১০. নির্যাতিতের কনফারেন্স

নির্যাতিতের কনফারেন্স

শ্যামলী রহমান, যে মদ খেতে খেতে মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে লিভার সিরোসিসে মারা যাবে, সে বলে, ‘পাক-আর্মি আমারে ধরেছে ওষুধের দোকান থেকে, ভুলবশত। কারণ আমি অফিস করে দোকানে গেছিলাম ওষুধ কিনতে। আমার ছোট ছেলেটার অসুখ।’

‘ছেলের অসুখ তো বুঝলাম। কিন্তু মেয়েরা অফিস করত নাকি যুদ্ধের বছর?’

যুদ্ধের দিনে শ্যামলী অফিস করেছে। তার অফিসের নাম মুন জুট মিল। বস পাঞ্জাবি। সে নিজে একজন বাঙালি টেলিফোন অপারেটর। পাকড়াও হওয়ার দিনও শ্যামলী অফিসে গেছে। তবে অফিস ছুটির এক ঘণ্টা আগে ফোনে তালা লাগিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল। তাকে যেতে হবে রেললাইন পেরিয়ে শহরের বাইরে গ্রামমতো এক নিরিবিলি জায়গায়, নাম তালতলা। সেখানে শ্যামলীর বিধবা মায়ের তত্ত্বাবধানে তার ছেলে দুটিকে রেখেছে। ছোট ছেলে বুলুর অসুখ। মিলের গেটে বিহারি দারোয়ান হাতের তালুতে খৈনি পিষছিল। মুখ না তুলেই সে জানতে চায়, কাহা যারাহাহে, দিদি?’

‘হাম? হাম দাওয়াই লেকে।’

সেদিন শহরের অবস্থা খুব খারাপ। এলোপাতাড়ি ধরপাকড় চলছে। শান্তি কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতা দিনদুপুরে খুন হয়েছেন। হত্যাকারীর দলে শাড়িপরা একটি মেয়েও ছিল। কিন্তু ছেলের জন্য শ্যামলীর ওষুধ না কিনলেই নয়। সে দোকানে ঢুকে ব্যাগ থেকে প্রেসক্রিপশন বের করেছে, বিহারি কম্পাউন্ডার তা দেখার সুযোগও পায়নি, তখন এক দল আর্মি হুড়মুড়িয়ে ঢোকে। ছেলের জন্য সে ওষুধ কিনবেই আর আর্মিরা তাকে কিনতে দেবে না। এ সময় কিঞ্চিৎ সওয়াল-জওয়াবও হয়। যেমন কোথায় সে চাকরি করে, কোন আর্মি অফিসার তার চেনা, কে তার বন্ধু। এসব বলার পর পিস্তলের নল পিঠে ঠেকে গেলে, সে শুধু প্রেসক্রিপশনের উল্টো পিঠে দু’কলম লিখে কম্পাউন্ডারের হাতে চালান দেওয়ার ফুসরতটুকু পায়। এরপর মিলিটারিরা তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে জিপে তোলে।

যোগেন বাইন্যার মেয়ে বিন্দুবালা, যে মরিয়মের সঙ্গে একই দিনে নতুনগাঁও থেকে ধরা পড়ে, ’৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুক্তিযোদ্ধা নজর আলী শাদি করার ফলে যার নতুন নাম হয় লাইলি বেগম, সে বলে, রাস্তা থিক্যা আমাগো বাড়ি হইছে আধা মাইল পথ। গিরামের বাড়ি তো–ঝোঁপজঙ্গল। গাছগাছালির ভিতর দে খালি ধোঁয়া দেখা যায়। আগুন, আগুন। গুলির আওয়াজ পাতিছি আর মানুষ সব পালাচ্ছে। বাবা মাকে বলে, তুমি বাচ্চা কয়ডা নিয়া অমুকখানে চলে যাও। আমি থাকি। মা কয়, তোমারে একা বাড়ি থুয়ে আমি যাব না। তো সবাই মিলে যাচ্ছি। আমরা খুব গরিব ছিলাম। এটুখানি যেয়ে মা কয়, বিন্দু গামলার ভাত চারটা এক দৌড়ে নে আয় তো, মা। ভাত খাতি না পেলে ছাওয়াল-পাওয়াল বাঁচপে না। বিন্দুবালা আগুনের ভেতর দিয়ে সার্কাসের মেয়ের মতো দৌড়ে দৌড়ে বাড়ি ফেরে। ভাতের গামলায় ডাল ঢালার সময়টুকু সে শুধু পায়। গামলা তুলে দৌড় দেওয়ার আগে পেছন থেকে একজন মিলিটারি তাকে জাপটে ধরে।

‘আপনে জোরাজুরি করেন নাই ওদের সঙ্গে?’

বিন্দুবালার মাথায় ছিল লম্বা বেণি। আগের রাতে চুলে তেল মেখে বুড়ি ঠাকুরমা শক্ত দড়ির মতো বিনুনি পাকিয়ে দিয়েছিলেন। তার লম্বা বেণিটা খপ করে ধরে মিলিটারি আর সে ধরে ঘরের খুঁটি। বিন্দুবালা বলে, ‘অগো সাথে পারা যায় না তো! এই খুঁটি ভাইঙা আমারে চিত করে ফালাই দিয়া ছেচড়াতে ছেচড়াতে নিয়া আসে। রাস্তায় রাইফেল কাঁধে করে রাজাকাররা আগে আগে হাঁটে, মেলেটারি হাঁটে অগো পিছন পিছন। আমি মধ্যিখানে।’

‘আপনার পরনে কী ছিল তখন?’

‘খয়েরি রঙের একটা ছাপা শাড়ি ছিল। এই কাপড়ের আঁচলডা এক্কেরে টানের চোটে দুই ভাগ হইয়ে গেছিল, ফাইরা হালোই ছিল কাপড়। বেলাউজ ছিল না শইলে। পেটিকোট ছিল না, না ছিল–এত বছর আগের কথা, আমি ঠিক বলতে পারি না।’

মুক্তিযোদ্ধা পারুল, যার নাম স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে এক সরকারের আমলে লেখা হয়ে পরের সরকারের সময় যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে বাদ পড়ে যাবে, সে বলে, ‘আমি ধরা পড়িছি সম্মুখসমরে। ওইটা শুক্কুরবার দিনগত রাইত। অস্ত্রসহ আমরা ধরা পড়িলাম। তখন পালাব কী কইরে? আর কোথায় পালাব? বর্ষার পানিতে খাল-বিল, খেত-খামার টুপু টুপু কচ্চে। আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না।’

‘আপনে যে একজন মুক্তিযোদ্ধা, হের প্রমাণ কী? বন্দুক চালাতি পারেন?’

‘হে পারি। পারি–দ্যাকপেন? আমরা ইভাবে সিনা টান টান করি থিরি নট থিরি রাইফেল ধরিতাম। চেম্বারে গুলি উঠোইয়ে যখন ফায়ার করতি হবে, তখন হাতের বাজুতে ঠেকিয়ে নিরিখ করে গুলি মাইরতে হবে। বাম হাত থাইকপে রাইফেলের মধ্যিখানে আর ডান হাত থাইকবে চাবির গোড়ায়।’

আর্মি ক্যাম্পে ধরে আনার পর একজন রাজাকার পারুলের হাতে বন্দুক তুলে দিয়ে বলেছিল–এই অস্ত্র ছাড়। তুই কী রকম আমাগের সাথে যুদ্ধ করেছিস দ্যাকা দিকি! দ্যাকা কীরকমভাবে ফায়ার করতি অয়।

‘তো আপনে গুলি করলেন?’

‘হে করিলাম। করার পর রাজাকার বুইল্লো–ওরেবাহ্ এ তো কিছু থোবে না নে। শ্যাষ করে দেবে। আমাগের গুষ্টি-গেরাত সব মাইরে ফেলাবে।’

শ্যামলী বলে, ‘কিন্তু কেউ ভারত যাচ্ছে কি না বা সেখানে গিয়ে ট্রেনিং নিচ্ছে কি না বা মুক্তিবাহিনী তৈরি হচ্ছে কি না–আমি জানি না। আমি নিজের যুদ্ধ নিয়াই ব্যস্ত।’ কেননা তখন সবে স্বামীর সঙ্গে শ্যামলীর ছাড়াছাড়ি হয়েছে, ছেলে দুটি থাকে এক জায়গায়, সে নিজে আরেক জায়গায়। এ রকম খারাপ সময়ে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। শ্যামলীর এলাকায় যুদ্ধের আগে থেকেই গন্ডগোল। বাঙালি-বিহারি লাগাতার দাঙ্গা। আজ এ ওরে মারে তো কাল ওরে এ মারে। লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, মিল ধর্মঘট কখনো বন্ধ হয় না। অসহযোগের সময় কয়েক দফা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়ে গেল বিহারি-বাঙালিতে। সর্বত্র লাশ। রক্তে পথঘাট পিছল। নদীতে নৌকো চলে না। লাশে লগি আটকে যায়। ফলে ২৫ মার্চের পর আর্মির তাড়া খেয়ে সেই এলাকার বাঙালিদের পালাতে দেরি হয়েছিল।

ব্যারিকেড ভেঙে মিলিটারিরা যেদিন শহরে ঢোকে, শ্যামলী লাশের ওপর দিয়ে দৌড়াতে শুরু করে। আশপাশের আর যারা পালাচ্ছে, সবারই পরিবার আছে, ওর ছাড়া। দশ-বারো জন উদ্বাস্তুর সঙ্গে সে এক পোড়ো বাড়িতে আশ্রয় নেয়। শ্যামলী তখন পুরোদমে নিঃস্ব। চাকরি নেই, টাকা নেই, স্বামী নেই, সন্তান নেই। পথের ভিখিরির অবস্থা তার। তবু সে এপ্রিল মাসটা সেই বাড়ির আশ্রিত পুরুষদের ভজিয়ে ভাজিয়ে থাকবার চেষ্টা করে। তাতে করে মেয়েরা তার বিরুদ্ধে চলে যায়।

স্বর্গধামের অনুরূপ অবস্থা–মরিয়মের মনে পড়ে।

মুক্তিযোদ্ধা পারুল বলে, আমার অবস্থাটা ভেন্ন। ভাগ ভাগ হয়ি ভাইগের সাথ আমরা থাইকতাম। রাতে কোনো দিন কেউ এক জায়গায় থাকতে পারিনি। যত দিন ধরা না পড়িছি, তত দিন জানে-মানে কোনো সময় নিরাপদ থাকিনি। কেননা কখন কোন বিপদ আসপে, কখন কার হাতে ধরা পড়ব, কে আমাদের ক্ষতি করবে, এই একটা চিন্তাভাবনায় সব সোমায় অস্থির হয়ে থাকতাম। আমরা পানির ভিতর কত দিন কাটাইছি! আমাদের রাইতও কাটছে পানির ভিতর। তখন তো ভাদ্র মাস।

‘এই যে মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের সঙ্গে থাকতেন কোনো অসুবিধা হয়নি?’

‘না, তখন এরকম কিছু হয়টয়নি। ছেলেতে-মেয়েতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করে যাচ্ছি। সমস্যা হয়েছে যুইদ্ধের পর, যখন সহযোদ্ধা শরাফত মিথ্যা কথা বুইলে পতিতালয় বিক্কিরি করতি নিয়ে গেল আমারে।’

‘কী সাজ্জাতিক অপমান!’ শ্যামলী ঝরঝরিয়ে কাঁদে। ওই বাড়ির লোকগুলো তাকে খেতে দিচ্ছে না, তার শোওয়ার বিছানাটাও মেঝে থেকে তুলে নিয়েছে। এর চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। কিন্তু সে বলে, আমি বাঁচতে ভালোবাসি। এ অবস্থায় অতীত জীবনটা ফিরে পাওয়া একান্ত জরুরি। যেখানে একটা চাকরি আছে। মাসের শেষে মাইনে পাওয়া যায়। তা-ই দিয়ে নিজের হাতে সে বাজার করতে পারে। মিষ্টি আর খেলনা কিনে দিলে ছেলে দুটিও খুশি হয়। হাতে টাকা থাকলে তোকজন আড়ালে যা-ই বলুক, সামনে কিছু বলার সাহস পায় না।

শ্যামলীর নামেই অফিস। যুদ্ধের সময় আসল অফিস শুরু হয় বিকাল পাঁচটার পর। একেক দিন একেক আর্মি অফিসার গাড়ি হাঁকিয়ে আসে। বস সিডিউল করে দেন। আজ নৌবাহিনীর উইং কমান্ডার, কাল সার্কিট হাউস থেকে আসবে মেজর, পড়শু দিন মার্শাল ল কোর্টের কর্নেল–এইভাবে। তবে শেষ সময়েও সিডিউল রদবদল হতে পারে। যদি উইং কমান্ডার পর পর দুদিনই চান, সে ক্ষেত্রে মেজরের নাম কলমের খোঁচায় বাদ পড়ে যায়। জীবনের চেহারা ক্রমে পাল্টে যাচ্ছিল। আলিশান গাড়ি ড্রাইভ করে একেক দিন একেক অফিসার আসে–যেদিন যার পালা। জলের ভেতর যেন সাঁতারু মাছ, শহরের বিপণির সামনে দিয়ে গাড়ির আরোহীরা তেমনি নির্বিঘ্নে চলাচল করে। সুন্দর সুন্দর সিল্ক শাড়ি, পারফিউম, লিপস্টিক, ঘড়ি-গাড়ির জানালা দিয়ে চলে আসে। নেমে দোকান পর্যন্তও যেতে হয় না। দাম পরিশোধেরও বালাই নেই।

বিন্দুবালা বলে, ‘মিলিটারিরা ওই যে গেরামেরতে কেউর খাসি ধরে নিয়াসতো, কেউর মুরগি, গরু ধরে নিয়াসততা, দোকান লুটপাট করে চাউল, ডাইল, ত্যাল আনতো, রাজাকাররা ডাকবাংলায় বসে ওই তা রান্না করত।’

‘আপনেরে দিত খেতে?’

‘একবেলা চাইরডা ভাত দিত।’

‘ভাতের সঙ্গে?’

‘ওই যে রাজাকাররা মিলিটারিরা মুরগি ধরত, মুরগির ঠ্যাং-সিনা…’

‘পানিটানি দিত?’

‘পানির কথা বুল্লে ডাবের খোলায় করে পস্রাব আনি দিত আর পস্রাব করব বুলে পানিভইর‍্যা ডাবের খোলা আনতো।’

‘কাপড়-চোপড় কিছু দিছিল?’

‘না, আমি হেইকালে একদম বেবস্ত্র।’ বিন্দুবালা ঠোঁট চেপে কান্না রোধ করে, ‘এহনও রাইতে রাইতে স্বপ্ন দেহি, খাল-বিল ভাইঙা ওরা আসতিছে…’

সরকার বাড়ির কাজের মেয়ে টুকি, যে মরিয়মের সঙ্গে নতুনগাঁও থেকে একই দিনে ধরা পড়ে, যুদ্ধের বিশ বছর পর যে গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে মরিয়মদের রায়েরবাজারের বাসায় মুরগি পুষতে শুরু করে, সে বলে, ‘আফা, এমনি আমার স্মৃতিশক্তি কম। মিলিটারির অইত্যাচারে অইত্যাচারে আরো কমে গেছে। এরা যে আমারে কই নিয়া রাইখলো, কী কইরলো–স্মরণে আসে না। তখন আঠারো বচ্ছর বয়স আমার। ওই বয়সে বাচ্চা হতিই পারে একজন মেয়েছেলের। সিখানে তাই আমার একটা বাচ্চা হয়্যেছিল।’ টুকির বাচ্চাটা ছিল স্টিলবর্ন–মরা। সে মেঝে থেকে পাটের বস্তা তুলে তা-ই দিয়ে বাচ্চাটাকে পোটলা বানিয়ে ঘরের কোনে রেখে দেয় । সেদিন আবার দরজা খুলে ঘরে ঢুকেছে মিলিটারি। টুকি বলে, ‘দুইকেই ওরা টাচ করতি চাচ্ছে আমাকে। অত্যাচারের একটা ইস্কিম নিয়ে আমার দিকে আউগাচ্ছে।’ তখন সে তাড়াতাড়ি পোটলাটা তাদের দিকে ঠেলে দেয়। বাচ্চা নিয়ে সেই রাতের মতো তারা সরে পড়লেও ঘরটা অপরিষ্কার থেকে গেল। টুকির শরীরে দুর্গন্ধ। ‘ঘরটা যে পরিষ্কার করতি হবে–হাঁড়িকুড়ি, ঝাঁটা-বালতি, কাঁথা-কাপড় কিছুই তো নেই আমার,’ টুকি আফসোস করে বলে। ‘আমি কোনোরকমে মাথা গুঁজে সিখানে বসে থাকি। কোনোদিন দেলো চারটা খালাম, না দেলো না-খালাম। পাগলের মতো সেখানে বাস করি।’

শ্যামলীর অবস্থাটা ভিন্ন। বিনা পয়সায় শাড়ি, কসমেটিকস সওদা করে আর্মি অফিসার যখন তাকে নিয়ে গেস্টহাউসে আসে তখন তার চোখ বাঁধা থাকে না। মেয়েটিকে তাদের ভয় পাবার কারণ নেই। যুদ্ধের দিনে চাকরি করতে এসেছে। অভাবের সংসার। ডির্ভোসি। দেশের লোক ভালো চোখে দেখে না। চাকরি ছেড়ে চলে গেলে আহার-বাসস্থানের অভাবে রাস্তায় মরে পড়ে থাকবে। এভাবে মৃত্যুবরণ বোকামি। শ্যামলী মরতে চায় না। মনে-প্রাণেও যতটা সম্ভব উদার। তা বলে একেক দিন একেকজনের সাথে সেক্স করা অস্ত্রের মুখে–শ্যামলী ভয় আর উৎকণ্ঠায় শক্ত হয়ে থাকে। তখন কেউ বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে বিছানায় নেয়। কেউ মিষ্টি মিষ্টি কথা দিয়ে শুরু করে। ‘হাউ ওল্ড আর ইউ–সিক্সটিন?’ এরা ফ্লার্ট করে। লুক অ্যাট ইউ–সাচ সেক্সি লিপস! কাম অন, প্লে উইথ মি। কারো ধারণা মেয়েটাকে হুইস্কি গেলাতে পারলে কাজটা সহজ আর আনন্দদায়ক হবে। দুটি গ্লাসে মদ ঢালা হয়। একটায় কম, আরেকটায় বেশি। বেশিটায় ঘনঘন ঢালতে লাগে। কারণ বউ-বাচ্চার কথা বলতে বলতে, ইয়াহিয়া-ভুট্টো-শেখ মুজিবকে গাল দিতে দিতে সুরা নেমে যায় গ্লাসের তলায়। শ্যামলীর সামনের গ্লাস যেমন ছিল তেমন। ড্রিংক, ড্রিংক! প্রথম জোর করে ঠোঁটের ফাঁকে গ্লাস ঠেলে। জোরজবরদস্তকারীর চোখ লাল, স্বর জড়ানো। তার পরও শ্যামলী আপত্তি জানালে গ্লাস উপুড় করে ঢেলে দেয় তার যৌনাঙ্গে। বিকট চিৎকার আর অট্টহাসির মাঝখানে কয়েকটা মিনিট অন্ধকার।

মরিয়মের সারা শরীর প্রবলভাবে কেঁপে ওঠে। লাল সোফায় বসে বসে ঢুলছিল যে আর্মি অফিসারটি, তার নাম মেজর ইশতিয়াক। সন্ধ্যা থেকে ড্রিংক করছে মেজর। মাঝরাতে হলরুমের তালা খুলে মরিয়মকে এনে ফেলে দিয়েছে পাড় মাতালটার পায়ের কাছে। এর আগে গাড়িতে অর্ডার তালিম করা সৈন্যটি একবার পেছন দিয়ে আরেকবার সামনে থেকে পরপর দু’বার তাকে ধর্ষণ করে। তৃতীয়বার উদ্যত যখন, গাড়িটা সার্কিট হাউসের কোর্টইয়ার্ডে ঢুকে যায়। মরিয়মের গা-ভৰ্তি ঘামেভেজা ময়লা কাদা, চুল জট-পাকানো। সে ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সার্কিট হাউসের ডাইনিং রুম দুর্গন্ধে ভরে যায়। মেজরের ব্যাটম্যান গলদা চিংড়ির ডিশ টেবিলে নামিয়ে এক জমাদারনিকে ডেকে আনে। সে তাড়াতাড়ি মরিয়মকে বাথরুমে ঢোকায়। তবে গোসলের সময় দরজা বন্ধ করতে দেয় না। পরনের ছেঁড়া লুঙ্গি-জামা জমাদারনিই খুলে দেয়। এ অবস্থায় শাওয়ারের নিচে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তোয়ালে জড়িয়ে মরিয়ম যখন বেরিয়ে আসে, ততক্ষণে ডিনার টেবিল সাজানো হয়ে গেছে। তাতে ঘিয়ে ভাজা লাল লাল গলদা চিংড়ি, মুরগির রোস্ট, পোলাও, জগভর্তি ফুটজুস। কত দিন পেট পুরে ভালো-মন্দ খায় না–মরিয়মের জিবে পানি চলে আসে। স্নান শেষে তাকে চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু পাতে কেউ খাবার তুলে দিচ্ছে না। নিজেরও তোলার সুযোগ নেই। টেবিলের ওপর মূল্যবান ডিশগুলো হাউজির নম্বরের মতো ঘুরতে ঘুরতে যখন তার সামনে থামে, তখন খালি ডিশ, শূন্য জগ বা চিংড়ির ঠ্যাং। মেজর ইশতিয়াক হো হো করে মাতালের হাসি হাসে।

‘ডু ইউ স্মোক?’ তার মস্তবড় থাবার ভেতর ডানহিলের প্যাকেট। তবে তা টেবিলের ডিশগুলোর মতো অস্থির বা খালি নয়। মরিয়ম আঁতকে ওঠে। তার দিকে সিগারেট এগিয়ে না দিয়ে, পিস্তল ধরলে সে অপ্রস্তুত কম হতো হয়তো। যেন যুদ্ধ নয়, এ শান্তির সময় আর তার দিকে ডানহিলের প্যাকেট ভুলবশত এগিয়ে দিয়েছেন তার অফিস বস, চটজলদি মরিয়ম তাই ‘নো নো থ্যাংক ইউ স্যার,’ বলে তার অপারগতা জানায়। মেজর খুশি হয়। সিগারেটের প্যাকেট ফেলে তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে, ‘ডু ইউ নো ইংলিশ?’ জবাবের অপেক্ষা না করেই তার গা থেকে প্রথম তোয়ালে সরায়, তারপর পাঁজাকোলে করে নিয়ে যায় বেডরুমে। লোকটার অপ্রত্যাশিত আচরণে মরিয়ম মুগ্ধ না হয়ে ভয়ে কাঁপে। হাঁটু দুটি বাড়ি খেতে শুরু করে। জসিমুল হককে তার ভালো লেগেছিল ছেলেটি ইংরেজি জানত বলে। সেসব দূর অতীতের এক গাঁয়ের কথা, যেখানে ইংরেজিতে কেউ কথা বলতে পারত না। মেজর ফিসফিস করে বলছে, ‘আই ওয়ান্ট টু টক টু ইউ। আই হ্যাভ টু টক টু সামওয়ান। সাচ এ ব্লাডি ওয়ার, ইফ আই কান্ট, আই উইল ডাই।’ কথা বলতে বলতে তার চোখ পড়ে মেয়েটির হাঁটু জোড়ার ওপর, যা কিছুতেই বশ মানছিল না। হোয়াট হেপেন্ড? লোকটার উম্মা দেখে, গাড়িতে যা যা ঘটেছিল মরিয়ম সব খুলে বলে। তাতে মেজরের চেহারা পাল্টে গিয়ে এমন বিকট আকার ধারণ করে, যা মরিয়ম শুরু থেকে প্রত্যাশা করেছিল। শালা নূর খান, শালে শুয়ার কা বাচ্চা!’ নূর খানকে শাসাতে বোধ করি টেলিফোনের দিকে ছুটে যায় মেজর। ফোনে তাকে পাওয়া যায় না। ঘুরে তাকাতেই দেখে মরিয়ম খাটের ওপর দাঁড়িয়ে গেছে। ব্লাডি হোর! মেজর ছুটে এসে এমন জোরে গালে থাপ্পড় মারে, মরিয়মের অত্যাচার-অনাহার ক্লিষ্ট শরীরটা খোলা দরজা দিয়ে গাছের পাতার মতো উড়তে উড়তে বারান্দা পেরিয়ে রেলিংয়ের গায়ে আটকে যায়। রেলিংটা মাথা সমান উঁচু না হলে, পরদিন সার্কিট হাউসের চাতালে তার লাশ পড়ে থাকত।

পারুল বলে, ‘অনেকগুলি লাশ আমি নিজেই মাটি দিছি। অত্যাচার করে করে এদের মেরেই ফেলাইছে মিলিটারিরা। তারা রাইতের অন্ধকারে কোদাল-সাপোল এনে দিত। গর্ত খুঁইড়ে টানতে টানতে তিনজন, চাইরজন আইনে এর ভিতর পুঁইতেছি। ছোট ছোট মেয়ে সব, আমারই বয়সের, কিংবা আমার চেয়ে ছুটো। পুরা ক্যান্টনমেন্ট চইষে ফেলে দিতে অয়-তালি পর লাশ বেরোবে অনেক।’

‘আপনি যখন গর্ত খুঁড়তেন, আর্মি পাহারায় থাকত?’

‘হে, ওই পাশেই ঘুরঘুর কইরত। সিগারেট খাইত, গল্প-গুজব করত, হাসি তামশা করত। কেননা রাইতের বেলা তারা মদ-বিড়ি-সিগারেট খাইত।’

‘মদ খাইয়্যা আলি পর’ বিন্দুবালা বলে, ‘রাজাকাররা তাগো ঘরে দিয়া নিজেরা সইরে পড়ছে। আমরা চার-পাঁচজন মেয়েছেলে টিন দে কাঠ দে তোলা একটা ঘরে। এই ঘরেই অত্যাচার কইরত। সবার সামনে। কোনো আড়াল ছেল না, কোনো ভেদাভেদ ছেল না।’

‘কয়জন ঢুকত একসঙ্গে?’

‘একসঙ্গে চাইরজন-পাঁচজন কইরা ঢুকত। আর ভয় দিত যে, আমাগো কথামতো যদি না চলছ, তাইলে কইলাম মাইরা ফালাই দিমু নদীতে। ইসব কথা মনে পড়লে, ভয়েতে আমার কলজের রক্ত শুকোয় যায়।’

‘কথা বুঝতে পারতেন তাদের? আমি তো এক বর্ণও উর্দু বুঝতাম না।’

‘কী তারা বলত আমরা বুঝতে পারতাম না, আমরা খালি ভ্যাবলার মতো দাঁড়াই থাকতাম।’

স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে যে অ্যালকোহলিক হয়ে যাবে, মদ আর টাকার লোভে গুলশান এলাকায় সন্ধ্যার পর যে ঘুরঘুর করবে, বা টাকাও নয়, মাত্র কয়েক পেগ হুইস্কির বিনিময়ে যে সারা রাতের সঙ্গী হবে সাদা পুরুষদের, সে অর্থাৎ শ্যামলী রহমান বলে, ‘মেরেধরে এক ফোঁটা মদও অফিসাররা তখন আমারে খাওয়াইতে পারে নাই, তাই চিড়বিড়িয়ে মাথায় আগুন ধরে যাইত ওদের।’

মদ আর শরীর নিয়ে টানা-হেঁচড়া করতে করতে মাঝরাত। যেসব আর্মি অফিসার মদ খাওয়ার পর জীবনের পরোয়া করত না, তারা গভীর রাতে গাড়ি চালিয়ে বাড়ির দরজা পর্যন্ত শ্যামলীকে পৌঁছে দিত। বেশিরভাগ লোক কাজ শেষ হলে বিছানা ছেড়ে নড়তে নারাজ। শ্যামলীর কান্নাকাটিতে অতিষ্ঠ হয়ে তাদের একজন শুয়ে শুয়ে একদিন ফোন করে, ‘হ্যাল্লো শওকত জঙ্গ, জলদি আযা ভাই। আই হ্যাভ অ্যা গেস্ট। শি নিডস আ লিফট ইয়ার!’ তাঁবেদার অবাঙালি ব্যবসায়ী পাঁচ মিনিটে গাড়ি নিয়ে হাজির। রাস্তায় শ্যামলীর সঙ্গে কথা হয় না। বাড়ির দরজায় নামিয়ে দেওয়ার সময় সাপের মতো হিসহিসিয়ে বলে, ‘তোমাকে তো ভালো মেয়ে জানতাম। এ লাইনে কবে থেকে?’ শ্যামলী জানে, সে-ও তাকে কুপ্রস্তাব দেবে, তবে দুই দিন পর। ‘বুঝলে তো ইয়ে, আমার স্ত্রীর সঙ্গে একদম…’ প্রস্তাব দেওয়ার ভাষাটা বেসামরিক পুরুষদের ছিল এরকম। ‘এখন এসব কথা মনে পড়লে’ শ্যামলী বলে, ‘মাথায় আগুন ধরে যায়।’

পরদিন বস অফিসরুম লক করে তার ভাগের ট্যাক্স আদায় করে। আপত্তি জানালে আগে আগে চেক কেটে টেবিলের ওপর রেখে দেয়। বলে, ‘ইউ আর নাথিং বাট এ হোর।’ প্রথম প্রথম শ্যামলীর টাকাটা ছুঁতে ঘেন্না হতো। পরে দেখেছে নিলেও যা, না নিলেও তা। এদিকে খরচও বেড়ে যাচ্ছে। আত্মীয়স্বজন লুকিয়ে-চুরিয়ে টাকা চাইতে আসে। আড়ালে গিয়ে তারাই আবার কুৎসা রটায়। শ্যামলীর শরীরটা বারোয়ারি সম্পত্তি। তাই তার টাকায়ও হক আছে সবার। অফিসের ড্রাইভার-পিয়ন উঠতে বসতে গায়ে হাত দেয়, রাতে শোয়ার অফার করে।

কিন্তু শ্যামলী তো বন্দি ছিল না। সে অফিস থেকে পালাল না কেন?

শ্যামলী বলে, একজন আর্মি অফিসার যখন তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, সে পালাতে যাবে কেন। তাকে অচিরেই সে বিয়ে করবে। কনফারেন্স কক্ষে হাসির রোল পড়ে। শ্যামলী তো তখনো বন্দি। বন্দিদশায় বিয়েটা হতো কী প্রকারে?

বন্দি কারণ সেই ভুল-বোঝাবুঝি। তাকে ভুল করে ধরেছে পাকসেনারা। ক্যান্টনমেন্টে জেরা-নির্যাতন করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ওষুধের দোকানের বিহারি কম্পাউন্ডারের কাছ থেকে অফিসারের হাতে চিরকুট পৌঁছাতে যত দিন লাগে, তত দিন তাকে বন্দি থাকতে হয়। তারপর আর্মি অফিসারটি শ্যামলীকে যে বিয়ে করবে, এ ব্যাপারে সে তখন একশ ভাগ নিশ্চিত। লোকটা শ্যামলীর মা খোদেজা বিবিকে আম্মি ডাকত আর বাচ্চা দুটিকে কোলে নিয়ে হাউ সুইট’ বলে গাল টিপে আদর করত। ছোট বাচ্চাটা তার গ্রেফতারের আগের সপ্তাহে হিসি করে অফিসারের ইউনিফর্ম ভিজিয়ে দেয়। শ্যামলী ভয়ে অস্থির। ‘এই এই বুলু, ছি বাবা, তুই যে আমার সর্বনাশ করলি!’ কিন্তু সর্বনাশ করেছে যে, তার সঙ্গে লোকটা তখন শিশুর মতো খিলখিলিয়ে হাসছে। কী নিষ্পাপ হাসি!

মুক্তিযোদ্ধা পারুলও তাতে সায় দেয়, ‘সবাই তো এক রকম ছেল না। আমারে যেদিন ধইরে নিয়ে আইসলো, আমার এ সমস্ত জাগায় বেয়নেট মারা ছিল তো, সমস্ত শরীর রক্তাক্ত। ওনার নাম ‘র’ দে শুরু। রউফ, আবদুর রউফ। একজন ডাকিলো তাই বুইঝলাম। তো উনি আমার গায়েটায়ে হাত বুলোয়ে দেখিলো জিনিসগুলি। তারপর উঠে গিয়ে একটা মলম কিনে আইনলো আমার জন্য। আর মালিশ দিতি দিতি অনেক কথা কইলো, যা লেখাপড়ার অভাবে আমি বুইঝতে পারিনি।’

‘গায়ের জোরে মিথ্যা বলব কেন?’ শ্যামলী আদালতের জবানবন্দির মতো হলফ করে বলে, ‘যা সত্য তা-ই বলব, সত্য বৈ মিথ্যা বলব না।’ অফিসারটা বিকালে এসে বলে, ‘ভালো লাগছে না। চলো একটু ঘুরেটুরে আসি। তারা গাড়িতে করে ঘোরাঘুরি করে। চলো কোথাও বসে একটুখানি চা খাই।’ শ্যামলী বলে, ‘চা না আমি কফি খাব। আল-এসলাম রেস্তোরাঁয় বসে কফি খাওয়ার পর অফিসার বলে, ‘জায়গাটা নিরাপদ না, মুক্তিফৌজ অ্যাটাক করতে পারে। যাবে আমার গেস্টহাউসে? ‘চলো যাই।’ লোকটা হাসে, না যেতে চাইলে জোর করব না।’ ‘না-না চলো।’ শ্রোতারা তাজ্জব। তবে অভিসার অভিসারই। জোরজবরদস্তি ধর্ষণ তো করছে না। কিন্তু সব যুদ্ধই একদিন শেষ হয়, এই যুদ্ধও শেষ হবে। শ্যামলী তখন কী করবে?

‘যুইদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই,’ বিন্দুবালা আঙুলের কড়া গুনে বলে, এই ধরেন আষাঢ় মাসে আমারে ধইরে নেছে, শাওন-ভাদর-আশ্বিন, তিন মাস পর কার্তিক মাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা আমাগের মুক্ত কইরলো। তখন তো বিন্দুবালাদের গায়ে কোনো পোশাকই ছিল না। মুক্তিযোদ্ধারা আশপাশের বাড়ি থেকে কাপড় এনে তাদের পরতে দেয়। ওখান থেকে বন্দি মেয়েরা চলে যায় যার যার বাড়ি। কিন্তু বিন্দুবালা যাবে কোথায়। যোগেন বাইন্যা তার পরিবার নিয়ে চলে গেছেন ভারতের শরণার্থী ক্যাম্পে। ভারতে তখন মুক্তিযোদ্ধাদের ডেইলি যাওয়া-আসা, আদান-প্রদান, যোগাযোগ। তারা বলল, ‘চলো বিন্দু, তোমারে আমরা ভারত দিয়ে আসি।’ বিন্দুবালা বেঁকে বসে, আর যেখানেই যেতে বলুক যাবে, ভারত সে যাবে না।

‘কেন?’

‘আমি যদি ভারতে যাই তো লোকে কবে তোরে মিলিটারিতে টাইন্যে নেছে, তোরে অত্যাচার কইরছে, তুই আবার এহনে ইন্ডিয়ায় আইছস ক্যা? তো আমি রাজি হলাম না। আর মুক্তিযোদ্ধা ভাইগের কইলাম-এই দেশ এই মাটি আমার মা, এই মাটিই আমার সব, মরতে হয় এই দেশেই আমি মরব। বলি, এক যুদ্ধ করে আইছি, আরেক যুদ্ধ করতে চাই। এই বুলে আমি তাগের হাতে হাত মিলাইলাম।’

টুকি বলে, ‘আমার শরীলের রক্ত দিয়ালে দিয়ালে হাত দিয়ে মেখ্যে আসিলাম, যে ঘরে ওরা আমারে একতালে চার মাস আটক রাখছিল।’

‘কেন?’

‘রাখিলাম, কেননা ইগুলি হলো চিহ্ন–নির্যাতনের চিহ্ন। মুক্তিফৌজ যেয়ে সেই ঘরে যে রক্তের দাগ পাইলো, ও তা আমারই শরীলের রক্ত।’

এদিকে শ্যামলীর লেখা চিঠি ওষুধের দোকান থেকে আর্মি অফিসার শাহাদতের কাছে পৌঁছতে পৌঁছতে দু’দিন আর রিলিজ অর্ডার পেতে লাগে দু’দিন। চার দিনের মাথায় তার বন্দিজীবনের আকস্মিক পরিসমাপ্তি ঘটে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *