রূপে সে কুরূপা

রূপে সে কুরূপা

পাঠক-পাঠিকাদের মধ্যে যাঁদের বয়স পঞ্চাশের কাছে, তাঁদের ঘটনাটা নিশ্চয় মনে আছে। একটি কুমারী নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বেলে দিয়েছিল।

এ ধরনের ঘটনা কলকাতা শহরে তখন প্রথম। নানা জনে নানা কথা বলেছিল। কেউ বলেছিল, হতাশ প্রেমের ব্যাপার, কেউ বলেছিল, বাপ পণের টাকা জোগাতে অক্ষম তাই নিজেকে নিঃশেষ করে মেয়েটি বাপকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল। আবার দু-একজন রসিক লোক মেয়েটি গর্ভিণী, পেটের লজ্জা লুকোতে এমন কাজ করেছে, এও বলেছে।

আসল ব্যাপারটা আমার জানা।

মেয়েটির নাম বেলা। ছা-পোষা বাপের তৃতীয় সন্তান। ভদ্রলোকের চারটি মেয়ে। বহু কষ্টে ধার-ধোর করে প্রথম দুটিকে পার করে ছিলেন, কিন্তু তিন নম্বরে এসে মোক্ষম ঠকে গেছেন, কারণ মেয়েটি কালো। সাধারণত এদেশে কালো মেয়েকে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ বলে চালাবার একটা রেওয়াজ আছে, কিন্তু এ মেয়ে সত্যি সত্যিই কালো। তবে কালো হলেও, অপূর্ব লাবণ্যময়ী, মুখশ্রী তুলনাহীন।

আমি বেলার প্রতিবেশী। সে আমাকে কাকা বলেই ডাকে। পথেঘাটে দেখা হলে বেলার বাবা আমার দুটো হাত জাপটে ধরে অনুরোধ করেন, বেলার জন্য যেন একটি পাত্রের সন্ধান করি। আমি অবশ্য তাঁকে নিরাশ করিনা।

হঠাৎ এক সুযোগ জুটে গেল। অরবিন্দ আমার বন্ধুর ভাই। তার সেজদা আমাদের কলেজের সতীর্থ। শুনলাম অরবিন্দর বিয়ের চেষ্টা হচ্ছে। যোগাযোগ করলাম। অরবিন্দর রং কালো। কাজেই ভাবলাম, কালো মেয়েতে হয়তো তার আপত্তি হবে না। ছেলেটি মার্চেন্ট অফিসের কেরানি। মাইনে ছাড়াও বাড়তি রোজগার আছে।

অরবিন্দের সঙ্গে একটি বন্ধু এল। আর আমি তো বরের ঘরের পিসি আর কনের ঘরের মাসি হিসেবে সঙ্গে রইলামই। লক্ষ করলাম, বেলা এসে সামনে বসার সঙ্গে সঙ্গে অরবিন্দর মুখ অপ্রসন্ন হয়ে উঠল।

তারপর অরবিন্দ স্পষ্ট বলেই ফেলল বেলার বাপের দিকে মুখ ফিরিয়ে, ‘আমি ভেবেছিলাম আপনার মেয়ের রং সামান্য ময়লা। কিন্তু এ যে দেখছি একেবারে বার্নিশ করা। আমাকে মাপ করবেন!’

মেয়ের বাপকে অনেক অপমানই সহ্য করতে হয়, তাই বেলার বাপ এসব গায়ে মাখলেন না। বললেন, ‘আপনারা সবাই যদি একথা বলবেন, তাহলে এদেশের কালো মেয়েরা যাবে কোথায়? যাঁদের রং একটু কালো। তারা কালো মেয়ে নেবেন না, যাঁরা ফর্সা, তাঁদের ওই এক কথা। তাহলে কি কালো মেয়েদের হাত-পা বেঁধে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেব?’

অরবিন্দ কোনো উত্তর না-দিয়ে উঠে দাঁড়াল। তারপর সামনে রাখা খাবারের থালা স্পর্শ না-করে বন্ধুকে নিয়ে হন হন করে বেরিয়ে গেল।

বেলা সেই যে এসে মাথা হেঁট করে বসেছিল, তার দিকে যখন চোখ ফেরালাম, দেখলাম মাথাটা প্রায় মেঝের সঙ্গে ঠেকে যাচ্ছে। সমস্ত শরীর রুদ্ধ আবেগে কেঁপে কেঁপে উঠছে। বলবার কিছু ছিল না। কিছুক্ষণ বসে থেকে আস্তে আস্তে উঠে এলাম।

ঘুম ভাঙল মাঝরাতে। নারীকণ্ঠের আর্ত চীৎকারে।

বাঁচাও, বাঁচাও, জ্বলে মলুম! উঃ, বড়ো কষ্ট, বড়ো কষ্ট!….

তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম। নিশীথে শব্দ ঠিক কোনদিক থেকে আসছে বোঝা মুশকিল। কিছুক্ষণ পরে বুঝলাম আওয়াজটা বেলাদের বাড়ি থেকেই আসছে। ছুটে চলে এলাম। তখন কিছু করবার ছিল না। রান্নাঘরে শিকল তুলে দিয়ে বেলা নিজের শরীরে বোতল বোতল কেরোসিন ঢেলে দিয়ে দেশলাই জ্বেলেছে।

দরজা ভেঙে যখন রান্নাঘরে ঢোকা হল, তখন বেলার কালো রং আর নেই। পুড়ে সর্বাঙ্গ লাল হয়ে গেছে। বেলার মা আর বাবা আছড়ে পড়লেন মেয়ের দেহের কাছে।

বাপ চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘এবার মাকে সাজিয়ে দেখাবার চেষ্টা করো! আর কেউ কালো বলবে না। কুরূপা সেই অভিমানে মা আমার চলে গেল।’

যেমন হয়, এই নিয়ে পাড়ায় বেশ কিছুদিন জটলা চলল। নানারকম মন্তব্য।

খবরের কাগজে ফলাও করে লিখল পণপ্রথার বিষময় ফল সম্বন্ধে আধ পাতা জুড়ে সম্পাদকীয়। তারপর একসময়ে সব ঠান্ডা হয়ে গেল। মাস ছয়েকের মধ্যে অরবিন্দ বিয়ে করল। নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম, কিন্তু যেতে মন সরেনি। কেবল, বেলার মুখটা মনে পড়েছিল। বেলার বাপ এখানকার বাসা উঠিয়ে চলে গেলেন। কোথায় খবর রাখি না।

বিয়েতে যাইনি, কিন্তু অরবিন্দর বউ দেখা অদৃষ্টে ছিল।

একদিন একটা কাজে ব্যান্ডেল যাব বলে হাওড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ একেবারে সামনে অরবিন্দ। আমাকে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, ‘আরে অজয়দা, আপনি?’

বললাম, ‘একটা কাজে ব্যান্ডেল যাব।’

‘ব্যান্ডেল? আবার বিয়ের সম্বন্ধ নাকি?’

কথাটার মধ্যে ব্যঙ্গের হুল ছিল, তাই উত্তর দিলাম না। বললাম, ‘তুমি কোথায়?’

‘আমি দিন পনেরো ছুটি নিয়ে সস্ত্রীক পুরী চলেছি। আপনি তো আমার বিয়েতে রাগ করে গেলেনই না।’

‘রাগ করে? রাগ করে কেন?’

‘তা ছাড়া আর কী! আপনার পাড়ার মেয়ে বিয়ে করিনি বলে। আপনি তো জয়াকে দেখেননি। দাঁড়ান আলাপ করিয়ে দিই।’

অরবিন্দ চলে গেল। লক্ষ করলাম, টিকিট ঘরের সামনে একটি তরুণী। তার পায়ের কাছে বিছানা, সুটকেস, ছোটোখাটো মোটঘাট। অরবিন্দ তার কাছে গিয়ে থামল, আমাকে দেখিয়ে কী বলল তারপর একটা কুলিকে মালপত্র দেখতে বলে দুজনে এগিয়ে এল। একেবারে কাছে আসতে অরবিন্দ বলল, ‘জয়া, ইনি অজয়দা, সেজদার বন্ধু।’

জয়া হেঁট হয়ে পা ছুঁয়ে প্রণাম করল।

ভালো করে দেখলাম। গৌরাঙ্গী, তবে নাক মোটেই ভালো নয়। মঙ্গোলিয়ান ধাঁচের। পুরু ঠোঁট, দুটি চোখও খুব আয়ত নয়, গাল বেশ ফোলা ফোলা। গড়ন স্থূলতার দিকে। স্বভাবতই বেলার কথা মনে পড়ে গেল। তার রং কালো ছিল, কিন্তু মুখ-চোখ অনেক সুন্দর।

অরবিন্দ আমার কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল, ‘জয়ার বাপের বড়োবাজারে লোহার কারবার। বেশ মালদার লোক। দুটি মাত্র মেয়ে। এটি বড়ো।’

বুঝলাম অরবিন্দ রূপ নয়— রূপোই খুঁজেছে। আমার ট্রেন এসে গিয়েছিল, তাই বললাম, ‘চলি অরবিন্দ। পরে দেখা হবে। বউমাকে নিয়ে একদিন যেও আমাদের বাড়ি।’

জয়া এবার দু-হাত তুলে নমস্কার করল। তারপর আমরা ভিড়ে হারিয়ে গেলাম।

দিন তিনেক পর। কী এক ছুটির দিন। বারান্দায় বসে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ল একটা খবর

পুরী প্যাসেঞ্জারে রহস্যজনক মৃত্যু!

মাঝরাতে প্রথম শ্রেণির কামরায় একটি যাত্রীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। সংবাদে প্রকাশ, এই কামরায় নব বিবাহিত দম্পতি ভ্রমণ করিতেছিল। স্ত্রী চেন টানিলে মধ্যপথে ট্রেন থামিয়া যায়।

গার্ড দেখিতে পায়, কামরায় মেঝের উপর ভদ্রলোক অচৈতন্য অবস্থায় পড়িয়া আছেন। তাঁহার দুটি চোখ বিস্ফারিত। কণ্ঠনালিতে দশ আঙুলের ছাপ। মনে হয় তাঁহাকে শ্বাসরুদ্ধ করিয়া হত্যা করা হইয়াছে। আশ্চর্যের বিষয়, ভদ্রলোকের ঘড়ি, আংটি, মানিব্যাগ কিছুই অপহৃত হয় নাই। স্ত্রীর দেহে অনেক টাকা মূল্যের অলংকারেও কেহ স্পর্শ করে নাই। নিহত ভদ্রলোকের নাম অরবিন্দ চৌধুরি।

খবরের কাগজটা সামনে রেখে চুপচাপ বসে রইলাম। জয়ার মুখটা স্মৃতিপটে ভেসে এল। একটু পরেই গৃহিণী বাজার যাবার তাগাদা দিতে এসে থেমে গেল, ‘কী হল? ওভাবে বসে আছ? শরীর খারাপ নাকি?’

কোনো উত্তর না-দিয়ে কাগজটা তার দিকে ঠেলে দিলাম। বললাম, ‘এই জায়গাটা পড়ো।’

‘তাই তো মনে হচ্ছে। সব মিলে যাচ্ছে।’

‘বললাম না, অরবিন্দ বউ নিয়ে পুরী গেল।’

‘বাবা, দেশে কী অরাজকতা হল! ট্রেনের কামরায় ডাকাতি!’

‘ডাকাতি আর কোথায়? কোনোকিছু তো চুরি যায়নি।’

‘সে হয়তো সময় পায়নি। বউটা চেঁচামেচি করে ওঠাতে নেমে গেছে। কিংবা এমনও হতে পারে, ট্রেন সম্ভবত স্টেশনের কাছে এসে পড়েছিল।’

‘সবই হয়তো সম্ভব। এতদূর থেকে কিছুই বলা যায় না।’

‘আহা, বউটার কথা ভাবছি। এই সেদিন বিয়ে হয়েছিল।’

উঠে পড়লাম, আলনা থেকে জামাটা টেনে নিয়ে গায়ে দিতে দিতে বললাম, ‘আজ চাকরকে বাজারে পাঠাও। আমি বেরোচ্ছি।’

‘কোথায় যাচ্ছ?’

