২
সেই সময় কলকাতার পুলিশ কমিশনার শ্যামপুকুর, মুচিপাড়া ও ভবানীপুর এই তিনটে থানাকে আদর্শ থানা হিসেবে গড়ে তুলবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন। সেই সূত্রে ছেলেটাকে স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে মুচিপাড়া থানায় নিয়োগ করলেন। আদর্শ থানা হিসেবে ঘোষিত থানাগুলোতে চোদ্দ পনের জন করে নতুন অফিসার দেওয়া হয়েছিল। ছেলেটা মুচিপাড়া থানার সবচেয়ে কমবয়সী অফিসার হয়ে যোগ দিল। তখন ওই থানার অফিসার-ইন-চার্জ ছিলেন পরেশ ব্যানার্জি। তিনি অফিসের কাজ শুরু করতেন রাত সাতটা-আটটার সময়। তারপর থানায় তাঁর ঘরে থাকতেন রাত দুটো-তিনটে পর্যন্ত। তিনি তাঁর প্রিয় পোষা ল্যাপ ডগ নিয়ে অফিসে আসতেন। ওটাকে টেবিলের ওপর বসিয়ে কাজ শুরু করতেন। প্রথম দিন ছেলেটাকে দেখেই প্রশ্ন করলেন, “আজকেই তো এখানে আসা হয়েছে, কি নাম?” ছেলেটা বলল, “আমার নাম স্যার রুণু গুহনিয়োগী।”
ব্যানার্জি সাহেব মুখ ঘুরিয়ে তাঁর আর্দালিকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমার হুলোটা কই?” আর্দালি বলল, “স্যার, দেখছি না।” আমি ভাবলাম, ওঁর যেমন পোষা কুকুর আছে, তেমনই বোধহয় পোষা বেড়ালও আছে, তারই কথা আর্দালিকে জিজ্ঞেস করছেন। কিন্তু মনের মধ্যে একটা খটকা লেগে রইল। হঠাৎ অফিসে বসেই বেড়ালের কথা জানতে চাইবেন কেন? আমি একটু পরে এক সিনিয়র অফিসারকে জিজ্ঞেস করলাম, “দাদা, আমাদের স্যার বুঝি বেড়ালও পোষেন?” উনি আশ্চর্য হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, “কেন?” আমি বললাম, “উনি এসেই আর্দালির কাছে জানতে চাইলেন ওঁর হলো কই, তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করছি।” আমার কথা শুনেই সেই সিনিয়র অফিসার হো হো করে হেসে উঠলেন। হাসির ধাক্কা একটু কমলে বললেন, “হলো জান না? আর জানবেই বা কি করে, পুলিশের ট্রেনিংয়ে তো আর ওই বিষয়ে পড়ান হয় না, শেখানও হয় না। কিন্তু হুলো নিয়ে একটা ক্লাস থাকলে ভালই হত। হুলো ছাড়া পুলিশের চাকরি বেকার, নির্জলা। ধৈর্য ধর, একটু পরেই বড়বাবুর হুলো আসবে, দেখবে।”
কিছুক্ষণ পর এক ধোপদুরস্ত মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক এসে হাসতে হাসতে সোজা অফিসার-ইন-চার্জের ঘরে ঢুকে গেলেন। বড়বাবু তখন টেবিলের ওপর তাঁর পোষা কুকুরটার গা খুঁটে খুঁটে পোকা বার করছিলেন, আর টেবিলের ওপরেই ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলের নখ দিয়ে সেগুলোকে টিপে টিপে মারছিলেন। সেই ভদ্রলোক বড়বাবুর টেবিলের উল্টোদিকের চেয়ারে বসে একই কায়দায় পোকা বাছতে শুরু করে দিলেন। লক্ষ্য করলাম, মাঝে মাঝে ওই ভদ্রলোক পোকা ছাড়াই নখ দিয়ে টিপে পোকা মারার ভান করে যাচ্ছেন আর বড়বাবুর সামনে দাঁত বার করে হেসে হেসে কথা বলছেন। সেই সিনিয়র অফিসার আমাকে বললেন, “দেখেছ, এই হচ্ছে বড়বাবুর হুলো।”
পরদিন সকালবেলা সেই ভদ্রলোক একটা কুকুর নিয়ে এসে হাজির। তারপর দেখলাম, বড়বাবুর আর্দালি থানার ওপরতলায় বড়বাবুর কোয়ার্টার থেকে নিয়ে এল বড়বাবুর পোষা মেয়ে কুকুরটাকে। আমি আর্দালিকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি ́ হবে?” সে জানাল, “বড়বাবুর কুকুরের বিট দেওয়া হবে।” আর্দালি তখন বড়বাবুর ঘরে দুটো কুকুরকে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। বড়বাবু কিন্তু ওপর থেকে নামেননি। সেই ভদ্রলোক দরজার পাশের একটা জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছেন, ঘরের ভেতর কুকুর দুটো কি করছে। থানার অন্য সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। প্রায় আধ ঘণ্টা পর হঠাৎ সেই ভদ্রলোক নাচতে নাচতে চিৎকার করে বলতে লাগলেন, “হয়েছে, হয়েছে।” আমরা বুঝলাম, তাঁর কুকুর নিয়ে আসার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। কিন্তু ভদ্রলোক আর চিৎকার থামাচ্ছেন না। একটু পরে বড়বাবুর বাড়ির কাজের ছেলে এসে সেই ভদ্রলোককে বলল, “বড়বাবু শুনেছেন।” তখন উনি হেসে জিজ্ঞেস করলেন, “বড়বাবু শুনেছেন?” ছেলেটা ফের বলল, “হ্যাঁ।” এতক্ষণে ভদ্রলোক তাঁর চিৎকার থামালেন।
আমার চাকরি জীবনে আমি এরকম বহু হুলো দেখেছি, দেখেছি প্রায় প্রত্যেক পুলিশ কর্মীরই হুলো থাকে। চাকরির স্তর অনুযায়ী হুলোরও স্তর তৈরি হয়। আই. পি. এস. অফিসার থেকে শুরু করে সবচেয়ে নিচু স্তরের সিপাই পর্যন্ত সবারই হলো থাকে কমপক্ষে চার পাঁচ জন করে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বদলি হয়ে গেলেও অসুবিধে নেই। নতুন জায়গায় আবার নতুন হুলোর আমদানি হয়। হুলোবা হচ্ছে অনেকটা আগেকার জমিদারদের মোসাহেবদের মত। এরা পুলিশের গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকে নিজেদের প্রতিপত্তি বাড়ানর জন্য, এলাকায় মাতব্বরি করার লোভে। এর জন্য তাদের অনেক পয়সাও খরচ করতে হয়। অফিসারদের মর্জি মত খানাপিনাও করাতে হয়, বেড়াতে নিয়ে যেতে হয়। তাতে হুলোরা অবশ্য কখনও পিছিয়ে যায় না। এলাকায় খাতির পেতে এরা কখনও কখনও পুলিশের কাছ থেকে পাড়ার দু একটা পেটি কেসের আসামীকে ছাড়িয়েও নিয়ে যায়।
পুলিশকেও হুলোদের অনুরোধ রাখতে হয়। হুলোরা অঞ্চলের অনেক গোপন খবর পুলিশকে দেয়, তাতে পুলিশ এলাকার হালচাল বুঝতে পারে। ষাটের দশকে একজন হুলোকে দেখেছি, যিনি ছিলেন কলকাতার এক প্রখ্যাত জুয়েলারি ব্যবসায়ীর বাড়ির ছেলে। তিনি প্রায় প্রতিদিন কোঁচা দেওয়া ধুতি আর ফিনফিনে গিলে করা দামি পাঞ্জাবি পরে পুরোপুরি ফুলবাবু সেজে গাড়ি নিয়ে থানায় আসতেন। তারপর তাঁর পেয়ারের অফিসারদের নিয়ে সোজা চলে যেতেন নামী হোটেল কিংবা পানশালায়। সেখানে সবাইকে ঢালাও খাওয়া দাওয়া করিয়ে প্রতি রাতে অন্তত দুতিন হাজার টাকা খরচ করে বাড়ি ফিরতেন।
একবার আমার এক সিনিয়র অফিসারের একটা নতুন হুলো এল। সে দারুণ সব বড় বড় গল্প বলতে শুরু করল। অফিসার চুপচাপ তার সব চালবাজি হজম করলেন, তারপর সন্ধেবেলায় সেই হুলোকে সঙ্গে করে আমার মত আরও দুতিনজন জুনিয়র অফিসারকে ডেকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন কলকাতার এক নামজাদা হোটেলের বারে। আমার বস স্কচ হুইস্কি পান করতে শুরু করলেন। আস্তে আস্তে রাত বাড়তে লাগল, হুইস্কির সাথে খাবার-দাবারও প্রচুর ছিল। আমি লক্ষ্য করছিলাম সেই নতুন হুলো কেমন যেন উসখুস উসখুস করছে। এদিকে বিল বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। রাত প্রায় এগারটা নাগাদ সেই লোকটি সিনিয়র অফিসারকে বলেই ফেলল, “দাদা আমায় যে বাড়ি যেতে হবে।” হুলোরা সাধারণত এরকম আচরণ করে না, অফিসারের মর্জি মেনেই তারা চলে। তা সেই অফিসার ওই ভদ্রলোকের কাতর অনুরোধ শুনে বললেন, “হ্যাঁ চলুন।” হুলো কোনমতে মোটা বিলটা মেটালে আমরা সবাই বেরিয়ে এলাম। গাড়িতে ওঠার পর আমি বসকে বললাম, “স্যার একদিনেই সোনার ডিম পাড়া হাঁসটাকে কেটে ফেললেন!” উনি হেসে উত্তর দিলেন, “না রে, দেখলাম, এ হুলো পার্মানেন্ট হওয়ার নয়, তাই ঠিক করলাম একদিনেই যা হওয়ার হয়ে যাক।”
পুলিশেরা হুলোদের শুধু পকেটই কাটে না, তাদের সোর্স হিসেবেও কাজে লাগায়। এলাকায় ইলোরা নিজের ক্ষমতা দেখানর ধান্দায় সবরকম মানুষের সঙ্গেই সম্পর্ক রাখে, বিশেষ করে উঠতি মাস্তান ও ‘দাদাদের’ সঙ্গে, সেই সূত্রে তারা এলাকার প্রচুর খবরাখবর রাখে আর প্রয়োজনমত তা পুলিশকে জানিয়েও দেয়। চাকরি জীবনে আমি বিভিন্ন অফিসারের বহুরকম হুলো দেখেছি। দেখেছি একদিন যে হুলো দারুণ রহিস ছিল, রোজ প্রচুর টাকা অফিসারদের পেছনে উড়িয়ে দিত, বাড়িতে নেমন্তন্ন করে অফিসারদের ভোজ খাওয়াত, একদিন তারাই ফতুর হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, শেষ বয়সে নিঃস্ব হয়ে দারিদ্র্যের জ্বালায় জ্বলছে।
আমি যখন মুচিপাড়া থানায় এলাম তখন ওই অঞ্চল ছিল গুণ্ডা, সমাজবিরোধী মাস্তানদের স্বর্গরাজ্য। এই মাস্তান শব্দটা ফরাসী ভাষা থেকে কে যে বাংলায় আমদানি করেছিল জানি না, কিন্তু কাজটা যথাযোগ্য হয়েছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এর ব্যাপ্তি ও ওজন এতই প্রসারিত যে একটা কথাতেই পুরো চরিত্র একেবারে সামনে চলে আসে। ওই মুচিপাড়া অঞ্চলেই আমার সাথে একে একে আলাপ হতে লাগল পুরনো দিনের কলকাতা কাঁপান সব মাস্তানদের। তাদের সাথে যখন আমার মোলাকাৎ হল, তার অনেক আগে থেকেই কলকাতা আর তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ‘দাদাগিরির’ কিছুটা স্বাদ পেয়ে গেছে।
পূর্ববাংলা থেকে দেশ বিভাগের সময় যখন হাজার হাজার উদ্বাস্তু আসতে লাগল পশ্চিমবঙ্গে, তখনই শহর ঘিরে মাথা চাড়া দিল একদল মাতব্বর। শরণার্থীরা কোথায় থাকবে, কি খাবে, কিভাবে ঘর বাঁধবে এই সব দেখাশুনোর ভার নিজেরাই নিজেদের কাঁধে তুলে নিল দাদারা। জবরদখল জায়গার কোনখানটা পাবে কোন উদ্বাস্তু পরিবার, তা ওই মাতব্বররাই ঠিক করে দিত। এরা সবাই, বলাই বাহুল্য ছিল এলাকার পুরনো বাসিন্দা। এদের নির্দেশেই উদ্বাস্তুদের ভাগ্য নির্ধারিত হতে লাগল। ক্রমে ক্রমে এরাই এলাকার দাদা হয়ে গেল। এদের কথা অমান্য করার অর্থ আবার নতুন করে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া। চালচুলোহীন, একেবারে নিঃস্ব হয়ে আসা শরণার্থীরা ভয়ে সেইসব দাদাদের বিরুদ্ধে কিছু বলত না। এরা সেইসব উদ্বাস্তু পরিবারের বেকার ছেলেদের নিয়ে নিজেদের এক একটা বাহিনীও তৈরি করে নিল। দাদাদের হাত ধরে সেইসব বেকার তরুণেরা রুটিরুজির ধান্দা করে ফেলল। এইসব দাদারা কিন্তু নিষ্ঠুর চরিত্রের ছিল না। মাতব্বরি করাটাই মূল উদ্দেশ্য ছিল এদের। দাদাদের মধ্যে অনেকে ছিল, যারা মনে করত উদ্বাস্তুদের জায়গা দখল করতে সাহায্য করা মানে দেশসেবা করা। সদ্য সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের মধ্যে দেশসেবার একটা হাওয়া তো ছিলই, সেই হাওয়া অল্প হলেও এদের গায়ে লেগেছিল। কিন্তু সেই সেবকদের মধ্যে আড়ালে দু-একজন যে বদ চরিত্রের ছিল, তাও দেখা গেছে। তারা শরণার্থীদের অসহায়তার অনেক সুযোগই নিয়েছে। সরকারি সাহায্যের জিনিসপত্র ও টাকাপয়সা তছনছ এরাই করেছে। দাদাগিরির উত্থান তখনই প্রথম পশ্চিমবঙ্গ দেখে। যদিও এই দাদাগিরিটা কখনই মুম্বাইয়ের মত প্রবল আকার ধারণ করেনি। সেখানে তো দাদারা নিজেদের মধ্যে এলাকা ভাগ করে অন্ধকার রাজত্বটা চালায়, রীতিমত উসুলী অফিস খোলে। তাদের অঙ্গুলি হেলনেই এলাকার লোকেদের চলতে ফিরতে হয়। তাদের অমান্য করার অর্থ মৃত্যুকে মুখোমুখি চ্যালেঞ্জ জানান।
যাই হক, আমি সেইসব প্রাক্তন দাদাদের সঙ্গে একে একে পরিচিত হতে লাগলাম। শুনেছি, একদিন এরা মহাত্মা গান্ধীর কাছে নিজেদের অস্ত্র সমর্পণ করেছিল। এখন যেখানে বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট ও রাজা রামমোহন সরণির সংযোগস্থলে ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার শাখা আছে, ঠিক সেখানে একসময় কলকাতার এক বিখ্যাত জুয়েলারি দোকান ছিল। তারই পাশের মাঠে মহাত্মা গান্ধী এসেছিলেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের নির্দেশে ওই সব মাস্তানরা তাদের পিস্তল, রিভলবার মহাত্মা গান্ধীর কাছে সমর্পণ করেছিল। আর ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় তাঁদের প্রত্যেককে একটা করে ট্যাক্সির পারমিট দিয়েছিলেন। সেইসব মাস্তানদের মধ্যে অনেকেই সেই পারমিট নিয়ে ট্যাক্সি বার করেছিল। তারা কেউ নিজেই ট্যাক্সি চালাত, কেউ ড্রাইভার দিয়ে চালাত।
এইসব মাস্তানরা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সময় বিশেষ এক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করত এবং তা নিয়ে গর্ব করে বলেও বেড়াত। আবার এরাই কোনও কোনও এলাকায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষকে দমনও করত। একে একে আমার সাথে আলাপ হল মিঃ মুখার্জি, ভানু বসু, শচী মিত্র, মৃত্যুঞ্জয় দত্ত, কমলেশ, লালকমল, শান্ত ঘোষের। মৃত্যুঞ্জয় দত্ত খুব ভাল পিস্তল, রিভলবার সারাই করতে পারত। কলকাতা ও আশপাশের অঞ্চলের মাস্তানদের অস্ত্রশস্ত্র সারাই করে দিত। ওর মনটাও খুব বড় ছিল। আবার এদের মধ্যেই একজন ছিল, মাস্তানির আড়ালে চিটিংবাজি করত। এদের কাছ থেকে পুরনো দিনের মাস্তানির গল্প শুনতাম। ওদের কাছে আসত নতুন উঠতি সব মাস্তানরা নানা অঞ্চল থেকে। প্রাক্তন মাস্তানরা তাদের পুরনো দিনের কীর্তি কাহিনীর গল্প ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে নতুন মাস্তানদের শোনাত, ওরা সেইসব গল্প গোগ্রাসে গিলত। আসলে এটা ছিল নতুনদের নিজেদের কব্জায় ধরে রাখবার কায়দা।
আমার সঙ্গে উঠতি মাস্তানদেরও আলাপ হতে লাগল, আস্তে আস্তে আমি এদের মানসিকতা, চালচলন, কথাবার্তা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। ওদের আড্ডাগুলো, গোপন ডেরাগুলো চিনবার উদ্দেশে ওদের সাথে মিশতে শুরু করলাম। ওদের হেড কোয়ার্টার ছিল বৌবাজারে শশীভূষণ দে স্ট্রিটের মোড়ে ‘গোল্ডেন ভ্যালি’ নামে একটা রেস্তোঁরা। তাছাড়া ক্রিক রোয়ের মোড়ে ‘শ্যামল রেস্তোঁরা’ ও শ্যামবাজারের ‘সুকৃতি’ আর কফি হাউসে বসত ওরা। অধুনা অবলুপ্ত গোল্ডেন ভ্যালির মালিক ছিল চট্টগ্রাম থেকে আসা বাটুল নামে একটা ছেলে। ঐ রেস্তোঁরাতে আমিও যাতায়াত করতে শুরু করলাম। বাটুলের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেল। বাটুলকে সবাই চিনত এবং ভালও বাসত। সেই বাটুলের মাধ্যমেই দক্ষিণ কলকাতার তাজা, লিন্টে, টালিগঞ্জের টুলু মুখার্জি, বুলু মজুমদার, উত্তর কলকাতার পৃথ্বীশ, বাপী, ল্যাংড়া চিত্ত, বেলঘরিয়ার ইণু মিত্র, মির্জাপুরের দেবু ব্যানার্জি, কালো রোজা, ওয়াচেন মোল্লার দোকানে ডাকাতিতে ধৃত অমল চক্রবর্তী, কুখ্যাত মাকাল কুণ্ডু, পরে আমার হাতে ধরা পড়ে ধর্ষণের মামলায় সাজা হয়েছিল। জগু, দীপু, কালী মুখার্জি, দেতোঁ কালী এমনি সব কুখ্যাত মাস্তানদের চিনলাম। ওখানেই আরও একজনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়, যিনি পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। উনি অবশ্য কলকাতার বাইরে থাকতেন, তবে মাঝে মাঝেই আসতেন। উনি চিরদিন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ছিলেন। জগা বসুর ভাই ভানু বসুও একবার কলকাতা করপোরেশনের নির্বাচনে দাঁড়িয়ে রাজনীতির আঙ্গিনায় পা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল।
প্রাক্তন মাস্তানরা যারা ট্যাক্সি চালাত, তারাও সন্ধের পর শুধু আড্ডার টানে গোল্ডেন ভ্যালিতে আসত। অনেকে নতুন মাস্তানদের হপ্তা আদায় থেকে কাটমানি নিত। কেউ কেউ লুকিয়ে অস্ত্রশস্ত্রের লেনদেনও করত। তবে পুরনো দিনের মাস্তানদের সাথে নতুন মাস্তানদের মানসিকতার অনেক ফারাক ছিল। প্রথমত পুরনো মাস্তানরা কেউ মনেপ্রাণে ধান্দাবাজ ছিল না। মাস্তানি করে নিজের আখের গুছিয়ে নেব এই চিন্তা ওরা করত না। ওদের মাস্তানিটা অনেকটাই সীমাবদ্ধ ছিল বীরত্ব প্রদর্শনের গণ্ডিতে। এরা কেউ মহিলাদের বিরক্ত করত না, বরং অন্য কেউ তা করলে সেটা প্রতিরোধ করত। বয়স্ক লোকেদের শ্রদ্ধাভক্তি করত। কিন্তু নতুন মাস্তানদের মধ্যে এসব গুণ প্রায় দেখাই যেত না। সমাজের অবক্ষয়ের সাথে সাথে মাস্তানদের মানসিকতার পার্থক্যও স্পষ্ট বোঝা যেতে লাগল। নতুনেরা প্রায় সবাই ধান্দাবাজ। আমি এদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ হতে লাগলাম এবং সেই সূত্রে কলকাতার প্রায় সব প্রান্তের মাস্তানদের আস্তানা চিনতে শুরু করলাম। চিনলাম চিত্তরঞ্জন অ্যাভিন্যুয়ের পিটারকে, মির্জাপুরের বি গাঙ্গুলি, চীনা ভাষায় পারদর্শী মলোঙ্গা লেনের নন্দুয়া ও শম্ভু দাস ওরফে বোমকাটি, দমদমের পলকে। এদের সূত্রেই গ্রেপ্তার করলাম ডিকসন লেনের কেলোকে এবং উদ্ধার করলাম প্রচুর পরিমাণে গাঁজা। গোল্ডেন ভ্যালিতে আসতেন পরবর্তীকালের আই. এন. টি. ইউ. সি. নেতা বিজয় মুখার্জিও। তাঁর সঙ্গে আমার খুবই ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। তাঁর সূত্র ধরেই আমি চিনলাম খিদিরপুর, গার্ডেনরিচ এলাকার মাস্তানদের।
অন্যদিকে মুচিপাড়া থানায় যেহেতু আমি সবচেয়ে জুনিয়র অফিসার ছিলাম, সিনিয়র অফিসাররা যেমন শিকদারদা, রায়চৌধুরীদা, দস্তিদারদা ও দিব্যেন্দু দত্ত আমাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন আসামীদের ধরার সময়, সমাজবিরোধীদের মোকাবিলা করার জন্য কিংবা জেরা ও জিজ্ঞাসাবাদের সময় হাজির থাকতে বলতেন। দিব্যেন্দু দত্ত আবার মুচিপাড়া অঞ্চলেরই বাসিন্দা ছিলেন, ফলে তাঁর সাথে সাধারণ মানুষের অনেক বেশি যোগাযোগ ছিল। আমিও সমাজবিরোধী দমনের সূত্রে মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পেলাম। একদিকে মাস্তানদের সঙ্গে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের ফলে ধীরে ধীরে আমি আমার নিজস্ব একটা ‘সোর্স’ বাহিনী গড়ে তুলতে পারলাম। ইতিমধ্যে মুচিপাড়া থানায় আমার অল্পসল্প নাম হয়েছে। শুধুমাত্র সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যই নয়, নাম হয়েছে অন্য একটা কাজের জন্য।
দিনটা ছিল বাষট্টি সালের চার সেপ্টেম্বর। সুরেন্দ্রনাথ কলেজের এক ছাত্র শিয়ালদায় গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল সকাল এগারটা নাগাদ, তৃতীয় শ্রেণীর টিকিট নিয়ে প্রথম শ্রেণীতে ট্রেনে চড়ার অপরাধে। সেই ছাত্রকে তারা নিয়ে গিয়েছিল শিয়ালদার সাউথ স্টেশনের জি. আর. পি. থানায়। সেখানে শখানেক লোক বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে থানা আক্রমণ করে বসল। জি. আর. পি. বিক্ষোভকারীদের থেকে প্রায় কুড়ি জন লোককে গ্রেফতার করে থানায় আটক করে রাখল। বাকি বিক্ষোভকারীরা স্টেশন চত্বর ছেড়ে চলে এল মহাত্মা গান্ধী রোডে। এসেই ওখানে দাঁড়ান ট্রাফিক পুলিশের ওপর ঢিল ছুঁড়তে লাগল। তারপর তারা রাস্তায় ট্রাম বাস থামিয়ে লোকজন নামিয়ে দিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দিতে শুরু করল।
খবর পাওয়ার সাথে সাথে মুচিপাড়া থানার থেকে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হলাম। ওরা আমাদের দূর থেকে দেখেই ক্রমাগত ঢিল ছুঁড়তে লাগল। ট্রাম লাইন সারানর জন্য রাস্তার পাশে স্টোন চিপস ফেলা হয়েছিল। তাতে তাদের ঢিল আমদানির কাজটা সহজ হয়ে গেল। সেই পাথর বৃষ্টির মুখে আমরা ব্যারিকেড করে দাঁড়িয়ে রইলাম। ইতিমধ্যে তাদের সঙ্গে জুটে গেছে আরও অনেক ছাত্র এবং সমাজবিরোধীরা। চারপাশের বাড়ির লোকজন ছাদ ও বারান্দা থেকে ওদের বিক্ষোভ দেখতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মধ্য কলকাতার ডেপুটি কমিশনার মিঃ এস. কে. মল্লিক হাজির। তাঁর নির্দেশে টিয়ার গ্যাস ছোঁড়া হল। কিন্তু টিয়ার গ্যাস আমাদের কাছে খুব অল্প পরিমাণে মজুত থাকাতে কিছুক্ষণ পরই তা বন্ধ করে দিতে হল। টিয়ার গ্যাস ছোঁড়া বন্ধ হতেই আক্রমণকারীরা ফের দ্বিগুণ উৎসাহে ঢিল ছোঁড়া শুরু করল। আমরা তখন রাইফেল বাগিয়ে গুলি ছোঁড়ার অভিনয় করে তাদের তাড়া করলাম। ওরা কিছুটা পিছু হটেই বুঝে গেল, আমরা বুলেট ব্যবহার করতে চাইছি না। শুরু হল আবার ঢিল বর্ষণ। মহাত্মা গান্ধী রোড ও প্রফুল্ল চন্দ্র রায় রোডের সংযোগস্থলে আমরা ব্যারিকেড করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
ভাদ্র মাসের ঝাঁঝাঁ রোদে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। ধৈর্যের পরীক্ষা চলছে। দেড়টা নাগাদ আমি ও সত্যেন ঘোষ ঢিল বৃষ্টির মাঝখান দিয়ে হাত জোড় করে বিক্ষোভকারীদের দিকে এগিয়ে চললাম। আমরা দুজনে চিৎকার করে বলতে লাগলাম, “আপনারা শান্ত হন, আমরা আপনাদের কথা শুনছি।” কোনমতে ঢিল বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে চলছি, প্রায় পাঁচশ মিটার হেঁটে ওদের কাছাকাছি পৌঁছলাম। একেবারে সামনাসামনি দেখেই বোধহয় একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে ওরা ঢিল ছোঁড়াটা থামাল। আমরা হাত জোড় করে আবার বললাম, “আপনারা শান্ত হন, দয়া করে ঢিল ছোঁড়া বন্ধ করুন, আমরা আপনাদের কথা শুনছি।” বিক্ষোভকারীদের মধ্যে যাদের মনে হল ভদ্র ছাত্র, আমি আর সত্যেন ঘোষ তাদের সামনে গিয়ে বললাম, “আপনারা দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন, কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় তার চেষ্টা করুন। আপনাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন চলুন, আমাদের ডেপুটি কমিশনার সাহেব আছেন, আলোচনা করে ঠিক করুন, কিভাবে শান্তি আনা যায়।”
আমাদের কথা শুনে বিক্ষোভকারীরা নিজেদের মধ্যে কি সব আলোচনা করে নিল। তারপর চারজন ছাত্র নেতা দল থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের বলল, “চলুন, ডেপুটি কমিশনার সাহেবের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করছি কি করা যায়।” আমি আর সত্যেন ওদের হাজির করলাম মিঃ মল্লিকের কাছে। ‘শান্তির প্রস্তাব’ নিয়ে মিঃ মল্লিকের সাথে ছাত্র প্রতিনিধিদের আলোচনা শুরু হল। আলোচনা যখন চলছে তখনও বিক্ষোভকারীদের একাংশ ঢিল ছুঁড়ে যেতে লাগল। দুজন ছাত্র প্রতিনিধি বহুবার আলোচনা থামিয়ে হাতজোড় করে ওদের অনুরোধ করল ঢিল ছোঁড়া বন্ধ করতে। ছাত্ররা মিঃ মল্লিককে বলল, কজন সিনিয়র অফিসার যেন তাড়াতাড়ি সুরেন্দ্রনাথ কলেজে গিয়ে প্রিন্সিপালের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। যখন আলোচনা একটা নির্দিষ্ট পথে অনেকটাই এগিয়ে এসেছে, ঠিক সেই সময় ‘শান্তিবিরোধীরা’ আমাদের বাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ করে বসল। ঢিল বৃষ্টি আরও তুমুল আকার ধারণ করল। ভেস্তে গেল আলোচনা। দাঁড়িয়ে থাকা ট্রামে ওরা ফের আগুন ধরিয়ে দিল। তার লেলিহান শিখা আশেপাশের বাড়িগুলোকে ছোঁয়ার উপক্রম করল। বাড়ির মা বোনেরা ঘর থেকে রান্নার জল, খাবার জল এনে ছুঁড়ে ছুঁড়ে আগুন নেবানর চেষ্টা করতে লাগলেন। মির্জাপুরের মোড়ের পেট্রল পাম্প বন্ধ করে এসে পাম্পের কর্মচারীরা জল ছিটতে লাগল জ্বলন্ত ট্রামের গায়ে। ক্রমে হাঙ্গামা আরও বিশাল আকার ধারণ করল। বিকেলের দিকে সরেজমিনে দেখতে এলেন চিফ সেক্রেটারি মিঃ আর. গুপ্ত, পুলিশ কমিশনার মিঃ এস. এম. ঘোষ। তাঁরা সবকিছু দেখে ডেপুটি কমিশনার সাহেবের সাথে কথা বলে চলে গেলেন। আরও পুলিশ ঘটনাস্থলে আনা হল। আমরা হাঙ্গামাকারীদের পেছন দিয়ে গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাগলাম। প্রায় আট ঘণ্টা পর সন্ধে সাতটা নাগাদ পরিস্থিতি আয়ত্তের মধ্যে এল। এই ঘটনায় ছটা ট্রাম একদম ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল, সরকারি ও বেসরকারি অনেক গাড়ির প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল। প্রায় আশি জন আহত হল, তার মধ্যে পুলিশ কর্মচারীই ষাট জন, প্রায় দুশো জন লোককে গ্রেফতার করা হল।
সেদিন আমার আর সত্যেন ঘোষের প্রচেষ্টার সবাই খুব প্রশংসা করলেন। পরদিন কলকাতার সব পত্রপত্রিকায় বিশেষ করে দি স্টেটসম্যান, আনন্দবাজার পত্রিকায় আমাদের নামে লেখা বের হল। এতবড় ঘটনায় একটাও কিন্তু বুলেট খরচ হয়নি। কোন সাধারণ মানুষকে মরতে হয়নি। যে আশি জন আহত হল, তার মধ্যে ষাট জনই পুলিশ। ক্ষিপ্ত জনতাকে দমন করা যায় শুধু ধৈর্য ধরে, এই ঘটনা তার জলজ্যান্ত উদাহরণ।
এরপর থেকে মুচিপাড়া থানায় সিনিয়র অফিসাররা আমাকে বিশেষ চোখে দেখতে শুরু করলেও আমি কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে শিখতে চাইতাম সবসময়ই, কিভাবে সোর্স ধরে রাখা যায়, লালনপালন করা যায় এবং তাদের কথায় কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পরবর্তীকালে আমার চাকরি জীবনে এই মাস্তানদের ভেতর সোর্স তৈরি করার ব্যাপারটা খুবই কাজে লেগেছিল।
মাস্তান ও সমাজবিরোধীদের মধ্যে থেকে সোর্স না তৈরি করলে, আমরা পুলিশেরা অপরাধীদের খবর পাব কোথা থেকে? সাধারণ মানুষ তো আর অপরাধ জগতের খবরাখবর রাখে না। তাই অন্ধকার দুনিয়ার ভেতর থেকেই আমাদের সোর্স তৈরি করতে হয়। যে পুলিশ অফিসার যত বেশি অপরাধ জগতের সঙ্গে সুকৌশলে যোগ রাখতে পারবে সে তত বেশি অপরাধী ধরতে পারবে। পুলিশের চাকরি তো আর মন্দিরের পুরোহিতের কাজ নয় যে ঈশ্বরের উপাসনা করলেই হবে। কিংবা পুলিশের চাকরি এও নয় যে সারাদিন অফিসের ঠাণ্ডা ঘরে বসে রাহুল সাংকৃত্যায়ন বা শেক্সপিয়র আলোচনা করে কাটিয়ে দেওয়া যাবে। এটা অনেকটা ঝাড়ুদারদের মত কাজ, তাকে নোংরা ঘাঁটতেই হবে। নোংরা না ঘাঁটলে সে আর কি করে নোংরা পরিষ্কার করবে? অপরাধ জগতের ভেতর ভালরকম সোর্স না থাকলে পুলিশি কাজকর্ম চালানই মুশকিল। পুলিশ তো আর জ্যোতিষি নয় যে হাত গুনে বলে দেবে কোথায় কোন অপরাধী লুকিয়ে আছে বা কোথায় কবে কোন অপরাধ ঘটবে। পুলিশকে এক অপরাধীর মাধ্যমেই অন্য অপরাধীকে খুঁজে বের করতে হয়। আমার পুলিশি জীবনে এমন বহুবার ঘটেছে যে বড় বড় মাস্তানদের থেকে এত গুরুত্বপূর্ণ সব খবর পেয়েছি যা দিয়ে বড় বড় তদন্তের কিনারা করতে পেরেছি।