1 of 2

জোড়াসাঁকোর রায় কৃষ্ণদাস পাল বাহাদুর, সি আই ই

জোড়াসাঁকোর রায় কৃষ্ণদাস পাল বাহাদুর, সি আই ই

দি অনারেবল রায় কৃষ্ণদাস পাল বাহাদুর ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষারম্ভ হয় ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে। স্বগৃহে কিছুকাল রেভ, মিঃ মর্গ্যানের কাছে শিক্ষালাভের পর তিনি ১৮৫৪-তে হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজে ভর্তি হন । এখানে তিনি ক্যাপটেন ডি এল রিচার্ডসন, ক্যাপটেন এফ পামার, ক্যাপটেন হ্যারিস, মিঃ উইলিয়ম কার্ক-প্যাট্রিক এবং মিঃ উইলিয়াম মাস্টার্সের নিকট শিক্ষালাভ করেন । ১৮৫৭ তে তিনি কলেজ ত্যাগ করলেও, অধ্যয়নের অভ্যাস ত্যাগ করেননি । তিনি মর্নিং ক্রনিকল্, হিন্দু ইন্টেলিজেন্সার, দি সিটিজেন, দি ফিনিকস, দি হরকরা, দি হিন্দু প্যাট্রিয়ট প্রভৃতি পত্রিকায় নিয়মিতভাবে এবং কখনও কখনও দি ইংলিশম্যান পত্রিকাতেও লিখতেন । কানপুর থেকে প্রকাশিত দি সেন্ট্রাল স্টার নামক পত্রিকার তিনি কলকাতাস্থ সংবাদদাতা ছিলেন ।

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক বাবু হরিশচন্দ্র মুখার্জীর মৃত্যুর পর তিনি উক্ত পত্রিকার সম্পাদক হন (১৮৬০ থেকে ১৮৬১ পর্যন্ত।) তিনি কলকাতা পুরসভার কমিশনার, কলকাতা পুলিশের অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সচিব এবং বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সভ্য ছিলেন । ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে ১ জানুয়ারি দিল্লী দরবারে তাঁকে রায় বাহাদুর খেতাবে ভূষিত করা হয় এবং ১৮৭৭-র ১৪ আগস্ট বাংলার ছোটলাট বাহাদুর বেলভেডিয়ারে তাঁকে নিম্নোদ্ধৃত সনদ দান করেন–

‘বাবু,

‘দেশীয় জনগণের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সর্ববিষয়ে বহু বছর যাবৎ আপনি মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন । আপনি উপযুক্তভাবে এবং আগ্রহ সহকারে আপনার স্বদেশীবাসীর স্বার্থ ও অধিকার সম্পর্কে লেখনী চালনা করেছেন এবং আপনি ইঙ্গ-বঙ্গ সংবাদপত্রকে উচ্চ ও প্রভাবশালী স্থান দিয়েছেন । সমভাবেই আপনি বঙ্গীয় আইন পরিষদের সভ্য, পৌর কমিশনার এবং বহু বোর্ড ও কমিটির সভ্যরূপে (দেশের) সেবা করেছেন; কোনরূপ বিরক্তি প্রকাশ না করে আপনি বহু মূল্যবান সহায়তা করায় সরকার আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ এবং তারই স্বীকৃতিস্বরূপ আপনাকে ‘রায় বাহাদুর’ পদবী দান করা হচ্ছে।’

১৮৭৮-এর ১ জানুয়ারি তাঁকে ‘কম্‌প্যানিয়ন অব দি অর্ডার অব দি ইন্ডিয়ান এম্পায়ার’ পদবীতে ভূষিত করা হয়। তাঁর সরল জীবনযাত্রা, শিক্ষা ও জ্ঞানের বিশালতা এবং চরিত্রগুণের জন্য তিনি এদেশে বহু ইউরোপীয় ও দেশীয় ব্যক্তির শ্রদ্ধা অর্জন করেন; বিদেশেও তাঁর খ্যাতি পরিব্যাপ্ত । দেশবাসীর মঙ্গলের প্রতি তীর আগ্রহ থাকায় তিনি জনগণের সকলপ্রকার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। বাবু হরিশচন্দ্ৰ মুখার্জীর মৃত্যুর পর হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকাটি ডুবে যেতে বসেছিল; কৃষ্টদাস পাল মহাশয়ের পরিশ্রম, উৎসাহ ও প্রচেষ্টার ফলে পত্রিকাটি নব জীবন লাভ করে । এর ফলে, তিনি সর্বশ্রেণীর জনগণের সবিশেষ আস্থা অর্জন করেন । রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর যশ শুধু সারা দেশে নয়, বর্হিভারতেও পরিব্যাপ্ত; সামাজিক ক্ষেত্রেও তাঁর সেবামূলক কাজে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের অন্যান্য অংশও একান্তভাবে উপকৃত

রায় কৃষ্টদাস পাল বাহাদুর, সি আই ই নিজ হাতে ভাগ্য গড়েছেন– এবং পরিশ্রম, সততা ও অধ্যবসায় থাকলে মানুষ জীবনে কত উন্নতি লাভ করতে পারে, দেশবাসীর নিকট তিনি তার জীবন্ত দৃষ্টান্ত ।

আমাদের প্রার্থনা, এই মহান মনীষী দীর্ঘ জীবন লাভ করেন ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *