৪. আজীবন জ্ঞান সাধনা

৪. আজীবন জ্ঞান সাধনা

শিক্ষকরা শুধুমাত্র ছাত্রদেরকে প্রভাবিত করতে পারেন তাই না,
মানুষের মূল্যবোধে ব্যবহারিক পাঠ, বিশেষ করে
তাদের স্বার্থহীন জ্ঞান দানও করতে পারে।

.

প্রিয় বন্ধুগণ, ২০১৪ এর ১৮ ডিসেম্বর যে ঘটনা ঘটেছিল আমি তা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ISRO) GSLV মার্ক ৩ সঠিক সময়ের মধ্যে প্রত্যাশিত পথে ভ্রমণ করে টেস্ট মিশন সাফল্যের সাথে সমাধা করল। এটা পৃথিবীকে জানান দিল, ভারত বিশ্বাস করে যে, তারা শীঘ্রই মহাকাশযাত্রীকে মহাশূন্যে পাঠানোর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে। এটা ছিল পরীক্ষামূলক মিশন। সম্ভবত দু’বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে মহাকাশে উড়তে পারবে। এই মিশনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল রকেটের সাহায্যে মহাশূন্যের বায়ুমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা। ৬৩০ টনের রকেট ১২৬ কিমি বেগে ধাবমান হয়। ৪ টন ক্রু ক্যাপসুলের তিনজন মানুষ বিছিন্ন হয়ে পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৬০০ কিমি বঙ্গোপসাগরে অবতরণ করে। বিশ মিনিটে ১৬০০ কিমি দূরের স্পেস স্টেশন থেকে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তিনজন প্যারাসুট ক্রু মোডিউল নিয়ন্ত্রণ করে।

নির্ধারিত সময়ে সঠিকভাবে এই পদ্ধতি কাজ করেছিল। উড্ডয়নের পর হিট সিল্ড আলাদা হয়ে যায়। ক্রু মোডিউল অ্যাটমোস্ফেরিক রি-এন্ট্রি এক্সপেরিমেন্ট (কেএআরই) মোডিউল লঞ্চ ভিইয়েকল থেকে বিচ্ছিন্ন হলে মোডিউল সক্রিয় হয়। এই মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন হলো। ISRO, GSLV মার্ক ৩ প্রকল্পের মাধ্যমে বড়োসড়ো উপগ্রহ পাঠাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল। পরবর্তীতে ISRO সোলার পাওয়ার স্যাটেলাইট পাঠানোর কথা ভাবে। একদিন আপনাদের অনেকেই ISRO চন্দ্র বা মঙ্গল গ্রহের মিশনে মহাকাশযাত্রী হতে পারেন। আমার বন্ধুরা, এই মিশনের সাফল্যের কারণ, এই প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণ করা তরুণদের সৃজনশীল ও বৈজ্ঞানিক মন। আমি এই তথ্যগুলো আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করে ভাবতে পারি যে, তরুণরা এ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিজ্ঞানে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। তরুণরা বিজ্ঞান বা অন্যান্য বিষয় পড়াশোনা করতে আগ্রহী।

আমার ছোটোবেলার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। দশ বছর বয়সে পঞ্চম গ্রেডে পড়াকালে শ্রী সিভাসুব্রামানিয়া আয়ার আমাকে যা শিখিয়েছিলেন তা এখনো মনে পড়ে। আমার এই শিক্ষক ক্লাসরুমে প্রবেশ করলে আমরা তাকে জ্ঞানের ভাণ্ডার বলে মনে করতাম। তিনি আমাদের স্কুলের একজন মহান শিক্ষক ছিলেন। আমরা সবাই তাঁর ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পছন্দ করতাম। একদিন তিনি পাখির উড়া সম্বন্ধে বলেছিলেন। তিনি ব্লাকবোর্ডে একটা পাখির ছবি এঁকে পাখনা, লেজ, মাথাসহ পাখির শারীরিক গঠন ব্যাখ্যা করেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন,

পাখি কেমনভাবে উড়ে থাকে। তিনি এটাও ব্যাখ্যা করে বলেন, কেমন করে উড়ার সময় পাখি দিক পরিবর্তন করে। তিনি এ বিষয়ে প্রায় পঁচিশ মিনিট লেকচার দিয়ে পাখিদের ওড়াউড়ি সম্বন্ধে বলেন। ক্লাস শেষ হলে, তিনি আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন, পাখি কেমন করে উড়ে তা বুঝতে পেরেছি কিনা। আমি বললাম, আমি বুঝতে পারলাম না। আমার উত্তর শুনে তিনি অন্য ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করলেন তারা বুঝতে পেরেছে কিনা। অনেক ছাত্রই বলল যে তারাও বুঝতে পারেনি। আমাদের কথা শুনে তিনি হতাশ হলেন না, কারণ তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক।

শ্রী আয়ার বললেন যে আমাদের সবাইকে তিনি রামেশ্বরমের সমুদ্রের তীরে নিয়ে যাবেন। ওই দিন সন্ধ্যার আগে আমাদের পুরো ক্লাসটাকে রামেশ্বরমের সমুদ্রের ধারে নিয়ে গেলেন। আমরা সমুদ্রের গর্জনের শব্দ শুনতে পেলাম। আমরা দেখতে পেলাম, সমুদ্রের ঢেউয়েরা গর্জন তুলে বালির পাহাড়ে আছড়ে পড়ছে। সুমিষ্ট সুরে কিচিরমিচির করে পাখিরা উড়ে যাচ্ছে। তিনি সমুদ্রের বেলাভূমিতে আমাদেরকে দশ থেকে বিশটি পাখির গঠন দেখালেন। আমরা পাখিদের মোহনীয় রূপ দেখে মুগ্ধ হলাম। তিনি আমাদেরকে দেখতে বললেন, পাখিগুলোর ওড়াউড়ি। আমরা নিকট থেকে দেখলাম, পাখিগুলো কীভাবে তাদের দিক পরিবর্তন করে উড়ে যায়। তারপর তিনি আমাদেরকে একটা প্রশ্ন করলেন, পাখির ইঞ্জিন কোথায় থাকে, আর কোথা থেকেই বা তারা উড়ার শক্তি পায়। তিনি আমাদেরকে ব্যাখ্যা করে বললেন যে, পাখি তার নিজের জীবন থেকেই শক্তি পায়। কী করতে হবে সে সম্পর্কেও সে নির্দেশ লাভ করে জীবন থেকে। তিনি মাত্র পনেরো মিনিটের মধ্যে সব কিছু ব্যাখ্যা করলেন। এই ব্যবহারিক উদাহরণ থেকে আমরা পুরো গতিবিজ্ঞানের ধারণা লাভ করলাম। আপনাদের শিক্ষকরাও এক একজন মহান শিক্ষক। একজন মহান শিক্ষক তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক দু’ভাবেই জ্ঞানদান করে থাকেন। প্রকৃতির কাছ থেকে জীবন্ত জ্ঞান লাভ করা যায়।

একটা পাখি কীভাবে উড়ে এটা জানা আমার জন্য বিশাল ব্যাপার ছিল। ওই দিন সন্ধ্যা থেকেই আমি ভাবতে শুরু করলাম যে, আমার ভবিষ্যৎ পড়ালেখা ওড়াউড়ির পদ্ধতি সম্পর্কে হবে। আমি এটা বলছি এই কারণে, আমার শিক্ষকের শিক্ষা ও পাখিদের উড়ার সেই ঘটনা যা আমি প্রত্যক্ষ করেছিলাম তা থেকেই আমি আমার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তারপর ক্লাসের পর একদিন সন্ধ্যায় আমি আমার শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘স্যার অনুগ্রহ করে আমাকে বলুন, কীভাবে আমি উড়া সম্বন্ধে আরো জ্ঞান অর্জন করতে পারব।’ তিনি ধৈর্য সহকারে আমাকে ব্যাখ্যা করে বলেন, আমাকে অষ্টম শ্রেণি শেষ করে হাই স্কুলে, হাই স্কুল শেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সময় তুমি উড্ডয়ন সম্বন্ধে জানতে পারবে। যদি আমি ভালো রেজাল্ট করে সমস্ত শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারি তবে আমি ফ্লাইট সায়েন্সের কথা চিন্তা করতে পারি। আমার শিক্ষকের দেওয়া এই উপদেশ এবং পাখির উড়ার শিক্ষা সত্যি সত্যি আমার জীবনে লক্ষ্য ও মিশন সফল করতে সাহায্য করে। আমি কলেজে ভর্তি হয়ে ফিজিকস নিয়েছিলাম। মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ আমি এয়ারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় নিলাম

এভাবেই আমার জীবন রকেট ইঞ্জিনিয়ার, এ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার, টেকনোলজিস্ট এ পরিবর্তিত হলো। একটা বিষয়ে আমার শিক্ষকের পাঠদান আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ছিল, যা আমার পেশা ও আমাকে উড়ার পথ খুলে দেয়।

আর একজন মহান শিক্ষক, যিনি এখন কিংবদন্তিতুল্য! তাঁর নাম প্রফেসর চিন্নাদুরাই। তিনি আমাকে ফিজিকস, বিশেষ করে নিউক্লিয়ার ফিজিকস শিখিয়েছিলেন। প্রফেসরের শিক্ষার বিশেষ পন্থার জন্য অনেক ছাত্র এ বিষয়টি পড়তে শুরু করে। পাঠদানের সময় তিনি বিভিন্ন লেখা থেকে রেফারেন্স ও বিভিন্ন বইয়ের রেফারেন্সও দিতেন। ছাত্রেরা সেগুলো থেকে উদ্ধৃতি দিত এবং বইগুলো পড়ত। তিনি লেকচার দেওয়ার সময় নিশ্চিত করে বলতেন যে, শুধুমাত্র নোটের উপর নির্ভর না করে আমাদের সবার পদার্থ বিদ্যার টেক্সটবুক পড়া উচিত। এটাই হচ্ছে শিক্ষালাভের বিশাল দিগন্ত। প্রফেসর চিন্নাদুরাই এখনো দিনদুগাল এ বসবাস করেন। ওই এলাকায় গেলে আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসি। তাঁর শিক্ষাদানের পদ্ধতি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ছাত্রের জীবনব্যাপী স্বাধীন শিক্ষার্থী হয়ে থাকার শিক্ষা দিতেন। এটা ছিল একজন ব্যক্তি তথা দেশের অবিরাম প্রবৃদ্ধির জন্য দরকারি। তিনি ছাত্রদেরকে সৃজনশীল শিক্ষালাভের ব্যবস্থা করতেন। জ্ঞানলাভের জন্য আজীবন অনুসন্ধানের বিষয়টি উপভোগ্য হিসাবে বিবেচ্য। এমনকি এখনো তাঁর সঙ্গে মিলিত হলে তিনি আমাকে জ্ঞানদান করেন।

এই উদাহরণগুলো প্রদর্শন করে শিক্ষকরা ছাত্রদেরকে প্রভাবিত করতে পারেন শুধুমাত্র শিক্ষাদান করেই নয়, মানবিক মূল্যবোধের বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানদান করেও। বিশেষভাবে নিঃস্বার্থ জ্ঞানদানের মাধ্যমে। আমাকে জ্ঞান ও মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমি আমার কলেজের প্রতি কৃতজ্ঞ।

আপনারা কি বিজ্ঞানের একজন মানুষ সম্বন্ধে জানেন, যিনি তাঁর সারাটা জীবন উদ্ভাবন, সৃজন ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নিবেদিত ছিলেন? তাঁর সর্বোত্তম সাফল্য ছিল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল চন্দ্রশেখর লিমিট’। চন্দ্রশেখর সুব্রাহ্মনিয়ানের বিখ্যাত আবিষ্কার ছিল ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানে চন্দ্রশেখর লিমিট’। লিমিট বর্ণনা করে কীভাবে একটি সাদা বামন তারকার সর্বাধিক পিণ্ড (১.৪৪ সোলার পিণ্ডের চেয়ে বৃহত্তর) বা সমতুল্যভাবে, একটি তারকার সর্বনিম্ন পিন্ড স্বাভাবিকভাবে একটি নিউরোন তারকায় বা কালগহ্বরে একটি সুপার নোভায় পরিণত হয়। চন্দ্রশেখর লিমিট দ্বারা স্থিরীকৃত হয় নির্দিষ্ট পিণ্ড কত দীর্ঘ সময় একটি তারকায় কিরণ দেয়। ১৯৮৩ সনে চন্দ্রশেখর সুব্রাহ্মনিয়ান তাঁর এই আবিষ্কারের ফলে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

একজন বিখ্যাত নারী বিজ্ঞানী ছিলেন যিনি রেডিয়াম আবিষ্কারের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি একবার নয়, দুই দুইবার নোবল প্রাইজ লাভ করেন—একবার পদার্থ বিদ্যায়, আর অন্যবার রসায়ন শাস্ত্রে। সেই নারী কে? মাদাম কুরি। তিনি রেডিয়াম আবিষ্কার করেন এবং মানুষের উপর রেডিয়েশনের প্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেন।

এখানে যে সকল ছাত্ররা সমবেত হয়েছে তাদের কাছে এখন আমি একটা সুন্দর বাড়ির পরিবেশের গুরুত্ব সম্বন্ধে আলোচনা করব। একটা সুন্দর বাড়ি ভারতে ২০০ মিলিয়ন বাড়ি আছে—আমি চারদিক থেকে এ বিষয়ের উপর আলোকপাত করব। প্রথমটি আসে আধ্যাত্মিক বাসস্থান থেকে, দ্বিতীয়টা আসে মায়ের সুখ থেকে, তৃতীয়টা আসে বাসস্থানের স্বচ্ছতা থেকে, আর চতুর্থটা আসে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ পরিবেশ থেকে। একটা সুন্দর বাসস্থানের জন্য এই চারটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এসো আমরা স্টাডি করে দেখি, কীভাবে আমরা ওইগুলো অর্জন করতে পারি।

আধ্যাত্মিক বাসস্থান

বাবা, মা, একটা পুত্র আর একটা কন্যা, অথবা দুটো পুত্ৰ বা দুটো কন্যা নিয়ে গড়া ছোটো একটা পরিবারের কথা আমার কল্পনা করতে পারি। এই বাড়িতে পিতামাতা উভয়েই উপার্জন করেন। ছোট্ট এই বাড়িতে আমার দৃষ্টিগোচর হয় কমপক্ষে ১০টা বিখ্যাত বইয়ের একটা ছোট্ট লাইব্রেরি। ব্রেকফাস্ট ও ডিনারের প্রাক্কালে তাঁদের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস পিতামাতারাই গড়ে তোলেন। পুরো পরিবার কমপক্ষে একবার খাবারের সময় একত্রে মিলিত হয়ে পারস্পরিক যোগাযোগ ও মুক্ত মনে আলোচনা করে থাকে। যখন তারা ডাইনিং টেবিলে একত্রিত হয়, তখন পিতা বা মাতা হোম লাইব্রেরি থেকে একটা বই এনে তা থেকে নীতিকথা ও নৈতিক মূল্যবোধের গল্প পড়তে পারেন। এই আলোচনায় ছেলে-মেয়েরাও অংশ গ্রহণ করে মতামত দিতে পারে। এ ধরনের পাঠাভ্যাসের ফলে, শিশু বই পড়তে আগ্রহী হয় এবং সেই গল্প থেকে অনেক অনেক তথ্য পায়। তাদের প্রত্যেক দিনের জীবনে এই পাঠাভ্যাস থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। কতিপয় ছাত্র স্কুলে গিয়ে অন্য ছাত্রদের সঙ্গে তাদের পাঠাভ্যাস থেকে অর্জিত জ্ঞান শেয়ার করে সমাজের উপকার করতে পারে। একদিন তাদের পাঠাভ্যাসই তরুণ মনকে উজ্জীবিত করতে পারে। তাছাড়া আমার দৃষ্টিগোচর হয় একটি প্রার্থনা কক্ষের প্রতি যেখানে সকালে বা রাতে ছেলে-মেয়েসহ পুরো পরিবার মিলিত হয়ে সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা জানিয়ে তাঁর আশীর্বাদ লাভ করতে পারে। এই পারিবারিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে জ্ঞান ও মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। এই সব ছেলে-মেয়েরা ভবিষ্যতে তাদের দায়িত্ব উৎকর্ষতার উদ্দীপনায়, সমর্পণে ও আত্মশক্তিতে বলিয়ান হয়ে সমাধা করতে পারে।

মায়ের মুখে হাসির মিশন

আমি আপনাদেরকে একটা মিশনের কথা বলছি যা একটা সুখী গৃহকোণ গড়ে তোলে। বন্ধুরা, আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করো আমি যা বলছি সেই পরামর্শ অনুসরণ করবে। আমার পরামর্শ:

আজকের পর থেকে আমি আমার মাকে সুখী রাখব,
যদি আমার মা সুখী থাকেন, আমার গৃহে সুখ থাকবে
যদি আমার গৃহে সুখ থাকে, সমাজ সুখে থাকবে,
যদি সমাজ সুখে থাকে, রাষ্ট্র সুখে থাকবে,
যদি রাষ্ট্র সুখে থাকে, জাতি সুখে থাকবে।

তোমাদের মধ্যে কতজন মায়ের মুখে হাসির মিশন সফল করে মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চাও?

একটি স্বচ্ছ গৃহকোণ

যেমন আমি বলেছিলাম, আমরা ২০০ মিলিয়ন পরিবারের এক সমাজে বসবাস করি। একটা স্বচ্ছ গৃহকোণ থেকে সৃষ্টি হয় একটা স্বচ্ছ সমাজ। একটা দেশের জন্য দুর্নীতি মুক্ত একটা স্বচ্ছ সমাজ গঠন সবচেয়ে জরুরি। প্রিয় তরুণ সদস্যরা, দেশের এক একটা পরিবারের তরুণ পুত্র বা কন্যাদের জন্য আমার একটা মিশন আছে। আপনাদের প্রত্যেকেই জানেন যে, কতিপয় বাড়ি থেকে দুর্নীতির জন্ম হয়। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, শতকরা ৩০ শতাংশ ভারতীয় বাড়ি দুর্নীতিগ্রস্ত। আনুমানিক ৬০ মিলিয়ন বাড়ি স্বচ্ছ নাও হতে পারে। এ অবস্থায় ছেলে-মেয়েরা উপলব্ধি করে তাদের পিতার স্বচ্ছ হওয়া উচিত। যদি তাদের পিতা স্বচ্ছ না হয়, তবে ছেলে-মেয়েরা তাদের স্নেহ ভালোবাসা তাকে জ্ঞাপন করতে পারে না। তাদের পিতাকে দুর্নীতি না করতে বলার সাহস দেখানো উচিত। আমি স্বজ্ঞানে বলি, আইন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের এই আন্দোলন বিপুলভাবে কার্যকর হবে। আপনাদের মাঝে কতজন তরুণ বন্ধু নিজেদেরকে এই মিশনে সম্পৃক্ত হয়ে গৃহকোণকে স্বচ্ছ করে গড়ে তুলতে পারবেন?

সবুজ বাড়ি মিশন

আজকের দিনে পৃথিবীতে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। গাছ কেটে বন উজাড়, শিল্পায়ন ও যানবাহনের কারণে বায়ুমণ্ডলে কার্বনডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায়, বায়ুমণ্ডলের ওজন স্তরে ছিদ্র হওয়ায় পৃথিবী নামের এই গ্রহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যা, খরার প্রধান কারণ এটাই। যদি দেশের তরুণরা সিদ্ধান্ত নেয়, তারা এই অবস্থাকে পরিবর্তন করতে বদ্ধপরিকর হবে, প্রত্যেক ভারতীয়ের শপথ নিতে হবে যে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক প্রত্যেকেই কমপক্ষে একটা করে গাছ লাগাবে এবং তারা গাছের পরিচর্যা করবে। একটা পূর্ণাঙ্গ গাছ ২০ কেজি কার্বনডাইঅক্সাইডকে গ্রহণ করে আর ১৪ কেজি অক্সিজেন ত্যাগ করে। যদি আমরা সারাজীবনে দশটা গাছের চারা লাগিয়ে পরিচর্যা করি তবে আমরা দশ বিলিয়ন গাছ পাব। এই দশ বিলিয়ন বৃক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যাকে মোকাবিলা করতে অবশ্যই সাহায্য করবে। তাছাড়াও আমি পরামর্শ দিতে পারি যে আপনাদের প্রত্যেকে একটা করে গাছ লাগালে আপনার ও প্রতিবেশীর বাড়ি পরিচ্ছন্ন থাকবে। সবুজ বাড়ির অর্থ শুধুমাত্র গাছের চারা লাগানো নয়, বাড়িঘর ও পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখা। আপনাদের কোনো আবর্জনা রাস্তার উপর স্তূপ করে রাখা উচিত নয়। আপনাদের শপথ নেওয়া উচিত যে আপনারা শুধুমাত্র বাড়িকেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন না, রাস্তাঘাটকেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার নিশ্চয়তা দেবেন।

আমাদের চারপাশের মহান ব্যক্তিদের দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই। সেই সব মহান ব্যক্তিরা শিল্পকারখানায়, সরকারি অফিস আদালতে, সেনাবাহিনীতে, শিল্পকলা ও সাহিত্যে কাজ করেছেন। আপনারা সেই সব সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের দ্বারা অনুপ্রাণিত হবেন। আমি আমাদেরকে প্রশ্ন করতে আগ্রহী, আপনারা তাদেরকে কী জন্য স্মরণ করতে পছন্দ করবেন? আপনার জীবনকে বিকশিত করতে হবে আপনারদেরকেই।

(২০১৫ এর ১২ জুন তারিখে বাল্ডউইন ইনস্টিটিউসন্স, বাঙ্গালোরের ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ ও মতবিনিময় থেকে।)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *