আমার কৈশোরের মা

আমার কৈশোরের মা

লাইনের আগে তিনটে বডি, সেই জন্য অপেক্ষা
এখানে সবাই ফিসফিস করে কথা বলে
মাথা নিচু করে রাখাই রীতি, কান্না নয়
কেউ কেউ হয়তো স্মৃতিকাতর, কেউ বাড়ি ফেরার সময়
মাপছে

আমি যথা সম্ভব নির্লিপ্ত, হয়তো সেটা ভান
মুখাগ্নি করবে আমার মেজ ভাই
ছোট ভাইটি দূর বিদেশে, ছোট বোন নেপাল থেকে
উড়েছে আকাশে
কোথা থেকে এক দল তিরিশ-বত্রিশ এসে বসে পড়ল
চাতালে গোল হয়ে

তাদের সঙ্গে কোনো শব নেই
বিনা ভূমিকায় তারা শুরু করে দিল দুর্বোধ্য গান
ওরা অনায়াসেই গাঁজাখোর হতে পারে, কিন্তু
ওদের এমন সঙ্গীতপ্রীতির কোনো কারণ বোঝা যায় না
শিরিটির শ্মশানে ওরা কাকে গান শোনায়
গা জ্বলে গেলেও কিছু বলা তো চলবে না
আমাদের নিস্তব্ধতাকে তোয়াক্কাই করে না ওরা

শেষ দেখার জন্য এগিয়ে গেলাম উঁচু জায়গাটার দিকে
হঠাৎ একটা চমক লাগল
কী আশ্চর্য সুন্দর দেখাচ্ছে আমার চুরাশি বছরের মাকে
মুখ-চোখ ফুলে গিয়েছিল, এখন একেবারে পরিষ্কার
সোনার মতন রং, টিকোলো নাক, লাজুক চোখ,
ঠিক যেমন ছিলেন আমার কৈশোরে
যেন সেজে গুজে থিয়েটার দেখতে যাচ্ছেন
মনটা ভালো হয়ে গেল, এই মাকে তো আর কোনো দিন
হারাব না।