণে কোণে–এই অন্ধকার ঝুসী ভয়াবহ বাড়িতে শ্যামাঠাকরুন একা ঘুরে বেড়ান। সারাদিন পাতা কুড়িয়ে একরকম ক’রে কাটে কিংবা সুদের হিসাব করে। কিন্তু রাত্রিটা বড় দুঃসহ। ঘুম হয় না তাঁর আদৌ। তেল খরচের ভয়ে আলোও জ্বালেন না। দিনের বেলার আহার সারতেই বেলা তিনটে বাজে- কাজেই রাত্রে কিছু খাবার প্রয়োজন হয় না। হ’লেও অন্ধকারেই উঠে হাতড়ে হাতড়ে টিনের কৌটোর ঢাকনি খুলে চালভাজা বার করেন, অন্ধকারেই একটু তেল-হাত বুলিয়ে নেন–তারপর দীর্ঘ রাত পর্যন্ত কুড়কুড় ক’রে বসে বসে খান। সেই গাঢ় অন্ধকারে,– নক্ষত্রের আলো আসার উপায়ও সেখানে নেই –সেই চাপা দুঃসহ অন্ধকারে, প্রেতনীর মত জেগে বসে থাকেন শ্যামা। মনকে বোঝান, চোখে যখন ভাল দেখতে পাই নে, তখন আলো জ্বাললেই বা কি, না জ্বাললেই বা কি।’ দিনের বেলাতেই ত ভাল দেখতে পান না, কেউ এসে ‘বামুন মা’ বলে ডাক দিলে কপালের অসংখ্য বলিরেখা-গুলোকে একত্র কুঁচকে প্রাণপণে চাইবার ভান ক’রে মনে মনে কণ্ঠস্বরটাকে চেনবার চেষ্টা করেন, ‘কে? অ …মহাদেবের মা। এস এস। আমি বলি আর কে!’

যে এসেছে সে হয়তো প্রতিবাদ ক’রে বলে, ‘অ বামুন মা, আমি যে তোমার সীতা-বৌ গো।’

‘ও মা, সীতা-বৌ! আমি বলি মহাদেবের মা।…আর মা, চোখে আজকাল মোটেই দেখতে পাই নে। এই যে তুমি এসে দাঁড়িয়েছ, আমি একটা ঝাপসা ঝাপসা মানুষের মত দেখছি। মুখ চোখ নাক কি ঠাওর পাচ্ছি?’ বামুন মা স্বীকার করেন শেষ পর্যন্ত।

যে এসেছে সে হয়ত বলে, ‘চোখের ছানি কাটাও না কেন বামুন মা, আজকাল ত অনেকেই কাটাচ্ছে।

‘আর মা, ক-টা দিনই বা আছি, তার জন্যে আবার কাটাছেঁড়া টানাটানি কেন? কী হবে বা চোখে দেখে? বই পড়তে ত আর যাবো না? এমনিই ত বেশ চলে যাচ্ছে।’

তারপর একটু থেমে বলেন, ‘শুধু একগাদা টাকা খরচ।’

‘তা হাসপাতালে ত যেতে পারো। এখানকার সব ত হাসপাতালে গিয়েই কাটিয়ে আসে।’

‘কে নিয়ে যাচ্ছে আর কে বা কি করছে, তুমিও যেমন! আমার আর কে আছে বলো! না, ওসব আশা ছেড়ে দাও, এখন কোনমতে তোমাদের রেখে চলে যেতে পারলেই হ’ল।’

যে এসেছে সে হয়ত একটা বাটি রেখে চার আনা পয়সা নিয়ে চলে যায়। শ্যামা আবার সেই আছায়া অন্ধকারে ঘুরে বেড়াতে থাকেন। একা। শুকনো পাতা কুড়িয়ে, এখানের একটা গাছে একটু ঠেকা দিয়ে, ওখানে একটু মাটিটা কুপিয়ে দিয়ে এমনি বাগানের তদ্বির ক’রে। ফসল হ’লেই বা কি, কে আর বাজারে গিয়ে বেচে আসবে? নাতি বলাইটা তবু ছিল, সে-ও শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে উঠল। ‘বেইমান বেইমান। বেইমানের ঝাড় সব।’ আপন মনেই গজগজ করেন শ্যামা, ‘ঐ যে বলে না, ভাতারকে নিয়ে যে সুখী হতে পারলে না তার সুখ জন্মে হবে না। আমার সুখ! মুয়ে আগুন, যম ভুলে আছে তাই! এসব যে কার জন্যে করছি তার ঠিক নেই। সব ত মরে-হেজে গেছে, যমের দোরে গেছে সব!’

তবু তিনি করেই চলেন। বাগান গাছপালার যত্নের ত্রুটি নেই। কৈফিয়তস্বরূপ নিজেকেই বলেন, ‘ওরা কি আমার পর? বলে, কোলের বাছা আর বাড়ির গাছা।’

দুই

আজ আপনারা শ্যামাসুন্দরীকে যা দেখছেন তা থেকে কল্পনা করা শক্ত হ’লেও শ্যামা কিন্তু একদিন সত্যিই সুন্দরী ছিলেন। সাধারণ সুশ্রী মেয়ে নয়–বেশ একটু অসাধারণ রকমের সুন্দরী। ঐ ধনুকের মত বাঁকা দেহ একদিন কলাগাছের চারার মতই সতেজ সরল ও পুষ্ট ছিল, মাথাজোড়া টাকের জায়গায় ছিল মাথাভর্তি মেঘের মত নিবিড় কালো চুল; সারা পিঠ আচ্ছন্ন করে কোমর ছেয়ে উরু পর্যন্ত ঢেকে দিত সে চুল। ঐ ছানি-পড়া স্তিমিত-দৃষ্টি চোখে একদিন বিদ্যুৎ খেলত, সে কটাক্ষে পুরুষের চিত্তে অকস্মাৎ দাহ সৃষ্টি করার কথা। তবে চোখের তারা খুব কালো নয়, ঈষৎ পিঙ্গল বলা যায়–কিন্তু তাতে বিশেষ ক্ষতি হ’ত না। উজ্জ্বল গৌরবর্ণের সঙ্গে সেটা মানিয়ে যেত। পাতলা পাতলা চাপা ঠোঁটে যখন হাসির ঝিলিক খেলে যেত তখন তার আড়াল থেকে দেখা যেত মুক্তোর মত সাজানো সুন্দর দাঁত-তার কিছু চিহ্ন বরং এখনও আছে সে রূপের কথা বিশ্বাস না করেন আমার সঙ্গে কল্পনায় আজ থেকে ঊন-সত্তর বছর আগে শ্যামার বিবাহ–সভায় চলুন, আমি দেখিয়ে দেব।

ঠিক দশ বছর বয়সে শ্যামার বিয়ে হয়। তখন ঐরকমই হ’ত। বরং ওর বড়দির বিয়ে হয়েছিল একটু বেশি বয়সে; বারো বছরের মেয়ে তখন তিনি, তাইতেই লোকে বলত ধাড়ী মেয়ে। শ্যামার দিদি ছিলেন শ্যাম-বর্ণের, তাই পাত্র পেতে কিছু দেরি হয়েছিল। শ্যামা তার নাম মিথ্যা ক’রে গোলাপের মত গাত্রবর্ণ নিয়ে অসাধারণ সুন্দরী হয়ে উঠেছিল–সুতরাং ঘটকী জোরগলায় সম্বন্ধ করেছিল, ‘যদি এককথায় সবাইকার পছন্দ না হয় তো ঘীর কাজ ছেড়ে দেব মা-ঠাকরুন, ডাকের সুন্দরী মেয়ে—এ মেয়ে পছন্দ হবে না, বলেন কি?’

তা ঘট্‌কী পাত্রটিও বেশ যোগাড় করেছিল। চোখ জুড়িয়ে গিয়েছিল শ্যামার মায়ের। আঠর-ঊনিশ বছরের কিশোর ছেলে, বেশ চেহারা–বলিষ্ঠ গড়ন, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, টানা টানা বড় চোখে ঘন কালো পাতা কাজল-পরার মত মনে হয়; যেমন স্বাস্থ্য তেমনি শ্রী, বলবার কিছু নেই। তাছাড়া খিদিরপুরে নিজেদের বাড়ি আছে। ছেলের বাবা অবশ্য যজমানী করতেন, কিছু কিছু শিষ্যও ছিল। বড় ভাই কোথায় চাকরি করে, ছোটও একটা যা হয় জুটিয়ে নিতে পারবে। বাংলা লেখাপড়া কিছু জানে, এ- ছাড়া টাকা-পয়সা জিনিসপত্র বেশ কিছু আছে। বিধবা শাশুড়ী আছেন– বড় ভাশুর, জা, তার একটি ছেলে, সংসারও ছোট।

এক কথায় সব দিক দিয়েই সুপাত্র।

শ্যামার মা আর ইতস্তত করেন নি। খোঁজ-খবর যেটুকু করার করেছিলেন, তবে বেশি করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ তিনিও বিধবা, তিনটি মেয়ে নিয়ে অল্পবয়সে বিধবা হয়েছিলেন, বিষয়সম্পত্তি কিছুই পান নি–ঘটনাচক্রে শুধু সামান্য কিছু নগদ টাকা আর গহনাপত্র নিয়ে ভদ্র– মহিলাকে পালিয়ে আসতে হয়েছিল কলকাতায়। ফলে দেশে যাবার আর তাঁর মুখ নেই। জ্ঞাতিরাও খবর নেয় না, দুর্নাম তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছে। এখানে তাঁর এক দাদা দেখাশুনো করতেন, তিনিও মারা গিয়েছেন। বড় জামাই অবশ্য খুবই ভালা, আর্থিক সাহায্য যথেষ্ট করে, কিন্তু তার সময় কম–এসব কাজ তার দ্বারা হয়ে ওঠে না। পরকে ধরে আর কতটুকু করা যায়?

তাছাড়া, খবর নেবার আছেই বা কি? এই ঘীই তাঁর বড় মেয়ের সম্বন্ধ করে দিয়েছিল। সুতরাং তাকে অবিশ্বাস করবেন কি করে?

শ্যামারও সেদিন ব্যাপারটা মন্দ লাগে নি। এক-গা গয়না, বেনারসী কাপড় পরে মল বাজিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়া- অমন সুন্দর বর (অবশ্য সবাই বলছে তাই, শ্যামাসুন্দরীর সেদিন অত বোঝবার কথা নয়)–সবটা জড়িয়ে ওর মনে যেন একটা নেশা লেগেছিল। আলো বাজনা লোকজন–শাশুড়ীর সদয় মিষ্টি ব্যবহার, সবটাই–ছিল মানসিক সেই অবস্থার অনুকূলে।

প্রথম একটা রূঢ় আঘাত পেলে শ্যামা ফুলশয্যার রাত্রে।

সবাই বর-কনেকে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে, শ্যামা অপেক্ষা করছে দুরুদুরু বুকে। কিসের যেন একটা আশা। ফুলশয্যার রাত্রে স্বামীরা অনেক রকম আদর করে, অনেক রকম মিষ্টি কথা বলে–এ তার শোনা আছে আব্‌ছা আছা, বিবাহিতা বন্ধুদের এবং বড়দির কথার আড়ালে সেই রকমই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদিও সঠিক কোন বর্ণনা পায় নি কারুর কাছেই। তখনকার দিনে বড় বোনরা সন্তানাদি হবার আগে ছোট বোনদের সঙ্গে এসব কথা আলোচনা করত না। আর পনেরো ষোল বছরের দিদি দশ বছরের বোনকে কীই বা বলবে?

যাই হোক, আশা যেমন আছে, লজ্জাও বড় কম নেই। কোথ থেকে যেন লজ্জা এসে তাকে আচ্ছন্ন ক’রে ফেলেছে, সে বসে বসে ঘামছে। কিন্তু নরেন বেশ সপ্রতিভ, সবাই চলে যেতেই সে এক লাফে উঠে দরজাটা বন্ধ ক’রে আবার খাটে এসে বসল। তারপর মিনিটখানেক একটু ইতস্তত ক’রে চাপা গলায় ডাকল, এই শোন।’

শ্যামা হয়ত এই আহ্বানেরই অপেক্ষা করছিল, তবু সুরটা যেন ঠিক বাজল না। ডাকলেই কি সাড়া দেওয়া যায়?

‘এই, শোন না। কী ইয়ারকি হচ্ছে!’

নরেন ওর একখানা হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে কাছে নিয়ে এল। সে টানের জন্য প্রস্তুত ছিল না শ্যামা একেবারে নরেনের গায়ের ওপর এসে পড়ল। অস্ফুট কি একটা বিস্ময়ের স্বরও ওর গলা দিয়ে বেরিয়ে গেল।

‘আহা, ঢং দেখ না। লজ্জা দেখে মরে যাই একেবারে! দেখি সোজা হয়ে বসো। মুখখানা দেখি একবার ভাল করে। সবাই বলছে সুন্দর সুন্দর আমার ছাই ভাল করে দেখাই হ’ল না একবার।’

সে জোর করে শ্যামার মুখখানা ‘ শেজ’ এর ক্ষীণ আলোয় যত তুলে ধরতে যায় ততই ওর মুখ লজ্জায় গুঁজে পড়ে। সুগৌর সুডৌল চন্দনচর্চিত একটি ললাট ও আবীর- ছড়ানো দুটি গালের আভাস পায় নরেন অথচ ভাল ক’রে দেখতে পায় না কিছুতেই, এমনি মিনিটখানেক চেষ্টা করবার পর নরেন ওর মাথায় সজোরে এক গাঁট্টা মেরে বলল, ‘ও আবার কি ছেনালি হচ্ছে– সোজা হয়ে বসো বলছি, নইলে মেরে একেবারে পস্তা উড়িয়ে দেব। তেমন বর আমাকে পাও নি। হুঁ-হুঁ, আমি বাবা পুরুষ-বাচ্চা। মাগের ভেড়ো হবার বান্দা নয়। সোজাসুজি চলো বেশ আছি, ব্যাকামি করছে কি আমি বাপের কুপুত্তুর।

শ্যামা আড়ষ্ট হয়ে গেছে ততক্ষণে। এই কি ফুলশয্যা তার? এই তার স্বামীর প্রথম প্রণয়-সম্ভাষণ!

তাছাড়া তখনকার হিসাবে শ্যামার মা বেশ ভাল রকমই শিক্ষিতা ছিলেন, অনেক বাংলা সাহিত্যের বই আছে তাঁর তোরঙ্গে শ্যামারাও দুই যমজ বোনে ছাত্রবৃত্তি অবধি পড়েছিল; এ শ্রেণীর ভাষা তারা শুনতে অভ্যস্ত নয়–ভদ্রসমাজে এমন কথাবার্তা অচল বলেই জানে। কাজেই দৈহিক বেদনায় যত না হোক, অজ্ঞাত একটা আশঙ্কায় ও আশাভঙ্গের ব্যথায় ওর দুটি প্রশন্ত সুন্দর চক্ষু ছাপিয়ে কপোল বেয়ে হু-হুঁ করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।

উঁ! অমনি পাসে চোখে পানি এসে গেল! আগোছলতা! দ্যাখো এসব চালাকি আমার সঙ্গে চলবে না ব’লে দিলুম। আমি যা ধরেছি তা করবই, তুমি চেনো না আমাকে। ভাল চাও ত ভালয় ভালয় মুখখানা তোল। হ্যাঁ, এমনি ক’রে আলোর দিকে—’

শ্যামা ভয়ে ভয়ে মুখ তুলতে বাধ্য হয়।

‘কিন্তু শুধু মুখ তুললেই চলবে না।’

‘চোখ চাও। দেখি কেমন ডাগর চোখ।

‘চোখ চাওয়াটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ, বিশেষত এই অবস্থায়। চেষ্টা ক’রেও চোখ চাইতে পারে না শ্যামা।

‘আবার ঢ্যাঁটামি করে! চোখ চাইতে পারছ না ভাল ক’রে?’

ওর বাহুমুলে সজোরে একটা চিমটি কাটে নরেন। দশ বছরের মেয়ের নরম শুভ্র চামড়ায় নীল দাগ পড়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে। তার ফলে চোখে আরও বেশি জল এসে যায়–এবার যন্ত্রণায়। চোখ আর চাওয়া হয় না কিছুতেই।

‘ধ্যৈস্-বদমাইশ অবাধ্য কোথাকার!’

ওকে এক ঠেলা দিয়ে খাট থেকে নামিয়ে দিয়ে নরেন নিজে শুয়ে পড়ল বেশ আরামে পা ছড়িয়ে। একটু পরেই তার নিয়মিত নিঃশ্বাস পড়ার শব্দে বোঝা গেল যে ঘুম বেশ গাঢ় হয়ে এসেছে।

শ্যামা সেই অবস্থায় সারারাত মেঝের ওপর বসে রইল আড়ষ্ট স্তব্ধ হয়ে। চোখের জল ফেলতেও তখন যেন ভয় করছিল ওর।

পরের দিন ওর শাশুড়ী বোধ করি ওর রাত্রি-জাগরণে ক্লিষ্ট মুখ ও আরক্ত চক্ষু দেখে কিছু অনুমান করলেন। ওকে কোলে বসিয়ে অনেক আদর ক’রে একসময় চুপি চুপি প্রশ্ন করলেন, ‘হ্যাঁ বৌমা, ছেলেটা আমার একটু গোঁয়ার-গোবিন্দ, কাঠখোট্টা গোছের। কাল তোমাকে কিছু ধমক-ধামক করে নি ত?’

শ্যামা কি উত্তর দেবে ভেবে না পেয়ে চুপ ক’রে রইল। তার ফলে তিনি আরও শঙ্কিত হয়ে উঠলেন, পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে আবারও প্রশ্ন করলেন, ‘বলো না বৌমা, লজ্জা কি? আমিও যে তোমার মা হই মা!’

এই ব’লে তিনি ওর মুখখানা জোর করে তুলে ধরে সস্নেহে একটি চুমো খেলেন।

এবার আর শ্যামা স্থির থাকতে পারলে না, ওর চোখের জল স্বাভাবিক সমস্ত লজ্জা ও সঙ্কোচ ভেঙে বেরিয়ে এল। ততক্ষণে ক্ষমাসুন্দরীরও চোখ পড়েছে, ওর আরক্তিম বাহুমূলের দিকে। তিনি প্রায় আর্তকণ্ঠেই বলে উঠলেন, ‘বৌমা!’

শ্যামা এবার একটি একটি করে সব কথাই বললে। লজ্জায় ঘৃণায় ক্ষমাসুন্দরী যেন মাটির সঙ্গে মিশে যেতে চাইলেন। শ্যামার হাত দুটি ধরে বললেন, ‘বৌমা, ও যে বামুনের ঘরের গোরু- ভদ্রলোকের ঘরে একটুও লেখাপড়া না শিখলে এই রকমই হয়।

তা হ’লেও ও যে এত অমানুষ হতে পারবে তা আমি ভাবি নি মা। তা হ’লে অন্তত তোমার মত মুক্তোর মালা ওর গলায় ঝুলিয়ে দিতুম না। তুমি কিছু মনে ক’রো না মা।’

সত্যিই তাঁর মনে বড় লেগেছিল। সারাদিন ইতস্তত করে শেষ পর্যন্ত বিকেলের দিকে বড় ছেলে দেবেনকে গিয়ে কথাটা তিনি বলেই ফেললেন। দেবেনও কম রগচটা নয়–সে পরিচয় শ্যামা উত্তর-জীবনে ভাল করেই পেয়ে-ছিল– সে তখনই বেরিয়ে এসে ছোট ভাইয়ের ঘরের সামনে গিয়ে ডাকলে, ‘নরো!’

নরেন তখনও ঘুমোচ্ছিল; সে একটু বিস্মিত, কিছু বা রুষ্টভাবেই বেরিয়ে এল।

‘কেন?’

‘কেন! হারামজাদা, সব তাইতে তোমার গোঁয়ারতুমি!’

‘দ্যাখো দাদা–খামোকা গালাগাল দিও না বলে দিচ্ছি। কি–হয়েছে কি?’

‘বৌমাকে অমন করে মেরেছিস কেন?’

‘কে বললে মেরেছি!’

‘কে আবার বলবে। এখনও কালশিটে পড়ে আছে।

‘বেশ করেছি মেরেছি’, মুখ গোঁজ করে উত্তর দেয় নরেন, ‘আমার পরিবারকে আমি মেরেছি। তোমার বৌকে ত মারতে যাইনি!’

দেবেন ধাঁ করে এক চড় কষিয়ে দিলে ওর গালে, ‘ফের আবার মুখে মুখে চোপা! হারামজাদা, শুয়োর কম্‌নেকার!’

সে চড়ের ধাক্কা সামলাতে নরেনের কিছুক্ষণ সময় লাগল। দেবেনের রোগা রোগা শক্ত কেঠো হাত। পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গিয়েছিল নরেনের গালে।

কিন্তু নরেনও ক্ষেপে গেল যেন একেবারে। ওর চোখে জল এসে গিয়েছিল তবু সে গালে হাত বুলোতে বুলোতে ওকে ভেংচি কেটে খিঁচিয়ে জবাব দিলে, ‘ফের মুখে মুখে চোপা! কেন চোপা করব না তাই শুনি? তুমি আমাকে খাওয়াচ্ছ পরাচ্ছ? তোমার খাই, না তোমার বাবার খাই?’

‘ফের্-ফের্ শালা, আবার কথা কইছিস! আমার বাবার খাস না তো কার বাবার খাস? তোর বাবা আমার বাবা কি আলাদা—মুর্‌খুর ডিম কোথাকার!

‘তুমি আমাকে মারবার কে? আমাকে গালাগালি দেবার কে? আমার যা খুশি আমি তাই করব।’

নরেন রাগে গজরায় আর-এক-একটা বাক্য শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে দেবেনের সামনে পা ঠোকে।

‘দেখবি? দেখবি একবার?’ তেড়ে এগিয়ে যায় দেবেন।

শুরু হয়ে গেল গজ-কচ্ছপের লড়াই। দেবেন ওর চুলের মুঠি ধরে মাথাটা হেঁট করে পিঠে গুমগুম করে কিল মারতে লাগল, নরেন ওর যে হাতটা সামনে পড়ল সেইটা ধরলে সজোরে কামড়ে। এমনই জোরে কামড়ে ধরেছিল যে কষ বেয়ে কয়েক ফোঁটা রক্তও গড়িয়ে পড়ল।

ফলে দেবেনের স্ত্রী মরাকান্না জুড়ে দিল। শ্যামা প্রথমটা ব্যাপার দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল, এখন রাধারাণী কেঁদে উঠতে সেও চিৎকার করে কেঁদে উঠল। আর ক্ষমাসুন্দরী ওদের কাছে এসে মেঝেতে মাথা খুঁড়তে শুরু করলেন, ‘ওরে তোদের জ্বালায় কি আমি মাথামুড় খুঁড়ে মরব! ওরে, কেউ আমাকে আপিং এনে দে, খেয়ে মরি। আমার আর সহ্য হয় না।’

বিয়েবাড়ির সব কুটুম্ব তখনও বিদায় নেয় নি। তাদেরই দু’চারজন ছুটে এসে অতিকষ্টে দুই ভাইকে আলাদা ক’রে দিলে। নরেনকে ঘরে পুরে বাইরে থেকে শেকল তুলে দেওয়া হ’ল। সে ভেতরেই দাপাদাপি ক’রে গজরাতে লাগল। আর দেবেন কামড়ানো জায়গাটা ফটকিরির জলে ধুয়ে কাপড়ের ফালি দিয়ে বাঁধতে বাঁধতে অবিশ্রান্ত গালাগালি দিতে লাগল। বলা বাহুল্য যে তার মধ্যে নিজের মা-বাবাও বাদ গেলেন না।

সেদিন সন্ধ্যার পর কিছুক্ষণ বিপন্নমুখে ইতস্তত করবার পর শ্যামা লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে একসময়ে ব’লেই ফেললে, ‘মা, আজ আমি আপনার কাছে শোব।’

ক্ষমার মুখটা চকিতে রাঙা হয়ে উঠলেও সস্নেহে ওর গায়ে হাত বুলিয়ে বললেই, ‘তাই শুয়ো মা। দরকার নেই আজ আর ও বাঁদরটার কাছে গিয়ে।’

কিন্তু সে বন্দোবস্তের কথা নরেন জানত না। সে শুয়ে শুয়ে খানিকটা অপেক্ষা করার পর কান পেতে যখন বুঝতে পারলে, সব বাড়ি নিস্তব্ধ হয়ে গেছে, অর্থাৎ সবাই শুয়ে পড়েছে, তখন আর স্থির থাকতে পারলে না। মার ঘরের বাইরে এসে শেকলটা নেড়ে প্রশ্ন করলে, ‘মা, বৌ কোথায়?’

শ্যামার বুক ভয়ে গুরগুর করে উঠল। সে সজোরে শাশুড়ীকে আঁকড়ে ধরল।

ক্ষমা একটুখানি চুপ ক’রে থেকে বললেন, ‘বৌমা ঘুমিয়ে পড়েছে এখানে, তুই শুতে যা।’

‘ওকে ডেকে দাও না। ঘুমিয়ে পড়েছে ত কি হয়েছে? নবাব-নন্দিনী!’

‘আজ থাক্ গে। ওর শরীরটা খারাপ।’

‘বা রে, বৌ যদি তোমার কাছেই থাকবে ত আমার বিয়ে দিলে কেন?’

‘আ খেলে যা! ঐখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার সঙ্গে চোপা করতে লজ্জা করছে না? যা শুগে যা, এক রাত্তির বৌ আমার কাছে রইল ত মহা-অশদ্ধ হেয় গেল একেবারে!

ওধারে দেবেন ততক্ষণে তার ঘরের জানালায় মুখ বাড়িয়েছে, ‘ফের্ যদি কারুর গলার শব্দ পাই একবার ত কেটে দুখানা করে ফেলব বলে দিচ্ছি।’ সে বেরিয়েই আসত যদি না রাধারাণী পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে ঝুলে পড়ত একেবারে।

কিন্তু কে জানে কেন, নরেনও আর বিশেষ গোলমাল করলে না, শুধু এ বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে তার আপত্তি এবং রাগ জানাবার জন্য দুমদুম করে পা ফেলে নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকে ঝনাৎ করে দরজাটা বন্ধ করে দিলে।

তিন

তবুও বিয়ের আটদিন পরে শ্যামা যখন এক বছরের মত বাপের বাড়ি ফিরে এল তখন ওর কিশোর স্বামীর জন্য বেশ একটু মন-কেমনই করেছিল। স্বামীর যে পরিচয় এ-কদিন সে পেয়েছে তা আশারও নয়, আনন্দেরও নয়। তবু কিসের একটা যেন আকর্ষণ ওকে উন্মনা করে তোলে। সে অবসর পেলে জানালায় বসে বসে নরেনের কথা ভাবে।

আসবার সময় অবশ্য নরেন ব’লে দিয়েছিল, ‘গিয়ে চিঠি লিখিস।

‘ওমা–সে আবার কি! চিঠি লিখব কি?’

‘কেন? তুই ত লেখাপড়া জানিস। আমিই কি আর একেবারে জানি না? আজকাল ত অনেকে চিঠি লেখে শুনেছি –।’

সবেগে ঘাড় নেড়ে শ্যামা জবাব দিয়েছিল, ‘না না সে আমি পারব না। হয়ত বট্-ঠাকুরের হাতে পড়বে, নয়ত দিদির হাতে– কি ধরো মার হাতেই পড়ল সে ভারি ঘেন্নার কথা! তারপর তুমি যদি জবাব দাও, আর মা যদি দেখতে পান? মা গো!’

নরেন খাটে বসে পা দোলাতে দোলাতে এক হাতের একটা নখ কাটছিল দাঁত দিয়ে, সে জবাব দিতে পারে নি ভাল রকম। শুধু প্রশ্ন করেছিল, ‘তবে?’

‘এই ত এইখান থেকে এইখানে। তুমি যাবে রোজ রোজ।’

‘হ্যাঁ— তোর মা যদি নেমন্তন্ন না করে?’

তখন বিনা নিমন্ত্রণে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা কেউ ভাবতেও পারত, না।

‘ফের্ তোর মা? বলে দিয়েছি না তিনি তোমারও মা, শুধু মা বলবে।’

‘ধ্যেস্–লজ্জা করে।’

প্রসঙ্গটা সেইখানেই চাপা পড়লেও শ্যামা ভোলে নি। ওর যমজ বোন উমাকে দিয়ে মার কাছে কথাটা পাড়িয়েছিল। মা-ও অবিবেচক নন। তিনি প্রথম প্রথম একটু ঘনঘনই নিমন্ত্রণ করতে লাগলেন।

কিন্তু তার ফলে জামাইয়ের স্বভাব আর চাপা রইল না। প্রেম-সম্ভাষণের উষ্ণতা ও উগ্রতা শুধু পাশের ঘরে কেন মধ্যে মধ্যে গোটা বাড়িটাই কাঁপিয়ে তোলে। বিশেষ ক’রে যেদিন গালে পাঁচ আঙুলের দাগসুদ্ধ মেয়ে ভোরবেলা বেরিয়ে এল সেদিন আর ওর মা রাসমণি স্থির থাকতে পারলেন না। তিনি খুব রাশভারী মানুষ ছিলেন, একা মেয়েছেলে তিনটি বালিকা নিয়ে বাস করলেও কেউ একটা কথা বলতে সাহস পেত না। তিনি ঘরে ঢুকে সোজা তর্জনী দিয়ে সদর দরজা দেখিয়ে জামাইকে বললেন, ‘যাও, আভি নেকাল যাও। আর কোনদিন এ দরজায় ঢুকো না। মেয়েও আর আমি পাঠাবো না। বুঝবো মেয়ে আমার বিধবা হয়েছে– যাও বলছি!’

ওঁর রণরঙ্গিণী মূর্তি দেখে জামাই নরেন ভয় পেয়ে গেল। সে আমতা-আমতা ক’রে বললে, ‘মাইরি মা, এই আপনার দিব্যি, হঠাৎ রাগের মাথায়– মানে মেয়েও আপনার বড় ঢ্যাঁটা। এই আপনার পায়ে ধরছি, আর কখনো-–’

সে হেঁট হয়ে পায়ে ধরতে যেতেই রাসমণি দু পা পিছিয়ে গিয়ে আরও কঠোর স্বরে বললেন, ‘যাও –। কোন কথা শুনতে চাই না। আভি নেকাল যাও—’

অগত্যা এক পা এক পা করে সেদিন নরেনকে বেরিয়ে যেতেই হয়েছিল।

শ্যামা কিন্তু এ ঘটনায় অত্যন্ত মনমরা হয়ে পড়ল। বিশেষ ক’রে কথাটা চাপা রইল না। এ নিয়ে যেমন আলোচনা চলতে লাগল পাড়া-ঘরে, তেমনি দলে দলে দুঃখ ও সমবেদনা জানাবার লোকের অভাব রইল না। স্বামী ঠিক কী বস্তু বা ভবিষ্যৎ জীবনে তার কী হতে পারে এ সম্বন্ধে স্বচ্ছ কোন ধারণা না থাকলেও শ্যামা বুঝতে পারলে তার মস্তবড় একটা সর্বনাশ হতে চলেছে। সে রীতিমত কান্নাকাটি জুড়ে দিল এবং এই সমস্ত দুঃখের মূল বলে আকারে ইঙ্গিতে মাকেই দায়ী করতে লাগল।

রাসমণি মাস পাঁচ-ছয়ের মধ্যেই অস্থির হয়ে উঠলেন। শেষ পর্যন্ত লাজলজ্জা খেয়ে নিজেই জামাইকে নেমন্তন্ন করে আনাবেন কিনা ভাবছেন, এমন সময় শ্রীমান স্বয়ং একদিন এসে হাজির। মুখটা একটু শুকনো, এক হাঁটু ধুলো, কোথা থেকে বিরাট এক মানকচু ঘাড়ে করে বাড়ি ঢুকলো। শাশুড়ীকে দেখেই মানকচুটা পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে একেবারে গড় হয়ে এক প্রণাম, তারপর একটু কাঁচুমাচুভাবেই বললে, ‘এই এদিকে এসে-ছিলুম, মানে একটু কাজ ছিল কি না, তা মা বললে, যাচ্ছিস যখন কচুটা বেয়ান ঠাকরুনকে দিয়ে আয়। মানে, বললে বিশ্বাস করবেন না– কচুটা আমাদের বাগানের।’

অতিকষ্টে হাসি সামলে রাসমণি বললেন, ‘আচ্ছা হয়েছে, তোমাকে বাবা আর একঝুড়ি মিছে কথা বানিয়ে বলতে হবে না। হাত মুখ ধোও। খাওয়া-দাওয়া করো।’

নরেন যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। জলখাওয়া শেষ করে শাশুড়ীর রান্নাঘরের চৌকাঠে বসে তাঁর সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলে। কত কি গল্প! সে অনর্গল বকুনিতে রাসমণি যেন হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। দু-একবার ধমকও দেবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু সে ধমক গায়ে মাখবার পাত্র নরেন নয়।

তবে রাসমণি তাঁর মত বদলাবার মেয়ে নন। পরের দিন সকালে উঠতেই জামাইকে তিনি বললেন, ‘আজকে ভালদিন আছে, শ্যামাকে নিয়ে তুমি বাড়ি চলে যাও।’

নরেন তখনও বুঝতে পারে নি। সে বললে, ‘কিন্তু এখনও ত একবছর হয় নি তাছাড়া সেই দ্বিরাগমনের কি সব আছে-টাছে-–’

‘তা থাক্।’ নিস্পৃহ কঠিন কণ্ঠে বলেন রাসমণি, ‘মেয়ে থাকতে পারে এখানে, কিন্তু তোমার তা হলে আসা হবে না। যা ভাল বোঝ করো। তবে মেয়ে যেতে চায়, সে ব্যস্ত হয়েছে নিয়ে যেতে পারো। আমি গাড়ি ভাড়া করে দিচ্ছি, ভাড়াও দিয়ে দিচ্ছি। ঘর-বসতের যা জিনিস সঙ্গে দেবার আনিয়ে দিচ্ছি। স্বামী সঙ্গে ক’রে নিয়ে গেলে দোষ নেই শুনেছি। আজই নিয়ে যাও।’

কিছুতেই কোনমতেই তাঁকে টলানো গেল না। শ্যামা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। রাসমণি খুঁটিয়ে সব বাজার করে গাড়িতে তুলে ওদের বিদায় ক’রে দিয়ে কাঁদতে বসলেন। তার আগে ওঁর মুখের একটি শিরাও কেউ কাঁপতে দেখে নি।

যদিও শেষ পর্যন্ত ওর প্রতিজ্ঞা রাখা সম্ভব হয় নি। ক্ষমাসুন্দরী নিজে এসে ছেলের হয়ে হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে গেলেন। বললেন, ‘ভাই এ হিন্দুর বিয়ে। ও সিঁদুরের দাগ ত মোছবার নয়। তাই ব’লে পেটের মেয়েটাকে সুদ্ধ ত্যাগ করেবে? আমার মুখ চেয়ে তুমি ওকে মাপ করো।

রাসমণিও মনে মনে বোধ হয় দুর্বল হয়ে এসেছিলেন। তিনি মেয়ে জামাইকে আবার নিমন্ত্রণ ক’রে ডেকে আনলেন। আবার আসা যাওয়া শুরু হল।

.

দিন কাটতে লাগল।

কিন্তু দিন-মাস-বছর একটু একটু করে বালিকা শ্যামার তনু-দেহই শুধু কৈশোরের লাবণ্যে ভরে দিয়ে গেল, ওর অদৃষ্টের কোন পরিবর্তন আনতে পারল না। বয়স বাড়বার সঙ্গে সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি আসক্তে বাড়তে লাগল এটা ঠিক, তবে তাই ব’লে লাঞ্ছনা বা প্রহারের মাত্রা শ্যামার একটুও কমল না। সে যেন নরেনের নিজস্ব সম্পত্তি আর শুধু যদৃচ্ছ অত্যাচার করার জন্যই যেন ভগবান এই সম্পত্তি ওকে মিলিয়ে দিয়েছেন। দেবেন নিজে রগচটা ও রাগী ও রাগী হ’লেও এতটা ইতরতা সহ্য করতে পারত না, মধ্যে মধ্যে শাসন করতেও যেত, তার ফলে অধিকাংশ সময়ই একটা বীভৎস বিবাদ এমন কি হাতাহাতিও বেধে যেত। দুই ভাই- ই অপরকে নির্বিচারে এমন মা-বাপ তুলে গালাগালি করত যে, শ্যামা ও রাধারাণীর দু হাতে কান ঢেকে পালানো ছাড়া উপায় থাকত না এবং ক্ষমা ঘরের মধ্যে ঢুকে ঢিপ্‌ ঢিপ্‌ করে মাথা খুঁড়তেন।

আবার সে পালা শেষ হলে ঘরে ঢুকে নরেন আর একবার শ্যামাকে নিয়ে পড়ত, ‘বল শালী, বল, ওর এত মাথাব্যথা কেন? আমি তোকে মারি তাতে ওর টনক নড়ে কেন? বল্ শীগগির!’ তার সঙ্গে দুড়দাড় কিল চড় লাথি চলতে থাকত।

সে সব ক্ষেত্রে প্রহারের চেয়ে ঐ ঈঙ্গিতটার মধ্যে যে ইতরতা প্রকাশ পেত তাইতেই যেন শ্যামা মরমে মরে যেত।…

সব কথাই রাসমণির কানে আসত। তিনি কোনদিনই কোন ব্যাপারে অধীরতা প্রকাশ করতেন না ঘরের কথা পরকে বলাও তাঁর অভ্যাস ছিল না। শুধু পূজার আসনে বসে মনে মনে যখন সব বেদনা ইষ্টের পায়ে সমর্পণ করতেন সেই সময় মনে হ’ত তাঁর বুকটা যেন ভেঙে পিষে যাচ্ছে।

কিন্তু কি করবেন, উপায় কি? জামাইকে এ বাড়িতে আসতে বারণ করলে মেয়ের একটু খবর পর্যন্ত পাবেন না।

এক একদিন সে খবর নরেন নিজেই বহন ক’রে আনত। মেয়ে যে তার কি পরিমাণ অবাধ্য এবং বদমাইশ, তার সবিশেষ বর্ণনা দিয়ে সেই বদমাইশকে জব্দ করারও যে কি ওষুধ তার কাছে আছে এবং কেমন করে জব্দ করেছে সেই গল্প করত।

একদিন দুপুরবেলা এসে হাজির হ’ল ডান হাতখানায় ভিজে ন্যাকড়া জড়িয়ে। দেখা গেল হাতটা ফুলেও উঠেছে।

বাড়িতে পা দিয়েই, বিন্দুমাত্র ভণিতা না ক’রে বললে, ‘দিন মা, চাট্‌টি ভাত দিন–আজ আর বাড়ি ফেরা হ’ল না।’

ভাত তখন রাসমণি নিজে খেতে যাচ্ছিলেন, সেই ভাতই ধরে দিলেন।

‘ওঁহু–আমি হাতে করে খেতে পারব না। আমাকে খাইয়ে দিতে হবে। দেখছেন না হাতের অবস্থা!’

‘হাতে কি হ’ল বাবা?’

‘আর কি হবে! আপনার কন্যাকে (নরেনের সাধু ভাষা বলাই অভ্যাস ছিল!) শাসন করতে গিয়ে এই কাণ্ড। মারতে গিয়ে এমন বেকায়দায় হাতটা লেগে গেল–দেখুন না ফুলে ঢোল হয়েছে একেবারে। কখনও ত দাঁড়িয়ে মার খাবে না, এমন বদমাইশ।’

তারপরই থালার দিকে চেয়ে,–‘এ সব নিরিমিষ দেখছি। ইয়ে কিছু নেই? দিন না একটু পিয়াজ কুঁচিয়ে বেগুন-পোড়ার সঙ্গে, বেশ লাগবে’খন।’

যে মেরেছে তার যদি এই অবস্থা হয় ত মার যে খেয়েছে তার কি অবস্থা কল্পনা ক’রে চোখ ফেলে জল বেরিয়ে আসছিল তখন রাসমণির। কিন্তু এ পশুর সামনে চোখের জল ফেলতেও যেন লজ্জা হয়। অতিকষ্টে উদ্‌গত অশ্রু দমন ক’রে তিনি একটা চামচ এনে ওর পাতে ফেলে দিয়ে বললেন, এইটে দিয়ে বাঁ-হাতে খাও বাবা– আমি আর এখন খাওয়াতে পারব না।

‘তা মন্দ নয়–তবে পিঁয়াজটা? দিন না, না হয় আমি নিজেই কেটে নিচ্ছি। আপনি আবার এখন হাতে গন্ধ করবেন!’

‘না, উমা দিচ্ছে।’

তিনি অস্ফুট কণ্ঠে একটা ‘উঃ’ উচ্চারণ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *