পাখির চোখে দেখা ১

পাখির চোখে দেখা ১


একবুক জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে নিজের চোখের জলও
মেশাচ্ছে সেই স্রোতে
কয়েক পলক মাত্র দেখা
আমি ওই মানুষটিকে চিনি না
তা হলেও কি ওই মানুষটিকে নিয়ে কবিতা লেখা যায়?
লেখার চেষ্টা করেছি কখনও কখনও
ঠিক নয়, না?
কিছুই না করার চেয়ে এই চেষ্টাটাও কি একেবারে মিথ্যে?


বাড়ির দরজার বাইরে হাঁটু মুড়ে বসে আছে ধর্ষিতা মেয়েটি
ওকে ঘিরে আছে একদল মানুষের অহি-নকুল চোখ
ওর ছিন্নভিন্ন শাড়ি ও শরীরে লেখা আছে কিছু ইতিহাস
এমন কিছু দুর্বোধ্য নয়
তবু তা পাঠ করার জন্য একদণ্ডও দাঁড়ানো যায় না
দাঁড়ালেই কান মুলে দেবে বিশ্ব বিবেক
মাটির রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলে যায় হুস করে
একটা কদমগাছ থেকে খসে খসে পড়ছে পাতা
সামান্য মেঘের আড়াল, সূর্যেরও এখন উঁকি মেরে দেখার
অধিকার নেই…


কলাপাতাগুলো ছিঁড়বেই, ছেঁড়া পতাকার মতো উড়বে
নিমগাছটায় পাখিরা বসে না, তালগাছে ঝুমঝুমি
একটি বালিকা আমলকী তুলে রাখছে হাতের মুঠোয়
সে জানে না তার করতলে ধরা পড়েছে বসুন্ধরা!

ছাতারে পাখিরা সাত ভাই বোন, সারাদিন ঝগড়ুটে
ঘুঘুকে দেখেও কিছুই শেখে না, ইষ্টিকুটুম একা
ভোরের ডাহুক ডাক দিয়ে যায়, রাই জাগো, রাই জাগো
ধড়মড় করে রাই উঠে বসে পরপুরুষের ঘামে ভেজা বিছানায়।

কালোমানিকটি দাঁতন করছে কাজলাদিঘির ঘাটে
মাথার ওপর মেঘ গুরু গুরু, সুদিন আসছে বুঝি
শীর্ণ নদীতে কাপড় কাচছে চণ্ডীদাসের রামী
কানা বৈরাগী দোতারার তার ছিঁড়েও মুচকি হাসছে।

আবহমানের থেকে তুলে নেওয়া কয়েক টুকরো ছবি
বড়ই পলকা, কাঁচা শিল্পীর তুলট কাগজে আঁকা
শুধু ভোরবেলা
রৌদ্র প্রখর হলেই সাম্প্ৰতিকের
বিষ আর রোষ, বুকে গুরুভার, এও তো সত্যস্বরূপ!