২. প্যাসিফিক অ্যান্ড ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক

০২.

আমি পরদিন ঠিক পৌনে দশটায় প্যাসিফিক অ্যান্ড ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে গেলাম। মিস বার্চের সামনে দাঁড়াতেই তিনি ঠাণ্ডা চাউনিতে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললেন, আপনি মিঃ ওয়ালেস তো, আমি এক্ষুনি মিঃ অকল্যান্ডকে খবর দিচ্ছি।

বাঃ ঠিক ধরেছেন মিস বার্চ। ও হো, আপনি মিস বার্চ তো?

মিস বার্চ দুচোখে আগুন ঝরিয়ে ইন্টারকমের সুইচ টিপলেন।

মিঃ অকল্যান্ড মিঃ ওয়ালেস এসেছেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মিঃ অকল্যান্ড বেরিয়ে এসে আমার সঙ্গে করমর্দন করলেন।

মিঃ অকল্যান্ড রিসেপশন টেবিলের কিছুটা দূরে একটা চেয়ার দেখিয়ে বললেন, আমি মিস বার্চকে বলে রেখেছি, মিস থরসেন এলেই ও আপনাকে ইশারায় দেখিয়ে দেবে।

কাল রাত্রের চোটের ব্যথাটা প্রচণ্ড। সকালে পাঁচটা অ্যাসপ্রো খেয়েও ব্যথা কমেনি, চেয়ারে বসে আমি গতকালের কথা মনে করার চেষ্টা করলাম। সুজি আমার খোঁজে এসে দেখেছিল সদর দরজা খোলা। সামনের দেয়ালে ঐ অদ্ভুত ঘঁশিয়ারী। মেঝের ওপর আমি মুখ থুবড়ে পড়ে।

সুজি সেই দুর্লভ জাতের মেয়ে যারা প্রয়োজনের সময় মাথা ঠিক রাখে এবং সব কাজ ঠিক ঠিক করে যেতে পারে। সে হাত ধরে আমায় তুলে এনে ডান কানের পেছনটা ফুলে উঠেছে দেখে রান্নাঘর থেকে কিছুটা বরফ এনে সেখানে চেপে ধরল। দশ মিনিট পরে আমি একটু সুস্থ হয়ে হেসে বলেছিলাম, কিছু মনে কর না। একজন অচেনা অতিথি এসে আমার এই হাল করে ছেড়েছেন।

তুমি বিশ্রাম করো, সোনা। কথা বলোনা। চলো তোমায় বিছানায় শুইয়ে দিই। সুজির সাহায্যে জামাকাপড় ছেড়ে বিছানায় শুয়েছিলাম।

এবার বরফ দিয়ে একটা ডবল পেগ স্কচ আমায় দাও তাহলেই আমি সুস্থ হয়ে উঠব।

 উঁহু, অ্যালকোহল একদম নয়। আমি এক্ষুনি ডাক্তার ডেকে আনছি।

আরে আমি ঠিক আছি, ডাক্তার ডাকবার দরকার নেই। কাল সকালেই সব ঠিক হয়ে যাবে, তুমি আমায় একটু স্কচ দাও।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুজি গিয়ে স্কচ নিয়ে এসেছিল। আমায় স্কচ দিয়ে নিজেও একটু নিয়েছিল, তারপর খুব দুশ্চিন্তা ভরা চোখে আমায় দেখছিল।

আমি ঠিক আছি গো, ওভাবে আমার দিকে দেখোনা।

তুমি আমাকে ভীষণ ভয় পাইয়ে দিয়েছে, ওঃ, ডার্ক এসব কি হচ্ছে বলো তো?

এসব নিয়ে তোমার মাথা না ঘামালেও চলবে। আমি একটা নতুন কেস হাতে নিয়েছি। শত্রুরা পিছু নিয়েছে, তার অর্থ আমি ঠিক পথেই হাঁটছি।

ওঃ, বলে সুজি চুপকরল। কিছুক্ষণ উসখুশ করে ও শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেই ফেলল, অ্যাঞ্জি কে জানতে পারি?

না পারবে না, ব্যস এ ব্যাপারে আর কোন কথা নয়।

ঠিক। এবার আমি যাব, তার আগে তোমায় তিনটে ঘুমের বড়ি দেব, বলে তিনটে ঘুমের বড়ি এনে দিল। এবার লক্ষ্মী ছেলের মত একটু ঘুমোও তো ডার্ক, একটা লম্বা ঘুম দরকার।

তার চেয়ে আজ আমার পাশেই শুয়ে পড়ো না। আমার রাতটুকু দিব্যি কেটে যাবে।

উঁহু, ওসব বলবে না। নাও, ওগুলো খেয়ে ফেল।

 আমার মাথা দপদপ করছিল। বড়িগুলো খেয়ে ফেললাম।

কাল রং মিস্ত্রী নিয়ে নোংরা লেখাটা মুছে ফেলবে। কিন্তু লোকগুলো কিভাবে ঢুকল বলত?

তালাটা যে ভাবেই হোক খুলেছে।

আমি তালা সারানোর মিস্ত্রী নিয়ে আসব। সে তোমার নতুন তালা লাগিয়ে দেবে। আমি লেটার বক্সেও তালার ব্যবস্থা করছি, এই বলে চুমু খেল, এবার ঘুমাও লক্ষ্মীটি, এই বলে বিদায় জানিয়ে চলে গেল।

সকাল সোয়া নটায় বিলের কাছে গেলাম। রাতের ঘটনা শুনে সে বলল, দেখে মনে হচ্ছে ঝামেলা শুরু হল ডার্ক।

সে তো বটেই, আমাদের লাইনে ঝামেলা তো প্রতি পদে।

তা হলে অ্যাঞ্জেলাই ওদের কাছে অ্যাঞ্জি, আর কেউ নিশ্চয়ই ওসব লোককে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে তুমি অ্যাঞ্জেলার ওপর নজর রাখছ। ওরা আগেভাগেই কাজ শুরু করে দিয়েছে কিন্তু কথা হচ্ছে লোকটা কে?

সেটাই আমাদের বের করতে হবে। বিলকে সঙ্গে নিয়ে বেরোলাম, ব্যাঙ্কের বাইরে ওকে অপেক্ষা করতে বলে আমি ভেতরে ঢুকলাম।

চেয়ারে বসে প্যারাডাইস সিটি হেরাল্ড পড়বার ভান করছি, আর সেই ফাঁকে আশেপাশের লোকেদের নজর রাখছি। হঠাৎ মিস বার্চ ব্যস্ত হয়ে একগাল হাসলেন, আমি যার অপেক্ষায় বসে আছি এবার তিনি আসছেন। 

একটি মেয়ে ভেতরে ঢুকতেই দারোয়ান সেলাম ঠুকল। মেয়েটি আসতেই আমি তাকে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম।

পাট কাঠির মত চেহারা, সামনে পেছনে কোথাও মাংস নেই, সব ফ্ল্যাট, ফাঁকা মাঠের মত। মাথায় মেক্সিকান চাষীদের মত খড়ের টুপি, সেটা নামিয়ে দিয়েছে যাতে মুখটা ঢাকা পড়ে। চোখে বড় সানগ্লাস পরেছে। মেয়েটির পরনে টি-শার্ট, আর নীল জীসের ট্রাউজার্স, পায়ের নখগুলো রং করা হয়েছে। ওকে দেখলে মনে হয় অল্পবয়সী মেয়ে, কলেজের ছুটিতে বেড়াতে বেড়িয়েছে।

মিস বার্চ মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে মিঃ অকল্যান্ডের কামরায় ঢুকলেন। আমি বাইরে বিলের কাছে গেলাম, ও ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে বসেছিলো।

আমার মনে হয়েছিল ঐ সেই লোক আমরা যাকে খুঁজছি। বিল বলল, সামনে দুটো গাড়ির আগে ভক্স ওয়াগন থেকে ওকে নামতে দেখেছি।

ঠিক আছে বিল, আমি তোমার সঙ্গে যাচ্ছি, বলে আমি দরজা খুলে বিলের পাশে বসলাম, মিনিট দশেকের মধ্যে ও ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে এল, হাতে প্লাস্টিকের ব্রীফ কেস। বোঝাই যায় মিঃ অকল্যান্ড এটা ওকে দিয়েছেন আর তার ভেতরে দশ হাজার ডলার আছে।

অ্যাঞ্জেলা গাড়িতে স্টার্ট দিতেই আমরা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে তার পিছু নিলাম। প্রথমে বুলেভার্ড, তারপর বন্দরের ওয়াটার ফ্রন্ট এলাকা, তারপর ছোট রাস্তায় ঢুকে পড়ল সে।

বন্দরে প্রাণচাঞ্চল্য শুরু হয়েছে সকালবেলা। জেলেরা বার থেকে বীয়ার খেয়ে আবার মাছ ধরতে যাচ্ছে। অল্পবয়েসী হিপি তরুণ তরুণীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কফি খাচ্ছে। একটা ফাঁকা জমিতে অ্যাঞ্জেলা গাড়ি রাখল। বিল তারই পাশে গাড়ি দাঁড় করাল। গাড়িতে বসেই দেখলাম অ্যাঞ্জেলা পায়ে পায়ে এগিয়ে একটা নোংরা চেহারার রেস্তোরাঁয় ঢুকল। বাইরে নাম লেখা ব্ল্যাক ক্যাসেট; ডিস্কো ড্রিঙ্কস। চটপট তৈরী খাবার। রেস্তোরাঁর বাইরের দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়েছে, জানালার দরজার পাল্লা ভাঙ্গা, কোথাও কোন ছিরি ছাদও নেই। আস্তে আস্তে এগিয়ে দরজার সামনে দাঁড়াতে দেখি কাঁচের গায়ে লেখা–

শুধু কালোদের জন্য :
 সাদাদের ঢোকা বারণ :
বুঝলে?

আমি একটু চিন্তা করে গাড়িতে ফিরে বিলকে বললাম, এটা পুরোপুরি কালোদের জন্য। তুমি এখানেই অপেক্ষা করো। দেখো ও কতক্ষণ ভেতরে থাকে। আমি দেখি কিছু খবর যোগাড় করতে পারি কিনা।

ওয়াটার ফ্রন্ট এলাকায় নেপচুন ট্যাভার্নে ঢুকলাম। এখানকার স্থানীয় মান হল আলবানি আমি তাকেই খুঁজছিলাম। ঢুকেই চোখে পড়ল অ্যাল একটা খালি বীয়ারের টিন হাতে নিয়ে নাড়তে আর উদাস চোখে সমুদ্রের দিকে চেয়ে আছে। অ্যাল বার্নি আমাদের অ্যাকমে এজেন্সী অপারেটরদের গোপন খবরাখবর প্রায়ই সরবরাহ করে তার বিনিময়ে আমাদের অপারেটরর প্রচুর বীয়ার আর সসেজ খাওয়ায়।

অ্যাল আমাকে দেখেই হাসল, বীয়ারের টিনটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললঃ আসুন মিঃ ওয়ালেস মাইরী বলছি, আপনাকে দেখে খুব ভাল লাগছে। বলেই পেটে হাত রেখে, খিদেও পেয়েছে আপনি ব্রেকফাস্ট খাবেন?

নিশ্চয়ই। আমি তোমায় বীয়ার, ব্রেকফাস্ট সবই খাওয়াব।

অ্যাল ওয়েটারকে ডেকে ব্রেকফাস্ট আনতে বলল। এখানকার কফি খেতে বদখত তাই আমি বললাম, আমি এইমাত্র ব্রেকফাস্ট খেয়েছি এখন আর কিছু খাব না।

আপনার কি খবর মিঃ ওয়ালেস?

খবর সব ভাল তো? আপনাকে কিন্তু খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। কর্নেল কেমন আছেন?

সিগারেট ধরিয়ে বললাম, কর্নেল এখন ওয়াশিংটনে আছেন।

ওয়েটার একটা বড় ডিশে সসেজ আর বীয়ার আনল। একটা সসেজ মুখে দিয়ে সে হেসে বলল, বলুন মিঃ ওয়ালেস আমি আপনার জন্য কি করতে পারি?

তুমি ব্ল্যাক ক্যাসেট সম্পর্কে আমায় কতটুকু খবর দিতে পার?

ওটা কালোদের সস্তার রেস্তোরাঁ, সবাই আসে। পুলিশের ঝামেলাও নেই। এখানে যারা আসে তাদের বেশীরভাগ ভিয়েত্রামীনয়তো পোর্টেরিককান। এই রেস্তোরাঁয় কালোরা সবাই এসে জড়ো হয়ে মদ খায়। ফুর্তি করে, নাচে, গান গায়।

জায়গাটা কে কিনেছিল অ্যাল?

বীয়ারের বোতলে চুমুক দিয়ে, কে আবার কিনবে? এক হতচ্ছাড়া কালো। কোথা থেকে এটা কেনার ও টাকা পেল তাই ভেবেই অবাক হচ্ছি। পাঁচহাজার ডলার দিয়ে দশ বছরের জন ইজারা নিয়েছে। মনে হয় ওর বাবার কাছ থেকে টাকাটা পেয়েছে যার সঙ্গে আমি একসঙ্গে মদ খেতাম। লোকটা বুড়ো হলেও মন্দ নয়।

অ্যাল দুঃখিতভাবে মাথা নেড়ে, সে এখানে এসে আমার সঙ্গে আলাপ করেছিল, তারপর আমায় বীয়ার কিনে দিয়েছিল। সেবছর খানেক আগের কথা। তারপর আর ওকে দেখিনি। আমার একজন প্রকৃত বন্ধুকে হারিয়েছি।

মালিকের নাম কি?

হ্যাঁ, হ্যাংক স্মেডলি। ওকে নিয়ে একদম ঘাঁটতে যাবেন না মিঃ ওয়ালেস। ও পুরোপুরি গুণ্ডা আর নোংরা বদমাইস লোক, কারও নাক গলানো বরদাস্ত করতে পারে না।

ওর বাবার নাম কি বলে?

জোশ স্মেডলি। লোকটা মিসেস থরসেনের কাজ করে। শুনেছি জোশ নাকি আজকাল দিনরাত মদ খেয়ে পড়ে থাকে। তা বেচারার ছেলে অমানুষ। নিজের বৌ তাকে ছেড়ে চলে গেছে তার ওপর আবার ওরকম এক বদখত মনিবানী। মদ না খেয়ে করবে কি?

ওর বৌ ওকে ছেড়ে চলে গেছে কেন?

বীয়ারে আরেক চুমুক দিয়ে অ্যাল বলল, আসলে ওর ছেলেই যত নষ্টের গোড়া। ওকে সামলাতে গিয়ে মিসেস স্মেডলি হিমসিম খেয়ে যেত। দিনরাত স্বামী-স্ত্রীতে খিটিমিটি তার কারণ হল ঐ ছেলে। জোশ কিন্তু ছেলেকে খুব ভালবাসত। শেষকালে মিঃ থরসেন মারা গেলেন আর ওদেরও ছাড়াছাড়ি হল, জোশের বৌ স্বামীকে ছেড়ে চলে গেল।

বেশ, থরসেনের মেয়ের সম্পর্কে তুমি কিছু জানো?

জানি বললে ঠিক হবে না। ও মেয়ের ইহকাল পরকাল সব গেছে। শুনেছি মেয়েটি ষোলতে পা দেবার পর হ্যাংক নানারকম চাপ দিয়ে ওর থেকে টাকা পয়সা আদায় করত। তবে সবই শোনা কথা তো কাউকে বলবেন না। আচ্ছা মিঃ ওয়ালেস! আপনি কি অ্যাঞ্জেলা থরসেনেরখোঁজখবর চাইছেন?

তার চাইতে হ্যাংক স্মেডলির সম্পর্কে কিন্তু বেশী খবর চাই।

মিঃ ওয়ালেস, হুঁশিয়ার। ও কি রকম বিপজ্জনক লোক তা আপনি জানেন না। একেবারে জানোয়ার আর সাপের মত বজ্জাত।

টেরেন্স নামে অ্যাঞ্জিওর একটি ভাই ছিল তার সম্পর্কে কিছু জানো?

অ্যালের প্লেট খালি হয়ে গেছে, সে চিন্তিতভাবে আমার দিকে তাকাল। আমি বুঝলাম ও কি বলতে চায়।

ঠিক আছে তুমি যত পার সসেজ চালাও।

অ্যালি ওয়েটারকে হুকুম দিতেই আরেক প্লেট সসেজ ও বীয়ার চলে এল। গগ করে মুখে পুরে, কয়েক ঢোক বীয়ার গলায় ঢেলে বলল, হ্যাঁ, আপনি কি যেন বলছিলেন?

টেরেন্স থরসেন সম্পর্কে তুমি কিছু জান কি?

কিছু জানি। ওদের বাপ আর ছেলের ভেতর একদম বনিবনা ছিল না। টেরি বাড়ি ছেড়ে গিয়ে ওয়াটার ফ্রন্ট এলাকায় একটা ঘর নিয়ে থাকতে শুরু করে। শুনেছি ছেলেটা ভাল পিয়ানো বাজাতে পারত, কিন্তু আমি নিজের কানে কখনও শুনিনি। তারপর ও ডেড অ্যান্ড ক্লাব নামে এক নাইট ক্লাবে বাজাতে শুরু করে। ক্যারি বিচ ছিল সেখানকার মালিক। নিজের নাম পাল্টে ও নতুন নাম নেয় টেরি জিগলার। শুনেছি সেফ পিয়ানোর গরম সুর শুনিয়ে ও ক্লাবের ব্যবসা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। অল্পবয়সী ছেলে মেয়েরা ওর বাজনার তালে তালে সেখানে পাগলের মত নাচত। রোজ রাত নটা থেকে দুটো পর্যন্ত ও বাজাত। তারপর হঠাৎ তিনমাস আগে ও উধাও হয়ে গেল। কেউ তাকে আর দেখতে পায়নি যদিও আমার কানে এসেছিল যে হ্যাংক নচ্ছারটা ওকে জোর করে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। জিগলার ব্ল্যাক ক্যাসেটে বাজাতে শুরু করলে সেটা খুব বড় খবর হত কিন্তু আদতে তা হয়নি।

এবার উঠে পড়া দরকার। ওয়ালেট খুলে একটা কুড়ি ডলারের নোট তার সামনে রাখলাম।

কান খোলা রেখো অ্যাল। হ্যাংক, টেরি এমন কি অ্যাঞ্জি এদের সম্পর্কে যখনই কিছু শুনবে আমায় জানাবে।

মিঃ ওয়ালেস আপনি তো আমার ঘাঁটি চেনেন, অ্যাল হাঙ্গরের মত হাসল, আমার কান খোলাই থাকে।

খাবারের দাম মিটিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। মনে হচ্ছে সকালটা নষ্ট হয়নি।

বিল চুইংগাম চিবুচ্ছিল। আমি পাশে বসে বললাম, মেয়েটা বেরিয়েছে?

হ্যাঁ, দশমিনিট আগে। ওকে ফলো করব না তোমার জন্য অপেক্ষা করব বুঝতে পারলাম না। ওর হাতে প্ল্যাস্টিকের বাক্সটা ছিল না। শহরের দিকে গেল।

ঠিক আছে, কিছু খবর যোগাড় করেছি, বলে অ্যাল বার্নির কাছ থেকে যেটুকু খবর পেয়েছি সে সবই বিলকে বললাম। দুজনেৰীয়ার খেয়ে গেলাম টেরেন্স ওরফে টেরি জিগলারের আস্তানার দিকে। খুঁজে দেখি সেখানে বস্তী এলাকার সেইসব শ্রমিক আর বোজ মজুরেরা, যার রুজির ধান্দায় রোজ শহরে যায়। গলির ভেতর ভিয়েমী, পোর্টেরিককান আর কালোদের ভিড়। দুচারজন সাদা মহিলাও চোখে পড়ল। শপিং ব্যাগ নিয়ে সস্তায় কেনাকাটা করছেন।

বাড়ির দারোয়ানের সঙ্গে আমাদের প্রথমেই দেখা হল। আমি পুলিশি মেজাজে তাকে বললাম, আমি টেরি জিগলারকে খুঁজছি।

লোকটা পেল্লায় একখানা ঝাটা হাতে নিয়ে ঝাট দিচ্ছিল। সে ঘাড় নেড়ে বলল, বেশতো, আপনি তাকে খুজুন। আমার হাতে এখন অনেক কাজ আছে।

ওকে কোথায় খুঁজে পাব?

 আপনি কি পুলিশের লোক?

না, ওর কিছু পাওনা আছে তাই দিতে এসেছি।

লোকটার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, অনেক টাকা!

সে আমি জানি না। অনেক কি কম তা আমায় বলেনি।

ওর খোঁজ দিলে আমায় কিছু পুরস্কার দেবেন?

গোটা কুড়ি ডলার দেওয়া যায়।

লোকটা একটু ভেবে বলল, টেরি জিগলার বললেন, তাই না? দেড়বছর আগে ও ছাদের অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়েছিল। ঠিকমত ভাড়া দিত, কোনরকম ঝামেলা করত না। তারপর ঠিক দুমাস আগে ও চলে গেল, বলল ও চলে যাচ্ছে। তারপর আর তাকে দেখিনি।

ও কোথায় গেল তা বলে যায়নি?

না, তা জেনে আমার কি দরকার? যখন যার দরকার হয় আসে দরকার ফুরোলে চলে যায়।

 ওল্ড সমোবাইল গাড়ির নম্বরটা মনে আছে?

নিশ্চয়ই। এত সোজা নম্বর কেউ কি ভোলে? নম্বরটা পি সি ১০০০১।

ওর অ্যাপার্টমেন্ট আর কেউ ভাড়া নিয়েছে?

হ্যাঁ, জিগলার চলে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক যেতে না যেতেই একটা মেয়ে এসে ঘরখানা ভাড়া নিল। দুমাসের ভাড়া আগাম নিয়ে চাবি দিলাম।

মেয়েটার নাম কি?

ডলি গিলবার্ট, জানি না ওটাই ওর আসল নাম কিনা। মেয়েটা রাতের বেলায় কাজ করে এটুকু ছাড়া ওর সম্পর্কে আর কিছু জানি না।

তারপরেই লোকটা এমনভাবে ঝটা চালাতে লাগল যা দেখে বুঝলাম ওর কিছু তেল দরকার। ওয়ালেট খুলে একটা পাঁচ ডলারের নোট ওর চোখের সামনে নাচাতেই ও নোটটার দিকে তাকিয়ে, ওটা কি আমার জন্য?

হতে পারে যদি আমাদের আর একটু সাহায্য করা। টেরি জিগলারকে আমার খুঁজে বার করতেই হবে। এ বাড়ির কেউ না কেউ নিশ্চয়ই ওর খোঁজ দিতে পারবে?

মিস অ্যাঙ্গাস আপনাকে জিগলারের খোঁজ দিতে পারতেন। উনি ওর উল্টোদিকের অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন। ভদ্রমহিলার কি সুন্দর স্বভাবই না ছিল। বয়স প্রায় আশি। জিগলারের ঘরদোর উনিই সাফ করতেন, ওকে মাঝে মাঝে খাবার গরম করে দিতেন। হ্যাঁ, একমাত্র উনি পারতেন জিগলারের খোঁজ দিতে।

পারতেন মানে? উনি কি এখন আর নেই?

লোকটা কিছু না বলে নোটটার দিকে তাকাচ্ছিল। ওটা দিতেই সে সেটায় চুমু খেয়ে তারপর নিজের নোংরা ট্রাউজারের পকেটে চালান করল।

মিস অ্যাঙ্গাস চলে গেছে। একদম বরাবরের মত। উনি খুন হয়েছিলেন। জিগলার চলে যাবার তিনদিন পরই ওরই অ্যাপার্টমেন্টে কেউ এসে ওকে খুন করে যায়। মনে হয় উনি যেহেতু জিগলারের সঙ্গে কথা বলতেন তাই একমাত্র ওর পক্ষেই সম্ভব জানা যে সে কোথায় বসে। আমার পক্ষে এর বেশী বলা সম্ভব নয়।

মিস অ্যাঙ্গাসের অ্যাপার্টমেন্ট কেউ ভাড়া নিয়েছে কি?

এখনও পর্যন্ত কেউ নেয়নি, কারণ ওর তিন বছরের ইজারা এখনো ফুরোয়নি, তাছাড়া ওর নিজের আসবাবপত্রও আছে। একজন উকিল ওর বিষয় সম্পত্তি দেখাশোনা করছে।

উকিলের নাম কি?

 ছোকরা উকিল, নাম সলি লিউইস।

 দরোয়ানের হাবভাবে বুঝলাম সে এর চাইতে বেশী তথ্য যোগাবে না।

 ধন্যবাদ, পরে আরেকটা পাঁচ ডলারের নোট নিয়ে এসে তোমার সঙ্গে দেখা করব।

সে তো খুব ভালো কথা। যতবার খুশি আসবেন।

ফিরে এসে বিলকে সব বললাম, সলি লিউইস নামে একজন উকিলের ঠিকানা খুঁজে বের করো। আমি এক্ষুনি আসছি। তারপর সেই বাড়িতে ফিরে লিফটে চেপে একদম শেষ তলায় গিয়ে পৌঁছালাম। ডানদিকে আঁটা স্টিকারে নাম লেখা মিস ডলি গিলবার্ট।

পর পর তিনবার কলিংবেল টেপার পর দরজা খুলে গেল। যে মেয়েটিকে দেখলাম তার বয়স কুড়ির বেশী নয়। গায়ের রং ফর্সা, মাথার চুল কোকড়ানো, মুখে মেকাপের পুরু প্রলেপ। তার লালসা পুরু ঠোঁট আর চোখের কটাক্ষ দেখেই বোঝা গেল যে পতিতাবৃত্তিই তার প্রধান জীবিকা।

মেয়েটি বলল, দুঃখিত, ভেতরে লোক আছে। ঘণ্টা দুয়েক লাগবে।

এবার তাহলে আমি কি করব? বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি হেসে বললাম, আমার এক বন্ধু বলছিল তুমি আমার মন ভোলাতে পারবে। কথা বলছি বটে কিন্তু আমার নজর ঘরের দিকে। ভেতরের প্রায় সবটা পুরোন আসবাবপত্রে ঠাসা। ঘরের ভেতর একটা দরজা হয়তো সেটা শোবার ঘর। সেই দরজার পাল্লা অর্ধেকটা ভেজানো।

তা পারি বটে কিন্তু এক্ষুনি…..।

ওই শালাকে কেটে পড়তে বল।

শোবার ঘর থেকে বাজখাই গলায় কোন পুরুষ হেঁকে উঠল, চলে এসো আমরা দুজনে মিলে শরীরের সুখ করি। তুমি ভাবছো কি? আমার সময়ের দাম নেই?

সেই গলার আওয়াজে মেয়েটা কাঠ হয়ে গেলো, গলা নামিয়ে বলল, পালাও। দেখছে না। একেবারে বুনো, পরে দেখা হবে। বলেই ও দরজাটা আমার মুখের ওপর বন্ধ করে দিল।

ঐ রকম বাজখাই গলা যে একজন নিগ্রোর তা আমি হলপ করে বলতে পারি। মেয়েটা বলল লোটা একেবারে বুনো। ( হঠাৎ আমার মনে একটা সম্ভাবনা উঁকি দিল। লিফটে চেপে নীচে নেমে বিলকে প্রশ্ন করলাম, ঠিকানাটা যোগাড় করতে পেরেছো?

হ্যাঁ, এই তো ৬৭, সিকোম্ব রোড।

ঠিক আছে, শোন বিল, আর কিছুক্ষণ পরে এক নিগ্রো এই বাড়ি থেকে নেমে আসছে। আমার ইচ্ছে তুমি ওর পিছু নাও। ওর সঙ্গে গাড়ি থাকলে তোমারও গাড়ির দরকার। তাই আমি গাড়িটা রেখে যাচ্ছি। ওর পিছু নাও। আমি জানতে চাই এই লোকটা কি হ্যাংক স্মেডলি?

আর তুমি? আমি সলি লিউইসের সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি। বলেই একটা ট্যাক্সিতে চেপে বসলাম।