• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

৩২. কুর্চির বাড়ি গিয়ে হাজির

লাইব্রেরি » বুদ্ধদেব গুহ » মাধুকরী - বুদ্ধদেব গুহ » ৩২. কুর্চির বাড়ি গিয়ে হাজির

কুর্চির বাড়ি গিয়ে হাজির হয়েছিল সকালে। দাঈ বাজারের দিকে হেঁটে যাচ্ছিল, থলে হাতে পৃথুকে এনে বসিয়ে দিয়ে খবর দিতে যাচ্ছিল। কুর্চিকে।

পৃথুকে বারণ করল। বলল, খবর দিতে হবে না। তুমি তোমার কাজে যাও। আমি বসে আছি।

দিদি রাগ করবে যে!

করলে, আমার উপর করবেন। তোমার বাবু কোথায়?

উনি বেরিয়েছেন। এসে পড়বেন খাওয়ার সময়ের আগেই। আপনি সেদিন এসেছিলেন না, জীপগাড়ি চালিয়ে? চলে গেলেন কেন অমন করে?

আমি? কী জানি! আমিই কী এসেছিলাম?

আমার তাইই তো মনে হল। ভুলও তো হতে পারে। তা পারে। বয়সও তো হল। রাতের বেলা চোখে আজকাল দেখিও না ভাল। তবে, রাত তো নয়, তখন তো ভর দুপুর ছিল। আচ্ছা! বসুন তাহলে। যাই আমি। বলে চলে গেল দাঈ।

পৃথু বসার ঘরের জানালার কাছে এসে দাঁড়াল। শীত এবার মরে যাবে। কত দুর দুর থেকে পরিযায়ী পাখিরা সব এসেছিল সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা, রাশিয়া থেকে। কত পিন-টেইলস, গাড়ওয়াল, টীলস, পোচার্ড ম্যালার্ড, ধূসর আর সাদা রঙা রাজহাঁসের দলগুলি, রঙের দাঙ্গা লাগানো ফ্লেমিংগোরা, সোনা-রঙা চখা-চখি। তাদের যাবার সময় হল। তিন চার হাজার মাইল দূর থেকে তারা কত সহজে পথ চিনে আসে আর চলে যায়! স্বাতী, বিদিশা, শতভিষা, এবং আরও কত সব তারারা তাদের পথ দেখায়। পানা পুকুরে আজীবন পড়ে থাকা বেলে হাঁসের জীবন নয় তাদের। তারা বাঁচতে জানে। শীত-জীবনের বরফ ঢাকা দেশের গায়ের সাদা গন্ধ বুকের পালকে ঢেকে নিয়ে এসে ছড়িয়ে দেয় উষ্ণতার মধ্যে উষ্ণ ট্রপিকাল সবুজ দেশে। আবারও এদেশীয় সবুজাভ উষ্ণতা বয়ে নিয়ে ফিরে যায় শীতার্তকে উষ্ণতায় মুড়ে দেবে বলে। কত চাঁদ আর রোদ আর ইলসে-গুঁড়ি বৃষ্টি আর বসন্তের ফুল-ওড়ানো ঝড়ের মধ্যে দিয়ে গতিপথ তাদের।

নাঃ। কিছুই হল না। কিছুই না। এমনকি একটি সামান্য পাখি পর্যন্ত হতে পারল না পৃথু। কলুর বলদ, মিস্টার পিরথু ঘোষ, অমুক ঘোষের নাতি, তমুক ঘোষের ছেলে, অমুক নারীর স্বামী, তমুক ছেলের বাবা, অমুক ঠিকানায় বাস; তমুক শ্মশানের ছাই…

ছিঃ! ছিঃ!

এ কী? আপনি! কখন এলেন?

এই শীতেও আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে এসে ঢুকল কুর্চি। মুখটা লাল টুকটুকে হয়ে রয়েছে।

কী করছিলে তুমি?

অবাক হয়ে পৃথু বলল।

রান্না করছিলাম।

রান্না করতে এত কষ্ট?

কেরোসিন ফুরিয়ে গেছে। এখানে পাওয়া যাচ্ছে না। তাইই ভাঁটু গেছে, মোগাঁও-এর দিকে খোঁজ করতে। কাঠের উনুনে রান্না করে তো অভ্যেস নেই, আঁচ লাগে ভীষণ!

কাঠের উনুন? কাঠের উনুনে কোনও ভদ্রলোকে রাঁধে নাকি এখন? এক বিরিয়ানী বা কাবাব বানানোর সময় ছাড়া! তাও তো কাঠ-কয়লার আগুনে রাঁধে। চলো তো দেখি তোমার রান্নাঘর!

না, না। কেন? রান্নাঘরে কী করতে যাবেন আপনি?

চলোই না।

দেখেছ! কোনও মানে হয়!

হয়। বলে কুর্চির আগে আগেই গেল পৃথু। চিতার মতো দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। রান্নাঘরটি ভালই। কিন্তু সেখানে রান্না হচ্ছে না। বাড়ির বাইরেই একটি চালামত। তাতে মাটিতে গর্ত করা। তার মধ্যে কাঠ দেওয়া। পাশে অনেক হরজাই কাঠ চিরে রাখা হয়েছে। গনগন করছে। আগুন। মস্ত একটা হাঁড়ি বসাননা তাতে। জল গরম হচ্ছে। বোধ হয়, চানের বা কাপড় কাচার জল।

কিছুক্ষণ চুপ করে রইল পৃথু। তারপর কুর্চির মুখের দিকে তাকাল।

কুর্চি যে শুধু ক্লান্ত ও লালই হয়ে গেছে তাইই নয়, পৃথুর এই বাড়াবাড়ি ঔৎসুক্যে লজ্জিতও হয়েছে অনেকখানি।

আপনি বসার ঘরে গিয়ে বসুন। আমি মুখটা ধুয়েই আসছি।

পৃথু কথা না বলে, গিয়ে বসল। চারধারে চেয়ে দেখল। হঠাই মনে হল, কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ছে যেন! আগের চাকচিক্য যেন নেই। অথচ অল্প কদিন আগেই যখন এসেছিল, তখন ছিল। খাবার ঘরে ফ্রিজটা যেখানে ছিল, সেখানে ফ্রিজটাও নেই। হঠাৎ কি অবস্থার কোনও হেরফের? চিন্তিত হল পৃথু।

কুর্চি এল, হালকা প্রসাধন করে। এসে সোফায় বসল উল্টোদিকে। বলল, বাব্বা! এদিকে কি পথ ভুলে? সেদিন অমন হেঁয়ালি করলেন কেন? দাঈ বিকেলে বলল যখন, তখন ভাবলাম ভুল দেখেছে। আপনি এসেও আসবেন নাইই বা কেন? তারপর রাতে যখন রুবৌদি অজাইব সিংকে দিয়ে চীজ-বেক করে পাঠালেন হঠাৎ এবং অজাইব সিং আপনার কথা জিজ্ঞেস করল, তখনই সন্দেহ হল আমার। আপনাকে নিয়ে সত্যিই আমি পারি না। কী লজ্জা বলুন তো!

লজ্জা? লজ্জা কিসের? তোমার লজ্জা?

তো কী! একজন মেয়ে হলে বুঝতেন! অন্য একজনের স্বামীকে খুঁজে পাওয়া না-গেলেই যদি আরেকজন মেয়ের বাড়ি খোঁজ করতে হয়, তবে সেই দ্বিতীয়জনের লজ্জা হয়, কী হয় না?

পৃথু চুপ করে কুর্চির দুচোখে চেয়ে রইল। কথা বলল না। এটা ওদের অনেক পুরনো খেলা। কুর্চির চোখের মধ্যে চোখের দৃষ্টি এমন করে ফেলে পৃথু, যেন একটুও চোখ উপচে বাইরে পড়ে নষ্ট হয়! কুর্চি এই চাউনি চেনে।

কিছুক্ষণ ও অপলকে চেয়ে থেকে বলল, হয়েছে? এবার ফেরান চোখ।

পৃথু উঠে গিয়ে কুর্চির পাশে বসল। বসে ওর হাতটি হাতে তুলে নিল। কুর্চির ডান হাতের পাতাটি নিজের ডান হাতের পাতায়। কুর্চি মেলে দিল পাতাটি। খুলে দিল। দুপুর বেলার স্থলপদ্মের মতো। আঙুলে আঙুল পাতায় পাতায় উষ্ণতায় উষ্ণতায় মিলন হল। পৃথুর সারা শরীরে সিরসিরানি উঠল।

হয়েছে?

পুরনো দিনের মতো কুর্চি বলল।

না। আর একটু ধরতে দাও। কতদিন আমার হাত আদর করেনি তোমার হাতকে।

থাক। অনেক হয়েছে। আর না।

এমন হয় কেন বলো তো?

পৃথু বলল।

কী এমন হয়?

তোমার হাতে হাত রাখলে এমন ভাল লাগে কেন?

কী জানি? আমিও সেদিন মানসীকে বলছিলাম।

কে মানসী?

শান্তিমাসিমার সেলাই স্কুলে ও-ও তো শেখে। আমি সেলাই শিখছি যে, পৃথুদা। প্রফেশনাল দর্জিদের মতো পারব পরে। কিছু একটা করতে হবে। সারাদিন বাড়ি বসে সময় কাটে না।।

তাই?

অবাক হয়ে বলল, পৃথু।

হ্যাঁ। মানসীরও বিয়ে হয়েছে আমার বিয়েরই বছর। ওর স্বামী এগ্রিকালচারাল ডিপার্টমেন্টে কী যেন কাজ করেন। মানসীকে বলছিলাম যে, কেন এমন হয় বল তো? স্বামীদের অনেক কিছুতেই স্ত্রীদের শরীরে ঘুমিয়ে থাকে আর কোনও কোনও মানুষের গলার স্বর, চোখের চাউনি বা হাতের উপর তার হাতের পরশেই সমস্ত শরীর গলে যেতে চায়।

পৃথুর ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠল।

বলল, কী বললেন মানসী?

বললেন কি? বাচ্চা মেয়ে! আঠারো বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে।

অনেকই ছোট আমার চেয়ে।

বললে কী?

বলল, যা বলেছ কুর্টিদিদি! ভয় করে গো।

ওকে শুধিয়েছিলাম, কিসের ভয়?

প্রেমে পড়ার ভয়। ভালবাসা বড়ই ভয়ের কুর্চিদিদি। যে একবার পড়েছে, সেইই জানে। ভাললাগা ভাললাগা খেলা বেশ। ভালবাসা বড় সাংঘাতিক। আমার শত্রুও যেন কাউকে ভাল না বাসে।

ওর কি অ্যাফেয়ার আছে কোনও?

অ্যাফেয়ার যাকে বলে, নেই। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, বিয়ে করে যাদের ফি হিসেবে, রাঁধুনি হিসেবে, সংসারের কাজ করার জন্যে আর বংশরক্ষার উপায় হিসেবেই নিয়ে আসা হয়, তাদের জীবনে অ্যাফেয়ার থাকে না কোনওই। অ্যাফেয়ার করতে সময় লাগে পৃথুদা। দিনের খাওয়াপরার ভাবনা ভেবে যাদের নিঃশ্বাস ফেলারই সময় থাকে না তাদের অ্যাফেয়ার-ট্যাফেয়ার থাকে না। এসব ব্যাপার ওয়েল-অফফদের জন্যে।

তবে?

কী তবে?

তবে, মানসী ভালবাসার ভয়ের কথা কী জানে? সময়ই নেই তাহলে ভালবাসবে কখন?

ওঃ, সে বিয়ের আগে ভালবাসত একজনকে। ওদের বাড়ি বিলাসপুরে। মানে, মানসীদের। ছেলেটি পড়াশুনোতে খুব ভাল ছিল। এখন নাকি আই-এ-এস হয়ে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছে। মানসীকে অপেক্ষা করতে বলেছিল ও মানসীর কন্যাদায়গ্রস্ত বাবা এক দোজবরের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিলেন। ভদ্রলোককে দেখলে তুমি ভিরমি খাবে। মানসীর বাবার অবশ্য দোষ ছিল না কোনওই। ছয় বোন ওরা। বাবা ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট পেপাস্টমাস্টার। তাও মধ্যপ্রদেশের এমনই এক পোস্টাপিসের, যেখানে লাউটা কুমড়োটা পর্যন্তও কেউ ভালবেসে দেয় না।

যা শুনছি, তাতে শরবাবুর আমলের পর ব্যাপার-স্যাপার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। এও কি বিশ্বাস করতে হবে? এই মধ্যপ্রদেশে বসেও?

বিশ্বাস করা না করা আপনার ইচ্ছা। নিম্নমধ্যবিত্ত বাঙালির অবস্থা বোধহয় ঠিক সেই রকমই আছে। অবস্থা ফিরেছে শুধু উচ্চবিত্তদের। বিজ্ঞান, সমাজ, প্রযুক্তিবিদ্যা সবকিছুরই সুযোগ শুধু তারাই পেয়েছে। নিম্নমধ্যবিত্ত বলে আর কিছু নেইও পৃথুদা। তারা এখন বস্তিতে নেমে গেছে। যারাই বাংলা গান, বাজনা, সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রেখেছে চিরদিন তারা সত্যিই বস্তিতে নেমে এসেছে। নয়তো নামবে শিগগিরই। অথচ, তারাই বাঙালির প্রাণ। যারা ভাল আছে, তারা সবাইই‘সাহেব-মেম হয়ে গেছে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের আর কোনও যোগাযোগই নেই।

রুষা, মিলি, টুসুদেরই মতো বলছ?

পৃথু বলল।

সরি। আমি কিছু ভেবে বলিনি পৃথুদা। আমাকে ভুল বুঝবেন না।

তোমাকে আমি কিছুই বলছি না, বলছি তোমাদের ক্লাসকে। যারা বাঙালির, ভারতের সবচেয়ে ভাল করতে পারত তারাই খারাপ করছে সবচেয়ে বেশি।

পৃথু একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তাহলে আজ কি এইসব ভাল ভাল আলোচনা করেই আমাকে বিদায় দেবে?

সরি! সরি! কী খাবেন বলুন? এখন চা খান। আজ কিন্তু খেয়ে যাবেন। মাছ নেই, ছানা কেটেছিলাম। ছানার ডালনা রাঁধব। আমি চা নিয়ে আসছি এক্ষুনি।।

তুমি কোথাওই যাবে না আমার সামনে থেকে। বোসো তো চুপটি করে। তোমার কী মনে হয় এত দূরের জঙ্গল-পাহাড়ের পথ পেরিয়ে আমি তোমার কাছে খেতেই আসি? পেটুক আমি নিশ্চয়ই কিন্তু তা বলে সত্যি এমন স্থূল পেটুক?

সত্যি। আমিও প্রায়ই ভাবি। কেন যে আসেন এত কষ্ট করে। কী যে আপনি দেখেছিলেন আমার মতো একজন সাধারণ মেয়ের মধ্যে! আপনিই জানেন। আপনার জন্যে কিছু করতে পারি না, কিছু না। তবু, কেন যে…

এতক্ষণ হাসি হাসি মুখ ছিল কুর্চির। কালো হয়ে উঠল মুখটি। মুখ নামিয়ে নিল ও।

মেঘ জমছে বাইরে।

পৃথু বলল।

চোখ তুলে বাইরে তাকাল কুর্চিও। নিজের মনে বলল, শীত সরে যাবার আগে বৃষ্টি হবে। তবে তার দেরি আছে। মুখে বলল, প্রত্যেকটি ঋতু বদল হবার সময়ই ঝষ্টি হয়, লক্ষ করেছেন?

হুঁ?

বদল মানেই কষ্ট। অন্যকে জায়গা ছেড়ে দেওয়া, নিজেকে নতুন জায়গায়, পরিবেশে খাপ বাওয়ানো। ঋতুদের বুঝি কষ্ট নেই কোনও!

নিশ্চয়ই আছে।

আচ্ছা। একটা সত্যি কথা বলবে আমাকে কুর্চি?

পৃথু বলল।

কী? সেই চির পুরনো প্রশ্ন? মিথ্যে তো কখনও বলিনি আজ অবধি। আপনাকে বলিনি অন্তত।

হেসে বলল, কুর্চি।

ফ্রিজটা কী হল? দেখছি না যে।

হঠাৎ মুখ একেবারে কালো হয়ে গেল কুর্চির। এক ঝাঁকিতে মুখ নামিয়ে নিল।

সারাতে গেছে? নতুনই তো, অ্যালউইনের ফ্রিজ তো চমৎকার। এরই মধ্যে খারাপ হয়ে গেল?

কুর্চি মুখ তুলে কিছু একটা বলতে গেল।

পৃথু বলল, তোমার ইলেকট্রিক আভেন নেই? কেরোসিনের স্টোভে কেউ রান্না করে নাকি? গ্যাসের স্টোভও তো আনতে পার। হাটচান্দ্রাতে এবং মান্দলাতেও সিলিন্ডার পাওয়া যায়। তোমার সলিন্ডার আমি কারখানার কোটা থেকেই পাঠিয়ে দেব। বলনি কেন আমাকে?

কুর্চি মুখ নিচু করেই রইল। কিছু বলল না।

তারপর হঠাৎ উঠে পড়ে বলল, আপনি বসুন। আপনার জন্যে চা করেই আসছি।

এবারে ওকে মানা করলে কুর্চি আহত হবে তাই কিছু বলল না পৃথু।

কুর্চি চলে গেলে, বসবার ঘরের অন্যদিকের জানালাতে গিয়ে ও দাঁড়াল। আকাশে মেঘ জমেছে। ঘুঘু আর কালিতিতির ডাকছে এই মেঘাতুর বিষণ্ণতাকে বাড়িয়ে দিয়ে। বেশ ঠাণ্ডা আছে। ঝিরঝির করে উত্তুরে হাওয়া দিয়েছে একটা। রাধাচূড়ার স্তবক, রঙ্গনের ঝাড়, কৃষ্ণচূড়ার ফিনফিনে পাতারা কেঁপে উঠছে। ঘন সটান কদম গাছে শীতের হাওয়া সেঁদিয়ে যেতেই দমবন্ধ হয়ে মরে যাচ্ছে কদম গাছ তো রাধা কৃষ্ণরই গাছ। “শ্রাবণ ঘন গহন মোহে নীরব দিঠি এড়ায়ে এলে” গাছ! উত্তুরে হাওয়ার সাধ্য কী তাদের উত্যক্ত করে? শুধু পূবেরই হাওয়ায় তারা চনমন করে ওঠে। “পূব হাওয়াতে দেয় দোলা, মরি মরি…ব্যথা আমার কুল মানে না, বাধা মানে না, পরাণ আমার ঘুম জানে না; জাগা জানে না…”

হঠাই পৃথুর চোখ পড়ল ওই জানালা দিয়ে একটি কেটলি হাতে করে কুর্চি চলেছে বাইরের সেই চালাঘরের কাঠের গনগনে আগুনেরই কাছে। আগুনে তো মস্ত বড় জলের হাণ্ডি বসানো আছে। সেই হাণ্ডি কী করে নামাবে কুর্চি একা তার নরম হাতে? ওই কি বসিয়ে ছিল একা? তাইই! অনেকদিন পর কুর্চির হাতে হাত রেখে ও বুঝেছিল ওর হাতের পাতা খসখসে হয়ে গেছে। সেই সুন্দর নরম তুলতুলে হাত দুটি নেই আর। অনেক কাজ করতে হয় নিশ্চয়ই ওর। নিজের হাতে। হয়তো বাসনও মাজে; কাপড় কাচে। ঈস্স্! কুর্চি!

পৃথু তাড়াতাড়ি ওইদিকে এগিয়ে গেল। ততক্ষণে কুর্চি প্রায় পৌঁছেই গেছে উনুনটার কাছে। নিচু হয়েছে, হাঁড়িটা নামাবে বলে, ঠিক সেই সময় পৃথু বলল, দাঁড়াও, দাঁড়াও, দাঁড়াও। পারবে না তুমি। বলেই, পকেট থেকে রুমাল বের করল। রুমালে বেড় পেল না। তখন নিজের কোট দিয়ে হাঁড়ির বাঁদিক এবং রুমাল দিয়ে ডানদিক ধরে নামাতে গেল হাঁড়িটাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে মাটির উনুনের ডানপাশে কাৎ হয়ে উল্টে পড়ল হাঁড়িটা।

কুর্চি আর্তনাদ করে বাঁ পাশে লাফিয়ে সরে গেল। পৃথুর ডান পায়ের উপর পড়ে হাঁড়িটা আধ-গড়ানে স্থির হয়ে গেল। কর্ভুরিয়ের ট্রাউজার, মোজা, জুতো পরে থাকা সত্ত্বেও ডান হাঁটু থেকে পায়ের পাতা অবধি ঝলসে গেল পৃথুর।

হাউ মাউ করে চেঁচিয়ে উঠল কুর্চি। পরপরই পৃথুকে জড়িয়ে ধরে বসবার ঘরের দিকে বয়ে নিয়ে যেতে লাগল। পৃথু নিজে হাঁটে, এমন অবস্থা ছিল না তখন ওর। বসরার ঘরের সোফাতে বসিয়ে জুতো-মোজা খুলে দিল কুর্চি এবং একটা কম্বল এনে পাটা ঢেকে দিয়েই বলল, আপনি সোফাতে পা তুলে দিন। বাড়িতে কোনওই ওষুধ নেই। আমি এক্ষুনি বার্নল নিয়ে আসছি বাজার থেকে।

তুমি!

বলেই, পৃথু উঠতে গেল সোফা ছেড়ে। কিন্তু তক্ষুনি পড়ে গেল, সোফাতেই।

কুর্চি আঁচল-উড়িয়ে খোলা দরজা দিয়ে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল ওই শাড়ি জামাতেই।

একা, যন্ত্রণাকাতর পৃথু কম্বলমোড়া ডান পাটা সোফার হাতলের উপর তুলে দিল। বড় জ্বালা!পুড়ে গেলে এত যে লাগে, জানা ছিল না ওর। রোজই খবরের কাগজে পড়ে ভারতের কোথাও না কোথাও শ্বশুর শাশুড়ি, স্বামী, দেবরের অত্যাচারে কত অল্পবয়সী মেয়ে আগুনে পুড়ে মরছে। ঈসস। কতই না লাগে তাদের। জ্বলে যায় সব। হু-হু করে।

এই অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণা, তবু তার সহনীয় বলে মনে হল। যা সহ্য করতে পারছিল না, তা কুর্চির এই অবস্থা! মনের কষ্টের কাছে শরীরের কষ্ট কিছুই নয়। আজ যেন প্রথম বুঝল ও। কী হয়েছে কে জানে? ফ্রিজ বিক্রি করে দিতে হল, কেরোসিনেও রান্না করা যাচ্ছে না? আশ্চর্য!

কুর্চি ফিরে এল বার্নল নিয়ে। তারও একটু পরে এল দাঈ, ডাক্তার নিয়ে। ডাক্তার ভাল করে ড্রেস করে দিলেন। বেশি পুড়েছে গোড়ালি আর পায়ের পাতা। যোধপুরী বুটের মধ্যে দিয়ে জল ঢুকে গেছিল। দু’একদিন এখন শয্যাশায়ী থাকতে হবে। পা’টাকে যত রেস্ট দেবেন ততই ভাল।

ডাক্তার বললেন।

মাথা খারাপ স্যার। আমার চাকরি চলে যাবে।

পৃথু বলল।

ও ভাবছিল যে, রাইনার অবাচীন ডাক্তার কী করে জানবে পৃথুর বিপদের কথা? রুষাকে কী করে বলবে যে, কুর্চির অবস্থা দেখে তাকে রান্নার সাহায্য করতে গিয়েই ওই অবস্থা। কী করে কথাটা বলবে ও তা ভেবেই পেল না। আর যদি সাহস করে বলেই ফেলে তাহলে বলবার পর কী হবে? এর চেয়ে সেদিন ডাকু মগনলালের গুলি খেয়ে মরে যাওয়াই অনেক ভাল ছিল। পৃথু জঙ্গুলে মানুষ। জঙ্গলের জানোয়ারের মোকাবিলা সে করতে পারে। নিদেনপক্ষে, পুরুষ-মানুষেরও। কিন্তু ঈষাজর্জর মহিলা?

নেভার। নেভার! টোটালি ইনকেপেবল্।

পৃথুর ইচ্ছে হল, অনেক অনেকদিন পর ছেলেবেলার মতো ভ্যা করে কেঁদে দেয় ও। সশব্দে কাঁদলে দুঃখ যে শীৎকারের সঙ্গে তড়িৎবেগে বেরিয়ে যায় এই মহাসত্য এই মুহূর্তের আগে ও জানত না। সশব্দে কাঁদতে ইচ্ছে হল খুবই, কিন্তু পারল না কিছুতেই। যতই ইচ্ছে হোক না কেন ছেলেবেলায় ফেরা যায় না। মানুষের সৃষ্ট সমস্ত জল এবং স্থল যানে একটি করে ব্যাক-গীয়ার আছেই। নেই শুধু তার নিজের জীবনেই। শত প্রয়োজনেও, শত চেষ্টাতেও; জীবন-যানে। ব্যাক-গীয়ারে যাওয়া যায় না।

ওয়াট-আ-ট্রাজেডি!

ডাক্তার চলে গেলেন। কিছু ওষুধও লিখে দিলেন। মলমও লাগাতে হবে। ড্রেস করতে হবে প্রত্যেক দিন। পরিবেশ একটু শান্ত হয়ে এলে দাও আবার সেই হাঁড়িতে নতুন জল বসাতে গেল।

কুর্চি বলল, একটু একাই বসুন পৃথুদা। আমি চা নিয়ে আসছি।

আবারও চা?

দ্বিধার গলায় বলল, পৃথু।

কুর্চির চুল বিধ্বস্ত। শাড়ি এলোমেলো। মুখ উদ্বিগ্ন।

যেও না কুর্চি! আমার কাছে একটু বোসো। লক্ষ্মীটি! কথা আছে তোমার সঙ্গে।

পৃথু হাত তুলে বলল।

না। কী কথা! না!

পৃথু কুর্চির চোখে চাইল। দেখল, কুর্চির দুচোখ জল-ছলছল।

কুর্চি আবারও বলল, না।

এবারে ওর গলাটা ধরা শোনাল।

পৃথুর বুকের মধ্যেটাতে হঠাৎ কে মোচড় দিয়ে উঠল। এমন ভাবে মোচড় দিয়েই বুঝি হার্ট-অ্যাটাক হয় মানুষের। কে জানে? নিজের না হলে বোঝা যায় না!

কুর্চি চলে গেল।

একা বসে জানালা দিয়ে বাইরের টাঁড়ের দিকে চেয়ে অনেকই কথা ভাবছিলাম পৃথু। কুর্চিকে পৃথু বিয়ে করলে এত কষ্টে থাকতে হত না কুর্চিকে। কিন্তু কুর্চির কষ্ট দেখে ওর নিজের যে এতখানি কষ্ট হবে তাও ভাবতে পারেনি। চা নিয়ে যখন এসে পৌঁছল কুর্চি তখন শরীরের যন্ত্রণার উপশম হয়েছে, কিন্তু মনের যন্ত্রণাতে ঝুঁদ হয়ে গেছে পৃথু।

উঠে বসার চেষ্টা করল একটু।

একদম না। চুপ করে বসুন যেমন আছেন।

চায়ের কাপটা সোফার পাশের তেপায়ার উপর রেখে উল্টোদিকে বসল কুর্চি।

পৃথু ইশারায় আবারও পাশে এসে বসতে বলল।

জোর করে হাসার চেষ্টা করে কুর্চি বলল, না। একদম না। এবার চা পড়ক গায়ে, সেটুকুই বাকি!

চা-টা খেয়ে পৃথু বলল, এবার?

কুর্চি পাশে এসে বসলে, পৃথু আবার ওর হাতটি হাতে তুলে নিল। আশ্চর্য! শরীরে আগুনে-পোড়া যত জ্বালা ছিল সব নিবে গেল সঙ্গে সঙ্গে। আশ্চর্য! যখন সময় এমন অসময় হয়ে ওঠেনি; তখন ও কতবারই রুষার হাতে হাত রেখেছে। অল্প কদিন আগে হাত রেখেছে বিজ্‌লীরও হাতে। এমন ভাল তো লাগেনি কখনও! রুষা, তার স্ত্রী। তার ছেলেমেয়ের মা। এক ধরনের বিশেষ ভালবাসা নিশ্চয়ই তার জন্যে এখনও আছে পৃথুর। সে ভালবাসা কানুনী ভালবাসা তো বটেই! বিজীর জন্যেও এক ধরনের বে-কানুনী, বে-এক্তিয়ারের তীব্র ভালবাসা বোধ করেছে ও সেদিন। কিন্তু কুর্চির ভালবাসাটা একেবারেই অন্যরকম ভালবাসা। অনেকটা বন, নদী, পাহাড় আকাশের তারারা, প্রাচীন মহীরূহ যেমন করে পৃথুকে ভালবেসেছে শিশুকাল থেকে, অনেকটা সেরকম ভালবাসা। এই ভালবাসায় দাহ নেই কোনও; শুধুই প্রলেপ। বোধহয় একমাত্র কুর্চির মতো মেয়েরাই এ যুগেও এমন শান্ত স্নিগ্ধ ভালবাসা বাসতে জানে। গ্রেট-ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড-এর মতোই এরাও বড়ই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে এই দেশে।

কুর্চি বলল, ছাড়ুন। দাঈ এসে পড়বে যে-কোনও সময়ে। ভাঁটুও এসে পড়তে পারে যে-কোনও মুহূর্তে।

আসুক। আসলেই বা কী? ছেলেবেলা থেকেই আমরা দুজনে দুজনকে জানি, একটু হাতে হাত রাখলে দোষ কী? মহাভারত কি অশুদ্ধ হবে তাতে?

সমাজ? সমাজ নেই? আপনি রুষাদেবীর স্বামী নন? আমিও তো ভাঁটুর বউ? অমন পাগলামি করবেন না। সব বিষয়ে পাগলামি চলে না।

আলবাৎ চলে। চালালেই চলে। তাছাড়া, এ পাগলামি কেন হবে। এইই তো সুস্থতা।

নাঃ। বললেই তো আর হয় না। বেঁচে থাকতে হলে একটু লুকিয়ে-চুরিয়ে করতে হয় সবকিছুই। নইলে…। সমাজকে আপনি মানুন আর নাইই মানুন সে তো আছেই। শকুনের মতো নজর তার। কোথায় ফুল ফুটেছে তা দেখে না তারা, মরা গাছের মগ ডালে বসে থাকে সব সময়। পচা-গলা মৃতদেহের দিকেই চোখ তাদের। আপনি তো আর মেয়ে নন, আপনার কী?

পৃথু হেসে উঠল। আসলে কাঁদতে চেয়েছিল। গভীর কান্নাটা হালকা হাসি হয়ে ছিটকে উঠল। বলল, ছিঃ! ছিঃ! এমন সব কথা আস্তে বলল। অন্য মানুষে কেউ শুনতে পেলেই লজ্জা পাবে। সারা দেশে এত লিবারেশন মুভমেন্ট। মেয়েরা তো সবাই পুরুষের সমানই। কোন দিক দিয়ে তোমরা কম!

যারা লিবারেটেড হতে চায় তারা হোক। আমি চাই না।

তার মানে?

আসল কথাটা হচ্ছে ইকনমিক-ফ্রীডম। আমার কথা আলাদা। আমি চাই আমাকে কেউ জোর করুক, আমাকে চালাক, আমাকে পরাধীন করে রাখুক।

কী বলছ কী তুমি?

ঠিকই বলছি। আমার মতো অনেক মেয়েই আছে। এই পরাধীনতাটার ইচ্ছেটাও ইচ্ছে করেই। এর মানে, পশ্চিমের মেয়েরা কোনওদিনও বুঝবে না। এদেশের স্বামীরা স্ত্রীদের যতখানি এবং যেমন করে ভালবাসে ততখানি কি ওদের দেশে পারে? আমাদের জিতটা যে কোথায় তা ওরা বুঝবে কী করে? অনেক স্বাধীন মেয়েকে আমি জানি, তাদের পরাধীনতাটা গ্লানির। স্বাধীনতা তাদের নামেরই স্বাধীনতা শুধু!

যাকগে বাবা। যা বললে বললে, আর বোলো না। হাটচান্দ্রার উইমেনস লিব-এর প্রবক্তারা তার মধ্যে তোমার রুষা বৌদিই প্রমিমেন্ট, জানতে পেলে বলবেন যে, তোমাকে আমি ঘুষ খাইয়ে উইটনেস ফর দ্যা প্রসিকুশান বানিয়েছি।

হেসে উঠল কুর্চি। বলল, আমাকে যে ঘুষ দিয়ে কেনা যায় না তা সকলেই জানে।

ঘুষ খেয়ো না। খেলে বদহজম হবেই। ঘুষ আর ঘুষঘুষে জ্বর একই রকম অসুখ। আছে বলে মনে হয় না, সারেও না। আমাদের শর্মাকে চোখের সামনেই দেখি। রাতে ঘুম হয় না, ছেলেমেয়ে মানুষ হয় না, বুড়ো বয়সে কষ্ট পেতে হবে। ঘুষ খাবার দরকার নেই তার চেয়ে একটু চুমুই খাও আমাকে।

ছিটকে চলে গেল কুর্চি উল্টোদিকের সোফায়। লজ্জায়, উত্তেজনায় মুখ লাল হয়ে উঠল ওর।

বলল, কী অসভ্য! ইয়ার্কি হচ্ছে, না? আপনাকে আমি যে এক বিশেষ চোখে দেখি পৃথুদা। জেকে অন্যদের মতো করে ফেলবেন না আমার চোখে। আপনাকে আমি শ্রদ্ধা করি। প্লিজ না।

ভালই বলেছ। হেসে ফেলল পৃথু।

বলল, কুলুঙ্গির দেবতা হয়ে থেকে তোমার হিমেল ফুল-বেলপাতার শ্রদ্ধা কক্ষনো চাইনি। প্রেম যে শ্রদ্ধার চেয়েও সিনিয়র দেবতা, এমন তো জানা ছিল না।

কুর্চিও হাসল। বলল, আপনার সঙ্গে কথায় পারব না।

তবে, এসব জিনিস আলোচনা পর্যন্ত করতে নেই। সব বিষয়ই কী আলোচনার?

তারপর মুখ নিচু করে অনেকক্ষণ চুপ করে থাকল কুর্চি। তারপর মুখ নিচু করেই গাঢ় স্বরে বলল যে, যে-অসামান্য পুরুষ সময়মত মুখ ফুটে একজন সামান্য নারীর কাছে মাত্র তিনটি শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করতে পারল না তাঁরই মুখে এত কথার ফুলঝুরি কি বেমানান নয়? মক্কেলের যাবজ্জীবনের কারাবাসের দণ্ড হয়ে যাবার পর মেধাবি দামী উকিলের সওয়ালের দাম আর কীই বা থাকে? আপনি একটি অদ্ভুত বাজে লোক।

তিনটি শব্দ? কোন তিনটি শব্দ? সেই সামান্য নারীটিই বা কে?

অবাক, ছটফটে গলায় পৃথু শুধোল।

জানেন না আপনি?

কুর্চির মুখ গম্ভীর হয়ে গেল।

বলল, তা বুঝলে ত…

নারীটি যে কে তা অনুমান করতে পারি, তবে শব্দ তিনটি কী? আর “সময়মত” কথাটির মানেই বা কি?

তিনটিই শব্দ। আমি কুর্চিকে ভালবাসি। আর “সময়টুকু” হচ্ছে, যখন আপনার জ্যাঠামশায় আপনার বিয়ের কথা প্রথম পাড়লেন আমার তখনও বিয়ে হয়নি।

লাফিয়ে উঠতে গেল সোফা থেকে পৃথু। পরক্ষণেই, যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠল। বসে পড়ল।

ও কিছু বলার আগেই কুর্চি বলল, আপনি বাঘ মারতে পারেন হয়ত, কিন্তু আপনি কাপুরুষ। একটু আগে যা বললেন, ওই চুমুটুমুর কথা আর কখনও আমাকে বলবেন না। আমি ভাঁটুর স্ত্রী। সে আমার স্বামী। ভাল হোক, মন্দ হোক; ইনডিফারেন্ট হোক। আমি ওকে ডুবিয়ে দিতে পারি না। বিয়েটা একটা চুক্তি, পৃথুদা। চুক্তির এলাকার বাইরে যা কিছু আছে সবই আমি দেব আপনাকে, দিইও। যা দিই তার বেশি কখনওই চাইবেন না।

বলেই, চুপ করে গেল কুর্চি।

এমন সময় ধুলো ভরা রাস্তা থেকে মোটর সাইকেলের আওয়াজ ভেসে এল। শীতের জমাট বাঁধা ধুলোর গায়ে আর ধুলিধূসরিত বনের পথপাশের গাছেদের গায়ে অনুরণিত হয়ে শব্দটা অনেকগুণ বেড়ে গিয়ে ধেয়েই আসছে যেন। শব্দ নয়, ও যেন শকুনের দল। পৃথুর একটুখানি সুখে ধারালো ঠোঁট বসাবে যেন।

পৃথু কোর্টের পকেট থেকে কুঁচফলের থোকাগুলো বের করে কুর্চিকে দিল। বলল, রাখো। তোমার স্বামী আসছেন। ফুল-টুল খুব খারাপ। বড়ই সংক্রামক।

কী, এগুলো?

ফুল নয়। কুঁচফল। ছোটবেলায় তুমি খুব ভালবাসতে!

কুর্চি উঠে এসে থোকাটি হাতে নিল।

তারপর এক মুহূর্ত স্থির চোখে পৃথুর চোখে চেয়ে রইল। মুখটা ভাঁটুর আসার প্রতীক্ষায় দরজার দিকে ঘুরিয়ে রেখে অস্ফুটে বলল, কথা কিছু মনেও রাখেন আপনি!

সত্যি? মিছিমিছি!

Category: মাধুকরী - বুদ্ধদেব গুহ
পূর্ববর্তী:
« ৩১. নুরজাহানকে যেদিন উদ্ধার করা হল
পরবর্তী:
৩৩. বিজলীর কাছে যাওয়া হয়নি »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