এভাবে চললে অকৃতজ্ঞতা আপনাকে চিন্তায় ফেলবে না
সম্প্রতি আমার সঙ্গে টেক্সাসের একজন ব্যবসায়ীর দেখা হয়, দ্রলোক সব সময় মেজাজ খারাপ করে থাকতেন। আমাকে আগেই কেউ কেউ বলেছিল তার সঙ্গে দেখা হলেই সে তার মেজাজ খারাপের কথাটা শোনাবে। তিনি করলেনও তাই। যে ঘটনার জন্য তার রাগ সেটা ঘটে প্রায় এগারো মাস আগে–অথচ তিনি এখনও সেটা ভুলতে পারেন নি। অন্য কোন বিষয়ে তিনি কথাও বলতেন না। তিনি তার চৌত্রিশজন কর্মচারিকে মোট দশ হাজার ডলার বড়দিনের বোনাস হিসেবে দিয়েছিলেন প্রত্যেককে প্রায় তিনশ ডলার করে–এজন্য কিন্তু কেউ তাকে ধন্যবাদও দেয়নি। দ্রলোক অভিযোগ করেছিলেন, আমি দুঃখিত যে ওদের এত টাকা দিয়েছিলাম।
কনফুসিয়াস বলেছিলেন কোন ক্রুদ্ধ লোক সবসময় বিষময়, ওই লোকটি এতই বিষময় ছিলেন যে সত্যিই তার প্রতি আমার করুণা হয়। ভদ্রলোকের বয়স ছিল প্রায় ষাট । বীমা প্রতিষ্ঠানের লোকরা বলেন। আমাদের বর্তমান যা বয়স আর আশি বছরের মধ্যে যেটা বাকি থাকে তার দুই ততীয়াংশ আমরা সাধারণতঃ বাচি। এই লোকটি ভাগ্যবান হলে হয়তো আর চোদ্দ পনেরো বছর বাঁচবেন । অথচ তিনি তাঁর বাকি জীবনে একটা পুরো বছর শুধু তিক্ততায় আর মেজাজ খারাপের মধ্য দিয়ে নষ্ট করেছেন অতীতের একটা ঘটে যাওয়া ব্যাপার নিয়ে। আমি তাঁকে করুণা করি।
এই ব্যাপারে ওই রকম ঘ্যানর ঘ্যানর না করে তিনি অবশ্যই আত্ম সমালোচনা করে জানার চেষ্টা করতে পারতেন, কেন তিনি ধন্যবাদ পান নি। হয়তো কর্মচারীদের তিনি কম মাইনে দিতেন বা বেশি খাটাতেন। হয়তো তারা ভেবেছিলো বোনাসটা তারা বড়দিনের উপহার হিসেবে পায় নি এটা না পাওনা। হয়তো তিনি সবসময় সমালোচনা করেন বা তার কাছে সবাই যেতে ভয় পায়। তাই কেউ তাকে সনাবাদ জানাতে চায়নি। এটাও হতে পারে তিনি বোনাস দিয়েছিলেন বেশির ভাগ টাকাই কর দিয়ে চলে যায় বলে।
অন্যদিকে এমনও হতে পারে কর্মচারিরাই ছিল স্বার্থপর, নীচমনা, অভদ্র। হয়তো এটাই–হয়তো বা অন্য কিছু আমার তা জানার সুযোগও নেই। তবে আমি ডক্টর স্যামুয়েল জনসনের কথাটা জানিঃ কৃতজ্ঞতা বোধ অনেক কষ্টেই জাগ্রত হয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে সেটা আশা করা বাতুলতা।
আমি যা বলতে চাই তা হল এই : এই লোকটি সাধারণ মানুষের মত দুঃখজনক একটা ভুল করেছিলেন কৃতজ্ঞতা আশা করে। মানব চরিত্র সম্বন্ধে তার কোন ধারণাই ছিলো না।
আপনি যদি কোন মানুষের জীবন বাঁচান তাহলে কি কৃতজ্ঞতা আশা করবেন? হয়তো তাই করবেন–তবে স্যামুয়েল লিবোউইস, যিনি বিচারক পদ পাওয়ার আগে বিখ্যাত ফৌজদারী উঁকিল ছিলেন, অন্ততঃ আটাত্তর জনকে বৈদ্যুতিক চেয়ারে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচান। এই সব মানুষদের মধ্যে কতজন তাকে বড়দিনে মনে রেখেছে ভাবছেন? কতজন বলুন তো?…একজনও না? ঠিকই বলেছেন।
যীশুখ্রীষ্ট একদিন বিকেলে দশজন কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য করেছিলেন। তাদের মধ্যে কজন তাকে ধন্যবাদ দেয়? মাত্র একজন । এটা বাইবেলে পাবেন । খ্রীষ্ট যখন তাঁর শিষ্যদের প্রশ্ন করলেন, আর নজন কোথায়? তারা সকলেই পালিয়ে গিয়েছিল। তারা ধন্যবাদ না দিয়েই পালায়। আপনাদের একটা প্রশ্ন করি আসুন : আপনি বা আমি বা ওই মালিক–বেশি ধন্যবাদ আশা করে স্বয়ং যীশুই যখন তা পাননি, আপনি বা আমি যীশুর চাইতে কম কাজ করেও ধন্যবাদ আশা করব কেন?
আর এটা আবার যখন টাকা পয়সার ব্যাপারে হয়, তখন ব্যাপারটা খুবই খারাপ হয়ে দাঁড়ায়। চার্লস্ শোয়াব আমাকে বলেছিলেন যে তিনি একবার ব্যাঙ্কের টাকা নিয়ে ফটুকা খেলে তা নষ্ট করার অপরাধ থেকে একজন ক্যাশিয়ারকে বাঁচান। এই লোকটিকে চার্লস শোয়ব টাকা দিয়ে জেলে যাওয়া থেকে বাঁচান। ক্যাশিয়ার কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে?–হ্যাঁ, তবে অল্প সময়ের জন্য। পরে সে শোয়াবের নানা রকম নিন্দা করতে থাকে–অথচ তাকেই শোয়াব জেল থেকে বাঁচান।
আপনি যদি আপনার কোন আত্মীয়কে দশলক্ষ ডলার দেন তাহলে কি আশা করবেন তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন? আন্ডু, কার্নেগী ঠিক তাই করেছিলেন। অ্যান্ড্র, কার্নেগী যদি সমাধি থেকে কদিন পরে উঠে আসতেন তাহলে দেখতেন আর ব্যথিত হতেন যে সেই আত্মীয় তাঁকে গালাগাল দিচ্ছে। কেন? কারণ বৃদ্ধ অ্যান্ড্র, প্রায় বিশ কোটি ডলার সাধারণ মানুষের জন্য দান করে যান–অথচ আত্মীয়টির ভাগে মাত্র দশ লক্ষ ডলার!
দুনিয়ায় এই রকমই ঘটে। মনুষ্য চরিত্র এই রকমই…আপনার সারা জীবনেও তা বদলাবার আশা নেই। তাহলে এটাই গ্রহণ করুন না কেন? এ ব্যাপারে মার্কাস অরেলিয়াসের মত বাস্তববাদী হওয়াই তো ভালো । রোমান সাম্রাজ্যের শাসকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে জ্ঞানী। তিনি তাঁর ডায়েরীতে একদিন লেখেন : আমি আজ একদল লোককে দেখতে যাচ্ছি যারা খালি কথা বলে–এমন সব লোক যারা স্বার্থপর, অহঙ্কারী, অকৃতজ্ঞ । তবে আমি এতে আশ্চর্য হব না, কারণ এ রকম মানুষ ছাড়া পথিবীতে ভাবতেই পারি না।
কথাটার বেশ অর্থ রয়েছে, তাই না? আপনি বা আমি যদি অকৃতজ্ঞতা নিয়ে ক্রমাগত মাথা ঘামাই দোষটা কার? এটাই মানব চরিত্র–না মানব চরিত্র সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা? আসুন আমরা আর কতজ্ঞতা আশা করব না। তাই মাঝে মাঝে হঠাৎ যদি তা পাই তাহলে আনন্দে আত্মহারাই হব। আবার কেউ তা না দিলে দুঃখিত হব না।
এই পরিচ্ছেদে যা বলতে চাইছি তার প্রথম কথা এই : কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ভুলে যাওয়াই মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক। তাই যদি আমরা কৃতজ্ঞতা আশা করি তার বদলে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আমি নিউ ইয়র্কের এক মহিলাকে চিনি যিনি সব সময় একাকী বলে অনুযোগ করেন। তাঁর একজন আত্মীয়ও তাঁর কাছে আসতে চায় না–এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাঁর কাছে কখনও যদি যান তিনি আপনাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে শোনাবেন–তিনি তার ভাইঝিদের কেমন ভাবে ছোটবেলায় হাম, মাম্মস, হুপিং কাশি ইত্যাদিতে সেবা করেছেন, কীভাবে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন, একজনকে স্কুলে পাঠিয়েছেন, একজনের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয় দিয়েছেন।
ভাইঝিরা তাঁকে কি দেখতে আসে? ওহ হ্যাঁ, মাঝে মাঝে আসে–তবে নেহাতই কর্তব্যের খাতিরে । তবে এসবে তারা কাছে আসতে ভয় পায়। তারা জানে এলে ঘন্টার পর ঘণ্টা তাদের অনুযোগ শুনে যেতে হবে। সমস্তক্ষণ ধরে ঘ্যানর ঘ্যানর এবং গালাগাল শুনতে হবে। যখন ভাইঝিদের বকাবকি শেষ হয় তখন তার হৃদরোগ দেখা দেয়।
হৃদরোগটা কি আসল? হ্যাঁ, সেটা আসল। ডাক্তারদের মতে তার বুকে প্রচণ্ড ধুকধুকুনি আছে। ডাক্তাররা এটাও বলেছেন তাদের করার কিছু নেই কারণ এর সবটাই আবেগের কারণে।
এই মহিলাটি আসলে যা চান তা হলো একটু ভালোবাসা আর স্নেহ। অথচ তিনি একে বলেন কৃতজ্ঞতা। কিন্তু তিনি কোন কালেই কৃতজ্ঞতা পাবেন না কারণ তিনি তা দাবী করেন। তার ধারণা এটা তার পাওনা।
তার মত এমন হাজার হাজার স্ত্রীলোক আছেন, ‘অকৃতজ্ঞতা’, একাকীত্ব আর অবহেলার শিকার। তারা ভালোবাসা চান, কিন্তু এই পৃথিবীতে ভালোবাসা পাওয়ার একটাই পথ আছে, আর তা হল ফেরত পাওয়ার আশা না করে ভালোবেসে যাওয়া।
কথাটা নিছক আদর্শবাদের মতো শোনাচ্ছে? মোটেই তা নয়। এটা সাধারণ জ্ঞানের কথা। যে সুখ আমরা সন্ধান করি এটা আমার বা আপনার পাওয়ার পক্ষে একটা খুব ভালো উপায়। এটা আমার জানা, কারণ আমার পরিবারেই এটা ঘটেছে। আমার বাবা আর মা সাহায্যের আনন্দেই অন্যকে সাহায্য করতেন। আমরা গরীবই ছিলাম–সব সময় ধার দেনা হতো। তা সত্বেও যতই গরীব হোন, আমার বাবা মা প্রতি বছর অনাথ আশ্রমে টাকা পাঠাতেন। সেটা ছিলো আইওয়াতে । বাবা মা সেটা কোনদিন দেখেন নি । আশ্রমের উপকারের জন্য কেউ বাবা মাকে ধন্যবাদও দেয়নি–একমাত্র চিঠিতে ছাড়া। তবুও বাবা মা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সাহায্য করে, কোন রকম কৃতজ্ঞতা ছাড়াই আনন্দ পেতেন।
বাড়ি ছেড়ে আসার পর আমি বাবা আর মাকে বড়দিনে কিছু টাকার চেক পাঠিয়ে জানাতাম কোন সখের জিনিস কিনতে। কিন্তু তারা কদাচিৎ তা করতেন। বড়দিনের কিছু আগে আমি বাড়ি এলে বাবা মা আমায় জানাতেন, প্রচুর সন্তান সহ এক গরিব মহিলার জন্য তাঁরা কয়লা আর খাদ্য কিনেছেন। এই উপহার পেয়ে তাদের কত আনন্দ, কিন্তু কিছু ফিরে না পাওয়ার আশা করে দান করা আনন্দও কতখানি।
