বৃথা দুশ্চিন্তা বন্ধ করুন
ওয়াল স্ট্রিটে টাকা রোজগারের উপায় জানতে চান কি? অবশ্য লক্ষ লক্ষ মানুষই এটা জানতে উৎসুক–এর উত্তরটা আমার জানা থাকলে এই বই প্রতি কপি দশ হাজার ডলারে বিক্রি হত। যাইহোক একটা কৌশলই সকল ফাটকাবাজরা কাজে লাগায়, এ কাহিনী আমায় শুনিয়েছিলেন চার্লস রবার্ট নামে এক কারবারী।
চার্লস রবার্ট বলেছিলেন, আমি টেক্সাস থেকে নিউ ইয়র্কে বন্ধুদের দেওয়া বিশ হাজার ডলার নিয়ে স্টক মার্কেটে লগ্নী করতে যাই। আমার ধারণা ছিল স্টক মার্কেটের কায়দা কানুন সবই আমার জানা। এও সত্যি কিছু লগ্নীতে আমার লাভও হলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবই খুইয়ে বসলাম।
মিঃ রবার্ট বলেছিলেন, আমার নিজের টাকা গেছে বলে কিছু ভাবিনি, তবে আমার বন্ধুদের টাকা নষ্ট হওয়ায় দারুণ দুঃখ হলো যদিও সে ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা তাদের ছিল। ওই ক্ষতির পর আমি তাদের সামনে যেতেই ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু তারা বেশ সহজভাবেই ব্যাপারটা গ্রহণ করল এবং আরও কিছু টাকা দিল ফাটকাবার পাচ্ছিলাম । কিন্তু তারা বেশ ক্ষমতা তাদের ছিল। ওই ক্ষতিক
আমি জানতাম আমি প্রায় অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছিলাম। আমাকে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছিল কিছুটা ভাগ্য আর অন্য লোকের মনের উপর।
আমি আমার ভুল সম্পর্কে ভাবলাম আর ঠিক করলাম আবার কাজে নামার আগে সব ব্যাপারটা যাচাই করবো। তাই শেষ পর্যন্ত ফাটকাবাজারের সবচেয়ে বিখ্যাত মানুষ বার্টন এন. ক্যাসেলকে খুঁজে বের করে পরিচয় করলাম। আমি ভাবলাম ভদ্রলোক দীর্ঘকাল ফাটকাবাজারে ভাগ্যের জোরে জেতেননি। তাই তাঁর সব কৌশল আমার জানতে ইচ্ছে হল ।
তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন আমি আগে কেমনভাবে কারবার করেছি–তা শোনার পর তিনি আমায় চমকার একটা পরামর্শ দিলেন। তিনি বলেন, বাজারে টাকা ছাড়লে আমি সব সময়েই বলে দিই ক্ষতি বন্ধ করতে। ধরা যাক আমি পঞ্চাশ ডলারের কোন শেয়ার কিনতে হলে বলে দিই শেয়ারের দাম পয়তাল্লিশ ডলার হলেই তা বিক্রি করে দিতে হবে। এতে ক্ষতি হবে মাত্র পাঁচ ডলার।
প্রথমেই যদি আপনি চিন্তা করে শেয়ার কেনেন তাহলে আপনার লাভ হবে গড়পড়তা দশ, পঁচিশ বা পঞ্চাশ পয়েন্টই। ক্ষতিকে যদি পাঁচ পয়েন্টের মধ্যেই রাখা যায় তাহলেও প্রচুর লাভ করা যাবে।
আমি সঙ্গে সঙ্গেই ওই কৌশল কাজে লাগালাম। এর ফলে আমার হাজার হাজার ডলার লাভ হয়েছে।
কিছুদিন পরে টের পেলাম ওই ‘ক্ষতি–বন্ধ’ ব্যাপারটা কেবল স্টক মার্কেট ছাড়াও অন্যান্য ব্যাপারেও কাজে লাগানো যায়। আমি এরপর অর্থনৈতিক ব্যাপার ছাড়া অন্যান্য দুশ্চিন্তাতেও এটা কাজে লাগাই। এতে যাদুর মত কাজ হয়েছে।
একটা উদাহরণ দিই। আমি প্রায়ই এক বন্ধুর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সমাধা করতাম। বন্ধু প্রায়ই মধ্যাহ্নভোজ অর্ধেক শেষ হবার মুখে দেরী করে আসতেন। শেষ পর্যন্ত আমি সেই ক্ষতি–বন্ধ নীতি কাজে লাগালাম। তাকে বললাম, ভাই, বিল, আমি তোমাকে ঠিক দশ মিনিট সময় দেব। দশ মিনিট পরে এলে আমাকে আর পাচ্ছেনা।
ওহ্! কেন যে এ কথাটা আগে ভাবিনি। এই ক্ষতিবন্ধ নিয়মের ফলে আমার অধৈর্য ভাব, মেজাজ, অনুশোচনা ইত্যাদি সব মানসিক ব্যাপারে কত সুবিধেই না হত । আমার যখন সব শান্তি নষ্ট হয়েছে তখন কেন যে অবস্থা বুঝে নিজেকে বলিনিঃ ওহে, ডেল কার্নেগী, এ ব্যাপারে ঠিক এতোটাই সময় নষ্ট করা চলতে পারে, তার বেশি নয়…। কেন যে তা করিনি?
যাই হোক, অন্ততঃ একবার নিজের বুদ্ধির জন্য নিজেকে তারিফ করতে পেরেছি। আর ব্যাপারটা অত্যন্ত মারাত্মকই ছিল–সেটা আমার জীবনের একটা সঙ্কটকাল। তখন আমি আমার বহু বছরের কাজ ও স্বপ্নকে ধুলিসাৎ হতে দেখেছি। এটা হয় এইভাবে। আমার ত্রিশ বছরের কাছাকাছি বয়সে আমি উপন্যাস লিখে জীবন কাটার ভেবেছিলাম । আমি হতে চাইছিলাম দ্বিতীয় ফ্রাঙ্ক নরিস, বা জ্যাক লণ্ডন বা টমাস হার্ডি হতে। আমার এমনই আগ্রহ ছিল যে দুবছর ধরে, যুদ্ধের পরবর্তীকালে ইউরোপে থেকে সস্তায় বই লিখে কাটালাম। বিরাট একখানা বই–নাম দিই তুষার ঝড়। নামটা পছন্দসই হয়েছিল বলাই বাহুল্য, কারণ প্রকাশকদের কাছে সেটা বেশ ঠাণ্ডা অভ্যর্থনাই পায়। এমন তুষার মাখা ঠাণ্ডা যে বোধ হয় ডাকোটা রাজ্যেও কেউ দেখেনি। আমার প্রকাশক তখন বললেন লেখাটা কিছুই হয়নি অর্থাৎ আমার কোন সাহিত্যিক গুণ নেই– অন্ততঃ উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে। এই কথা শোনার পর আমার হৃৎপিন্ড প্রায় থমকে যায়। একটা ঘোরের মধ্য দিয়েই আমি অফিসের বাইরে এসেছিলাম। আমায় তিনি যদি একটা ডান্ডা দিয়ে আঘাত করতেন তাহলেও বোধ হয় এতোটা লাগতো না। আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। আমি এটাই বুঝলাম জীবনের একটা সন্ধিস্থলে এসে পৌঁছেছি এবং নিশ্চিত একটা কিছু ঠিক করতে হবে। কি করা উচিত আমার? কোন পথে যাব? ওই ঘোর কাটাতে প্রায় সপ্তাহ কাবার হয়ে গেল। দুশ্চিন্তার ক্ষেত্রে তখন ওই ‘ক্ষতি–বন্ধ’ কথাটা শুনিনি। এখন অতীতের কথা ভাবলে দেখতে পাই ঠিক তাই করেছিলাম। দু’বছরের পরীক্ষার ফলে যা পেয়েছিলাম তাকে মনে করলাম একটা মহান পরীক্ষা মাত্র–সেখান থেকে নতুন পথে মোড় ফিরালাম। আমি আবার আমার আগেকার বয়স্ক–শিক্ষার ক্লাসে ফিরে আমি আমার জীবনী লেখায় মন দিই–জীবনী আর প্রবন্ধ লেখার কাজ, যেমন এই বইটিতে এখন যা আপনারা পড়ছেন।
.
ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বলে কি আমি আনন্দিত হই? আনন্দিত? যতবারই কথাটা ভাবি ততবারই রাস্তায় হাত তুলে নাচতে ইচ্ছে হয়। সত্যি কথা বলতে গেলে টমাস হার্ডি হতে পারিনি বলে, এরপর একবারের জন্যও ভাবনা হয়নি।
এক শতাব্দী আগে ওয়ালডেন জলাশয়ের কাছে যখন একটা প্যাঁচা কর্কশ ধ্বনি তুলেছিল হেনরি থোরো তার হাঁসের পালকের কলম আর নিজের বানানো কালিতে তাঁর ডায়েরীতে লিখেছিলেন : কোন জিনিসের দাম জীবনের একটা অংশেরই সমান–তা সেই দাম এখনই বা পরে যখনই দিতে হোক।
অন্যভাবে বললে বলতে হয় কোন জিনিসের যখন আমাদের অস্তিত্ব দিয়ে দাম দিই সেটা হয় অত্যন্ত বেশিই দাম দেওয়া।
অথচ গিলবার্ট আর সুলিভান ঠিক তাই করেছিলেন। তাঁরা জানতেন কেমন করে হাসির কথা আর গান সৃষ্টি করতে হয়–কিন্তু তাঁরা নিজেদের জীবনে কিভাবে আনন্দ আনতে হয় তা জানতেন না। বেশ মজার কিছু গীতিনাট্য তাঁরা রচনা করেন, যেমন, পেশেন্স, পিনাফোর আর দিমিকাডো। কিন্তু তারা নিজেদের মেজাজ ঠিক রাখতে পারতেন না। সামান্য একখন্ড কার্পেটের দাম নিয়ে তারা সারা জীবন তিক্ত করে তোলেন। সুলিভান তাঁদের থিয়েটারের জন্য একটা কার্পেটের অর্ডার দেন । গিলবার্ট যখন বিলটা দেখলেন তখন একদম রাগে ফেটে পড়লেন। ব্যাপারটা আদালত পর্যন্ত গেল–আমৃত্যু তারা পরস্পরের সঙ্গে বাক্যালাপ করেন নি। সুলিভান নতুন অপেরার জন্য গান লিখতেন আর সেটা গিলবার্টকে ডাকে পাঠিয়ে দিতেন। গিলবার্টও তাই করতেন। একবার যখন দুজনকে একসঙ্গে দর্শকদের সামনে আসতে হল দুজনে স্টেজের দুধারে পরস্পরের দিকে পিছন ফিরে অভিবাদন গ্রহণ করেছিলেন তাঁরা লিঙ্কনের মত ক্ষতি–বন্ধ করবার ব্যাপারটা একবারও ভাবেন নি।
গৃহযুদ্ধের সময় একবার লিঙ্কনের বন্ধুরা যখন তার শত্রুদের নিন্দা করছিলেন লিঙ্কন বলেন : সম্ভবতঃ আপনাদের মত আমার ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। খুব সম্ভবত আমার অতটা নেই, আর মনে হয় এতে ফল ভালো হয় না। একজন লোকের জীবনের অর্ধেক সময় ঝগড়া করে কাটানোর দরকার নেই। কেউ আমায় আক্রমণ করা বন্ধ করলে আমি তার অতীত নিয়ে কখনই ভাবি না।
আমার এক পিসিমা আছেন, তাঁর নাম এডিথ পিসিমা। পিসিমার যদি লিঙ্কনের মত ক্ষমাশীল মন থাকতো তাহলে বড় ভালো হত। তিনি ও ফ্রাঙ্ক পিসেমশাই একটা খামারে থাকতেন। খামারটা বাঁধা দেওয়া ছিল এবং সেখানকার মাটিও খারাপ আর আগাছায় ভর্তি থাকতো। পিসিমা কিছু পর্দা ধার করে এনে বাড়িটা সাজাতে চেয়েছিলেন । ফ্রাঙ্ক পিসেমশাই ধার ভালোবাসতেন না। ধার সম্পর্কে তাঁর কৃষক সুলভ ভীতি ছিল, তাই তিনি দোকানীকে বলে দেন এডিথ পিসিমাকে যেন ধার না দেওয়া হয় । পিসিমা সেকথা জানতে পেরে চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় করেন। আর আশ্চর্য ব্যাপার ওই ঘটনার পঞ্চাশ বছর পরেও পিসিমা চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় করতেন। গল্পটা তিনি বহুবার আমাদের শুনিয়েছেন। এডিথ পিসিমার পিসেমশাই যখন সত্তর বছর বয়স তখন আমি বলেছিলাম : এডিথ পিসি, পিসেমশাই অন্যায় করেছেন ঠিকই কিন্তু পঞ্চাশ বছর পরে চেঁচিয়ে কোন লাভ আছে?
এডিথ পিসিকে এর জন্য ঢের দামও দিতে হয়। সারা জীবন তিক্ত অভিজ্ঞতা বয়ে বেড়াতে হয়। তাঁর মনের শান্তিও তাতে নষ্ট হয়।
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের যখন সাত বছর বয়স তখন তিনি এমন একটা ভুল করেন, যেটা সত্তর বছর ধরে মনে রেখেছিলেন। সাত বছর বয়সে একটা বাঁশিকে ভালোবেসে ফেললেন । তিনি এতই উত্তেজিত হলেন যে একটা খেলনার দোকানে গিয়ে জমানো সব পয়সা ঢেলে একটা বাঁশি কিনে ফেললেন। বাঁশির দাম জানা ইচ্ছেও হলো না। তিনি সত্তর বছর পরে এক বন্ধুকে লেখেন, এরপর যখন বাড়ি ফিরে এলাম বাঁশিটা বাজিয়ে আনন্দে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখলাম। তারপর আমার দাদা দিদিরা যখন টিটকিরি দিয়ে বললেন বাঁশিটার জন্য অনেক বেশি দাম দিয়েছি তখন দুঃখে কেঁদে ভাসালাম।
.
বহু বছর পরে ফ্রাঙ্কলিন যখন বিশ্ব বিখ্যাত হন আর ফ্রান্সে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত তখনও তিনি মনে রেখেছিলেন বাঁশির জন্য বেশি দাম দিয়েছিলেন আর সেটা তাকে আনন্দের চেয়ে দুঃখই দিয়েছিল।
তবে এর মধ্য দিয়ে যে শিক্ষা ফ্রাঙ্কলিন পেয়েছিলেন তাতে তাঁর উপকারই হয়। তিনি তাই লিখেছিলেন, আমার বয়স বাড়লে যখন মানুষের ব্যবহার লক্ষ্য করলাম, তখন দেখলাম এমন বহু মানুষই আমার চেনা যারা তাদের বাঁশির জন্য বেশি দাম নিয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে বলতে হয় মানুসের দুঃখের একটা বড় কারণ হল তারা জিনিসগুলোর আসল দাম বুঝতে পারে না অথচ তারা তাদের বাঁশির জন্য বেশি দাম দেয়।
গিলবার্ট আর সুলিভান তাদের বাঁশির জন্য ঢের দাম দিয়েছিলেন। এডিথ পিসিমাও তাই। এমন কি ডেল কার্নেগীও বহু সময় তাই করে। আর সেই রকম করেন অমর সাহিত্যিক লেভ টলস্টয় যিনি দুটি বিখ্যাত উপন্যাস– ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ এবং ‘আনা কারেনিনা’ লিখেছিলেন। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রটানিকার মতানুযায়ী লিও টলষ্টয় তার শেষ ত্রিশ বছরের জীবনে পৃথিবীতে সবচেয়ে শ্রদ্ধাস্পদ মানুষ ছিলেন। তাঁর মত্যর বিশ বছর আগে–১৮৯০ থেকে ১৯১০ পর্যন্ত তার বাড়িতে তাঁথযাত্রাদের মত লোক সমাগম ঘটত। তারা একবারের জন্য অন্তত তাকে চোখের দেখা দেখতে বা তার কথা শুনতে বা তার পোশাকের প্রান্ত স্পর্শ করতে চাইতো। তিনি যা বলতেন তার সবটাই নোটবইয়ে লিখে নেওয়া হত যেন তা ঐশ্বরীক বাণী । কিন্তু সাধারণ জীবন সম্বন্ধে টলষ্টয় একেবারে অজ্ঞ ছিলেন। ফ্রাঙ্কলিনের সাত বছর বয়সে যে জ্ঞান ছিল তার সত্তর বছর বয়সেও তা ছিল না! আসলে এসম্বন্ধে তাঁর কোন জ্ঞানই ছিলো না।
যা বলতে চাই তা এই রকম। টলস্টয় যে মেয়েটিকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন তাকেই বিয়ে করেন। আসলে তারা এতই সুখী ছিলেন যে তাঁরা হাঁটু গেড়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাতেন যেন তাদের এ সুখ চিরস্থায়ী হয়। কিন্তু টলষ্টয় যে মেয়েটিকে বিয়ে করেন তিনি একটু ঈর্ষাপরায়ণা ছিলেন । তিনি চাষী রমণীর পোশাক পরে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে টলস্টয়ের উপর গোয়েন্দাগিরি চালাতেন। তাদের প্রচণ্ড ঝগড়া হত। তাঁর স্ত্রী এতই ঈর্ষা কাতর ছিলেন যে নিজের ছেলেমেয়েদের প্রতিও ঈর্ষা প্রকাশ করতেন। একবার বন্দুক নিয়ে মেয়ের ছবি গুলিতে ফুটো করে দেন। একবার এক বোতল আফিম ঠোঁটের সামনে ধরে তিনি মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে ভয় দেখিয়ে ছিলেন। তখন তার ছেলেমেয়েরা ভয়ে এক কোনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে চলেছিল।
টলস্টয় তখন কি করতেন? ভদ্রলোক রাগে সব আসবাবপত্র ভেঙে ফেলেন বলে সেজন্য তার উপর রাগ করতে পারছি না সত্যিই রাগের কারণ ছিল। কিন্তু টলষ্টয় আরও খারাপ কাজ করেন। তিনি গোপনে একটা ডায়েরী লিখতেন। হ্যাঁ, সেই ডায়েরীতে সব দোষ তিনি তার স্ত্রীর উপর চাপিয়েছিলেন। ওই ডায়েরী ছিল তার বাঁশি? তিনি ঠিক করেছিলেন পরবর্তী বংশধরদের জানিয়ে দেবেন দোষ তার নয়, তারা যাতে তাঁকে মার্জনা করে সব দোষ তাঁর স্ত্রীর বুঝতে পারে। এটা দেখে তাঁর স্ত্রী কি করেছিলেন শুনুন। তার স্ত্রী রাগে ডায়েরীর সব পাতা ছিঁড়ে আগুন ধরিয়ে দেন আর নিজেও একখানা ডায়েরী লিখতে শুরু করেন এবং তাতে স্বামীকে একটা শয়তানের রূপ দেন। তিনি এ ছাড়া একটা উপন্যাসও লেখেন তার নাম দেন কার দোষ? ওই উপন্যাসে স্বামীকে তিনি গৃহের দানব বিশেষ আর নিজেকে একজন শহীদ হিসেবে চিত্রিত করেন।
এর পরিণতি কি হল? এই দুজনে মিলে তাদের বাড়িকে এক অস্বাভাবিক জায়গা করে তোলেন, টলস্টয় যাকে পাগলা গারদ নাম দেন। এসবের অবশ্যই নানা কারণ ছিল। এই সব কারণের একটা হল তারা সাধারণত সব মানুষকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন। হ্যাঁ, তারা আমাদের মত মানুষকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে আসল দোষীকে জানবার জন্য আমাদের কি কণামাত্রও মাথাব্যথা আছে? সত্যিই নেই। কারণ আমাদের নিজেদেরই এত সমস্যা যে টলস্টয়দের ব্যাপারে মাথা ঘামাবার কায় নেই। বাঁশির জন্য হতভাগ্য দুজন কত দামই দিয়েছেন! পঞ্চশ বছর ধরে কদর্য নরকবাস–যেহেত তাদের দুজনের কেউ বলতে পারেন নি। এবার থামো! কারণ তাদের দুজনের কেউই বলতে পারেনি এবার থামা যাক–ক্ষতি বন্ধ করা যাক। আমরা আমাদের জীবনকে বাজে খরচ করছি । যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়!
হ্যাঁ, আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি সত্যিকার মানসিক শান্তির মূলে রয়েছে মূল্য সম্বন্ধে যোগ্য ধারণা। আমি বিশ্বাস করি আমাদের সব দুশ্চিন্তার শতকরা পঞ্চাশভাগই দূর করা যায় যদি এই স্বর্ণময় কথাটা মনে রাখি–জীবনের পটভূমিকায় কোন ঘটনার বিচার।
অতএব দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য ৫নং নিয়মটি হলো এই :
যখনই মানুষের জীবনের মাপকাঠির তুলনায় ভালো টাকাকে খারাপ টাকার দিকে ছুঁড়ে দিই তখনই নিজেদের তিনটে প্রশ্ন করা উচিত :
১। যে বিষয়ে দুশ্চিন্তা করছি তাতে আমাদের কতখানি এসে
যায়?
২। কখন আমি ক্ষতি বন্ধ হিসেব করে সব দুশ্চিন্তা ভুলে যাবো।
৩। এই বাঁশির জন্য কত দাম দেব? এর যা
দাম তার চেয়ে কি ইতিমধ্যেই বেশি দিয়েছি?