হাটখোলার দত্ত পরিবার
এই বনেদি সম্ভ্রান্ত পরিবারটি বালির প্রাচীন দত্ত পরিবারের একটি শাখা। এঁদের পূর্বপুরুষ গোবিন্দশরণ দত্ত দিল্লীর কোন বাদশাহের প্রদত্ত জায়গীর লাভ করে আন্দুল থেকে বসবাসের জন্য কলকাতা চলে আসেন ।
এর সত্যাসত্য আমাদের অজ্ঞাত, কারণ হাটখোলা ছিল সুতানুটির অন্তর্গত–ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭৮এ সমগ্র সুতানুটি রাজা নবকিষণকে স্থায়ী জমিদারীরূপে (?) দান করেছিলেন । তাঁর চার পুত্র বাণেশ্বর, ভুবনেশ্বর, বিশ্বেশ্বর এবং রামানারায়ণ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না ।
বাণেশ্বরের তৃতীয় পুত্র রামচন্দ্র ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমদানি রফতানি বিষয়ে বেনিয়ান । অভিজাত রামচন্দ্র ভায়েদের সম্মতি নিয়ে তাঁদের জমি জায়গা বাড়ীর পরিবর্তে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে হাটখোলার ভূ-সম্পত্তি গ্রহণ করেন । তখন থেকেই এঁদের পরিচয় হয় হাট খোলার দত্ত পরিবার। রামচন্দ্রের ছিল পাঁচ পুত্র–কৃষ্ণচন্দ্র, মাণিক্যচন্দ্র, ভারতচন্দ্র, শ্যামচন্দ্র এবং গোরাচাঁদ । জ্যেষ্ঠ কৃষ্ণচন্দ্রের চার পুত্র মদনমোহন, রামশঙ্কর, রামকান্ত ও রামলাল । মধ্যম মাণিক্যচন্দ্রের তিন পুত্র জগত্রাম, কৌতুকরাম ও গুলাবচন্দ্র । কৃষ্ণচন্দ্রের জ্যেষ্ঠ পুত্র মদনমোহন রেখে যান চার পুত্র–রামতনু (সাধারণ্যে রামতনুবাবু নামে খ্যাত ছিলেন); চৈতন্যচরণ, রসিকলাল ও হরলাল । মাণিক্যচন্দ্রের জ্যেষ্ঠ পুত্র জগত্রামের ছিল তিন পুত্র : কাশীনাথ, রামজয় ও হরসুন্দর । রামজয়ের জীবিত দুই পুত্র বর্তমানে এই প্রাচীন পরিবারের প্রতিনিধিস্থানীয় ব্যক্তি । যশোহর ও হুগলী জেলায় এঁদের জমিদারী আছে ।
দত্ত পরিবারের পূর্বপুরুষদের মধ্যে মদনমোহন দত্তের নাম ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় । তিনি ছিলেন একাধারে সম্ভ্রান্ত জমিদার, ব্যাঙ্কিং ব্যবসায়ী এবং কয়েকটি জাহাজের মালিক । তাঁরই যত্ন ও চেষ্টায় রামদুলাল দে সাধারণ শিক্ষার ও বিপুল বিত্তের অধিকারী হতে পেরেছিলেন । মদনমোহন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন; ধর্মীয় ব্যাপারে তাঁর দানও ছিল বিপুল । আমতা, মেদিনীপুর, ঢাকা এবং অন্যান্য স্থানে তিনি পুকুর ও কূপ খনন করিয়েছিলেন, এবং শিব মন্দির নির্মাণ ও উৎসর্গ করিয়েছিলেন । গয়ার প্রেতশিলা পাহাড়ে চূড়া পর্যন্ত সিঁড়ি নির্মাণ করিয়ে তিনি এদেশে অক্ষয় কীর্তি লাভ করেন । দাতা হিসাবে মাণিক্যরামের জ্যেষ্ঠ পুত্র জগত্রামের স্থান ছিল মদনমোহনের পরেই । তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে পাটনায় দেওয়ানী করতেন । এখানে তিনি পাটনেশ্বরীর মন্দির নির্মাণ ও উৎসর্গ করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন । এই পরিবারের কয়েকজন কোন্নগর ও পানিহাটেতে ঘাট সহ (শিবের) দ্বাদশ মন্দির নির্মাণ করেন । এই ঘাট ও মন্দিরগুলি গঙ্গার বিপরীত তীরে থাকায় এই স্থান দুটির সৌন্দর্য বড়ই মনোরম ।