লা নুই বেঙ্গলী – ৮

কয়েকদিন পরে এক বিকেলে হঠাৎই আমার সঙ্গে হ্যারন্ডের দেখা। ওকে ওর স্বভাবের তুলনায় কম ছটফটে লাগছিল, কিন্তু চোখে সেই শয়তানির অভাব ছিল না।

-যা শুনছি সেটা কি সত্যি অ্যালেন? তুই কি মিঃ সেনের মেয়েকে বিয়ে করছিস?

আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। ঠাট্টা-ইয়ার্কিতে ব্যাপারটা উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করলামও। বেকায়দায় পড়লে যা আমি সচরাচর করে থাকি। হ্যারল্ড আমার ইয়ার্কিতে কোনো কানই দিলো না, বরং জানালো, সে খবরটা অফিস থেকেই পেয়েছে। একটা পিকনিক করার জন্য আমার খোঁজে ও আমাদের অফিসে গিয়েছিল। ও আরও জেনে এসেছে যে, এর জন্য আমি নাকি ধর্মত্যাগ করে হিন্দু হচ্ছি। ও নিজে গীর্জায় যেতো যুবতী মেয়েদের দেখার জন্য। বিশেষ করে সুন্দরী আইরিনকে। কিন্তু আমার ব্যাপার শুনে ওর আমার প্রতি তীব্র ঘৃণা ও লুকোতে পারলো না। হ্যারল্ড জানালো নরেন্দ্র সেন একটি শয়তান এবং আমাকে যাদু করা হয়েছে। আমায় উপদেশ দিলো গীর্জায় পাঁচ টাকা জমা দিয়ে আমার জন্য বিশেষ করে প্রার্থনার ব্যবস্থা করতে। আমি রেগে ওর সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেবো, ঠিক করলাম।

-আর সবাইকার খবর কী?

—সবাই তোর জন্য দুঃখ করে। ভবানীপুরে গিয়ে তুই বিস্তর পয়সা জমাচ্ছিস। থাকা, খাওয়ার খরচা নেই, বাইরেও বেরোস না। সারাদিন কি করিস?

–রিজিওনাল ম্যানেজারের পোস্টে অ্যাপ্লাই করবো। বাংলা না জানলে হবে না, তাই বাংলা শিখছি।

হ্যারল্ড আমার কাছে পাঁচ টাকা ধার চাইলো সন্ধ্যায় Y.M.C.A-তে বলড্যান্সে-এ যোগ দেবার জন্য।

—তুই যাবি না?—জিজ্ঞাসা করলো হ্যারল্ড।

আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা হয়নি। ওয়েলেসলী ষ্ট্রীট বা রিপন স্ট্রীটে থাকা দিনগুলোতে যে অমূল্য সময় আমি নষ্ট করেছি তা পূরণ করা আর সম্ভব নয়। আমি হ্যারল্ডকে লক্ষ্য করছিলাম। ওর কালচে মুখ, পিটপিটে চোখ, এই সেই সঙ্গী যার সঙ্গে আমি বহু সন্ধ্যা, রাত্রি নষ্ট করেছি মেয়েদের পেছনে ঘুরে। আমার বর্তমান জীবন এত শুদ্ধ আর পবিত্র যে ওকে আমার একজন অচেনা মানুষ বলে মনে হচ্ছিল। ও আমার বর্তমান ঠিকানা টুকে নিলো এবং কথা দিলো খুব শীঘ্রই আমার সঙ্গে দেখা করবে—নিশ্চয়ই কিছু টাকা হাতাবার মতলবে।

বাড়ি ফিরে এসে দেখলাম সমগ্র পরিবার চায়ের টেবিলে! মন্টু, মন্টুর বৌ লীলু, খোকা আর তার দুই বোন যাদের আমি কদাচিৎ দেখেছি। হ্যারন্ডের সঙ্গে আমার কথাবার্তা ওদের আমি অকপটে জানালাম, এবং এই শহরে অন্যান্য ইওরোপীয়ান এবং অ্যাংলো ইন্ডিয়ানরা যে জীবনযাত্রা নির্বাহ করে, যে জীবন আমি নিজেও কাটিয়েছি, তার প্রতি আমার বিতৃষ্ণার কথাও প্রকাশ করলাম। আমার কথা শুনে ওরা মুগ্ধ হয়ে গেল। মেয়েরা আমায় চোখ দিয়ে গিলছিল, আর দুর্বোধ্য কথ্য ভাষায় নিজেদের মধ্যে সম্ভবত আমার প্রশংসা করছিল। মন্টু তার অভ্যাস মতো চোখ বুজে আমার করমর্দন করলো। একমাত্র মিঃ সেন, উৎসাহের প্রাবল্য দেখে কিনা জানি না, তাঁর অভ্যাসমত ডিটেকটিভ উপন্যাস হাতে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে রওনা দিলেন।

মৈত্রেয়ী, খোকা আর লীলুর সঙ্গে আমি ছাদের দিকে গেলাম। মাথায় একটা বালিশ দিয়ে কার্পেটে শুয়ে পড়লাম এবং আরামে সন্ধ্যার অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমার চটি আমার পায়েই ছিল। পায়ের ওপর পা শূন্যে নাড়াতে নাড়াতে একঘেয়ে লাগার জন্য আমি পাঁচিলের ওপর পা দুটো ভর দিয়ে রাখলাম। গত কয়েক মাসে আমি এদেশী ভদ্রতার রীতিনীতি অনেক শিখে ফেলেছিলাম। যেমন কারো গায়ে পা লেগে গেলে, আমাকে ঝুঁকে ডান হাত দিয়ে পা ছুঁয়ে মাথায় ছোঁয়াতে হবে, এই রকম নানান কিছু। সেই জন্যই পাঁচিলে পা রাখার সময় আমি একটু ইতস্তত করছিলাম। ঠিক সেই সময় আমার নজরে এলো লীলু মৈত্রেয়ীর কানে কানে কিছু বলছে। মৈত্রেয়ী আমায় বুঝিয়ে দিলো লীল বলছে আপনার পা দুটো খুব সুন্দর। মৈত্রেয়ীর দৃষ্টিতে ঈর্ষা আর দুঃখ দুইই মিশে ছিল। লজ্জায় এবং আনন্দে আমি লাল হয়ে গেলাম। আনন্দ, কেননা আমি নিজেকে কুৎসিত মনে করতাম আর সেজন্য আমার দৈহিক রূপের কেউ একটু প্রশংসা করলেই আমি মোহিত হয়ে যেতাম। আমি উত্তরে সঠিক কী বলেছিলাম মনে নেই। তবে এটুকু মনে পড়ছে যে আমি বলতে চেয়েছিলাম, পায়ের সৌন্দর্যের কোনো গুরুত্ব আমাদের অর্থাৎ সাহেবের কাছে অন্তত কিছুই নেই, কেননা ওটা আমাদের দেশে ঢাকাই থাকে প্রায় অধিকাংশ সময়ই।

মৈত্রেয়ী শুনে খুশি হলো।

–আমাদের এখানে কিন্তু ব্যাপারটা অন্যরকম। আমরা খালি পায়ে পা ঘষে দিয়ে আমাদের আদর জানাই। দেখুন, এই রকম……

মৈত্রেয়ী শাড়ি একটু তুলে নিয়ে নগ্ন পায়ে লীলুর দিকে এগোলো। লীলু তার পায়ের পাতা দিয়ে মৈত্রেয়ীর পায়ে চাপ দিচ্ছিল আর আলতো করে বুলিয়ে দিচ্ছিলো। মৈত্রেয়ীকে দেখে মনে হচ্ছিল একটা মানুষ চুম্বনে যে রকম তৃপ্তি পায় প্রায় সেই রকম আরাম উপভোগ করছে। শিহরণে কেঁপে কেঁপে উঠছিল। পায়ের গোড়ালি দিয়ে লীলু মৈত্রেয়ীর পায়ের ডিম অবধি ঘষছিল, আবার মাঝে মাঝে জোরে চেপে ধরছিল পায়ের তলায় নিজের পায়ের পাতা, পা দিয়ে পা জড়িয়ে ধরছিল। দুটো নারীর মধ্যে পরস্পরের প্রতি এই ব্যবহার আমার ভাল লাগছিল না। হিংসাও যে হচ্ছিল না তা নয়।

হঠাৎ মৈত্রেয়ী পা সরিয়ে নিয়ে খোকার কালো মোটা পায়ের ওপর রাখলো। আমি দেখলাম খোকার রোদে-পোড়া পীচে-ঝলসানো নোংরা পা অনায়াসে মৈত্রেয়ীর শরীরের মিষ্টি স্পর্শ পাচ্ছে। একটা কুকুরকে আদর করার সময় সে যেরকম করে, খোকার ভঙ্গি ছিল হুবহু সেই রকম। দুঃখের বিষয় সেই সময় মৈত্রেয়ীর মুখটা ছিল আমার দিকে পেছন করা। আমি দেখতে চাইছিলাম, ওই যুবকটির সঙ্গে শরীর সংযোগে মৈত্রেয়ীর ইন্দ্রিয় কতটুকু সুখ পাচ্ছে; কারণ ওর শরীরের শিহরণ আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। মাঝে মাঝেই ও প্রবল শব্দে হেসে উঠছিল ওই ইতর ক্লাউনটার ঠাট্টা- ইয়ার্কিতে। ঐ হাসির মধ্যে আমি শুনতে পাচ্ছিলাম আত্মসমপর্ণের আর দখলিকৃত হবার বাসনার নিঃশব্দ ইঙ্গিত।

অনেকবার আমি ভেবেছি শরীর দখলের এই যে পদ্ধতি এটা কি শোধরানো যায় না? রুচিপূর্ণ, সভ্য, মার্জিত এবং নিত্য নতুন। বুদ্ধি, সুক্ষ্ম চিন্তা, ভঙ্গির বিনিময়ে প্রকাশে কি বোঝানো সম্ভব নয় আত্মসমর্পণ? সবচেয়ে পাগল করা দৈহিক মিলন তার আগে কি কোনোভাবেই সম্ভব?

সেই সন্ধ্যার পর, অনেক দিন ধরেই আমার একটা অদ্ভুত হিংসা হতো প্রত্যেকটা লোকের ওপর, যারা প্রায়ই নরেন্দ্র সেনের বাড়িতে আসতেন। সুন্দর সুন্দর যুবকেরা; কেউ কবি, কেউ গায়ক– মৈত্রেয়ী যাদের সঙ্গে গল্প করতো, হাসতো। আমি মন্টু, খোকা ওদেরও হিংসা করতাম। বিশেষ করে খোকা। যে মৈত্রেয়ীর সম্পর্কে কাকা এবং সেই সুবাদে যখন ইচ্ছে ওর হাত ধরা, কাঁধ চাপড়ানো, চুল ধরে টানবার অধিকার ভোগ করতো। ওকে আমার বাস্তবিকই একজন প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে হতো। কিন্তু মৈত্রেয়ী ছিল সম্পূর্ণ উদাসীন। আমি অচিন্ত্যকেও হিংসা করতাম। ওই কবির সঙ্গে মৈত্রেয়ীর আলাপ হয়েছিল একবারই মাত্র, তার সঙ্গে ওর শুধু টেলিফোনেই কথাবার্তা হতো। অচিন্ত্যবাবুর পত্রিকা ‘প্রবুদ্ধ ভারত’-এ কবিতা পাঠাতো মৈত্রেয়ী। হিংসা করতাম এক গণিতজ্ঞকেও, যিনি খুবই কম আসতেন, কিন্তু তাঁর সম্পর্কে মেত্রেয়ীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা আমার মনে জ্বালা ধরিয়ে দিতো। মৈত্রেয়ী স্বীকারও করেছিল যে বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতি ওর একটা দুর্বলতা আছে। তবে সবচেয়ে হিংসা করতাম ওর এই গুরু, বন্ধু, পথপ্রদর্শক কবি রবীন্দ্রনাথকে। ওকে একদিন যতখানি সূক্ষ্মভাবে সম্ভব বলেও ছিলাম যে ও এইভাবে আত্মসত্তা বিকিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ও এত সরলভাবে বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকালো যে আমি বাধ্য হলাম পিছিয়ে আসতে।

মৈত্রেয়ীর সঙ্গে খোকার সেই আচরণ আমাকে অনেকদিন ধরে পীড়া দিয়েছিল। সেই সন্ধ্যার কথা ভাবতাম আসন্ন সন্ধ্যার আকাশে একটা দুটো করে ফুটে ওঠা তারাগুলো দেখতে দেখতে। ওদের কথাবার্তা কথ্য বাংলায় চলার ফলে অতি সামান্যই আমি বুঝতে পারতাম। তাছাড়া—মৈত্রেয়ীর হাসিই আমাকে সবচেয়ে বেশি বিচলিত করেছিল। খোকার প্রতিটি মন্তব্যে ওর ওই উচ্চৈঃস্বরে হাসি আর বিচিত্র মুখভঙ্গি আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। মৈত্রেয়ী আমার মনের ভাব অনুভব করতে পেরেছিল, আর সেই জন্যই সে জিজ্ঞাসা করেছিল আমি খুব ক্লান্ত বোধ করছি কি না, অবসর সময়ে অর্থাৎ অফিসের পরে ওর বাবার লাইব্রেরির ক্যাটালগ তৈরির কাজে ওকে সাহায্য করতে পারবো কি না, এবং সেই সুযোগে আমরা দুজনে যে আলাদা গল্প করতে পারবো, এই ইঙ্গিতও দিয়েছিল।

ঐ ক্যাটালগের ব্যাপারটা সম্পর্কে আমি আগে কিছু জানতাম না। শুনেছিলাম নরেন্দ্র সেনের লাইব্রেরিতে প্রায় হাজার চারেক বই আছে। পরে শুনলাম উনি সব ‘বই’-এর একটা সুশৃঙ্খল তালিকা করে ছাপিয়ে রাখতে চান, যাতে ওঁর মৃত্যুর পর উনি বইগুলো কোনো কলেজকে দান করে যেতে পারেন। তাঁর ওই পরিকল্পনা আর হাস্যকর মনে হলেও আমি সম্মত হয়েছিলাম। ও বলেছিল—বাবার সাহস হচ্ছে না আপনাকে অনুরোধ করতে। উনি ভয় পাচ্ছেন যে এতে আপনার সময় নষ্ট হবে। আমি একটা মেয়ে, কোথাও যাই না, বাড়িতে সামান্যই কাজ থাকে। তাই আমাকে …….

আমার মনে পড়ছে প্রথম সুযোগেই ভেবে চিন্তে মতামত না দেওয়ার জন্য নিজের ওপর রাগ হচ্ছিল। বুঝতে পেরেছিলাম বেশ কিছুটা সময় আমার এখানে নষ্ট হবে। তাছাড়া ভয়ও করছিল, আবার না আমাদের সেই পুরনো খেলা শুরু হয়ে যায়।

পরের দিন চা খাবার আগে দেখি লাইব্রেরির দরজায় মৈত্রেয়ী আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

—আসুন, আমি যতটুকু করতে পেরেছি আপনাকে দেখাই।

টেবিলের ওপর গোটা পঞ্চাশেক বই কাত করে সাজানো, যাতে নামগুলো সহজেই পড়া যায়। —আপনি এই পাশ থেকে শুরু করুন, আমি উল্টো দিক থেকে শুরু করছি। দেখি কোন বইটাতে এসে আমরা মুখোমুখি হই।

ওকে খুব বিচলিত লাগছিল। ওর ঠোঁট কাঁপছিল, আর প্রায়ই আমার দিকে তাকাচ্ছিল। আমি লেখবার জন্য বসলাম, কিন্তু কেবলই একটা বিপদ ঘটার পূর্বাভাস পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল আবার আমাদের মধ্যে পুরনো সম্পর্ক জেগে উঠতে চলেছে। চিন্তা হচ্ছিল, এইভাবে কি ওর হৃদয়ের গভীরে আলোকপাত করা সম্ভব হবে? খুব হালকাভাবেই আমি আমার এই অনুভূতির কথা ভাবছিলাম। লিখতে লিখতে নিজেকেই প্রশ্ন করছিলাম, আমি কি ওকে এখনো ভালোবাসি? বোধ হয় না, ওকে ভালোবাসার আমি অলীক কল্পনা করেছিলাম মাত্র। আবার বুঝতে পারলাম, ওর বন্য মোহিনী শক্তিই আমাকে আকর্ষণ করে। নিজের সম্পর্কে আমার পরিষ্কার ধারণা হয়েছিল যে আমি শুধুই মোহগ্রস্ত প্রেমিক নই! কিন্তু ঘটনাগুলোর প্রারম্ভে আমার চেতনা যখন স্বচ্ছ ছিল তখন আমার এই সব কিছু মনে হয়নি। মনে হয়েছিল এটাই বাস্তব।

অন্যমনস্ক হয়ে একটা বই নিতে গিয়ে হঠাৎ আমার হাত মৈত্রেয়ীর হাতের ওপর পড়লো। আমি দ্রুত হাত সরিয়ে নিলাম।

—আপনি কোন বই অবধি এলেন?

আমি ওকে বইটা দেখালাম। ঠিক ওই বইটার আগের বই অবধিই ও এসেছিল। বইটা ছিল Wells- ‘Tales of the unexpected’ |

ও যুগপৎ বিস্মিত এবং আনন্দিত হলো। বললো, দেখেছেন! নিশ্চয়ই কোনো অদৃশ্য শক্তি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে।

উত্তরে আমি মৃদু হাসলাম। বাস্তবিক আমিও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম এই আকস্মিকতায়। টেবিলের ওপর রাখা বইগুলোর নামগুলো থেকে ইচ্ছে করলে অর্থ বার করা যেতেই পারে। যেমন ‘স্বপ্ন’ ‘আমাকে তোমার সঙ্গে নাও’ ‘সাহায্যার্থে’ ‘কিছুই নতুন নয়’ ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি এমন একটা উত্তর ভাবছিলাম যার একাধিক অর্থ হতে পারে, কিন্তু সেই সময় ছবু আমাদের চা খেতে যাবার জন্য ডাকলো। খুব ভালো লাগছিল। আমরা পরস্পরের দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলাম।

চা খেতে বসে আমি দারুণ উৎসাহে কৃষ্ণ ও বৈষ্ণবধর্ম সম্পর্কে বলতে শুরু করলাম। আমি এত আন্তরিকতার সঙ্গে চৈতন্যদেবের জীবন ও বিশ্বাস সম্পর্কে বলছিলাম যে মিসেস সেন আমার কাছে এসে বসলেন। ক্রমশ তাঁর চোখ জলে ভরে এলো।

–তোমাকে একজন প্রকৃত বৈষ্ণব মনে হচ্ছে।

এই প্রশংসায় আমার যে কী আনন্দ হলো তা ভাষায় বর্ণনা করতে পারবো না। আমি উত্তর দিলাম, বৈষ্ণব ধর্মকে আমি সব ধর্মের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মনে করি। এই মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই একটা বিতর্ক শুরু হলো। মন্টুই আমার সঙ্গে তর্ক করতে শুরু করলো। মৈত্রেয়ী মনোযোগ দিয়ে শুনছিল, তারপর হঠাৎ সে বলে উঠলো—তোমরা ধর্ম সম্পর্কে কি জানো?

প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল মৈত্রেয়ী। আমি হতভম্ব হয়ে গিয়ে কী উত্তর দেবো বুঝতে পারছিলাম না। মন্টু ওকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো। মৈত্রেয়ী দৌড়ে লাইব্রেরির দিকে চলে গেল। আমি স্তব্ধ হয়ে চা শেষ করলাম।

সবাই কেমন চুপ করে গেল। আমি আমার ঘরে ফিরে গেলাম। কয়েকটা চিঠি লেখার ছিল, সেগুলো নিয়ে বসলাম। কিন্তু মন বসলো না। একটা অস্থিরতা আমায় কষ্ট দিচ্ছিল; মনে হলো মৈত্রেয়ীর সঙ্গে কথা বলা দরকার। আমি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলাম।

সেদিনটা ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমার ডায়েরির অংশ তুলে দিলাম :

আমি ওকে দেখলাম চোখের জলে বিপর্যস্ত অবস্থায়। আমি বললাম, আমাকে এখানে আসতে বলা হয়েছে বলেই এসেছি। এ কথায় ও খুবই আশ্চর্য হয়ে গেল। আমি পাঁচ মিনিট সময় চাইলাম যাতে আমার চিঠিটা শেষ করে আসতে পারি। ঘর থেকে ফিরে এসে দেখলাম টেবিলের সামনে একটা আরাম চেয়ারে বসে ও ঘুমচ্ছে। আমি ওকে জাগালাম, ও চোখ বড় বড় করে জেগে উঠলো আমি ওকে এক দৃষ্টিতে লক্ষ্য করতে থাকলাম। ও বেশ উপভোগ করছিল আমার দৃষ্টি। মাঝে মাঝে শুধু জিজ্ঞাসা করছিল, কী হলো? কী হলো?

তারপর একসময় চুপ করে আমার চোখে চোখ রেখে বসে রইলো। মন্ত্রমুগ্ধের মতো, রহস্যময় এক স্নিগ্ধ, মিষ্টি শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে আমরা বসে রইলাম। সেই সময় আমার মনের মধ্যে কী হচ্ছিল তা আমার পক্ষে বর্ণনা করা অসম্ভব। দেহ মনে এক তীব্র উত্তেজনা বোধ করছিলাম, কিন্ত তা ছিল কোনোরকম যৌন-চেতনা বোধের ঊর্ধ্বে। এক স্বর্গীয় আনন্দের জগতে বিচরণ করছিলাম আমি। প্রথমে দৃষ্টিই যথেষ্ট ছিল, তারপরে হাতে-হাত রাখলাম আমরা। চোখের মিলনে ছেদ ঘটলো না। জোরে চেপে ধরলাম, আবার আদরে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলাম ওর দুটো হাতে। (আমি কিছুদিন আগেই প্রেম সম্পর্কে চৈতন্যদেবের ধারণা পড়েছিলাম, আর তাইই ব্যক্ত করতে চাইছিলাম)। খুব স্বাভাবিকভাবেই আমি ওর হাতে চুম্বন করলাম। ও আনমনে নিজের ঠোঁট কামড়াচ্ছিল প্রবল উত্তেজনায়, কিন্তু তাও ছিল অতি পবিত্র। আমার প্রচন্ড ইচ্ছে করছিল ওর মুখে চুম্বন করতে, কিন্তু অনেক কষ্টে আমি নিজেকে সংযত রেখেছিলাম। আমাদের অবস্থানটাও খুব নিরাপদ ছিল না। সিঁড়ি দিয়ে নামার পথে যে কেউ আমাদের দেখতে পাবার সম্ভাবনা ছিল। ওকে আমি একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম আমাদের মিলনে বাধা কিসের। ওর একটা শিহরণ দেখা দিলো এই প্রশ্নে। আমি ওকে রাগিয়ে দেবার জন্যে কবির শেখানো মন্ত্র দুবার উচ্চারণ করতে বললাম যাতে ওকে কোনো অশুচিতা স্পর্শ না করতে পারে। ও আমার কথা শুনলো, কিন্তু শুনে ওর কোনো ভাবান্তর ঘটলো না। পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম যে যা ঘটেছে তা প্রেম, দৈহিক পবিত্রতা বজায় রেখেও তা প্রেমই।

আমার স্পর্শ এবং দর্শন দিয়ে অতিপ্রাকৃত স্তরে পৌঁছনোর অভিজ্ঞতা হলো। দুঘন্টা ধরে চলেছিল আমাদের এই অভিজ্ঞতার পর্ব। স্থির বিশ্বাস জন্মেছিল যে কোনো দিন, যে কোনো সময় আমরা আবার ওই খেলায় মগ্ন হতে পারবো।

এরপর ও আমায় অনুরোধ করলো চটি খুলে ওর পায়ে পা ঠেকাবার জন্য। আমি জীবনে ভুলতে পারবো না আমার সেই প্রথম স্পর্শের অনুভূতি। এই স্পর্শ আমাকে ভুলিয়ে দিলো আমার সব হিংসা, সবার প্রতি আমার ঈর্ষা, যার জন্য এতদিন আমি ভিতরে ভিতরে কষ্ট পাচ্ছিলাম।

আমি বুঝতে পারছিলাম মৈত্রেয়ী ওর পায়ের পাতা, ওর পা সমর্পণের মধ্য দিয়ে ও নিজেই আমার কাছে আত্মসমর্পণ করছে। সেই মুহূর্তে ভুলে গেলাম ছাদের সেই ঘটনা। মনে হলো এই প্ৰথম, শুধু আমাকেই ও এই সৌভাগ্য প্রদান করলো। আমি পায়ের পাতা ওর হাঁটুর পেছন অবধি তুলে দিয়ে সেই মায়াময় কোমলতা, উষ্ণতা অনুভব করলাম। মনে মনে ভাবলাম আমিই প্রথম পুরুষ যে অতখানি স্বাধীনতা ভোগ করলো। পা দিয়ে ওর পা জড়িয়ে ধরলাম। এইভাবে যে আমরা কতক্ষণ সময় কাটালাম তা বলতে পারবো না। মনে করতে পারি না সেই সময়ে আর কিছু করেছিলাম কিনা, তবে মৈত্রেয়ীর মনের স্বরূপ আমি অনুধাবন করতে পারলাম। ছ-ছটা মাস আমি অর্থহীন জেদে হারিয়ে ফেলেছি। আজ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম ও আমার সম্পূর্ণ অধিকারে।

আমি যে ওকে ভালোবাসি একথা হয়ত ওকে স্পষ্ট করে জানাইনি, কিন্তু আমার মনে হতো আমাদের দুজনের অনুভূতির কাছেই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ সুস্পষ্ট ছিল। ওর প্রত্যেকটা ভঙ্গির মধ্যেই আমি খুঁজে পেতাম সমব্যাথিত্ব, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসার এক নিঃশব্দ বাণী। আমি বিশ্বাস করতাম না যে ও আমাকে ভালোবাসে না এবং ওর প্রতি আমার ভালোবাসায় ওর আস্থা নেই। তাই যখনই ও সামান্য অন্যরকম ব্যবহার করতো বা আমাদের মিলনের কথা বললেই মুখে হাত চাপা দিতো, কিম্বা গুরুতর অবস্থায় চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে চুপ করে থাকতো, আমি দুশ্চিন্তার শিকার হতাম। এসব সত্ত্বেও আমার মনে হতো ওর পরিবারবর্গের সঙ্গে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তায় মৈত্রেয়ীও যোগ দিতো এবং তাদের উৎসাহিত করতো।

একদিন আমি যখন বললাম যে ওকে আমি ভালোবাসি, ও তখন দুহাত দিয়ে চোখ ঢাকা দিলো। আমার কথার প্রতিক্রিয়া যে কি হলো আমি সঠিক বুঝতে পারলাম না। আমি যখন উষ্ণ আন্তরিকতা নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম বাংলায় কয়েকটা ভালোবাসার কথা বলার জন্য, ও উঠে পড়লো। আমাকে একজন সদ্য পরিচিতের মতো ভাব দেখিয়ে বললো-আমায় ছেড়ে দিন। আমি বুঝতে পারছি আপনি আমায় ঠিক বুঝতে পারেননি। আমি আপনাকে ভালোবাসি বন্ধুর মতো, একজন ভীষণ প্রিয় বন্ধুর মতো। আমি আপনাকে অন্যভাবে দেখতে পারি না। আর দেখতে চাইও না….

—কিন্তু মৈত্ৰেয়ী, এখন আর এটা নিছক বন্ধুত্ব নয়, এটা ভালোবাসা, প্রেম…

আমি হঠাৎই আমার উপস্থিত বুদ্ধি ফিরে পেয়েছিলাম।

—আত্মা, মন অনেক রকম ভালোবাসার অস্তিত্ব স্বীকার করে

—সত্যি কথা। কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকে আমার প্রেমিকা হিসেবে পেতে চাই। তুমিও তা জানো। আর এটা থেকে তুমি নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছো কেন? আমরা পরস্পরকে ছেড়ে থাকতে পারবো না। এই সত্য ঢাকবার জন্য আমরা নিজেদের যথেষ্ট যন্ত্রণা দিয়েছি। আমি তোমায় ভালোবাসি মৈত্রেয়ী, আমি তোমায় ভালোবাসি।

আমি কথাগুলো বলছিলাম একটা বাংলা বাক্যের সঙ্গে পাঁচটা ইংরেজী বাক্য মিশিয়ে।

—আপনার নিজের ভাষায় কথাগুলো আবার বলুন।

এলোমেলোভাবে মাথায় যে ভাবে এলো, কথাগুলো আমি ফরাসীতে আবার বললাম। সন্ধ্যা পার হয়ে গিয়েছিল অনেক আগে। সবে ঘরে আলো জ্বালা হয়ে গিয়েছিল। লাইব্রেরিতেও আলোর প্রয়োজন অনুভব করছিলাম। বললামও সে কথা। ও উত্তর দিলোনা ছেড়ে দিন। দরকার নেই।

-কেউ এসে পড়লে? আমাদের দুজনকে যদি কেউ এভাবে অন্ধকারে দেখে, তখন?

—বয়ে গেছে আমার। আমরা ভাই-বোনের মতো রয়েছি এখানে।

আমি না বোঝার ভান করলাম। ওকে আদর করার জন্য ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর হাত দুটো ধরলাম। ও আমায় জিজ্ঞাসা করলো—কেন তুমি মাঝে মাঝে এইরকম অবুঝ হয়ে ওঠো?

ওর কন্ঠস্বরে প্রশ্রয় আর হাল্কা হাসির আমেজ ছিল। আমি নিজের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখে উত্তর দিলাম—কারণ তুমি মাঝে মাঝেই এমন বোকামি করো, যার কোনো অর্থ হয় না।

মৈত্রেয়ী নিজের হাত দুটো আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে শুরু করলো কাঁদতে। আর তারপরে লাইব্রেরি ছেড়ে চলে যাবার উপক্রম করলো। ওকে যেতে না দেবার জন্য ওর চুলের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে খুব নিচু স্বরে ওকে আমি আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলাম। তুমি অমন করে কেঁদো না। ওকে বললাম আর ওর শরীরের স্নিগ্ধ সৌগন্ধ, কুমারী তনুর উষ্ণতায় আমার সংযম হারিয়ে যাচ্ছিল। আমি ক্রমশ ওকে আমার শরীরের সঙ্গে জোরে চেপে ধরছিলাম। আমার আলিঙ্গনের মধ্যে ও ছটফট করতে লাগলো। অস্ফুট স্বরে বলছিল না না! …ওর কথা শুনে ভয় করছিল আমার। যে কেউ ওর কন্ঠস্বর শুনে ফেলতে পারে এই ভয়ে আমি ওকে ছেড়ে দিলাম। ও কিন্তু ঘর ছেড়ে চলে গেল না। দরজার দিকে না গিয়ে ও জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। রাস্তার গ্যাসপোস্টের স্বল্প আলো ওই জায়গাটায় এসে পড়েছে। ওর চোখ, এলোমেলো চুল, কামড়ে-ধরা ঠোঁট আমার শরীরে শিহরণ এনে দিচ্ছিল। অদ্ভুত এক আতঙ্ক আর আকর্ষণ-মিশ্রিত দৃষ্টি নিয়ে ও আমার দিকে তাকিয়ে ছিল শুধু। একটা কথাও বলতে পারছিল না। আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। জড়িয়ে ধরলাম। দুহাত দিয়ে ওর মুখটা তুলে নিয়ে চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিলাম। তীব্র আবেগ আর উন্মত্ততায় দিশেহারা তখন আমি। আমি ওর ঠোটে চুমু খেলাম। ভেজা ভেজা, ফুলের মতো কোমল, আর সৌগন্ধযুক্ত এই ঠোঁট আমি কোনোদিন চুম্বন করতে পারবো ভাবতেও পারিনি। প্রথমে ও ওর নিবিড় ঠোঁট দুটিকে গুটিয়ে শক্ত করে রাখছিল, কিন্তু ক্রমশ ভেঙে গেল ওর প্রতিরোধ ক্ষমতা। পরিপূর্ণ মেলে ধরলো ওর আরক্তিম অধর। তারপরে চুমু খেলো আমার ঠোঁটে। আলতো করে কামড়েও দিলো দু-একবার। ও ওর শরীরের ভার আমার শরীরে এলিয়ে দিলো। আমি ওর সুগঠিত কোমল বুকের স্পর্শ আমার শরীরে অনুভব করছিলাম। অনুভব করতে পারছিলাম ওর সমস্ত শরীরের জ্যামিতিক বিন্যাস।

জানি না কতক্ষণ আমরা এই অবস্থায় ছিলাম। একটা সময় যেন মনে হলো, মৈত্রেয়ী হাঁপাচ্ছে। আমি ওকে ছেড়ে দিলাম। আর সঙ্গে সঙ্গে ও একটা ভগ্নস্তূপের মতো মাটিতে পড়ে গেল। আমি ওকে টেনে তোলবার জন্য নিচু হলাম, কিন্তু ও আমার পা দুটো ছুঁয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো, না না আমাকে তুমি ছুঁয়ো না। বলে আমাকে আবার নিজের মায়ের নাম, মিসেস সেনের নাম শপথ করালো। আমি চুপ করে রইলাম। তারপরে ও নিজে নিজেই উঠে পড়লো। চোখের জল মুছে, চুল ঠিকঠাক করে নিলো। কিন্তু আমাকে এড়াতে পারলো কী? এক দৃষ্টিতে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে ও ঘর ছেড়ে চলে গেল।

কী করবো। আমি আমার ঘরে ফিরে এলাম। ওকে আমি জয় করেছি। এই আনন্দ অনুভব করার সঙ্গে সঙ্গে এলো অনুতাপ এবং অনুতাপের পরে ভয়। অস্বীকার করবো না তখন এক প্রচন্ড ভয় আমাকে বিচলিত করলো। খেতে যাওয়ার আগে অবধি কিছুই করতে পারলাম না। কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারলাম না। ভাবছিলাম খাবার টেবিলে ওর দিকে চোখ তুলে তাকাবার সাহস কি আমার হবে! এখন এই মুহূর্তে ও আমার সম্পর্কে কী ভাবছে! ভয় হচ্ছিল যদি ও ওর মার কাছে অথবা লীলুর কাছে সব বলে দেয়! আমি কিছুই ঠিক করতে পারছিলাম না। মৈত্রেয়ী খাবার টেবিলে এলো. না। খাওয়ার পর লীলু আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো—আমাদের মহিলা কবি আপনাকে এই কাগজটা দিতে বলেছে।

আমার দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এক প্রচন্ড উত্তেজনা আর আতঙ্কে আমি যেন আমার হৃৎস্পন্দনের ধক্-ধক্ আওয়াজ পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি কাগজটা খুললাম। যাতে কেউ না বুঝতে পারে, সেই জন্য ফরাসীতে লেখাঃ লাইব্রেরিতে এসো সকাল ছ-টায়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *