১০. একটা গোপন ভয়

১০.

আজ সকালটা আমার কি যে ভাল লাগছিল বলার নয়। বারবারই অবশ্য মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিল মনের মধ্যে একটা গোপন ভয়। আমি বিনা দ্বিধায় এখন মার্গারেটকে নিয়ে যেতে পারি কারণ কোনো আপত্তি নেই হ্যারিয়েটের। চারদিক রোদ ঝলমল করছে এবং একটি বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট উঠেছে বোম্বের এই এলাকায়। মার্গারেটকে নিয়ে একটু বাইরে বেরোবার প্রয়োজন আছে। আমি সোজা হ্যারিয়েটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম এবং তখন ও মৃদু হাসলো। ওর শরীর ঢাকা একটি সবুজ রঙ-এর গাউনে। কি ভাবছিলে, ও বলে উঠল।

ছ্যাৎ করে উঠলো আমার ভেতরটা। আমি কোনো রকম অস্বাভাবিক ব্যবহার করে ফেলছি না তো আমার ভেতরকার পরিকল্পনা গোপন রাখতে গিয়ে। সব আশা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে যদি জানতে পারে। তোমার কথা ভাবছিলাম, আমি মৃদু হেসে বললাম।

সেটা আমার সৌভাগ্য বলতে হবে, এই বলে ও চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে হেসে উঠলো। চুমুক দিলাম আমি চায়ের কাপে। সবুজের সমারোহ সারা বাগান জুড়ে এবং আমি তাকিয়ে ছিলাম সেইদিকে। মাঝে মাঝেই একটা মুখ দোতলার জানলার দিকে দেখা যাচ্ছিল এবং আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম যে দোতলার জানলা দিয়ে উঁকি মারছে মার্গারেট। ইদানিং আমি একেবারেই বুঝতে পারছি না মার্গারেটের আচার আচরণ। কোনো কোনো সময় কথার খৈ ফোটে মুখে এবং ভীষণ ছটফটে, উজ্জ্বল এবং ভোলামেলা হয়ে পড়ে, কোনো সময় আবার কথা বলতে চায় না একেবারেই। যদি কোনো কথা পাঁচবার বলি তারপর একবার উত্তর দেয়। আমি কোনো সময়েই আজকাল আর ওকে ঠিকমত বুঝতে পারিনা। তাই ও যেন ক্রমশঃ রহস্যময়ী হয়ে উঠছে আমার কাছে। আমার পক্ষে কিছুতেই অস্বীকার করা সম্ভব নয় যে এসব স্বত্ত্বেও ওর প্রতি আকর্ষণ আমার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। উন্মাদ আমি মার্গারেটের জন্য। এক সুতোয় গাথা হয়ে গেছে আমার জীবনের সঙ্গে ওর জীবনটা। আমি মার্গারেটকে চাই তা যেকোনো মূল্য দিয়ে। পৃথিবীর অন্য কিছুতেই আমার কোনো উৎসাহ নেই বিন্দুমাত্র। তাই পৃথিবী প্রেমের জন্য এটাই আমি বিশ্বাস করি। মার্গারেটের জন্য একান্তভাবেই প্রেম আমার কাম্য। আমি ভেতর ভেতর অস্থির হয়ে পড়ছিলাম, জানলা দিয়ে মার্গারেট আমার দিকে যতবার তাকাচ্ছিল। এটা আমি একেবারেই চাই না; হ্যারিয়েট এই মুহূর্তে আমার ঘনিষ্ঠ হোক কিংবা আমার একটা হাত ধরুক।

মুখোমুখি বসেছিল একবার হ্যারিয়েট। তুমি আমাদের সঙ্গে চলো না দিল্লীতে হ্যারিয়েট, আমার বিন্দুমাত্র থাকতে ইচ্ছা করে না তোমাকে ছেড়ে।

আমি রীতিমতো আতঙ্কিত যদিও একথা বলে ফেললাম। তাহলে তো আবার বিপদ, ও যদি যেতে চায়। হ্যারিয়েট বলল, তুমি আমাকে ক্ষমা কর পিটার। কারণ আমার পক্ষে যাওয়া একেবারে সম্ভব নয়।

এর মানে অনেক কিছু হতে পারে, আমি আমার মুখের অভিব্যক্তিকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে গেলাম। তুমি কি পিটার রাগ করলে, হ্যারিয়েট বলে উঠল আমার একটা হাত ধরে। আমি দোতলার জানলার দিকে তাকালাম এবং সেখানে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম কারণ সেখানে মার্গারেট নেই। আমি বললাম কোনোরকমে, কাজ ক্ষতি করে তোমার গিয়ে কাজ নেই, এতে হ্যারিয়েট আমি রাগ করব কেন। চিরকালের জন্য আমি তো আর চলে যাচ্ছি না হারিয়েট। কে জানে হ্যারিয়েট কি ভাবলো। তাই সে কোনো উত্তর দিল না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো তার বদলে। সামনের খবরের কাগজের দিকে হাত বাড়ালাম হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে যাবার জন্য। কিছুটা পড়ে রেখে দিয়েছি অবশ্য আগে। অন্ততঃ আমাকে এখন খবরের কাগজটা পড়ে যেতে হবে। হ্যারিয়েট যতক্ষণ এখানে থাকবে। তোমার শরীরটা এখন ভালো তো, আমি জিজ্ঞেস করলাম হ্যারিয়েটকে।

আমার শরীর এখন দারুন ভালো হেসে জবাব দিল হ্যারিয়েট।

আমি খুশী তুমি ভাল থাকলেই।

আবার বললাম একটু থেমে, আমার চিন্তা তোমার উপরেই থাকবে যদিও কোথাও না গিয়ে থাকি।

হ্যারিয়েট বলে উঠল, তোমাকে কিছু ভাবতে হবে না এই নিয়ে। ঠিকঠাক হয়ে বেরোতে হবে কারণ আমার স্কুলে বেরোবার সময় হয়ে যাচ্ছে।

মার্গারেটকে নিয়ে আমি কিন্তু একটু বেরোব। আমি তখন ওকে বলে উঠলাম।

 ও জিজ্ঞেস করলো, কিন্তু কোথায় যাবে এখন তোমরা?

 কিছু কেনাকাটার ব্যাপার আছে, আমি জবাব দিলাম।

আচ্ছা, হ্যারিয়েট চলে গেল এই কথা বলে। মার্গারেট এদিকেই তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে, ঠিক সেই মুহূর্তেই আমি দেখতে পেলাম।

মার্গারেটকে নিয়ে আমি মার্কেটে বেরোলাম ঠিক এগারোটা নাগাদ এবং তখন ওর পরনে ছিল গোলাপী স্কার্ট। ওর এই ফর্সা নিটোল গঠনে এই ধরনের পোষাক খুবই মানিয়েছিল। আর চোখ ঘোরাতে পারছিলাম না আমি ওর দিক থেকে। একটা ট্যাক্সি নিলাম যদিও আমাদের গন্তব্যস্থল সেখান থেকে খুব একটা দূরে নয়। একটা রহস্য ওর চোখ দুটোয় রয়েছে। আমি একটা হাত রাখলাম ওর পিঠে, গাড়ির মধ্যেই। আমি রীতিমতো অস্থির হয়ে উঠলাম, যখন মার্গারেট আমার কাছে একটু এগিয়ে এল। তখন এতোখানি ঘনিষ্ঠতার কারণে তার খেয়াল ছিল না যে ট্যাক্সিতে একজন ড্রাইভার রয়েছে।

মার্গারেটের নরম আঙুরের মত ঠোঁটে একটা চুমু খেলাম আমি। আমার পাশে বসে আমার বহু দিনের আকাঙিক্ষত স্বপ্নের নায়িকা আর তার কোমল অঙ্গের উত্তাপ আমি নিচ্ছি প্রাণভরে। আমার উরুর উপর ওর হাতটা রাখলো মার্গারেট। বার বার কেঁপে উঠছিল আমার সারা শরীর। আমি একটু একটু করে তলিয়ে যাচ্ছিলাম কোনো এক অতল গহ্বরে। ভীষণভাবে টের পাচ্ছিলাম একটা নারীর স্পর্শ–সুখ কিভাবে পাগল করে দিতে পারে। তার কি একটা মনে হতে একটু সরে বসলো মার্গারেট হঠাৎ, একটু যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি। ও যদি রেগে যায় তাই বলতে পারছিলাম না কিছু মুখ ফুটে। আমি দুচোখে অন্ধকার দেখবো যদি ও অভিমান করে এবং বাঁচবো না যদি ও কোনো কারণে আমার ওপর রেগে যায়।

মায়ের অসুখটা ঠিক কি রকম, হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করল মার্গারেট।

আমি বললাম, একেবারে মানসিক তোমার মায়ের অসুখটা।

মার্গারেট জিজ্ঞেস করল, মন খারাপের রোগ কি?

আমার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল ও যেন একজন কৌতূহলীবালিকা। আর নেই সেই রহস্যময়ী

নারী। হ্যাঁ, তুমি ঠিক বলেছ, আমি জবাব দিলাম।

পাগল হয়ে যাবে কি মা?

আমি এবার ওর দিকে তাকালাম ওর প্রশ্ন শুনে। বললাম, তোমার কেন মনে এল এরকম কথা হঠাৎ করে?

মায়ের মাঝে মাঝেই তো এইরকম হচ্ছে তাই ভাবলাম, যদি আবার হলে আর না সারে, সেই কারণেই আমি তোমাকে এ কথা বললাম।

মার্গারেট ম্লান মুখে বলল, মায়ের কিছু হলে আমি পাগল হয়ে যাব, মা নেই একথা ভাবলেই আমার গায়ে কাঁটা দেয়।

আমি ওর কপালে হাত রেখে বললাম, না না এতে তোমার ভাবনার কিছু নেই।

আচ্ছা মা তোমাকে খুব ভালবাসে না মার্গারেট আবার স্বাভাবিক ভাবেই বলে উঠল।

আমি জবাব দিলাম, ভালবাসে তবে তোমার মত ভালবাসে না।

এবার ও একটা কথা বলল যা খুবই অদ্ভুত শোনাল, তুমি তো বিয়ে করতে পারো মাকে।

ও বলছে কি, তবে ও আমার এবং ওর মায়ের সম্পর্কটা জেনে গেছে, সেই কারণেই আমার বুকটা ধড়াস করে উঠল।

আমি বললাম, এসব যা তা কথা বলো না, আমি তোমাকেই আসলে চাই।

 মার্গারেট কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, আমি একটা ডায়েরী লিখছি।

 তাই নাকি খুব ভাল কথা, জয়েরীটা আমাকে দেখাবে তো।

ও ঝাঁঝিয়ে বলে উঠল, না আমি দেখাবো না তো। তোমাকে জানাবো না তো ডায়েরীতে আমার কত গোপন কথা লেখা আছে।

আমার কথা লিখেছো নাকি, ঠিক আছে দেখাতে হবে না।

মার্গারেট হেসে বলল, হ্যাঁ, তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে আমার জীবনে যা কিছু ঘটেছে সব কিছুই লিখে রেখেছি আমি।

আমি বললাম, আর রক্ষা থাকবে না। সর্বনাশ, এটা যদি তোমার মায়ের হাতে গিয়ে পড়ে।

ও কিছু বলতে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়িটা থেমে গেল কারণ আমরা পৌঁছে গেছি।

আমাদের কেনাকাটা করতে সময় লাগলো প্রায় ঘন্টা খানেক। আমরা বসলাম কাছাকাছি একটা পার্কে গিয়ে, কারণ আমাদের হাতে এখনও অনেক সময়। গাছপালা দিয়ে ঘেরা জায়গাটা। এক দম্পতি ঘনিষ্ঠভাবে বসেছিল দূরে। আমরা দুজনে বসে আছি পাশাপাশি এবং সেই সময় আমি মৃদু হাসলাম মার্গারেটের দিকে তাকিয়ে। বললাম, এরপর আমরা অনেক দূর চলে যাব, আমাদের হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন আছে।

মাগরেট হেসে আমার উরুতে ওর একটা হাত রাখল। ওকে কাছে টেনে নিয়ে চুমু খেলাম। একটু আগে আমরা খেয়ে এসেছি রেস্তোরাঁয়, তাই মুখে সেই রেস্তোরাঁর গন্ধ পেলাম। তুমি অনেকক্ষণ পরে আমাকে চুমু খেলে–এই কথা বলে ও আমার দিকে একটু সরে এল।

সামনের গাছে একটি পাখি বসেছে, অনেক রকম রঙ ছিল পাখিটির গায়ে। আমি এরকম পাখি আগে কখনো দেখিনি। এ পাখির বাস সম্ভবত ভারতবর্ষেই। আমার দিকে ঘাড় উঁচিয়ে তাকালো একবার এই অদ্ভুত পাখিটি। মার্গারেটকে ঐ পাখিটা দেখিয়ে বললাম, ঐ পাখিটার নাম– কি মিমি?

মার্গারেট পাখিটাকে দেখে বলল, আমি বলতে পারবনা পাখিটার নাম, কারণ এই পাখিটাকে আমি আগে কখনো দেখিনি এবং চিনিওনা।

আনন্দে হাত বাড়িয়ে দিল মার্গারেট। হাত বাড়াবার সঙ্গে সঙ্গে পাখিটা উড়ে গেল। আমি তাই বললাম মনে মনে, একটা অচেনা পাখি তুমি মিমি, আমার কাছে, তুমি আমার কাছে এক রহস্যময়ী নারী, আমি তোমাকে চিনতেও পারি না এবং বুঝতেও পারি না। আমার তোমাকে খুব অদ্ভুত লাগে যখন তুমি পবিত্র সরল বালিকার মত হয়ে যাও। এটা মাঝে মাঝেই প্রকাশিত হয়ে পড়ে যে তোমার মধ্যে অদ্ভুত এক নারী লুকিয়ে আছে। যেমন, ঠিক এই সময়, আমি বুঝতে পারছি যে আমার জীবন তোমাকে ছাড়া অচল হয়ে যাবে। কোনোদিন ছাড়তে পারবো না আমি তোমাকে। আমি নিজেকে একেবারে হারিয়ে ফেলি তোমার দুচোখের দিকে তাকালে। আমাকে উন্মাদ করে দেয় তোমার উন্নত বক্ষ। দুরন্ত জোয়ার খেলা করে আমার রক্তে। তোমাকে নিয়ে নরকে যেতেও রাজী আমি। আরও একটি চুমু খেলাম আমি মার্গারেটকে। তারপর বললাম, আমার কাছে তুমি একটি দারুণ ছোট্ট সুন্দর পাখি।

মার্গারেট খিল খিল করে হেসে বলল, আমি তোমার নাগালের বাইরে তাহলে এমন ভাবে উড়ে পালাবো যে ধরতেই পারবে না।

আমি ওকে জড়িয়ে ধরে গালে আলতো করে একটা টোকা মারলাম, আমি তোমাকে । কিছুতেই উড়ে যেতে দেব না, বুঝেছ, তোমায় আমি খাঁচায় রেখে দেব।

বাগানে বসেছিলাম ঘণ্টাখানেক এবং এরপর ওকে আমি একটা চুমু খেলাম উঠবার সময়। কমবয়সী এক যুবক বাগান থেকে বেরোবার সময় মার্গারেটের দিকে এমন লোভী চোখে তাকিয়েছিল যেটা বলার কথা নয়। ওর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় কসাই বলে মনে হল। তাকালাম একবার মার্গারেটের দিকে। যুবকটিকে মোটেই দোষ দেওয়া যায় না। কারণ মার্গারেট ওই যুবকটির দিকে তাকিয়েছিল। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম যে ও এরকম ছলাকলা কোথায় শিখল। লাঞ্চের খাবার তৈরী হয়ে গেছে যখন বাড়ি ফিরে এলাম আমরা। আমাদের জন্য তখন অপেক্ষা করছিল পরিচারিককা মহিলাটি।

.

১১.

 ভারতের রাজধানী খোদ দিল্লী এসে এরপর আমরা পৌঁছলাম। এত সহজে যে ব্যাপারটা ঘটে যাবে তা আমরা ভাবিইনি। দূরের কথা তো সন্দেহ করা। আমাদের তুলে দিতে স্টেশনে আমাদের সঙ্গে এসেছিল হ্যারিয়েট। ওর চোখ দুটো ছলছল করছিল আমাদের বিদায় দেবার সময়। গলা দিয়ে শব্দ বেরোচ্ছিল না। ওর অভিভাবককে ফেলে মার্গারেট এই প্রথম দূরে চলে যাচ্ছে। হারিয়েটকে জড়িয়ে ধরে মার্গারেট কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, তুমিও চলো না মা আমাদের সঙ্গে।

হ্যারিয়েট জবাব দিয়েছিল মাথায় হাত বুলিয়ে, আমার স্কুল আছে মিমি, কটা দিন তো মাত্র, তুমি ঘুরে এসো। কতো কি দেখবে ওখানে। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে, ফিরে বলেছিল ফিরে এসো কিন্তু দশদিনের মাথায়।

চুমু খেয়ে আমি ওকে বলেছিলাম, হ্যারিয়েট চিন্তা করো না, ঠিক সময় ফিরব আমি।

আমি আর মার্গারেট উঠে বসেছিলাম ট্রেনের কামরায়। এক মারাঠি দম্পতি বসে ছিল সামনের সীটে এবং জানালার পাশে বসেছিল মার্গারেট। হ্যারিয়েটের হাত নাড়া এবং দুচোখে জল আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম যতক্ষণ না ট্রেনটা মিলিয়ে গেল। মার্গারেটও সমানে হাত নেড়ে যাচ্ছিল এবং অন্ততঃ ঘণ্টাখানেক কথা বলেনি আমার সঙ্গে। চুপ করে বসে রইলাম অগত্যা আমি। একবার ওর পিঠে হাত দিতে গেছিলাম কিন্তু ও সরিয়ে দিয়ে বিষণ্ণ মুখে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসেছিল। আমার বিন্দুমাত্র বোধগম্য হচ্ছিল না, আমার সামনে সেই মারাঠী দম্পতি নিজের ভাষায় কি বলছিল।

শেষ পর্যন্ত আমি মননিবেশ করলাম বোম্বের স্টল থেকে কেনা একটি ডিটেকটিভ বইয়ের দিকে। বাঁদিকে আমরা বসেছিলাম এবং বেশ কয়েকজন লোক ডানদিকে বসে তাস খেলছিল। তারা প্রত্যেকেই বয়স্ক এবং তারা প্রত্যেকেই চাকুরীজীবী বলে মনে হল। এরা নিজেদের মধ্যে ইংরাজী ভাষায় কথা বলছিল। তাই আমার খুব অবাক লাগছিল ভারতীয়রা কি করে বিদেশী ভাষায় কথা বলছে এই কথা ভেবে।

দিন দুয়েকের মত লেগে গেল পৌঁছতে আমাদের এবং এর মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে মার্গারেট। আমার সঙ্গে হেসে কথা বলছে এবং হাততালি দিয়ে উঠল ভাঙা মসজিদটা দেখে। তারপর আমার কাঁধটা ধরে নিয়ে গেল জানলার কাছে এবং বলল, কি সুন্দর দ্যাখো। ট্রেন দ্রুত চলেছে বলে সেটি অদৃশ্য হয়ে গেল তাড়াতাড়ি, আমার চোখের সামনে থেকে। কোথায় তোমার সুন্দর জিনিস, আমি বলে উঠলাম তখন।

মার্গারেট আমার পিঠে একটা কিল বসালো এবং তারপর বললো, তাড়াতাড়ি আসতে হয়তো, ভীষণ কুঁড়ে তো তুমি।

আমি হেসে উঠে বললাম, তাড়াতাড়ি কতো আসব। আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল সামনে বসা সেই মারাঠী দম্পতি। তাদের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর জানা গেল সে ভদ্রলোক অর্থমন্ত্রকের কেরানী এবং তিনি এসেছিলেন বোম্বেতে এক আত্মীয়ের বিবাহ উপলক্ষে। প্লাটফর্ম স্পর্শ করলো যখন ট্রেন তখন সন্ধ্যা ছটা বেজেছে। তখন কিন্তু রোদ ঝলমল করছে চারিদিক। লালচে আভা যমুনার জলে। লম্বা হয়ে এগিয়ে আছে লাল কেল্লার প্রাচীর। সম্রাটের বিশাল দরবার, দেওয়ান ই–খাস, মুঘল সম্রাটের ঐতিহ্যময় নিদর্শন। তার দিকে তাকিয়েছিল মার্গারেট অবাক হয়ে। একটি মাঝারি ধরনের হোটেলে উঠলাম আমরা দিল্লীতে পৌঁছে। কাউন্টারে জমা দিলাম আমাদের জিনিষপত্র। বেশ বড়োসড়ো আমাদের কামরাটা। ভালই লাগলো মার্গারেটের হোটেলের পরিবেশটা। আমাদের নাম লেখা হল হোটলের রেজিস্টারে। বেশ সহৃদয় মনে হল কাউন্টারের ভদ্রলোককে। সে রোগা, তার চোখে চশমা এবং মুখে মৃদু হাসি। আমাদের ঘরটা চিনিয়ে দিল হোটেলের একজন বয়।

আমি বলে উঠলাম, বাঃ, ঘর তত বেশ চমৎকার। খুব ভাল লেগেছে ঘরটা তার, আমি মার্গারেটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। বেশ বড়োসড়ো, ডবল বেড খাট, ড্রেসিং টেবিল মাঝারী উচ্চতার এবং খানদুয়েক চেয়ার। একবার আয়নায় নিজেকে দেখে নিল মার্গারেট। আমি দরজা ভেজিয়ে দিয়েছি বয়টা চলে যেতেই, এরপর জড়িয়ে ধরলাম মার্গারেটকে পেছন থেকে।

নিজেকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে মার্গারেট বলে উঠল, তুমি খুব বাজে, এখন এসব একদম নয়, নইলে আমি পালিয়ে যাব এখান থেকে।

মেয়েটি কি বলে, আমি ওর অস্বাভাবিক ব্যবহারে শিউরে উঠলাম, আমি বুঝতে পারছি না একেবারে কিছুই। রহস্যময়ী মনে হচ্ছিল ওকে আমার সেই মুহূর্তে রীতিমতো। আমি সব কিছু ভুলে যাই, যখন ও মাঝে মাঝে আমার দিকে প্রেমের চোখে তাকায়। আমি আর আমার মধ্যে থাকি না ও যখন আমাকে আদর করে। বেশ খানিকটা ঘাবড়ে গেলাম আমি এখন ওর বিরক্তভাব দেখে। কিছুটা দুঃখ পেয়ে বললাম, মার্গারেট, ক্ষমা করো আমাকে, সত্যিই আমি বুঝতে পারিনি।

খাটের উপর সোজা গিয়ে শুয়ে পড়ল মার্গারেট। একটা হাসিখুশি ভাব ছিল যেন ওর চোখে মুখে। বলে উঠল একটা হাই তুলে, খুব সুন্দর হোটেলটা, এই বলে ও উঠে পড়ল এবং লাগোয়া বাথরুমের ভেতর ঢুকে পড়ল ডানপাশের একটা দরজা খুলে। কিছুক্ষণ পর আবার বেরিয়ে এসে বলল, সত্যি ভেতরটা খুবই সুন্দর।

এরপর বাচ্চা মেয়ের মত আদুরে ভঙ্গিমায় সোজা আমার দিকে এগিয়ে এল এবং জড়িয়ে ধরে বলল, রাগ করেছে কি তুমি?

আমি ম্লান হাসি হেসে ওর মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠলাম, তোমাকে আমি ভালবাসি মিমি, তোমার ওপর রাগ করবো কেন আমি; আমি তোমায় ভালবাসি।

সে হাত বুলোতে লাগল আমার পেটে এবং বলতে লাগল, তুমি কিছু মনে করো না, আসলে অনেকদিন আগে একটা ঘটনা ঘটেছিল, সেই কারণেই আমি মাঝে মাঝে ওরকম হয়ে যাই।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ঘটনাটা কি।

 বিছানায় বসল এরপর ও আমাকে ছেড়ে দিয়ে এবং বলতে লাগল, তুমি আসোনি তখন, একটি বাড়িতে একটি ছেলে থাকত যা ছিল আমার বাড়ি থেকে সামান্য দুরে, এখানকারই ছেলে, আমার ওর সঙ্গে কিছুটা ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল কথা বলতে বলতে। হঠাৎ তারপর একদিন

এই বলেই হঠাৎ মার্গারেট গম্ভীর হয়ে গেল। তারপর বলল, একদিন দুপুরবেলা তার বাড়িতে সে আমাকে হঠাৎ করে ডেকে নিয়ে গেল, ওর মা, বোন কেউ ছিল না, এবং বাড়িতেও কেউ ছিলনা। আমার ভাব ছিল ওর বোনের সঙ্গেই বেশী। ওদের বাড়িতে একদিন গেলাম।

মার্গারেট সামান্য থেমে আবার বলল, দরজা বন্ধ করে দিল ও ঘরে ঢুকে এবং আমি ভয় পেয়ে গেলাম ওর দুচোখ দেখে। আমি দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম ও আমাকে ধরবার আগেই এবং.ও ওর প্রচণ্ড শক্তিতে আমাকে বিছানায় টেনে শুইয়ে দিয়ে তারপর চুমু খেতে লাগল আমাকে উন্মাদের মত। সজোরে একটি থাপ্পড় মারল আমাকে। যাতে আমি চুপ করে থাকি, কারণ আমি খুব ছটফট করছিলাম। ওর বাড়ি থেকে আমি যখন বেরিয়ে এলাম তখন ও আমাকে থামিয়ে বলল, আমি তোমায় শেষ করে ফেলব তুমি যদি কাউকে বল ব্যাপারটা। সেই থেকে আমি এই বলে চুপ করে গেল মার্গারেট।

ওর দিকে আমি এগিয়ে গিয়ে ওর মাথায় হাত রাখলাম হেসে বললাম, মার্গারেট আমি ভালবাসি তোমায়, তোমার ভালোর জন্য সব কিছু আমি করতে পারি।

মা আমার জন্য খুব ভাবছে না।

এরপর অন্য প্রসঙ্গে ফিরে গেল মার্গারেট।

গম্ভীর হয়ে আমি জবাব দিলাম, হ্যাঁ। মার কথা ওকে ভুলিয়ে দিতে হবে তা যে করেই হোক। বললাম, চিরকাল তো আর তুমি থাকবে না মায়ের কাছে। আবার একটু থেমে হেসে। বললাম, তোমার ভালমন্দের সবকিছু দায়িত্ব এখন আমার হাতে এবং আমিই এখন তোমার একমাত্র অভিভাবক।

খিলখিল করে মার্গারেট হেসে বলল, এখন থেকে তোমার উপর তো আমার শরীরেরও দায়িত্ব এবং আজ রাতে নিশ্চয় আমরা একসঙ্গে শোব।

হোটেলের একজন বয় এসে বাক্সগুলো ইতিমধ্যে দিয়ে গেল এবং মার্গারেট বলে উঠল, আমার খুব খিদেও পেয়েছে, তার আগে অবশ্য স্নান করবো।

বাক্স খুলে একটা হাল্কা নীল রঙের গাউন বের করে পরে নিল ও। আমি যে আছি সে ব্যাপারে কোনো খেয়াল না করেই ওর পরনের স্কার্টটা খুলে ফেলল ও। একটা ব্রা আর প্যান্টি শুধু পরনে, আমি ওর দিকে তাকাতে গাউনটা পরবার সময় ও আমার শরীরের দিকে তাকিয়ে কেবল মৃদু হাসল। মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমি পাগল হয়ে যাই ওর সৌন্দর্যে। এমন কী আমি হাজার হাজার মাইল হাঁটতেও পারি ওর সঙ্গে। আমার এই যে উন্মত্ততা ওকে পাবার জন্য এটা কি সত্যিই প্রেম, না কি এটা অন্য কিছু! সত্যিকারের ভালবাসা কাকে বলে, এটা যদি ভালবাসা না হয়।

মার্গারেট স্নানের ঘরে ঢুকে গেল তার কিছু জিনিষ পত্র নিয়ে। চুপচাপ শুয়ে পড়লাম আমি বিছানায় গিয়ে। বেশ ছিমছাম এবং বড়োসড়ো ঘরটা। এতে খুব ভালও লাগছে আমার। আমার আনন্দ রয়েছে সারা দেহটা জুড়ে এবং মার্গারেটকে নিয়ে আমি কাটিয়ে দিতে চাই আমার সারাটা জীবন। আমি এই প্রথম জানলাম যে এরকম একটি শোচনীয় ঘটনা ঘটেছিল মার্গারেটের জীবনে। কোনদিন ও কাউকে বলেনি এর আগে। আমি বুজে ছিলাম চোখ দুটো এবং চোখ মেলে তাকালাম এরপর চটির শব্দে। সবে মাত্র স্নান সেরে মার্গারেট ঘরে ঢুকেছে এবং সেই মুহূর্তে খুবই অদ্ভুত লাগছে ওকে। একটা খারাপ খবর আছে, মার্গরেট ঘরে ঢুকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল।

আমি চমকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন কী? খানিকটা গম্ভীর হয়ে গেল মার্গারেট। তারপর জানাল, ঘরের বই-এর তাকের ভিতর রয়ে গেছে আমার ডায়েরীটা, মনে পড়ল ঠিক এই মাত্র আমার স্নান করবার সময়।

আমি চমকে বললাম, তাহলে এখন যদি ওটা তোমার মায়ের হাতে পড়ে, কি হবে তাহলে?

 ভাবছিতো সেই কথাই।

মার্গারেট গভীর এবং আমিও গম্ভীর হয়ে উঠে বসলাম। হ্যারিয়েট যে মানসিক বিকারগ্রস্ত ভেসে উঠল আমার মনের মধ্যে।

.

১২.

 হোটেলের সব লোকেরই খাওয়া দাওয়া শেষ হয় রাত তখন বারোটায়। সিগারেট টানছিলাম এতোক্ষণ বারান্দায় বসে। আমি সিগারেট খুব একটা বেশী খাই না, আমার নেশা বলতে যা বোঝায় নেই, এক প্যাকেট বড়ো জোর সারা দিনে রাতে। তীব্র অস্থিরতা ঠিক এই মুহূর্তে আমার মনের ভেতর। আমাদের ঘনিষ্ঠ মেলামেশার কথা মার্গারেটের কথা অনুযায়ী তার ডায়েরীতে লেখা আছে। সেই ডায়েরীতে লিখে রেখেছে আমাদের নিখুঁত যৌন মিলনের কথা।

আমি এখন থেকেই অনুমান করছি, এই ডায়েরী যদি হ্যারিয়েটর হাতে পড়ে তাহলে আমাদের কি অবস্থা হবে। আমি আর কোনদিন ওখানে যাচ্ছি না, তেমন কিছু হবে না অবশ্য আমাদের এ নিয়ে। এখানে কিছু দিন কাটিয়ে কলকাতায় চলে যাব আমি মার্গারেটকে নিয়ে। ভারতের সবচেয়ে ব্যস্ত মহানগর কলকাতা। এই শহরটা খুব প্রাণোচ্ছল সারা ভারতের মধ্যেই। আমার প্রিয়তমা মার্গারেটকে নিয়ে অবশ্যই আমাকে ভারতের এই শ্রেষ্ঠ মহানগর দেখতে হবে।

ঘরের মধ্যে এলাম, আর বসে থাকতে না পেরে। মার্গারেট ঘুমোচ্ছে এবং ঘরে জ্বলছে একটি নীলচে আলো। আমি ওর মুখটা ভালভাবে দেখতে পাচ্ছিনা যেহেতু ও ডানদিকে পাশ ফিরে আছে। এক চিলতে আকাশ দেখা যাচ্ছিল ঘরের ভেতরের জানলা দিয়ে। মনে হল সামান্য মেঘলা। এক গ্লাস জল, খেলাম আমি ঢক ঢক্‌ করে। আবার গ্লাস টেবিলের উপর রেখে দিলাম। একটা দিক দেখা যাচ্ছিল মার্গারেটের মুখের। আমি ওর পাশে বসলাম এবং ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা। হচ্ছিল ওকে আলতো করে। চুপচাপ বসে রইলাম খানিকক্ষণ, লোভ সংযত করে। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না মার্গারেটকে। একটা হাত ওর গায়ে দিলেই কী চীৎকার করে রেগেমেগে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে এক্ষুনি, বিশ্রী ব্যাপার হবে সেটা! আলোটা নিভিয়ে দেব একবার ভাবলাম। তারপর ভাবলাম, থাক জ্বলছে যখন জ্বলুক। একটা সিগারেট ধরালাম এবং ভেতরে তখন লক্ষ্য করলাম একটা ছটফটানি। মার্গারেট চিৎ হয়ে শুল এর খানিকক্ষণ পরে। মার্গারেট খানিকক্ষণ পরে পাশ ফিরে শুলো। তাকিয়ে বলল আলতো করে, আমার সহ্য হচ্ছে না একেবারেই সিগারেটের ধোয়া। এই কথা বলে সে আবার চোখ বুজে ফেলল, মার্গারেট তেমন একটা ঘুমোয়নি এতক্ষণে সেটাই বোঝা গেল।

ওর স্বচ্ছ গাউনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, দেখতে পাচ্ছি ওর স্তন দুটো পরিষ্কার ভাবে। বাদামী আভা এবং স্তনবৃন্ত দেখা যাচ্ছিল ওর স্তনের চারপাশ দিয়ে। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম ওর সুন্দর নাভি, যদিও অবশ্য পরা ছিল প্যান্টিটা। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ওর নিটোল উরু দুটো। দাপাদাপি আরম্ভ করে দিয়েছে আমার মাথার মধ্যে পোকা গুলো। সামান্য কাঁপছিল বুঝি আমার দেহটা। ওকে ছুঁতে পারছি না আমি যদিও ও আমার খুব কাছে রয়েছে। আমার মুখে বারবার আঘাত করছে ওর নিশ্বাসটা। উত্তেজিত হয়ে পড়ছিলাম আমি ক্রমশঃ। থাকতে পারলাম না আমি আর। ওর পাশে শুয়ে পড়ে আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। কয়েক মিনিট মাত্র। মৃদুভাবে ঠেলে সরিয়ে দিল ও আমাকে। অস্ফুট একটা শব্দ বেরোল মুখ দিয়ে উঃ বলে।

সরে গেলাম কিছুটা আমি। ও রেগে যায়নি, এই একটা ব্যাপারে আশা হল আমার। ও উচ্চারণ করেছে শব্দটা খুবই আদুরে এবং প্রশ্রয় দেবার ভঙ্গীতে। ওর দিকে তাকিয়ে শুয়ে রইলাম আমি। কিছুক্ষণ কেটেছে মাত্র। আমাকে দুহাত দিয়ে কাছে টেনে নিল ওর চোখ বোজা অবস্থাতেই। সত্যিই আমার পক্ষে খুবই দুঃসাধ্য ওকে বোঝা। আমার জীবনে আগে এরকম রহস্যময়ী নারী আসেনি। অদ্ভুত রহস্যময় করে তুলেছে ঈশ্বর ওর মনটা। আমার পক্ষে একেবারে দুঃসাধ্য ওর মনের সেই অতল গভীরের নাগাল পাওয়া।

একটি ক্ষীণ হাসির রেখা দেখা গেল ঠোঁটে। আমার দিকে একবার তাকালো পিট পিট করে। কাটলো এই ভাবে কিছুক্ষণ। হঠাৎ তারপর বলল, তোমার এই ব্যাপারে উৎসাহে কি ভাটা পড়ে গেল।

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম, না তো।

 বোকার মত কানে শোনালো কথাটা। বলে উঠল মার্গারেট, এসো, চুপচাপ বসে রয়েছ কেন তুমি?

ওর চুলে হাত বুলোতে লাগলাম আমি এবার। ও কপালে, গালে, চিবুকে সর্বত্রই আলতো আলতো করে একটা একটা করে চুমু খেতে লাগল। ওর নিঃশ্বাস ক্রমশ ঘন হয়ে আসছে। আমি উন্মাদের মত ওকে চেপে ধরে চুমু খাচ্ছিলাম। আমি আর না পেরে, নরম সাদা বুকের উপর একটা হাত রাখলাম। খুলে দিলাম ওর গাউনটা এবং প্যান্টিটাও। একটা অস্ফুট শব্দ বার বার বেরিয়ে আসছিল ওর মুখের ভিতর দিয়ে। একবারে কিনারায় পৌঁছে গেছি আমরা দুজনে তখন সেই চিরন্তন স্বর্গীয় আনন্দের। একভাবে হয়ে আসছিল মাগরেটের কণ্ঠে একটা অস্পষ্ট গোঙ্গানির শব্দ। আমরা দুজনে আদিম পুরুষ এবং নারী এই মুহূর্তে, আমাদের এই দুইয়ের দেওয়া নেওয়ার মধ্যে কোনো ফাঁক নেই এবং কপটতা নেই। আমরা উজাড় করে ঢেলে দিচ্ছি একে অপরকে। আমি ভালভাবে উপলব্ধি করলাম যৌন মিলনে মানুষ সবচেয়ে বেশী আন্তরিক এই মর্মান্তিক সত্যটা। একটা আনন্দের হিল্লোল বয়ে গেল আমার সারা শরীর বেয়ে। আমরা দুজনেই ক্লান্ত শরীরে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলাম চরম সুখের একেবারে শীর্ষে উঠে। কে জানে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি দুজনে।

একবারে পরের দিনে আমার ঘুম ভাঙলো বেলা নটা নাগাদ। তখনও ঘুমোচ্ছিল মার্গারেট। সত্যিই ক্লান্ত বেচারী, একটু ঘুমোক। আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। হোটেলের বয় বারদুয়েক ইতিমধ্যে আমাদের জন্য চা নিয়ে এসে ফিরে গেছে। ভারতের রাজধানী দিল্লীশহরটাকে আমাদের দূর থেকে বেশ সুন্দর লাগছিল। কতো ভালবাসা এবং ষড়যন্ত্র সেই প্রাচীন কাল থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই দিল্লীর আকাশে বাতাসে। একটি করে মোটা উপন্যাস লেখা যেতে পারে প্রতি মুঘল সম্রাটের ইতিহাস নিয়ে। চায়ে চুমুক দিচ্ছিলাম বারান্দায় বসে। দুটো ফোলাফোলা চোখ নিয়ে মার্গারেট হঠাৎ আমার পাশে এসে বসল।

 জিজ্ঞেস করলাম, ঘুমিয়েছে তো ভালভাবে?

আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো একবার ও আমার প্রশ্নে। কিছু না বলে ও চায়ে চুমুক দিতে লাগলো নীরবে। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে, এবার জিজ্ঞেস করলো তুমি ঘুমিয়েছো তো?

আমি বললাম, আমার ঘুম মোটামুটি ভালই হয়েছে, আজ কুতুব মিনার দেখে আসি মার্গারেট চল।  

চল।

এরপর চা খেলাম, তারপর আমরা দুজনে খাবার দাবার খেয়ে নিলাম এবং তারপর তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আমার সঙ্গে একটাও কথা বলল না ও গাড়ীতে। আমি একবার, জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে মার্গারেট, কি ব্যাপার এতো চুপচাপ কেন?

কিছু হয়নি তো।

ও চুপচাপ বসে রইল, যেমন চুপচাপ বসেছিল। আমার পক্ষে ওকে বোঝা একেবারে দুঃসাধ্য আগেই বলেছি। হয়ত আজে বাজে কিছু বলে বসবে, এক্ষুনি জোর করে কিছু বলতে গেলে। ঘণ্টাখানেকেরও কম সময় লাগলো কুতুব মিনারে পৌঁছাতে। ওপরে উঠতে লাগলাম আমি, ঘোড়ানো সিঁড়ি বেয়ে। একটু নীচু নীচু ধরনের কংক্রীটের সিঁড়ি। একবারে উঁচুতে উঠতে দেওয়া হয় না। দুজনে আমরা এসে দাঁড়ালাম তার নীচের ধাপটায়। নারী পুরুষ ছিল ওখানে আরো জনাকয়েক। মার্গারেট নীচের দিকে তাকালো ওখান থেকে। হাতটা নাড়ল, তারপর একেবারে সরল বালিকার মত, ওরে বাবা, আমার ভীষণ ভয় করছে।

আমি হেসে ওর হাতটা ধরতেই ও সরিয়ে নিল ওর হাতটা। ঝাঁঝিয়ে বলল, তুমি কিন্তু আমাকে ছুঁয়ো না।

কি হল আবার।

বলতে লজ্জা হচ্ছে না কি হল।

আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না মার্গারেটের কথাবার্তার মাথামুণ্ড। কি হয় কে জানে ওর যে মাঝে মাঝে। মাথায় ওর সত্যি ছিট আছে কিনা, তাই মাঝে মাঝে ভাবি। হ্যারিয়েট তো প্রায়ই উন্মাদ হয়ে যায়, ওর মা অবশ্য হ্যারিয়েট নয়, পাগলামির লক্ষণ ছিল কি তার ওর বাবা মার মধ্যে। এই সমস্ত লক্ষণ হ্যারিয়েটের মধ্যে থাকার কারণ হল যে এসবের লক্ষণ.ওদের বংশে আছে। আমি রীতিমতো বিপদে পড়ে যাব মার্গারেটের মধ্যে যদি এই লক্ষণ দেখা যায়। কুতুবমিনারের সব কিছু দেখলো মার্গারেট ঘুরে ঘুরে।

ওকে একটি ছোট্ট বালিকার মত মনে হচ্ছিল যখন ও ঘুরে ঘুরে সব দেখছিল। কৌতূহল– যেন ওর সব কিছুতেই। পাশাপাশি বিরাজ করছে যেন ওর দুটো সত্তাই। ওর একটা রহস্যময়ী রূপ নিষ্ঠুর কামপ্রবণ নারী। ওর মধ্যে রয়েছে একটি সরল সাধাসিধে পবিত্র বালিকা বা কিশোরীর রূপ যার তীব্র কৌতূহল সব কিছুতেই। কি হলো বলবে তো? আমি জিজ্ঞেস করলাম মার্গারেটকে।

মার্গারেট জবাব দিল, তুমি ভীষণ ব্যাথা করে দিয়েছ আমার দুটো বুকেই। এখন ভীষণ ব্যথা।

হাসতে হাসতে বলল খানিকক্ষণ পর, তোমাকে একটি উন্মাদ ষাঁড় বলে মাঝে মাঝে আমার মনে হয়। আমার কথা তুমি চিন্তাও করো না যখন পাগল হয়ে যাও।

আমি কিছুটা আহত হয়ে বললাম, যাড় বলছ আমাকে তুমি! ছোটো ছোটো পুতুলের মত সবকিছু দেখাচ্ছে কুতুব মিনারের উপর থেকে ভূমিতে। আমার দিকে মার্গারেট এরপর তাকাল, তার মনমরা হাসি নেই। সে বলে উঠল, আমার সমস্ত শরীর ব্যথা হয়ে যায় তোমার ষাড়ের মত ক্ষ্যাপামিতে।

আমি উত্তর না দিয়ে দেখলাম, মার্গারেটের ঠিক পাশেই এক দম্পতি দাঁড়িয়ে রয়েছে। কাছের পুরুষটি তার স্ত্রীকে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে ধরেছে। তাদের সবেমাত্র বিয়ে হয়েছে বলে আমার মনে হল। আমি মার্গারেটকে দেখালাম ইশারায় এবং মার্গারেট হেসে জড়িয়ে ধরল আমার কোমরটা। কিছুক্ষণ এই ভাবে কাটার পর মার্গারেটের কাঁধে হাত রাখলাম। মার্গারেট এক সময় বলে উঠল, আমাকে বিয়ে করবে তুমি?

বিয়ে!

আমি ঠিক তৈরী ছিলাম না এই কথাটার জন্য। আমার ধারণা ছিল আমার সঙ্গে বয়সের ব্যবধান ওর অনেক, মার্গারেট হয়ত নাকচ করে দেবে আমি বিয়ের প্রস্তাব দিলে। কিন্তু এখন দেখছি মার্গারেট নিজেই কথটা তুলছে।

এটা ওর সাময়িক আবেগ বলে আমার মনে হল। মার্গারেট বলে উঠল, অবাক হয়ে উঠলে কেন বিয়ের কথা ওঠায়, তোমার কি এর মধ্যেই মিটে গেল আমার শরীরটার প্রয়োজন।

আমি তোমাকে ভালবাসি মার্গারেট, তুমি এসব কি কথা বলছ!

ও সজোরে হেসে উঠল আমার কথায়। এক কাজ কর, আমরা তাহলে দুজনে ঝাঁপ দিই বরঞ্চ এখান থেকে।

বুঝতে পারছি আমার সঙ্গে রসিকতা করছে মার্গারেট। আমি হতবাক হয়ে যাই মাঝে মাঝে ওর কথা শুনে। চুম্বকের মত মার্গারেট আমার কাছে। আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি না ওকে কোনোদিন ছেড়ে থাকব! আমি পাগল হয়ে যাব সম্ভবতঃ ভবিষ্যতে যদি ও কোনোদিন আমার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। এমন কী আমার মাথায় তখন খুনের নেশাও চেপে যেতে পারে।

চলো এখন নামি, তোমায় ঝাঁপ দিতে হবে না। কিছুক্ষণ থেমে বলল মার্গারেট।

আমরা দুজনে আবার নেমে এলাম দীর্ঘ সিঁড়ি বেয়ে। আমি তাজমহল দেখতে যাব এবার মার্গারেট বলল মাটিতে পা রেখে। নিশ্চয় আমরা কালই যাব।

সামনের দিকে তাকালাম মার্গারেট এবং আমি। ক্রমশঃ বেলা পড়ে আসছিল, বিকেলে সূর্যের লালচে আভা দেখা যাচ্ছে সারা আকাশ জুড়ে। গাড়িতে উঠার পর মার্গারেটের মুখে লালচে আভা এবং খুশী খুশী দেখাচ্ছিল ওকে। অনেকক্ষণ ধরে আমার আঙুল নিয়ে করতে লাগল নাড়াচাড়া। হোটেলের ঘরে গিয়ে অবলীলায় খুলে ফেলল মার্গারেট সমস্ত পোশাক।

ওর কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে, দুটো হাত দিয়ে পরম আবেগে জড়িয়ে ধরলাম ওর পাছাটা। আমার দিকে ঠোঁটে রহস্যময় হাসি এবং দুচোখে ঝিলিক নিয়ে মার্গারেট তাকিয়েছিল। নগ্ন একটি স্বর্গের দেবীর মত বলে ওকে আমার মনে হচ্ছিল। আমার ভেনাসের উপমাটাই সেই মুহূর্তে মনে পড়ল। তুমি আমার ভেনাস, আমি ফিস্ ফিস্ করে বললাম। এই কথা বলার পর তখন ও আমার মাথায় হাত রাখলো।

.

১৩.

 চারদিক ভাসছিল রোদে। সূর্য ঠিক তাজমহলের মাথার ওপর। তাজমহলের সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি এবং মার্গারেট। আমার মাথা শ্রদ্ধায় নিচু হয়ে আসছিল, সাদা রঙের এই বিরাট মহলের দিকে তাকিয়ে। ভারতে না এলে আমার কোনোদিনই চোখে পড়তোনা এতোবড়ো একটা বিস্ময়। মার্গারেট অবাক হয়ে তাজমহলের দিকে তাকিয়েছিল এবং সেই কারণে আমি সৌভাগ্যবান। আমরা দুজনে আস্তে আস্তে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে লাগলাম। একটা হাত আমার ধরেছিল মার্গারেট, আমার ওকে একটা সরল বালিকার মত মনে হচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে।

আচ্ছা মমতাজকে সম্রাট খুব ভালবাসতো তাই না? মার্গারেট আমাকে হঠাৎ জিজ্ঞাসা করল।

 হাঁ, আমি জবাব দিলাম।

 মার্গারেট আবার জিজ্ঞেস করল, অনেক বয়স ছিল না সম্রাটের?

আমি উত্তর দিলাম হেসে, তাতো বলতে পারবো না।

মমতাজ কি আমার বয়েসী ছিল? মার্গারেট আবার হেসে বললো।

আমি কোনো জবাব না দিয়ে ওর দিকে তাকালাম। নীরবে কাটলো বেশ খানিকক্ষণ। একে বারে উপরে পৌঁছে গেছি আমরা। এক মহান প্রেমের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে যুগ যুগান্তর ধরে শ্বেত পাথরে এই অপূর্ব প্রাসাদ। মার্গারেটকে দেখালাম সম্রাট এবং তার প্রিয়তমা স্ত্রীর সমাধি। মার্গারেট সব কিছু দেখছিল অবাক হয়ে। কিছুক্ষণ পরে আমরা ওখান থেকে সরে এসে তাজমহলের বাইরের দিকে চাতালে বসলাম।

ছায়া আছে ওই জায়গাটায়। আমার কাছে ক্যামেরা ছিল, তাই বেশ কয়েকটি ভঙ্গীতে আমি মার্গারেটের ছবি তুললাম। ও পরেছিল একটি চকোলেট রঙের স্কার্ট। সব রঙের পোশাকই ওকে মানায়। ওর দেহের গঠন এতই সুন্দর সত্যিই অপূর্ব লাগছিল মার্গারেটকে। ওর দিকে রীতিমতো মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল বেশ কিছু পুরুষ ওর পাশ দিয়ে যাবার সময়। কিছুটা বিব্রত বোধ করছিলাম আমি। মার্গারেট কাত হয়ে শুয়ে পড়ল একটা হাতের উপর মাথাটা রেখে পা দুটো ছড়িয়ে দিয়ে। একভাবে আমি ওর দিকে তাকিয়েছিলাম।

মৃদু হাসলো ও আমার দিকে তাকিয়ে এবং তারপর হঠাৎই জিজ্ঞেস করল, তোমার পরিচালক বন্ধুর সঙ্গে কবে যোগাযোগ করবে?

ভাবছি আর কিছুদিন পরেই করবো।

 বানিয়ে বললাম তারপরে, ও লন্ডনে ফিরে গেছে কি একটা দরকারে, কিছুদিন দেরী হবে ওর ফিরতে।

তুমি কি করে জানলে? মার্গারেট আবার জিজ্ঞেস করল।

 আমাদের হোটেল থেকে আমি তো ফোন করেছিলাম।

মার্গারেট বলল, আচ্ছা, ওরা যদি আমাকে না নেয় তাহলে?

আমি সামান্য থেমে জবাব দিলাম কি আর হবে তাহলে, তুমি অন্য কোনো জায়গায় কাজ করবে কিংবা তোমাকে কলেজে ভর্তি করে দেব।

মার্গারেট বলে উঠল পড়াশোনা আমি আর করব না। আচ্ছা, দিল্লীতে আর কতদিন থাকব আমরা?

ততদিনতো থাকতেই হবে যতদিন না তোমার ব্যাপারটা ফয়সলা হচ্ছে।

সে তো মাস দুয়েক বা তিনেক তো হতে পারে। মার্গারেট বলে উঠল।

তাতে কি হয়েছে, আমরা তো নাও ফিরতে পারি যদি ইচ্ছা করি, আমি কথাটা বলে উঠলাম নিহভাবে।

হেসে উঠলাম কথাটা বলেই। ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর মার্গারেট বলল, তুমি কি বলছো?

বললাম, ফিরতে নাও পারি আমরা, বিয়ে করব আমি তোমাকে। ঘর বেঁধে থেকে যাবতারপর যেখানে হোক, খুব ভাল হবে না।

কিছুই না বলে মার্গারেট গুম মেরে রইল। চুপচাপ রইলো বেশ খানিকক্ষণ, শুয়ে পড়লো তারপর তাজমহলের চাতালের উপরে। মুখটা ভালভাবে হাত দিয়ে ঢাকলো। ওর আচার আচরণ আমি লক্ষ্য করতে লাগলাম চাতালে বসে।

আমি সমস্ত ব্যাপারটা একমনে ভাবছিলাম। একেবারেই চলে এসেছি আমি ওকে নিয়ে বলতে গেলে। আমি হ্যারিয়েটকে চাইও না এবং ওর সঙ্গও আমার ভাল লাগে না। পুলিশের সাহায্য নিতে পারে অবশ্য হ্যারিয়েট বেশীদিন হয়ে গেলে। আমি কলকাতায় যাব এখান থেকে। আপাতত সেখানেই থেকে যাব একটা পছন্দমত জায়গা বেছে নিয়ে। একবার তাকালাম আমি মার্গারেটের দিকে। ওর বোজা চোখ দুটি দেখে মনে হল বুঝিবা কোনো ইংরেজ দেবী শুয়ে আছে। তোমার সেই বন্ধু যিনি পরিচালক তার নাম কি?

আমি ভেবে পেলাম না ঠিক কি বলবো। ডেভিড ম্যাকমিলান, এই নামটা হঠাৎ মনে পড়তেই আমি বলে ফেললাম।

মোট কটা ছবি করেছে সে?

আমার সঙ্গে অনেক দিনের আলাপ এবং সম্ভবতঃ গোটা তিনেক ছবি করেছে সে, এই কথা বলে আমি তাকালাম মার্গারেটের মুখের দিকে। এবার প্রসঙ্গ পাল্টে আবার বলল মার্গারেট, শ্বেত পাথরে তৈরী কি এই তাজমহল?

আমি বললাম, হ্যাঁ।

মৃদু হেসে এরপর মার্গারেট বলল, তুমিতো আমাকে ভালবাস তাহলে তুমি কি করবে আমি মরে গেলে?

আমি বলে উঠলাম সঙ্গে সঙ্গে, একটি প্রাসাদ তৈরী করে দেব তোমার নামে এবং সেই প্রাসাদের সামনে আমি সবসময় বসে থাকব।

মার্গারেট সজোরে হেসে উঠল এই কথাটা শোনা মাত্রই। আমার কোলের ওপর মাথা রাখলো তারপর একটুখানি সরে এসে।

তুমি মিথ্যা কথা খুব সুন্দর করে বলতে পারো, না, মার্গারেট শেষে বলে উঠল।

 চমকে উঠলাম আমি। আমার কাছাকাছি থাকলেও মার্গারেট রীতিমতো রহস্যময়ী আমার কাছে। ও আমার হাঁটুর বয়সী এটা বলা যায়। আমি সবসময়ে ঠিক মতো ওকে বুঝতে পারি না তা সত্ত্বেও। ওর আকর্ষণ, আমার কাছে ক্রমশঃ বেড়ে গেছে ওর এই রহস্যময়তার জন্যই। মার্গারেট আমাকে কি সন্দেহ করছে, আমি মনে মনে একথাই ভাবলাম। আমি রীতিমতো অসুবিধায় পড়ে যাব ও যদি আমার মিথ্যা কথাগুলো ধরে ফেলে। ও কোনোদিন পালিয়েও যেতে পারে আমার কাছ থেকে। ওকে সব সময় চোখে চোখে রাখা দরকার। আমার কোলে মার্গারেট শুয়েছিল চিৎ হয়ে। স্কার্টের খানিকটা উঠে গেছে এবং বোজা রয়েছে চোখ দুটো। সামান্য দেখা যাচ্ছে উরুগুলি। রঙ মাখনের মত। ওর দুটো স্তনের ছড়া দেখা যাচ্ছে স্কার্টের উপর দিয়ে। ওর কপালে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম আমি। মার্গারেট হঠাৎ বলল, আমার মাকে তুমি বিয়ে করলে না কেন।

তোমার মাকে আমি ভালবাসি না এই কারণে। আমার কথা শুনে মার্গারেট হেসে বলল, তোমার লোভটা আসলে আমার উপর ছিল তাই না।

আমি রীতিমতো আহত হলাম ওর কথা শুনে, যাকে আমি এত ভালবাসি, তার কাছ থেকে এই ধরণের কথা আমি আশা করি নি। তবুও মুখে হাসি বজায় রেখে বলে উঠলাম, তাই, কি মনে হয় তোমার?

মার্গারেট কোনো জবাব দিল না, খিল খিল করে হেসে উঠল তার বদলে। আমার বুকের বোতামটা এক হাতে খুলে দিয়ে হাত বোলাতে লাগল আমার বুকে। যতই আমি ওকে দেখছি এক অস্থির চরিত্রের নারী বলে আমার মার্গারেটকে মনে হচ্ছে। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আমার, আমি ওকে বোঝার চেষ্টা করছি যতই। এক এক সময় আমার মনে হয় যে আমি ছাড়া ওর আর কোনো গত্যন্তর নেই। আমার ভুল কিন্তু ভেঙে যেতে দেরী হল না তার পরেই। এক দম্পতিকে আমাদের কাছ থেকে কিছু দূরেই দেখলাম, ওরা কথা বলতে বলতে পাশাপাশি হাঁটছিল এবং মাঝে মাঝেই হাসাহাসি করছিল। একবার সেদিকে তাকিয়ে মার্গারেট বলল দ্যাখো ওরা কি রকম ভাবে হাঁটছে। এই কথাটা ও আঙুল দেখিয়ে হেসে বলল আমাকে।

আমি হেসে উঠলাম মৃদু ভাবে। ঠিক সেই মুহূর্তে হঠাৎ উঠে বসে মার্গারেট বলল, কিছু কিনে দেবে আমাকে, চলো আমরা ওরকম জড়িয়ে ধরে হাঁটবো।

হো হো করে হেসে উঠলাম একথা শুনে আমি। এরপর ওর গালটা টিপে ধরে উঠে দাঁড়ালাম আমি। মার্গারেটও উঠে দাঁড়িয়ে এক হাতে আমার কোমরটা জড়িয়ে ধরে চলতে থাকল। ওর কাঁধে হাত রেখে আমি আস্তে আস্তে এগোচ্ছিলাম ওর সঙ্গে। একটি প্রচণ্ড রকমের সরল এবং– উজ্জ্বল বালিকা বলে মনে হচ্ছিল ওকে তখন আমার। আমার খুব ভাল লাগে এই রূপটা ওর। এরপর একটা দোকানে এলাম আমরা তাজমহল থেকে বেরিয়ে এসে। দোকানে সবকিছুই আছে, কারণ এটি একটি স্টেশনারী দোকান। মার্গারেট একটি কাঁচের চারকোনা বাক্সের মধ্যে তাজমহল কিনলো। ঐ অপূর্ব প্রাসাদটা যেন ছোটো হয়ে গেছে, ওই বাক্সের মধ্যে। দারুণ সুন্দর। মার্গারেট উচ্ছ্বাসে বলে উঠল, দারুন সুন্দর তো জিনিসটা।

এ ছাড়াও মার্গারেট কিনল একটা গাইড বুক। দুখানা স্কার্ট কিনে দিলাম ওকে আমি পোশাকের দোকান থেকে। ও খুব খুশী এসব পেয়ে। আমি একটা হার কিনবো, একটা গয়নার দোকান দেখতে পেয়ে বলে উঠলো হঠাৎ মার্গারেট।

 ওর কথা রেখে দোকানে গিয়ে আমি ওকে ওর পছন্দ মত একটা হার কিনে দিলাম। খুবই, আনন্দিত মার্গারেট হারটা পেয়ে। ওর অভিভাবক এখন আমিই। ওর সবকিছু প্রয়োজন এখন মেটাতে হবে আমাকেই। ওর সব এখন আমিই। এখন মার্গারেট আমার কাছে সব। প্রাণ ভোমরা আমার।

.

১৪.

 অনেক দিন থাকা হয়ে গেছে দিল্লীতে। আমি প্রায়ই মার্গারেটকে নিয়ে বেড়াতে গেছি। সমস্ত দিল্লী শহরই আমাদের ঘোরা হয়ে গেছে গাইড বুক দেখে। এম, আন্নাদুরাই নামে এক তামিল ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার আলাপ হল ওখানে। ওদের ঘর আমাদের পাশেই। ওর স্ত্রী এবং একমাত্র ছেলে রয়েছে। পঁয়ত্রিশের কোটায় বয়েস, খুব বেশী বয়স নয়। তিরিশের কোঠায় স্ত্রীর বয়স। একমাত্র ছেলে রয়েছে রাজেশ। খুব ছটফটে স্বভাবের এবং আমাদের ঘরে প্রায়ই চলে আসে। আমরা বুঝতে পারি না ওর আধো আধো কথাবার্তা। তবু ভালো লাগে আমাদের। ওর রীতিমতো ভাব হয়েছে মার্গারেটের সঙ্গে। আন্নাদুরাই দম্পতি এবং মার্গারেট উভয়েই ভাঙা ভাঙা হিন্দী জানে। তাই বেশী দেরী হলো না ওদের আলাপ জমাতে। খুবই পছন্দ ওকে মার্গারেটের। মার্গারেটকে আঁচড়ে কামড়ে শেষ করে দেয় বাচ্চাটা। আমি বাচ্চাটাকে নিজেও ভালবাসতাম কিন্তু পছন্দ করতাম না ওকে নিয়ে মার্গারেটের বেশী বাড়াবাড়িটা। একদিন নেমতন্ন করলো আমাদের আন্নাদুরাই দম্পতি। ভারতীয়রা যে খুবই অতিথিপরায়ণ হয় তা আমি লক্ষ্য করলাম সেদিনই। কয়েকবার হ্যারিয়টের সঙ্গে অন্য জায়গায় গিয়েও এই ব্যাপারটা লক্ষ করেছিলাম এবং তাতে মনে হয়েছিল বেশীরভাগ ভারতীয়রাই অতিথিবৎসল। একদিন রাজেশকে কোলে নিয়ে মার্গারেট আমার কাছে আসতে আমি তাকে বললাম হেসে, ওকে পেলে কোথায়, কি ব্যাপার?

মার্গারেট হেসে উঠল এবং বলল, আমার চেয়ারে বারান্দায় বসেছিল রাজেশ, আমি.তাই ওকে দেখতে পেয়ে নিয়ে এলাম।

মার্গারেট রাজেশকে আমাকে দেখিয়ে বলল, কে হয় এ তোমার? রাজেশ কিছু না বলে চুপচাপ রইলো। মার্গারেট বলল আবার, রাজেশ, বলল, তোমাকে আমি সেই যে বললাম।

আধো স্বরে রাজেশ হেসে বলল ফাদার।

ইয়েস ফাদার–এই কথা শুনে মার্গারেট হাসতে শুরু করলো খিলখিল করে এবং তার দেখাদেখি হাততালি দিয়ে হাসতে আরম্ভ করল, রাজেশও। আর আমি কে, মার্গারেট জিজ্ঞেস করল আবার।

আধো আধো গলায় রাজেশ মাদার বলে নিজেই হাসতে শুরু করলো।

 ভেরী গুড, এই বলে মাদার ওর কচি গাল টিপে দিল।

মার্গারেট এরপর রাজেশকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সারা দেহে ওর চুমু খেতে লাগল পাগলের মত।

আমি বললাম, মিমি, তুমি ওকে এসমস্ত ব্যাপার শেখাচ্ছ কেন, ব্যাপার কি?

 মার্গারেট বলে উঠলো কপট রাগে, বেশ করেছি, শিখিয়েছি।

মার্গারেট মাঝে মাঝে কিরকম অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে এটা আমি লক্ষ্য করছি মাঝে মাঝেই। ও রেগে যায় কেউ ওকে কিছু বললেই আমি মার্গারেটকে বললাম, বেশী মেলামেশা ওঁদের সঙ্গে করো না, আমি তোমাকে বারবার বলছি মিমি।

কেন কি হয়েছে করলে?

স্থির চোখে তাকাল আমার দিকে একবার মার্গারেট। তখন রাগের চেয়ে বিরক্তি বেশী তার দুচোখে। আমি যে ব্যাপারটা ভালভাবেই জানি, তা হল, বেশ জেদী স্বভাবের মেয়ে মার্গারেট। আমি বললাম শান্তভাবে, তুমি সবসময় ছেলেটাকে নিয়ে ওরকম করছে এতে তো অসন্তুষ্ট হতে পারে ওরা।

আমি রাজেশকে ভালবাসি এতে অসন্তুষ্ট হবার কি আছে!

ভীষণ ছেলেমানুষি মনে হল মার্গারেটের কথাটা আমার কাছে। কিছুই করার নেই আমার, কারণ আমি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েছি, যৌবনের শেষ প্রান্তে এই সরলমনা মেয়েটির সঙ্গে। যদিও আমার হাজার ইচ্ছে থাকুক না কেন। হাজার হলেও ওরা আমাদের অপরিচিত, এটা আমি কিছুতেই বোঝাতে পারছি না ওকে। ভারতীয়রা খুব মিশুকে হয়, সাধারণভাবে যদিও দীর্ঘকাল ধরে উপনিবেশে থাকার ফলে আমাদের মত সাহেবদের সংস্পর্শে এলে ওরা একটু হীনমন্যতায় ভোগে। সেটা সময় লাগবে কাটিয়ে উঠতে। আবার বললাম আমি শান্তভাবে মার্গারেটকে, বেশী আদর তুমি রাজেশকে করো না, এটা তোমাকে আমার অনুরোধ। ব্যাপারটা ভাল চোখে নেবে না হয়তো ওরা। ওদের ইচ্ছে থাকলেও ওরা কিন্তু কিছু বলতে পারছে না মুখে।

আমাকে থামিয়ে দিয়ে ও বলে উঠলো একসময়, রাজেশকে আমি বেশী সময় দিচ্ছি, এটা তোমার সহ্য হচ্ছে না, আসলে তোমার হিংসা হচ্ছে।

মার্গারেট এই কথাটা বলার পরেই হেসে উঠল। আমি উপরে শান্ত থাকলাম যদিও আমি ভেতরে রেগে গেছি। আমি বলে উঠলাম হেসে, মার্গারেট তুমি সত্যিই খুব ছেলে মানুষ।

তোমার লজ্জা করে না আমার সঙ্গে প্রেম করতে, বুড়ো কোথাকার।

আমি বললাম, চল মিমি, মিছিমিছি ঝগড়া না করে কোথাও আমরা ঘুরে আসি।

 রাজেশকে নিয়ে মার্গারেট বাইরে বেরিয়ে গেল একবার আমার দিকে তাকিয়ে দেখে। আমরা দুজনে বাইরে বেরিয়ে পড়লাম ঘণ্টা খানেকের মধ্যে যদিও এর আগে একবার লালকেল্লায় গেছি, তথাপি যাত্রা শুরু করলাম লালকেল্লার উদ্দেশ্যে। মার্গারেট অবাক হল গোলাপী পোষাক পরা একটি লোককে দেখে, বলে উঠল ও, লোকটা জাদুকর।

লোকটাকে দেখলাম আমি। গেরুয়া আলখাল্লা পরে, গলায় পুঁতির মালা এবং ওর হাতে রয়েছে একটি ঝাড়ন। একাকার হয়ে গেছে লোকটার ঝাড়নের সঙ্গে ওর দাড়ির ধূসর রঙ। আমি বললাম, তুমি এরকম সাধু আগে দেখনি বোম্বেতে?

মার্গারেট বলল, আমি সাধু দেখলেও এরকম ধরনের দেখিনি।

বললাম, এরা মুসলমান ফকির, তাই টুপি পরে মাথায় মুসলমানদের মতই।

একটি ছবি তুললে ওর কেমন হয়, বলে উঠল মার্গারেট।

খুব মুস্কিল হয়ে যাবে লোকটি যদি রেগে যায়, মার্গারেটকে আমি বললাম। তাই মার্গারেট আর কিছু বলল না। আমরা এগিয়ে চললাম। আমি দাঁড়ালাম লালকেল্লার ঠিক মুখের সামনে এবং বললাম, জানতো আজাদ–হিন্দ–বাহিনীর বিচার হয়েছে এই লালকেল্লাতেই।

ওদের নাম সুভাষ বসু বলে আমি শুনেছিলাম, মার্গারেট বলল।

হিটলারের নাম তো তুমি শুনেছ?

বড় বড় হয়ে গেল মার্গারেটের চোখ দুটো এবং সে বলে উঠল, পৃথিবী জয় করতে চেয়েছিল তো জার্মানীর এই লোকটাই এবং এর সঙ্গেই তো আলাপ ছিল সুভাষ বসুর।

আমি বললাম, তুমি ঠিকই বলেছে, গান্ধীর নাম এখানকার সবাই জানে। তুমি কি শুনেছে তার নাম?

আমি শুনেছি, মার্গারেট বলে উঠল।

আমি জবাব দিলাম, সব থেকে জনপ্রিয় মানুষ ছিলেন তিনি ভারতের এবং তার মৃত্যু খুব শোচনীয় ভাবে হয়েছিল এবং তাকে ভক্তি করে শহর গ্রাম সব স্থানের মানুষরা।

মা আমাকে একথা বলেছিলেন, আমি মায়ের কাছেই এটা শুনেছিলাম, এগোতে এগোতে বলে উঠল মার্গারেট।

আমরা এগোতে লাগলাম আবার কারণ ভেতরে ঢুকে অনেকখানি হেঁটে যেতে হয়। আমার পাশাপাশি হাঁটছিল মার্গারেট। আমার ফিল্মে নামার কি হলো, হঠাৎ ও বলে উঠল আমার দিকে তাকিয়ে।

কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম আমি ওর প্রশ্ন শুনে। আমি একেবারেই ভাবতে পারিনি যে ও আমাকে এই কথাটা জিজ্ঞেস করবে লালকেল্লাতেই। বন্ধুতো এখনো আসেনি তাই, আমি বললাম, এখন তো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না ব্যাপারটা। আবার বললাম, অন্য অনেক কাজ আছে, ফিল্মে যে নামতেই হবে তার কোনো অর্থ নেই। কাজ তো অনেক রকম আছে।

মার্গারেট নিস্পৃহ কণ্ঠে বলল, কাজ অনেক রকম আছে ঠিকই কিন্তু অনেক টাকা এবং নাম হবে ফিল্মে নামলে, তা অন্য কাজ কি আছে।

নামে তোমার দরকার কি হবে।

কার না ভাল লাগে নাম। হেসে বলল মার্গারেট।

আমি বললাম, আমি তোমাকে নিয়ে সারা জীবন এভাবেই কাটাতে চাই। তাই আমার ওসব ভাল লাগে না।

বাজে কথা ছাড়ো, আমরা এগোই চলল, এবার খানিকটা রেগে মার্গারেট একথা বলে উঠল।

চুপচাপ এগোতে থাকলাম আমরা দুজনে। মার্গারেট দেওয়ান–ই–খাসের সামনে সম্রাটের সেই উঁচু সিংহাসনটার দিকে তাকিয়ে বলল, নিজের পায়ে দাঁড়াবো আমি।

মেয়েটি পাগল নির্ঘাত, আমি তাকালাম ওর দিকে। নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করছে এতো বড়ো একটি ঐতিহাসিক নিদর্শনের সামনে দাঁড়িয়ে। আমি কিছু বললাম না এই কথার উত্তরে। আমাদের সময় লাগল ঘন্টা দুয়েকের মত লালকেল্লা দেখতে। উপভোগ করা গেল না তেমন। মার্গারেট গম্ভীর হয়ে রইল প্রায় সারাক্ষণই। টুকিটাকি কিছু জিজ্ঞেস করছে অবশ্য মাঝে মাঝে। জবাব দিচ্ছি আমিও। সোনার আংটি কিনে দিলাম রাস্তায় ওকে। ওর নামের আদ্যাক্ষর লেখা ছিল আংটির ওপরে। ওকে আকর্ষণ করছে এটাই। যখন হোটেলের ঘরে ফিরে এলাম তখন রাত হয়ে গেছে। সেই তামিল দম্পতি যারা আমাদের পাশের ঘরে থাকে তাদের দরজা এখনও বন্ধ মানে তারা এখনও ঘরে ফিরে আসেনি।

আমরা ডিনার সেরে পোষাক পাল্টে নিলাম ঘন্টা খানেকের মধ্যেই। আমার মুখের দিকে মার্গারেট তাকাচ্ছিল মাঝে মাঝে যখন আমরা খাচ্ছিলাম। বলছিলাম না তেমন কিছু। ও মাঝে মাঝে বলছিল অবশ্য কিছু মামুলি কথাবার্তা। সংক্ষেপে জবাব দিচ্ছিলাম আমি। আমরা ঘরে ফিরলাম খাওয়া শেষ করে। মার্গারেটের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম ওকে অপরূপ দেখাচ্ছিল সাদা রঙের স্বচ্ছ গাউনে। আমি পাগল হয়ে যাই মার্গারেটের ঐ অপরূপ রূপ দেখলে। তখন আর নিজের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না আমার। ওর শরীরের ভিতরের প্রতিটি রেখা দেখা যাচ্ছে গাউনের ভিতর দিয়ে। মার্গারেট বিছানার উপর বসে হাই তুললো দুহাত উপরে তুলে দিয়ে। আমি একটা চেয়ারে বসে একটা ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে বার বার তাকাচ্ছিলাম ওর দিকে। আসলে আমি বোঝাতে চাইছিলাম মার্গারেটকে যে, আমি ওর উপর অসন্তুষ্ট ও সেটা বুঝুক। মার্গারেট মুড়ে বসলো পা দুটো। বেশ শব্দ করে দুহাত উপরে তুলে ও হাই তুললো, ওর দিকে তাকালাম আমি এবার। ওকে যা বলার তা আমি বলতে চেষ্টা করলাম আমার চোখ দুটো দিয়ে। মৃদু থেমে বলল মার্গারেট, কতদিন এখানে থাকব বলতে আমরা?

আমি সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলাম, বেশীদিন নয় আর।

 যাবো কোথায় এবার আমরা?

জবাব দিলাম আমি ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে, কলকাতায় যাবার ইচ্ছা আছে একবার।

চিৎ হয়ে শুয়ে মার্গারেট বলল, বোম্বে তাহলে যাচ্ছি না আর আমরা।

আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, না। ও টান টান হয়ে আছে এবং ওর শরীরের চড়াই উত্রাই এক মোহময় জগতে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। দুর্বল হয়ে পড়ছি আমি ক্রমশ। ওকে বললাম, আমরা কলকাতাতে থাকবে এবং একটি চেম্বার করবো আমরা কলকাতাতে।

তোমার হোটেল দুটোর কি হবে, মার্গারেট জিজ্ঞেস করল।

বিক্রি করব ও দুটো।

আমি মার্গারেটের দিকে তাকিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে রোগাটে ছিল কিন্তু আগের চেয়ে ওর শরীরে এখন লাবণ্য এসেছে। আমার আগে ওর চেহারাটা ধারালো মনে হলেও ঠিক এই মুহূর্তে সামান্য মেদ জমেছে ওর শরীরে। ক্রমশ শরীর আরো লোভনীয় হয়ে উঠছে। শরীর আর মনে বরং আমিই দিনের পর দিন ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। আমার দিকে তাকিয়ে বলল কাত হয়ে, একটু টিপে দাও তো আমার কপালটা, বড্ড ব্যথা করছে।

আমি বিছানার উপর বসলাম এগিয়ে গিয়ে। ওর কপালে একটা হাত রাখলাম। এরপর ওকে একটা চুমু খেলাম আমি কিছুক্ষণ ওর কপালটা টিপে দেবার পর। আস্তে আস্তে ঘোর লাগছে মার্গারেটের দুচোখে। ক্রমশঃ উত্তেজিত হয়ে উঠছে। ধীরে ধীরে সরিয়ে দিলাম আমি ওর শরীরের আবরণ। হাত রাখলাম ওর বুকের ওপর। ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়ার পর ওর শরীরে আবরণ, আমাকে ওর শরীরের মোহময় আবরণ এবং সৌন্দর্য বাস্তব পৃথিবী থেকে এক অপূর্ব মায়াময় স্বর্গলোকে নিয়ে যাচ্ছিলো ক্রমশঃ। কপালে লাগছিল আমার ওর নিঃশ্বাস। ঘরের আলোটা দিলাম নিভিয়ে আমি হাত বাড়িয়ে।

.

১৫.

 দিন দুয়েক আগে চলে গেছে সেই মিল দম্পতি। আমি খুব কমই দেখেছি এইরকম ভদ্র পরিবার। এই সত্যটাই আবার তুলে ধরলো যে ভারতীয়রা অতিথিপরায়ণ। ওখানেই সরকারী চাকুরী করেন ভদ্রলোক। ভালই জানেন ইংরাজী, আমরা কথাবার্তা বলেছি নানা বিষয় নিয়ে। ভদ্রলোকের একটি বিষয় ভালরকম ভাবে জানাশুনো রয়েছে, তাছাড়া বেশ ভালরকম ওয়াকিবহাল ইংরাজী ভাষা এবং সাহিত্য সম্পর্কেও। ভদ্রমহিলাও শিক্ষিতা ছিলেন মোটামুটি।

ওরা চলে যেতে খুবই খারাপ লাগছিল আমার। অনেকটা ভেঙে পড়ল মার্গারেট বিশেষ কবে। ও প্রায়ই রাজেশকে নিয়ে সব সময় থাকতো। অসম্ভব টান মার্গারেটের বাচ্চার ওপরে। বাচ্চাদের ওপর টান থাকে অবশ্য প্রায় সব ভারতীয় মহিলাদেরই। মার্গারেট ভারতীয় নয় যদিও তবু ভারতীয়দের এই গুণটা পেয়েছে খুব বেশী পরিমাণে। মার্গারেট কেঁদেই ফেলেছিল যেদিন রাজেশরা গেল সেদিন ওকে কোলে করে। গুম হয়ে কাটালে পরপর দুদিন। আদর করার চেষ্টা আমি মাঝে মাঝে করলেও ও নিস্পৃহ থাকার জন্য বেশীদূর এগোতে পারিনি। আমার কাছে খুবই অস্বস্তিকর ওর একরকম অবস্থাটা। ও আমাকে একেবারে আমলই দেয় না এই সময়টা। গ্রাহ্য করে না। উল্টে আমাকে কড়া কথা শোনায় আমি যদি এগিয়ে যাই। খুব একটা এগোতে পারি না কারণ আমি ওকে ভয় পাই। কিছু হলেই ও আমাকে পালিয়ে যাবার ভয় দেখায় ইদানীং। একাধিক বার আমার দেখা হয়ে গেছে দিল্লীর প্রায় সব জায়গাই। আমার কাছে এখন অনেক পরিচিত হয়ে গেছে দিল্লীর রাস্তাঘাটও। এখানেই থেকে যাব একবার মাঝে ভেবেছিলাম এবং চেম্বার করব এখানেই। এই ব্যাপারটা কিন্তু বাতিল করে দিলাম একটা কারণে। আমরা দিল্লীতে এসেছি হ্যারিয়েট সেটা জানে। ও আমাদের খোঁজে এখানে চলে আসতে পারে যে কোনো সময়। আমার সারা দেহে কাঁপন লাগে হ্যারিয়েটের মুখটা মনে পড়লেই। এই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছেও সারা শহর তোলপাড় করে দেবে আমাদের খোঁজে। খবরের কাগজ সামনে, চোখে পড়ল একটা আলোচনা। বিদেশে নাকি দারুণ সমার্লোচনা পেয়েছে এখানকার একটি বাংলা ফিল্ম। এত সম্মান পায়নি এর আগে ভারতের কোনো ছবি। পথের পাঁচালি ছবিটার নাম। একজন অখ্যাত বাঙালী যুবক ছবিটির পরিচালক। কলকাতায় গিয়ে ছবিটা দেখব বলে ভাবলাম। হিন্দী এখানকার প্রধান ভাষা। যখন বোম্বেতে ছিলাম তখন দু একখানা হিন্দী ছবি দেখেছি। এখানকার ছবি সম্পর্কে আমার ধারণা তাতে খুব খারাপ হয়ে গেছিল। বলার নয়, সে এতো বাজে ছবি। যাকগে, নিশ্চয় দেখবো এই ফিল্মটা। ভারতের বেশীর ভাগ সংস্কৃতি কলকাতাই ধরে রাখে বলে শুনেছি। বুঝতে পারবো নিশ্চয় ওখানে গেলেই, একটা ছবি যেন ভাসছে আমার চোখের সামনে। রাস্তা দেখা যায় দূরে তাকালেই। ভিড় গাড়ি ঘোড়া এবং পথচারীর। এখনও ফাঁকাই লাগছে অবশ্য এই জায়গাটা।

এখনতো লন্ডন শহরে ক্রমশই ভিড় বেড়ে যাচ্ছে। আমার মুখোমুখি এসে বসলো মার্গারেট স্নান সেরে একটা গাউন পরে। ওকে অপূর্ব সুন্দর লাগছিল সদ্য স্নান সারা অবস্থায়। পবিত্র ভাব একটা ওর মুখের মধ্যে।

আমি মৃদু হাসলাম মার্গারেটের মুখের দিকে তাকিয়ে। মনটা ভাল এখন মার্গারেটের। হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি ঠিক ঘুমোতে পারিনি কাল রাতে।

ওর কাঁধে হাত রেখে কে বলে আমি জিজ্ঞেস করে উঠলাম। শরীর কি খারাপ লাগছিল তোমার।

আমার জামার বোতাম নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে মার্গারেট মৃদু হেসে বলল, বুঝতে পারছি না আমি ঠিক। আমার শরীর তো ভালো আছে।

ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম কোথায় যেন একটা বিষণ্ণতা লেগে আছে ওর মুখের মধ্যে। খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার ভেতরটায়। কি অবিচার করেছি আমি মার্গারেটের ওপরে। আমি ভালবাসি তো ওকেই। আমি সবকিছু করতে রাজি আছি ওর জন্যে। আমি ভালবাসা পাইনি এর আগে কোনো নারীর কাছেই। আমাকে সত্যিই ভালবাসে কিনা মার্গারেট সেটা অবশ্য আমি জানি না। কিছু দিন আগে আমাকে পাগল করে দিয়ে কিশোরী ক্যাথরিন আমার রক্তে হিল্লোল তুলেছিল। যথারীতি আবার ভুলেও গিয়েছিল তারপর। ওর এবং আমার ক্ষেত্রেও সাময়িক আবেগ ছিল ব্যাপারটা। উত্তেজনা ছিল কিশোর বয়সের, তাতে ছিল না কিন্তু কোনো প্রেম। আমাকে ভালবাসেনি কিন্তু ক্যাথরিন, এরপর আমার জীবনে এসেছিল সোফিয়া। স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলাম আমি ওকে। বিশ্বাসঘাতকতা ছিল কিন্তু সোফিয়ার রক্তে। আমার কাছে এসেছিল ও নিছক এক ধরনের মোহে। আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল ওর অস্থির স্বভাবই। আমরা বিয়ে করেছিলাম। বারবার মিলিত হয়েছিলাম দুজনে, আমাকে কিন্তু সোফিয়া ভালবাসেনি। অবশ্য ওর মতো বিকারগ্রস্ত একজন নারীর কাছে ভালবাসা আশা করাও ঠিক নয়। ভুল আমি করেছিলাম এবং ফলও পেয়েছি আমি তার হাতে হাতে। এরপর আমার জীবনে এল হ্যারিয়েট। আমাকে পেতে চেয়েছিল হ্যারিয়েট যৌবনের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে। আঘাত পেয়েছে হ্যারিয়েটও জীবনে। বর্তমানে অনিবার্য হয়ে উঠতে হয়তো হারিয়েটের আসাটা। আমি সবকিছু ভুলে গেলাম কিন্তু মার্গারেটকে দেখার পর। আমার মত পুরুষ যার যৌবন শেষ হয়ে গেছে তাকে পাগল করে তুলল মার্গারেট। ওর জোয়ারের টানে ভেসে গিয়ে আমি সবকিছু ভুলে গেলাম। আমাকে ভালবাসেনি হ্যারিয়েট কিন্তু ও কেবলমাত্র আমাকে চেয়েছিল একটা অবলম্বন হিসাবে। আমাকে পেয়ে চরম বেড়ে গিয়েছিল ওর তীব্র যৌনক্ষুধা। সেটাই মেটাবার ছলাকলা ওর প্রেমের অভিব্যক্তি। ডাক্তার হলেও আমি মনের কারবার নই।

আমাকে মৃদু ধাক্কা দিল মার্গারেট হাত দিয়ে, তারপর বলল, কি ভাবছো?

প্রথমে চমকে উঠলাম আমি এবং তারপর বললাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, কই কিছু ভাবি নিতো।

চেপে যেও না আমাকে।

আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো মার্গারেট, সজোরে হেসে বলে উঠলাম আমি, আমাকে বিশ্বাস করছো না তুমি।

তোমাক বিশ্বাস করেছি বলেই আমি আজ এখানে। মার্গারেট গম্ভীর হয়ে বলে উঠল হঠাৎ।

ওর দিকে তাকিয়ে আমি হেসে বললাম, না, মিমি, না বলার কিছু নেই, আমাকে কিছু একটা করতে হবে কলকাতা গিয়ে, ভাবনা এটাই যে আমার টাকা পয়সা ক্রমশঃ কমে আসছে।

অনেকক্ষণ ধরে চুপচাপ বসে রইল মার্গারেট একথা শুনে।

আমি চাকরী করব কলকাতায় গিয়ে, তারপর সে বলে উঠল কিছুটা নিস্পৃহ স্বরে।

দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। মাঝে মাঝে লোকজন যাওয়া আসা করছিল করিডোর দিয়ে। নেহাৎ কম ছিল না বিদেশী লোকজন। হঠাৎ বলে উঠল মার্গারেট, আমার শরীরটা খুবই খারাপ লাগছে।

চিন্তিত হয়ে ওর কথায় বলে উঠলাম আমি, জ্বরটর বোধ কর নাকি মাঝে মাঝে?

সেরকম কিছু বোধ করিনা, তবে মাঝে মাঝে খেতে পারি না।

ওর চোখে সামান্য কালি পড়লেও মাঝে মাঝে তা তেমন বোঝা যায় না। পেটটা যদিও সেরকম উঁচু বলে মনে হচ্ছিল না। ইদানীং অবশ্য লাবণ্য একটা এসেছে মার্গারেটের শরীরে। এবার আরো একটা চিন্তা এসে হাজির হলো আমার মনের মধ্যে। তাহলে তো একটা সমস্যা বাড়বে ও যদি সন্তান ধারন করে। কে জানে এদেশে এসব ভাল ভাল ওষুধ আছে কিনা। সব ঠিক হয়ে যাবে, কিছু ভেবোনা। তাই বলে উঠলাম।

মার্গারেট বলল, তুমি যখন বাইরে যাবে তখন আমার জন্য শেক্সপিয়ারের কিছু গল্পের বই এবং কিছু ম্যাগাজিন কিনে আনবে, যা লেখা আছে কমিক্‌সের উপর।

 আমি বললাম, আনবো।

 এরপর চুপচাপ চা খেলাম আমরা দুজনেই আমি ওকে হাসাবার জন্য হাসির কথা বলছিলাম মাঝে মাঝে এবং তাতে ও হাসছিল। ও যেন কোনো মতে দুঃখ না পায় সেটাই আমি তখন চাইছিলাম। ওর সবকিছু এখন আমিই। খেতে খেতে ওর দিকে তাকাতেই আমি নিজের ভেতর ভেতর একটা উত্তেজনা বোধ করছিলাম। সংযত রাখতে পারছিলাম না আমি নিজেকে। প্রায়ই যখন এরকম হয় তখন মনকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি না আমি ভীষণভাবে উত্তেজনা পেয়ে বসে আমাকে এবং অসহায় বোধ করি তখন আমি নিজেকে।

মিমি ঘরে এসো আমি বললাম মার্গারেটকে। আমরা ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ার পর কোনো কথা না বলে মার্গারেটকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে একটা চুমু খাবার পর খেয়াল হল যে বন্ধ করা হয়নি দরজাটা। আমি এক ছুটে গিয়ে দরজা বন্ধ করে জড়িয়ে ধরলাম মার্গারেটকে। একটু বিরক্ত হয়ে ধাক্কা দিয়ে আমাকে সরিয়ে দিয়ে মার্গারেট বলে উঠল, এই সাত সকালে কি হচ্ছে, সে এই কথাটা বলল গোল গোল চোখ করে।

প্লীজ মিমি আমি আর পারছি না।

 মার্গারেট আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি হেসে বলে উঠল, আমার আর এখন ওসব ভাল লাগছে না। ওর এই রহস্যময় হাসির অর্থ আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। মার্গারেট বিছানায় বসেই আমাকে বললো, এগিয়ে এসো।

আমি ওর সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই আমার চরম উত্তেজনার সমাপ্তি ঘটলো কিছুক্ষণের মধ্যেই। আমার কাছে এসে বসলো মার্গারেট মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই পোষাকটা বদলে। দুজনে চুপচাপ রইলাম খানিকক্ষণ। সশব্দে উড়ে গেলো একটা এরোপ্লেন আমাদের মাথার খুব কাছ দিয়ে। এরকম হয়ে গেলে কেন তুমি, হঠাৎ মার্গারেট বলে উঠলো।

বললাম, আমার মাঝে মাঝে কেন জানিনা ওরকম হয় এবং তার ফলে আমি আর ঠিক থাকতে পারি না।

.

আমাকে কবে বিয়ে করছে, হঠাৎ ও বলে উঠলো লাঞ্চের সময়। একটি মুরগীর ঠ্যাং চিবোচ্ছিলাম এবং ওর প্রশ্ন শুনে ওর দিকে তাকালাম তখন অবাক হয়ে। আটকে রইলো ঠ্যাংটা মিনিট দুয়েকের জন্য। মৃদু হেসে তারপর ঠ্যাং একহাতে বের করে নিলাম এবং তারপরে বললাম সমস্ত ব্যবস্থা করবো আমি কলকাতায় গিয়ে।

মার্গারেট বলে উঠলো হেসে, বুড়ো হয়ে গেছ তুমি, কি হবে বিয়ে করে, তুমি আমার বাবা হয়ে যেতে যদি এতদিনে মাকে বিয়ে করতে। আমার কপাল সত্যিই মন্দ কারণ যার বাবা হওয়ার কথা ছিল, এখন সে হতে চলেছে আমার স্বামী।

তোমার কপাল মিমি সত্যিই খারাপ, তুমি ভারতীয়, কিন্তু ভারতীয়রা চায় বুড়ো স্বামী। তারা কামনা করে শিবের মত বুড়ো স্বামী, বুড়ো দেবতা তো তিনি।

হেসে উঠলাম আমি সজোরে।

আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো মার্গারেট।

.

১৬.

 আমাদের থাকার মেয়াদ আরো কিছু বাড়িয়ে দিতে হয়েছে। প্রথম কারণটা হল, হঠাৎ মার্গারেটের শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ল এবং এর দ্বিতীয় কারণটা হল, আমার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হল। অনেকদিনের পুরনো বন্ধু আমার। স্কুলে পড়েছি ওর সঙ্গে ওর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় ডাক্তারি পড়তে গিয়ে। অবশ্য বাইরে যোগাযোগ দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। ও পড়াশুনো করেছিল অবশ্য ইংরাজী সাহিত্য নিয়ে। এখন অবশ্য ও যুক্ত আছে লেখালেখির সঙ্গে। কাগজের সাংবাদিক এখন ও ওখানকার। ভারতবর্ষ সম্পর্কে জানবার জন্য ও এসেছে এখানে। ওর একটা উপন্যাস লেখারও ইচ্ছা আছে এই পটভূমিতে। আমি সামনের চেয়ারে বসে আছি একদিন হোটেলের রিসেপশান কাউন্টারে। বিশেষ করে বেলার দিকে ওখানে গিয়ে আমি প্রায়ই বসি। মাথায় টুপি এবং পরনে নিখুঁত পোষাক নিয়ে এক যুবক ঢুকলো। ওর দিকে নিস্পৃহভাবে আমি তাকাতে ও আমার দিকে একবার টুপিটা খুলে চোখ কুঁচকে বলল, পিটার না।

এই বিদেশ বিভুয়ে কে আমাকে নাম ধরে ডাকতে পারে সেটাই আমি অবাক হয়ে ভাবলাম। ওর দিকে আমি তাকাতে ও একেবারে আমার সামনের দিকে এসে দাঁড়িয়েছে। ভাল করে দেখে ভাবলাম একজন যুবক কিন্তু তারপরে দেখলাম এঁর যৌবন শেষ হবার মুখে কিন্তু বাঁধুনি খুব সুন্দর। যা বয়সকে একবার পেছনে ফেলে দিয়েছে। উৎফুল্ল হয়ে আমি বলে উঠলাম, ফ্রেডি!

হ্যাঁ, আমি ফ্রেডি উইলসন, তোমার আদি এবং অকৃত্রিম বন্ধু।

 তুমি তাহলে আমাকে চিনতে পেরেছে, আমি বলে উঠলাম হেসে।

ওকে বসতে বললাম আমি। আমার কামরায় আমি ওকে নিতে যেতে চাই না এই মুহূর্তে কারণ আমি জানি না যে মার্গারেট এই মুহূর্তে কিভাবে রয়েছে।

আমাকে জিজ্ঞেস করল ফ্রেডি, পিটার তোমার কি ব্যাপার, তুমি কোথায় রয়েছ এখানে?

আমি ওকে বললাম আমার কামরার নম্বর। দোতলাতে আমি থাকি।

এই হোটেলেরই একেবারে শেষের কামরাতে ফ্রেডি থাকে একতলার ঘরে। আমি যদিও যেতে চাইছিলাম না কিন্তু জোর করে ও ওর ঘরে আমাকে নিয়ে গেল। ওর ঘরটা একেবারে শেষ প্রান্তে। যখন ঢুকলাম তখন দেখলাম এ ঘরটা বেশ ভালো একটা ফোয়ারা রয়েছে সামনেটায়। এখান থেকে ভাল দেখা যায় বাগানের বেশ খানিকটা। এ জায়গাটা ঠিক চোখে পড়েনা আমাদের বারান্দা থেকে। চেয়ারে বসলাম এবং ঠিক তখুনি ফ্রেডি গিয়ে দুটো চা বলে এসেছে। বিছানায় বসে জিজ্ঞেস করলো ফ্রেডি, তুমি এখানে কবে এবং কি ব্যাপারে এসেছো? :

আমি বললাম, কয়েকমাস হলো এখানে এসেছি।

এখানে চেম্বার টেম্বার করোনি। আমার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না অবশ্য তোমার ডাক্তার হয়ে বেরোনোর পর। নিজেই আবার বললো একটু থেমে, আমাদের দুজনের পেশা আলাদা ছিল, একটা কারণ ছিল সেটাও, তোমাদের তো এখানে এবং বোম্বেতে একটি হোটেল ছিল।

সেগুলি কর্মচারীরাই চালায়, এখন বিক্রী করে দেবো ভাবছি।

 কোথায় প্র্যাকটিশ করবে ঠিক করেছ?

কলকাতায়, আমি জবাব দিলাম।

ও উৎফুল্ল হয়ে উঠল এবং বলল, আমারও যাবার ইচ্ছা আছে, কারণ জায়গাটা চমৎকার, তবে শান্তিনিকেতনে যাবার ইচ্ছা আছে আমার, আমি রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি পড়েছি। আমি যে উপন্যাস লিখবো ভাবছি ভারতকে নিয়ে, কলকাতা আর শান্তিনিকেতনের বেশীর ভাগ তথ্য থাকবে তাতে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম ওকে, তোমার উপন্যাস কটা বেরিয়েছে এখনও পর্যন্ত?

দুখানা বেরিয়েছে। আমি কাগজের সাংবাদিক, সুতরাং রীতিমতো ব্যস্ত জীবনে আমাদের লিখতে হয় সেটা তো বুঝতেই পারছ। এখানে এসেছি আমি খবরের কাগজের কাজে। একটু থেমে বলল, বিয়ে করেছ, এবার খবর বলো তোমার।

কি বলবো তা আমি ভেবে পেলাম না। ভাবলাম কিছুক্ষণ, তার পরে বললাম, করেছিলাম বিয়ে, কিন্তু সেটা তো ডিভোর্স হয়ে গেছে। একটু অস্বাভাবিক ধরনের ছিল আসলে ওর শারীরিক চাহিদা। ও একই সঙ্গে একাধিক পুরুষের শরীর কামনা করত মানসিক দিক থেকে। ব্যাপারটা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি কোনো মতেই।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ফ্রেডি, পরিষ্কার ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে উঠল, আমার ক্ষেত্রেও একই কেস, তবে তোমার একটা হলেও আমার অবশ্য পর পর দুবার বিয়ে হয়েছিল। একটু অপ্রকৃতিস্থা ছিল আমার প্রথমা স্ত্রী এবং এটা আমি টের পেয়েছিলাম কয়েক মাস পর। যৌন ব্যাপারে একেবারে ঠাণ্ডা ছিল অবশ্য আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। এটা টেকেনি কারণ টের পেয়েছি বিয়ের পরেই। অবশ্য আমি চেষ্টা করেছিলাম নানাভাবে কিন্তু সেটা হয়নি। হাল ছেড়ে দিয়েছিল ডাক্তাররা। মা ছিল মেয়েটির। ছেলেবেলায় ওর কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছিল কিনা সেটা ওর মা কিন্তু কিছু বলেনি। পিটার বিয়ের আগে কিন্তু টের পাইনি একদম ব্যাপারটা। ফ্রেডি এই কথা বলে থামলো।

বিয়ে নিয়ে করার কথা ভাবছে নাকি? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

আমি এখন এসব ভাবছিনা ভাই, খুব বেঁচে গেছি একটা ব্যাপারে যে আমার বাচ্চাটাচ্চা কিছু হয়নি।

ঘাড় নাড়লাম আমি, আমারও তা হয়নি বটে, একটা প্রেম করছি বটে তা বলতে পারো।

ফ্রেডি চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে বলল, তাই নাকি, সে কোথায় এখন?

আমি বললাম ওর দিকে তাকিয়ে, সে এই হোটেলেই আছে, বাড়ি ওদের বোম্বেতে, খুব একটা বেশী নয় ওর বয়স। বলতে পারো সদ্য যুবতী একেবারে। এর সঙ্গেই কাটাবো ভাবছি আমার বাকি জীবনটা। যদি সব কিছু ঠিকটাক চলে।

উঠে দাঁড়াল ফ্রেডি, চলো আলাপ করে আসি তাহলে।

ওকে নিয়ে যাওয়াটা আমি মনে মনে অবশ্য চাইছিলাম না। রীতিমতো ভয় করি আমি মার্গারেটকে যদিও ওকে আমি মনে মনে ভালবাসি। ও যে কখন কি করে বসে কোনো ঠিক নেই। চলো তবু আমি বলে উঠলাম।

ফ্রেডি এগোতে আরম্ভ করল এরপর আমার সঙ্গে। দোতলায় চলে এসে দেখলাম যে একটা চেয়ারে বারান্দায় বসেছিল মার্গারেট। সে ফিরে তাকাল আমাদের পায়ের শব্দ শুনে। পরিচয় করে দিলাম মার্গারেটকে এবং তারপর বললাম ফ্রেডি উইলসন আমার বন্ধু, এই হোটেলেই উঠেছে। আগে চোখে পড়েনি। এ একজন বিখ্যাত সাংবাদিক এবং লেখক। ফ্রেডির দিকে তাকালাম এবং বললাম, এর নাম মার্গারেট, আমার সবকিছুই হল এ।

মার্গারেট উঠে দাঁড়াল এবং ওর সঙ্গে করমর্দন করল এবং তারপর বলল মৃদু হেসে, বসুন, খুব খুশী হলাম মিঃ উইলসন, আপনার সঙ্গে আলাপ করে।

 আমি এবং ফ্রেডি দুজনেই বসলাম। তারপর ও বলল হেসে, আমাকে বেশী সমীহ করার দরকার নেই, আমি পিটারের যেমন বন্ধু তেমনি তোমারও।

ঠিক আছে।

মার্গারেট একটু থেমে আবার বলল, মিঃ উইলসন, আপনি চাকরী করেন কোন্ কাগজে?

