সে তো শুধু রূপকথা

সে তো শুধু রূপকথা

চলো যাই চলো যাই চলো যাই চলো যাই
যেতে হবে যেতে হবে চলো যাই চলো যাই
ধুলো ওড়ে ধুলো ওড়ে কালো ধুলো ঢাকো মুখ
চলো যাই, পড়ে থাক সব কিছু, মায়া থাক
ছায়াটাও ফেলে যাব, রোদ নেই, দিন নেই
শুধু রাত, ধুলো ওড়ে কালো ধুলো চলো যাই
বিছানায় ছাপ ফেলা শরীরের ছবি থাক দে
য়ালের রেখাগুলি ঝুরু ঝুরু ঝরে যাক
দরজায় কার নাম, সব কিছু ক্ষয়ে যাক
চলো যাই চলো যাই চলো যাই চলো যাই

এইখানে দেশ ছিল, আর কারো দেশ নেই
এইখানে স্নেহ ছিল, প্রেম ছিল, সব ভুল
দু’ চোখের জল ছিল, শিশুমুখে হাসি ছিল
বিষ ধুলো বিষ ধুলো, মোহময় ভুল ছিল
ছিল কত রণনীতি, আগুনের ইতিহাস
দাঁতে দাঁত চোখে চোখ হাতে হাত দিন রাত
চলো যাই চলো যাই চলো যাই চলো যাই
মার হাতে পোঁতা গাছ ফুলে কোনও রং নেই
ফলে নেই কোনও বীজ, জলে নেই কোনও প্রাণ
মাঠ আছে মাটি নেই মেঘ আছে ধারা নেই
পাহাড়ের বুক চিরে ঝর্নার সাড়া নেই
যেতে হবে যেতে হবে রব ওঠে যাই যাই

ফের যাওয়া চলে যাওয়া, সব কিছু ফেলে যাওয়া
দেশে দেশে ভেদ নেই, সীমারেখা গেছে মুছে
এ পৃথিবী সাদা কালো মানুষেরই সমভাগ
নেই আর ছুরি ছোরা কামানের নল নেই
বড় গলা কারো নয়, ছোটরাও ছোট নয়
কারো চোখ লাল নয়, সব চোখে চোখে ভয়
দেশ নেই তবু ভয়, পায়ে পায়ে এত ভয়
চলো যাই চলো যাই পা চালিয়ে চলো ভাই
একটুও দেরি নয়, করো ত্বরা, যদি চাও
ভোমরাটা জেগে থাকে, ওই শোনো দ্রিম দ্রিম!

হাতে কিছু নাই থাক, শরীরেও নেই সাজ
সবকিছু খুলে ফেললো, সব সুতো ফেলে দাও
পোশাকেও বিষ ধুলো থাকবে না এক কণা
নারীরাও আবরণ, ছুড়ে ফেলো আভরণ
সোনা-রুপো শিখী পাখা সব কিছু বিষমাখা
মানুষের গড়া বিষ মানুষের সারা গায়
মানুষের প্রিয় ভূমি গরলের কালো ছাই
এ তো নয় আশীবিষ, তার বেশি কোটি গুণ
চলো যাই চলো যাই, চলো পলাতক দল
ধরাতল ছেড়ে যেতে হবে আর দেরি নয়।

ওই দ্যাখো শ্বাস নেয় শূন্যের মহাযান
দ্বার খোলা, দলে দলে ছুটে চলে কালো মাথা
চলো যাই চলো যাই যদি পেতে চাও ঠাঁই
কোনওদিকে তাকিয়ো না, কেউ কারও বন্ধু না
ভাই বোন দারা সুত ধরে নাও সব মৃত
শুধু বাঁচা নিজে বাঁচা শুধু নিজ দেহ খাঁচা
কাছাকাছি মুখগুলি সবই যেন চোখ বোজা
কে যে নারী কে পুরুষ, তাও যেন নেই হুঁশ
গায়ে কোনও তাপ নেই চাপ নেই হাঁপ নেই
মাংসের পুত্তলি, কথা নেই সব চুপ।

কেঁপে ওঠে মহাযান, এইবার দেবে পাড়ি
বৃদ্ধেরা পড়ে থাকে, আছে শিশু, আছে নারী
এ কী মহাগর্জন, আগুনের ফুলঝুরি
বাতাসের হুড়োহুড়ি, কানে তালা, কানে তালা
তবু সব ঢেকে যায় কান্নার কলরব
বুকফাটা কান্নার ভাষা নেই গান নেই
কবরের পাশে বসা, শ্মশানের আঁচে বসা
জননী ও জায়া আর প্রিয়জন অভাজন
বুক খালি করা শোক, তবু বুক ভেঙে যায়
চোখে এত জল থাকে, বুকে এত ঢেউ থাকে
শত শত শতাব্দী জমে থাকা সব শেষ
স্বপ্নের, জেগে থাকা কৈশোর, যৌবন
শূন্যের মহাযান, কান্নার মহাযান!

চলো যাই চলো যাই চলো যাই চলো যাই
বিষ ধুলো বিষ হাওয়া পৃথিবীতে পড়ে থাক
সাগরের ঘন নীল, ছোট ছোট দ্বীপগুলি
দ্বীপ নয়, ওই সবই, এক কালে দেশ ছিল
দেশ ছিল, কত গান, আরও কত প্রেম ছিল
এক দেশ ছেড়ে সব ফেলে গেছি একদিন
যার নাম দেশ তাও মানুষকে ঠেলে দেয়
কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা বন্দুক পিঠে তাক
সেদিনও তো চোখে জল, বুক ভরা অভিমান
ওই যেন দেখা যায়, ছোট থেকে একাকার
সব দেশ মিশে গেল, সবই আবছায়াময়
অস্ত্রের কারবারি হিংসার মহাজন
সবই আজ পথহারা, কে এসেছে কে আসেনি
যে-ঘাতক সেও আজ কেঁদে কেঁদে ধরে হাত
কার হাত, আহত বা আততায়ী কারও হাত।

চলো যাই চলো যাই চলো যাই চলো যাই
এ পৃথিবী ছেড়ে যাই, চিরতরে ছেড়ে যাই
যেতে হবে যেতে হবে বিষ ধোঁয়া, যেতে হবে
একদিকে বাঁকা চাদ, আরও দূরে যেতে হবে
আরও কোনও গ্রহ আছে, নিশ্বাসে বাঁচা যায়
মানুষের অধিবাস পৃথিবীতে শেষ হল
ভিন কোনও গ্রহ ছাড়া মানুষের আশা নেই
বাসভূমি নেই আর মুক্তির পথ নেই
চলো যাই চলো যাই চলো যাই চলো যাই
ধরা যাক পেয়ে গেছি ছিমছাম মনোভূমি
আলো আছে, হিম আছে, প্রতিরোধ নেই কিছু
বড় তারা রোদ দেবে, বর্ষণ প্রাণ দেবে
শূন্যের মহাযান, এইখানে থেমে যাবে?

থামুক না, কতদিন স্নান নেই খাওয়া নেই
চক্ষেও জল নেই, শরীরেও সুতো নেই
হোক না এ অচেনায় মানুষের বসবাস
ভ্রমরের আয়ুটুকু ধুকধুক টিকে থাক
করতলে আমলকী থাকবে কি থাকবে না
ফের এক ঘর বাঁধা নড়বড়ে খুঁটিনাটি
উনুনের ব্যস্ততা, আরও কিছু আছে বাকি
সবই হল ঠিকঠাক, ধরা যাক ধরা যাক
এ নতুন বসতিতে জীবনের চলা শুরু
চোখ মুছে পথ চলা, চোখে নেই কোনও জ্বালা
সব ভাষা ভুলে গেছি, ভাষাহীন নীরবতা
হৃদয়েরও ভাষা নেই, অতীতেরও ভাষা নেই,
তাই ভুলে যাওয়া সোজা, ফেলে আসা সব বোঝা

শুধু এক খোঁজাখুঁজি কী গোপন, কী গোপন
আমরা কি আজও আছি, মানুষ, না আর কিছু
আমরা কি আজও আছি, মানুষ, না আর কিছু?
আমরা কি আজও আছি…
আমরা কি আজও আছি…
অথবা কি অনাগত কাল এসে বলে দেবে
মানুষেরা ছিল নাকি কোনও দিন কোনও দেশে
ইতিহাসে লেখা নেই, সে তো শুধু রূপকথা!