০১. রোজার আইকেন

হিট অ্যান্ড রান

প্রথম পরিচ্ছেদ

০১.

সেই ধরনের বড়সাহেব ছিলেন রোজার আইকেন যিনি পারিবারিক জীবনের সঙ্গে কর্মজীবনকে মিশিয়ে ফেলতেন না। প্লাজা গ্রিলের সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে পা ভাঙার আগে পর্যন্ত আমি তার বাড়ি যাইনি বা তার স্ত্রীকে দেখিনি।

তার বাড়ি যাবার আমন্ত্রণ তিনিও আমাকে কখনও জানাননি। অবশ্য এ নিয়ে আমি মাথা ঘামাতাম না। যদি অফিসের বড়কর্তারা কর্মচারীদের পরিবারের অংশ হিসেবে মনে করেন, তার চেয়ে খারাপ আর কিছুই হতে পারে না। অনেকে কর্মচারীদের মাসে একবার বাড়িতে রাজকীয় নৈশভোজে আপ্যায়ন করেন। সেখানে কর্মচারীদের কেউ পান করতে বা কথা বলতে সাহস পায় না। আমি এই ধরনের বড়বাবুদের প্লেগ রুগীর মত দুরে রাখার চেষ্টা করি।

কিন্তু রোজার ছিলেন কড়া জমিদারী মেজাজের বড় সাহেব। যে সব মেয়ে পুরুষেরা তার কাছে কাজ করত, তিনি তাদের ওপর কড়া নজর রাখতেন। অন্য বিজ্ঞাপন এজেন্সির চেয়ে সিকি ভাগ মাইনে বেশী দিতেন। কিন্তু প্রথম সপ্তাহে কেউ ভাল কাজ দেখাতে না পারলে তিনি তাদের চেপে ধরতেন। ফলে তাদের চাকরী ছেড়ে দিতে হত। আইকেনের কাছে দ্বিতীয় কোন সুযোগ মিলত না। সোজা ভাষায় হয় কাজ কর, নয় বিদায় নাও।

উপকূল অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও ভাল এজেন্সি ছিল আইকেনের পরিচালিত ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড প্যাসিফিক এজেন্সি। আমি আগে এক ক্ষুদ্র সংস্থায় কাজ করতাম। যার আর্থিক অবস্থা ছিল শোচনীয় এবং এক পা ছিল দেনার কবরে পোঁতা। অফিসের বড় কর্তাকে অত্যধিক মদ খাওয়ার জন্যে ধরে নিয়েছিল প্রায় দু বছর আগে। বেশ মনে আছে আমি একদিন যখন নতুন ধরনের ডিশ ওয়াশার তৈরির পরিকল্পনা করছিলাম তখন রোজার আইকেনের সেক্রেটারির ফোন এল। তিনি জানালেন রোজার আইকেন ব্যক্তিগত বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে চান আর আমি কি সেদিন ছটার সময় যেতে পারব?

আমি অবশ্য আইকেনের খ্যাতি জানতাম আর একদল ধনী ব্যবসায়ীর হয়ে তিনি এজেন্সী চালাতেন এবং আশ্চর্য রকমের কাজ দেখিয়েছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই আমি একটু উত্তেজিত হয়েছিলাম। উপকূল অঞ্চলের যে কোন বিজ্ঞাপন কর্মীর উচ্চ আকাঙ্ক্ষাই ছিল ইন্টারন্যাশনালে একটি চাকরী পাওয়া।

ছটা বেজে পাঁচ মিনিটে তার ডেস্কের সামনে এসে দাঁড়ালাম। ইস্পাত রং-এর একজোড়া নীল চোখ আমাকে অভ্যর্থনা জানাল। মাখনের ভিতর দিয়ে গরম ছুরি যাওয়ার মত তার চোখের দৃষ্টি আমার মাথা ভেদ করে চলে গেল।

ছফুট দুইঞ্চির কিছু দীর্ঘ আইকেন, সুন্দর স্বাস্থ্য। হুইস্কির মত গায়ের রং, পানাশক্ত মুখ এবং চোয়াল দুটো উচ্চপদস্থ কর্মচারীর মত। সাতান্ন বছর বয়স হবে, শরীরের মাঝখানটা বেশ মোটা। বেশ স্বচ্ছল অবস্থা দেখে মনে হয়।

প্রায় দশ সেকেন্ড আমাকে দেখে পরে উঠে তার গিটে ভর্তি হাতখানা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন।

বেশ জোরেই তিনি বললেন, আপনিই মিঃ স্কট?

বুঝতে পারছিলাম না কাউকে কি তিনি স্কট ভেবেছিলেন। কারণ তার ঘরে আসার আগে অন্ততঃ পাঁচজন ক্ষুদে অফিসারের কাছে আমার নাম ধাম জানাতে হয়েছিল।

হ্যাঁ, আমিই চেসটার স্কট।

 ডেস্কের ওপর একটা ফাইল খুলে তিনি তার মোটা আঙুল বুলিয়ে বললেন, এসব আপনার কাজ?

গত চার পাঁচ মাসে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও পত্রিকায় আমি যে সব কাজ করেছিলাম তাদের ডজন দুয়েক কাটা টুকরো ফোল্ডারে ছিল।

এসব আমারই কাজ জানালাম।

তিনি ফোল্ডার বন্ধ করে ঘরে পায়চারি করতে লাগলেন।

বললেন, মন্দ নয়। আপনার মত লোককে কাজে লাগাতে পারি। ওরা আপনাকে কত দিচ্ছে?

জানালাম।

কিছুক্ষণ এমনভাবে তাকালেন আমার দিকে যেন আমার কথা ঠিকমত শুনেছেন কিনা সন্দেহ।

আপনি কি জানেন আপনার দাম আরও বেশি?

 আমি জানি।

তাহলে কিছু করার চেষ্টা করেন নি কেন?

জানালাম ইদানীং বেশ ব্যস্ত ছিলাম এবং এ ধরনের কিছু করার সময় পাইনি।

আপনার কাছে টাকার চেয়ে কাজের দাম বেশী, অ্যাঁ?

ঠিক তা বলছি না। আসলে আমি ব্যস্ত ছিলাম।

আপনি এখন যা পাচ্ছেন আমি তার চেয়ে প্রতি সপ্তাহে একশো করে বেশি দেব। সোমবার থেকে কাজ শুরু করতে পারেন।

ইন্টারন্যাশনালে এই ভাবেই কাজ করতে আসি।

এখন দু বছর পরে আমি অফিসের দ্বিতীয় কর্তা এবং যে কোন কাজের জবাবদিহি কেবল আইকেনকেই দিতে হয়। এখনকার বেতন দু বছর আগে স্বপ্ন মনে হত। আর আছে ক্যাডিলাক কনভারটিবল, সমুদ্রের উপর একটি তিন ঘরের বাংলো, কাজ করার জন্য ফিলিপিনো ছেলে এবং ব্যাঙ্কে বেশ মোটা অঙ্ক।

ভাববেন না আমি কেবল চেয়ারে বসে ও সিগারেট টেনে এই অবস্থায় উঠেছিলাম। আইকেনের কাছে কাজ করতে এলে সত্যিকারের কাজ করতে হয়। শনিবার সমেত প্রতিদিন সকাল নটায় ডেস্কে এসে বসতাম এবং এমন দিনও গেছে যখন মাঝরাত পর্যন্ত কাজ করতাম। ইন্টারন্যাশনালে কাউকে ভাল মাইনে দিলে যাতে শরীরের মাংসের প্রতি পাউন্ড পাওয়া যায় আইকেন সেদিকে লক্ষ্য রাখতেন। এত পরিশ্রমেও ভাল লাগত এবং কাজ করার বেশ ভাল কয়েকজন সঙ্গীও পেয়েছিলাম। আর সকলের উপরে ছিলাম আমি। কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম ঘটল না।

জুলাই মাসের এক গরম সন্ধ্যায় অফিসে বেশ দেরি পর্যন্ত কাজ করছিলাম। তখন প্রায় নটা হবে। আমার সেক্রেটারী প্যাট হেনেসি ও শিল্পী জো ফেলোস কেবল সেখানে ছিল। একটা নতুন গায়ে মাখা সাবানের বিজ্ঞাপনের পরিকল্পনা নিয়ে আমরা ব্যস্ত ছিলাম। কাজটা খুব বড়, সারা দেশ জুড়ে টেলিভিশনের কর্মসূচী এবং প্রায় বিশ লাখ টাকা খরচ হবে।

কয়েকটা বিজ্ঞাপনেরআর্টপুল ফেলোস আমাকে দেখাচ্ছিল, ছবিগুলো বেশ সুন্দর। প্যাটও আমি সেগুলো নিয়ে আলোচনা করছিলাম, ঠিক তখন প্যাটের ডেস্কের টেলিফোন বেজে উঠল।

রিসিভার তুলল সে।

দেখতে খুব সুন্দর প্যাট। লম্বা, গায়ের রঙ সুন্দর, বড় নীল চোখ, বয়স প্রায় ছাব্বিশ এবং ক্ষুরের মত ধারালো। সে ও আমি যেন একটা দল গড়ে তুলেছিলাম। মাঝে মাঝে সে আমার স্মৃতিশক্তিকে তাজা করে তুলত। তবে আইকেনের দেওয়া কাজের ক্রুপের সঙ্গে আমার তাল মিলাতে সহজ হতো।

টেলিফোনে প্যাট কি বলছিল সেদিকে আমি মন দিই নি। জো ও আমি বিজ্ঞাপনের একটা খসড়া পাল্টাচ্ছিলাম। মডেলের মেয়েটির ছবি দেখে আমি খুশি হতে পারিনি।

দেখ জো, বাস্তবে যদি কোনো মেয়ের এত বড় স্তন থাকে, তবে প্রথমে সে রিভলভিং দরজা দিয়ে যেতেই আটকে যাবে।

জো সহজভাবে বলল, ব্যাপারটা ঠিক তাই। আমি ঠিক এটাই বোঝাতে চাইছি লোকেরা এই বিজ্ঞাপন দেখামাত্র নিজেকে প্রশ্ন করবে এই সুন্দরী যখন রিভলভিং দরজার ভিতর যাবে তখন কি করবে। ড্রয়িংটা মনোবিজ্ঞানের।

আমি খসড়াটা তার দিকে ছুঁড়ে দিলাম আর হাসি সামলাতে পারলাম না। প্যাট এসে শান্ত গলায় বলল, মিঃ আইকেন তার পা ভেঙেছেন।

যদি বলতে তিনি তার গলা….ঠাট্টা করছ?

প্যাট আমার দিকে দেখল।

মিঃ আইকেনের হাউস কিপার কথা বলছিলেন। আইকেন প্লাজা গ্রিলের সিঁড়িতে পড়ে যাওয়ায় তার পা ভেঙ্গে গিয়েছে।

জো কিছু না বুঝেই বলল, ব্যাপারটা ঠিক তারই উপযুক্ত। নিশ্চয়ই দিলদরিয়া মেজাজে কোথাও পা ভেঙ্গেছে। সে কি বলল কোন্ পা?

জো, তুমি কি চুপ করবে? বলে প্যাটকে বললাম, তিনি কোথায়? হাসপাতালে?

সকলে ধরে তাকে বাড়ি নিয়ে এসেছে। একবার আপনাকে দেখতে চান, হাউসকিপার আপনাকে এখুনি যেতে বললেন।

তখনই খেয়াল হল যে আইকেন কোথায় বাস করেন সেটাও আমি জানি না।

 কোথায় পাব তাকে।

জো একটু বাঁকা হাসি হেসে, পাম বুলেভার্দে তার একটা ছোট্ট বাড়ি আছে। প্রায় চব্বিশটা ঘর, লাউঞ্জটা একটা বাস গ্যারেজের পক্ষে যথেষ্ট। অল্প দূরে, সপ্তাহের শেষটা কাটাবার জন্য।

প্যাটের দিকে তাকাতেই সে তাড়াতাড়ি বলল, দি গেবলস পাম বুলেভার্দ। ডান দিকের তৃতীয় বাড়িটা।

সে তাড়াতাড়ি ড্রয়ার ও ফাইল খুলে কাগজপত্র নিয়ে একটা হোল্ডারে জমা করতে লাগল।

কি খুঁজছ? বললাম।

তোমার দরকারে লাগতে পারে। মনে হয় না বড়কর্তা কেবল দেখতে চেয়েছেন। কাল একটা বোর্ড মিটিং আছে। তোমাকেই সেটা সামলাতে হবে। তিনি সব কাগজপত্র দেখতে চাইতে পারেন। এর ভেতরে সব আছে। বলে ফোল্ডারটা আমাকে দিল।

কিন্তু তার পা নিয়ে তিনি ব্যবসার ব্যাপারে মনে হয় কিছু কথা বলবেন না। তার নিশ্চয়ই খুব ব্যথা হচ্ছে।

প্যাট গম্ভীরভাবে বললো, আমি নিয়ে যাব, চেস। এসব দরকারে লাগতে পারে।

 পরে সত্যিই সেগুলো আমার প্রয়োজনে এসেছিল।

সমুদ্র ও দূর পাহাড়ের পরিবেশের মাঝে দু একর বাগানের উপর দি গেবলস একটি বিরাট বাড়ি। চব্বিশটা না হলেও অন্ততঃ দশটা ঘর আছে। বেশ সুন্দর বাড়ি, এ ধরনের বাড়ির একটা আমার শখ আছে। কোন বন্ধুকে মনে মনে ঘৃণা করলেও এ ধরনের একটা বাড়ি দেখে তাকে প্রশংসা করতেই হবে।

বাড়ির বাঁ দিকে আছে বেশ বড় আকারের একটা সুইমিং পুল ও চারটে গাড়ি রাখার মত একটা গ্যারেজ। সেখানে রোজার আইকেনের একটা বেন্টলি, একটা ক্যাডিলাক, একটা বুইক ওয়াগন ও একটা টি আর টু গাড়ি আছে।

বেগোনিয়া, গোলাপ, পিটুনিয়া ও অন্যান্য গাছে বোঝাই বাগানটা আলোয় ভর্তি ছিল। আমি যখন বালির রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম তখন পুলটা নির্জন লাগছিল। পুলটা এমন সুন্দর যে এর পাড়ে বিকিনি পোশাকে সুন্দর মেয়েরা থাকলে মানায়।

আইকেন বিরাট লোক জানতাম, কিন্তু এত ঐশ্বর্য ও আড়ম্বরে থাকার মত রোজগার করেন এ ধারণা আমার ছিল না।

গাড়ি ছেড়ে সদর দরজার সামনে প্রায় বিশটা শ্বেত পাথরের সিঁড়ি উঠে ঘণ্টা বাজালাম।

ইংরেজ বাবুর্চির পোশাকে একটা লম্বা মোটা তোক দরজা খুলে ভুরু কোঁচকাল। পরে জেনেছিলাম তার নাম ওয়াটকিনস এবং ইংল্যান্ড থেকে বেশ পয়সা খরচ করে তাকে আনতে হয়েছিল।

আমি বললাম, স্কট। মিঃ আইকেন আমাকে ডেকেছেন।

হ্যাঁ সার। এই পথে আসুন।

একটা বড় হল ঘরের ভিতর দিয়ে কয়েকটা সিঁড়ি নেমে একটা ঘরে এলাম। এই ঘরটা রোজার আইকেন কাজ করার জন্য ব্যবহার করেন। ঘরে একটা ডেস্ক, একটা ডিক্টোফোন, চারটে সোফা ও দেয়ালে সারি দিয়ে প্রায় হাজার দুয়েক বই ছিল।

ওয়াটকিনস আলো জ্বেলে বিছানা পাট করে যখন বাড়ির ভেতর যাচ্ছিল তখন বললাম।

কেমন আছেন?

যতটা ভাল আশা করা যায় তেমনি আছেন। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন, আমি বলে আসছি। আপনি এসেছেন।

আমি ঘরটার চারপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে বইগুলোর নাম পড়তে লাগলাম।

ওয়াটকিনস ফিরে এসে, মিঃ আইকেন আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।

মোটা ফোল্ডারটা নিয়ে একটা ছোট পথ ধরে তাকে অনুসরণ করে চললাম। পরে একটা এলিভেটরে এলাম যেটা আমাদের দুজনকে উপর তলায় নিয়ে এল। বড় প্যাসেজ পার হয়ে একটা দরজার সামনে এসে দরজায় টোকা মেরে ওয়াটকিনস হাতল ঘুরিয়ে একপাশে সরে দাঁড়াল।

আইকেন একটা ছোট পালঙ্কে শুয়েছিলেন। ঘরটা বড় এবং সর্বত্র পুরুষালী স্পর্শের ছাপ। বড় জানালাগুলো থেকে পর্দা টানা ছিল চাঁদের আলোয় ভরা সমুদ্র দেখা যাচ্ছিল।

আইকেন শুধু শুয়েছিলেন তাছাড়া আগের মতই সব দেখাচ্ছিল। দাঁতের ফাঁকে একটা সিগারেট এবং বিছানায় অনেক কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিল। বিছানার পাশে একটা বাতি জ্বলছিল, আর ঘরের বাকিটা ছায়ায় ঢাকা।

তার গলার স্বরেই বোঝা গেল তিনি ভাল আছেন। ভিতরে এস স্কট। নতুন সমস্যা, তাই না? চেয়ারটা টেনে নাও। এর জন্য আমাকে কিছু খেসারতি দিতে হবে। সিঁড়িগুলো পরীক্ষা করে দেখার জন্য আমার অ্যাটর্নিকে পাঠিয়েছি, সাংঘাতিক মৃত্যুদ। মামলা করে তাদের কান টেনে আনার ব্যবস্থা করছি। তাতে অবশ্য আমার পা ভাল হবে না।

একটা চেয়ার টেনে বসে তার দিকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকালাম।

তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন, বাদ দাও। এসব বলে তত আর কিছু শোধরান যাবে না। ঐ বোকা ডাক্তারটার কথামত আমাকে প্রায় হপ্তা চারেক অকেজো হয়ে থাকতে হবে। যদি লক্ষ্য না রাখি তবে খোঁড়া হয়ে পড়ব। আর যাই হোক, খোঁড়া হতে চাই না। সুতরাং আমাকে বাড়িতে থাকতেই হবে। আগামীকাল বোর্ডের মিটিং আছে। তোমাকেই ঝক্কি সামলাতে হবে। কি পারবে তো?

কেমন করে মিটিং পরিচালনা করতে চান বলুন। ঠিকই চালিয়ে নিতে পারবো।

কাগজপত্র সঙ্গে এনেছ?

আমার তখন প্যাটকে আশীর্বাদ করতে ইচ্ছা করছিল। ফোল্ডার থেকে কাগজগুলো বের করে দিলাম।

তিনি দশ সেকেন্ড আমার দিকে চেয়ে থেকে কাগজগুলো নিতে নিতে বললেন, জান স্কট। তুমি বেশ চালাক চতুর ছোকরা। এগুলো কেন নিয়ে এলে? কি করে ভাবলে যে, আমি বিছানায় শুয়ে কাজে অসমর্থ হব?

আপনি শয্যাশায়ী থাকবেন এটা আমি ভাবতে পারি না, মিঃ আইকেন। আপনি সেই ধরনের মানুষ যারা সহজে শয্যা নেয় না।

সত্যি কথা।

 মনে হল আসল জায়গায় ঘা দিয়েছি।

বল স্কট, কিছু টাকাকড়ি জমিয়েছ?

অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে চমকে তাকালাম। আমার প্রায় হাজার বিশেক ডলার আছে।

 বিশ হাজার, অ্যাঁ? এত বেশী? মনের আনন্দে হেসে উঠলেন। এই প্রথম তাকে এত হাসিখুশি দেখলাম। মনে হয় টাকা কড়ি খরচ করার জন্যে আমি তোমাকে যথেষ্ট সময় দিইনি। তাই না?

না, ঠিক তা নয়। বেশির ভাগটাই আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি।

কেন জিজ্ঞাসা করলাম বলছি। এই সব মাথা মোটা লোকগুলোর জন্য খেটে খেটে আমি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। নিউইয়র্কে নিজে একটা ব্যবসা খুলবো ভাবছি। পরের হপ্তা চারেক ইন্টারন্যাশানাল তুমিই চালাবে। আমি সবকিছু বলে দেব সেইভাবে কাজ করবে। এমনও সময় আসবে যখন তোমার নিজেকেই বুদ্ধি খাটিয়ে আমার সঙ্গে পরামর্শ না করেই কাজ করতে হবে। আমি তোমাকে মোটামুটি আমাদের পলিসি জানিয়ে দেব। তা তোমাকে কাজে পরিণত করতে হবে। যদি সফল হতে পার তবে ফিরে এসে তোমাকে এমন সুযোগ দেব যা এখানকার সকলেই পেতে চায়। যদি তুমি চাও, তবে আমার নিউইয়র্কের ব্যবসায় তোমাকে অংশীদার করে নেব। আমি যখন আবার ইন্টারন্যাশানাল চালাব, তুমি তখন ওখানে গিয়ে দেখাশোনা করতে পারবে। এইভাবে দুজনে অনেক টাকা করতে পারব। স্কট কি বল?

নিশ্চয়ই। আমার ওপর আশা রাখতে পারেন মিঃ আইকেন।

ঠিক আছে, দেখা যাক। ভুল না করে ইন্টারন্যাশনাল চালাও। ভুল করেছ কি চাকরি খতম, বুঝেছ?

এতে হয়ত আইকেনের পর্যায়ে ওঠার একটা সুযোগ মিলতে পারে। আবার শীঘ্র বা দেরিতেই হোক না কেন নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারব। বিশ হাজার ডলার, কোন বিজ্ঞাপন কর্মীকে নিউইয়র্কে যা সুযোগ দিতে পারে তা এবং আইকেনের পৃষ্ঠপোষকতা সব মিলিয়ে তার কথামত সত্যিই আমার একটা সুযোগ এসেছে যা এই ব্যবসায়ের যে কোন লোকই পেতে চাইবে।

প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে বোর্ড মিটিং এর ব্যাপারে আলোচনা হল। প্যাট আমাকে প্রত্যেকটি কাগজ দিয়েছিল। একটিও ভুল হয়নি। প্রায় সাড়ে এগারোটার সময় কালো সিল্কের পোশাক পরে এক ভদ্রমহিলা এলেন। নাম হাউসকিপার মিসেস হেপল ভিতরে এসে জানালেন।

ঘুমোবার সময় হয়েছে মিঃ রোজার। ডঃ স্কালবাজ আপনাকে এগারোটায় ঘুমোতে বলেছেন। প্রায় আধঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে।

আইকেন কাগজপত্র সরিয়ে দিতে দিতে, সেই হাতুড়েটা। ঠিক আছে, এগুলো নেবে স্কট?

কাগজগুলো ফোল্ডারে রাখছিলাম তখন তিনি বললেন, পরের চার সপ্তাহে আমাকে এই সব কাজ করতে হবে। বোর্ড মিটিং শেষ হওয়া মাত্র আমাকে ফোন করবে। টেম্পলম্যানের উপর নজর রাখবে। সেই নষ্টের গোড়া। কাল রাতে একবার দেখা করতে এস। ওয়াসারম্যানের হিসাবপত্র কি ভাবে সামলালে জানতে চাই। ওটা এবং বিউটি সাবানের উপর নজর রাখবে। নইলে আমরা ও দুটো হারাব।

সবকিছুর উপরই লক্ষ্য রাখব। আশাকরি তিনি যেন ভালভাবে ঘুমোতে পারেন। পরে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।

এলিভেটরের কাছে এসে বোতামটা টিপলাম কিন্তু কিছু হলনা। আগে যে লোকটি এলিভেটর ব্যবহার করেছিল সে নিশ্চয়ই গ্রিন দরজা খুলে রেখেছিল, ঠিক করলাম সিঁড়ি দিয়ে নামব এবং সেদিকে গেলাম।

নেমেছি প্রায় অর্ধেক, চাতালের সামনে দেখা গেল গোটা চারেক দরজা। একটা দরজা ছিল খোলা, আলো বাইরে পড়েছিল এবং বাইরের সবুজ ও সাদা রং-এর কার্পেটের ওপর একটা আয়তাকার ছায়া দেখা যাচ্ছিল।

সিঁড়ির কার্পেট ছিল মোটা, ফলে আমার পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছিল না।

একটা পুরো আকারের আয়নার সামনে মেয়েটি দাঁড়িয়েছিল। দুই হাত দিয়ে কাঁধের উপর লম্বা বাদামী রং-এর চুলগুলো তুলে ধরছিল। মাথাটা ছিল এক পাশে নোয়ান। পরনে শৌখিন ছোট প্যান্ট, কোমর থেকে হাঁটুর ওপর চার ইঞ্চি পর্যন্ত ঢাকা। পা ও পায়ের তলা ছিল নগ্ন।

এত সুন্দরী মেয়ে জীবনে দেখিনি। বয়স কুড়ি থেকে বাইশের মধ্যে।

তাকে দেখা মাত্র একটা বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গ বয়ে গেল শরীরে। কখনো কোন নারী আমার শরীরে এ রকম কিছু সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়নি। বুকটা ধক্ ধক্ করে উঠল, নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে এল।

আধো অন্ধকারে তার দিকে চেয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। মেয়েটাকে পাবার জন্য খুব ইচ্ছা হচ্ছিল।

হয়তো আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ছিল, হঠাৎ পিছন হটে আমার আড়ালে চলে গেল ও দরজাটা ভেজিয়ে দিল।

প্রায় দশ সেকেন্ড দাঁড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে হলঘরে এলাম।

 লাউঞ্জ থেকে ওয়াটকিনস বেরিয়ে এল।

কুটিল চোখে তাকিয়ে বলল সঙ্গে টুপি নেই?

না।

 আপনার গাড়ি আছে স্যার?

 হ্যাঁ।

সামনে দরজার দিকে এগোতেই সে দরজা খুলে দিল।

শুভরাত্রি, স্যার।

আমি শুভরাত্রি জানিয়ে উষ্ণ নিস্তব্ধ অন্ধকারে হেঁটে গাড়িতে ঢুকে গিয়ে ড্রাইভিং হুইলের পিছনে বসলাম।

যদিও আইকেনের চেয়ে মেয়েটি বছর পঁয়ত্রিশের ছোট, নিশ্চিত ছিলাম সে তার মেয়ে বা মিসট্রেস নয়। দৃঢ় বিশ্বাস হল সে তার স্ত্রী ভেবে কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পড়লাম।

.

০২.

 ভাল ঘুমোত পারিনি সে রাতে। মনে অনেক কিছু আনাগোনা করছিল। একদিকে নিউইয়র্কের পার্টনারশিপের ব্যবসার বিরাট সুযোগ, অন্যদিকে আগামীকাল বোর্ড মিটিং যা বেশ গোলমেলে হতে পারে।

ইন্টারন্যাশানাল ও প্যাসিফিক এজেন্সির ডিরেক্টর পাঁচজন। তাদের চারজন ব্যাঙ্ক ব্যবসায়ী ও আইকেনের গুণমুগ্ধ। পঞ্চমজন অ্যাটর্নি শেলউইন টেম্পলম্যান। সবজান্তা ও বিরক্তিকর লোক এবং তাকে সামলাতে হবে ভাবতে খারাপ লাগছিল।

তার ওপর ছিল ওয়াসারম্যানের হিসেবপত্র। প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল অঞ্চলে টেলিভিসন সেট তৈরির সবচেয়ে বড় প্রস্তুতকারক জো ওয়াসারম্যান। তিনি বড় মক্কেলদের একজন। তিনিও এ ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। প্রায়ই তিনি ভয় দেখাতেন যে হিসেব-নিকেশ সরিয়ে নিয়ে অন্য কোন এজেন্সিকে দেবেন। আমরা তাকে কোনরকমে এতদিন আটকে রেখেছিলাম। আইকেন চিরদিন নিজেই এটা দেখাশুনা করতেন। আইকেন খুব কম অ্যাকাউন্ট নিজে দেখতেন। এখন আমাকে দেখতে হয় ফলে ঝামেলা অনেক।

আরেক চিন্তা হচ্ছে, কাল থেকে সম্ভবতঃ চার সপ্তাহের জন্য আমি হচ্ছি ইন্টারন্যাশনালের সর্বেসর্বা, প্রায় দেড়শো স্ত্রী পুরুষ আমার অধীনে কাজ করবে আর প্রায় দুশো তিনজন মক্কেল সপ্তাহের কাজের দিনগুলির যে কোন সময়ে তাদের সমস্যা নিয়ে চিঠি লিখবে বা ফোন করবে। তাদের আশা উত্তর সঙ্গে সঙ্গেই চাই। এতদিন এ নিয়ে আমার উদ্বেগ ছিল না, কারণ কঠিন প্রশ্ন হলেই এর ওর ঘাড়েই সমস্যাটা চাপিয়ে দিতাম। কিন্তু এখন তা করলে আমার সম্বন্ধে তাঁর ধারণাটা ভাল হবে না। এ ছাড়া পা ভাঙ্গা মানুষকে অত্যন্ত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বিরক্ত করা ঠিক নয়।

শুয়ে শুয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো দেখতে দেখতে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শুনতে শুনতে সমস্যাগুলো বেশ জটিল মনেহচ্ছিল। পরে বুঝতে পারলাম আধো অন্ধকারে আমার ঘেমে নেয়ে যাবার আসল কারণ হচ্ছে অন্য। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আইকেনের স্ত্রীর ছবিটা বার বার মনে পড়ছিল।

সাদা কাঁধে বাদামী চুল তুলে ধরার ছবি, ছোট জামাটার নীচে তার সুগঠিত স্তন দুটোর ছবি। তার তাজা তারুণ্য, সে যে আইকেনের স্ত্রী এই চিন্তা ও তাকে কাছে পাওয়ার অদম্য ইচ্ছা–এই সব চিন্তাই তাহলে সারারাত আমাকে অস্থির করে তুলেছিল।

আইকেন তাকে কেন বিয়ে করেছিলেন? সে কি তার মেয়ের বয়সেরও ছোট? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন মেয়েটাই বা কেন তাকে বিয়ে করল?

এই চিন্তাগুলো সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছি। বার বার নিজেকে বলেছি, সে আইকেনের স্ত্রী। সে আমার শ্রদ্ধার পাত্রী। কিন্তু যেভাবে তার চিন্তা করছিলাম তাতে মনে হচ্ছিল যেন আমি একেবারে অসহায়। সে রাতে কিছুতেই তাকে মন থেকে সরাতে পারিনি।

সকাল নটায় অফিসে গেলাম। ঠিক প্যাট যখন এলিভেটরে উঠতে যাচ্ছিল তখনই আমি তার সঙ্গ নিলাম। সেখানে আরও অনেক কর্মচারী ছিল, দুজনে আমরা হাসি বিনিময় করলাম। কোন কথা বললাম না।

নিজের অফিসে ঢোকার পর আমি তাকে নিউইয়র্ক পরিকল্পনার কথা বললাম।

ওহ, চেস কি সুন্দর? আমার সব সময়েই মনে হয়েছে তিনি কেন নিজের ব্যবসা নিউইয়র্কে ফাঁদেন না। তুমি দায়িত্বে থাকবে ভাবতে সুন্দর লাগছে।

এখনও ঠিক হয়নি। হয়ত এখানে একটা গণ্ডগোল বাঁধিয়ে বসব আর তখুনি চাকরী খতম।

 একবারও ভাববে না যে তুমি গণ্ডগোল বাধাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি ঠিকই পারবে।

আমি তোমাকে নিউইয়র্কে চাই, প্যাট। তোমাকে ছাড়া আমি কোন কাজ করতে পারব না।

নিউইয়র্ক থেকে আমাকে সরাতে পারবে না। আমি বরাবর সেখানে কাজ করতে চেয়েছি।

সেদিনের ডাক দেখছিলাম, এমন সময় জো ফেলোস ভিতরে এল।

দাঁত বার করে জো বলল, এই যে বস্, বুড়োটা কেমন আছে?

একমাত্র পার্থক্য উনি ওঠানামা করছেন না বিছানায় শুয়ে আছেন। দেখ জো আমি খুব ব্যস্ত। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বোর্ডের মিটিং আছে। কি বলতে চাও বল।

জো বসে বলল, বিশ্রাম নাও, বাবা। বোর্ড মিটিং এমন কিছু নয়। শুনতে ইচ্ছে হচ্ছিল বুড়োটা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। বাজী রেখে বলতে পারি সে চেঁচিয়ে ছাদ ফাটাচ্ছে।

না, তা নয়। তিনি আঘাতের কষ্ট আমলই দিচ্ছেন না। আমি দুঃখিত। আমি একটু ডাকটা দেখতে চাই।

তোমাকে উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। তোমার কি হয়েছে?

বছর দুই তার সঙ্গে কাজ করে তাকে আমার ভালই লেগেছে। শিল্পী হিসেবে সেই সবচেয়ে ভাল। সে প্রায়ই বলত মনিব হিসেবে আইকেনের চেয়ে আমাকেই তার ভাল লাগে। যদি কোনদিন নতুন ব্যবসা কঁদি সে আমার ব্যবসায় যোগ দেবে।

আমি তাকে নিউইয়র্ক পরিকল্পনার কথা বললাম।

কি সুন্দর। তুমি, আমি আর প্যাট এই নিয়ে বিশ্বজয়ী দল গড়ে তুলতে পারব। যদি ব্যবসায় না নাম চেস আমি তোমায় মেরে ফেলব।

যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

 বাড়িতে আর, ওর বৌকে দেখেছ?

 তার স্ত্রী? স্বাভাবিক ভাব দেখাবার চেষ্টা করলাম, না আমি তাকে দেখিনি।

তাহলে, কি জিনিস হারিয়েছ। ফুঃ! কি একটা জিনিস। আমি কেবল একবার তাকে দেখেছি। সেই থেকে রোজ তাকে স্বপ্নে দেখি।

তার কি কি বৈশিষ্ট্য আছে?

 যতদিন না দেখেছ ততদিন চুপ করে থাক। দেখলে বুঝবে কি বোকার মত প্রশ্ন করেছ। তার বৈশিষ্ট্য কি? একটা জিনিস, তার কড়ে আঙুলেও যতটা যৌন আবেদন আছে, অন্য কোন মেয়ের মধ্যে আমি তা দেখিনি। কুড়ির বেশী নয় কিন্তু কি সুন্দরী। ভাবতেও ঘেন্না করে যে, ঐ হুইস্কিখেকো পাষাণ হৃদয় খিটখিটে বুড়োটার সঙ্গে মেয়েটার বিয়ে হয়েছে।

কি করে বুঝলে সে জীবনে খুশি নয়?

এটা তো চিরন্তন ব্যাপার। বুড়োটাকে বিয়ে করার একমাত্র কারণ হতে পারে মেয়েটার তার চেক বই-এর দিকে নজর। এখন মেয়েটা বারটা বেডরুমের বাড়িতে বাস করে। সুন্দর গলায় হীরের নেকলেশ পরে। কিন্তু বাজী রেখে বলতে পারি সে জীবনেও সুখী নয়।

তুমি জানতে এটা, আশ্চর্যের। আর. এর যে স্ত্রী আছে আমি জানতাম না। মেয়েটার বাড়ি কোথায় ছিল?

জানি না, সৌন্দর্যে মেয়েটা প্রথম সারির মেয়ে। তোমার আসার বছর খানেক আগে সে বিয়ে করে। বুড়োটা সতের বছর বয়সে তাকে বড়শীতে গাঁথে। প্রায় দোলনা থেকে নিয়ে পালানো আর কি। যাইহোক, তাকে দেখার চেষ্টা করবে সত্যিই দেখার মত।

গল্প থামিয়ে এবার যাবে? বোর্ড মিটিং-এর মাত্র দশ মিনিট বাকী।

পরে এ নিয়ে ভাবতে খারাপ লাগছিল যে কেবল রোজার আইকেনের টাকার জন্য সে নিজেকে বলি দিয়েছে।

প্রায় তিনটের সময় আইকেনকে ফোন করলাম। যতটা ভেবেছিলাম বোৰ্ডমিটিং তার চেয়েও কঠিন পর্যায়ে এসেছিল। আইকেন মিটিং–এ না থাকায় টেম্পলম্যান তার দশ ইঞ্চি বন্দুক যেন উঁচিয়ে এসেছিল। আমি তাকে সামলেছিলাম। শেষে আর. এর ইচ্ছামত বিষয়গুলিতে তাদের রাজী করাতে পেরেছিলাম।

আর. এর বাড়িতে ফোন করতেই একটি মেয়ের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো–হ্যালো, কে?

গলার স্বর শুনেই আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এল। স্থির হয়ে রিসিভারটা কানে চেপে তার নিঃশ্বাসের মৃদু শব্দ শুনতে লাগলাম।

সে আবার বললো, হ্যালো? কে?

 স্কট বলছি। মিঃ আইকেনের সঙ্গে কথা বলতে পারি?

 মিঃ স্কট? হ্যাঁ নিশ্চয়। একটু দয়া করে ধরবেন? তিনিও আপনার জন্যে অপেক্ষা করছেন।

কেমন আছেন?

তিনি বেশ ভাল আছেন। ডাক্তার ভালই বলেছেন। প্ল্যানটা খোলার শব্দ পেলাম। কিছু পরে আইকেন লাইনে এলেন।