পাখির চোখে দেখা ২

পাখির চোখে দেখা ২


ভুরুর মতন নদীর বাঁক, কুকুর-জিভ
রাস্তা ঘুমের মতন ঘুমন্ত গ্রাম, স্বপ্ন সুখ-সায়র
সদ্য হলুদ ধানের গন্ধে অনেক না-বলা কথা
আশঙ্কার মতন চিল, ছুটির মতন দুপুর

বাল্যকালের মতন স্বচ্ছ দুলছে আলোকলতা
শিমুল তুলোর অনুসরণ প্রথম ভালোবাসা
বৃষ্টি এল পুষ্পধারায়, রতির মতন বাতাস
ভেজা মাটিতে রস গন্ধ, বিদ্যুতের ঝিলিক
সেও আকাশের তৃপ্ত হাসি, গাছেরা লুটোপুটি
দিনের মতন দিন চলেছে, রাতের মতন রাত!


গড়বন্দিপুর থেকে ফেরা, শেষ ট্রেন
দশটা পঁচিশে
ঘুরঘুট্টি কালো রাস্তা, সঙ্গিনী ও বান্ধবেরা ঘুমিয়ে নির্বাক
যদি ট্রেন চলে যায়, বাকি রাস্তা ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না
জোরে চলো, আরও জোরে, আর মাত্র সাত-আট মিনিট
হঠাৎ পথের মধ্যে দু’ বাহু ছড়িয়ে, নগ্ন
নিঃশব্দে দাঁড়াল মহাকাল
যেন পেছনের সেতু হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল
শোনো সেই শব্দ-মহোৎসব
সম্মুখেও গতি নেই, কাঁপতে কাঁপতে দেখে যেন গাড়ির ইঞ্জিন
এবার মাটিতে নেমে হাঁটু গেড়ে বসা
রাতচরা পাখিটির ডাক উড়ে যায় দূরে ধারালো বাতাসে
দু’দিকে প্রান্তরে কোনও জোনাকি জ্বলে না
দিকশূন্যপুরে কেউ জেগে নেই, তাদেরই স্বপ্নের মধ্যে
বন্দি এই আমরা কজন আপাতত!


শেখ সুলেমান হাতের দা দিয়ে পাগলের মতন কাটছে কচু গাছ
শেখ সুলেমান থু থু করছে পাশের নয়ানজুলিতে
শেখ সুলেমান কক্ষনও কাঁদে না, বিরলে কান্নার কোনও
জায়গাই নেই তার
শেখ সুলেমান বৃষ্টির মধ্যে ভিজছে তো ভিজছেই
তার চোখ দেখা যায় না
শেখ সুলেমান পীর সাহেবের মাজারের পাশ দিয়ে চলে গেল
ভ্রূক্ষেপও করল না
শেখ সুলেমান তিনটে বাচ্চা সমেত এক ভিখিরিনিকে
ভয়ংকরভাবে দাঁত খিচিয়ে তাড়াল
শেখ সুলেমান লাথি কষাল একটা বেড়ালকে
শেখ সুলেমানের শুধু রাগ নয়, নিদারুণ কষ্ট হচ্ছে মানুষটার
খবর্দার, কেউ তার কারণ জিজ্ঞেস করতে যেয়ো না
বরং যে যত পারো তরঙ্গ পাঠাও!