১৪. ভবিষ্যৎকে পাল্টিয়ে দেয়া

১৫. মেধা ও সহমর্মিতা

তরুণদের কল্পনা, উচ্চাশা ও সামর্থ্য আছে।

.

তোমরা সবাই জানো মঙ্গল গ্রহের অর্বিটার মিশন ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ এ মঙ্গলের কক্ষপথে সফলতার সঙ্গে প্রবিষ্ট হয়। ISRO-তে আমার বন্ধুরা আমাকে বলেছিল যে পাঁচটি সায়েন্টিফিক পেলোডের সবগুলোর সুইজ দেওয়ার পর স্পেসক্রাফটের অবস্থা স্বাভাবিক হয়। দুটো পেলোডের ভোল্টেজ ছিল উচ্চমাত্রায়। মঙ্গলের কালার ক্যামেরা মঙ্গল থেকে ছবি পাঠাতে থাকে। ক্যামেরার খুব ভালো রেজুলেশন ছিল। প্রথম দিকের উচ্চমাত্রার রেজুলেশন মঙ্গলের ছবি সম্পূর্ণ ডিক্সে পাঠিয়েছিল। ISRO’র ক্যামেরা প্রায় ৫ ডিগ্রি বাই ৫ ডিগ্রির একটি এলাকার ছবি তুলেছিল। তোমরা ISRO’র ফেসবুক ও টুইটারে এই সব ছবিগুলো দেখতে পাবে।

আমি ISRO’র বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তারা কি মঙ্গলের অরবিটার মিশন সম্বন্ধে কোনো কিছু বলতে চায়? তারা বলল একটি নির্দিষ্ট ঘটনার কথা। কমেট সি/২০১৩ এর যাত্রাকালে স্পেসক্রাফ্ট ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। এটা ঘটার ফলে অরবিটকে টিউনিং করে স্পেসক্রাফ্টকে ধূমকেতুর যাত্রাপথকে মঙ্গলের পেছনে নিয়ে গিয়ে স্পেসক্রাফ্ট ও সাবসিস্টেমকে রক্ষা করা হয়েছিল। সমস্ত সাবসিস্টেম স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল। এখানে শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে একাজে বৈজ্ঞানিক মন মানসিকতার প্রয়োজন। উদ্ভাবনী শক্তি ও তাদের মিশনের অজানা অসুবিধা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হওয়া। দেশের জন্য তরুণদের উদ্যোগী হতে উপদেশ দেওয়া।

যখন আমার বয়স তোমাদের মতো ছিল, তখন আমি আমার জীবনে কয়েকটি বিষয়ের উপস্থিতি অনুভব করেছিলাম। হাইস্কুলে পড়ার আগে আমি কি আমার গ্রামের বাইরে গিয়েছিলাম? আমি ছোট্ট শহরের হাই স্কুলে পৌঁছে দেখতে পেলাম, আমার সহপাঠীদের গায়ে ভালো ভালো পোশাক। তারা ভালো ইংরেজি বলে। আমি নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কীভাবে তাদের সঙ্গে মিশব? আমি যখন নবম শ্রেণিতে উঠলাম, তখন আর একটি বিষয় আমার সামনে এসে দাঁড়াল। আমি কি ইঞ্জিনিয়ার বা চিকিৎসক হওয়ার জন্য উচ্চ শিক্ষালাভের উদ্দেশে ভালো নম্বর পাব? একজন ভালো শিক্ষককের সান্নিধ্য পেয়ে আমি দশম শ্রেণিতে উঠার পর আমার সেই দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল। সেই শিক্ষক আমার জীবনের দিশা দেখালেন। আমার শিক্ষকের নাম শিবাসুব্রাহ্মনিয়া আয়ার। তোমাদের স্কুলে অবশ্যই মহান মহান শিক্ষক আছেন, তাঁরা তোমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের দিশা দেখাতে সাহায্য করবেন। তোমাদের যে সমস্ত শিক্ষক আছেন তাঁরা তোমাদের ইচ্ছাকে বুঝতে পেরে তোমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবেন। তাঁরা তোমাদেরকে বইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করবেন এবং তোমাদের মনকে মহান করে তাঁরা তোমাদের গড়ে তুলবেন।

একটি সুখী ও শান্তিপূর্ণ সমাজে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিককে দুটো চমৎকার আদর্শের উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগ করে দিতে হবে। একটি হচ্ছে বুদ্ধি, অপরটি হচ্ছে উদ্যম। এটা অর্জন করতে হয় ভালো পিতামাতা, উত্তম শিক্ষক, উত্তম বইপুস্তক, মহান মহান মানুষের সাহচর্যে। যদি সঠিক বয়সে এদের সান্নিধ্য পাওয়া না যায় তবে মানুষ একজন শয়তানে পরিণত হতে পারে। বিশেষভাবে বুদ্ধি থাকলেও উদ্যম ছাড়া ভালো কিছু করা সম্ভব হয় না। একটি জাতি হিসাবে তরুণদের কাছে আমাদের এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন যে আমাদের তরুণদের এইসব গুণাবলি অর্জন করা অতি জরুরি। একজন উত্তম মানুষ হওয়ার ভাবনা প্রসঙ্গে ইমাম গাজালির একটি গল্প আমার মনে পড়ছে। আমার বয়স যখন পনেরো, তখন আমার বাবা আমাকে এই গল্পটি বলেছিলেন

ইমাম গাজালি পনেরো শতাব্দীতে একজন সাধক শিক্ষক ছিলেন। আমার বাবা তার গল্প বলতেন। ফেরেস্তার ছদ্মবেশে একজন শয়তান ইমাম গাজালিকে পরীক্ষা করতে আসে। একদিন ইমাম গাজালি মাগরিবের নামাজের জন্য জায়নামাজ বিছাচ্ছিলেন। সে সময় শয়তান তার সামনে হাজির হয়ে বলল, ‘সম্মানীয় ইমাম সাহেব, আমি এই মাত্র বেহেস্ত থেকে আসছি। সেখানে পৃথিবীর মহান মানুষদের সম্বন্ধে আলোচনা হয়েছে। বিচারে পৃথিবীতে আপনি সর্বোত্তম মানুষ হিসাবে বিবেচিত হয়েছেন। আপনার মহত্ত্ব স্বীকৃত হওয়ায় ভবিষ্যতে নামাজ আদায়ের কষ্ট থেকে আপনাকে রেহাই দেওয়া হয়েছে।’

নামাজের সময় নিকটবর্তী হওয়ায় ইমাম গাজালির মনটা অস্থির হয়ে উঠল। তাই তিনি শয়তানের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘শয়তান সাহেব, প্রথম কথা আমার নামাজ আদায় করতে মোটেই কষ্ট হয় না। দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা থেকে পয়গম্বর মোহাম্মদ(সাঃ) কে মাফ করা হয়নি, তাহলে আমার মতো একজন গরিব ইমামকে নামাজ আদায় কেন মওকুফ করা হবে? এ কথা বলে তিনি নামাজ পড়তে গেলেন। তিনি নামাজ শেষ করলে দেখতে পেলেন, তখনো শয়তান তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ইমাম সাহেব তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কেন সে এখনো অপেক্ষা করছে। শয়তান বলল, ‘ওহ, ইমাম, আপনি শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছেন প্রিয় পয়গম্বর আদমের চেয়েও।’ তারপর শয়তান তাকে নানা রকম তোষামুদে কথা বলতে থাকল। ইমাম সাহেব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, ‘ওহ সর্বশক্তিমান, আমাকে সাহায্য করুন, শয়তানের তোষামোদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করতে।’ শয়তান হতাশ হয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করল। শয়তানের মিশন ব্যর্থ হলো। একজন মহান মানুষ সফল হলেন।

বন্ধুগণ, এই গল্প থেকে তোমরা কী বার্তা পেলে? আমাদের শুধুমাত্র বুদ্ধি ও উদ্যোগকে উন্নত করলেই হবে না, অবশ্যই প্রহরী হতে হবে প্রলোভনের বিরুদ্ধে যখন তোমরা সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেদেরকে নিবেদন করবে।

আমি পরামর্শ দেই যে, শিক্ষকরা তরুণদের জীবনের তিনটি চমৎকার গুণাবলি নিশ্চিত করবেন।

১. বর্তমান অর্থাৎ আজকের দিনের উপলব্ধির প্রতি গুরুত্ব আরোপ

২. আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলবেন যাতে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্বাস করে ‘আমি এটা করতে পারি।’

৩. ন্যায়পরায়ণতা গড়ে তুলবেন হৃদয়ে ও মনে।

মজবুত মূল্যবোধের মাধ্যমে ভারত পরিবর্তিত হবে একটি উন্নত দেশে, এইটাই ভারতের আজকের মিশন। এটা একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ। এটা অর্জন করা সম্ভব আমাদের তরুণদের শক্তির মাধ্যমে। তরুণদের আছে কল্পনা, উচ্চাশা ও সামর্থ্য। তরুণদের এই সম্পদগুলোই হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ শৈলী যার মাধ্যমে তারা ভারতকে উন্নত করে একটি উন্নত দেশে পরিবর্তিত করতে পারবে।

যদি তোমাদের জীবনে একটি লক্ষ্য থাকে, তবে অবিরতভাবে জ্ঞান আহরণ করতে পারবে। যদি কঠিন পরিশ্রম করার প্রতি আস্থা, সমস্যাকে পরাজিত করার আত্মবিশ্বাস ও ন্যায়পরায়ণতা থাকে, তবে তোমরা অবশ্যই সফল হবে। ফলশ্রুতিতে তোমাদের মিশন সফল হবেই। তোমাদের কাছে এটা কোনো সমস্যাই নয়।

তোমরা যারা তোমাদের জীবনের মিশন সাফল্যের সঙ্গে সমাধা করতে পারবে তাদের জন্য রইল আমার শুভেচ্ছা।

(২৯ নভেম্বর ২০১৪ এ আগুল, ওড়িষ্যায় ছাত্রছাত্রীদের কাছে দেওয়া ভাষণ থেকে।)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *