শুভেচ্ছা বক্তব্য
গত কয়েক বছর থেকে দেশে আবৃত্তি চর্চার চেহারা খুব প্রানবন্ত হয়ে উঠেছে। পালে লেগেছে অনুকূল হাওয়া। তরতর কোরে না ছুটলেও আবৃত্তি চর্চার নৌকাখানা আর চড়ায় আটকে নেই। নেই আগের সেই গা-এলানো, যাত্রা ঢঙের প্রলম্বিত গতি। প্রচুর নিবেদিত কর্মী আর সংগঠন এখন চর্চার নোতুন নোতুন স্রোত হয়ে এসে সৃষ্টি করেছে একটি বড় ধরনের মূল স্রোত।
কেউ কেউ বোলে থাকেন যে কবিতা আবৃত্তির জিনিশ নয়, তা নিভৃত পাঠের বিষয়। একান্ত আস্বাদনই কবিতার চূড়ান্ত লক্ষ্য। উপরের বক্তব্যটির সাথে আমার দ্বিমত রয়েছে। কবিতা একই সাথে নিভৃত আস্বাদন ও উচ্চারনের। একটি কবিতা উচ্চারনের মধ্য দিয়ে, আবৃত্তির মধ্য দিয়ে তার আবেগ, অভিব্যক্তি ও অন্তর্নিহিত ভাবের প্রকাশ ঘটায় এবং তা খুব সহজেই শ্রোতার হৃদয়ে স্থান লাভ করে। তবে এক্ষেত্রে একটি বিপদও আছে— যদি কবিতার সঠিক আবেগ, অভিব্যক্তি আবৃত্তিকার চিহ্নিত করতে না পারেন তবে শ্রোতার কাছে কবিতাটির মৃত্যু হতে পারে। কবিতার আবৃত্তি প্রসারিত করে কবিতার সীমানা। কবিতার পাঠক নয়, এমন অনেকেই আবৃত্তির মাধ্যমে গ্রহন করতে পারেন কবিতার ঘ্রান। কবিতার বই-এর মতো ক্যাসেট-গ্রন্থ প্রকাশিত হতে পারে কবির নিজের কন্ঠের আবৃত্তি নিয়ে অথবা আবৃত্তিকারের কন্ঠে
ভিডিও, টিভি, সিনেমা ও ক্যাসেট আমাদের পাঠাভ্যাসের মূলে কুঠারাঘাত করেছে। উন্নত প্রযুক্তির দেশে শিক্ষা ক্ষেত্রেও পাঠ-এর পরিমান কমে এসেছে। আক্ষেপ না-কোরে দ্যাখাই যাক না— নোতুন মাধ্যমগুলোকে কতোখানি ব্যবহার করা যায় কবিতার পক্ষে। কবিতা তো এক সময় গীত হয়েছে। কবিতা— সাহিত্যের সুপ্রাচীন এই মাধ্যমটি একা একাই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজও অম্লান। নোতুন প্রযুক্তির সমাজেও সে তার স্থান স্থির কোরে নিয়েছে। আবৃত্তি তার জন্যে নোতুন কিছু নয়। তবে আবৃত্তিকারকে অবশ্যই সঠিক ভাবে কবিতাটির ভেতর বাহির চিহ্নিত করতে হবে। চিনতে হবে ভাবের অলিগলি রাজপথ। কবিতার উচ্চারনে মুখরিত হোক চারিপাশ।
২৭ জোষ্টি ১৩৯৫