হেসে ফ্রেডি বলল, আমি মিঃ উইলসন নই, আমি শুধুই ফ্রেডি, বললাম না।

 মার্গারেট হেসে বলল, শুধু ফ্রেডি বলব ঠিক আছে, তুমি যে কাগজের সাংবাদিক তার নাম কি?

ফ্রেডি জবাব দিল, কাগজের নাম লন্ডন টাইমস।

 মার্গারেট বলে উঠলো, ওটি বুঝি ওখানকার কোনো নামকরা কাগজ।

নামকরা কাগজ ওটি, তবে আমি এমন কিছু কেউকেটা নই, সামান্য সাংবাদিক আমি, আমার উপর ভার এখন পুরো দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার।

এবারে আমি বললাম, ফ্রেডি তাহলে তোমার এত দায়িত্বের মধ্যে লেখবার সময় কখন পাও?

ফ্রেডি বলল, ওর মধ্যে থেকেই সময় বার করে নিতে হয়।

 মার্গারেট বলল, এখনও পর্যন্ত কটা বই বেরিয়েছে তোমার?

ফ্রেডি জবাব দিল, দুটো বেরিয়েছে, কিন্তু বিক্ৰী সেরকম একটা কিছু হয়নি, একটি নিটোল প্রেমের গল্প যাতে দুই প্রেমিক এবং এক প্রেমিকার মধ্যে টানাপোড়েন। এটি সে বিষয় নিয়েই লেখা যে আমাকে বেশ কিছু অদ্ভুত অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে। মোটামুটি দুটো বই খুবই প্রশংসিত হয়েছিল সমার্লোচকদের দ্বারা।

বই দুটোর কি নাম? মার্গারেট বলে উঠল হেসে।

মিসেস হ্যারিসনের প্রেমকাহিনী একটির নাম এবং আমার না বলা গল্প আরেকটির নাম।

মার্গারেট বলল, দুটো নাম তো বেশ ভাল, আমাকে একবার প্রেমের উপন্যাসটি দিও, আমি পড়ব একবার।

খানিকটা থেমে কথাগুলি বলছিল মার্গারেট। ওকে খুব ক্লান্ত লাগছিল, ওর কপালে আমি ফ্রেডির সামনেই হাত রাখলাম এবং বললাম, তোমার জ্বরটর হয়েছে নাকি?

হেসে মার্গারেট বলল, অত উতলা হবার কোনো কারণ নেই। তোমাকে আমি সহজে ছেড়ে যেতে পারব না।

ফ্রেডি এবং মার্গারেট দুজনে হেসে উঠলেও আমি কিন্তু চুপচাপ রইলাম।

.

১৭.

 পনের দিন কেটে গেছে এর মধ্যে। আমাদের আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে ফ্রেডি। ওর সঙ্গে এখন মার্গারেট আরো সময় কাটায়। ওকে পড়তে দিয়েছে ফ্রেডি ওর সেই প্রেমের উপন্যাসটা। ব্যাপারটা বুঝতে পারছি যে, আমার ভেতরে একটি সূক্ষ্ম প্রেমের ঈর্ষা জন্ম নিচ্ছে। ফ্রেডি আমার এবং মার্গারেটের উভয়েরই বন্ধু। ফ্রেডির চৌখস চেহারা এবং ও জমিয়ে কথা বলতে পারে। কিন্তু ওকে আমার সাহিত্যিক বলে মনে হয় না। ওকে খানিকটা তুলনা করা যেতে পারে ক্রিকেট খেলোয়াড়দের সঙ্গে। ফ্রেডির ঠিক বিপরীত আমি, কারণ আমি কথা কম বলি এবং আমার চোখে মুখে একটা আবরণ থাকে সবসময়। ফ্রেডি একটি সরল শিশুর মতো এবং ওর মধ্যে যে কোনো দাম্ভিকতা নেই সেটা মানতেই হবে।

মার্গারেটের মন জয় করতে চাইছে ফ্রেডি খুব সুকৌশলে এটাই আমার মনে হচ্ছিল। ফ্রেডি নিজেই প্রস্তাব দিল একদিন, পিটার চল তুমি, আমি এবং মার্গারেট একদিন কোথাও বেড়িয়ে আসি। এতে মার্গারেট রাজী আছে। দোনামনা আমিও খানিকটা করেছিলাম কিন্তু আমার কোন বাধা টিকলো না ফ্রেডি এবং মার্গারেটের যুগপৎ উৎসাহে। তিনজনে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। আমার প্রায় সব জায়গাতেই যাওয়া হয়ে গেছে। দিল্লীর পথে ঘাটে ঘুরে বেড়াবো আমি, শুধু সেটাই ঠিক করলাম মনে মনে। বিভিন্ন জায়গায় আমরা ঘুরে বেড়ালাম সেইমতো প্রায় ঘণ্টা চারেক। ভারতীয়রা আমাদের ব্যাপারে কৌতূহলী খুবই। সেই কারণে আমাদের দেখছিল অনেকেই। একটি রেস্তোরাঁয় বসে লাঞ্চ খেলাম দিল্লীর চাঁদনি চক এলাকায়। আমাদের মত আরো অনেক বিদেশী দেখলাম সেখানে। মার্গারেটকে দেখলাম আমার সঙ্গে কথা বলার চেয়ে ফ্রেডির সঙ্গেই বেশী মনোযোগ দিয়ে কথা বলছে।

আমার দিকে তাকিয়ে খেতে খেতে হেসে বলল ফ্রেডি, তুমি খুবই ভাগ্যবান পিটার ভারতে যদি তুমি না আসতে তাহলে সত্যিই তুমি বঞ্চিত হতে কারণ এরকম একটি ম্যাডোনাকে কাছে পাওয়া সত্যিই খুবই ভাগ্যের ব্যাপার।

আমি কিছু না বলে শুধু মৃদু হাসলাম। মার্গারেটও প্রশংসা শুনে হাসল। মুগ্ধতার আভাস তার চোখ দুটোয়। অনেকটা সেরে উঠেছে এখন ওর শরীর। কমনীয়তা ফিরে এসেছে আবার আগের মত চেহারায়। তার কথাবার্তায় রীতিমতো রসিকতা। ফ্রেডির সঙ্গে মার্গারেটের দৃষ্টি বিনিময় মাঝে মাঝেই হচ্ছিল কথার ফাঁকে। ফ্রেডি মার্গারেটের প্রেমে পড়েছে এটা আমার মনে বেশ ভাল রকম ধারণা হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য একটা ব্যাপার আমি ঠিকমতো বুঝতে পারছি না যে মার্গারেটের আকর্ষণ ওর ওপরে আসে কিনা। বেশ ছটফটে স্বভাবের নারী মিমি। যেকোনো পুরুষকে নিজের দিকে আকর্ষণ করার ওর অসাধারণ ক্ষমতা আছে। যেকোনো পুরুষকে এক নিমেষে উন্মাদ করে দিতে পারে ওর কমনীয় এবং যৌন আবেদনময় চেহারা এবং দুচোখের অসাধারণ অভিব্যক্তি।

ফ্রেডির বুকে এখন তোলপাড় আরম্ভ হয়েছে এটা আমি বুঝতে পারছি বেশ ভালভাবেই। আমার কাছে মোটেই ভাল ঠেকছেনা ব্যাপারটা। হঠাৎ আমাকে বললো ফ্রেডি, পিটার কলকাতায় একটা ভাল চাকরীতে লাগিয়ে দাও মার্গারেটকে।

আমি হেসে বললাম, ইচ্ছা আছে কিন্তু দেখা যাক আমি কতদূর কি করতে পারি।

মার্গারেট বলে উঠল ফ্রেডি কিছু বলার আগেই, আমার খুব ভাল লাগে চাকরী করতে।

হেসে বলল ফ্রেডি, ভাল লাগাই উচিত, তোমার যদি আপত্তি না থাকে তো তাহলে আমি একটা কথা বলব পিটার।

আমি জবাব দিলাম, বলল।

ফ্রেডি বলল, কলকাতায় এবার তো এখান থেকে যাবে তোমরা, সেখানে এক ভাল হোটেলের ম্যানেজারের সঙ্গে আমার চেনা আছে। সেখানে হয়ত হতে পারে রিসেপশনিস্টের কাজ।

হাততালি দিয়ে মার্গারেট উৎফুল্ল ভাবে বলে উঠল, সত্যিই খুব মজা হবে তো তাহলে। 

আমি সেই মুহূর্তে মার্গারেটের দিকে তাকালাম কারণ আমার খুব ভাল লাগে ওর এই বালিকাসুলভ চপলতা। আমার মনে হয় ও যেন প্রচণ্ড সরল এবং ওর এই সরলতাই আমাকে আকর্ষণ করে প্রচণ্ড। ওকে কিন্তু আমার আজকাল প্রায়ই মনে হয় ও যেন এক রহস্যময়ী নারী। তখন ঠিক বোঝা যায় না ওর ব্যবহারের সঠিক অর্থ কি? ভাল করে মনোবিজ্ঞানটা পড়লে ভাল হত বলে তখন আমার মনে হয়। বিশেষভাবে গবেষণা করা উচিত নারীদের এই মানসিকতার বিষয়টি নিয়ে এবং এটাই ছিল আমার অভিমত।

মার্গারেট ওর সেই স্বভাবজাত চপল কণ্ঠস্বর নিয়ে বলে উঠল, বলো না কবে আমাদের কলকাতায় যাওয়া হবে?

আমি বললাম, যাব এবারই।

ফ্রেডি বলল, ঠিক আছে, কলকাতাতে এখন তো আমি যেতে পারছি না, কারণ আমাকে দিল্লীতে বেশ কিছুদিন থাকতে হবে তাই আমি একটা চিঠি লিখে দেবো। একটা রেস্তোরাঁর ব্যবস্থা হয়ে যাবে ওখানে তোমরা গেলেই।

রেস্তোরাঁ ছেড়ে আমরা ফিরে এলাম হোটেলে। মার্গারেট এবং ফ্রেডি গল্প করে কাটাল হোটেলে আসবার পথে বেশীরভাগ সময়টাই। ফ্রেডি একবার বলল এবং আমি শুনলাম, যে ও একটা কবিতা লিখবে মার্গারেটকে নিয়ে। মার্গারেট এই কথা শুনে হেসে আকুল হয়ে উঠল এবং তারপর আমার দিকে ফিরে বলল, জানো তো ফ্রেডি যদি আমাকে নিয়ে একটি কবিতা লেখে তা তুমি তাহলে আমাকে নিয়ে একটি গল্প লিখবে নিশ্চয়।

আমি বললাম হেসে, আমি নেহাৎই ডাক্তার, সাহিত্যিক নই, দেহের ডাক্তার না হয়ে মনের ডাক্তার হলে সবচেয়ে ভাল হত বলে আমার মনে হচ্ছে এখন।

মার্গারেট দুচোখে ঝিলিক দিয়ে বলে উঠল, কেন?

মার্গারেটের দিকে আমি তাকালাম এবং বললাম, খুব আকর্ষণীয় বস্তু হচ্ছে মেয়েদের মন, জানো কি, ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়ে গেছিল এই হেলেনের জন্য। ফ্রেডি তুমি কি বল।

সজোরে হেসে উঠল ফ্রেডি। তারপর বলে উঠল সে, এটা কি সহজ ব্যাপার যে ইংল্যান্ডের অষ্টম এডওয়ার্ড এক সামান্য নারী–ওয়ালিস মিগসনের জন্য রাজ্যপাট ছেড়েছিল! গবেষণার বস্তু রীতিমতো রমনী। ওদের কাছে তো শিশু আমরা। একেবারেই দুগ্ধপোষ্য, মার্গারেট কি বল!

খিলখিল করে হাসল মার্গারেট, তারপর আচমকা বলে উঠল, তুমি যা বলেছ তা ঠিক, নজর সব পুরুষেরই এক থাকে।

কথাটা প্রথমে ধরতে পারেনি ফ্রেডি কিন্তু পরে যখন বুঝল তখন হেসে উঠল হো হো করে এবং রীতিমতো লাল হয়ে উঠল কান দুটো আমার। হাসছিল তখন মার্গারেট। সত্যিই তোমার কোনো তুলনা নেই মার্গারেট, আমি বলে উঠলাম।

ফ্রেডি চলে গেল আরও আধঘণ্টা সময় আমাদের সঙ্গে কাটিয়ে। রাত্রে ডিনারের আগে যদি সম্ভব হয় আসবে একবার ও চলে গেল একথা বলেই। ঘাড় নাড়লাম আমি। মার্গারেট পোষাক ছেড়ে গাউন পরলো ফ্রেডি চলে যাবার পরই। গলার কাছে কারুকাজ করা খয়েরী রঙের একটা সাধারণ পোষাকে বারান্দায় এসে বসেছি আমি পোষাক ছেড়ে। আমার মুখোমুখি এসে বসলো মার্গারেট। গলায় সোনার নয় কিন্তু একটি সোনার মতই দেখতে দামী হার যা ওকে কিনে দিয়েছে ফ্রেডি বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসাবে। হারটা খুব অপূর্ব লাগছিল ওর সাদা দুধের মত শরীরে। আমি মার্গারেটের হারটা দেখে ওর বুকের দিকে তাকালাম এবং ঠিক তখনই ও আমাকে বলে উঠল, দুগ্ধপোষ্য শিশু।

ঘাড় নাড়লাম আমি। একটা ক্ষীণ যন্ত্রণা হচ্ছিল আমার ভেতরে। ফ্রেডিকে কি ঈর্ষা করছি আমি তবে। কিরকম যেন রাগ হচ্ছিল আমার মার্গারেটের ওপরে। সমস্ত জায়গা জুড়ে ক্ৰমশঃ নেমে আসছে সন্ধ্যার অন্ধকার। আমি ভাল ভাবে নিতে পারছি না ফ্রেডির সঙ্গে মিমির এই ঘনিষ্ঠতা। আমি মার্গারেটের দিকে তাকিয়ে বললাম, দুটো স্ত্রীই ফ্রেডিকে ছেড়ে চলে গেছে। হয়ত সুবিধার নয় ও স্বামী হিসাবে।

মার্গারেট বলল, তুমিই জানো যে তোমার বন্ধু কি রকম। আমি কি করে বলবো যে তোমার বন্ধু কেমন, তবে ওকে আমার ভাল লেগেছে বেশ।

আমি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললাম, ওকে তুমি সেরকম বেশী আমল দিও না।

ঠোঁট টিপে হেসে মার্গারেট বলল, ঈর্ষা হচ্ছে না কি তোমার বন্ধুর ওপর?

ঈর্ষা হবার কারণ কি, তবে অন্য পুরুষদের সঙ্গে বেশী ঘনিষ্ঠতা করো সেটা আমি চাইনা। ঠিক। ফ্রেডি পুরুষতো বটেই। যদিও হোক না কেন আমার বন্ধু।

তারপর সামান্য চুপ করে থেকে আবার বলল, যে চিঠিটা ও দেবে সেটা আমি নেব, কারণ ওটা আমার লাগবে যদি আমি কলকাতায় যাই।

আমি বললাম, তুমি কি সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছে যে চাকরী করবে?

তুমি তো ওখানে আর সবসময় থাকবে না আমার কাছে। কিছুতে একটা করতেই হবে।

আমি কোনোরকম জবাব না দিয়ে চুপ করে রইলাম। মার্গারেট আমার প্রিয়তমাকে আমি দেখতে লাগলাম একই ভাবে। আমার দিকে মার্গারেট তাকালো একবার। ওর ভেতরের অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছে স্বচ্ছ পাতলা গাউনের ভিতর দিয়ে। একবার আড়মোড়া ভাঙলো ও হাত দুটো উপর দিকে তুলে এবং তারপর হাই তুললল। খুব ক্লান্ত লাগছে, বলে উঠলো।

ওর একটা হাত ধরলাম আমি এবং তখন ও খানিকটা বিরক্ত ভঙ্গীতে বলল, আজকে আমার আর ভাল লাগছে না।

মিমি বুঝতে পেরেছিল যে আমি তাকিয়ে আছি ওর বুকের দিকে, কিন্তু ক্রমশঃ কমে আসছিল আমার নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ। মিমি প্লীজ একবার, আমি বলে উঠলাম।

ও বলে উঠল, না। কিছুক্ষণ বাদে উঠে ও ঘরের ভিতর চলে যাবার পর আমি গিয়ে দেখি যে ও ফ্রেডির দেওয়া উপন্যাসটা পড়ছে। আমি গিয়ে ওর হাত থেকে বইটা নিলাম এবং তারপর টেবিলের পাশে রেখে দিয়ে বললাম, শরীর খারাপ বললে যে তুমি?

কঠিন মুখে মার্গারেট বলে উঠলো, কেন তুমি কেড়ে নিলে বইটা, আমি বিছানায় বসে ওর ওপর ঝুঁকে পড়লাম, দু হাত ওর শরীরের দুদিকে রেখে। আমাকে সরিয়ে দিল ঠেলে ও, ওর দুটো হাত দিয়ে এবং ঝাঁঝিয়ে বলল, আমার তোমার সঙ্গে চলে আসাটাই ভুল হয়েছে কারণ সব সময় ন্যাকামি আমার ভাল লাগে না।

বেশ খানিকটা আহত হলাম আমি এবারে। কিন্তু ঠিক তখনই ওর সঙ্গে কিছুঝগড়াঝাটি করতে আমার মন চাইছে না। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আমার কিছুটা ফিরে এসেছে ওর সেই ধাক্কা খাবার পর। এটা আমি ভাবতেই পারছিলাম না যে ও আমার কাছে আর থাকবে না। আমার চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে যাবে ওকে দেখতে না পেলে।

জানোয়ার, এবার বলে উঠল মার্গারেট অস্ফুট কণ্ঠে।

বিছানায় গিয়ে আমি বসলাম কিন্তু বেরোচ্ছিল না কিছু মুখ দিয়ে। শুধু একটি কথাই বললাম, মিমি তুমি আমাকে অপমান করলে।

কোনো জবাব না দিয়ে টেবিল থেকে ফ্রেডির লেখা উপন্যাস নিয়ে মিমি পড়তে আরম্ভ করল।

মিসেস হ্যারিসনের প্রেমকাহিনী বইয়ের মলাটের ওপরেই এই লেখাটা জ্বলজ্বল করছে আমার চোখে। একটা দেওয়াল তৈরী করছে ফ্রেডি আমার এবং মার্গারেটের মধ্যিখানে। এটা আমাকে ভাঙতেই হবে তা যে করেই হোক। ডিনার খাওয়া আর হলো না আমার সে রাতে। কেউই খেলাম না, ফ্রেডি আসেনি, সেই কারণে আমরা শুয়ে পড়লাম।

একেবারে সকাল হতে ঘুম ভাঙলো। উঠে বসে, পাশ ফিরে তাকিয়ে মার্গারেটকে দেখলাম। ও ঘুমোচ্ছে অঘোরে এবং বইটা খোলা অবস্থায় উল্টে রেখেছে বুকে। নিষ্পাপ সরল বালিকার মত লাগছে ঘুমন্ত মার্গারেটকে। ভাল করে ওর দিকে তাকিয়ে আমি বইটা ওর বুকের উপর থেকে। তুলে নিয়ে রেখে দিলাম টেবিলের ওপর। একটুও ইচ্ছা করছিল না আমার ভেতরটা দেখতে। আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন হেরে গেছি ফ্রেডির কাছে এই জায়গাটায়। গভীর ঘুমে অচেতন মার্গারেট। কিছুটা উঠে গেছে তার গাউনের তলার দিকের অংশ এবং তার ফলে দেখা যাচ্ছে পা দুটোর ডিমের কাছের অংশ। মনে মনে বললাম, প্রিয়তমা মার্গারেট তুমি আমার। আমি ছাড়তে পারবো না তোমাকে কিছুতেই। আমার কাছে সারা পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যাবে যদি তুমি চলে যাও। তুমি কারোর নয় মার্গারেট, আমার, একান্তভাবেই শুধু আমার।

একভাবেই তাকিয়েছিলাম আমি মার্গারেটের দিকে। একটি পাখি অনবরত ডাকছিল গাছের উপর বসে। হঠাৎ চোখ মেলে ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। সেই পবিত্র হাসি দিয়ে ও আমাকে ভুলিয়ে দিল ওর গতরাতের অপমান। ওর জন্যে আমি এই মুহূর্তে করতে পারি সবকিছু।

.

১৮.

 বেলা নটা নাগাদ আমি বেরিয়ে পড়লাম ব্রেকফাস্ট করে। বিশেষ দরকার আছে একটা। একটা ট্রাংকল করতে হবে লন্ডনে আমার হোটেলের কর্মচারীকে। বোম্বের হোটেলে নিশ্চয় আমার কর্মচারী ফোন করেছিল। ওখানে ফোন করা হয়নি অবশ্য এখনও আমার। আমার আসলে ভীষণ দ্বিধা হচ্ছিল বোম্বেতে ট্রাংকল করব না করব না। হ্যারিয়েট আমাদের সন্ধান জানুক এটা আমি কোনমতেই চাইছিলাম না। একটা কাজ অবশ্য আমি ইতিমধ্যে করেছিলাম। হ্যারিয়েটের স্কুলে ট্রাংকল করেছিলাম বোম্বে থেকে চলে আসার ঠিক একমাস পরে। সেদিন স্কুলে আসেনি অবশ্য হ্যারিয়েট। এখানে ফিল্মের কাজে যে আমরা আটকে গেছি তা আমি ট্রাংকলে স্কুলের হেডমিসট্রেসকে জানিয়ে দিয়েছিলাম। আরো মাসখানেক দেরী হতে পারে, তিনি যেন ব্যাপারটা অবশ্যই জানিয়ে দেন মিসেস হ্যারিয়েট মুরকে। তিনি যেন চিন্তা না করেন অযথা।

অবশ্য জানিয়ে ছিলেন হেডমিসট্রেস যে, খুবই চিন্তিত উনি ওনার মেয়ের জন্য এবং সবসময়ই বলেন ওদের কাছে ওনার মেয়ের কথা।

আমি বলেছিলাম আশ্বাস দিয়ে, এটা ওকে জানিয়ে দেবেন যে চিন্তার কোনো কারণ নেই, ও ভালই আছে আমার কাছে। শেষ হতে একটু সময় লাগবে কারণ ফিল্মে নামার জন্য অনেক রকম ব্যাপার স্যাপার আছে।

আমার প্রথম এবং শেষ ট্রাংকল ছিল সেইটাই। তারপর দীর্ঘকাল আর আমি করিনি। একেবারেই ঝুঁকি নিতে চাই নি হোটেল থেকে ট্রাংকল করবার। হ্যারিয়েট জানুক যে আমরা ঠিক কোথায় আছি সেটা আমি চাই না একেবারেই। আমার হোটেলের ঐ কর্মচারীকে লন্ডনে ট্রাংকল করলাম এবং বললাম যে ও যেন আমার সমস্ত টাকা অবিলম্বে দিল্লীর এই হোটেলের নামেই পাঠিয়ে দেয়। ওকে ঠিকানাটাও দিলাম। অবশেষে ট্রাংকল করলাম বোম্বের হোটেলে। ভদ্রলোক একটু অবাক হল আমার ফোন পেয়ে। বলল, স্যার কেমন আছেন, চিন্তা করছিলাম আমি আপনার কথাই।

আমি ভাল আছি, মিসেস মুর আমাদের ওখানে কি এসেছিল?

কর্মচারী বলল, স্যার উনিতো ওনার মেয়ের জন্য খুবই চিন্তিত এবং সেই কারণে উনি বেশ কয়েকবার এসেছিলেন ওনার মেয়ের খোঁজে।

আমি জবাব দিলাম, আপনি কিছু ভাববেন না, আবার যদি উনি না আসেন, তাহলে আপনি ওনার বাড়ি গিয়ে বলে দেবেন যে, আমরা ভাল আছি, যেহেতু আমরা ফিল্মের কাজে ব্যস্ত, সেহেতু ফিরতে আমাদের একটু দেরী হবে।

কর্মচারী বললো, আমি বলে দেবো নিশ্চয় স্যার, আপনি এখন কোথায় আছেন বলবেন?

আমার ঠিকানা ওকে বলা যাবেনা কিছুতেই। বললাম নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় আমাদের থাকা হচ্ছে না ফিল্মের জন্য আমরা এখন রয়েছি ফিল্ম ইউনিটের সঙ্গে। শুনুন আমার টাকা আপনি পাঠিয়ে দেবেন লন্ডনের ঠিকানায়। তবে কেউ যদি চায় এখানকার ঠিকানা তাকে কিন্তু কোনো মতে দেবেন না। মিসেস মুর চাইলে তাকেও দেবেন না বুঝেছেন।

এবার একটু ঘাবড়ে গেল কর্মচারীটি। বললো, স্যার ঠিক আছে, আপনি যা বলবেন তাই হবে।

আমি এবার হোটেলের দিকে পা বাড়ালাম সব কিছু সেরে। কে জানে কোথা দিয়ে যে কেটে গেল ঘণ্টা চাবেক সময়। হোটেল দুটোকে বিক্রী করে দিতে হবে। মার্গারেটের কথাটা মনে পড়লো হোটেলের সামনাসামনি এসে। কি করছে এখন ও কে জানে। হোটেলে পা রাখতেই কাউন্টারের ম্যানেজার ভদ্রলোক আমাকে ডাকলেন। আমি এগিয়ে যেতেই উনি আমার হাতে একটি চিরকুট ধরিয়ে দিলেন। তাতে লেখা রয়েছে খুলে দেখলাম, পিটার, আমি ফ্রেডির সঙ্গে একটু বেরোচ্ছি ওর অফিসটা দেখতে অনেকক্ষণ তোমার জন্য অপেক্ষা করার পর বেরোলাম। কিছু ভেবোনা, আমি ফিরে আসব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

ইতি– তোমার প্রিয়তমা মিমি।

আমার মাথা গরম হয়ে গেল চিঠিটা পড়ে। সোজা দোতলায় উঠে এসে বারান্দায় দাঁড়ালাম এবংটুকরো টুকরো করে ফেলে চিঠিটাকে আমি উড়িয়ে দিলাম হাওয়ায়। একটু দেরী হবে, যাবার সময় আমি বলে গেছি মার্গারেটকে। আমাকে না বলে তা সত্ত্বেও চলে গেছে মার্গারেট। আগুন জ্বলে উঠেছে রীতিমতো আমার মাথায়। ব্যাপারটাকে ফয়সালা করতে হবে তা যে করে থোকনা কেন।

আমি বিন্দুমাত্র আর আমল দিতে রাজী নই ফ্রেডিকে। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, যে ফ্রেডির উদ্দেশ্যটা কি। ফ্রেডি এবং মার্গারেট উভয়েই বন্ধু। ওর এটা বোঝা উচিত ছিল যে মার্গারেট আমার প্রেমিকা। ঘরে গিয়ে পোশাক বদল করে আমি এরপর বারান্দায় বসলাম। ক্ৰমশঃ বারান্দার বাইরে সন্ধ্যা নামছিল। আকাশে মেঘ জমেছে দেখলাম এবং এতে বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আমি বসেছিলাম ঘণ্টাখানেক একভাবে, কারণ আমার রীতিমতো অসহ্য লাগছিল ভেতরটা। আমি বিশ্বাস রাখতে পারছিলাম না আর কোনো নারীর উপরে। কম বয়েসী সুন্দরী এবং ছটফটে স্বভাবের মেয়ে মার্গারেট। এ থেকে পুরুষের কোনো রকম প্রলোভান আসাটা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। আমার এখন সেক্ষেত্রে দায়িত্ব মার্গারেটকে পুরোপুরি আড়াল করে রাখা। ওর একমাত্র অভিভাবক এখন আমি। মার্গারেটের ফেরার কোনো নাম নেই যদিও দীর্ঘসময় কেটে গেল। আকাশে মেঘ জমছে ক্রমশঃ এবং বৃষ্টি আসতে পারে যেকোনো সময়। আমি রীতিমতো চিন্তায় অস্থির হয়ে বারান্দায় পায়চারি করতে লাগলাম কিছুক্ষণ। ভাল লাগছে না কিছুই। আমি আমার দুচোখে অন্ধকার দেখি মার্গারেট যদি আমার সামনে না থাকে। ফ্রেডির ঘরটা একবার দেখে এলে হয়, হঠাৎ আমার মনে হল আমি দ্রুত পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে একেবারে শেষপ্রান্তে ফ্রেডির ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ঘরের ভেতর আলো জ্বলছে, কিন্তু বাইরে তালা। আমি কি–হোল দিয়ে ভেতরটায় উঁকি দিলাম এবং তাতে মনে হল যে ঘর ফাঁকা, তখন আমি ফিরে এলাম কাউন্টারের। আমাকে দেখে মৃদু হাসলো রিসেপশনিস্ট। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, বলতে পারেন মিঃ উইলসন কখন বেরিয়েছেন?

মহিলাটি আবার মৃদু হাসলো। এবং বলল, মিঃ ব্রাউন, আমি ঠিক বলতে পারছি না, কারণ আমি তখন ডিউটিতে ছিলাম না তাই আমাকে ক্ষমা করবেন।

আচ্ছা, এই কথা বলে আমি বাইরে গেলাম এবং এক প্যাকেট সিগারেট কিনে নিয়ে ফিরে এলাম। আমি ঠিক ধুমপায়ী নই। তবে চার-পাঁচটার বেশী সিগারেট আমি খাই না দিনে। একটা সিগারেট ধরালাম বারান্দায় গিয়ে। ক্রমশঃ কমে আসছে রাস্তায় লোকজনের চলাচল। মেঘ ঘন হয়ে আসছে আকাশে এবং বৃষ্টি নামতে পারে যে কোনো সময়ই। একটি ভয় চেপে বসল, আবার মনের মধ্যে একটি সন্দেহ খেলে গেল হঠাৎ। ফ্রেডির সঙ্গে চলে গেছে কি মার্গারেট! কেমন। যেন অসুস্থ লাগছে আমার নিজেকে। সিগারেট খাচ্ছিলাম চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজে। পালিয়ে যেতে পারে না আমার কাছ থেকে মার্গারেট। একান্তভাবে নির্ভরশীল ও আমার উপর। আমার এবং মার্গারেটের পরস্পরের পরস্পরকে ছাড়া চলে না। ওকে আমি খুঁজে বেড়াবো পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ও যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আমার সারা দেহ জ্বলে উঠল ফ্রেডির কথা মনে পড়া মাত্রই। এই সব লেখক ভীষণ বিপজ্জনক যদিও আমার বন্ধু। এরা রীতিমতো সিদ্ধহস্ত পরের প্রেমিকা কিংবা স্ত্রীকে বাগিয়ে নেবার ব্যাপারে। আমার একসময়ই ঠিক হয়নি ফ্রেডির সঙ্গে মার্গারেটের আলাপ করিয়ে দেওয়াটা। ফ্রেডি সেই জাতেরই পুরুষ যাদের চোখ লক্ করে ওঠে মেয়েমানুষ দেখলেই। কার স্ত্রীর কেচ্ছা কাহিনী নিয়ে এ ইতিহাস লিখেছে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই।

পরিবেশ ক্ৰমশঃ নিস্তব্ধ হয়ে আসছে ঝির ঝির বৃষ্টি আরম্ভ হবার পর। শুনতে পাচ্ছিলাম গাছের পাতায় বৃষ্টি পড়ার শব্দ। বৃষ্টির রেখাগুলি দেখা যাচ্ছে আলোর ভিতর দিয়ে। সময় হয়ে গেল ডিনারের। এরপর হঠাৎ একটি গাড়ির শব্দে আমার চমক ভাঙল। বারান্দায় উঠে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি সঙ্গে সঙ্গে। যা ভেবেছি তাই ঠিক। গাড়িটা এসে থেমেছে ঠিক হোটেলের গেটের সামনে। সেদিকে একভাবে তাকিয়ে থাকার পর, দরজা খোলার শব্দ হল হঠাৎ এবং এক যুবতী তার থেকে নেমে এল। ভাল করে তাকিয়ে দেখি মিমি। আমার মার্গারেট। একটা ছোটো আকারের– ছাতা হাতে। হোটেলের দরজার ভেতরে ঢুকলো মার্গারেট গাড়ি থেকে নেমে। ও তাহলে ফিরে এসেছে, কিন্তু আমি তো পাগল হয়ে গেছি নানারকম চিন্তায়। কিন্তু ফ্রেডিকে তো দেখতে পেলাম না, ও তাহলে কোথায় গেল। নানা প্রশ্ন ভিড় করলো মনের মধ্যে। মার্গারেটের পায়ের শব্দ পেলাম সিঁড়িতে, ও উপরে উঠে আসছে। একটি খুশীর ভাব উথলে উঠছে ওর চলার ছন্দে। মনের নিছকই কল্পনা এটি, তাই আমি টান টান হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

ছুটতে ছুটতে এসে মার্গারেট দোতলায় উঠে আমার পিছনে হাত রেখে বলল, তুমি কি রাগ করেছে পিটার?

আমি দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে রইলাম কিন্তু কোনো কথা বললাম না এবং সেই সময় একটি একটি করে পাতা ঝরে পড়ছিল বাগানের।

মার্গারেট বলল, কি হলো, শোনো লক্ষ্মীটি।

চোখ দুটো জ্বলছিল আমার, আমি ঘুরে দাঁড়ালাম এক ঝটকায়। মার্গারেট ভয় পেয়ে গেল আমার চোখের দিকে তাকিয়ে। আমি কিন্তু বলে….এই কথা বলল সে কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে অস্ফুট স্বরে।

সজোরে এক থাপ্পড় কষালাম আমি ওকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে। ও খানিকটা ঘাবড়ে গেল এই আকস্মিক আঘাতে, জলে ভরে গেল ওর চোখ দুটো, আমায় তুমি মারলে, এই কথা বলল শুধু ও জড়ানো কণ্ঠস্বরে।

ও আর না দাঁড়িয়ে সোজা ঘরের মধ্যে ঢুকে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগল ছাতাটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে। ঘরে ঢুকলাম আমি ওর পিছন পিছন, তুমি কি যা ইচ্ছা তাই করবে, কি ভেবেছে কি, কথাটা বললাম কঠিন স্বরে ওর সামনে দাঁড়িয়ে।

একই ভাবে কাঁদতে লাগল মার্গারেট কোনো কথার জবাব না দিয়ে। চীৎকার করে বললাম আমি আবার, জবাব দাও কি হলো?

আমি তো জানিয়ে গেছি তোমায়।

জবাব দিল মার্গারেট কাঁদতে কাঁদতে। ওর চুলের মুঠি ধরে আমি ওকে তুলে ধরে বসিয়ে দিয়ে বললাম, কি হয়েছে তাতে, আমি তোমায় বারণ করেছি ওর সঙ্গে বেশী মেলামেশা না করতে।

এবার আরো জোরে কেঁদে উঠল মার্গারেট। ও রীতিমতো প্রতিবাদ করে অন্য সময়ে, কিন্তু এখন করল না বলে অবাক হয়ে গেলাম। সত্যিই বিস্ময়কর ব্যাপার। আমি কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না ওর এইরকম আচরণের অর্থ। ছেড়ে দিলাম ওর চুলের মুঠি এবং বললাম, যাও পোষাক ছেড়ে গা ধুয়ে এস এখনও ডিনার হয়নি।

কি হলো যাও–মার্গারেট তখনও, কাঁদছিল তাই ধমকে বললাম। বিছানা ছেড়ে উঠে মার্গারেট গায়ের পোষাক খুলে একটা তোয়ালে জড়িয়ে ঢুকে গেল বাথরুমে। বিছানায় শুয়ে রইলাম আমি চুপচাপ। টেবিলে পড়ে রয়েছে ফ্রেডির লেখা বইটা, আমি উল্টে রাখলাম বই এর মলাটটা কারণ আমার দেখতে ইচ্ছা করছিল না ফ্রেডির নামটা। কেটে গেল প্রায় মিনিট পঁচিশেক। সেই তোয়ালে জড়িয়েই ও বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল। ওর দিকে তাকিয়েও আমি ইচ্ছে করে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে গম্ভীর হয়ে গেলাম। ধীরে ধীরে মার্গারেট তার প্রিয় পোষাক সেই সাদা রঙের গাউন পরে নিল। এটা চমৎকার মানায় আমার সুন্দরী প্রিয়তমা মার্গারেটের শরীরে। বাইরে আমি গম্ভীর থাকলাম যদিও ভেতর ভেতর উত্তেজিত বোধ করছি। আমার দিকে তাকালো মার্গারেট বার কয়েক। তারপর খুব আস্তে বলল, হয়ে গেছে আমার।

ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে তাই আমি উঠে দাঁড়ালাম। মার্গারেটের দিকে একবার তাকিয়ে বললাম, চলো।

বড়োতজার আধঘণ্টা লাগল আমাদের খাওয়া দাওয়া শেষ করতে। আমি আর ও বারান্দার চেয়ারে বসলাম খাওয়া শেষ করে। চুপচাপ এবং বিষণ্ণ মার্গারেট। ফ্রেডি তোমার সঙ্গে আসেনি? আমি জিজ্ঞেস করলাম মার্গারেটকে।

মার্গারেট কোনো জবাব দিলনা, সেই কারণেই আমি বললাম, কি হলো?

 মার্গারেট যা বলার তা বললো এবং এরপর দুজনে আমরা চুপচাপ রইলাম।

ফ্রেডি কেমন লোক, আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম।

 জানি না, মার্গারেট বলে উঠল।

আমি বললাম, আমি তোমাকে নিষেধ করে দিয়েছিলাম না ওর সঙ্গে বেশী মেলামেশা করতে।

আর মিশবো না, ও জবাব দিল।

কি হয়েছে তোমার, তুমি এত চুপচাপ কেন? আমার কথার উত্তরে ও কিছু না বলাতে আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, কি হলো?

মার্গারেট চমকে উঠে কাঁদতে আরম্ভ করলো আবার আমার বুকের ভেতর মুখটা খুঁজে। ও তো ওরকম ধরনের আচরণ করে না, তাই একটু অবাক হয়ে গেলাম আমি। ওকে যেন কিরকম অস্বাভাবিক লাগছে। ওর মাথায় হাত রেখে আমি বললাম, কি হয়েছে তোমার মিমি?

মার্গারেট কাঁদছিল ফুঁপিয়ে। তোমার দুঃখ হয়েছে যেহেতু আমি তোমায় মেরেছি, আমি বললাম।

মার্গারেট ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, কিছুই হয়নি আমার কিছুই হয়নি।

ফ্রেডি কি কিছু বলেছে তোমায়? আমি এবার বললাম। ও জবাব দিল চমকে ওঠে, না।

দুজনে বিশ্রাম নিলাম বেশ কিছুক্ষণ বারান্দায় তার কিছুক্ষণ পর ঘরে গিয়ে মার্গারেট সোজা বিছানায় শুয়ে পড়ল এবং ফ্রেডির বইটা যে ও ছুঁলোনা সেটাও আমি লক্ষ্য করলাম। ও শুয়ে রইল চুপচাপ কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে। ওর মাথার কাছে বসলাম আমি এসে। এবং ওর মাথায় হাত বুলোত লাগলাম পরম আবেগে। চোখ বুজে ছিল মার্গারেট, আমি বললাম, তুমি কিছু মনে করো না মিমি কারণ তখন আমার মাথার কোনো ঠিক ছিল না।

এরপর আমি সরে এলাম ওর কোমরের কাছে এবং ওকে চুমু খেলাম দুহাত ওর দুপাশে রেখে উপুড় হয়ে। উত্তেজিত হয়ে উঠছিলাম ক্রমশঃ আমি এবং ততক্ষণে খুলে দিয়েছি ওর গাউনের উপরকার অংশটি। এবার বলে উঠলো মার্গারেট, না, প্লীজ আজ নয়… ক্ৰমশঃ আমার সংযম কেড়ে নিচ্ছে, আমি বললাম কেন?

শরীরটা আমার ভাল লাগছে না।

কোথায় গিয়েছিলে তোমরা? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

 ধীরে ধীরে ও বলল, প্রথমে ফ্রেডির ওখানকার একটি অফিসে এবং তারপর একটি হোটেলে।

ওর বুকের উপর আমি মুখ রেখেছি এবং তার ফলে আমার চেতনা ক্রমশঃ হারাচ্ছে। আমি, আরো নামিয়ে দিলাম ওর গাউনটা। ঝাঁকিয়ে উঠল মার্গারেট, না প্লীজ আজ নয়।

আমি তোমাকে এক্ষুনি চাই, কেন নয় বলছ।

আমি মার্গারেটকে মুক্তি দিলাম এর প্রায় আধঘণ্টা পরে এবং ও পোষাক না পরে ফোঁপাতে লাগলো উপুড় হওয়া অবস্থাতেই, তখন শুনতে পেলাম দেওয়াল ঘড়িতে দুটো বাজার শব্দ।

.

১৯.

আমরা কলকাতায় এসেছি তা মাস দুয়েক হয়ে গেল। এই এলাকাটা মোটামুটি ভাল, আমরা যে এলাকাটায় এসেছি। এখানে থাকে আমাদের স্বদেশীয় অনেক লোক, সাহেবপাড়া বলে জায়গাটাকে এখানকার লোকেরা। আমি একটি বেশ ছিমছাম এবং খোলামেলা বাড়ি ভাড়া নিয়েছি। বাড়িটি দোতলা এবং এর একতলায় একখানা বড় ঘর, যা ড্রয়িং রুম হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং দোতলায় মোটামুটি বড় একটি বেডরুম, যার পাশে রয়েছে ছোটো রান্নাঘর। খানিকটা দূরে রয়েছে বাথরুম। আমাদের বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে মালিকের বাড়ি। আমাদেরই স্বজাতি ভদ্রলোক। এখানকারই এক মহিলাকে বিয়ে করেছেন। ভদ্রলোক খুব আমুদে স্বভাবের এবং দুখানা ছেলেমেয়ে ওনার। আমার পছন্দ হয়েছে মোটামুটি বাড়িটা এবং মার্গারেটেরও তাই। এবারে ঠিক করেছি এখানে চেম্বার করবো। যদিও হার্ট স্পেশালিস্ট আমি, তথাপি ঠিক করেছি যে সবরকম চিকিৎসাই করব। তবে বেশী বজায় রাখব আমার কাজের মধ্যে মানুষের সেবাটা।

আমার খুব ভাল লাগছে এই শহরটাকে যত দেখছি ততই। এটি দিল্লী কিংবা বোম্বের তুলনায় একেবারেই আলাদা। দেখা হয়ে গেছে অক্টারলোনি মনুমেন্ট, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। দুটোই খুব ভাল লেগেছে। তাজমহলকে মনে রেখে তৈরী করা হয়েছে ভিক্টোরিয়াকে। কুতুবমিনারকে মনে রেখে মনুমেন্ট, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি আমি এবং মার্গারেট। হগ সাহেবের মার্কেট খুব একটা দূরে নয় আমাদের বাড়ি থেকে। সব কিছুই পাওয়া যায় ওখানে, একদিন চিড়িয়াখানা গেলাম ট্রামে করে। মার্গারেট রীতিমতো খুশী ট্রামে চড়ে এবং চিড়িয়াখানা দেখে। কত বড় জায়গা এবং ভাবাই যায় না ওখানেকত পশুপাখি রয়েছে। যা দেখে ও বাচ্চা মেয়ের মত হাততালি দিয়ে উঠেছিল। বাঘ দেখে এবং বাঘের আওয়াজ শুনে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল ভয়ে। শহরটা যেন অতিমাত্রায় জীবন্ত বলে সব দিক থেকেই আমার মনে হয়েছিল। লোকজনের ভিড় সবসময় সবজায়গায়। তবে আমাদের দেখলে এখানকার বেশীরভাগ লোক তাকিয়ে থাকে ভয় আর কৌতূহল মাখানো দৃষ্টিতে। এখানকার লোকেরাই ভারতের মধ্যে সব থেকে বেশী বুদ্ধিমান এবং সংস্কৃতিবান। রবীন্দ্রনাথ সেই বাঙালী কবি যিনি নোবেল প্রাইজ পেয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন, তিনি ছিলেন কলকাতারই মানুষ। একদিন জোড়াসাঁকোয় গিয়েছিলাম কবির বাড়ি দেখতে। যদিও জায়গাটা খুব ঘিঞ্জি তথাপি কবির বাড়িটা কিন্তু খুবই ভাল। খুবই শ্রদ্ধা হয় দেখলে। যদিও মার্গারেট এখানকার মেয়ে তথাপি সে জানে না রবীন্দ্রনাথকে।

একটু পাল্টে গেছে মার্গারেট এখানে এসে এবং সে একটু চুপচাপ হয়ে গেছে। আমার ওকে খুব ভাল লাগে যখন মাঝে মাঝে খুশী থাকে ও। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিই এবং আমার কোলে ও চুপচাপ শুয়ে থাকে। এখানে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দেব আর্ত মানুষের সেবায়, সেটাই ভাবছি। এই কলকাতা জব চার্নকের শহর। আমি বলা যায় ভালবেসে ফেলেছি এই অদ্ভুত শহরকে। একজন মহিলা ডরোথি টেলরকে রেখেছি এই বাড়ির সমস্ত কাজকর্ম দেখাশুনা করার জন্য। সবে তিরিশ পেরিয়েছে মহিলা, আমার চেয়ে ক বছরের ছোট। ওকে বেশ কম বয়েসী লাগে ওর ছোটো খাট এবং আঁটো সাঁটো চেহারার জন্য। মার্গারেটের তো খুবই ভাল লেগেছে এবং ও আন্টি বলতে অজ্ঞান। ডরোথির মুখ কিন্তু সুন্দর নয় যদিও চেহারাটা মোটামুটি ভালো। দাঁতগুলো উঁচু কিন্তু চোখদুটো আবার মোটামুটি ছোটো এবং ভেতরে ঢোকা। ওর ব্যবহারের দ্বারা ইতিমধ্যেই আমাদের মন জয় করতে পেরেছে। আমি নিশ্চিন্ত ওর হাতে রান্নাবান্না থেকে শুরু করে বাড়ির সব কিছু দায় দায়িত্ব দিয়ে। ডরোথির স্বামী মারা গেছে এবং কেবল একটি মাত্র ছেলে আছে। শর্টহ্যারল্ড শেখার জন্য মার্গারেটকে এখানে এক ভদ্রমহিলার কাছে ভর্তি করে দিয়েছি। উনি শেখান নিজের বাড়িতেই। এক বিদেশী ফার্মে উনি চাকরী করেন। উনি বাড়িতে ওনার অবসর সময়ে টাইপ এবং শর্টহ্যারল্ড শেখান। গোটা তিনেক টাইপ রাইটার আছে বাড়িতে। আরো কয়েকজন শেখে ওখানে মার্গারেট ছাড়া। ওখানে যায় ও প্রতিদিন বিকালবেলা। নানা ধরনের বই আমি কিনে দিয়েছি মার্গারেটকে এবং আমি এটাই চাই যে ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করুক।

যখন প্রথম দেখেছিলাম মার্গারেটকে তখন একধরনের ছিল ও এবং ক্রমশঃ বদলে যাচ্ছে ও এখন। যদিও ওর ছটফটে এবং জেদী স্বভাবটা এখনো যায়নি। ইদানীং কেমন যেন চুপচাপ হয়ে যায় ও মাঝে মাঝে। বিস্মিতমুখে অনেকক্ষণ ধরে ও মুখ বুজে শুয়ে থাকে। ঝাঁঝিয়ে উঠে ও ওর কাছে আমি গেলে। ওর কাছ থেকে তখন দূরে থাকি আমি খানিকটা ভয় পেয়ে। লক্ষ্য রাখতে ভুলিনা অবশ্য ওর উপর। ওর ওপর যেন ভালভাবে লক্ষ্য রাখে সেটা আমি ডরোথিকে বলেছি। আমার কাছে আরো রহস্যময়ী হয়ে উঠেছে আজকাল মার্গারেট। একদিন আমি বেরিয়ে গেছিলাম বাইরে একটা দরকারে। বেরিয়েছিলাম ব্রেকফাস্ট সেরেই। বেশ বেলা হয়ে গেল ফিরতে এবং বাড়ি ফিরে দেখি যে ড্রয়িংরুমের দরজাটা আলগা করে ভেজানো। এরপর আস্তে করে ঠেলে ঢুকে দেখলাম যে মার্গারেট বসে রয়েছে একটি চেয়ারে এবং ওর পা দুটো তুলে দিয়েছে সামনের টেবিলের ওপর। ওর শরীরে পোষাক নেই একচিলতে। মনোযোগ দিয়ে পড়ছে একটা বই। ও বইটা লুকোবার চেষ্টা করলে আমাকে দেখেই। কি ব্যাপার ও কি পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি, এই ভেবেই আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম।

ওর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, বসে আছ কেন ওরকম হয়ে, কি ব্যাপার?

খিলখিল করে হেসে উঠল মার্গারেট, পোষাক পরে নাও, আমি বলে উঠলাম।

মার্গারেট আদুরে ভঙ্গীতে উঃ বলে দুটো হাত পেছনে নিয়ে বলে উঠল, এখন উপরে যাও তুমি।

কি বই দেখি ওটা। আমি বললাম এবার। ও লুকোবার চেষ্টা করলো প্রাণপনে। ওর কাছ থেকে আমি এবার বইটা কেড়ে নিলাম জোর করে। ছবির অ্যালবাম একটা, তাতে রয়েছে পুরুষ নারীর যৌনমিলনের কিছু ছবি বিভিন্ন ভঙ্গীতে। উল্টে পাল্টে আমি বইটা দেখে বললাম, পরে নাও পোষাক। গম্ভীর হয়ে মার্গারেট এরপর স্কার্টটা পরে নিল।

ও আমার সঙ্গে ওপরে এলে আমি বললাম, বসো ঐ চেয়ারটায়।

 সামনের চেয়ারে বসে ও একভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।

খুব স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করলাম আমি, কোথায় পেলে তুমি এই বইটা? মার্গারেট চুপ করে থাকাতে আমি ধমকে বললাম, কোথায় পেলে তুমি এই বইটা আমায় বল?

রেগে গেল মার্গারেট এবার, যদিও সেটা আমার কাছে খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল। ও বলে উঠল, সব কথা কি তোমাকে আমার বলতে হবে, স্বাধীনতা কি আমার একটুও থাকবেনা তোমার জন্য?

কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম এবার আমি। এতে এক পরিণত নারীর কণ্ঠস্বর, এতো সেই সরল বালিকা মার্গারেট নয়। খানিকটা দমে গেলাম, মনে মনে বুঝলাম কোনো কিছু কাজ হবেনা রেগে গেলেও। আমি তখন হেসে বললাম, ঠিক আছে, আমি স্বাধীনতা দিলাম তোমাকে, আমাকে বলা উচিত যদি তুমি মনে কর তবেই বলল। ওর দিকে তাকালাম আমি এই বলে।

মার্গারেট ঝাঁঝিয়ে বলল, এতোক্ষণ তো ধমকাচ্ছিলে, ন্যাকার মত এখন আবার কি হল যে তাকিয়ে আছ।

ওর মাথার চুলে আমি হাত রাখলাম ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে। তুমি অতো রেগে গেছ কেন?

ও আমার মাথার ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, আমাকে ছাড়ো, তুমি আমাকে ছোঁবে না।

বেশ খানিকটা আহত হলাম আমি। আমি হাসি ভাব তবু বজায় রাখলাম বাইরে। বললাম, তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাব আমি আজ বিকালে। কিছু কিছু মজার বই কিনে দেবো আমি তোমাকে।

মার্গারেট বললো গম্ভীর হয়ে, আমি এরকম ছবিওলা বই কিনবো।

আমি জানি না ও ধরনের বই কোথায় পাওয়া যায়।

 মার্গারেট বলল, ঠিক আছে, আমি জেনে নেব।

ক্ষীণ আশা যেন এবার আমি দেখতে পেলাম, কার কাছ থেকে জানবে, আমি জিজ্ঞেস করলাম।

আমার এক বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড দিয়েছে ওকে, আমি নিয়ে আসবো তার কাছ থেকে।

এবার বুঝতে পারলাম আমি মার্গারেট যেখানে শর্টহ্যারল্ড শিখতে যায়, সেখানকারই কোনো বান্ধবী হয়ত দিয়েছে ওকে বইটা, তুমি বইটা ওকে ফিরত দিয়ে দাও, আমি বললাম।

আমার সামনে বইটা এগিয়ে ধরে মার্গারেট আমাকে দেখালো যৌন মিলনের একটি বিশেষ অস্বাভাবিক ছবি এবং দেখানোর পরই ও হাসতে লাগল খিলখিল করে।

ওর দিকে গম্ভীর মুখে আমি আবার তাকালাম। আমি সজোরে হেসে উঠলাম যদিও তাতে ও খানিকটা ঘাবড়ে গেল। ওকে কাছে টেনে নিয়ে আমি ওর দুচোখে, ঠোঁটে, গালে, উন্মত্তের মতো চুমু খেলাম। ক্রমশঃ উত্তেজিত হয়ে উঠল মার্গারেট। ওর বুকে আমার একটা হাত রাখলাম। আমার বুকের উপরও মার্গারেটের একটা হাত। ওর খেলার বস্তু আমার বুকের চুলগুলো। আমার কিছু টাকার দরকার।

আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন?

ও জবাব দিল, আমার খুব লজ্জা লাগে কারণ আমার বন্ধু বান্ধবীরা রোজ আমাকে খাওয়ায় অথচ আমি ওদের কিছু কোনোদিন খাওয়াতে পারিনা।

আদর করতে করতে আমি ওকে বললাম, ঠিক আছে, তুমি তোমার সব বন্ধুবান্ধবীদের একদিন আমার এখানে নিয়ে এস।

মার্গারেট বলল, আমি আনব ঠিক কথা কিন্তু আমাকে তুমি কিছু টাকা দাও।

আমি বললাম, তাহলে টাকার আবার কি দরকার?

মার্গারেট একটু অভিমান প্রকাশ করে বলল, কেন আমার বুঝি কোনো কারণে টাকার দরকার থাকতে পারে না।

ঠিক আছে দেওয়া যাবে।

আমি ওকে টাকা দিইনি যদিও বলেছিলাম দেব। আমার পকেট থেকে দিন সাতেক পর বেশ কিছু টাকা কমে গেল। আমি প্রচণ্ড বিশ্বাস করি ডরোথিকে। এটা অসম্ভব যে ও আমার টাকা নেবে। আমি ওকে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করে দেখেছি। বিশ্বাস করা যায় ওকে পরিপূর্ণ ভাবেই। ডাকলাম আমি মার্গারেটকে। ও তখন গল্প করছিল ডরোথির সঙ্গে রান্নাঘরে। খবরের কাগজ পড়ছিলাম আমি চেয়ারে বসে। আমার সামনে মার্গারেট এসে দাঁড়ালো, আমি ওকে বসতে বললাম। চুপচাপ কাটলো কিছুক্ষণ। নিজেই অধৈর্য হয়ে একসময় বলল মার্গারেট, ডাকছো কেন, কি ব্যাপার?

শান্ত ভাবে আমি বললাম, কিছু টাকা আমার পকেটে কম হচ্ছে।

আমার দিকে তাকিয়ে তারপর মার্গারেট বললো, আমি নিয়েছি টাকা।

গম্ভীর হয়ে এবার আমি বললাম, টাকাটা তোমার নেওয়া উচিত হয়নি আমাকে না বলে।

তুমি দাও নি তত আমাকে আমি যখন তোমার কাছে চেয়েছিলাম।

বললাম, হয়তো আমি ভুলে গেছিলাম, কিন্তু তুমি তো আবার চাইলে পারতে।

 এবার ঝাঁঝিয়ে বলল মার্গারেট, তোমার কোনো কথা সত্যি নয়, তাছাড়া আমি কি ভিখারী নাকি যে তোমার কাছে বারবার দয়া ভিক্ষা করব।

আমি তোমার অভিভাবক, আমি দয়া ভিক্ষা করতে বলিনি তোমাকে কিন্তু তোমার উচিত হয়নি আমার অনুমতি না নিয়ে নেওয়া।

বেশ রুক্ষ্ম ভাবে আমার দিকে তাকালো সে। তারপর বলল, তুমি আমার অভিভাবকও নও, কেউ নও, তুমি পালিয়ে এসেছ আমাকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলে এবং তুমি বেইমানী করেছ আমার মায়ের সঙ্গে তুমি..

এই কথা এক নিঃশ্বাসে বলে ও বইটা আমার দিকে ছুঁড়ে মারতে মাথা নামিয়ে নিলাম আমি। একেবারে মেঝের কোণে পড়ল বইটা চেয়ার ছাড়িয়ে। ও হাঁপাচ্ছিল এবং চোখ দুটো জ্বলছিল ওর। ও খানিকক্ষণ থেকে চলে গেল রান্নাঘরে যেখানে রান্না করছে ডরোথি। ও কথা বললো না আমার সঙ্গে এবং চুপচাপ বসে রইলাম আমি। কিছুতেই আমাকে সহ্য করতে পারছে না মার্গারেট ইদানীং। কিছুদিন ও ভাল থাকে, হাসিখুশি থাকে, আবার অগ্নিশর্মা হয়ে আজেবাজে কথা বলে। ওর গায়ে হাত দিতে সাহস পাই না আমি। আমার মনেরীতিমতো উৎকণ্ঠা যদি কোনো বাজে কাণ্ড করে বসে। ক্ৰমশঃ দিন দিন মার্গারেট অবাধ্য হয়ে উঠছে আমার। চুপচাপ ঘরের মধ্যে বসে ছিলাম হঠাৎ একসময় কানে এল হাসির শব্দ। প্রথমটা বুঝতে না পেরে কান খাড়া করতে পরে বুঝতে পারলাম ভালভাবে। খিলখিল হাসি শুনে এবার রীতিমতো অবাক হবার পালা। যে কিনা.ওইরকম ব্যবহার করে গেল সে কি করে আবার হাসতে পারে সরল বালিকার মত। তা কি ভাবা যায়। আওয়াজ শুনলাম ডরোথির গলা, তোমার কথাই বলছিল ভিক্টর।

 ডরোথির একমাত্র ছেলে উনিশ কুড়ি বছর বয়সের ভিক্টর। মুখ সুন্দর না হলেও ওর চেহারা বেশ ভাল। পড়াশুনা করে, আমার সঙ্গে আলাপ হয়েছে। বছরখানেক বাকি আর গ্র্যাজুয়েট হতে। খুব হাসিখুশী স্বভাবের। বুঝতে পারছি আলাপ হয়েছে মার্গারেটের সঙ্গে। তবে আমার ভয় এবং আশঙ্কা ভিক্টরকে নিয়ে নয় মার্গারেটকে নিয়ে এবং আমার বুক কেঁপে উঠল সেই আশঙ্কাতেই।