ওরা

ওরা

ওরা একটা বোমা বানাচ্ছে, যাতে সব মৌমাছিরা শেষ হয়ে যাবে
মৌমাছির সঙ্গে ভোমরা, ফড়িং টড়িং-এর মতন পোকা মাকড়
আর কোনো ক্ষতি হবে না
বাঁচা যাবে। মৌমাছিরা আর হুল ফোটাতে পারবে না মানুষকে
মানুষকেও আর চুরি করতে হবে না পরের ঘরের মধু
হ্যা, মধু আর পাওয়া যাবে না অবশ্য, তাতে আর এমন কী
‘মধ্বাভাবে ঘুড়ং দদ্দাৎ’ কথা আছে না?
মধুর অভাবে গুড়, কিংবা চিনি, চিনি তো থাকছেই
মানুষের ঠোঁটে ও জিভে মিষ্টির কোনো অভাব হচ্ছে না
শুধু ফুলগুলো ঠায় বসে থাকবে প্রতীক্ষায়
প্রেমিকের প্রতীক্ষায়
প্রতীক্ষায় প্রতীক্ষায় বেলা যাবে, সে আর আসবে না গুনগুনিয়ে
এক সময় তারা নেতিয়ে পড়বে
প্রেম না পেলে ফুল বাঁচে না, ওরা তো আর মানুষের মতন নয়
চারদিকে তাকিয়ে দেখো সারা পৃথিবীতে আর একটাও ফুল নেই
‘ফুল ফুটুক না ফুটুক তবু বসন্ত’ আসবেই নিশ্চিত
ফুল টুল নিয়ে অনেক কবিত্ব হয়েছে, আর অত আদিখ্যেতার দরকার কী
আগামী শতকে ফুল ছাড়াই দিব্যি চলে যাবে
তবু যদি মন কেমন করে, ঠিক আছে, কাগজের ফুল অনেক বেশি বাহারী
আম কাঁঠাল-জম্বুরার মতন বড় বড় ফলগুলো নাকি ছোট্ট ছোট্ট ফুল থেকে হয়?
ফুল তবে শুধু টেবিল সাজাবার জন্য নয়, কোমল হাতের জন্য নয়
ফুল নেই, তাই ফল নেই, কাগজের ফুল থেকে ফল ফলাতে পারবে বিজ্ঞান?
মা ফলেষু কদাচন
অত ফলের জন্য লোভ করতে শাস্ত্রেও বারণ করেছে
ফল বাদ যাক, আজকাল বিধবারাও তেমন ফল খেতে চায় না
আম-কাঁঠালে নীল মাছি আসে, কলার খোসায় পা হড়কায়
এসব আপদ থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে
ধান-গম-যবের দানা, এগুলোও আসলে ফল, আগে খেয়াল হয়নি
তা হলে তো একটু মুশকিল
ফুল না ফুটলে ফসলের খেতগুলোও খাঁ খাঁ করবে
দুনিয়ার সব ভাঁড়ার ফুরোলে টান পড়বে যে ভাত-রুটিতে
রুটি নেই তো কী হয়েছে, কেক খাও, কেক খাও, বলেছিলেন না এক রানি?
নাঃ, সে আপ্তবাক্যে বিশেষ সুবিধে হয়নি
ভাতের বদলে কি প্রাথমিক শিক্ষায় পেট ভরবে, বলে দিন না অমর্ত্য সেন স্যার
কিংবা ভাতের বদলে ধর্ম চুষে চুষে খাবো?
অন্ন চিন্তা চমৎকারা কা তরে কবিতা রুথঃ!
খালি পেটে কবিতা হবে না, সেমিনারে বক্তৃতা দেওয়াও যাবে না
সামান্য চাষাভুষোদের এতখানি কর্তৃত্ব মানুষের শিল্প-সংস্কৃতির ওপর?
নাঃ, মুশকিলটা যাচ্ছে না, উল্টো দিকে ফেরো, উল্টো দিকে ফেরো
ঘুরে দাড়াও, আগে ধরে আনো যত নষ্টের গোড়া ঐ মৌমাছিটাকে
কিন্তু এখন আর তা কী করে হবে, দেরি হয়ে গেছে দেরি হয়ে গেছে অনেক
ওরা যে আগেই বুকের মধ্যে সোনার কৌটোয় রাখা মৌমাছিটাকে
বিষের ধোঁয়ায় মেরে ফেলেছে।