রাতের প্রহরী

রাতের প্রহরী

এ কাহিনি অমিয়া মাসির কাছে শোনা।

তবে অমিয়া মাসি হলফ করে বলেছেন, এ কাহিনিতে একটুও ভেজাল নেই, প্রতিটি বর্ণ সত্য।

তাঁর জবানিতেই বলি।

জানো, শরীরটা বছর দুয়েক আগে খারাপ হয়ে পড়েছিল। যা খাই, কিছু হজম হয় না। পেটে অসহ্য ব্যথা। চোখে অন্ধকার দেখি। ডাক্তার বললেন, ‘কলকাতা ছাড়তে হবে। এ শহর ব্যাধির ডিপো। এখানে থাকলে শরীর সারবে না।’

ঠিক হল কোনো স্বাস্থ্যকর জায়গায় গিয়ে মাস দুয়েক কাটিয়ে আসব।

ঘাটশিলা, মধুপুর, গিরিডি, দেওঘর কোনো জায়গাই তোমার মেসোর পছন্দ নয়। জানো তো, কী খুঁতখুঁতে মানুষ! বললেন, ‘ওসব বড়ো ফাঁকা জায়গা, নিরাপদ নয়।’

ভাবতে ভাবতে ঠিক হল লখনউ। সেখানে আমার দাদাশ্বশুরের একটি বাড়ি ছিল। বহু পুরোনো বাড়ি। উনি শখ করে তৈরি করেছিলেন, যখন লখনউতে চাকরি করতেন। সে বাড়ির যে কী অবস্থা তাও জানি না।

সেখানে যাওয়া হল।

চারবাগ, আমিনাবাদ জিজ্ঞাসা করে বাড়ির পাত্তা মিলল। চক থেকে বেশ দূরে। আশপাশে মুসলমানের বস্তি। ছাগল, মুরগির পাল ঘুরছে।

একতলা বাড়ি। যতটা জরাজীর্ণ হবে ভেবেছিলাম, অবস্থা অতটা খারাপ নয়। আগেকার দিনের মজবুত মশলার গাঁথনি।

যখন বাড়ির মধ্যে ঢুকলাম তখন বিকাল। রোদ ঝলমল করছে। দুটো ঘর, বাথরুম। একফালি রান্নাঘর।

বাইরে বের হয়ে হোটেলে খাওয়া সেরে নিলাম। তারপর এদিক-ওদিক ঘুরে যখন বাড়ি ফিরলাম তখন প্রায় আটটা।

তালা খুলে ঢুকতে গিয়েই দাঁড়িয়ে পড়লাম।

‘সেলাম সাহাব।’

মুখ ফিরিয়ে দেখলাম, দরজার বাইরে একজন। পরনে কালো কুর্তা আর পাজামা, মাথায় কালো টুপি বাঁকা করে বসানো।

তোমার মেসো জিজ্ঞাসা করলে, ‘কৌন?’

‘আপকা গোলাম হুজুর!’

বাতি জ্বেলে লোকটাকে ভিতরে ডাকা হল।

দীর্ঘ চেহারা। কোটরগত দুটি চোখ, কিন্তু নিষ্প্রভ নয়, জ্বলজ্বল করছে। মুখের কোথাও কোনো মাংস নেই। বোঝা গেল অর্ধাহারে এমন চেহারা হয়েছে।

‘কী চাই?’

‘আপনারা নতুন এসেছেন। কিছুদিন থাকবেন এখানে?’

‘সেইরকম ইচ্ছা আছে। এ আমার দাদুর বাড়ি। বহুদিন আসা হয়নি।’

লোকটা নীচু হয়ে কুর্নিশ করল। ‘নিশ্চয় থাকবেন সাহাব, আলবত থাকবেন। যে কদিন থাকবেন, গোলাম পাহারা দেবে। হাজার হোক, আপনাদের পক্ষে বিদেশ-বিভুঁই।’

ভালোই হল। একটা পাহারাদার থাকলে আমরা নিশ্চিত। বিদেশে যখন এসেছি, চুপচাপ বাড়িতে তো আর বসে থাকব না। ঘুরে ঘুরে বেড়াব।

‘তোমার নাম কী?’

‘বান্দার নাম আবদুল রিজভি।’

‘তোমাকে কেউ চেনে এখানে?’

লোকটার দুটো চোখ দপদপ করে জ্বলে উঠল।

‘দেখবেন হুজুর? এই দেখুন!’

আধময়লা কুর্তার মধ্য থেকে আবদুল প্রায় শতছিন্ন গোটা কয়েক কাগজ বার করল। কাগজগুলো হলদে হয়ে গেছে। গোটা তিনেক অভিজ্ঞানপত্র। বড়ো বড়ো লোকের লেখা। ফৈজাবাদের জমিদার, অযোধ্যার নবাবের ভাইপো, গোণ্ডার রহিম, সবাই লিখেছে, আবদুল রিজভির মতন বিশ্বাসী, কর্তব্যপরায়ণ, সৎলোক দুর্লভ।

‘ঠিক আছে, তোমাকে রাখব। কত দিতে হবে বলো।’

‘আমি একলা মানুষ খোদাবন্দ, যা দেবেন তাতেই রাজি!’

আবদুল রয়ে গেল। দিন তিনেক খুব ভালোভাবে কাটল। বেড়িয়ে যখনই ফিরতাম, দেখতাম, সদর দরজার পাশে আবদুল খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে। সজাগ প্রহরী। আমাদের দেখলে কপালে হাত ঠুকে সেলাম করত। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে শুনতে পেতাম খটখট জুতোর শব্দ। বাইরে আবদুল পাহারা দিচ্ছে।

কিন্তু তিনদিন পর রাত্রে ক্লান্ত হয়ে ঘুমোচ্ছি, হঠাৎ মনে হল আমার খাটটা যেন নড়ে উঠল। চমকে খাটের উপরে উঠে বসলাম। ভাবলাম, নির্ঘাৎ ভূমিকম্প।

বাড়িতে বিজলিবাতি ছিল না। হ্যারিকেন ব্যবহার করতাম। আলো জ্বললে তোমার মেসোর ঘুম হয় না বলে শোবার আগে হ্যারিকেন নিভিয়ে দিতাম। কিন্তু মাথার বালিশের নীচে টর্চ থাকত।

তাড়াতাড়ি টর্চ জ্বাললাম। দেখলাম, তোমার মেসোর খাট ঠিক জায়গাতেই রয়েছে! আমার খাটটা হাত দশেক সরে এসেছে!

ভূমিকম্পে তো এমন হবার কথা নয়!

গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছিল না। কোনোরকমে চাপা গলায় তোমার মেসোকে ডাকলাম।

বার কয়েক ডাকার পর তোমার মেসো উঠে বসল।

‘কী, কী হল?’

‘কী হয়েছে বলতে হল না। খাটের অবস্থান দেখে সবই বুঝতে পারল।

‘ওখানে গেলে কী করে?’

‘তাই তো ভাবছি। কে যেন আমার খাটটা সরিয়ে নিয়ে এল!’

তোমার মেসো ভ্রূ কুঁচকে কিছুক্ষণ ভাবল, তারপর বলল, ‘বুঝতে পেরেছি। তোমার রোগ তো একটা নয়! ঘুমিয়ে কথা বলো, ঘুমাতে ঘুমাতে শিবপুরের বাড়িতে একবার বারান্দা পর্যন্ত হেঁটে চলে গিয়েছিলে, মনে আছে? সেইরকম খাটটা ধরেই হয়তো হাঁটতে শুরু করেছ। দাঁড়াও, খাটটা ঠিক জায়গায় সরিয়ে দিই।’

তোমার মেসো খাট থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই আশ্চর্য কাণ্ড ঘটল।

আমি আমার খাটের ওপর বসে। সরসর করে খাটটা সরে পুরোনো জায়গায় চলে গেল! ভয়ে হাত কেঁপে টর্চটা নিভে গিয়েছিল। অন্ধকারে শুধু আমার আর্তকণ্ঠ শোনা গেল।

তোমার মেসো উঠে হ্যারিকেন জ্বালাল। তারপর সারাটা রাত দুজনে চুপচাপ বসে।

একবার তোমার মেসো দরজা খুলে বাইরে গিয়ে ডাকল, ‘আবদুল!’

‘হুজুর!’

উত্তরের সঙ্গে সঙ্গে আবদুল এসে সামনে দাঁড়িয়েছিল।

‘ফরমাইয়ে সাহাব!’

কিন্তু ব্যাপারটা এমন অলৌকিক, অবিশ্বাস্য যে কাউকে বলাও যায় না। যাকে বলব সেই ভাববে আমাদের মাথায় দোষ আছে। তাই চুপচাপ রইলাম।

আমাদের দুজনের কেউই ভূতে বিশ্বাস করতাম না। চিরকাল দুজনে শহরে মানুষ। ভূতের কথা গল্পে পড়েছি, কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা কখনো হয়নি।

রাতের ব্যাপারটা আমাদের দুজনকেই রীতিমতো ভাবিয়ে তুলল।

তোমার মেসোর প্রথমে ধারণা হয়েছিল খাটটা আমিই সরিয়েছি, কিন্তু চোখের সামনে খাটটা আবার সরে আসতে দেখে কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না।

দিন পনেরো নির্বিবাদে কাটল। কোনো উপদ্রব নেই। একসময় আমার নিজেরই মনে হল, সব ব্যাপাটাই হয়তো মনের ভুল!

সিনেমা দেখে ফিরতে সেদিন একটু রাত হয়েছিল। খাওয়াদাওয়া সেরে শুতে প্রায় বারোটা হল।

শীত পড়তে শুরু হয়েছে। লখনউতে শীতের প্রকোপ একটু বেশি। সব জানলাগুলো সন্ধ্যারাত থেকেই বন্ধ করে দিয়েছিলাম।

হঠাৎ মাঝরাতে খটখট করে সব জানলাগুলো খুলে গেল! কনকনে ঠান্ডা হাওয়ার ঝলক হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিল। বন্ধ করার দোষ হলে একটা জানলা খুলে যাওয়া সম্ভব, কিন্তু এভাবে একসঙ্গে শোবার ঘরের চারটে জানলা খুলে যায় কী করে!

তোমার মেসো খাটের ওপর উঠে বসল। উঠেই আমাকে ধমক, ‘জানলাগুলোও কী ভালো করে বন্ধ করতে পারো না? মাঝরাতে আচ্ছা ঝামেলা!’

তোমার মেসো উঠে সব জানলাগুলো টেনে বন্ধ করে দিল।

মিনিট পাঁচেক।

তোমার মেসো এসে খাটে শোয়ামাত্র আবার খটখট করে জানলাগুলো খুলে গেল।

বার তিনেক এরকম হবার পর দুজনেই একটু ভয় পেয়ে গেলাম। দরকার নেই বাপু শরীর সারিয়ে, এই ভূতুড়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়াই ভালো।

কথাটা হঠাৎ আমার মনে হতে বললাম, ‘আবদুলকে একবার ডাকলে হয় না!’

‘আবদুল! আবদুল কী করবে?’

‘আমরা যখন ঠিকমতো জানলাগুলো বন্ধ করতে পারছি না, তখন ওকে দিয়ে একবার চেষ্টা করো।’

কথাটা বোধ হয় তোমার মেসোর মনে লাগল। দরজাটা খুলে ডাকল, ‘আবদুল!’

সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এল, ‘হুজুর!’

আশ্চর্য মনে হয়! আবদুল মানুষ না যন্ত্র!

আবদুল দরজায় এসে দাঁড়াল।

‘জানলাগুলো কিছুতেই বন্ধ করতে পারছি না। একবার দেখো তো!’

আমি টর্চটা জ্বালিয়ে আবদুলের মুখের ওপর রেখেছিলাম। মনে হল, আবদুলের দুটো চোখ জ্বলে উঠল।

‘জি হুজুর!’

আবদুল একটা একটা করে জানলাগুলো বন্ধ করে দিল। তারপর আবদুল আর এক মিনিট দাঁড়াল না, সেলাম করে বাইরে চলে গেল।

দরজা বন্ধ করে আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। না, জানলাগুলো আর খুলে গেল না।

তার মানে আমরা বোধ হয় জানলাগুলো ঠিকমতো বন্ধ করতে পারছিলাম না।

রাত্রে আর কোনো অসুবিধা হল না।

সত্যি, কত মিথ্যা কারণে আমরা ভয় পাই। কত অল্পে।

পরের দিন দুপুর বেলা আবদুলকে দেখলাম। সাধারণত দিনের বেলা সে নিজের ডেরায় চলে যায়। পাহারা দিতে আসে সন্ধ্যা বেলা। কিন্তু সেদিন দুপুরে বের হবার মুখে দেখলাম, আবদুল চারদিক ঘুরছে।

তোমার মেসো পোস্টাফিসে গিয়েছিল খাম, পোস্টকার্ড কিনতে। আশপাশে এমন কেউ নেই, যাদের সঙ্গে আলাপ করতে পারি। চারদিকে বস্তি।

‘কী খুঁজছ আবদুল?’

আবদুল যেন একটু চমকে উঠল।

আমার দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ দেখে বলল, ‘একটা চিজ খুঁজছি মেমসাহেব। অনেক দিন আগে হারিয়েছিলাম, কিন্তু কোথায় হারিয়েছিলাম ঠিক মনে পড়ছে না।’

উত্তর দিয়েই আবদুল আর দাঁড়াল না। আস্তে আস্তে বস্তির দিকে এগিয়ে গেল।

ইচ্ছা ছিল, আবদুলকে তার পুরোনো সংসার, তার পরিবারের লোকজন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করব, কিন্তু সুযোগ পেলাম না।

কী খুঁজছে আবদুল ঠিকভাবে সে কথাও বলল না। কেমন একটা দুর্বোধ্য উত্তর দিয়ে গেল।

জানলাগুলো ভালোভাবে দিনের আলোয় পরীক্ষা করে দেখলাম। কলকবজার বিশেষ কোনো কারসাজি নেই। অথচ রাত্রে কেন বন্ধ করতে পারলাম না।

দিনের বেলা কোনো গোলমাল নেই, কিন্তু রাত হলেই যেন গা ছমছম করে। মনে হয়, আমি আর তোমার মেসো ছাড়া তৃতীয় আর এক সত্তার যেন আবির্ভাব হয়। তাকে চোখে দেখা যায় না, কিন্তু তার কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে সে নিজেকে ধরা দেয়।

এই খাট সরানো, জানলাগুলো আচমকা যাওয়া, এসব কিন্তু মোটেই স্বাভাবিক বলে মনে হয় না।

তোমার মেসো ফিরে আসতে আবদুলের জিনিস খোঁজার কথাটা বললাম, কিন্তু কথাটার ওপর সে একেবারেই গুরুত্ব আরোপ করল না। বলল, ‘ওসব নিয়ে মাথা ঘামাবার কোনো মানে হয় না। হয়তো পকেট থেকে কিছু পড়ে গেছে, তাই খুঁজছিল।’

আমি কিন্তু মনের কথাটা বলেই ফেললাম, ‘জানো, আর এখানে ভালো লাগছে না!’

‘কেন, তোমার শরীরের তো উন্নতিই হয়েছে। পেটের ব্যথাটা আর নেই। খিদেও হচ্ছে।’

আমি একটু চুপ করে থেকে বললাম, ‘এ বাড়িটা আমার ভালো লাগছে না!’

‘কেন, বাড়ির কী দোষ হল?’

‘কী দোষ তো তুমি জানো।’

‘ওসব তোমার মনের ভুল। আমি ওসব মোটেই ভাবছি না।’

কিন্তু কয়েক দিন পরেই ভাববার যথেষ্ট কারণ ঘটল। তোমার মেসো আর আমার দুজনেরই।

সেদিন বিকাল থেকেই বৃষ্টি আরম্ভ হল। অসময়ের বৃষ্টি। বুঝতে পারলাম, এই বৃষ্টির পরেই শীতের প্রচণ্ডতা বাড়বে। দুটো বিলিতি কম্বল ছিল। তাতে সে শীত আটকাবে না।

মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল। মনে হল ঘরের মধ্যে খুটখাট শব্দ। কে যেন বুট পরে পায়চারি করছে। একদিক থেকে আর একদিক।

উঠে বসলাম। তোমার মেসে ঘুমে অচেতন।

টর্চ জ্বালিয়ে ঘরের এদিক-ওদিক ফেললাম। কেউ কোথাও নেই। অথচ খুটখাট শব্দ সমানে শোনা গেল।

ইঁদুরের উৎপাত কিনা কে জানে! আমাদের গড়পারের বাড়িতে বিরাট সাইজের সব ইঁদুর ঘুরে বেড়াত। সাইজে বিড়ালের চেয়েও বড়ো! বাথরুমে যাওয়া দরকার। সাহস করে উঠলাম। বাথরুমের দরজা খুলে টর্চ জ্বেলে আগে এধার-ওধার দেখে নিলাম। কোণের দিকে আলো পড়তেই চিৎকার করে উঠলাম।

একেবারে দেয়াল ঘেঁষে একটি নরকঙ্কাল! বললে বিশ্বাস করবে না, জীবন্ত নরকঙ্কাল! দুটো হাত প্রসারিত করে আমাকে ডাকছে। শুধু ডাকা নয়, খল খল করে হাসি। অদ্ভুত মারাত্মক হাসি। তার শব্দে শরীরের সমস্ত রক্ত পলকে যেন জমাট বেঁধে যায়!

আর আমার জ্ঞান ছিল না। বাথরুমের দরজার কাছে মূর্ছিত হয়ে পড়েছিলাম। যখন জ্ঞান হল দেখলাম, খাটের ওপর শুয়ে আছি। সকাল হয়েছে। তোমার মেসো উদবিগ্ন মুখে পাশে বসে।

একটু পরেই মেসো বলল, ‘কী হয়েছিল?’

কী হয়েছিল বললাম।

মেসো বলল, ‘কী আশ্চর্য, কাল রাত থেকে কতবার যে আবদুলকে ডেকেছি, ডাক্তারের কাছে পাঠাব বলে, কিন্তু সে নিখোঁজ! পাশের বস্তির এক ছোকরাকে ডাক্তার আনতে পাঠিয়েছি।’

একটু পরেই বাইরে মোটরের শব্দ হল। বৃদ্ধ বাঙালি ডাক্তার ঘরে ঢুকলেন।

সব শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ‘আমরা আপনার দাদুকে এই জমিতে বাড়ি করতে অনেক বারণ করেছিলাম। তিনি শোনেননি।’

‘কেন, এ জমিতে কী আছে?’

‘একটা কবর ছিল। কবরের ওপর কেউ বাড়ি করে না। আপনার দাদুও এ বাড়িতে বেশিদিন টিকতে পারেননি!’

‘আরও একটা কথা, আবদুল বলে একটা লোক পাহারা দিত, তাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

‘আবদুল? পুরো নাম কী?’

‘আবদুল রিজভি।’

ডাক্তার নাম শুনে চমকে উঠলেন। সে কী! এখানে আবদুল রিজভিরই তো কবর ছিল! সে মারা গেছে আজ আশি বছরের ওপর।

কিন্তু সে যে অনেকগুলো সার্টিফিকেট দেখাল।

পরের দিনই আমরা কলকাতা ফিরে এসেছিলাম।

এখনও মাঝে মাঝে ভাবি। দুটো প্রশ্নের উত্তর পাই না। ঘুরে ঘুরে কী খুঁজছিল আবদুল রিজভি? নিজের কবর? আর সে রাতে ওভাবে বাথরুমে কঙ্কাল-মূর্তি কেন দেখাল? আমাদের তাড়াবার জন্যই কি?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *