পাথুরিয়াঘাটার অনারেবল অনুকূলচন্দ্র মুখার্জী
মাননীয় অনুকূলচন্দ্র মুখার্জীর পিতামহ দেওয়ান বৈদ্যনাথ মুখার্জীর আদি বাস ছিল হুগলী জেলার ভঙ্গমোরা-গোপীনাথপুর গ্রামে। তিনি বসবাসের জন্য কলকাতা চলে আসেন । বিখ্যাত পন্ডিত মনোহরচন্দ্র মুখার্জীর অন্যতম বংশধর রামপ্রসাদ মুখার্জীর পুত্র দেওয়ান বৈদ্যনাথ মুখার্জীর চার পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ লক্ষ্মীনারায়ণ ছিলেন হিন্দু কলেজের সম্পাদক । লক্ষ্মীনারায়ণের পাঁচ পুত্রের মধ্যে অনারেবল অনুকূলচন্দ্র ছিলেণ চতুর্থ ।
অনুকূলচন্দ্র ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন । বাল্যে তিনি জনৈক মুন্সীর নিকট ফার্সী শেখেন। ফার্সী শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাংলা এবং সামান্য সংস্কৃতও শেখেন । আট বছর বয়সে তিনি গোবিন্দ বসাকের বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিখতে আরম্ভ করেন । এর দু’বছর পর তাঁকে হিন্দু কলেজে ভর্তি করা হয় । এখানে বিশেষ পরিশ্রম সহকারে কয়েক বছর পড়ার পর তিনি সিনিয়র স্কলারশিপ লাভ করতে সমর্থ হন ।
প্রথমে তিনি হাওড়া ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নাজিরের পদে নিযুক্ত হন । এই পদে থাকাকালে তিনি আইন শাস্ত্রে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেন । নাজিরের পদে চার বছর চাকুরী করার পর, প্রাক্তন সদর আদালতের অন্যতম জজ মিঃ ডিক তাঁকে ওকালতি পড়ার পরামর্শ দেন । এই পরামর্শমত প্রস্তুতি নিয়ে ১৮৫৫ তে ওকালতি পরীক্ষায় (প্লীডারশিপ এগ্জামিনেশনে) উত্তীর্ণ হন । পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই তিনি সদর আদালতে আইন ব্যবসায় শুরু করেন। স্বীয় দক্ষতার জন্য শীঘ্রই তিনি তখন দেশীয়দিগের বার্- এর নেতা রমাপ্রসাদ রায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন; বন্ধুজন, মক্কেল ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসাও তিনি নিজগুণেই অর্জন করেন । ২৪ ডিসেম্বর, ১৮৬৮তে তিনি জুনিয়র গভর্নমেন্ট প্লীডার পদে নিযুক্ত হন । কিন্তু হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট হবার জন্য হাইকোর্টের চীফ্ জাস্টিসের অনুরোধ অতি বিনীতভাবে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন । তবে ১৮৭০-৭১ এর ২১ ফেব্রুয়ারী তিনি সিনিয়র গভর্নমেন্ট প্লীডারের পদ গ্রহণ করেন । তাঁর যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার জন্য শীঘ্রই তাঁকে হাইকোর্টের অন্যতম জাস্টিসরূপে যোগদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়–অনারেবল্ দ্বারকানাথ মিত্রের মৃত্যুতে পদটি শূন্য হয়েছিল। তিনি এই উচ্চপদ গ্রহণ করেন। ১৮৭০-এর ৬ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান হয় ।
এই কঠিন ও অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ পদে তিনি আট মাস অধিষ্ঠিত ছিলেন । এই সময় তিনি তাঁর চিন্তার স্বাধীনতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন । কিছুকালের জন্য তিনি বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ছিলেন । উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট তাঁকে ফ্যাকালটি অফ্ ল’র সদস্য মনোনীত করেন ।
দুর্ভাগ্যবশত মাত্র ৪২ বছর বয়সে, ১৮৭১-এর ১৭ অগাস্ট তিনি পরলোক গমন করেন । হাইকোর্টের মাননীয় জজবৃন্দ, বন্ধুবর্গ ও তাঁর গুণমুগ্ধ ব্যক্তিগণ তাঁর এই অকাল মৃত্যুতে শোকভিভূত হন । মৃত্যুকালে তিনি দুই পুত্র বাবু রাজেন্দ্রনাথ মুখার্জী ও বাবু হীরেন্দ্রনাথ মুখার্জীকে রেখে গেছেন ।