সান্ধ্য বিতর্ক

সান্ধ্য বিতর্ক

একদিন সন্ধেবেলা পুকুরঘাটে ঈশ্বরের সঙ্গে প্রকৃতিদেবীর দেখা
পান খাওয়া লাল ওষ্ঠ তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে উল্টে তিনি বললেন,
হ্যাঁ মশাই, লোকে রটাচ্ছে, আপনিই নাকি এই বিশ্বসংসারের স্রষ্টা?
বাঃ বেশ বেশ, এই সব মাটি, জল, গাছপালা, পাহাড়, প্রাণী-ট্রানি
সব বেরুল আমার এই হাতের তালু থেকে
আর আপনি চ্যালাচামুণ্ডো জুটিয়ে সব জবরদখল করতে চান
এ যে পরের ধনে পোদ্দারি। আপনার চক্ষুলজ্জাটুকুও নেই?
ঈশ্বর আকাশ প্রভুর রূপ ধরে সুমিষ্ট স্বরে বললেন,
ভদ্রে, এমন লোকায়ত ভাষায় কি আমার সঙ্গে বাক্যালাপ চলে?
প্রকৃতিদেবী ফুসে উঠে বললেন, তবে কি সংস্কৃত ঝাড়ব?
আমি ঝড়ের ভাষায় কথা বলতে পারি, ঝরনার ভাষায়, আগ্নেয়গিরির
আবার মলয় হিল্লোলে, ফুলফোটার, এমনকী অব্যক্ত ভাষায়
আপনাকে কেউকেটা বলে মানছি না বলেই প্রাকৃতজনের ভাষায়
জিজ্ঞেস করছি
আসল প্রশ্নটার জবাব দিন!

ঈশ্বর বললেন, কী যেন প্রশ্নটা, এর মধ্যে তুমি কত বদলে গেছ
ও হ্যাঁ, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির ব্যাপারটা তো
না, না, আমি এসব করিনি, আমার এত সময় কোথায়
আমি শুধু সৃষ্টি করেছি তোমাকে, তারপর থেকে তুমিই সব

প্রকৃতি বললেন, আবার একখানা ধাপ্পা চালালেন?
আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তা হলে আপনাকে সৃষ্টি করল কে?

ঈশ্বর সহাস্যে বললেন, সে অতি নিগূঢ় রহস্য, জানতে চেও না।

প্রকৃতি বললেন, রহস্য না ছাই! আমিই তো তৈরি করেছি আপনাকে
নিতান্ত খেলার ছলে, তারপর ঢুকিয়ে দিয়েছি মানুষের মগজে
মানুষই আপনাকে নিয়ে ভড়ং করে, এই তালগাছটা কি আপনাকে চেনে?
বনের একটা বাঘ, নদী, ফুল ও মৌমাছিরা আপনার কথা জানেই না

ঈশ্বর বললেন, চারুশীলে, ওরা তোমাকে চেনে, তাই তো যথেষ্ট
পায়সান্ন যেমন চেনে দর্বি অর্থাৎ হাতাটাকে, কিন্তু সেটিকে
কেউ চালনা না করলে কি ঠিক ঠিক স্বাদ হয়?

প্রকৃতি ক্রোধচঞ্চল নয়নে বললেন, মশাই, আপনার
আস্পর্ধা তো কম নয়, আমার নিজস্ব নির্মাণ ক্ষমতা নেই?
দেখবেন, দেখবেন, আপনাকে এক্ষুনি চিরস্থায়ী নিরাকার করে দিতে পারি
কি না
তখন কোথায় থাকবে আপনার হাত, থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে যাবে

ঈশ্বর বললেন, তুমি হাতা কথাটার মর্ম বুঝতে পারলে না…

ঝোপের আড়ালে এক শুঁটকো পুজুরি বামুন সব শুনছিল গোপনে
এবার সে মনে মনে বলে উঠল, হা কপাল
ভগবান সত্যিই বড্ড বুড়ো হয়ে গেছেন
নইলে এই সুন্দরী স্ত্রীলোকটির সঙ্গে লীলাখেলায় মন না দিয়ে
চালিয়ে যাচ্ছেন ফালতু তর্ক
এদিকে যে পায়সানন্নে পোড়া লেগে যাচ্ছে!