আমার বিশ্বাস বাবা অ্যারিস্টটলের আদর্শ মানুষ হবারই যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন । অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, আদর্শ মানুষ সেই, যে অন্যের উপকার করে আনন্দ পায়–আর অন্যে উপকার করলে লজ্জিত হয়। কারণ কোন দান করা মহত্বের লক্ষণ আর তা গ্রহণ করা নীচতা।
এ পরিচ্ছেদে যা বলতে চাই এ হল তাঁর দ্বিতীয় বক্তব্য : আমরা যদি সুখী হতে চাই তাহলে কৃতজ্ঞতা বা অকৃতজ্ঞতার কথা ভুলে যাওয়া ভাল–আর দান করার আনন্দেই দান করা উচিত।
দশ হাজার বছর ধরে বাবা মায়েরা অকৃতজ্ঞ ছেলেমেয়ের কথা বলে আসছেন এবং নিজেদের চুল ছিঁড়ছেন।
এমনকি শেক্সপিয়ারের রাজা লিয়ার বলেছেন : যে সন্তান অকৃতজ্ঞ তার দাঁতের ধার সাপের চেয়েও বেশি।
কিন্তু ছেলেমেয়েদের আমরা না শেখালে তারা কৃতজ্ঞ হবে কেমন করে? অকৃতজ্ঞতা খুবই স্বাভাবিক–আগাছারই মত। কৃতজ্ঞতা হল গোলাপের মত। তাকে যত্ন করতে হবে, জল দিতে হবে, রক্ষা করতে হবে।
আমাদের সন্তানরা অকৃতজ্ঞ হলে দায়ী কে? হয়তো আমরাই। আমরা যদি তাদের অন্যের প্রতি কতজ্ঞ থাকতে না শেখাই তারা কি করে আমাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে?
আমি শিকাগোয় একজনকে চিনি যিনি তাঁর সৎ ছেলেদের অকৃতজ্ঞতা সম্পর্কে অনুযোগ করে থাকেন। তিনি একটা বাক্স তৈরির কারখানায় ক্রীতদাসের মত খেটে সপ্তাহে মাত্র চল্লিশ ডলার পেতেন। তিনি এক বিধবাকে বিয়ে করেন। সেই মহিলা তার ছেলেদের কলেজে পাঠাতে বলায় তাঁকে ধার করতে হয়। সপ্তাহের মাত্র চল্লিশ ডলার দিয়েই তাকে খাওয়া, বাড়ি ভাড়া, কয়লা, কাপড় কিনতে হত আর ধারও শোধ করতে হত। চারবছর কোন অভিযোগ না করে তিনি এসবই কুলির মত খেটে করে যান।
কিন্তু এজন্য কি কোন ধন্যবাদ পান তিনি? না–তাঁর স্ত্রী আর ছেলেরা এটা তার কর্তব্য বলেই ধরে নেয়। ছেলেরা ভাবেই নি তাদের সৎ বাবার এজন্য কোন কিছু পাওনা আছে–এমন কি ধন্যবাদও।
দোষটা কার? ছেলেদের? হ্যাঁ–তবে মা–র দোষ আরও বেশি। মা ভেবেছিলেন ছেলেরা কারও কান্ডে ঋণী, এই চিন্তা থাকা উচিত নয়। তিনি কখনই বলেন নি, তোমাদের বাবা কত সুন্দর কতে পড়াচ্ছেন। বরং ভাব দেখাতেন এর চেয়ে আরও ভালো করা উচিত ছিল।
তিনি ভাবতেন তিনি ছেলেদের ভালোর জন্যই এটা করছেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি ছেলেদের একটা বিপজ্জনক ধারণা সৃষ্টি করেছিলেন যে, কারও ধার ধারার দরকার নেই। এই ধারণাটা শেষপর্যন্ত বিপজ্জনকই হয়, কারণ ছেলেদের মধ্যে একজন এক কোম্পানীর মালিকের কাছে কাজ করত। ধার করে শেষ পর্যন্ত জেলে যায়।
আমাদের জানা দরকার আমরা সন্তানদের যেভাবে গড়ে তুলি তারা সেই ভাবেই বেড়ে ওঠে। একটা উদাহরণ দিই–আমার মাসী, মিনিয়াপোলিসের ভায়োলা আলেকজান্ডার হলেন তার জ্বলন্ত প্রমাণ। তাকে কোনদিন সন্তানদের অকৃতজ্ঞতার জন্য অনুযোগ জানাতে হয়নি। ভায়োলা মাসী তার মাকে কাছে এনে প্রচুর যত্ন করতেন। আর ঠিক তেমনটি করতেন তাঁর শাশুড়ীকেও। এখনও চোখ বুজে স্মরণ করতে পারি ভায়োলা মাসীর খামার বাড়িতে চুল্লীর সামনে দুই বৃদ্ধা বসে আছেন। তারা কী মাসীকে ঝামেলায় ফেলতেন? ফেলতেন না তা বলব না। তবে মাসী দুই বৃদ্ধাকে খুবই যত্ন করতেন আর ভালোবাসতেন। তাছাড়া মাসীর নিজের ছ’টি ছেলেমেয়ে ছিল–তার কখনই মনে হতো না তিনি কোন মহৎ কাজ করছেন আর সেজন্য লোকে তাকে পূজা করবে। তার কাছে কাজটা ছিল অতি স্বাভাবিক আর সেটাই তিনি করতে চেয়েছিলেন।
ভায়োলা মাসী এখন কোথায়? বছর কুড়ির মত হল তিনি বিধবা হয়েছেন–তার পাঁচটি বড় ছেলেমেয়েও আছে তারা সবাই মাকে কাছে রাখতে চায়। তার ছেলে মেয়েরা তাকে দারুণ ভালোবাসে। তারা ভাবে মাকে পুরোপুরি কাছে পাচ্ছে না। এটা কি কৃতজ্ঞতা থেকে? বাজে কথা। এ হলো ভালোবাসা–নিছক ভালোবাসা। এই সব ছেলেমেয়েরা শিখেছে তাদের ছোটবেলার মানবিকতার ঔদার্যের মধ্যে। এটা কি আশ্চর্য লাগছে যে ব্যাপারটা এখন ঠিক উল্টো হয়ে গেছে আর তারা সেই ভালোবাসাই ফিরিয়ে দিচ্ছে?
অতএব মনে রাখতে হবে কৃতজ্ঞ সন্তান চাইলে তাদের কৃতজ্ঞ হবার শিক্ষা দেওয়া চাই। আমাদের মনে রাখা দরকার ছোট ছেলেমেয়েরা কথাবার্তা শুনতে ওস্তাদ হয়। এরপর তাই আমরা যেন তাদের সামনে কারও নিন্দে না করি। কখনও বলা উচিত নয়, এই দেখ সুসান তোয়ালে পাঠিয়েছে, এতে ওর একপয়সাও খরচ হয়নি। বরং বলা উচিত, এই তোয়ালে পাঠাতে সুসানের কত পরিশ্রম হয়েছে। ভারি চমৎকার, তাই না? তাকে ধন্যবাদ দিয়ে চমৎকার চিঠি লিখতে হবে। এতে আমাদের সন্তানরা অবচেতন মনেই ধন্যবাদের ঔদার্য শিখতে থাকবে।
তাই অকৃতজ্ঞতার দুঃখ আর যন্ত্রণা ভোলার জন্য তিন নম্বর নিয়ম হল :
(ক) অকৃতজ্ঞতার জন্য দুশ্চিন্তা না করে বরং সেটা আশা করাই ভালো। মনে রাখা দরকার স্বয়ং যীশু একদিন দশজন কুষ্ঠ রোগীকে ভালো করে দিয়েও কারও কাছ থেকে কৃতজ্ঞতা পাননি। তাহলে যীশু যা পাননি আমরা তা আশা করব কেন?
(খ) মনে রাখবেন শান্তি পাওয়ার একটা পথই আছে কৃতজ্ঞতা আশা না করা এবং তার পরিবর্তে দান করে আনন্দ পাওয়া।
(গ) মনে রাখবেন কৃতজ্ঞতা হলো শিক্ষা সাপেক্ষ, তাই আমাদের সন্তানদের যদি কৃতজ্ঞ দেখতে চাই তাহলে তাদের সেই ভাবেই শিক্ষা দিতে হবে।