১৭
একদিন আমার পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তি, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের আলিপুর শাখার ম্যানেজার মিঃ চঞ্চল বিশ্বাস লালবাজারে আমার কাছে এসে বললেন, “ভীষণ বিপদে পড়ে গেছি, আপনি যদি একটু দয়া করেন তবে হয়ত বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারি।” আমি বললাম, “কি বিপদ সেটা আগে খুলে তো বলুন, আপনার কি ধরনের সাহায্য দরকার সেটা আগে বুঝতে দিন।”
মিঃ বিশ্বাস বললেন, “আলিপুরের আদালতে একটা মামলা চলছে। সেই মামলায় লালগোলার মহারাজের মুকুট জড়িত আছে। কিন্তু কোর্টে এমন কোনও সুরক্ষিত জায়গা নেই যে সেটা রাখা যায়। তাই যতদিন না সেই মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে আমরা যেন আমাদের ব্যাঙ্কের লকারে সেটা রাখার ব্যবস্থা করি, আদালত আমাদের সেই নির্দেশ দিয়েছেন।”
আমি বললাম, “এ আর কি সমস্যা! আদালতের যখন নির্দেশ তখন আপনাদের লকারে ওই মুকুটটা রাখার ব্যবস্থা করলেই তো হয়ে যায়।” মিঃ বিশ্বাস বললেন, “সমস্যাটা সেটা নয়। ওই মুকুট রাখতে গেলে যে মাপের লকার দরকার, আমাদের ব্যাঙ্কে তা আছে মাত্র দুটো, আর সেই দুটোই আমাদের দুই গ্রাহককে দেওয়া আছে, একটাও খালি নেই।” বললাম, “তা কোন এক গ্রাহককে অনুরোধ করে একটা লকার খালি করিয়ে নিন না। তাহলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।” মিঃ বিশ্বাস বললেন, “সেখানেই তো সমস্যা, আর তার জন্যই আপনাকে বিরক্ত করতে আসা।”
আমি জানতে চাইলাম, “বলুন, কি সমস্যা?” মিঃ বিশ্বাস বললেন, “ওই দুটো লকারের মধ্যে একটা দেওয়া আছে এক মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীকে। তিনি আমাদের ব্যাঙ্কের সবচেয়ে বড় গ্রাহক। আমরা তাকে বিরক্ত করতে চাই না, আমরা তাকে হারাতেও চাই না। আর বাকি যে লকারটা আছে সেটা এক বৃদ্ধা ভদ্রমহিলার। তাঁর ওপর আমাদের ব্যাঙ্কের কোন কর্মচারীই সন্তুষ্ট নয়। প্রত্যেকেরই তাঁর ওপর ভীষণ রাগ।” আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কেন?” মিঃ বিশ্বাস বললেন, “হবে না কেন? ব্যাঙ্ক বন্ধ হয় বিকেল পাঁচটায়, লকার বন্ধ হয় বিকেল চারটেয়। ওই ভদ্রমহিলা ব্যাঙ্কে আসেন তাঁর কতগুলো নাতিপুতি নিয়ে বিকেল তিনটে সাড়ে তিনটের সময়। তারপর তিনি চারটে বাজতে মিনিট দশেক বাকি থাকতে তাঁর লকার খুলতে যান। আমার কাছে রাখা একটা চাবি দিয়ে লকার খুলে দিয়ে আসি। তারপর উনি ঘণ্টাখানেক ওইখানে থাকেন, কি যে করেন জানি না। এদিকে বিরক্ত হয়ে সব কর্মচারী চলে যায়। আমি লকার বন্ধ না করে ব্যাঙ্ক ছেড়ে যেতেও পারি না। ভীষণ অস্বস্তিকর। এদিকে তিনি লকারও ছাড়বেন না। কি যে করি? তাই আপনার কাছে এসেছি, আপনি যদি কিছু একটা ব্যবস্থা করেন তাহলে ভীষণ উপকৃত হব।” আমি বললাম, “আমি কি করব?” মিঃ বিশ্বাস বললেন, “আপনি যদি দয়া করে ওই ভদ্রমহিলাকে বুঝিয়ে বা অন্য উপায়ে তাঁর লকারটা খালি করাতে পারেন, তা হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।” আমি বললাম, “দেখুন তিনি আপনাদের গ্রাহক, আপনারা তাঁকে অনুরোধ করে পারছেন না, সেখানে আমি কি করতে পারি? কেউ যদি অনুরোধ না রাখে, এখানে বলার কি আছে?” মিঃ বিশ্বাস তবু নাছোড়, আমাকে বারবার অনুরোধ করে যেতে লাগলেন। আমাকে বললেন, “আপনাকে সবাই ভীষণ ভয় পায়, আপনি যদি ভদ্রমহিলাকে একটু ভয় দেখান, তবে দেখবেন সুড়সুড় করে লকারটা ছেড়ে দেবেন। আপনি আমার চেনা লোক, এই উপকারটা আমার করুন।” কি আর করি, ঢেঁকি গেলার মত করে বললাম, “ঠিক আছে একবার নয় যাব, কিন্তু আপনার মুখের কথায় তো আর যাওয়া যাবে না, আপনি একটা দরখাস্ত দিয়ে যান।” সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলে উঠলেন, “আগামীকালই দিয়ে যাব।”
পরদিন তিনি দরখাস্ত দিয়ে অনুরোধ করলেন, যেন তাড়াতাড়ি একটা ব্যবস্থা করি। আমি প্রশ্ন করলাম, “ওই বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা কোন কোন দিন আসেন?” মিঃ বিশ্বাস জানালেন, “এমনিতে কোনও ঠিক নেই। তবে সপ্তাহে তিন চারদিন আসেন।” জিজ্ঞেস করলাম, “তাহলে যে কোনও দিনই চান্স নেওয়া যেতে পারে?” মিঃ বিশ্বাস বললেন, “হ্যাঁ, যে কোন দিনই আসতে পারেন।”
দরখাস্ত দেওয়ার পরদিন আমি বিকেল তিনটের সময় ব্যাঙ্কে গিয়ে হাজির। দেখা করলাম ম্যানেজার সাহেবের সঙ্গে। তিনি আমাকে দেখেই বললেন, “এসেছেন? আমাদের বাঁচান।” জানতে চাইলাম, “তিনি কখন আসবেন?” তিনি জানালেন, “আসার সময় তো হয়ে গিয়েছে, আপনি আমাদের কাস্টমারদের এনক্লোজারে গিয়ে বসুন, তিনি এলে ওখানেই তাঁর নাতিপুতি নিয়ে সময় কাটান। তারপর লকার বন্ধ হওয়ার মিনিট দশেক আগে খুলতে যান।”
আমি মিঃ বিশ্বাসের নির্দেশ মত কাস্টমার এনক্লোজারে গিয়ে বসলাম। আমার সৌভাগ্য, তিনি সেদিন একটা অ্যাম্বাসাডর গাড়িতে চড়ে এলেন। ম্যানেজার সাহেব যেমন বিবরণ দিয়েছিলেন সেই অনুযায়ী তাঁকে দেখেই আমার চিনতে একটুও অসুবিধে হল না। দেখলাম, তিনি আমার মায়ের বয়সী, বর্ধিষ্ণু পরিবারের মহিলা। এককালে যে অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন তা দেখেই বোঝা যায়। গায়ের রঙ পাকা হলুদ, ঠিক দুর্গা প্রতিমার মত মুখ, দেখলেই ভক্তি করতে ইচ্ছে করে। সাদা ধবধবে পাটভাঙা শাড়ি পরা, তিনি চার পাঁচটা বাচ্চা ছেলে নিয়ে ঢুকলেন, এবং আমার কাছেই বসলেন। তারপর হাতের ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে বাচ্চাগুলোকে লজেন্স, বিস্কুট দিতে লাগলেন। বাচ্চারা দেখলাম, তাঁর কথা খুব মানে। যাকে যেটা নিতে বললেন, সেইমত নিজেরা ভাগ করে নিল। চারটে বাজতে মিনিট দশেক আগে তিনি উঠে ম্যানেজারকে নিয়ে লকার খুলতে চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ পর ম্যানেজার লকার খুলে তাঁর চেম্বারে চলে গেলেন। আমি তখন বাচ্চাগুলোর সঙ্গে গল্প করতে শুরু করলাম। প্রত্যেকেই দেখলাম ওই বৃদ্ধা ভদ্রমহিলাকে “দিদা” বলে সম্বোধন করছে। আমি তাদের নাম জিজ্ঞেস করে দেখলাম, ওদের কারও পদবির সাথে ওই ভদ্রমহিলার পদবির কোনও মিল নেই। জানলাম ভদ্রমহিলার বাড়ির আশেপাশেই সবাই থাকে। তার মানে, বাচ্চাগুলো তাঁর পরিবারের কেউ নয়। আমার সাথে কথা বলতে বলতে বাচ্চাগুলো মনের আনন্দে চকলেট, লজেন্স, বিস্কুট খাচ্ছে।
এইভাবে কেটে গেল অনেকটা সময়। ভদ্রমহিলা মিনিট পঁয়তাল্লিশ হল লকারে ঢুকেছেন। আমি মিঃ বিশ্বাসের চেম্বারে সাড়ে চারটে নাগাদ ঢুকলাম তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, লকার কোনদিকে? তিনি জানালেন, চেম্বার থেকে বেরিয়ে লকার এরিয়ার প্রবেশ পথ ধরে সোজা গিয়ে ডানদিকে ঘুরলেই মুখোমুখি দেখতে পাওয়া যাবে একটা মানুষ সমান আয়না। আর ওই আয়নার ঠিক ডানদিকেই ভদ্রমহিলার লকার।
আমি ম্যানেজার সাহেবের নির্দেশ মত লকার এরিয়ায় গিয়ে বেড়ালের মত নিঃশব্দে সোজা চলতে লাগলাম। তারপর যেখান থেকে তিনি ডানদিকে ঘুরতে বলেছিলেন, সেখানেই ঘুরলাম, আয়না। কিন্তু নেই, ভদ্রমহিলা নেই, কোথায় তিনি?
মিনিট দশেক পর লকার এরিয়া থেকে ফিরে ম্যানেজারকে বললাম, “আমি চলি।” মিঃ বিশ্বাস আঁৎকে উঠে বললেন, “আপনি চলে যাচ্ছেন, কিন্তু আমাদের কি ব্যবস্থা হবে?” আমি তাঁকে বললাম, “আগামীকাল আপনার ওই যে মাড়োয়ারি গ্রাহক আছেন, তাঁর নাম-ঠিকানা নিয়ে আমার সাথে দেখা করবেন, দেখি কি ব্যবস্থা করতে পারি।” মিঃ বিশ্বাসকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমি ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে সোজা লালবাজারে ফিরে এলাম।
পরদিন তিনি মাড়োয়ারি গ্রাহকের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর নিয়ে আমার কাছে এলেন। সেগুলো আমায় দিয়ে জানতে চাইলেন, “কি ব্যাপার বলুন তো, আপনি ওই ভদ্রমহিলার লকারটা না নিয়ে এঁর—।”
আমি মিঃ বিশ্বাসকে থামিয়ে বললাম, “আপনি আর একবার কষ্ট করে আগামীকাল সন্ধেবেলায় আমার সঙ্গে দেখা করুন, এখন কোনও কথা নয়।” তিনি আমার কথা শুনে চলে গেলেন। তিনি চলে যেতে আমি তাঁর দেওয়া ঠিকানাটা দেখছি আর ভাবছি কি করা যায়। ভাবতে ভাবতে হাসি পেল, ঠিক করলাম, কি আর করব, বাজারে আমার নামে চলতি যে দুর্নামটা আছে তাই ব্যবহার করে একটা লকার খালি করাব। অন্য কোন উপায় তো নেই। দেরি না করে আমি পরদিনই সকালে সেই মাড়োয়ারি ভদ্রলোককে ডেকে এনে সোজাসুজি বললাম, “আলিপুর পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে যে লকারটা আপনার আছে সেটা ছেড়ে দিতে হবে।” তিনি বিনীতভাবে জানতে চাইলেন, “কিন্তু আমার কি কসুর?” গম্ভীরভাবে বললাম, “কোন কসুর উসুর নয়, এটা আমার অনুরোধ, দরকার হলে ওই ব্যাঙ্ক থেকে আপনাকে ছোট ছোট দুটো লকার দেওয়া হবে। আর একটা কথা বলছি আপনার ওই ব্যাঙ্কের সাথে যেমন লেনদেন চলছে সেটাও বন্ধ করবেন না।” আমার কথা শুনে ভদ্রলোক কি বুঝলেন জানি না, মনে মনে নিশ্চয়ই আমার বাপান্ত করলেন। তবে মুখে বললেন, “ঠিক আছে সাব, আপনি যখন বলছেন তখন আমি ছেড়ে দেব, আজই ছেড়ে দেব।” আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে তিনি চলে গেলেন।
সেদিনই সন্ধেবেলা মিঃ বিশ্বাস মুখে একগাল হাসি ঝুলিয়ে আমার কাছে এলেন। বললেন, “সমস্যা মিটে গেছে, আপনি এমন ধমকেছেন সেই মাড়োয়ারি ভদ্রলোককে যে তিনি লকার ছেড়ে দিয়েছেন।” বললাম, “ধমকেছি? কই না তো।” মিঃ বিশ্বাস বললেন, “কেন তিনি তো কাঁপতে কাঁপতে আমাকে গিয়ে আপনার নাম করে বললেন, ওনাকে কেন বলতে গেলেন, আমাকে বললেই তো আমি লকার ছেড়ে দিতাম। তাই ভাবলাম, আপনি বোধহয় ওকে ধমকেছেন।” আমি চুপ করে শুনে বললাম, “আপনার কাজ হয়ে গেছে তো? ওসব ছেড়ে দিন। আর একটা কথা, ওই ভদ্রমহিলাকে বিরক্ত করবেন না।” মিঃ বিশ্বাস বললেন, “ব্যাপারটা কিছু বুঝলাম না, ভদ্রমহিলার লকারটা নিলেই ভাল হত, আমাদের ফালতু একটা কাজের চাপ কমত। তার ওপর আবার বলছেন তাঁকে যেন বিরক্ত না করি। কিন্তু কেন তা একটু বলবেন?” মিঃ বিশ্বাসের প্রশ্নে একটু রাগ হল, সেই সুরেই বললাম, “হ্যাঁ, ঠিকই বলেছি, বিরক্ত করবেন না।”
মিঃ বিশ্বাস আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন, আমি বলতে শুরু করলাম, ‘শুনুন, সেদিন যখন আপনাদের লকার এরিয়ায় সোজা গিয়ে ডান দিকে ঘুরে আয়নার দিকে তাকাই, দেখি ওই বিধবা ভদ্রমহিলা নেই।” মিঃ বিশ্বাস বিস্ফারিত চোখে প্রশ্ন করলেন, “নেই?” আমি বললাম, “না, নেই। উধাও।” মিঃ বিশ্বাস বলে উঠলেন, “তার মানে?” বললাম, “তার বদলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন প্রচণ্ড দামী লাল টুকটুকে বেনারসী শাড়ি পরা, সর্বাঙ্গে গয়না মোড়া এক মহিলা।” মিঃ বিশ্বাস প্রায় চিৎকার করে বললেন, “মহিলা?” বললাম, “হ্যাঁ, মহিলা। তিনি আয়নায় নিজেকে দেখছিলেন। আমার প্রতিবিম্ব আয়নায় পড়তেই তিনি ঘুরে তাকালেন। আমাকে দেখতে পেয়েই ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন। আমি আশ্চর্য হয়ে তাঁকে দেখছি, ভাবছি, আমি ঠিক দেখছি তো? ইনি কি সেই বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা? বেনারসী শাড়ি জড়িয়ে সারা গায়ে প্রচুর ভারি ভারি সোনার গয়না পরে, কপালে বড় সিঁদুরের টিপ এঁকে ঠিক নববধূর সাজে সজ্জিত হয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।” মিঃ বিশ্বাস ধৈর্যচ্যুত হয়ে প্রশ্ন করলেন, “তারপর?”
আমি বললাম, “আপনি আমায় বলেছিলেন বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা হাতে একটা ছোট রূপোর কৌটো নিয়ে আসেন। দেখলাম সেটা হাতে ধরা। আমি আস্তে সেই কৌটোটা নিয়ে খুলে দেখলাম তাতে রয়েছে সিঁদুর। বৃদ্ধা ভদ্রমহিলার ওই সাজ দেখে আমি নিজেই হতভম্ব, কৌটোটা ফেরত দিতে তিনি খুব নিচু স্বরে আমায় বললেন, তোমার ব্যাঙ্কের কাউকে আমার এই লজ্জার কথা বোল না, বাবা। আমিও গলা নামিয়ে জানতে চাইলাম, কিন্তু কেন? তিনি কাঁদতে কাঁদতে ধীরে ধীরে বললেন, আমার বাবা আমাকে চোদ্দ বছর বয়সে বিয়ে দিয়েছিলেন, আর বিয়ের রাতেই আমার স্বামী মারা যান। তারপর থেকে আমি এখানে। আমি তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, ঠিক আছে, আপনি আসবেন, ব্যাঙ্কের কেউ কোনদিন আপনাকে বিরক্ত করবে না। আর সেখানে না দাঁড়িয়ে আমি সোজা চলে এসেছিলাম আপনার কাছে। তাই আমার অনুরোধ তাঁকে আপনারা বিরক্ত করবেন না। তাঁর নিঃস্ব জীবনে মাঝেমধ্যে বিয়ের রাতের সাজে নিজেকে দেখে যদি একটু সান্ত্বনা পান, ক্ষতি কি? সেটা যদি আপনারা ছিনিয়ে নেন, তা কি খুব ভাল হবে?” মিঃ বিশ্বাস এতক্ষণ আমার কথা শুনছিলেন, প্রশ্ন শুনে বলে উঠলেন, “না-না।” আমি বললাম, “দেখুন, বাড়িতে নিশ্চয়ই কোনও অসুবিধা আছে, আর তাছাড়া, যত গয়না দেখলাম সেগুলো বাড়িতে রাখাটা নিরাপদও নয়। তাই তিনি আপনাদের ব্যাঙ্কটা বেছে নিয়েছেন।” মিঃ বিশ্বাস আমার হাত ধরে বললেন, “আমি কথা দিচ্ছি, আমাদের ব্যাঙ্কের কেউ কোনদিনও আর তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে না।” বললাম, “আর একটা অনুরোধ আপনাকে করছি, এই ঘটনার কথা কিন্তু আপনি কাউকে বলবেন না, পাঁচকান হক সেটা আমি চাই না। ওই ভদ্রমহিলার সম্মান রক্ষা করাটা এখন আপনার হাতে।” মিঃ বিশ্বাস দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, “আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আমার দ্বারা তেমন কোন কিছুই হবে না।” মিঃ বিশ্বাস চলে গেলেন, কিন্তু আমার স্মৃতির গুহা থেকে ওই মাতৃপ্রতিম দুর্গাপ্রতিমা কোন দিনও যান নি!