‘একবার অরবিন্দর বাড়ি যাব। যাওয়া দরকার। খবরটা যখন জানতে পারলাম। সবাই নিশ্চয় শোকে মুষড়ে পড়েছে।’

আমি যে প্রান্তে থাকি, অরবিন্দর বাড়ি তার অপর প্রান্তে।

বাসে প্রায় ঘণ্টা খানেক। বাসে যেতে যেতে জীবনের অসারতার কথা ভাবতে লাগলাম। কত ক্ষণস্থায়ী পরমায়ু আমাদের? পরের মুহূর্তে কী হবে বলা যায় না।

পুরোনো ধরনের বাড়ি। অরবিন্দ ঠাকুরদার আমলের। এর মধ্যে খুব যে সংস্কার হয়েছে এমন মনে হয় না। বাড়ির সামনে দাঁড়ালেই মনে হয় বাড়িটা ঘিরে শোকের বলয়। কেমন থমথমে ভাব।

আস্তে আস্তে কড়া নাড়লাম। কাজ হল না। জোরে শব্দ করতে সংকোচ হল, কিন্তু উপায় নেই, জোরে কড়া নাড়লাম।

একজন ভৃত্য এসে দরজা খুলতে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সুরজিৎ আছে?’ সুরজিৎ অরবিন্দের সেজো ভাই। আমার একদার সহপাঠী।

‘আছেন। বসুন।’

বাইরের ঘরে চেয়ারে বসলাম। কিছুক্ষণ পরে সুরজিৎ ঘরে ঢুকল। কোঁচার খুঁট গায়ে জড়ানো। বিষণ্ণ, নিষ্প্রভ চেহারা।

বললাম, ‘আজ সকালে কাগজে দেখে সব জানতে পারলাম।’

সুরজিৎ আমার পাশের চেয়ারে বসল।

আস্তে আস্তে বলল, ‘আশ্চর্য কাণ্ড! টাকাপয়সা কিছু নেয়নি, শুধু প্রাণটার ওপরই যেন লোভ ছিল। পুলিশও কিছু কিনারা করতে পারছে না।’

জিজ্ঞেস করলাম, ‘অরবিন্দের স্ত্রী জয়া কী বলে? সে পুলিশের কাছে লোকটার বর্ণনা দিতে পারছে না?’

কিছুক্ষণ সুরজিৎ কোনো কথা বলল না। চুপ করে রইল। একটু পরে নিজের মনেই যেন বলতে লাগল, ‘জয়ার মাথার গোলমাল হয়েছে।’

‘মাথায় গোলমাল?’

‘আশ্চর্য কী! জানিস তো আমাদের বাড়ির ব্যাপার। যত সেকেলে ধারণা। পুরোনো মত। বুড়ো-বুড়িরা সবাই বলছে, জয়া নাকি খুব অপয়া। তা না-হলে বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বামী যায়। জয়া খাওয়াদাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিন-রাত কান্নাকাটি করছে। কত করে বললাম, বাপের বাড়ি ঘুরে এসো, বাপ নিতে এল, তবু গেল না।’

হাওড়া স্টেশনে দেখা জয়ার চেহারাটা মনে পড়ল।

হঠাৎ সুরজিৎ জিজ্ঞাসা করল, ‘তোর সঙ্গে জয়ার দেখা হয়েছে? জয়া তোর কথা আমার কাছে জিজ্ঞাসা করেছিল।’

‘হ্যাঁ, হাওড়া স্টেশনে পুরী যাবার সময়ে একবার দেখা হয়েছিল। কিন্তু জয়া আমার কথা কী জিজ্ঞাসা করছিল?’

‘বলছিল, তোকে একবার খবর দিতে।’

‘আমাকে?’ আমি রীতিমতো বিস্মিত হলাম। ‘আমাকে কেন?’

‘কী জানি! এসেছিস যখন, একবার দেখা করে আয় না।’

‘দেখা করব?’ একটু দ্বিধাবোধ করলাম।

সুরজিৎ উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচাল, ‘হারু, হারু!’

ছোকরা চাকর এসে দাঁড়াল।

সুরজিৎ বলল, ‘এই বাবুকে ছোটো বউদিমণির ঘরে নিয়ে যাতো।’

‘আসুন বাবু।’

হারুর পিছন পিছন সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলাম। কোণের দরজার সামনে মেরুন রং-এর ভারী পর্দা। দরজা ভেজানো।

খুব আস্তে দরজায় ঠুক ঠুক করলাম। অনেক পরে ভিতর থেকে ক্লান্ত কণ্ঠে উত্তর এল—

‘কে?’

নাম বললাম। দরজা খুলে গেল।

‘আসুন।’

পরনে কালো পাড় শাড়ি, অবিন্যস্ত চুল, হাতে একটি করে চুড়ি। এত দ্রুত যে একটা মানুষের চেহারা এত বদলে যেতে পারে তা আমার ধারণার বাইরে ছিল।

মাঝখানে গোল টেবিল। তার ওপর অরবিন্দর একটা ফোটো।

জয়া ঘাটের একপাশে বসল।

আমি চেয়ারে বসে প্রশ্ন করলাম, ‘তুমি নাকি আমাকে খুঁজছিলে?’

‘হ্যাঁ দাদা।’

‘কেন?’

‘ওঁর একবার বেলা বলে কোনো মেয়ের সঙ্গে বিয়ের কথা হয়েছিল?’

‘সে তো অবিবাহিত ছেলে আর কুমারী মেয়ে থাকলে কত হয়?’

‘মেয়েটি দেখতে কালো।’

‘হ্যাঁ।’

‘মনের দুঃখে মেয়েটি কি আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিল?’

‘কে বলল? অরবিন্দ?’

‘না, আমি কাগজে পড়েছি। উনি বলেছিলেন, সে অন্য মেয়ে, তখন আমি তাই বিশ্বাস করেছিলাম, কিন্তু এখন আমি ঠিক জানি এ সেই মেয়ে।’

‘কেন একথা বলছ কেন?’

‘এ বাড়িতে আমি বলেছি, কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেনি। আপনাকে বলি শুনুন—

রাত তখন এগারোটা। আপনার ভাই ঘুমোচ্ছে। আমি বাথরুমে যাব বলে উঠতে গিয়েই চমকে উঠলাম। সামনের বেঞ্চে ঘোমটা দেওয়া একটি বউ। এ কী করে সম্ভব! দুটো দরজাই লক করা। বউটি কী করে উঠল! ‘কে? কে তুমি? এ কামরায় উঠলে কী করে?’ আমার চিৎকারে আপনার ভাই উঠে পড়ল।

”কী, কী হল?” ঘুম জড়ানো কণ্ঠে আপনার ভাই জিজ্ঞেস করল। আমি বললাম, ”এই দ্যাখো না ওই বেঞ্চে কে বসে আছে!”

”যাও, নিকালো!”— আপনার ভাই তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। সঙ্গে সঙ্গে বউটি ঘোমটা ফেলে দিল। মুখটা দেখলে মনে হয় আগুনে পোড়া। মাংস পুড়ে আঙুরের গুচ্ছের মতন হয়ে আছে। চোখ দুটো চক চক করে উঠল। শাড়ির মধ্য থেকে দুটি কঙ্কাল হাত বেরিয়ে আপনার ভাইয়ের গলা সজোরে টিপে ধরল। বিকট একটা হাসি। মনে হল কামরার দরজা জানলাগুলো থর থর করে কেঁপে উঠল। আমি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলাম। যখন জ্ঞান ফিরে এল দেখলাম, আপনার ভাই মেঝেয় পড়ে।

বউটা কোথাও নেই। চেন টেনে ট্রেন থামালাম। তারপর ঘটনাটা গার্ডের কাছে, পুলিশের কাছে, বাড়ির লোকের কাছে বলেছি। কেউ বিশ্বাস করেনি। সকলের ধারণা শোকে আমার মাথা খারাপ হয়েছে।

আপনি তো বেলার পাশের বাড়িতে থাকতেন, সবকিছু আপনার জানা। বলুন, বেলা ছাড়া কে আমার এ সর্বনাশ করবে! মৃত্যুর পরেও কে আসবে প্রতিহিংসা নিতে বলুন?’

কী বলব! বলবার মতন কোনো উত্তর সেদিন খুঁজে পাইনি। আজও পাই না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *