০৩. অপারেশন সার্চলাইট

অপারেশন সার্চলাইট

২৫ মার্চের রাতে ঢুকে পড়েছে মুক্তি। তা অন্ধকার-বেহুলার নিচ্ছিদ্র বাসর যেন, মনসার প্রতিশোধের উষ্ণ নিঃশ্বাসে যার মোম-বন্ধ ফুটোটা উন্মুক্ত হয়ে পড়েছিল। সেরকম এক সুচ-ছিদ্র পথ দিয়ে কথা বলতে বলতে দুজন অসমবয়সি নারী সেই কালরাতে প্রবেশ করে। বয়স ছাড়াও তাদের মধ্যে মিলের চেয়ে গরমিলই বেশি। দৃষ্টিভঙ্গিতেও ফারাক বিস্তর। মরিয়ম তখন ছিল খাটের তলায় চেতনাহীন। কয়েকটা বোমার শব্দ ছাড়া সেই রাতের কোনো স্মৃতি নেই। মুক্তি দেখতে চাচ্ছে, মেরি ওরফে মরিয়মের রূপান্তর-পর্বটি, আটাশ বছর আগেকার এক যুদ্ধ যার পূর্বপরিচয় গা থেকে ছাল ছাড়ানোর মতো খসিয়ে গলায় বীরাঙ্গনার বকলেস ঝুলিয়ে দিয়েছিল। আপন। মহিমায় সেটি কিছুদিন ঢং ঢং বেজেছে।

আটাশ বছর–সিকি শতাব্দীরও অধিক সময়। মুক্তির বয়সও এখন আটাশ। ছাত্র-জনতা যখন গাছের মোটা মোটা ডাল কেটে, পরিত্যক্ত জলের ট্যাংক জড়ো করে। ফুলার রোডের মুখ বন্ধ করে দিচ্ছিল, সে তখন এসবের একশ গজের ভেতর মেডিক্যাল কলেজের গাইনি ওয়ার্ডে, মায়ের গর্ভের অন্ধকার বিবর ছেড়ে বেরোনোর পাঁয়তারা করছে। পরদিন সকালে তার জন্মের সময় মায়ের পাশে একজন বৃদ্ধা আয়া ছাড়া কেউ ছিল না। লেডি ডাক্তার রোগীর হাতে লেবার পেইনের ড্রিপ লাগিয়ে অপারেশন সার্চলাইট শুরুর আগেভাগে হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় চলে যান। মুক্তির জন্মদিন যে ২৫ মার্চ না হয়ে ২৬ মার্চ সকাল পর্যন্ত গড়াল, মা বলতেন, এর আসল কারণ ডাক্তারের অনুপস্থিতি। বাকিটা আল্লাহর মর্জি। সেই রাতে প্রসববেদনায় কাতরাতে কাতরাতে ডাক্তারকে অভিশাপ দিলেও মা পরে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মুক্তির আব্বাকে করেননি। ২৭ মার্চ সাময়িকভাবে কারফিউ তুলে নিলে বাবা হাসপাতালে আসেন। বাইরে ততক্ষণে নরক গুলজার। মুমূর্ষ রোগীতে হাসপাতালের বেড ভর্তি। বারান্দায়, করিডরে পা ফেলা যায় না। আশপাশের কোয়ার্টার আর বস্তি থেকে বাক্স-পেটরাসহ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। মুক্তির আব্বা ভেবেছিলেন, জগন্নাথ হল আর শহিদমিনারের সঙ্গে হাসপাতালটাও বুঝি ২৫ মার্চ রাতে গুঁড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর সুস্থ-সবল স্ত্রী ও ফুটফুটে নবজাতক দেখে তার চেহারা আরো ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এ অবস্থায় স্ত্রী-কন্যা তো বোঝা। মুক্তির মা কেবিনের দরজায় স্বামীকে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়তে দেখলেন। তার ডান পাটা কিছুটা সময় চৌকাঠের বাইরেই ছিল। স্ত্রী যে শুধু চোখ নয়, পঞ্চইন্দ্রিয় দিয়ে তাকে পরখ করছে, তা বুঝতে পেরে তিনি রুমে ঢুকলেন। মা ও শিশুর দিকে ফিরেও তাকালেন না। থোকা থোকা আঙুর ফলের নকশাদার থার্মোফ্লাস্কটা ছিপি খুলে টয়লেটের বেসিনে খালি করলেন। যাতে বোঝাটা হালকা হয়। আর স্ত্রীকে নির্দেশ দিলেন, বাচ্চাসহ তাকে অনুসরণ করতে। এই মুহূর্তে শহর না ছাড়লে মা ও শিশুর সঙ্গে তাকেও যে বেঘোরে মরতে হবে, যা তিনি চান না–তাও খোলাখুলিই জানালেন।

যুদ্ধটা মায়ের কিছু বাড়তি দুঃখ ছাড়া স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য ছিল শুধু কষ্টের, গৌরব ছিল না তাতে। হাসপাতাল থেকে ত্যানা-জড়ানো বাচ্চা কোলে তারা এক কাপড়ে পথে নেমেছিলেন। থেকেছেন অন্যের বাড়ি। বেবিফুডের তখন দারুণ সংকট। হাতে টাকাকড়িও নেই। ফিডারে ভাতের ফ্যান ভরে বাচ্চাকে খাওয়াতে হতো। এর মধ্যে কখন তার দু-দুটি দাঁত গজাল, মুক্তির আব্বা-আম্মা খেয়ালও করেননি। যেদিন দেশ স্বাধীন হয়, তারা হাসপাতালের ত্যানা খুলে মেয়েকে নির্ভয়ে মাটিতে ছেড়ে দেন। মা-বাবা নানান জায়গায় ঘুরে ঘুরে তখন মায়ের দূর সম্পর্কের এক ফুফুর বাড়ি। তারা সোমত্ত গৃহস্থ। উঠোন ঘিরে উঁচু উঁচু ধানের স্তূপ। এসবের ফাঁকে ইঁদুরের গর্ত। পাশে ঝুরঝুরে বালির ঢিবি। মেয়েটা বসার আগেই হামা দিল। মুঠো ভরে ঝুরঝুরে মাটি মুখে পুরে ফেলল কেউ কিছু বোঝার আগেই। মুক্তির আব্বা-আম্মার কাছে হঠাৎ দেশ স্বাধীন হওয়ার মতোই আশ্চর্য ব্যাপার–মেয়ের হামা দেওয়া, বিজয়ের দিনে মুঠো ভরে বাংলার পবিত্র মাটি খেয়ে ফেলা। তারা অনেকদিন পর একসঙ্গে হাততালি দিয়ে হেসে উঠলেন। নয় মাস বয়সের মেয়ের নাম রাখলেন মুক্তি। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাদের ভালোবাসার একমাত্র স্মারক, যুদ্ধের নামে মেয়ের নাম।

মুক্তি নাম ব্যতিরেকে যুদ্ধের আর কিছু ধারণ করে না, জানেও না বিশেষ। জানার দরকারও হয়নি বীরাঙ্গনাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের চাকরিটা পাওয়ার জন্য। বরং আগেভাগে কিছু জানার চেয়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে শোনাটাই যে বেশি জরুরি এবং শুনতে শুনতে একদিন যুদ্ধের আগাপাশতলা জানা হয়ে যাবে, কর্তৃপক্ষ প্রথম দিনই তাকে পইপই করে বলে দিয়েছেন। গত দু’দিন ধরে মুক্তি তা-ই করেছে। মরিয়ম বলে গেছে আর তার কাজ ছিল বিনা বাক্যে শুনে যাওয়া। কিন্তু এখন তো স্বয়ং সাক্ষাৎকারদাতাই অত্যধিক ঘুমের বড়ি খেয়ে বেহুশ। আর সময়টা হচ্ছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, মুক্তির জন্মের আগমুহূর্তের এক বিভীষিকাময় মধ্যরাত। কালনাগের দংশনের রাত। প্রতারণা আর সামঞ্জস্যহীন রাত। গাছের গুঁড়ি, খালি পানির ট্যাংকের ব্যারিকেডের বিরুদ্ধে কামান আর মেশিনগানের রাত। স্লোগানের বিপরীতে অজস্র গুলিবর্ষণের রাত। অসহযোগের বিরুদ্ধে সহিংসতার রাত। তখন মুক্তির মা জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন, সামর্থ্যেরও বাইরে শক্তি প্রয়োগ করে চাপ দিচ্ছেন, কিন্তু ডাক্তারের অভাবে প্রসব করতে পারছেন না। এদিকে মরিয়ম বাবাহীন সন্তানের জন্ম দিতে দিতে নিজেও তখন ভ্রণের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ছে।

রাত বাড়ছে…

আটাশ বছর, অর্থাৎ–দুই বছর কম তিন দশক। পাহাড়সমান না হলেও, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যুদ্ধের নথিপত্র, দলিল-দস্তাবেজ, বই, গ্রন্থাগারের বাসি গন্ধময় খবরের কাগজের মুক্তিরা উত্তরাধিকার। তবে পড়ে দেখেনি। মাথা অক্ষরহীন কাগজের মতো সাদা। মরিয়মই তাতে প্রথম দাগ কাটে। হাতেখড়িটা হয় তাকে দিয়েই। সূচনার এই পর্বে চোখ ফোটেনি যখন, কোনটা খাদ্য কোনটা অখাদ্য জানে না, প্রাণিজগতের এমন এক অবোধ-অন্ধ নবজাতকের মতো মুক্তি বইপত্রের স্তূপ থেকে ২৫ মার্চ রাতটাকে খুঁটে খুঁটে বাইরে আনে।

এ রাতের অভিনবত্ব–যারা কুশীলব তারাই দর্শক। তারা বাঙালির ঔদ্ধত্যে বিরক্ত হয়ে উত্তর দিক থেকে যখন ঢাকা আক্রমণ করে, দক্ষিণ দিক থেকে তখন বসন্তের বাতাস বইছিল। এ ছিল ফুলের গন্ধভরা বাঁশি বাজানোর ভালোবাসাবাসির এক অপূর্ব রাত। শহর থেকে নিরাপদ দূরত্বে–প্রদেশের রাজধানী হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে বসে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল যে জায়গাটায়, যার নাম তখন ছিল সেকেন্ড ক্যাপিটাল, সেখান থেকে নির্দেশদানকারীরা বায়স্কোপ দেখার মতো তাদের নৃশংসতা উপভোগ করেছিল। তাদের বাধা দেওয়ার মতো আশপাশে কেউ ছিল না। যুদ্ধের আটাশ বছর পর, মুক্তি ২৫ মার্চ রাত পুনর্নির্মাণে দূরবর্তী সেই নিরাপদ জায়গাটিই বেছে নেয়। আর অনুসরণ করে পাকিস্তানি মেজর সিদ্দিক সালিকের উইটনেস টু সারেন্ডার বইটিকে। অমানবিক সর্তকতা সত্ত্বেও খুনি পায়ের ছাপ রেখে যায়–রক্তের দাগ মুছে দিতে দিতে এগিয়ে গেলেও, অগণিত লাশ বুলডোজার দিয়ে গর্ত খুঁড়ে পুঁতে ফেলার পরও, মেজরের ‘অপারেশন সার্চলাইট—এক’ পরিচ্ছেদে এই সত্যটি আরেকবার প্রমাণিত হয়।

মুক্তি খুনির পায়ের ছাপ অনুসরণ করে…

২৫ মার্চ রাতে সেকেন্ড ক্যাপিটালের ঘাস-ছাঁটা আঙিনায় ‘আউটডোর অপারেশন কক্ষ’ লেখা ব্যানার টাঙানো হয়েছে। ঘাসের ওপর সারি সারি সোফা আর আরামকেদারায় দর্শকরা একে একে আসন গ্রহণ করে। তারা যাতে রণসংগীতের মূর্ঘনায় ঘুমিয়ে না যায়, তাই পাশের টেবিলে ফ্লাস্কভর্তি চা-কফি মজুত রাখা হয়েছে। একটা জিপের পিঠে বসানো হয়েছে বেতারযন্ত্র। যন্ত্রটা যুদ্ধের ধারাবিবরণী পেশ করবে। দর্শকদের মুখ দক্ষিণ দিকে–শহরের পানে। সেখানে দিগন্তব্যাপী ন্যাচরাল স্ক্রিন। যা এখন শূন্য, শান্ত, অন্ধকার। যারা শহরের রাস্তায় বড় বড় গাছ কেটে ব্যারিকেড তৈরি করেছিল তারা পরিশ্রান্ত। ঘুমিয়ে পড়েছে কেউ কেউ। ৩২ নম্বর বাড়ির ব্রিফিং-পর্ব শেষ। নেতারা অন্ধকারে গা ঢাকা দিচ্ছেন। তাদের নিঃশব্দ সঞ্চরণ পর্দায় দেখা যায় না। দেখা। যায় না, শেখ মুজিবুর রহমানের আনমনে পাইপ টানার দৃশ্যটিও। কারণ পর্দাটা অন্ধকার, বাতি নেভানো ঘুমন্ত শহর বুকে ধারণ করে নিঃসাড় হয়ে আছে তখনো।

সেকেন্ড ক্যাপিটালের দর্শকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে একটি বীভৎস হত্যাকাণ্ডের। এদিকে আক্রমণকারীরাও সশস্ত্র, উদ্যত, অস্থির। বেতারযন্ত্র মারফত মিনিটে মিনিটে আবদার আসছে–ইমামের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, আর কতক্ষণ অস্ত্র হাতে তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। কিন্তু পিআইএর স্পেশাল ফ্লাইটটার যত দ্রুত করাচির আকাশসীমায় পৌঁছে যাওয়ার কথা, তত দ্রুত পৌঁছাচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তাতে সওয়ার। রাতের অন্ধকারে ঢাকা ত্যাগ করে তিনি এখনো কলম্বো করাচির মাঝপথে, ৩০ হাজার ফুট উঁচুতে উড়ছেন। এভাবে কালক্ষেপণ মস্ত বড় হেঁয়ালি। কুশীলবরা মেকআপ নিয়ে বসে আছে অথচ পর্দাটা তোলা হচ্ছে না। জেনারেলের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা আর অতর্কিত আক্রমণ দুটোই প্রয়োজন। একদিকে সময়কে হাতে রাখা, অন্যদিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া। শেষমেশ আক্রমণের এইচ-আওয়ার কাগজে-কলমে রাত একটায় গিয়ে ঠেকে। যদিও কার্যত যা শুরু হয় দেড় ঘণ্টা আগে।

বসন্তের মিষ্টি হাওয়ায় সেকেন্ড ক্যাপিটালের দর্শকদের চোখে ঘুম নামে। আয় ঘুম, যায় ঘুম, এর মধ্যে তাদের সিন বাই সিন যুদ্ধ দেখতে হবে। এটি যুদ্ধ করার সমান পুণ্যের।

মহাভারতের অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্রকে কুরুক্ষেত্রের পুরো যুদ্ধটা দেখতে হয়েছিল। দেখিয়েছিলেন সঞ্জয়–এক অন্ধ পিতাকে পুত্রদের হত্যাদৃশ্য, কৃষ্ণের কূটচাল, ধর্মপুত্রের মিথ্যাচারণ, বালক অভিমন্যুর চক্রব্যুহে প্রবেশ। সে ছিল আঠারো দিনের যুদ্ধ। দু’পক্ষের উত্থান-পতন আর জয়-পরাজয়ের জটিল কাহিনি। অত বড় হত্যাযজ্ঞের পর যারা জয়ী হয়েছিলেন, তারা রূপকথার রাজা-রানির মতো সুখী হলেন না। গভীর মর্মপীড়া অহর্নিশি খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের আত্মহত্যার সবচেয়ে প্রলম্বিত পথ মহাপ্রস্থানের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল। আজকের এই দর্শকদের হিসাবটা শুধু এক রাতের। তাদের পক্ষ একতরফা মারবে। বাকি নয় মাস হিসাব করেনি। তাই তাদের যুদ্ধ দেখার কাজটা হয়ে ওঠে বায়স্কোপ দেখার মতন। নিরুদ্বেগ, ভয়হীন, বিনোদনমূলক। যা নিদ্রাসুখ পরিত্যাগ না করেই দেখা সম্ভব। তা ছাড়া সঞ্জয় যেমন অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রকে কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধের খবরাখবর দিচ্ছিলেন, এখন এ কাজের জন্য বেতারযন্ত্রটি তো রয়েছেই।

রাত ১১টা ৩০ মিনিটে সেনাদের পদভারে পর্দাটা কেঁপে ওঠে। তারা সেনানিবাস ছেড়ে শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা আগে। তাদের চলার গতিতে আত্মবিশ্বাসটা প্রবল। যেন যুদ্ধ নয়, এপাড়া থেকে ওপাড়ায় পাতানো খেলা খেলতে চলেছে। সামনে শত্রু আছে ঠিকই, তবে নিরস্ত্র। সৈন্যদের সামনে এখন ফার্মগেটের ব্যারিকেড। পর্দাজুড়ে বড় বড় গাছের গুঁড়ি, নষ্ট গাড়ির খোল, পরিত্যক্ত স্টিমরোলার। প্রতিবন্ধকতার ওপাশে মানুষ দেখা যায় না। কিন্তু অগ্রগামী সেনাদের হকচকিত করে স্লোগান ওঠে–জয় বাংলা!

দর্শকরা স্প্রিংয়ের মতো লাফিয়ে ওঠে। তাদের ঘুম ঘুম আমেজ ছুটে যায়। নিজেদের আক্রান্ত হওয়ার কথাই হয়তো ভাবে তখন। কারণ অপারেশন সার্চলাইট শুরু হতে তখনো দেড় ঘণ্টা বাকি। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তখনো শূন্যে। পাকিস্তানের পাকভূমি স্পর্শ না-করা তক তার নিরাপত্তার দিকটি তাদের খেয়াল রাখতে হবে। কারণ ভারতীয়দের বিশ্বাস নেই। ফকার ছিনতাই, লাহোরে তা ধ্বংস করার প্রতিশোধ তারা নিতেই পারে। তা ছাড়া ঢাকা আক্রমণের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে প্লেনসুদ্ধ প্রেসিডেন্টকে আকাশ থেকে নামিয়ে ফেলতে পারে ভোকাট্টা ঘুড়ির মতন। হয়তো নামাল না, তোপ মেরে পাঠিয়ে দিল বেহেশতে-এখন শরাব আর হুরি সহযোগে তিনি যার কাছাকাছিই আছেন। দর্শকরা আকাশের দিকে তাকায়ভুলবশত। তারপর পর্দায়। তাদের চোখ পড়ে। ততক্ষণে শ্লোগান নিশানা করে মারণাস্ত্রের মুখ খুলে গেছে। বাতাসে শিস দিচ্ছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। পর্দাটা ঢেকে যায় ধোঁয়ায়। জয় বাংলার কণ্ঠগুলো বুলেটবিদ্ধ হয়। আর স্লোগান শোনা যায় না। সৈন্যরা শহরে ঢোকে। দর্শকরা কফির পেয়ালা হাতে ফের আসন গ্রহণ করে।

পর্দায় তখন রকেট লঞ্চার ছুঁড়ে ৩২ নম্বরের প্রবেশপথের ব্যারিকেড ভাঙা হচ্ছে। অদূরে একটি বিবর্ণ হলদে বাড়ি। পর্দায় যা ধূসর সাদা দেখায়। বাড়িটা গার্ডহীন, অরক্ষিত। সৈন্যরা সেদিকে চলেছে ট্যাংক, ভারী অস্ত্রশস্ত্রের বিশাল লটবহর নিয়ে। রাস্তার প্রতিবন্ধকতা সরানোর পর বাড়ির চার ফুট উঁচু দেয়াল কমান্ডো বাহিনীর গতিরোধ করে। তারা তা অনায়াসে ডিঙিয়ে যায়। স্টেনগান থেকে ব্রাশফায়ার হয়। বুটের দুপদাপ শব্দ বারান্দা অতিক্রম করে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় ওঠে। পর্দাজুড়ে একটি তালাবন্ধ ঘরের দরজা। ঝুলন্ত ইস্পাতখণ্ডটি বুলেটে বিদীর্ণ হয়। দরজা খুলে যায়। মুজিব বেরিয়ে এসে জানতে চান, ‘তোমরা গুলি ছুড়তাছো ক্যান?’

কমান্ডো আক্রমণের কয়েক মিনিট পর সেকেন্ড ক্যাপিটালের দর্শকরা বেতারযন্ত্রটির কোঁকানো শুনল। তারপর একজনের কাঁপা কাঁপা কণ্ঠস্বর, ‘বড় পাখিটা খাঁচার ভেতর…অন্যগুলো নীড়ে নেই…ওভার।’

ততক্ষণে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া নিরাপদে করাচি বিমানবন্দরে অবতরণ করেছেন। বেতারযোগে ফরমান আসে, ‘সর্ট দেম আউট।’ বাছাই করো… খতম করো বাঙালিদের।

দর্শকদের সামনের কালো পর্দাটা লোহিতবর্ণ ধারণ করে। লকলকে অগ্নিশিখা লাফিয়ে ছুঁতে চায় আকাশটাকে। বিশাল ধূম্রকুণ্ডলী এর গতিরোধ করে। খানিক আকাশযুদ্ধ চলে ধোঁয়া আর অগ্নির। হঠাৎ আকাশজুড়ে ট্রেসার বুলেটের আতশবাজি-দর্শকরা চমৎকৃত হয়। তাদের আনন্দদানের জন্য তা চলতে থাকে খানিক বিরতি দিয়ে দিয়ে। যেন অগ্নি আর ধূমের একঘেয়ে প্রদর্শনীর মাঝখানে ঝটিকা বিজ্ঞাপন-ঝলমলে, স্মার্ট।

রাত তখন দুটো। কড়কড়িয়ে বেজে ওঠে বেতারযন্ত্রটি। সবাই ছোটে সেদিকে। তবে মাউথ পিসটি মুখের কাছে টেনে নেয় সেই ব্যক্তি, যে এ কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত।

ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন ‘হে সঞ্জয়! আমার সৈন্যগণ মহাবল-পরাক্রান্ত লঘু ও আয়তকলেবর, ব্যাধিশূন্য, বর্ম্মসমাচ্ছন্ন, বহু শস্ত্র ও পরিচ্ছদসম্পন্ন, শস্ত্র গ্রহণে সুনিপুণ এবং ন্যায়ানুসারে ব্যূহিত। তাহারা অতিশয় বৃদ্ধও নয়, বালকও নয় এবং কৃশ নয় ও স্কুলও নয়। তাহারা আমাদিগের নিকট সৎকৃত হইয়া আমাদেরই অভিলাষানুসারে সতত কার্য নির্বাহ করিয়া থাকে। তাহারা আরোহণ, অধিরোহণ, প্ৰসরণ, সম্যক প্রহার, প্রবেশ ও নির্গম বিষয়ে সুদক্ষ এবং হস্তী, অশ্ব ও রথচৰ্য্যায় পরীক্ষিত।’

বেতারযন্ত্রটির বাকস্ফুরণ ঘটে…

: ইকবাল হল, জগন্নাথ হলের ছাত্ররা আমাদের দিকে গুলি ছুড়ছে।

: তাদের হাতে অস্ত্র কী আছে?

: থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল।

: তোমাদের?

: রকেট লঞ্চার, রোমিও রোমিও (রিকয়েললেস রাইফেল), মর্টার এবং….

: ননসেন্স! ইমাম বলছেন–সবগুলো একসঙ্গে ব্যবহার করো। দু’ঘণ্টার ভেতর ধ্বংস করো।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের উল্টো দিকে ইংরেজি দৈনিক দ্য পিপল-এর অফিস। হোটেলের ১১ তলায় দাঁড়িয়ে বিদেশি সাংবাদিকেরা সামনের রাস্তা দিয়ে মেশিনগান বসানো জিপ এগিয়ে যেতে দেখে। পদাতিক বাহিনী পেছনে। তাদের কাঁধে রকেট জাতীয় অস্ত্র। সৈন্যরা একসঙ্গে গোলাবর্ষণ শুরু করে। প্রেসের যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করে। ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়।

: দ্য পিপল-এর খবর জানাও। ওভার।

: আমাদের দুজন সৈন্য গুরুতর আহত। সিএমএইচ-এ পাঠানো হয়েছে।

: ক্যাজুয়ালটি কত আনুমানিক?

: এই মুহূর্তে বলা অসম্ভব। আগুন জ্বলছে। একেবারে ধসিয়ে দেওয়া হয়েছে। হয়তো কোনোদিনই জানা যাবে না, এখানে কতজন বাঙালি ছিল।

বেতারযন্ত্রটি পিলখানার ইপিআর ক্যাম্প পতনের খবর দেয় রাত আড়াইটার সময়। দু’দিন আগে আক্রান্তদের নিরস্ত্র করা হয়েছিল এই বলে যে, শিগগির শেখের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে, দেশে এখন শান্তি বিরাজ করছে, তোমরা অস্ত্র জমা দিয়ে বিশ্রাম নাও। ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় বাঙালি ইপিআর বাহিনী প্রথম বুঝতে পারে, তারা প্রতারিত হয়েছে। অস্ত্রাগারে তখন বিশাল তালা। মাঝরাতে নিরস্ত্র ইপিআর সদস্যদের দিকে ছুটে আসে কামানের গোলা আর ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি।

পর্দাটা লাল, রক্তাক্ত শহর বুকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশটাও লাল। ধোঁয়া হটে গেছে, জায়গায় জায়গায় আগুন। আগুনের রক্তিমাভা। পর্দাটা এখন আগুনের দখলে। বস্তিতে আগুন ধরানোর পর অর্ধভুক্ত, কঙ্কালসার, হালকা-পলকা মানুষগুলো যে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়তে শুরু করেছে, পর্দায় তা দেখা গেল না। তারপর যে গুলি খাওয়া ছোট ছোট পাখির মতো ঝুরঝুরিয়ে পড়ে গেল মাটিতে, সেই দৃশ্যটিও নয়। বেতারযন্ত্রটি চুপ। আবর্জনার মানুষ আবর্জনা হয়ে গেছে। মাঝখানে ওড়ার দৃশ্যটি শুধু ব্যতিক্রম।

: বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো গোলাগুলি চলছে?

: এতগুলো বিল্ডিং শেষ করতে সময় লাগছে। ছাত্ররা গুলি ছুড়ছে। কিন্তু আমাদের কোনো ক্যাজুয়ালটি হয়নি। ওভার।

: খুব শিগগির বিগ ব্রাদার (আর্টিলারি সাপোর্ট) পৌঁছে যাবে। ইকবাল হল, লিয়াকত হল মনে হয় চুপ মেরে গেছে! অ্যাম আই কারেক্ট?

: ইয়েস।

: দ্যাট ইজ জলি গুড! নাউ লিসন। মাইকে কারফিউর ঘোষণা দিতে বলো–নম্বর-এক। নম্বর-দুই, বাংলাদেশের পতাকা যে বাড়ির মাথায় উড়বে, এর ফল ভোগ করতে হবে বাড়ির লোকদের। শহরে যেন একটিও কালো পতাকা দৃশ্যমান না হয়–পরিণাম অত্যন্ত খারাপ হবে, অ্যানাউন্স করে দাও। রাস্তায় কাউকে ব্যারিকেড দিতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে গুলি। যে এলাকার রাস্তায় ব্যারিকেড আছে–পিপল ফ্রম দ্যাট লোকালিটি উইল বি প্রসিকিউটেট। অ্যান্ড দ্য হাউজেস…লেফট অ্যান্ড রাইট–আমি আবার বলছি, ডানে-বাঁয়ের বাড়িগুলি ডেমলিশ করে দাও-ডেমলিশড।

 কয়েকটা জিপ উত্তর দিক থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে শহিদমিনারের কাছটায়। থামে। রাস্তাজুড়ে বটের মোটা মোটা কাণ্ড। খালি পানির ট্যাংক ইটে বোঝাই। সৈন্যরা গাড়ি থেকে দুপদাপ নেমে পড়ে। রাস্তার বাঁ পাশে বাউন্ডারি ওয়াল, মাঝখানে লোহার গেট। তারা একটানে খুলে ফেলে গেটের তালা। আঙিনা দৌড়ে পার হয়। তিন-চারটা করে সিঁড়ি একলাফে ডিঙিয়ে যায়। ফ্ল্যাটের দরজায় বুটের লাথি পড়ে। পর্দাটা কেঁপে। কেঁপে জানান দেয়, ঘরের ভেতরের মানুষগুলোর হৃৎপিণ্ডের লাফঝাঁপ। যা পরক্ষণেই বুলেট বিদ্ধ হবে, মানুষগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে সিঁড়িতে, ল্যান্ডিংয়ে, ছোট আর সমান করে ছাঁটা সবুজ ঘাসের চাতালটায়। সৈন্যরা দৌড়ে দৌড়ে পর্দা থেকে বেরিয়ে যায়। পেছনে রক্তের ভেলায় ভাসতে থাকে কয়েকজন মৃত্যুপথযাত্রী। তারা শেষবারের মতো পানি খেতে চাইছে।

রাত তিনটার দিকে বেতারযন্ত্রটি ঘর্ঘর করে বলে চলে-রাজারবাগ ক্যাপচাড়…রমনা থানা ক্যাপচাড়…কমলাপুর রেলস্টেশন ক্যাপচার্‌ড্‌…টিভি/রেডিও আন্ডার কন্ট্রোল…এক্সচেঞ্জ ক্যাপচার্‌ড্‌…

: এত আগুন কীসের?

: পুলিশ লাইন জ্বলছে।

: গুড শো!

ভোর চারটায় বেতারযোগে বিশ্ববিদ্যালয় পতনের খবর আসে সেকেন্ড ক্যাপিটালে। মাঠে যেন চূড়ান্ত গোল দেওয়া হয়ে গেছে–আনন্দে উচ্ছ্বাসে লাফায় দর্শকেরা।

সৈন্যরা তখন ‘সারেন্ডার অর ইউ সেল বি কিলড’ ঘোষণা দিতে দিতে জগন্নাথ হলের অভ্যন্তরে ঢুকতে শুরু করেছে কেবল। হত্যাকাণ্ডের মাঝপথে তারা। কক্ষের কোনা, পাঁচিলের নিচ, কচুক্ষেত, সার্ভেন্টস কোয়ার্টার থেকে ছাত্রদের ধরে এনে তখনো গুলি করা বাকি। তারপর আছে ছড়ানো-ছিটানো লাশ টেনে এনে এক জায়গায় শুমার করা। তার জন্য অবশিষ্ট ছাত্র, সুইপার, মালি, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আর দারোয়ানদের জড়ো করা হয়। এক পর্যায়ে অবাঙালি মেথর, মালি আর মিস্ত্রিরা দেনদরবার শুরু করে মিলিটারির সঙ্গে, যদি কোনো প্রকারে বাঁচা যায়–

: নেহি সাব, হাম বাঙালি নেহি হ্যায়, পশ্চিমা হ্যায়, হামলোক তো ভাঙ্গি হ্যায়।

: তুম ইহা কেয়া কার রাহা হ্যায়?

: সায়েব হাম তো নোকরি করতা হ্যায়। ঘরমে ছোটা ছোটা বাচ্চা হ্যায় ম্যারা–কোনো কাজ হয় না। লাশ বহন করা শেষ হলে তাদেরও লাইন করিয়ে হত্যা করা হয়। সৈন্যদের চিরুনি অভিযানের পর ঘটনার সাক্ষী হয়ে বেঁচে থাকে কয়েকজন। ম্যানহোলের আশ্রয় থেকে একজন দেখেছিল পুরো হত্যাকাণ্ডটি। উনিশ ঘণ্টা পর বেরিয়ে এসে তার মনে হয়, পৃথিবীর সব লোক মৃত, সেই একমাত্র জীবিত ব্যক্তি, যে নর্দমার পাতাল থেকে উঠে এসেছে।

জগন্নাথ হল। উত্তর বাড়ি। ২৯ নম্বর কক্ষ। তিনজন ছাত্রকে একত্রে ব্রাশফায়ার করা হয়। গ্রেনেড ছোড়ে রুমটিতে। ধ্বংসস্তূপ আর রক্তের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে একজন–মানুষ নয়, যেন প্রেতাত্মা।

ছাদে পঁচিশজনকে একসঙ্গে ব্রাশফায়ার করা হয়। তার মধ্যে কাঁধে গুলি খেয়ে বাঁচে খর্বাকৃতির একজন। আসল বুলেটটি তার মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়।

আরেকজন পায়ে গুলি খেয়েছিল কক্ষের ভেতর। সে জানালার রড খুলে বাইরে এসে ড্রেনে পড়ে। তারপর কুলগাছের নিচের ঝোঁপঝাড়ের ভেতর দিয়ে নেমে যায় পুকুরে। নাকটা শুধু ভাসানো ছিল। মাথার ওপর ভোরের কুয়াশায় ডানা মেলে ঝাঁকে ঝাঁকে কাক-শকুন উড়ছিল। একটা কাক নেমে আসে নিচে। নাকে ঠোকর দেবে যখন, সে জিব নেড়ে কাকটাকে তাড়ায়।

হলজীবনের সঙ্গী, রুমমেট, শিক্ষকদের মৃতদেহ টেনে এনে জড়ো করা হয়েছিল যে জায়গায়, সেখানে লাশ টানা লোকদের ব্রাশফায়ার করার আগমুহূর্তে একজন ক্লান্তিতে শুয়ে পড়ে। খোলা পানির কলের মতো কলকলিয়ে গরম রক্ত ছুটে আসছে চারদিক থেকে। সে ঢাকা পড়ে যায় রক্তের আড়ালে। অদূরের কোয়ার্টার থেকে এক অধ্যাপক ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে দেখেন, সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর মৃতদেহের স্তূপ থেকে উঠে এক অদ্ভুত চেহারার লোক ধোয়া আর কুয়াশায় দৌড়ে যাচ্ছে। গায়ের রক্ত দিয়ে যারা আড়াল করেছিল, লোকটির জীবদ্দশায় তারা খালি হাতছানি দিয়ে ডাকত। কারণ বুলডোজার চালিয়ে সমান করার পরও কারো কারো হাত কবজি পর্যন্ত গণকবরের বাইরে থেকে গিয়েছিল।

: বিশ্ববিদ্যালয়ে কত জন হতাহত হলো–তোমার আনুমানিক হিসাবটা বলল। জাস্ট গিভ মি দ্য অ্যাপ্রোক্সিমেট নম্বর। ওভার।

: তিন শ’র মতো।

: এক্সসিলেন্ট। ইমাম জানতে চাচ্ছেন, তিন শ মারা গেছে, না আহতও আছে?

: আমি একটাই বিশ্বাস করি…তিন শ মারা গেছে।

: আমিও তোমার সঙ্গে একমত। ওই কাজটাই সহজ। নো, নাথিং আড়, নাথিং ডান। তোমাকে ব্যাখ্যা করতে হবে না। আমি আবারও বলছি, ভালো করেছ। চমৎকার কাজের জন্য আবারও বলছি, শাবাশ। ম্যায় বহৎ খুশ হু।

ওভার… রাত্রি ভোর হয়ে আসছে। পর্দাটা খালি। বায়স্কোপ দেখাও শেষ। দর্শকরা ব্যারাকে ফিরে যাচ্ছে ঘুমোতে। ইমাম এসি রুমে ঢুকে আবার গত রাতের উন্মুক্ত অপারেশন কক্ষে ফিরে আসেন। চশমার ঘোলা কাঁচ মোছেন রুমালে ঘষে ঘষে। শহরের শরীর থেকে ধোঁয়া উড়ছে। ভোরের আজানের সুরে সুরে ঝরে পড়ছে করুণ আর্তনাদ। ইমাম। চোখে চশমা তুললেন–খোদা মেহেরবান, একটা মানুষও নেই। একটা রাস্তার কুকুর ভয়ে ভয়ে ধোঁয়া ভেদ করে শহরের দিকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *