আমরা আছি
ছেলেবেলা থেকে আমার ভূত খোঁজার নেশা। যখনই পোড়োবাড়ির খোঁজ পেয়েছি, যেটা ভূতেদের আস্তানা, সব কাজ ফেলে সেখানে গিয়ে হাজির হয়েছি। গুরুজনদের হাজার নিষেধ সত্ত্বেও রাত কাটিয়েছি সেখানে, কিন্তু ভূতের সন্ধান পাইনি।
কতবার যে শ্মশানে ঘুরেছি তার ঠিকঠিকানা নেই। অমাবস্যার রাতে কুকুর-শেয়ালদের আগুন-জ্বলা চোখ দেখেছি। এলোমেলো বাতাসে মড়ার খুলি থেকে অদ্ভুত শব্দ বের হয়েছে, তাই শুনেছি ভয় পাইনি।
সব দেখেশুনে একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি, ভূত নেই, ভূতের কাহিনি মানুষের কল্পনা। যাঁরা বলেছেন, স্বচক্ষে ভূত দেখেছেন, তাঁরা নিছক চোখের ভুলের শিকার হয়েছেন।
সভা-সমিতিতে বন্ধুবান্ধবদের আসরে সরবে ঘোষণা করেছি, যে যাই বলুক, ভূতটুত নেই। প্ল্যানচেট একটা নিছক ধাপ্পাবাজি।
ঠিক এমনই সময়ে একটা চিঠি এল।
চিঠিটা লিখেছে শৈলেন। আমার কলেজের অন্তরঙ্গ বন্ধু শৈলেন দাস।
শৈলেনও আমার মতন বিশ্বাস করত, ভূত নেই। ভূতের নিবাস মানুষের অলস মস্তিষ্কের এক কোণে।
চিঠিটা খুব ছোটো। মাত্র লাইন দুয়েকের।
যদি ভূত দেখতে চাও, অবিলম্বে ঘাটশিলায় আমার কাছে চলে এসো।—শৈলেন।
শৈলেনের সঙ্গে কলেজ ছাড়ার পর আর বিশেষ দেখা হয়নি।
অন্য বন্ধুদের কাছে শুনেছিলাম, সে আলমকী আর হরতুকির ব্যাবসা করে। ঝাড়গ্রাম না ঘাটশিলা কোথায় রয়েছে।
চিঠি পেয়ে বুঝলাম, শৈলেন ঘাটশিলায় রয়েছে।
হয়তো ভূতটুত সব বাজে কথা, আমাকে তার কাছে নিয়ে যাবার জন্য ভূতের অবতারণা করেছে। জানে, এমন করে লিখলে আমি না-গিয়ে পারব না।
কলেজে অধ্যাপনার কাজ। বছরের মধ্যে ছুটিই বেশি। পূজা পার্বণ, গরমের ছুটি তো আছেই, এ ছাড়া অন্যান্য উপলক্ষ্যে কলেজ প্রায়ই বন্ধ থাকে।
ঠিক করলাম, দিন সাতেকের ছুটি নিয়ে ঘাটশিলায় চলে যাব।
পূজা কেটে গেছে। বাতাসে শীতের মিশেল। এ সময়ে ঘাটশিলার জলবাতাস ভালো। কড়া শীত পড়েনি। ভূতের সন্ধান না পাই, স্বাস্থ্যটা ফিরিয়ে আনতে পারব।
যে-কথা সেই কাজ। সুটকেস আর বিছানা নিয়ে হাওড়া স্টেশনে গিয়ে হাজির হলাম।
ট্রেন ছাড়ার দেরি ছিল।
কামরার এক কোণে মালপত্র রেখে একটা পত্রিকা কিনে বেঞ্চের ওপর বসলাম।
একটা গল্পের লাইন দুয়েক পড়েছি, হঠাৎ পরিচিত কণ্ঠে চমকে উঠলাম।
‘আরে কী খবর?’
মুখ তুলে অবাক হলাম।
সামনে দাঁড়িয়ে শৈলেন। বগলে খবরের কাগজ। হাতে রঙিন ব্যাগ।
‘খবর আর কী? ভূত দেখাবার জন্য তুই-ই নেমন্তন্ন করেছিলি?’
ভূতের উল্লেখে শৈলেনের মুখটা ম্লান হয়ে গেল। দু-চোখে আতঙ্কের ছায়া।
সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
‘কীরে, কথা বল?’
‘কী বলব, ব্যাপারটা আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না, তোর কথা মনে হল তাই তোকে চিঠি লিখলাম।’
‘ভালোই করেছিস। ভূত যদি না পাই, তোর ঘাড়ে চেপে সাতটা দিন তো খেয়ে আসি।’
শৈলেন বলল, ‘চল, এবার ট্রেন ছাড়বার সময় হয়েছে। তুই কোন কামরায় উঠেছিস?’
আঙুল দিয়ে কামরাটা দেখিয়ে দিলাম।
দু-জনে উঠে পাশাপাশি বসলাম।
ট্রেন ছাড়তে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী ব্যাপার বল তো? তুই তো সাত জন্মে ভূত বিশ্বাস করতিস না। ঠিক আমার মতন। কী দেখলি?’
স্পষ্ট দেখলাম, শৈলেনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠল। গালের পেশিগুলো কেঁপে উঠল থরথরিয়ে।
সে মৃদুকণ্ঠে বলল, ‘হঠাৎ বাতি বন্ধ হয়ে গেল। এক তিল হাওয়া নেই, দরজা জানলাগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে। পাশের ঘরে খুটখাট শব্দ, গিয়ে দেখি কেউ কোথাও নেই।’
এক ব্যাপার। যারাই ভূতের উপদ্রবের কথা বলেছে, তারা সবাই ঠিক একই কাহিনি শুনিয়েছে। এই হঠাৎ বাতি নিভে যাওয়া, আচমকা জানলা দরজা খুলে যাওয়া।
সেসব ঘরে রাতের-পর-রাত কাটিয়েছি। কিছুই দেখতে পাইনি।
পাশের ঘরে খুটখাট শব্দ ইঁদুরের জন্য। বেড়াল আমদানি করতেই সে শব্দ থেমে গেছে। লাইনের গোলমালের জন্য বাতি হঠাৎ ফিউজ হয়ে গেছে।
তাই হাসতে হাসতে বললাম, ‘এসব ব্যাপারে তুইও ভয় পেয়ে গেলি শৈলেন? এর মধ্যে ভূত এল কোথা থেকে?’
শৈলেন আমার একটা হাত চেপে ধরল।
ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, ‘ওসব কথা থাক ভাই। অন্য কথা বল। যা দেখবার গিয়েই দেখবি।’
কাজেই অন্য কথা পাড়লাম।
শৈলেনের ব্যাবসার কথা।
‘তারপর তোর ব্যাবসা কেমন চলছে বল?’
শৈলেন বলল, ‘প্রথম প্রথম তো বেশ ভালোই চলছিল। আমলকী আর হরতুকি কোনোটাই কিনতে হত না। ট্রাক নিয়ে জঙ্গলে গিয়ে স্রেফ পেড়ে নেওয়া। তারপর সেই ট্রাক বড়োবাজারে নিয়ে আসা। ইদানীং মুশকিল হয়েছে।’
‘কী মুশকিল?’
‘যারা সব জঙ্গল ইজারা নিচ্ছে, তারা জঙ্গলে ঢুকতে দিচ্ছে না। আমলকী, হরতুকি চালান তারাই দিচ্ছে। কিনতে গেলে এমন দর হাঁকছে যে, আমার পোষায় না।’
‘তাহলে কী করবি?’
‘ভাবছি অন্য ব্যাবসা ধরব।’
‘কী ব্যাবসা?’
‘ঠিক করিনি, তুই চল, দু-জনে বসে ঠিক করা যাবে। তবে ঘাটশিলায় আর নয়!’
‘কেন?’
‘না ভাই ঘাটশিলায় আর থাকব না। থাকতে পারব না। অন্য কোথাও যেতে হবে।’
তারপর আর বিশেষ কথা হল না।
দু-জনে দু-খানা পত্রিকা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
খেয়াল হল খড়গপুর স্টেশনে আসতে।
শৈলেন বলল, ‘তুই বস। আমি খাবারের চেষ্টা দেখি।’
শৈলেন নেমে যেতে কামরার চারদিকে নজর দিলাম।
ভিড়ে আমার চিরকালের ভয়। এই ভিড়ের ভয়ে বাইরে বের হওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছি।
ঘাটশিলা চলেছি তাই প্রথম শ্রেণিতে।
কিন্তু প্রথম শ্রেণি একেবারে খালি নয়। চারজনের জায়গায় ছ-জন বসেছি। সকলের টিকিট আছে কিনা কে জানে! আজকাল তো টিকিট না-করাই রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাইরে দৃষ্টি দিলাম। খড়গপুর স্টেশন বদলায়নি।
খড়গপুরে এসেছিলাম বছর পাঁচেক আগে। খড়গপুরে ঠিক নয়, খড়গপুরে নেমে দীঘা গিয়েছিলাম বাসে।
স্বাস্থ্যের কারণে নয়, ভূতের সন্ধানে।
কে একজন খবর দিয়েছিল, সমুদ্রের ধারে এক পরিত্যক্ত বাড়িতে ভূত থাকে।
সন্ধ্যার অন্ধকার নামলেই নানা রঙের আলোর রেখা বাড়ির মধ্যে নাচতে থাকে। বাইরের সমুদ্রের গর্জন সেই সময় নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
সেইসব আলোর রেখা যার দেখবার দুর্ভাগ্য হয়, তার মাথার গোলমাল হয়।
খবর সংগ্রহ করে জেনেছিলেম, কে একটা লোক সম্পত্তির লোভে কাকে যেন গলা টিপে এই বাড়িতে দম বন্ধ করে মেরে ফেলেছে।
সেই লোকটিও আর ফিরতে পারেনি।
যতবার বেরোতে গেছে, রঙিন আলোর রেখা তার পথ আটকে ধরেছে। শুধু আলোর রেখাই নয়, সঙ্গে করুণ একটা আর্তস্বর।
লোকটির মস্তিষ্ক বিকৃত হয়েছিল। অজ্ঞান অবস্থায় অন্য লোকেরা তাকে বাইরে নিয়ে আসে। জ্ঞান হলে তার কথাবার্তা শুনে রাঁচির হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। সেখানেই কিছুদিন পর লোকটির মৃত্যু হয়।
সন্দেহ নেই, খুব জমজমাট গল্প।
আমি গিয়ে সাতদিন ছিলাম।
রঙিন আলো দূরের কথা, কোনো আলোই দেখতে পাইনি। শুধু ভাঙা ছাদের মধ্যে দিয়ে সমুদ্রের ঝোড়ো হাওয়া হু-হু শব্দে বইত। সেই হাওয়ায় জরাজীর্ণ বাড়ির পলেস্তারা ঝুপ ঝুপ করে খসে পড়ত।
দীঘার ভূতের ব্যাপারে নিমগ্ন ছিলাম, খেয়াল হল ট্রেন নড়ে উঠতে। তাই তো, ট্রেন ছেড়ে দিল, অথচ শৈলেন কোথায়?
শৈলেন না উঠতে পারলেই মুশকিল।
এই প্রথম মনে পড়ল, শৈলেনের চিঠিতে তার বাসার কোনো ঠিকানা ছিল না। অবশ্য তাতে খুব অসুবিধা হত না।
ঘাটশিলা এমন কিছু বড়ো জায়গা নয়। সেখানে বাঙালিও কম নেই। তাদের কাছে শৈলেন দাসের আস্তানা পাওয়া দুরূহ হত না।
একটু পরেই শৈলেন এসে দাঁড়াল।
‘কীরে, ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে, কোথায় ছিলি?’
‘একেবারে গরম ভাজিয়ে আনতে একটু দেরি হয়ে গেল। ছুটতে ছুটতে হাতল ধরেছি। নে খা।’
শৈলেন প্রচুর গরম লুচি এনেছি। লুচি আর তরকারি।
খাওয়ার পর ভরপেটে বেশ একটু ঢুলুনি এল।
যখন চোখ খুললাম, তখন ট্রেন ঘাটশিলা স্টেশনে ঢুকছে।
বেশ লম্বা ঘুমিয়েছি। চোখ চেয়ে দেখলাম, পাশে শৈলেন নেই।
বগলে বিছানা, হাতে সুটকেস ঝুলিয়ে তৈরি হয়ে নিলাম। একটু এগোতেই দেখলাম, শৈলেন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
স্টেশনে নামা গেল। বেশ কনকনে বাতাস বইছে। পাহাড়ি ঠান্ডা।
স্টেশনের বাইরে আসার পর শৈলেন বলল, ‘তুই এখানে দাঁড়া। আমি একটা সাইকেল-রিকশা ডেকে নিয়ে আসি। এখান থেকে বেশ দূর। রঙ্কিনীদেবীর মন্দিরের কাছে আমার ডেরা।’
শৈলেন সিঁড়ি দিয়ে বাইরে নেমে গেল। আবছা অন্ধকার। তার মধ্য দিয়ে দেখলাম প্রচুর সাইকেল-রিকশা গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে। গোটাতিনেক ট্যাক্সিও রয়েছে।
দশ মিনিট, পনেরো মিনিট, কুড়ি মিনিট কাটল।
শৈলেনের আর দেখা নেই।
আশ্চর্য, সাইকেল-রিকশা ডাকতে এত দেরি কেন হবে!
আধঘণ্টা কাটবার পর বিরক্ত হয়ে মালপত্র নিয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালাম।
বাইরে তখনও গোটা-ছয়েক সাইকেল-রিকশা দাঁড়িয়ে আছে।
একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘রঙ্গিনীদেবীর মন্দির চেন?’
‘হ্যাঁ, হুজুর, বৈঠিয়ে।’
সাইকেল-রিকশা চালক হাত থেকে বাক্স, বিছানা নিয়ে পাদানিতে রাখল। দরদস্তুরও করতে দিল না।
উঠে বসলাম। শৈলেনের অদ্ভুত আচরণের কোনো অর্থ খুঁজে পেলাম না। এ ধরনের রসিকতা অভদ্রজনোচিত, দেখা হলে সেটা বলে দেব।
বেশ অনেকটা পথ। ঝাঁকুনিতে কোমরে ব্যথা হয়ে গেল।
সাইকেল-রিকশাওয়ালাকে যখনই জিজ্ঞাসা করি, ‘আর কতদূর রে?’ সে বলে, ‘আগিয়া হুজুর।’
অবশেষে মন্দির নজরে এল।
তার কাছে একতলা বাড়িও দেখতে পেলাম।
কাছে যখন আর কোনো বাড়ি নেই, তখন ওটাই শৈলেনের আস্তানা হবে।
সাইকেল-রিকশার ভাড়া মিটিয়ে বাক্স-বিছানা নিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
হাত দিয়ে ঠেলতেই দরজা খুলে গেল। তার মানে দরজা ভেজানো ছিল।
ভিতরে জমাট অন্ধকার।
সুটকেস খুলে টর্চ বের করলাম।
আমাকে ভয় দেখাবার জন্য শৈলেনের বদমায়েসি?
আগেভাগে চলে এসে বাড়ির মধ্যে ঢুকে কোনো ফন্দি আঁটছে।
ঘরের কোণে টর্চের আলো পড়তেই চিৎকার করে উঠলাম।
মেঝের ওপর শৈলেন পড়ে রয়েছে! চিৎ হয়ে। দুটি চোখ বিস্ফারিত। মনে হয় খুব ভয় পেয়েছে। দু-কষ বেয়ে রক্তের স্রোত গড়িয়ে পড়ছে!
তার দেহে যে প্রাণ নেই— এটা বোঝবার জন্য কাছে যাবার দরকার হল না।
মনে হল কেউ গলা টিপে তাকে হত্যা করেছে।
তখনও টর্চের আলো শৈলেনের দেহের ওপর। তার শরীর ঘুরে গেল। কে যেন ঘুরিয়ে দিল দেহটাকে।
চোখ দুটো আরও বিস্ফারিত! গালের মাংসপেশিগুলো তির তির করে কাঁপছে!
আর দাঁড়িয়ে থাকার সাহস হল না। তিরবেগে রাস্তার ওপর এসে পড়লাম।
ঠিক সেইসময় রাস্তা দিয়ে একটা মোটর ছুটছিল। আর একটু হলে মোটরের তলায় পড়তাম।
চালক ক্ষিপ্রহস্তে মোটর থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এ কী, পাগলের মতন ছুটছেন কেন? চাপা পড়তেন যে?’
জ্ঞানশূন্য হয়ে কেন ছুটছিলাম, চালককে বললাম।
ভদ্রলোক বাঙালি। গলায় স্টেথস্কোপ দেখে মনে হল ডাক্তার।
ডাক্তার সবশুনে বলল, ‘কী বলছেন আপনি? শৈলেনবাবু তো আজ দিনদশেক হল মারা গেছেন। রহস্যজনকভাবে মৃত্যু। গলা টিপে কারা মেরে রেখে গেছে।’
‘চোর, ডাকাত?’
ডাক্তার মাথা নাড়ল, ‘না, না, পয়সাকড়ি সব ঠিক ছিল। জিনিসপত্র একটুও এদিক-ওদিক হয়নি। বাড়িটার খুব বদনাম আছে। এর আগেও দুজন এভাবে মারা গেছেন। কিন্তু আপনি দেখলেন কী করে? পুলিশ থেকে তো দরজায় তালা দিয়ে গেছে।’
বললাম, ‘কই না তো! দরজা তো খোলা।’
‘চলুন তো দেখি।’
টর্চের আলো ফেলতেই চমকে উঠলাম।
দরজায় বিরাট আকারের দুটি তালা।
ডাক্তার এ নিয়ে আর কিছু জিজ্ঞাসা করল না। শুধু বলল, ‘স্টেশনে যাবেন তো চলুন। আমি ওইদিকে যাব।’
রাস্তায় একটি কথাও হল না। কোনো কথা বলবার মতন মনের অবস্থা আমার ছিল না। শৈলেনের বীভৎস দু-চোখের দৃষ্টি আমাকে মূক করে ফেলেছিল।
প্ল্যাটফর্মে বেঞ্চের ওপর বসলাম। জানি, আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। যে লোকটা দশদিন আগে মারা গেছে, সে হাওড়া থেকে ঘাটশিলা পর্যন্ত আমার সঙ্গে এসেছে, নিজের মৃতদেহ দেখাবার জন্য, এমন আজগুবি কথা কে বিশ্বাস করবে!
দরজায় তালা আটকানো, মৃতদেহ কবে স্থানান্তরিত হয়ে গেছে, অথচ টর্চের আলোয় শৈলেনের সেই বীভৎস রূপ কী করে দেখলাম।
ঠান্ডা কনকনে হাওয়া। কানের পাশে মৃদুকণ্ঠ, আমরা আছি, আমার আছি— অবিশ্বাস করো না।
অবিকল শৈলেনের গলা।