যেখানে নরকে গোলাপ
তলপেটে স্পর্শ রাখতেই ব্যথার একটা অনুভূতি প্রবলভাবেই যেন জাপটে ধরে রহিমাকে। গত রাতের তিক্ত ঘটনাটাই বার বার নাড়া দিয়ে যায় ওর চেতনায়। এ রকম অমানুষ আগে কখনো দ্যাখেনি রহিমা। জ্বলন্ত বয়সে ওর এখন নিষ্প্রভতা। শরীরের প্রতিটি ভাঁজে যে যৌবনের লাবন্য ছিলো তা যেন আজ মলিন হয়ে গেছে। পার্কের পুরোনো পাঁচিলটার মতোই যেন ওর যৌবনের সুডৌল পলেস্তারা খসে পড়েছে।
সেসব কথা ভাবতে রহিমার আজো পুলক অনুভব হয়। যখন ও ওর পুরুষ্ট নিতম্বে মোহময় ঢেউ তুলে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতো, তখন চলাচলকারী প্রত্যেককেই অন্তত একবার তাকাতেই হতো ওর টেনিস বলের মতো উঁচু বুকটার দিকে। গর্বে ওর বুক আরো কয়েক ইঞ্চি স্ফীত হতো। ইচ্ছে করেই আঁচলটা সরিয়ে দিতো বুক থেকে।
একদিনের কথা ওর স্পষ্ট মনে পড়ে। যেখানটায় ও আগে থাকতো। পার্কের উত্তর পাশে সিনেমা হলটার সামনে থেকে পশ্চিম দিকে সামান্য এগিয়ে গেলেই রেজিস্ট্রি অফিস। অফিসটাকে বাঁয়ে রেখে উত্তর দিকে সোজা কিছুদূর এগুলেই রূপসা নদী। ডানদিকে সদর হাসপাতাল। হসপিটাল ঘাট থেকে একটু সামনেই একটি সরু গলির ভেতরেই ওর আস্তানা ছিলো।
সেদিন স্নান করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না মোটেও রহিমার। গড়িমসি কোরে বেলা গড়িয়ে গেলে ওর মাসিমার বকাবকিতে শেষ পর্যন্ত ওর স্নান করতে না গিয়ে উপায় ছিলো না। মাসিমা ওর আপন নয়। আশ্রয় দিয়েছেন রহিমাকে। ওকে আশ্রয় দেওয়ার পর থেকেই মাসিমা বেশ পয়সার মালিক হয়েছেন। ঝাঁঝালো স্বরেই বলেছিলেন “রাতে তো একা ঘুমাস নি যে স্নান করবি না। গাড়ল কোথাকার। ও সবের পর স্নান না করলে অসুখ করতে কদিন।” বেশ অনেকদিন শহরে থাকার ফলে মাসিমার কথায় এখন আঞ্চলিক টানটা আর বোঝা যায় না।
গামছাটা কাঁধে ফেলে শ্লথ পায়ে ঘাটের দিকে এগোয় রহিমা। বাঁধানো নদীর ঘাটের ওপরে বসার জন্য ভালো ব্যবস্থা আছে। ওখানে চার পাঁচটা ছেলে ব’সে গল্প করছিলো। রহিমার মতো এরকম সুদর্শনা মেয়ের টইটুম্বুর বয়স দেখলে কার না রক্তে আগুন লাগে। ও ছেলেগুলো তো ছার। ওকে দেখতেই ছেলেদের মধ্যে থেকে অশ্লীল উক্তি আসতে লাগলো। রহিমা মাথা নিচু কোরে ওদের পাশ কাটিয়ে জলের দিকে নামতে গেল। হঠাৎ একটা ছোট্ট ঢিল এসে লাগলো ওর নিতম্বে। চমকে পেছনে তাকাতেই ছেলেগুলো হো হো কোরে হেসে উঠলো।
রহিমা চুপচাপ জলের কাছে বসে পড়লো। হঠাৎ ওর মাথার দুষ্টু বুদ্ধি খেলে। ছোকড়া কটাকে আচ্ছামতো নাচিয়ে ছাড়বে। ডাঙায় বসা অবস্থাতেই শরীরের উপরের অংশের শাড়ী খুলে ফেল্লো ও। পেট-কাটা ছোট ব্লাউজ। ওসব মাসীমার নির্দেশ মতোই বানানো।
কোমরজলে নেমে ব্লাউজের বোতামে হাত দিলো। পেছনে ছেলেগুলো জোরে জোরে হাততালি দিচ্ছে আর কী সব বলছে চিৎকার কোরে। পট পট বোতাম খুলে ফেল্লো। আর একধাপ নামলো জলের মধ্যে। গলা জলে নেমে ঘুরে দাঁড়ালো ডাঙার দিকে। ছেলে কটির কী উল্লাস! শরীরটাকে সামান্য জলের উপর তুলতেই ছেলে কটি চিৎকার কোরে ওঠে ‘আরেকটু বের করো!’
রহিমার মাঝে যেন একরকম গর্ব জাতীয় অহংকার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ওদের উত্তেজিত করার মাঝে ও এক ধরনের সুখ খুঁজে পায়। পরিনতির কথা একবারও মনে পড়ে না ওর।
জল থেকে উঠে এ-পাশ ও-পাশ কোরে কাপড়টা নিংড়ে নিয়ে পরে। ঘাট থেকে উঠে আসার আগে পা দুটি সামান্য জলে ধুয়ে ধীরে ধীরে উঠে আসতে থাকে ওপরে। ভিজে শাড়ী শরীরে লেপ্টে গিয়ে ওকে আরো বেশি লোভনীয় মনে হয়। সমস্ত যৌবনটা ওর ভিজে শাড়ীর মাঝে জ্বলতে থাকে।
ছেলেগুলো দাঁড়িয়ে পড়ে। কী যেন আলাপ হয় নিচু স্বরে। রহিমা জনান্তিকে গর্বে বিহ্বল। ওপরে উঠে আসার সাথে সাথেই ওদের ভেতর একজন ওর ডান হাত ধ’রে ফ্যালে। ওকে কিছু বুঝবার সুযোগ না দিয়েই আরেকজন ওর মুখ চেপে ধরে। পাঁজকোলে তুলে নিতেই হাত-পা ছুঁড়তে থাকে রহিমা। ঘাটটি এমনিতেই নির্জন তার ওপর পড়ন্ত বেলা। মোড়ের দোকানি দোকান থেকে মুখটা বাড়িয়ে মৃদু হাসে। পাড়ায় প্রায় সকলেই জানে রহিমার সব। ওভাবেই ওকে ওরা নিয়ে যায় ওদের ক্লাব ঘরে। ঘরটার জানালা দরোজা সব বন্ধ কোরে দিয়ে ওকে ছেড়ে দেয়। আবছা অন্ধকারে রহিমার মুখে স্পষ্ট একটা আতংকের ভাব পরিলক্ষিত হয়। চিৎকার করার সাহস হারিয়ে ফেলে ও। ভিজে কাপড়েও ও প্রচুর ঘামতে থাকে।
একে একে ওরা ঝড় হয়ে নেমে আসে রহিমার যৌবনের নদীতে। প্রথম প্রথম তেমন লাগেনি কিন্তু শেষ অবধি ওর ধৈর্যের বাঁধে ফাটল ধরে। রক্তে কাপড়টা ভিজে যায়। কপালটা কুঁচকে যায় ওর ব্যথায়। কিছুই বলতে পারে না। অজ্ঞানের মতো প’ড়ে থাকে। ছেলেগুলো বেরিয়ে যায় হাসতে হাসতে। ব্যথিত যৌবন নিয়ে রক্তাক্ত প’ড়ে থাকে রহিমার কোমল দেহ।
জ্বরের ঘোরে সারারাত প্রলাপ বকে ও। মাসীমা জানতে পেরে ওকে ঘরে তুলে এনেছিলো। এজন্য তার এতোটুকু উদ্বেগ নেই কারন সে জানতো রহিমার এ-দেহের লোভ সহজে কেউ সামলাতে পারবে না। তবে কদিন খদ্দেরদের ফিরিয়ে দিতে হবে ভাবতেই মনটা কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়। প্রকাশ্যে তিনি কিছুই বলেন না।
.
ছেলেটি কেঁদে উঠতেই পাশ ফিরে শোয় রহিমা। ব্যথায় সমস্ত শরীরটা ঝাঁ-ঝাঁ কোরে ওঠে। চিন্তায় ছেদ পড়ে রহিমার। চুপসে যাওয়া স্তনটা মুখে পুরিয়ে দিয়ে আদোর করে ছেলেটিকে। এটি তার সবচেয়ে বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একারই খাওয়া চলে না তার ওপর আরেকজন। ছেলেটা যে কার মতো দেখতে রহিমা ঠিক জানে না। কখনো মনে হয় পরেশের মতো, কখনো আবার সেলিম সাহেবের মতো মনে হয়। গলা টিপে ওকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করে রহিমার। কিন্তু পারে না। হাতটা কেঁপে ওঠে। সাহসে বিপর্যয় নামে।
যখন ছেলেটি হাত-পা ছুঁড়ে খেলা করে দেখতে ভালোই লাগে ওর। অন্য দুটো মা-র মতো ওরও তখন ইচ্ছে হয় ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে। অনেক কিছু ভাবতে ইচ্ছে হয়।
বারবার ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করে এই জীবনটাকে। যৌবনের চরম উন্মত্ততায় কেন যে ও এ-পথে পা দিয়েছিলো আজ ভাবতে শিউরে ওঠে ও। মাসীমাকে এখন পেলে হয়তো ও কৈফিয়ৎ চাইতো কেন সে এ-পথে নিয়ে এলো তাকে। কিন্তু সে-পথ মাসীমা রেখে যায়নি। অনেক আগেই সব দেনা পাওনা চুকিয়ে দিয়ে সরে পড়েছে এ পৃথিবী থেকে।
রহিমার ডুকরে কাঁদতে ইচ্ছে করে ভী-ষ-ন কাঁদতে ইচ্ছে করে।
.
অনেকক্ষন হলো সন্ধা হয়েছে। আজ এখনো কেউ আসছে না। সারাদিন পেটে দানা পানি পড়েনি। রহিমা যেন হাঁফিয়ে ওঠে। ছেলেটি শুকনো মাই শুষে শুষে ক্লান্ত হয়ে ঝিমিয়ে পড়েছে। ছেলেটি হবার পর থেকেই রহিমার ভাগ্যে দুর্যোগ নেমে এসেছে। সহজে কেউই আসতে চায় না। একান্ত যখন অন্য কোথাও না হয় তখন ওর কাছে আসে, তাও যা দাম দেয় তা ভিক্ষে দেয়ারই মতো।
সেদিন কালু ওকে লাথি মেরে ঘর থেকে বের কোরে দিয়েছিলো। কালুর তৃষ্ণা ও মেটাতে পারেনি বোলে অকথ্য ভাষায় খিস্তি দিয়েছিলো। অবশ্য খিস্তিতে এখন আর রহিমাদের মতো মেয়ের গায়ের চামড়া স্পর্শ করে না। এ জীবনে ওদের ভালো কথা শুনবার অধিকার নেই হয়তো।
তাইতো কাদের সাহেবের কাছে রহিমার পাওনা টাকা আনতে গিয়েছিলো বোলে সকলের সামনে ওকে জুতো পেটা করেছিলো। অথচ একদিন রহিমার কাছে নিয়মিত আসতো কাদের সাহেব।
অনেকদিন ধ’রে পার্কের পাশের দোকানটি কেন জানি বন্ধ। ওর বারান্দাতেই আস্ত ানা পেতেছে রহিমা তার ছেলেটিকে নিয়ে। গরমের দিন তাই গায়ে কিছু না দিয়েই কোনো মতে কোথাও প’ড়ে থাকা যায়। কিন্তু আসছে বর্ষায় কোথায় দাঁড়াবে তা ভেবেই রহিমা কোনো কুল কিনারা করতে পারে না।
‘এই এদিকে আয়’
ফ্যাশ ফ্যাশে একটি কন্ঠস্বর। রহিমার মাথার পাশে দাঁড়িয়ে যে লোকটি আবছা আলোয় রহিমা তাকে চিনতে পারে না। এতোক্ষন পরে কিছুটা ভরসা পায় রহিমা। আস্তে আস্তে উঠে বসে। কাপড়টা গায়ে টেনে দিতেই লোকটি খিস্তি কেটে বলে ‘নে মাগী আর সতী সাজিসনে’ লোকটির কথা যেন শুনতেই পায় না রহিমা। ওর চোখে সামান্য আলোর ঝলক। সারাদিন পরে ছেলেটির মুখে কিছু দিতে পারবে। লোকটি নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করে ‘কতো?’
ক্লান্তভাবেই রহিমা উত্তর দেয়—’যা খুশি’
কথা না বাড়িয়ে লোকটি হাঁটতে শুরু করে। রহিমা ছেলেটিকে কোলে তুলে নেয়। ব্যথায় হাঁটতে পারে না ও। তবু ওকে যেতে হবে। এ ব্যবসায় নিজের ইচ্ছে বোলে কিছু নেই। শুধু ক্ষুধা আছে আর আছে তিক্ততা, যন্ত্রনা, পাপ।
ধীর পায়ে অনুসরন করে রহিমা লোকটিকে, যে বাড়িতে লোকটি ঢুকলো সে বাড়ি রহিমার অতি পরিচিত। বহুবার এখানে ওর পায়ের ছাপ পড়েছে। তপন বাবুর বাড়ি। উনার এ অভ্যাসটা বরাবরের। তিনটে স্ত্রী তবু তাতে তৃপ্ত নন। বয়স ষাট পার হয়ে গেছে। স্ত্রীরা প্রায়ই কেউ বাসায় থাকে না। সব নাকি আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যায়।
ছেলেটিকে নিচে শুইয়ে রেখে খাটে বসে রহিমা। তপন বাবু ওকে টেনে শুইয়ে দেয়। হেচকা টানে শাড়ী খুলে ফ্যালে। রহিমার কোনো ভূমিকা নেই। ধীরে ধীরে সব কিছু রঙিন হয়ে আসে তপন বাবুর চোখে। রহিমা কঁকিয়ে ওঠে— ‘বাবু একটু আস্তে। ভীষন ব্যথা।’
তপন বাবুর কানে ওর মর্মন্তুদ কন্ঠস্বর প্রবেশ করে না। এক সময় আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে।
টাকাটা নিয়ে অতি কষ্টে বেরিয়ে আসে রহিমা। সমস্ত শরীরে ব্যথা। ছেলেটির জন্য আট আনার বার্লি আর নিজের জন্য সামান্য ভাত ডাল কিনে দোকানের বারান্দায় ফিরে আসে রহিমা। এক পাশে ইট দিয়ে চুলো তৈরি করা। কিছু ছেঁড়া কাগজ সংগ্রহ কোরে বার্লিটুকু জ্বালায় ও। ছেলেটি খেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে।
রহিমা তাকিয়ে আছে তার জীবিকার শত্রু তারই জাতকের দিকে। মুখে ওর ভাত ওঠে না। কোনো মতে সামান্য কিছু গিলে বাসনটা ঢেকে রেখে শুয়ে পড়ে।
খানিক পরে আবার ডাক পড়ে রহিমার। অসম্মত হয় না। ওদের কামনার জলসা নিজেকে নিঃশেষ কোরে ফেলতে চায় ও। ফিরতে বেশ রাত হয়। পা চলছে না। হাঁটতে গেলে জড়িয়ে যাচ্ছে। চোখদুটো নেশাখোরের মতো ঢুলছে। মাথাটা ঝিম দিয়ে আছে রহিমার। আঁচলের কোনায় দশ টাকার একটি নোট বাঁধা। আজ অনেক আয় হয়েছে।
ধপাস কোরে বোসে পড়ে ছেলেটির পাশে। শাড়ীতে হাতের স্পর্শ লাগতেই ভিজে ভিজে মনে হয়। সামনের আলোয় একটু এগিয়ে গেলেই দেখতে পায় রক্তে ভিজে চুপসে গেছে প্রায় অধেকটা শাড়ী। মাথাটা বোঁ কোরে ঘুরে আসে। আস্তে কোরে শুয়ে পড়ে।
সহজে ঘুম পায় না। সব কিছু বিষাক্ত মনে হচ্ছে। কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। শরীরের ওপর এতো অত্যাচার হয়নি তার কোনোদিন। এমনকি সে-নদীর ঘাটের সে-দিনটিতেও না।
.
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলো রহিমা জানে না। হঠাৎ দেখতে পায় তার ছেলেটি সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মাথাটা প্রকান্ড। চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। হাত- পাগুলো দারুন সরু সরু। মুখের মাংশগুলো খ’সে প’ড়ে দাঁত বেরিয়ে আছে। আঁতকে ওঠে রহিমা। ছেলেটি কর্কশ স্বরে বলতে থাকে—
‘কেন জন্ম দিয়েছিস, পাপ, তুই মরেছিস—আমায় মারলি কেন, কেন, কেন?’
চিৎকার কোরে লাফিয়ে ওঠে রহিমা। ওর চোখে মুখে আতংকের ভয়াল ছায়া। পাগলের মতো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছেলেটির দিকে। রাস্তা জনশূন্য। লাইটপোস্টের ম্লান আলোয় সব কিছু ভৌতিক মনে হচ্ছে। রহিমা ঝুঁকে পড়ে ছেলেটির উপর, ফিস ফিস কোরে বলতে থাকে ‘তুই আমার শত্তুর, আমার শত্তুর’। প্রবল একটা আক্রোশ রহিমার মাঝে জেগে ওঠে। ও ভুলে যায় ছেলেটি তারই জাতক। যার বাবার ঠিকানা নেই সে ছেলে ওর নয়। ও শুধু বাঁচবার পথ চেনে। ওদের কামনার আগুনে রহিমা জ্বলবে যতোদিন তার দেহে এতোটুকু যৌবন থাকে। ওর সমস্ত চেতনায় উন্মত্ত ঝড়ের তান্ডব শুরু হয়।
রহিমার চোখটা জ্বলছে মার্বেলের মতো। আচম্বিতে সজোরে চেপে ধরে ছেলেটির কন্ঠনালী— সামান্য গোঙানির শব্দ হয়। বার কয়েক হাত-পা ছুঁড়ে স্তব্ধ হয়ে যায় রহিমার জাতক, তার শত্রু।
.
দূর থেকে ভেসে আসা একটি কাকের কর্কশ কণ্ঠস্বর ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না। রাত্রির বুক চিরে যেন একটি দীর্ঘশ্বাস সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে শূন্যে মিলিয়ে যায়। তারপর অনেকদিন কেটে গেছে কিন্তু রহিমাকে আর কখনো দেখা যায়নি পার্কের আশেপাশে কোথাও। সন্ধার অন্ধকারে অন্যান্য বারবনিতাদের ভিড়েও রহিমার মুখটি এখন আর চোখে পড়ে না। নাম ঠিকানাহীন যেভাবে সে হঠাৎ জীবনের এই পথে নেমে এসেছিলো ঠিক তেমনি হঠাৎ নিরুদ্দেশে নির্বাসিত হলো। এ জাতীয় অসংখ্য রহিমার সন্ধান কেউ রাখে না— কেউই রাখে না।