০৩. সেন্ট জর্জ হাসপাতাল

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

০১.

করিডন কখনো এক জায়গায় বেশিদিন থাকে না। লন্ডনে ফেরার পর সে সেন্ট জর্জ হাসপাতালের পেছনে গ্যারেজের উপরে তিন ঘরওয়ালা ফ্ল্যাটে বাস করছে। একজন মহিলা এসে প্রতিদিন ফ্ল্যাট পরিষ্কার করে দিয়ে যায়। খাওয়া-দাওয়া বাইরে সেরে নেয়। বসবার ঘরটা কখনো ব্যবহার করে না। স্যাঁতসেঁতে আর অন্ধকার। দিনের বেলা সবসময় ইঞ্জিনের শব্দ ভেসে আসে। বেডরুমটাও স্যাঁতসেঁতে আর অন্ধকার। একটা উঁচু প্রাচীর আলো আসার পথ আড়াল করে আছে।

অসুবিধে আর বাসস্থানের পরিবেশ নিয়ে কখনও করিডন মাথা ঘামায় না। তার কাছে একটা ফ্ল্যাটের অর্থ রাতে ঘুমানোর জায়গা ছাড়া আর কিছুনয়। জায়গাটা ওয়েস্ট এভের কাছাকাছি। অন্য গ্যারেজগুলোর উপরের ঘরগুলোতে আছে কয়েকটি ফার্মের অফিস। ছটা বাজলেই তারা বন্ধ করে চলে যায়। পরদিন সকালের আগে ভোলা হয় না। তার উপর গুপ্তচরগিরি করবার মত কেউ নেই। রাতে ফ্ল্যাটটা একেবারে শান্ত হয়ে যায়।

সাধারণতঃ অন্যদিন যে সময়ে ফেরে আজ তার আগেই ফিরল করিডন। শেফার্ড মার্কেটের কাছে একটা হোটেলে রাতের খাওয়া সেরে নিয়ে পিকডিলি থেকে হাইড পার্ক কর্নারে হেঁটে এল। নটা বাজার কয়েক সেকেন্ড আগে করিডন ফ্ল্যাটে এসে পৌঁছাল। ঘরে ঢুকেই শুনল বিগ বেন পিটিয়ে সময় নির্দেশ করছে।

শেষ ঘণ্টা পড়তেই দরজা বন্ধ করল করিডন। গা থেকে কোট খুলে ফেলার আগে পকেটে রাখা জিনিসগুলো একটা একটা করে বের করে রাখল। খামটা নজরে পড়ল, এটা রনলি দিয়েছে। আবার সেটা পকেটে রেখে দিল এবং পরে খামটার কথা একেবারে ভুলে গেল। বেডরুমে এসে বিছানার উপর বসল। যথেষ্ট ক্লান্ত লাগছে। গত রাতে খুব কম ঘুম হয়েছে। একটা সিগারেট ধরাল বিছানায় আধশোয়া হয়ে। প্রথমে ব্যাঙ্কে জমা রেখেছে সাতশো পঞ্চাশ পাউন্ড। তারপর গেছে কেনসিংটনে একটা ছবির মত বাড়িতে, সেখানে এফির সম্পর্কে একজন প্লাস্টিক সার্জেন্টের সঙ্গে কথা বলেছে। গেস্টাপোর হাতে ধরা পড়ে অত্যাচারিত হওয়ার পর এই ডাক্তার হাসপাতালে তার জন্য যথেষ্ট করেছিলেন। এফিকে দেখাবার জন্য মোটামুটি একটা তারিখও ধার্য হয়েছে।

করিডনের খামটার কথা মনে পড়ে গেল। পরিষ্কার ভাবে টাইপ করা কাগজপত্রর বিষয়বস্তু কৌতূহলশূন্য মনে পড়তে লাগল।

ব্রায়ান ম্যালোরী।

জন্ম : চৌঠা ফেব্রুয়ারী, উনিশশ ষোল।

দৈহিক বর্ণনাঃ-উচ্চতা ছয় ফুট এক ইঞ্চি, ওজনঃএকশ ব্রিাশি পাউন্ড, চুল গভীরবাদামী, চোখঃহালকা বাদামীবর্ণ গায়ের রঙ ফর্সা, রোদে পোড়া। বিশেষত্বঃবন্দীক্যাম্প থেকে পালাবার সময় কণ্ঠনালীতে আঘাত লাগায় গলার স্বর কিছুটা নষ্ট হয়েছে। ফিসফিস করে কথা বলে, চেঁচাতে পারে না বা উচ্চস্বরে কথা বলতে পারে না। তবে অনুশীলনের ফলে কণ্ঠস্বরে স্পষ্টতা এসেছে।

অভ্যাস : যখন রেগে যায় বাঁ হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে। যখন খুশি হয় দুহাত সজোরে একত্র করে হাতে হাত ঘষে। সিগারেট ধরে তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুলির মাঝে। দেশলাই কাঠি জ্বালে বৃদ্ধাঙ্গুলির নখের চাপে।

করিডন মুখে অস্ফুট শব্দ করে, পাতা উল্টে পড়তে লাগল ।

আপনজনঃ যতদূর জানা যায় মিস হিলডা ম্যালোরী ছাড়া আর কেউ নেই। ভদ্রমহিলা থাকেন ওয়েন ডোভারে দি ডেল নামে একটা বাড়িতে।

তিনি সম্পর্কে ম্যালোরীর মাসীমা হন। এই ভদ্রমহিলা, ম্যালোরীর চার বছর বয়সে যখন মা মারা যান তখন থেকে মানুষ করেছেন। বাবার সাথেঝগড়া হওয়ার পর তাদের মধ্যে খুবকমই দেখা সাক্ষাৎ হত। এসব সত্ত্বেও বাবা উইলে তার নামে বেশ কিছু অর্থ রেখে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

মুখ বিকৃত করল করিডন। আর পড়তে ভাল লাগছে না। কয়েকপাতা এখনো বাকি আছে। কাগজগুলো দলা পাকিয়ে চুল্লিতে ছুঁড়ে দিল।

এখনি পোষাক পালটে বিছানায় আশ্রয় নেবে সে। করিডন চোখ বুজে শুয়ে রইল। অর্ধ ঘুমন্ত অর্ধ জাগরিত অবস্থায় তার মনটা ভেসে চলতে লাগল।

.

০২.

 সে স্বপ্ন দেখতে লাগল মারিয়া হফম্যান তার বিছানার পাশে বসে আছে। সাদা হাত দুটি কোলের উপর জড়ো করা। তার মুখ গুঁড়িয়ে গেছে আর রক্তপাত হচ্ছে। মেয়েটাকে গুলি করবার পর এই অবস্থায় সে তার পায়ের কাছে পড়েছিল। কি যেন বলতে চাইছে মেয়েটা কিন্তু মুখ নেই বলে বলতে পারছে না। শুধু গভীর গর্তে বসা চোখ মেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই গর্তে চোখ নয় বেরিয়ে আছে কিছু দাঁত। করিডন বুঝতে পারছে কিছু বলতে চাইছে মারিয়া। এই প্রথম যে স্বপ্নটা দেখল তা নয়। প্রত্যেকবারই দেখেছে মেয়েটা তাকে কিছু বলতে চাইছে যা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বলতে পারছে না।

দরজায় নক হতেই করিডনের ঘুম ভেঙে গেল। কিছুক্ষণ পরে আবার নক হল। বিছানা থেকে নেমে বসবার ঘরে গিয়ে আলো না জ্বেলে পর্দা সরিয়ে বাইরে উঁকি দিল। জিনি বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। এখনও তার পরনে কালো স্ন্যাকস আর কালো সোয়েটার। মাথায় এখন টুপী নেই। হাতদুটি ট্রাউজারের পকেটে ঢোকান। ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট গোঁজা।

করিডন জিনিকে দেখল কিছুক্ষণ। তারপর আলো জ্বেলে সিঁড়ি অতিক্রম করে দরজা খুলল।

 ভেতরে এস।–করিডন বলল, একা এসেছ?

 হ্যাঁ-মেয়েটা ভেতরে ঢুকল।

সিধে ওপরে চলে যাও।

 জিনি সিঁড়ি অতিক্রম করে বসবার ঘরে এল। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে করিডনের মুখোমুখি হল।

হঠাৎ এখানে আসার প্রয়োজন পড়ল কেন?করিডন বলল, গতরাতে আমার ভালো ঘুম হয়নি।

জিনি কিছু বলল না। সে মুখ ঘুরিয়ে ঘরের চারিদিক খুঁটিয়ে দেখতে লাগল।

পান করবে নাকি?–আলমারী থেকে এক বোতল জিন বের করল, কোথায় যেন ভারমুথ রেখেছি।

চোখে অনুসন্ধানী দৃষ্টি। মেয়েটা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইল।

করিডন একগ্লাস মদ মেয়েটার কাছে টেবিলের উপর রাখল। সেবলল, নিজের ঘর মনে কর।

 সহসা মেয়েটা ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, তুমি শুধু প্রতিজ্ঞা কর, কিন্তু রাখ না।

ঠিকই বলেছ।আমি কথা রাখি না সব সময়, অর্থ রোজগারের সুবিধাজনক পথ কি বল?

ঠিক বলেছ।

যারা টাকা দেয় তাদের করবার কিছু থাকে না।

না, থাকে না। যে কাজের ভার আমায় দেওয়া হয় তা তদন্ত করে দেখার প্রয়োজন হয় না। তবে তোমার কাছে তো সইকরা চুক্তিপত্র আছে। কাজে লাগাতে পার।

মেয়েটি সিগারেট নিবিয়ে জিন আর ভারমুথ মেশানো মদের গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে বলল, আমার ধারণা ক্রিড তোমাকে বলেছে আমাদের কাগজপত্র আইনসম্মত নয়, তাই আমাদের এখানে থাকার অধিকার নেই।

হ্যাঁ বলেছে। তোমাকে খুব আশাবাদী বলে মনে হয়েছিল, তুমি আমার কাছে যখন চুক্তিপত্র চাইলে।

কি বল? ম্যালোরীকে খুঁজে বের করবার ইচ্ছা তোমার নেই?

অবশ্যই নেই। যদি কাউকে খুন করতে চাও, কাজটা তো নিজেকেই করতে হবে। যাকে কোনদিন চোখে দেখিনি তাকে খুন করব এ ধরনের আশা তুমি করতে পার না।

তবু তুমি টাকা নিয়েছ।

সব সময় টাকা নিয়ে থাকি। একটা সিগারেট খাবে নাকি?

 দাও।–জিনি একটা সিগারেট নিল।

মানুষের উচিৎ নয় এইসব বাজে কাজ নিয়ে আমার কাছে আসা। করিডন বলল, আমাকে না ঘাটানোই উচিৎ।

জিনি পায়ে পা তুলে বসল। তাকে মোটেই উত্তেজিত দেখাচ্ছে না। করিডন অবাক হল।

সে বলল, ভাবলাম এতগুলো টাকা হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।

আসার পর এই প্রথম জিনি মৃদু হাসল। সে বলল, তুমি কি আমায় বোকা ঠাওরেছ?

ঠিক বোকা নয়। একটু সাদাসিধে।

 চুক্তিপত্র চেয়েছি বলে?

চুক্তিপত্রে সই নেওয়ার অধিকার কি তোমার আছে?

না, নেই। তোমাকে অন্য কারণে সই করতে বলেছি।

করিডন সজাগ হয়ে উঠল, কারণটা জানতে পারি? গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে গ্লাস নামিয়ে রেখে মেয়েটি বলল, আরও একটু মদ পেলে ভাল হত।–শোন, ম্যালোরীকে খুঁজে বের করবার জন্য তোমায় প্ররোচিত করতে এসেছিলাম।

ভাবছি, তুমি ভাবলে কি করে আমায় প্ররোচিত করতে পারবে?

কাজটা তুমি করবে না? লোকটা বিশ্বাসঘাতক। ওর সরাই উচিৎ। দুবছর আগেও তুমি কোন বিশ্বাসঘাতককে বরদাস্ত করতে না।

তখন নির্দেশমত কাজ করেছি, আমার নিজের পছন্দ অপছন্দের কোন অবকাশ ছিল না।

পিয়েরীর চরিত্র জানলে তুমি ইতস্ততঃ করতে না।

সত্যিই জিনি পিয়েরীকে চিনি না। হাজার পিয়েরী দেশময় ছড়িয়ে আছে। তোমরা দুজন প্রেমিক-প্রেমিকা ছিলে বলেই

জিনি চকিতে উঠে দাঁড়াল, চোখ দুটি জ্বলছে।সে তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলল, তুমি ম্যালোরীকে খুঁজে বের করবে কি না বল?

নিশ্চয়ই না। নিজের চরকায় নিজেই তেল দাও।

তাই নাকি?

হ্যাঁ।

 জিনি করিডনের দিকে পিছন ফিরে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ, তারপর সোফার উপর বসে পড়ল। তাকে মোটেই উত্তেজিত দেখাচ্ছে না। সে মৃদুকণ্ঠে বলল, জানতাম তুমি এমনই কিছু করবে। কিন্তু রনলি বলেছিল সে তোমায় বিশ্বাস করে।

রনলির মত লোকেরা বিশ্বাসই করে থাকে।

 কাজটা তুমি স্বেচ্ছায় করতে না চাইলে জোর করে করাতে হবে।

বাঃ, চমৎকার বলেছ কি বল?

আমরা তোমায় মিথ্যে ভয় দেখাচ্ছি না। তোমায় বলেছি ম্যালোরীকে খুঁজে বের করতে, জানি তুমি খুঁজে বের করবে।

এতখানি নিশ্চিন্ত হলে কি করে?

জিনি কিছুক্ষণ কিছু কথা বলল না। তারপর করিডনের চোখে চোখ রেখে বলল, ক্রিড মারা গেছে।

করিডনের মনে পড়ল ক্রিড বলেছিল, ওরা আমাকে খুন করবে

তার মনে একটা চিন্তা খেলে গেল। আমি কি এই তিনজনকে ঠিক গুরুত্ব দিচ্ছি না, নাকি মেয়েটা মিথ্যে কথা বলছে?

তুমি মিথ্যে কথা বলছকরিডন বলল, ক্রিডকে গুলি করে মারবার সাহস তোমাদের কারো নেই।

কোন কথা বলল না, শুধু তাকিয়ে রইল জিনি। করিডন একটা সিগারেট ধরাল। সে বলল, আমার উপর দোষ দেওয়ার চেষ্টা করলে তোমাদের তিনজনকে এর মধ্যে জড়িয়ে ফেলব।

সফল হবে বলে মনে হয় না।–জিনি বলল, কেউ জানেনা যে আমরা ক্রিডের ফ্ল্যাটে ছিলাম। ক্রিডের ব্যাপারে আমাদের জড়াতে পারবে না।

ভেব না পুলিশ আমার বক্তব্য শোনবার পর তোমাকে এখান থেকে বের হতে দেবে, তারা আমার বক্তব্য আগে শুনবে তারপর তোমাকে তাদের লোকের হাতে তুলে দেব।

ম্যালোরীকে খুঁজে বের করতেই হবে।–সে কথায় কান না দিয়ে জিনি বলল, তোমায় তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হল।

তারপর?

যদি সঠিক সময়ের মধ্যে খুঁজে বের করতে না পার তাহলে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব আমাদের ভাওতা দিয়েছ কি না। আমরা সবরকম সাবধানতাই অবলম্বন করেছি। পিস্তল আর চুক্তিপত্র একটা ফার্মের সলিসিটারের কাছে দিয়ে বলা হয়েছে যে যদি আমাদের দুজনের মধ্যে একজন কেউ প্রতি সপ্তাহে অন্ততঃ একবার করে ফোনে তার সাথে যোগাযোগ না করে তাহলে জিনিসগুলো তিনি যেন পুলিশের হাতে তুলে দেন অবিলম্বে।

জিনি উঠে দাঁড়াল।

.

০৩.

 করিডন আধঘণ্টার মধ্যে ক্রিডের ফ্ল্যাটে পৌঁছে গেল। সে নিশ্চিত যে তাকে কেউ অনুসরণ করেনি। ভেতরে ঢুকে হলঘরে এসে কিছুক্ষণ উত্তর্ণ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর বসবার ঘরে ঢুকল। টর্চের আলোয় সারা ঘর খুঁটিয়ে দেখল।কাউকে দেখতে পেলনা।দরজা আরজানালায় পর্দা ঝুলছে। জানলার সামনে মেঝেরউপর পড়েআছেট্‌লিপফুলের পাপড়ি।দু-ঘরের মাঝেরদরজার কাছেগিয়ে টর্চের আলো ফেলল অন্ধকারাচ্ছন্ন পাশের ঘরে। সেই আলোয় একে একে দেখা গেল বিছানা পাতা একটা খাট, আরাম কেদারা, একটা ড্রেসিং টেবিল, একটা ওয়াড্রোব,ফুলদানীআর লাল রংয়ে মেলান একটা ড্রেসিং গাউন ঝুলছে ক থেকে। তারপর মেঝের উপর টর্চের আলো ফেলতেই তার নজরে পড়ল, খাটের পাশে ভেড়ার লোমের কম্বলের উপরে পড়ে আছে ক্রিড।

একটা অস্ফুট আর্তস্বর ছিটকে বেরিয়ে এল করিডনের গলা থেকে। সে ক্রিডের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। ঝুঁকে ভাল করে খুঁটিয়ে দেখল। খুব কাছ থেকে ক্রিডের মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বুলেট তার কপালে একটা পরিষ্কার গর্ত সৃষ্টি করেছে। এ কাজ জন ছাড়া আর কারো নয়। হঠাৎ ক্রিডকে গুলি করে মারা হয়েছে, কারণ তার চোখেমুখে ভয়ের কোন ছাপ পড়েনি। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে মানুষটা ঘুমিয়ে আছে।

করিডন কয়েক পা পিছিয়ে এল। প্রয়োজনের বেশী সময় এ ফ্ল্যাটে থাকা ঠিক হবে না। ক্রিড যে মৃত এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত। মেয়েটা যে মিথ্যে কথা বলবার মানুষ নয় তা ভাল করেই বুঝেছে। যদি তাকে কেউ এখান থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে থাকে তো–

হঠাৎ আলো নিভিয়ে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল করিডন। উৎকর্ণ হল। কিছু যেন পড়ে গিয়ে ভাঙার শব্দ হল, নাকি যা শুনল তা স্রেফ কল্পনা। উগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করে রইল কিন্তু আর কিছু শুনতে পেল না। তবে কি পাশের ঘরে কেউ আছে? তার পায়ের ধাক্কায় কি কিছু ছিটকে পড়ল?

করিডন এগিয়ে গেল, হাতে ধরা টর্চ যেকোন মুহূর্তে জ্বালবার জন্য প্রস্তুত। তার সারা শরীর রোমাঞ্চিত হল, সন্তর্পণে এগিয়ে এল।

গাঢ় অন্ধকার থেকে কেউ বলল, রনলি নাকি?

 করিডন অনুমান করতে পারল না ঠিক কোনদিক থেকে কণ্ঠস্বর ভেসে এল।

কে কথা বলছেন?–তীক্ষকণ্ঠে প্রশ্ন করে, এক হাঁটু ভেঙ্গে সে বসে পড়ল। এক অবর্ণনীয় অনুভূতি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ল।

ক্ষণেকের জন্য এক ঝলক আগুন অন্ধকার দূর করে দিল। ঘর যেন কেঁপে উঠল। বুলেটটা তার মুখের পাশ দিয়ে তাপ ছড়িয়ে ছুটে গেল। সে দু পা পিছিয়ে গেল। কেউ বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়েছে। দ্বিতীয় গুলিটা ছুঁড়তেই সে মেঝের মধ্যে শুয়ে পড়ল। খোলা দরজা বন্ধ হয়ে গেল। আলতো পদক্ষেপের আওয়াজ সিঁড়ি দিয়ে নীচের দিকে নেমে গেল।

করিডন ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। গালে হাত বুলাল। আঙ্গুলে রক্ত জড়িয়ে গেল। চাপা কণ্ঠস্বর আর ফিস ফিস করে কথা বলা দেখে তার মনে হয়েছে, যে লোক তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে সে ম্যালোরী ছাড়া আর কেউ নয়।

.

চতুর্থ পরিচ্ছদ

০১.

যদিও রীটা অ্যালেন কেমন দেখতে জানত না তবু তাকে দেখামাত্র করিডন ঠিক চিনতে পারল। ম্যাস্টিস অ্যান্ড রবার্টসের মোজা বিক্রির কাউন্টারে যে তিনজন মহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছে তাদের মধ্যে নিশ্চয়ই একজন ম্যালোরীর বান্ধবী হবে। অন্য দুজন বয়স্কা মহিলা চেহারায় ক্লান্তির ছাপ আর পরনে সাধাসিধে পোশাক। রীটা অ্যালেনের চেহারা তরতাজা আর পোশাকে অভিনবত্ব আছে।

আপনাকে কি কিছু দেখাব? রীটা হাসি মুখে করিডনের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল।

 রীটার বয়স হবে উনত্রিশের মত। কিংবা ত্রিশও হতে পারে। চেহারায় যৌনাবেদন আছে। সে এমন একজন নারী যার অনেক অভিজ্ঞতা আছে। চেহারায় নেই তেমন প্রসাধন আর বেশ ভূষার আড়ম্বর।

বন্ধুত্বের হাসি হাসল করিডন। প্রত্যুত্তরে মেয়েটিও হাসল।

দেখুন কিছু উপহার এক নব দম্পতিকে দিতে হবে।

তাহলে একটা হাতব্যাগ বা ওই ধরনের কিছু দিন না কেন?

শেষ পর্যন্ত তাই দিতে হবে। যাহোক, এ দোকানে না এলে আপনার দেখা পেতাম না। যেখান থেকে আমি এসেছি ওখানে আমরা মেয়েদের রূপের প্রশংসা করি। অবশ্য যদি সে রূপবতী হয়। তাই আমি যদি আপনার রূপের প্রশংসা করি তাহলে আপনি কি অসন্তুষ্ট হবেন?

না হব না। তবে সাধারণতঃ এমন দেখা যায় না।

হয়ত তাই, যাকগে সে সব কথা। আজ রাতে কি আপনার সঙ্গ পাওয়া সম্ভব হবে? যদি আশা দেন তো দোকান বন্ধ হওয়ার পর পেছনের দরজায় অপেক্ষা করতে পারি।

মৃদু হেসে সুন্দর চোখ দুটি মেলে মেয়েটি মাথা নেড়ে বলল, আশা দেওয়া সম্ভব না। কারণ কোন অচেনা পুরুষের সাথে আমি বাইরে যাই না।

তা ঠিক। আমার মত একজন নিঃসঙ্গ আর ধনবান মানুষের জন্য কেন আপনি এত দিনের অভ্যাস ভাঙতে যাবেন।

না, সে রকম কিছু নয়। আসলে এমন কোন মানুষের সাথে আমি বাইরে যাই না, যাকে আগে কখনো দেখিনি।

এই সভ্যযুগে এরকম আপত্তির কি কারণ থাকতে পারে বুঝতে পারছি না। আমার নাম স্টিভ হেনলে। আপনার?

রীটা অ্যালেন। আমি সত্যি বলছি

বেশ তো সত্যিই যদি অসম্ভব হয় তাহলে আমার সাথে মিশবেন না। বিশ্বাস করুন আমি খুবই নঃসঙ্গ।

আপনার নিঃসঙ্গতার জন্য দুঃখিত। মনে হচ্ছে পুরোন অভ্যাস ত্যাগ করতে পারব। কারো সাথে বাইরে যাওয়ার সম্পর্কে আমার বাছবিচার আছে।

তুমি তাহলে আসছ? খুশি জড়ান কণ্ঠে করিডন বলল।

আসছি।– রীটা বলল, জান তুমিই প্রথম আমেরিকাননও যার সাথে আজ বাইরে যাব। তোমরা জান কি করে কাজ গুছিয়ে নিতে হয়।

ঠিক বলেছ। আচ্ছা যদি আমরা ম্যাডাম বারে রাত আটটার সময় দেখা করি? পারবে আসতে?

 পারব।–মেয়েটি বলল, আর করিডনের মনে হল এ ব্যাপারে আর কোন সন্দেহ থাকতে পারে না।

.

০২.

 কথা হচ্ছিল রীটার ঘরে বসে। রীটা বলল, তাহলে তুমি তাদেরই একজন। আগেই আমার বোঝা উচিৎ ছিল। কি বোকা আমি। এখান থেকে তুমি চলে যাও। এর মধ্যে আমাকে জড়িও না।

আগে থেকেই তো তুমি জড়িয়ে আছে। করিডন বলল, হ্যারিস খুন হয়েছে।

 মুখে হাত চাপা দিয়ে রীটা বলল, শুনতে চাই না। এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না, আমার কোন সম্পর্ক নেই ম্যালোরীর সাথে।

তুমি খুব সহজে নিষ্কৃতি পাবে না। করিডন রীটার একটা হাত চেপে ধরল, খুন করা হয়েছে হ্যারিসকে।

যেতে দাও আমাকে। হাত ছাড়াবার চেষ্টা করল রীটা।

 আমার কোন দোষ নেই।

 ম্যালোরী ওকে খুন করেছে। ও এখানে হ্যারিসের প্রতীক্ষায় ছিল।

তুমি একটা আস্ত পাগল। এখানে ছিল না ম্যালোরী। লোকটা নিজেই মরেছে।

 কিন্তু আমি জানি ম্যালোরী খুন করেছে। প্রমাণ আমার হাতে আছে। আমি ওকে খুঁজছি। কোথায় পাব বলতে পার?

জানলেও তোমায় বলতাম না। তাছাড়া সত্যিই আমি জানি না। এর মধ্যে নিজেকে জড়াতে চাই না।-ঘরের চারিদিকে হিংস্র দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে রীটা বলল, নিজেকে জড়াব না।

হয় আমাকে বল নাহলে পুলিশকে বল। পুলিশের নামোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে রীটার চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। করিডনের পাশে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে বলল, আমি ওর সম্পর্কে কিছুই জানি না। যদি ঘুণাক্ষরেও জানতাম এমন ফ্যাসাদে পড়ব তাহলে ওর সাথে মেলামেশা করতাম না।

এসব শুনতে চাই না। অসহিষ্ণুত্র মত নড়েচড়ে করিডন বলল, কোথায় তাকে পাব তাই বল।

জানি না। ওর সম্বন্ধে খুব কমই জানি। শুধু মাঝে মাঝে ফোন করে। কোথায় তার বাসা তাও জানি না।

জানা না থাকলে জানিও না। টাকা ব্যাগে ভরে করিডন রীটার দুচোখে মিনতি মাখা দৃষ্টি দেখে বলল, মনের পরিবর্তন হল নাকি?

টাকা প্রয়োজন নেই একথা বলতে পারব না। আছে, প্রয়োজন আছে। সপ্তাহ শেষ না হলে খাবার জোগাড় করতে পারব না।

টাকাটা তাহলে রাখ।–ম্যালোরী কখনো তোমায় লেখেনি?

সামান্য ইতস্ততঃ করে রীটা বলল, আমাদের ঠিক প্রথম সাক্ষাতের ঠিক পরেই লিখেছে।

কোন ঠিকানা নেই সেই চিঠিতে?

না।

খামের উপর পোস্ট অফিসের কোন ছাপ ছিল না?

 মনে পড়ছে না।

মনে নিশ্চয়ই পড়ছে। এইটাই প্রথম জিনিস যা তুমি লক্ষ্য করেছ। কোন পোস্ট অফিসের ছাপ ছিল?

দুনবার।

ওকি কখনো বলেছিল দুনবারে থাকে?

মনে হচ্ছে এর কাছাকাছি কোথাও থাকে। একবার বলেছিল একটা দ্বীপ কিনে বাড়ি তৈরী করবে।

জায়গাটা সম্বন্ধে তোমার কোন ধারণা আছে?

না।

 এখানে কতদিন অন্তর আসে?

যখন ওর খুশি হয়।কখনো সপ্তাহে দুবার আসে, আবার মাস দুয়েক কোন পাত্তা পাওয়া যায় না।

তার মানে কয়েক সপ্তাহ আগে শেষবার তুমি ওকে দেখছ? কত সপ্তাহ আগে মনে আছে?

ছয়-সাতও হতে পারে, সঠিক মনে করতে পারছি না।

 ওর কোন বন্ধুর নাম কখনো বলেছে?

না। নিজের কোন কথা বলত না।

 বিশ্বাস হল না করিডনের। সে বলল, বলার মত আর কোন কথা আছে? ওর কোন আত্মীয় স্বজন আছে নাকি?

এক বোন আছে।

খবরটা কাজের। দ্বীপে একটা বাড়ি। ওয়েন ডোভারে থাকে মাসীমা আর এখন জানা গেল একজন বোনও আছে।

তুমি জানলে কি করে? করিডন জানতে চাইল।

সামান্য ইতস্ততঃ করে রীটা বলল, একবার ফোন করে ওর খোঁজ করেছিল।

কবে ফোন করেছিল?

অনেকদিন আগে। আমাদের পরিচয়ের ঠিক পরেই।

কোন টেলিফোন নাম্বার মেয়েটা তোমায় দিয়েছিল?

 দিয়েছিল। ব্যাপারটা ভুলে গিয়েছিলাম।

 নাম্বারটা কি?

 রীটা বুঝতে পারল দরদস্তুর করবার এই হল সুযোগ।

 সে বলল, পাঁচ পাউন্ডের বেশী কি পাব না? আমার অবস্থা কত যে খারাপ তুমি বুঝবে না।

 টেলিফোন নম্বর কত?

ঠিক মনে পড়ছে না।–চোখমুখ কঠিন দেখাল।

বেশ তো। তুমি পাঁচ পাউন্ড পেয়েছ বাকি পাঁচ পাউন্ড আমার কাছেই থাক।করিডন উঠে দাঁড়াল এবার ফিরব অনেক হয়েছে।

তোমার দলের লোকদের মত তুমিও দেখছি কঠিন মানুষ। রেগে গিয়ে রীটা বলল, আরো আট পাউন্ড দাও, আমি বলব।

পাঁচ, নিলে নাও, না হলে থাক।

 বেশ। তুমি অপেক্ষা কর এখানে। নাম্বারটা নোট বুকে লেখা আছে। নিয়ে আসছি।

রীটা ঘর ছেড়ে চলে গেল। সম্ভবতঃ সিঁড়ির শেষ ধাপে উঠতেই একটা হিমেল আর্ত চীৎকার তার কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে এল। করিডন দরজার সামনে ছুটে গেল। দেখল সিঁড়ির কাছে মেঝের উপর দোমড়ানো অবস্থায় পড়ে আছে রীটা। তার মাথা বেঁকে এসে পড়েছে ঘাড়ের উপর। একটা নগ্ন পা সিঁড়ির উপর রয়েছে।

.

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

০১.

 করিডন যখন নিজের ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে দরজার তালার গর্ত পাওয়ার জন্য হাতড়াচ্ছে, একটা লোক ঝমঝমে বৃষ্টি মাথায় করে অন্ধকারের মধ্য থেকে নিঃশব্দে তার কাছে এসে দাঁড়াল। কোটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে করিডন বন্দুকের অর্ধেকটা বের করতেই লোকটি বলল, ভয় নেই। আমি রনলি।

এমন চুপচাপ কি করছ এখানে?–রেগে গিয়ে করিডন প্রশ্ন করল।

তোমার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছি। উদ্বেগ ভরা কণ্ঠে রনলি বলল, কথা বলতে চাই।

বেশ তো, ভেতরে এসো।সদর দরজার তালা খুলে সিঁড়ি বেয়ে উঠেবসবার ঘরের সামনে এল। তারপর গা থেকে ট্রেঞ্চ কোট খুলে সে বলল, কি হয়েছে?

ক্রিডকে ওরা খুন করেছে। চাপা কণ্ঠে রনলি বলল। ভাবলেশ শূন্য দৃষ্টিতে করিডন তার দিকে তাকাল। ক্রিডের মৃত্যুর পর থেকে যা যা ঘটেছে সে সব তার কাছে মোটেই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি।

তাতে কি হয়েছে? খবরটা কি তুমি শুধু একাই জেনেছ?

তুমি তাহলে আগেই জেনেছ? মুখ মুছে রনলি বলল, খবরটা এখনো কাগজে বের হয়নি, তাই না?

না, কাগজে বের হয়নি। সেই কথা বলতে জিনি মেয়েটা গতরাতে আমার কাছে এসেছিল। পরিকল্পনাটা হচ্ছে এই রকম, যদি আমি ম্যালোরীকে খুঁজে না পাই তাহলে সেবন্দুক আর চুক্তিপত্র পুলিশের হাতে তুলে দেবে। বন্দুকের গায়ে আমার আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া যাবে আর চুক্তিপত্র থেকে আমার মতলব প্রকাশ পেয়ে যাবে। ওদের আস্থা আছে নাকি তোমার উপর?

রনলিকে দেখে মনে হল হতবুদ্ধি হয়ে গেছে। গা থেকে বর্ষাতি খুলে মেঝের উপর ছুঁড়ে ফেলল।

সে বলল, ওভাবে ওকে খুন করা হয়েছে কিনা তাই বিশ্বাস হচ্ছে না। মেয়েটা পাগল। পাগল ওরা দুজনেই। আর আমি একটা বুদ্বু। নাহলে ওদের সঙ্গে কাজে নামি।

হঠাৎ তোমার বিবেক যন্ত্রণা আরম্ভ হয়ে গেল নাকি হে? করিডন প্রশ্ন করল, আমাদের প্রথম পরিচয়ের দিন তুমি ম্যালোরীকে খুন করতে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলে।

ভাবিনি ওরা লোকটার দেখা পাবে।–ইতস্ততঃ করে মৃদুকণ্ঠে রনলি বলল, ওদের পরিকল্পনার উপর তেমন গুরুত্ব দিইনি। সত্যি বলছি। আমি পুলিশের কাছে যাবো। এই খুনের সঙ্গে আমি কোন ভাবেই জড়িত থাকতে রাজি নই।

একটু দেরী করে ফেলেছ হে। করিডন বলল, এখন পুলিশের কাছে গিয়ে কোন লাভ হবে না। আমাদের যা করতে হবে তা হলো ম্যালোরীকে খুঁজে বের করা। আর কাজটা যত শীঘ্রই করা যাবে ততই ভাল।

তুমি কি বুঝতে পারছ না,-রনলি চেয়ারের হাতলে ঘুষি মেরে বলল, আমি যদি পুলিশের কাছে সব খুলে বলি কি ঘটেছে তাহলে তুমি জড়িয়ে পড়বেনা। আমি ক্রিডের খুনের সঙ্গে তোমাকে জড়াতে চাই না।

পুলিশ অনেকদিন থেকেই আমাকে ধরবার চেষ্টা করছে।

করিডন ছোট ছোট পায়ে সারা ঘরে অস্থিরভাবে পায়চারি করতে করতে বলল, তোমার কথা ওরা কানেই নেবেনা। তাছাড়া আগামীকাল ওরা আমাকে আর একটা খুনের অভিযোগে খোঁজাখুজি আরম্ভ করে দেবে।

রনলি চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে বলল, আর একটা খুন? তুমি কি বলতে চাইছ?

আমি রীটা অ্যালেনের সঙ্গে তার বাড়ি গিয়েছিলাম। সে সিঁড়ি থেকে নীচে পড়ে গিয়ে ঘাড় ভেঙ্গে মারা গেছে।

ওটা তো খুন নয়

নয় বলছো?–করিডন বলল, ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলা হয়েছে। আসল কথা হলো আমি উপস্থিত ছিলাম। তার বাড়ি আমরা যে ট্যাক্সি করে গেছি তদন্তের সময় ড্রাইভার নিশ্চয়ই আমার চেহারার বর্ণনা দেব।আমি যখন ক্রিডের ফ্ল্যাট ছেড়ে আসছিলাম তখন নীচে তামাকের দোকানের লোকটা আমায় দেখেছে। আজ তোক আর কাল হোক, সেও আমার চেহারার বর্ণনা দেবে। যার একটু বুদ্ধি আছে সে দুয়ে দুয়ে যোগ করতে অসুবিধা বোধ করবে না। আর যোগফল নিশ্চয়ই পাঁচ হবে না।

কিন্তু কে ওকে ধাক্কা দিল?-অনলি সামনে ঝুঁকে প্রশ্ন করল, কি করে জানলে ওকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে?

অনুমান করতে পারছ না? আমার মনে হচ্ছে একাজ ম্যালোরীর।

 আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।

একথা বলছ কেন?–করিডন বলল, আমাদের প্রথম সাক্ষাতের সময় তোমার ধ্যানধারনা ছিল শুধুমাত্র ম্যালোরী। সে কেমন লোক আমরা জেনেছি। লোকটা একজন খুনী। হঠাৎ এমন কি ঘটল যে তোমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে?

বিমর্ষভাবে রনলি বলল, আমার সারা জীবনটাই ব্যর্থতায় ভরা। নিজেকে কখনই সাবালক ভাবতে পারলাম না। ছেলেবেলা থেকেই আমি অ্যাডভেঞ্চারের গল্পের বই পড়তে ভালবাসতাম। সস্তা ধরনের উত্তেজনার আগুনে নিজেকে উত্তপ্ত করতে ভাল লাগত। আমাকে যখন জিনি ম্যালোরীর কথা বলল, ব্যাপারটা আমার মনকে নাড়া দিল।

হ্যারিসের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আমার কাছে জীবনটা মনে হচ্ছিল বইয়ে পড়া অ্যাডভেঞ্চারের মত। এই মৃত্যু আমার কাছে প্রথম আঘাত, যদিও আমি বিশ্বাস করিনি যে, এই খুনে ম্যালোরীর কোন হাত আছে। অদ্ভুত প্রকৃতির লোক ছিল। জলকে খুব ভয় পেত। তার মৃতদেহ পাওয়া গেল একটা পুকুরে। সে যদি ঘটনাচক্রে পুকুরে পড়ে যেত তাহলে তার চোখমুখে ভয়ের ছাপ থাকত। সাঁতার জানত না। এখনও বিশ্বাস হয় না যে ওকে ম্যালোরী খুন করেছে।

তারপর মারা গেল লুবিস। তার মৃত্যু সম্বন্ধে কি ধারণা পোষণ করব বুঝতে পারলাম না। ব্যাপারটা একটা দুর্ঘটনা হতে পারে। জিনি জোর দিয়ে বলল, কাজটা ম্যালোরীর, কিন্তু সে জানল কি করে? লুবিস ট্রেন থেকে পড়ে যেতে পারে। আমি শপথ করে বলতে পারি যে সে গেস্টাপোর ভয়ে পিয়েরীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না। লোকটার মধ্যে বিন্দুমাত্র কাপুরুষতা ছিল না। এখন স্বীকার করছি আমি দুঃখিত। তোমাকে এরমধ্যে টেনে আনার জন্য সত্যিই দুঃখিত।

আমিও দুঃখিত।করিডন কঠোর কণ্ঠে বলল।

সত্যি বলতে কি আমি বিশ্বাস করতেই পারিনি যে সত্যিই সে তোমাকে দিয়ে ম্যালোরীকে খুন করাতে চায়। এখন বুঝতে পারছি তাদের উদ্দেশ্য ব্যবসা করা। জিনি ঘর পেয়েছে চ্যানসারী লেনে একটা ছোট হোটেলে। ও সেখানে চলে গেছে। দিনের শেষে আমাকে জিনি জানাল যে ক্রিড মারা গেছে। তবে বিস্তারিতভাবে কিছু বলল না, তবে জনের চোখমুখ দেখেই বুঝতে পারলাম যে তাকে গুলি করে মেরেছে। তখনই ঠিক করে ফেললাম আমি কি করব। এদের সঙ্গে আমি আর থাকব না। মনে হল, এ ব্যাপারে তোমার সঙ্গে দেখা করাই ঠিক হবে।

আমার সঙ্গে তো সাক্ষাৎ হয়েছে, কি করতে চাও এখন?

জানি না। পুলিশের কাছে যাব ভাবছিলাম, তবে তুমি যদি বারণ কর তাহলে কি করব বুঝতে পারছি না।

পুলিশের কাছে আমাদের যাওয়া ঠিক হবেনা–অসহিষ্ণু কণ্ঠে করিডন বলল, এখন আমাদের কাজ হবে ম্যালোরীকে খুঁজে বার করা। তুমি কি জান ওর এক বোন আছে?

আছে নাকি?

আমাকে বলেছে রীটা অ্যালেন। ম্যালোরীর বোন তাকে কয়েক বছর আগে ফোন করে নিজের টেলিফোন নাম্বার জানিয়েছিল। মেয়েটার নাম অ্যান ম্যালোরী আর তার ঠিকানা হল, ২এ, দি স্টুডিওস, চেইনী ওয়াক। একটা ঘুম দেওয়ার পর তার সাথে দেখা করবার ইচ্ছা আছে–সে চিবুকে লাগান প্লাস্টারে হাত বুলিয়ে বলল। আরেকটা ব্যাপার তোমাকে বলা হয়নি। আমি ম্যালোরীর খোঁজে নেমে পড়েছি-তারপর সে রনলিকে জানাল ক্রিড-এর ফ্ল্যাটে যাওয়া আর সেখানকার ঘটনা।

ও তোমাকে ভেবেছে বুঝি আমি? বিস্ময়ে রনলি বলল, আমি কখনও ওর ক্ষতি করিনি।

যদি তার খুন করবার উদ্দেশ্য থাকত তাহলে পালিয়েনাগিয়ে দ্বিতীয়বার গুলি ছুঁড়ত করিডন বুঝিয়ে বলল।

রনলি একেবারে ঘাবড়ে গেছে। সে বলল, তুমি নিশ্চিত যে গুলি ম্যালোরই ছুঁড়েছিল।

যেই ছুঁড়ে থাকুক না কেন, তার কেমন যেন ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠস্বর। তোমার নাম উচ্চারণ করেছিল। কে হতে পারে লোকটা?

হ্যাঁ,অনলি বলল, লোকটা ম্যালোরী ছাড়া অন্য কেউ হতে পারে না।

পরের দিন সকালে রনলি তখন কফি তৈরী করতে ব্যস্ত, কাল রাতে সে করিডনের ফ্ল্যাটেই ছিল। দশটার কিছু পরে করিডন রান্নাঘরে এল।

খবরটা কাগজে বেরিয়েছে এনলির চোখমুখে চাপা উত্তেজনা, ক্রিডের খবর।

কি লিখেছে?

সাক্ষাৎকার নিতে চায় পুলিশ তোমার নিজের পড়ে দেখা উচিৎ।কাগজ বসার ঘরে আছে।

 রীটার সম্বন্ধে কিছু লিখেছে?

না। তামাকের দোকানের লোকটা তো নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছে।

 করিডন তিক্ত হাসি হেসে বলল, বলেছিলাম না–দেবে।

সে বসার ঘরে গেল। ক্রিডের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার বিবরণ প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে। তামাকের দোকানের দরজার সামনে দাঁড়ান অবস্থায় তামাকওয়ালার একটা ছবি ছাপা হয়েছে। রিপোর্টারদের সাথে এক সাক্ষাৎকারে সে বলেছে, একজন দীর্ঘাকৃতি, সবল চেহারা আর তামাটে গায়ের রঙ, এমন একজন লোককে ক্রিডের মৃত্যুর পর ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেছে। তার গায়ে ট্রেঞ্চ কোট আর মাথায় টুপী। পুলিশের ধারণা এই লোকটাকে জেরা করতে পারলে ঘটনার উপর আলোকপাত করা সম্ভব হবে। ফ্ল্যাট থেকে কিছুই খোয়া যায়নি।

রনলি ট্রেতে করে টোস্ট আর কফি নিয়ে বসবার ঘরে ঢুকল।

রীটার মৃতদেহ আবিষ্কৃত হলে প্রকৃত খেলা শুরু হবে। কাপে কফি ঢালতে ঢালতে করিডন বলল, আমাকে একটা অ্যালিবাই ঠিক করতে হবে।

তোমাকে এই ট্রেঞ্চ কোট আর টুপী ত্যাগ করতে হবে। অনলি উপদেশের সুরে বলল, যদি পুলিশ এগুলো এখানে পায়

ঠিক বলেছ। তুমি এগুলো সরাবার ব্যবস্থা করতে পার না? ওগুলো আমি একটা সুটকেসে ভরে তোমাকে দেব তুমি এমিথিস্টক্লাবে নিয়ে গিয়ে এফি রজারকে দিতে পারবেনা? ওকে বলবে আমি পাঠিয়েছি আর বলবে যতদিন না ফেরৎ চাইছি এগুলো ওর কাছে রেখে দিতে পারবে?

অবশ্যই।–খুশি হয়ে রনলি বলল, কিন্তু অ্যালিবাই সম্বন্ধে কি যেন বলছিলে?

সে আমি ঠিক করব।–করিডন বলল, এখন শোন আমি ভাবছি তোমার সম্পর্কে। বলছিলে আমাকে এই ব্যাপারে জড়িত করেছ বলে তুমি দুঃখিত। এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তুমি আমায় কি সাহায্য করবে?

নিশ্চয়ই।

তাহলে ওই দুজনের কাছেফিরে যাও।-রনলি কিছু বলতে উদ্যত হতেই করিডন বলল,এদের গতিবিধি সম্পর্কে আমাকে ওয়াকিবহাল করবে। তাছাড়া সেই বন্দুক আর চুক্তিপত্র হার্তাবারও সুযোগ পাবে।

রনলি সামান্য ইতস্ততঃ করে বলল, ঠিক আছে যথা সম্ভব আমি করবার চেষ্টা করব। তবে ব্যাপারটা পছন্দ হচ্ছে না। যদি ওরা জানতে পারে?

কি আর করতে পারবে? কিছু বলবে না ওদের। ভাব দেখাবে, একটা স্লিপ আমি তোমাকে দিয়েছি, সেটা হারিয়ে ফেলে খুঁজছে। এখন ম্যালোরীর খোঁজে যাচ্ছি। আজ সকালেই ওর বোনের খোঁজে যাবো। এমনও হতে পারে আমাকে তোমার প্রয়োজন, তুমি মেয়েটার ফোন নাম্বার লিখে রাখ। দুপুর পর্যন্ত সেখানে থাকব। তোমাকে কোথায় পাব?

আমরা ব্রেয়ার স্ট্রীটের এনফিল্ড হোটেলে উঠেছি। চ্যানসারী লেনের কাছেই হোটেলটা। একটা খামের গায়ে ফোন নম্বরটা লিখতে লিখতে রনলি বলল।

রনলি সুটকেসটা নিয়ে চলে যাওয়ার পর করিডন বেডরুমের দিকে পা বাড়াতেই ফোন বেজে উঠল। রিসিভার তুলে সে জিজ্ঞাসা করল, কে কথা বলছেন?

আমি–এফি, আপনি মিঃ করিডন? রুদ্ধশ্বাস একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এল।

কণ্ঠস্বর শুনেই সে বুঝতে পারল কোন অঘটন ঘটেছে। এফি তার সাথে আগে কখনো ফোনে কথা না বললেও তার কণ্ঠস্বরে বুঝতে পারা গেল সে বিভ্রান্ত।

এফি? কোন বিপদ হয়েছে নাকি?

তোমাকে ফোনে যোগাযোগ করবার চেষ্টা করছিলাম। সে ব্যস্তকণ্ঠে বলল,মিঃ করিডন এখানে পুলিশ এসেছে, জনির সাথে কথা বলতে শুনেছি। ও তোমার ঠিকানা পুলিশকে বলছিল।

কঠিন হল করিডনের চোখ মুখ। সে প্রশ্ন করল, কতক্ষণ আগের ব্যাপার?

মিনিট দশেকের বেশী হবে। ব্যক্তিটি সেই ডিটেকটিভ সার্জেন্ট রলিন্স। কোন খুনের ঘটনা নিয়ে কথা বলছিল।

ঠিক আছে, এফি। চিন্তার কিছু নেই। ফোনের জন্য ধন্যবাদ। একটা সুটকেস তোমার কাছে পাঠাচ্ছি ওটা সাবধানে রাখবে, কারো হাতে ওটা ছেড়ে দেবেনা। আচ্ছা ছাড়ছি এফি। আমার তাড়া আছে।

এফি কথা বলবার চেষ্টা করতেই করিডন রিসিভার নামিয়ে রাখল।

কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে চিন্তা করল। বেডরুমের দিকে ঘুরতেই দরজার গায়ে জোরে টোকা পড়ল। মিসেস জেন ঘর পরিষ্কার করতে আসেনি। সে তো রোজ কলিং বেল বাজায়। অনুমান করবার চেষ্টা করল কে হতে পারে। পা টিপে টিপে জানলার সামনে গিয়ে পর্দার ফাঁক দিয়ে নীচের দিকে তাকাল। দেখল দুজন লোক বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের একজন রলিন্স।

এই প্রথম নয়। এমন কোণঠাসা অবস্থায় করিডন আগেও অনেকবার পড়েছে। বেডরুমে ঢুকে আলমারী থেকে একটা হালকা রংয়ের ওভারকোট আর একটা টুপী পরে নিল।

খাবার রাখার আলমারীর নীচ থেকে একটা রুকস্যাক বের করল। এতে থাকে জরুরী প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ভেতর থেকে এক গোছ পাউন্ড নোট বের করে ওভারকোটের পকেটে ভরে ফেলল। তারপর আবার ফিরে এল বসবার ঘরে।রুকস্যাককাঁধে ঝুলিয়ে যেতে উদ্যত হতেই দরজার গায়ে আবার টোকা পড়ল। প্যাসেজে এল দরজা খুলে। এখানে উপর দিকে একটা স্কাইলাইট আছে। সেটা খুলে ছাদে উঠে পড়ল। চিমনীগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকায় কারো চোখে পড়ল না।

শেষ গ্যারেজটা শূন্য পড়েছিল। সে স্কাইলাইটের সাহায্যে নীচে নেমে এল। তারপর পথে বেরিয়ে তাড়াতাড়ি হাঁটতে হাঁটতে হাইডপার্ক কর্নারের সামনে এসে পড়ল।

.

০২.

 সবুজ রং করা উঁচু গেটের পাশে ছ ফুট উঁচু দেওয়ালের গায়ে ব্রাস প্লেটের উপর লেখা আছেঃ ২এ, দি স্টুডিওস, চেইনী ওয়াক।

করিডন এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নিল, তারপর বাড়িটার সামনেদাঁড়িয়ে কলিংবেল বাজাল। তারপর দু পকেটে হাত ঢুকিয়ে চুপচাপ অপেক্ষা করতে লাগল।রুকস্যাককাঁধে ঝুলছে। সে ভেবে পেল না ম্যালোরীর বোনকে ঠিক কি বলবে। সে তপ্ত রোদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। আর ছায়া পড়ছে সারা দেওয়ালের উপর। উত্তেজনা বোধ করল।

দরজা খুলে একটা মেয়ে তার মুখোমুখি হল।করিডন হতাশ হল তাকে দেখে,কারণ অবচেতন মন ভাবছিল সে কোন সুন্দরী যুবতীর মুখোমুখি হবে। হয়তো আর একজন রীটা অ্যালেন, কিন্তু মেয়েটার চেহারা হতাশা ব্যাঞ্জক।

মেয়েটিকে স্পষ্ট আর নীচু কণ্ঠে বলল, সুপ্রভাত। আমি আপনার ভাইকে খুঁজছি ব্রায়ান ম্যালোরী। ইতস্ততঃ করে করিডন জিজ্ঞাসা করল, আপনি তার বোন, তাই না?

মেয়েটির মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেল। চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে পড়ল। সে বলল,ব্রায়ানকে খুজছেন? আপনি জানেন না? ব্রায়ান তো মারা গেছে। প্রায় দুবছর হয়ে গেল!

.

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

০১.

সুইংডোর ঠেলে এনফিল্ড হোটেলে প্রবেশ করল জিনি। বগলে একখানা খবরের কাগজ। চোখে মুখে চিন্তার ছায়া। সে লাউঞ্জে প্রবেশ করল।

পুলিশ ক্রিডের মৃতদেহ আবিষ্কার করেছে–অনুত্তেজিত কণ্ঠে জিনি ফরাসী ভাষায় বলল।

জন চমকে উঠে তার দিকে ঘুরে তাকাল। সে বলল,বুঝতে পারিনি,তুমি ঘরে ঢুকেছে। কাগজে বেরিয়েছে খবরটা?

খবরের কাগজগুলো টেবিলের উপর ছুঁড়ে দিয়ে ধুলো জর্জর আর্ম চেয়ারে বসে পড়ে জিনি বলল, প্রথম পাতায় আছে।

জন সময় নিয়ে খবরের কাগজে প্রত্যেকটা খবর পড়ল। চোখে মুখে কোন রকম অভিব্যক্তি প্রকাশ পেল না। সে বলল, করিডনের চেহারার চমৎকার বর্ণনা দিয়েছে। পুলিশ ধরে ফেলবে।

আমার তা মনে হয় না। যথেষ্ট সাবধানী লোকটা। ম্যালোরীকে খুঁজে বের করবার ব্যাপারে এ ঘটনা ওকে আরো বেশী আগ্রহী করে তুলবে।

খবরের কাগজ সামনে থেকে সরিয়ে জন বলল, পুলিশ ওকে গ্রেপ্তার করলে ও সব কথা ফাস করে দেবে। এই ধরনের লোকের সঙ্গে নিজেদের জড়ানো ঠিক হয়নি। উচিৎ ছিল ব্যাপারটা নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা।

এই রকম বিড়বিড় করো না তো। বিরক্তি ভরা গলায় জিনি বলল, একমাত্র করিডনই পারে ম্যালোরীকে খুঁজে বের করতে। ওর অতীতের কাজ বিচার কর। এই দেশটাকে ও আমাদের চেয়ে বেশী জানে, তাছাড়া ম্যালোরী ওকে চেনে না।

ভুল,–জন অবাধ্যের মত বলল, প্রথম থেকেই আমি এর বিপক্ষে ছিলাম। তোমার রনলির কথা শোনা উচিৎ হয়নি।

অশিক্ষিত নির্বোধ তুমি–জিনি গলা চড়িয়ে বলল, তুমি একা ম্যালোরীকে খুঁজতে চাও?কিন্তু তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমান নও, আমি নই আর রনলিও নয়। কিন্তু করিডনের বুদ্ধি আছে। এই কথাগুলো কতবার তোমাকে বলতে হবে?

অনেকবার তুমি বলেছ।জন চাপাকণ্ঠে বলল, তার চোখ দুটো জ্বলছে, আমি নিজে হাতে ম্যালোরীকে খুন করে সন্তোষ লাভ করতে চাই আর তা আমি করবই।

তাহলে তাই কর।–জিনি চেঁচিয়ে উঠল, তোমাকে আমি নিষেধ করবনা। বেরিয়ে পড়, খুঁজে বের করে কাজ সমাধা করে ফেল–অবশ্য যদি পার।

সময় হলেই করব।–জন বলল, এই কাজের জন্য একবছরের উপর অপেক্ষা করে আছি। একজন মেয়েছেলের খামখেয়ালি পনায় নিজেকে বোকা প্রমাণ করতে চাই না। আমি কিছু টাকা চাই।

টাকা চাও করিডনের কাছে। কথাটা বলে সে বিদ্রুপের হাসি হাসল, টাকা তার কাছে আছে আর তুমি যদি মনে কর

জিনি চুপ করে গেল লাউঞ্জের দরজা খুলে রনলি ঘরে ঢুকল। তাদের দিকে নজর বুলিয়ে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর দ্বিধাভরে ফায়ার-প্লেসের কাছে এসে দাঁড়াল।

ফিরে এলে কেন?–বসে পড়ে জিজ্ঞাসা করল, করিডন কোথায়?

তা বলতে পারব না–জিনি। উচ্চস্বরে রনলি বলল, ও হাতের বাইরে চলে গেছে। আর তুমি কিনা আমায় বোকা বলছ।

চীৎকার করো না। নিজেকে সংযত করে জিনি বলল, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে রনলির সামনে গিয়ে দাঁড়াল, কি করে ও হাতের মুঠো থেকে পালাল? আমি তোমায় বলেছিলাম তার উপর থেকে এক মুহূর্তের জন্যও চোখ সরাবে না। কি ঘটেছিল?

রনলি কাঠখোট্টা রকম সংক্ষিপ্তভাবে বলল, ও নিজের ফ্ল্যাটে ফিরেছিল। যতক্ষণ আলো নেভায়নি আমি নজর রেখেছিলাম এবং ধারণা হয়েছিল শুয়ে পড়েছে। কাছে যাওয়ার কিছু ছিল না বলে আমি কাছেই একটা কফির দোকানে গিয়েছিলাম। মাত্র পনেরো মিনিটের জন্য গিয়েছিলাম। রাতের বাকী সময় দরজার বাইরে কাটিয়েছি। কিন্তু সকালে বাইরে বের হতে দেখিনি। দোকানে যখন গিয়েছিলাম নিশ্চয়ই সেই সুযোগে কেটে পড়েছে।

বিশ্রীভাবে হাত নেড়ে জিনি বলল, তুমি টেলিফোন করলে না কেন? জন তোমাকে অব্যাহতি দিত। আমাকে কি সব কিছুই বলে দিতে হবে? একবারের জন্য কি নিজের মাথা খাটাতে পার না?

করিডন গত রাতে ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে গেছে। রনলি বলল, সকালে তার জন্য যখন অপেক্ষা করছি, পুলিশ এসে হাজির। আমি চলে এসেছি।

জিনি আর জন দুজনেই গম্ভীর হয়ে গেল। জন উঠে দাঁড়াল।

পুলিশ। জিনি বলল।

হ্যাঁ, পুলিশ।–রনলি বলল, নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি, আমি ওদের হাতে ধরা পড়িনি বলে। পুলিশের গাড়ি খোয়াড়ের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি।

দেখ, আমি আগেই বলেছিলাম, লোকটাকে পুলিশ ঠিক বুঝতে পারবে।–জন বলল, এও– বলেছিলাম ঠিক গ্রেপ্তার করবে।

এখনো ওকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি–জিনি বলল বটে। কিন্তু তাকে বেশ চিন্তিত মনে হল।

এর থেকে বেশী কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, রনলি বলল, সে তাদের কাছ থেকে ঘরে যেতে চাইল, আমি শুতে যাচ্ছি। সারা রাত জেগে কাটিয়েছি। তোমরা দুজন বরং ঠিক কর আমাদের পরবর্তী কর্মধারা কি হবে।

আর আমাদের করিডনের সঙ্গে দেখা হবে না। জন তিক্ততার সাথে বলল, আমাদের টাকা পয়সা নিয়ে ও ভেগে পড়েছে। এক সপ্তাহ আগে আমাদের যা করা উচিৎ ছিল, এখন আমরা তাই করব। ম্যালোরীকে আমরা নিজেরাই খুঁজে বের করব। আজই আমি রীটা অ্যালানের সাথে দেখা করব।

ওকে নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কোন লাভ হবে না। রনলি কোন কিছু না ভেবেচিন্তেই বলল, ও মারা গেছে কথাটা বলে ফেলে বুঝতে পারল বলা ঠিক হয়নি।

মারা গেছে! কথাটা পুনরাবৃত্তি করে জিনি তার দিকে তাকিয়ে রইল। কি করে জানলে ও মারা গেছে?

করিডন আমায় বলেছে।–মিথ্যে কথা বলা বিপদজনক হবে জেনেই রুনলি বলল।

 করিডন!–জিনি আর জন একসাথে বলে উঠল। ঐ কথা তোমায় কখন বলল?

রনলি একটু দূরে সরে গিয়ে সিগারেট কেস থেকে সিগারেট বের করল। এই নীরবতা তাকে চিন্তা করার সুযোগ দিল। সে বলল, গতরাত্রে আমার সাথে কিছু সময়ের জন্য দেখা হয়েছিল। ও আমায় বলল যে, মেয়েটার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল।

এক মিনিট কঠিন চোখে তাকিয়ে জন বলল, প্রথমেই একথা বলনি কেন?

রনলি ঘাবড়ান অবস্থায় একটা সিগারেট ধরাল। তার হাত কাঁপছে, সে তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলল, সুযোগ দাও আমাকে বলবার। তোমাদের এক্ষুনি বলতাম।

বলতে নাকি, আমার তো সেরকম মনে হয়নি। তুমি বলছ মেয়েটা মারা গেছে, কিভাবে মারা গেল? কি ঘটেছিল?

করিডনের অনুমান ম্যালোরী তাকে খুন করেছে। অন্য ব্যক্তি দুটি এ কথা শুনে সচকিত হয়ে উঠল।

ওর এরকম ধারণা হলো কেন?–জিনি জানতে চাইল।

রনলি ইতিমধ্যে নিজেকে সামলে নিয়েছে। সে মৃদুকণ্ঠে বলল, ও রীটা অ্যালেনের বাড়ি গিয়েছিল। তার ধারণা ম্যালোরীওখানে লুকিয়ে ছিল। করিডন ম্যালোরীর সংবাদ জানতে চেয়েছিল রীটার কাছে। তাদের কথাবার্তা আড়াল থেকে ম্যালোর শুনেছিল। তারপর রীটা যখন উপরে যায়, তখনই ম্যালোরী তাকে খুন করে।

ঠিক আছে, রনলি।–জিনি মৃদুকণ্ঠে বলল, তুমি ঘুমোতে যাও। আর কিছু বলতে হবে না।

ঘুরে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ল সে।

রনলি?

জনের কণ্ঠস্বরে এমন কিছু ছিল যা রনলিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতে বাধ্য করল। জনের হাতে ধরা পিস্তলের নল তার চোখে পড়ল।

যেখানে আছ ওখানেই দাঁড়িয়ে থাক।

পিস্তল সরিয়ে নাও, নির্বোধ–জিনি চেঁচিয়ে বলল, কেউ এদিকে আসছে

হেনরী মেভোস দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। তার হাতে রয়েছে এক কপি দি টাইমসখবরের কাগজ। লোকটি তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন লোকের সামনে কাগজটা নেড়ে খুশিভরা কণ্ঠে শিশুর মত বলল, মিসেস কোডিস্টাল সব সময় কাগজ নিজের কাছে রেখে দেন। হঠাৎ থেমে গিয়ে বলল, কোন অঘটন ঘটেছে নাকি? কি হয়েছে?

জন ক্ষিপ্রহাতে পিস্তল লুকিয়ে ফেলল। সে বৃদ্ধের দিকে তেড়ে গেল।

জন–জিনি তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলল।

 বৃদ্ধ কয়েক পা পিছিয়ে বলল, কি-কিকরবে–তারপর খবরের কাগজ ফেলে পালিয়ে গেল।

অনেকক্ষণ কেউ কোন কথা বলল না। অনেকক্ষণ পরে মৃদুকণ্ঠে জিনি বলল, তুমি সব নষ্ট করে দিচ্ছ। লোকটা চুপ করে থাকবে না। এক্ষুনি আমাদের এখান থেকে চলে যাওয়া দরকার। তাড়াতাড়ি কর।

জিনি দৌড়ে এল। জন তাকে অনুসরণ করল, বিড় বিড় করতে করতে।

তাড়াতাড়ি এস। সিঁড়ির মাথায় গিয়ে জিনি বলল, বুড়োটা চলে গেছে। তাড়াতাড়ি এস।

তারা ছুটে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগল, কিন্তু তাদের একবারও নজর পড়ল না টেলিফোন বুথের দিকে।নজর পড়লে দেখতে পেত বুথের মধ্যে মেভোস জড়সড় হয়ে বসে আত্মগোপন করে আছে। উত্তেজনায় তার মাথার মধ্যে হাতুড়ি পিটছে। পিস্তল! এনফিল্ড হোটেলের ভেতরে। যদি এইভাবে পালিয়ে না আসত তাহলে বোধহয় খুন হয়ে যেত। সে রিসিভার হাতে তুলে নিল, একটা নাম্বার ডায়াল করল। চশমা পরে নেওয়ার মত সময় তার হাতে নেই। এক মুহূর্ত নষ্ট করা চলবে না। সরু সরু আঙ্গুলের সাহায্যে ডায়াল করল ৯৯৯।

.

০২.

 একে একে তারা ঘর থেকে বেরিয়ে এল। প্রত্যেকের হাতে একটা করে চামড়ার স্যুটকেস, ভেতরে ভরা আছে নিজস্ব জিনিসপত্র। সকলের পরণে ট্রেঞ্চ কোট আর টুপী, যা ফ্রান্সের লোকেরা। পড়ে।

হোটেলের পরিবেশ চুপচাপ। সিঁড়ির নীচে শেষ মাথায় লাউঞ্জ জনশূন্য।

জিনি সিঁড়ির মাঝামাঝি জায়গায় এসে থমকে দাঁড়াল। দেখল মেভোস লাউঞ্জের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সিঁড়ির শেষ ধাপ পেরিয়ে নীচে নামতেই সে সরে গেল।

গত দশটা মিনিট মেভোস খুব ব্যস্ত ছিল। টেলিফোনে পুলিশকে খবর দিয়েছে আর সাবধান করে দিয়েছে হোটেলের ম্যানেজারকে।

তারা তিনজন পাবলিক লাউঞ্জে এল।

 জিনি বলল–চল। সে বুঝতে পেরেছে তাদের একমাত্র সম্বল এখন ভাগ্যই। বাইরে যাওয়ার সময় সদর দরজার সামনে এসে থমকে দাঁড়াল। ইউনিফর্ম পরা দুজন পুলিশ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকছে। তারা জিনিকে দেখে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল, এক মিনিট মিস। তারপর তার দিকে ছুটে গেল।

জিনির মনে হল, গত চার বছর যাবৎ যে সকল পরিকল্পনা আর কাজ করেছে, সব কিছুই বৃথা হতে চলেছে। সঙ্গে সঙ্গে ভীতি ঘিরে ধরল তাকে। ঘুরে দাঁড়িয়ে পালাতে চাইল, পালাবার উপায় থাকলে ঠিক পালাত, কিন্তু উপায় নেই। একজন লম্বা সুদর্শন এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যুবক পুলিশ জিনির প্রায় কাছাকাছি পৌঁছতেই জনের পিস্তল গর্জে উঠে ছেলেটাকে সচকিত করে তুলল।

.

সপ্তম পরিচ্ছেদ

০১.

 প্রায় দুবছর হয়ে গেল ব্রায়ান মারা গেছে! করিডন তার চোখেমুখে বিস্ময়ের ছাপ লুকোবার চেষ্টা করল না।

খুব শান্তকণ্ঠে সে বলল, আমি জানতাম না, দুঃখিত। জানা থাকলে তোমাকে বিরক্ত করতাম না–

না, না, ঠিক আছে–মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে বলল, করিডন যাতে ব্রিবতবোধ না করে, দু বছর দীর্ঘ সময়। ওর মৃত্যু সংবাদে আমি প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলাম। কিন্তু অতীত আঁকড়ে ধরে থেকে কি লাভ বলুন?

কোন লাভ নেই। ম্যালোরীর মত মানুষ মারা গেছে ভাবতেই পারি না।–চলে যেতে উদ্যত হয়ে করিডন বলল, যাক তোমার সময় নষ্ট করব না।

এভাবে আপনি চলে যেতে পারবেন না। ভেতরে আসুন। আপনি কি ওর এয়ারফোর্সের বন্ধু?

হ্যাঁ, পরিচয় হয়েছিল। ওকে বেশ ভাল লাগত।আমার নাম করিডনমাটিনকরিডন। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে চাই না।

ভেতরে আসুন।

যে ঘরেকরিডন প্রবেশ করল সেটা আলো-বাতাস মুক্ত একটা স্টুডিও। সামনে স্ট্যান্ডের উপর রয়েছে, অর্ধসমাপ্ত একটি নারীর পেন্টিং। সে আর্ট সম্পর্কে কিছু না বুঝলেও ছবিটি দেখে মুগ্ধ। হয়ে গেল।

বাঃ, চমৎকার। সে বলল, তুমি এঁকেছ?

হা,–মেয়েটি বলল, আচ্ছা ব্রায়ানের সাথে আপনার কবে শেষ দেখা হয়েছিল?

যুদ্ধের সময়। আমাকে দশ পাউন্ড ধার দিয়েছিল। ওকে ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল।

বসুন। ব্রায়ানের সঙ্গে পরিচিত এমন একজনের সঙ্গে অনেকদিন পরে দেখা হল। আমার উচিৎ তার বন্ধুদের যত্ন করা। পানীয় চলবে?

সব সময়ে চলে, করিডন গা থেকে কোট খুলে বলল, যুদ্ধের পর অনেকদিন হাসপাতালে ছিলাম। তারপর আমেরিকায় গিয়েছিলাম। মাত্র কয়েকদিন হল ফিরেছি। হঠাৎ একদিন মনে পড়ল তোমার দাদাকে টাকাটা ফিরিয়ে দিতে পারিনি। ভাবলাম, এই সুযোগে আমাদের দুজনের সাক্ষাৎ হয়ে যাবে। টেলিফোন ডাইরেক্টরীতে খোঁজ করেছি। কিন্তু ওর নাম পাইনি, তবে পেয়েছি তোমার নাম। একবার বলেছিল, এক বোন আছে, নাম অ্যান। সঙ্গে সঙ্গে মনে হল তুমিই সেই বোন হবে, তাই চলে এলাম।

আমার সম্পর্কে ও কি বলেছে?–সে পানীয় এনে সামনে রাখা টুলের উপর রাখতে রাখতে বলল। করিডন নজর করল মেয়েটার হাত কাঁপছে।

আমার তেমন মনে নেই। একটা আরাম কেদারায় বসতে বসতে সে বলল। ভাবল বেশী মিথ্যে বলা ঠিক হবে না। তাহলে বেশীক্ষণ ধরে রাখা সম্ভব হবে না। কেন ম্যালোরীকে খুঁজছে তা বলতে চায় না আর বলতে চায় না জিনি এবং তার দলের সম্পর্কে।

করিডন তাই প্রসঙ্গ পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করল, ও কি করে মারা গেল, হয়ত তুমি এ সম্বন্ধে কোন কথা বলতে চাও না?

এ সম্বন্ধে কেন বলব না?–সে সামনে বসে পড়ে বলল, আমাকে সুযোগ দিলে সব খুলে বলব। ও চমৎকার মানুষ ছিল। কয়েক সপ্তাহ আগে তাকে গুলি করে জখম করে বন্দী করা হয়। জেল থেকে পালিয়ে একটা গুপ্ত ফরাসী গেরিলা বাহিনীতে যোগ দেয়। আমাকে একটা চিঠি লিখেছিল। সেটাই ওর শেষ চিঠি। চিঠিটা একজন আমেরিকান পাইলট বন্ধুর হাতে পাঠিয়েছিল। এই গেরিলাদের সঙ্গে কাজ করতে তার ভালই লাগছিল। ওরা সংখ্যায় ছিল আটজন। তারা ট্রেন লাইনচ্যুত করত। দলপতি ছিল একজন ফরাসী, নাম পিয়েরী গোর্ভিল। ব্রায়ানের মতে লোকটি চমৎকার। তার মধ্যে ছিল প্রচণ্ড সাহস, বিশ্বাস আর দেশপ্রীতি। দলে ছিল দুজন ফরাসী পুরুষ, দুজন ফরাসী নারী, দুজন পোল্যান্ডের লোক, আর তিনজন ইংরেজ, সে নিজেও তাদের একজন। জিনি পারসিগনী নামে একটা মেয়ের কথা লিখেছিল, ফরাসী নারীদের মধ্যে সে একজন ছিল। এই মেয়েটির খুব প্রসংশা করেছিল। সকলেই ছিল চমৎকার মানুষ। আমার শুধু খারাপ লাগত বিপদজনক কাজ করছিল বলে। কিন্তু আমার তো কিছু করবার ছিল না। ওকে চিঠি লেখার সুযোগ ছিল না। পরে একদিন এয়ার মিনিস্ট্রির কাছ থেকে জানতে পারলাম গেস্টাপোদের হাতে সে ধরা পড়েছে। যখন পালাবার চেষ্টা করে তাকে গুলি করে জখম করা হয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার দুদিন আগে তাকে গুলি করে মারা হয়।

আমি কি বিশ্বাস করতে পারি ওর মৃত্যু হয়েছে? করিডন বলল, জান অবিশ্বাস্য ঘটনাও ঘটে।

চকিতে মুখ তুলে তাকাল মেয়েটা। তার চোখমুখে বিস্ময়। সে জিজ্ঞাসা করল, একথা বলছেন কেন?

 আমি সম্প্রতি কয়েক জনের সাথে তোমার দাদার সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তার এক বান্ধবী-রীটা অ্যালেন তাদের মধ্যে অন্যতম। সে লক্ষ্য করল মেয়েটি চমকে উঠল, হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হল, জানি না ওকে তুমি চেন কিনা। মেয়েটা বলেছে তোমার দাদা জীবিত আছে। মেয়েটা দাবী করেছে কয়েক সপ্তাহ আগে ওকে দেখেছে।

রীটা অ্যালেনের নাম উচ্চারণ করতেই মেয়েটা রেগে উঠেছিল, কিন্তু রাগ সহজেই প্রশমিত হয়ে গেল। সে বলল, এমন কথা ও কি করে বলল? আপনি ওখানে গেছিলেন কেন আমি বুঝতে পারছি না।

তোমার দাদা ওর কথা আমায় বলেছে। কয়েকদিন আগে ওর কাছে গিয়েছিলাম, হঠাৎ আমাদের দেখা হয়ে গিয়েছিল। ওর নাম শুনেই মনে পড়ে গেল তোমার দাদা বলেছিল মেয়েটা তার বান্ধবী। স্বাভাবিকভাবেই আমি জানতে চাইলাম তোমার দাদা কোথায় আছে? ও জানে না, তবে বলল, কয়েক সপ্তাহ আগে নাকি তাদের দেখা হয়েছিল।

কি করে তার সাথে দেখা হবে?-অ্যান রেগে গিয়ে বলল, আপনি ভুল করছেন। মেয়েটা কোনদিন দাদার বান্ধবী ছিল না। ওর সম্বন্ধে ব্রায়ান বলেছিল, যখন মেয়েটা বিগিন হিলে ছিল তখন দুজনের সাক্ষাৎ হয়। দৈহিক আকর্ষণ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। আপনি তো জানেন অল্প বয়সী অফিসাররা আজকাল কেমন হয়। তারা কিছু হারাতে রাজী নয়। মেয়েটা দাদার হাতে নিজেকে সঁপে দিয়েছিল। ফলে পরে তার কাছে টাকা দাবী করতে থাকে। তাদের দেখাসাক্ষাৎ হয় বার তিনেকের বেশী নয়। এ ধরণের কথা ও বলল কি করে?

হতাশ হয়ে করিডন চেয়ারে শরীর ডুবিয়ে দিল। সে বলল, তোমাকে তো সব কথা ম্যালোরী নাও বলতে পারে। সাধারণতঃ ভায়েরা যা করে, বোনেদের কাছে অনেক কথা গোপন করে—

এটা কোন যুক্তি নয়।অ্যান তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল, এ ব্যাপারে আর এসব খাটে না। ব্রায়ান বেঁচে আছে, মেয়েটা মিথ্যে কথা বলেছে।

কিন্তু কেন? করিডন জানতে চাইল, বলবার উদ্দেশ্য কি?

মুহূর্তের জন্য অপ্রতিভ দেখাল অ্যানকে। তারপর সে বলল, এ খবরের জন্য ওকে কত টাকা দিয়েছেন?

করিডনকে এবার অপ্রতিভ দেখাল। সে বলল, কি করে জানলে ওকে টাকা দিয়েছি?

আপনাকে তো প্রথমেই বলেছি, মেয়েটাকে আমি চিনি। অর্থের জন্য অনেক মিথ্যা কথা বলতে আর অনেক বাজে কাজ করতে পারে।

বেশ স্বীকার করছি টাকা ওকে দিয়েছি, কিন্তু মেয়েটা কেন বলতে গেল ব্রায়ান জীবিত?

আপনি কি তাই শুনতে চাইছিলেন না? যদি সে বলত ব্রায়ান মৃত, তাহলে কি ওর প্রতি আপনি, কোন আগ্রহ দেখাতেন?

অ্যানের দিকে করিডন তাকিয়ে রইল। এ ধরনের সে কিছু আশা করেনি। চুপচাপ বসে থেকে সে চিন্তা করল রীটা অ্যালেন তার কাছে মিথ্যে কথা বলেছেকিনা। অ্যান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ঘরের ওপাশে গিয়ে ইজেলের সামনে দাঁড়াল।

আপনি আমায় চিন্তায় ফেললেন। দীর্ঘ নীরবতার পর অ্যান বলল, ব্রায়ানের মুখে কোনদিন আপনার নাম শুনিনি। কোন কোন ব্যাপারে আমার মনে হচ্ছে দাদাকে আপনি সঠিক জানেন না। আপনি কি সত্যিই ওর খোঁজে এসেছেন?

করিডন ক্ষিপ্রগতিতে উঠে দাঁড়াল। কিছু বলতে গিয়ে থমকে গেল। জানালা দিয়ে দেখল অলিভ-গ্রীন ট্রেঞ্চ কোট গায়ে আর কালো টুপী মাথায় একজন লোক এলোমেলো পা ফেলে এগিয়ে আসছে। লোকটি রনলি। খানিক পরেই রুদ্ধশ্বাস আর ঘর্মাক্ত রনলি হাঁপাতে হাঁপাতে এই স্টুডিওর দিকে ছুটে এসে দরজার গায়ে প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা দিতে লাগল।

করিডন দুরন্ত গতিতে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে রনলিকে ধরে হলঘরে নিয়ে আসে।করিডনের আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে ভীষণভাবে হাঁপাতে লাগল।

কি হয়েছে?–করিডন প্রশ্ন করল, এখানে কি করছ?

রনলি নিজেকে সামলাবার চেষ্টা করতে লাগল। তার বুক ওঠানামা করছে। দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুণি শ্বাসরোধ হয়ে মারা যাবে।

কি হয়েছে?–তাকে ঝাঁকি দিয়ে প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করল।

ওরা আমাকে অনুসরণ করে এদিকে আসছে। রনলি হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, এখানে আসতে বাধ্য হলাম। আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।

 চুপ কর। বলে করিডন আড়াচোখে পাশের দিকে তাকাল। অ্যান দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

 .

০২.

 দেখা গেল সবুজ রং করা গেট খুলে দুজন পুলিশ প্রবেশ করছে। দুজনেরই হাতে একটা করে স্টেন গান। প্রত্যেকটা বাংলোর মাঝে বিশ ফুট ফাঁকা জায়গা। করিডন পর্দা ফেলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিজেকে আড়াল করে। কিছু কৌতূহলী নরনারী ভীড় করেছে গেটের বাইরে রাস্তার ওপাশে।

করিডনের পাশে দাঁড়িয়ে অ্যানও জানলা দিয়ে দেখছে।

পুলিশ দুজন ডানদিকের বাংলোর দিকে এগিয়ে গেল।

ওরা তোমাকে ভেতরে ঢুকতে দেখেছে? জানলা থেকে চোখ না সরিয়ে রনলিকে করিডন জিজ্ঞাসা করল।

রনলি চেয়ারে বসে আছে শরীর এলিয়ে, সে বলল মনে হয়না দেখেছে। আমাদের মধ্যে পঞ্চাশ গজের ব্যবধান ছিল। বাঁক ঘুরে এখানে ঢুকেছি, তাই মনে হয়না দেখতে পেয়েছে। ওরা কি এখনো গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে?– ওরা এখন বাড়ির উঠোনে তল্লাশি চালাচ্ছে।

রনলি কষ্ট করে উঠে দাঁড়াল। সে বলল, যদি পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে আমি কিছুই করতে পারব না। যদি আমি বলি জন গুলি চালাবে তা জানতাম না, তাহলে ওরা আমার কথা বিশ্বাস করবে না। অনেক সাক্ষীর সামনে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। 

চুপচাপ বসে থাকো।করিডন বলল, তোমার এখানে থাকার কথা যদি পুলিশ না জেনে থাকে তাহলে মঙ্গল। তারপর সে অ্যানের কাছে গিয়ে বলল, এই পরিস্থিতির জন্য আমি দুঃখিত। বুঝিয়ে বলবার মত সময় হাতে নেই। কিন্তু বুঝিয়ে বলবার মত ঘটনা আছে, যাই ঘটুক না কেন, তোমাকে তার থেকে দূরে রাখতে চাই। আমাদের হয়ে কথা বলতে বাধা কি বল?

অ্যান তার দিকে তাকাল। বিপদের আশঙ্কা করেছে, কিন্তু ভয় পায়নি। সে অবিচলিত কণ্ঠে বলল, তোমাদের কাউকে আগে আমি দেখিনি। যদি পুলিশ আমাকে প্রশ্ন করে উত্তরে আমি যেটুকু জানি তাই বলব।

করিডন হাসল। সে বলল, সেটাই বুদ্ধিমতীর কাজ হবে, কিন্তু আমরা তোমায় পুলিশ দুজনের সঙ্গে দেখা করতে দেব না। তারপর রনলির দিকে তাকিয়ে বলল, ওকে বেঁধে ফেলতে হবে। খানিকটা কর্ড বা ওই জাতীয় কিছু পাও কিনা খুঁজে দেখ। তাড়াতাড়ি কর।

অ্যান দুপা পিছিয়ে গেল। করিডন তার হাতের কব্জি চেপে ধরল।

 বোঝবার চেষ্টা কর।–করিডন বলল, তোমার শরীরে কোন রকম আঘাত করব না। চেঁচিও না বা ছটফট করো না। পুলিশ চলে গেলেই তোমাকে ছেড়ে দেব। প্রতিজ্ঞা করে বলছি, তোমার কোন রকম ক্ষতি আমরা করব না।

না, আমি ছটফট করব না। অ্যান বলল, ওর কথাবার্তা আমি শুনেছি, ও খুনী তাই না?

 না, ও খুনীনয়। রনলি কখনও একটা মাছিকেও মারেনি। তোমার ভাইয়ের কজন সঙ্গী এদেশে আছে। জন এ কাজ করেছে। মনে পড়ছে জনকে? সেই পোল্যান্ডের লোকটা?

এ সবের অর্থ কি? ভয় পেয়ে অ্যান বলল, কি উদ্দেশ্যে এখানে তোমরা এসেছ?

দুঃখিত। সব শুনতে হলে তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে। করিডন বলল। ইতিমধ্যে রনলি অ্যানের ঘরে পাওয়া বেল্ট আর স্কার্ফ নিয়ে ঘরে ঢুকতেই তাকে সে বলল, পুলিশ দুটোর উপর লক্ষ্য রাখ। রনলির হাত থেকে বেল্ট আর স্কার্ফ নিয়ে অ্যানকে বলল, তুমি নিশ্চয় গোলমাল করবে না, কি বল?

না, আমাকে কি করতে হবে?

 ঘুরে দাঁড়িয়ে পিছনে হাত দুটো রাখ।

অ্যান তাই করল। হাত দুটো বেল্টের সাহায্যে শক্ত করে বেঁধে করিডন বলল, খুব বেশী চেপে বসে গেছে নাকি?

না, ঠিক আছে।

রনলির দেওয়া একটা রুমাল গোল করে পাকিয়ে করিডন বলল, হাঁ কর।

আমি চেঁচাব না।–ভয়ে দুপা পিছিয়ে গিয়ে অ্যান বলল।

শোন, যদি আমরা পালাতে পারি তাহলে পুলিশ তোমায় জিজ্ঞাসা করবে, কেন চেঁচাওনি। তাই তোমার মুখ বন্ধ করে দেব। যা করছি সব তোমার ভালর জন্য।

ভয় পেলেও মুখে রুমাল ঢুকাতে অ্যান আপত্তি করল না।

বাঃ, চমৎকার। খুশী হয়ে করিডন বলল, এবার বেডরুমে চল। যতক্ষণ না মিটে যাচ্ছে তুমি, বিছানায় শুয়ে থাকবে। পুলিশ চলে গেলেই তোমাকে মুক্ত করে দেব।

বেডরুমে গিয়ে খাটের কিনারায় পা ঝুলিয়ে অ্যান বসল। তার চোখেমুখে ভীতি।

স্কার্ফের সাহায্যে পা দুটি বেঁধে ফেলে করিডন বলল, এবার শুয়ে পড়।

 কথামত অ্যান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। করিডন স্টুডিওতে ফিরে এল। রনলিকে জিজ্ঞাসা করল, ওদের দেখা পেলে?

না-অনলি বলল, মনে হচ্ছে ওরা বাড়ি বাড়ি ঢুকে তল্লাশি চালাচ্ছে।

কলিংবেল বাজল। রনলি বেডরুমে ঢুকে পড়ে দরজা বন্ধ করে দিল। করিডন দরজা খুলল।

কোন গোলমাল হয়েছেনাকি?-সে জিজ্ঞাসা করল। একটা লোককে খুঁজছি–একজন পুলিশ বলল, মনে হল এদিকেই এসেছে।

কই আমার নজরে তো পড়েনি।

পুলিশের সঙ্গে আসা বিস্কুট রংয়ের সুট পরনে লোকটি এগিয়ে এসে অনুসন্ধিৎসুকণ্ঠে বলল, আপনি কে? আপনাকে তো আগে কখনো এখানে দেখিনি।

আপনি ব্যাপারটার সহজ সমাধান করতে চাইছেন?

আপনি কে?

নাম হেনলে। মিস্ ম্যালোরীর পুরোন বন্ধু। এ সব জেনে আপনার কি লাভ?

আমার নাম হোলরয়েড–ক্রিস্পিন হোলরয়েড। আমি মিস ম্যালোরীর প্রতিবেশী। উনি কোথায়? ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই।

ও কেনাকাটা করতে গেছে। পুলিশের দিকে তাকিয়েকরিডন বলল, অফিসারআপনারা কিছু জানতে চান?

না, আপনি যখন লোকটাকে দেখেননি, তখন থাক।

না, নজরে পড়েনি।

ওদের বিদায় করে করিডন দরজা বন্ধ করে বলল, বিপদ কেটে গেছে।

বেডরুম থেকে বেরিয়ে এল রনলি। তাকে উত্তেজিত আর ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। সে জিজ্ঞাসা করল, মেয়েটাকে নিয়ে এখন কি করব?

কিছুক্ষণ ওই ভাবে পড়ে থাক। আসল ব্যাপার হল–আমরা তোমার ব্যাপারে কি করব?

স্টুডিওতে গিয়ে রনলি পায়চারি করতে লাগল। সে বলল, আমি কোন আশা দেখতে পাচ্ছি না। ধরা দেওয়াই ঠিক হবে। হয়ত পুলিশ আমার কথা বিশ্বাস করবে।

কেউ গুলি ছুঁড়তে দেখেছে?

জানি না। আমার মনে হয় না। পুলিশ তো আড়ালে ছিল। খুব তাড়াতাড়ি কাজ সমাধা করা হয়েছে। অবশ্য পুলিশ গুলি ছোঁড়ার শব্দ শুনেছে মাত্র, কে ছুঁড়েছে দেখেনি।

ইতিমধ্যে পুলিশ নিশ্চয়ই জেনে গেছে তোমরা সংখ্যায় একাধিক ছিলে। জনের চেহারার বর্ণনা পেয়ে যাবে। হয়ত তারা তাকেই আগে গ্রেপ্তার করবে। তার কাছেই পাবে পিস্তলটা।

এসব আমাকে রেহাই দেবে না। অনলি নিরাশ কণ্ঠে বলল।

না। আমাদের কিছু করতে হবে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ গুছিয়ে নেবে। পুলিশ খুনের প্রতিশোধ তারা চুপচাপ হজম করবে না।

তাহলে আমি এখন কি করব? ধরা দেব নাকি?

তোমার, আমার সাথে যাওয়াই ঠিক হবে। সামান্য সময় ভেবেকরিডন বলল,রীটা অ্যালানের মৃতদেহ খুঁজে পেতে দেরী হবেনা। তারপর পুলিশ সর্বশক্তি নিয়োগ করবে আমার পিছনে। আমি স্কটল্যান্ডে যাচ্ছি। তোমাকে বলিনি বোধহয় ম্যালোরী দুনবারের কাছে একটা দ্বীপ কিনেছিল। ওখানে একটা বাড়িও আছে। ভালভাবে লুকিয়ে থাকা যাবে ওখানে। ম্যালোরী সেখানে থাকতে পারে। তুমি আমার সাথে ওখানে যাবে।

আমরাও যাব।–দরজার সামনে থেকে জিনির নিরুত্তাপ কণ্ঠস্বর ভেসে এল। জন তার পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল। তার হাতে একটা পিস্তল, সেটা করিডনের দিকে তাক করা।