১১. শ্রেষ্ঠত্বের জন্য সংগ্রাম

১১. শ্রেষ্ঠত্বের জন্য সংগ্রাম

শ্রেষ্ঠত্ব দুর্ঘটনাক্রমে লাভ করা যায় না।
এটা একটা প্রক্রিয়া।

.

সৃজনশীলতা আসে সুন্দর মন থেকে। সমন্বয়, পরিবর্তন বা বিদ্যমান ধারণাকে পুনব্যবহারের দ্বারা সৃজনশীল মনের সামর্থ্যের সাহায্যে নতুন কিছু একটা আবিষ্কৃত হয়। একজন সৃজনশীল মানুষ পরিবর্তনকে মেনে নেয় এবং কল্পনা ও সম্ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গির নমীয়তা, ভালো কিছুকে উপভোগ করার অভ্যাসকে গ্রহণ করে। সৃজনশীলতার গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, প্রত্যেকের মধ্যে একই জিনিস দর্শন করা। কিন্তু কোনো কিছুর চিন্তা ভিন্নতর হতে পারে। উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা চূড়ান্তভাবে চালিত হয় শ্রেষ্ঠত্বের সংস্কৃতি থেকে।

ভাবনা ও কাজের শ্রেষ্ঠত্ব হচ্ছে যে-কোনো মিশনের ভিত্তি। শ্রেষ্ঠত্ব কী? বন্ধুগণ, আপনারা তরুণ সমাজের কর্ণধার। আপনারা শ্রেষ্ঠত্বের সংস্কৃতি ধারণ করবেন। শ্রেষ্ঠত্ব দুর্ঘটনা নয়। এটা একটি প্রক্রিয়া, যা একজন ব্যক্তি বা সংস্থা বা দেশ অবিরতভাবে কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমে লাভ করে।

আমি ২০১৪ সালে বিজ্ঞানের ক্রমোন্নতির উপর একটি আর্টিকেল লিখেছিলাম। বিজ্ঞান স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা ও শক্তি উন্নয়নে সরাসরি অনেক অনেক কাজ করে। আমি এখানে তিনটি প্রধান বিষয় সম্বন্ধে বলতে চাই।

প্রথম বিষয়টা হচ্ছে, হিউম্যান ইব্রাওনিক স্টেম সেল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডায়াবেটিস নিরাময়ের চেষ্টা চলছে। হয়তো আপনারা জানেন, অগ্ন্যাশয়ে বেটা সেল ইনস্যুলিন তৈরি করে। এই সেলগুলোর ক্ষতির কারণে টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয় কিন্তু চেষ্টার ফলে ইব্রাওনিক স্টেম সেল পরিবর্তিত হয় বেটা সেলে। এটি প্রমাণ করল “ফ্রাস্ট্রাটিংলি’ স্লো করতে। ২০১৪ সালে দুটো স্টাডি প্রদর্শন করল যে, প্রচুর বেটা সেল উৎপাদন করে দু’মাসের কম সময়ে শরীরে পুন: স্থাপিত হয় বেটা সেল। অবশ্যই ব্যবহারের আগে বেটা সেল শরীরে মারা যায়, যা সনাক্ত করা হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা কিন্তু আস্থাশীল যে, শীঘ্রই ডায়াবেটিসের স্থায়ী নিরাময় করা সম্ভব হবে।

আমি এখন দ্বিতীয় একটা ঘটনা আলোচনা করব যা মহাশূন্য বিজ্ঞান ও রকেট সংক্রান্ত প্রযুক্তিকে একই বিন্দুতে মিলিত করে। ২০১৪ মানবজাতির ইতিহাসে স্মরণীয় বছর। এ বছরেই মানুষের তৈরি একটি বস্তু একটি ধূমকেতুতে অবতরণ করেছিল। রোসেটা স্পেসক্রাফ্ট পরিশেষে ৬.৪ বিলিয়ন কিলোমিটার পথ পরিক্রমণ করে ৬ বছর পর ৬৭ চুরিউমোভ-জেনারসিমেনকো ধূমকেতুতে পৌঁছায়। এটাকে ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) মহাশূন্যে পাঠিয়েছিল। রোসেট্টা স্পেসক্রাফ্ট থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ বৈজ্ঞানিক তথ্য পাঠাবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল। ধূমকেতুর কক্ষপথের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে রোসেটা প্রচুর পরিমাণে তথ্য পাঠাতে শুরু করে।

তৃতীয় ঘটনাটি হচ্ছে কম্পিউটার সায়েন্স ও নিউরোলজি সংক্রান্ত। ২০১৪ এ আইবিএম ও অন্যান্য কোম্পানি এর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়াররা আবিষ্কার করেন কীভাবে মানুষের ব্রেন কাজ করে। তারা নিউরোমোরফিক চিপস ডিজাইনের পর তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করেন মানুষের ব্রেনের অনুরূপভাবে। এটার অর্থ যে তারা কাজ করে আজকের কম্পিউটারের ন্যায়। লজিকাল অপারেশন চালিয়ে ‘সমন্বয় সাধন করে বিপুল পরিমাণের তথ্য সংরক্ষণের’ জন্য লড়াই করে। আমাদের ব্রেন কিন্তু ওইটা করে না। আমাদের ব্রেন বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে চূড়ান্ত কাজ সম্পন্ন করে থাকে। এটা সম্ভব হয় ব্যক্তিগত নিউরোনগুলো যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের পাশের সমান্তরাল তথ্য প্রক্রিয়াকরণের সাহায্যে।

একটি নতুন চিপ একটি ব্রেন-ইন্সপায়ার্ড কম্পিউটার এর ক্ষমতা প্রাপ্ত হয় এক মিলিয়ন নিউরোন ও ২৫৬ মিলিয়ন সাইনাপসেস—–ট্রু নর্থ-মিমিকস দি ব্রেন ৫.৪ বিলিয়ন ট্রানজিস্টর ও ২৫৬ মিলিয়ন ‘সাইনাপসেস’ দ্বারা। ব্রেনে এই ১০০ বিলিয়ন নিউরন সেল এবং ১০০ ট্রিলিয়ন সাইনাপসেস আছে। তা শুধুমাত্র ৭০ MW ভোগ করে রি-টাইম অপারেশনের সময়।

বিজ্ঞান সমৃদ্ধ হয় যখন এটাকে এক বিন্দুর অভিমুখী করে পৃথিবীর জরুরি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সমাধান করে থাকে। এটা দ্বারা ইঞ্জিনিয়াররা একুশ শতকের প্রয়োজন মেটায়।

(২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ এ ত্রিভ্রান্দ্রমের কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভাষণ থেকে।)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *