শোভাবাজারের রাজপরিবারবর্গ
অতি সম্মানিত এই পরিবারটির ইতিহাস বেশ প্রাচীন। এঁরা ‘চিত্রপুরের মৌলিক কায়স্থ দেব বংশ’। এই বংশের প্রথম পুরুষ শ্রীহরিদেব মুর্শিদাবাদের কর্ণসুবর্ণ বা কানসোনার অধিবাসী ছিলেন। তাঁরই এক বংশধর, পীতাম্বর দেব, মোগল সরকারে চাকরি করে ‘খান বাহাদুর’ খেতাবে ভূষিত হন। পীতাম্বরের এক বংশধর রুক্ষ্মিণীকান্ত দেব ছিলেন ওই সরকারের একজন সরকারি কার্যপরিচালক। কৃক্ষ্মিণীকান্তের অন্যতম পৌত্র রামচরণ ছিলেন নবাব মহবৎ জঙ্গের অধীনে মুড়াগাছা পরগণার রাজস্ব আধিকারিক (কমিশনার), লবণ আধিকারিক, পরে কালেক্টর এবং সর্বশেষে হন কটকের দেওয়ান। স্থানীয় সুবাদার মনিরুদ্দীন একদিন কিছু সৈন্য পরিচালনা করছিলেন; তাঁর সঙ্গে ছিলেন দেওয়ান রামচন্দ্র। হঠাৎ একদল পিন্ডারী গোপন স্থান থেকে তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। অতর্কিত আক্রমণে সুবাদার প্রথমেই নিহত হন; লড়াই করে নিজ হাতে কয়েকজনকে নিপাত করেও পিন্ডারীদের সংখ্যাধিক্যের জন্য রামচন্দ্র পরাজিত ও নিহত হন।
দেওয়ান রামচরণের তিন পুত্রের জ্যেষ্ঠ ছিলেন রামসুন্দর আর কনিষ্ঠ নবকৃষ্ণ। পিতা রামচরণ মুড়াগাছা ছেড়ে পরিবারবর্গ নিয়ে গোবিন্দপুরে বাস করতে চলে আসেন। পরে এই গোবিন্দপুরে ফোর্ট উইলিয়াম নির্মিত হয়।
রামসুন্দর ছিলেন পঞ্চকোট বা পাঞ্চেতের, পরে অন্যান্য স্থানের সুপারভাইজার। এইভাবে তিনি কয়েক বছর সংসার প্রতিপালন করেন। ১৭৭৬-এ দিল্লীর বাদশাহ তাঁকে ‘রায়’ উপাধিতে ভূষিত করেন এবং ‘মনসব’ (এক হাজার সেনা পরিচালক) মর্যাদা দান করেন; পাঁচশত সওয়াব (অশ্বারোহী সৈন্য) রাখবার অধিকার তাঁকে দেওয়া হয়।
কোম্পানি সরকার ফোর্ট উইলিয়াম নির্মাণের জন্য গোবিন্দপুরের জমি অধিগ্রহণ করলে, দেব পরিবার সূতানুটিতে বাড়ি কিনে বসবাস করতে আরম্ভ করেন। এই বসত বাটী থেকে সেখানে পরে গড়ে ওঠে শোভাবাজার রাজবাটীর অট্টালিকাসমূহ।