প্রতিহিংসা

প্রতিহিংসা

এ কাহিনি এতদিন কাউকে বলিনি। জানতাম বড়োদের বলে লাভ নেই, তারা একটি বর্ণও বিশ্বাস করবে না। সবকিছু তারা যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করতে চাই।

কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনা আছে, সেগুলো যুক্তি নির্ভর নয়। তাদের ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। তাই আমরা বলি অলৌকিক ঘটনা। কারণ পৃথিবীতে সচরাচর যা ঘটে, ঘটতে পারে, সেই মাপকাঠিতে এ কাহিনি বিচার চলে না।

এমন এক অলৌকিক ঘটনা আমার জীবনে ঘটেছিল। কাজকর্মের অবকাশে সে কাহিনি মনে পড়লে এখনও চমকে উঠি। মাঝরাতে স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে দেখি মাঝে মাঝে তারই ছায়া। ঘুম ভেঙে বিছানার উপর উঠে বসি। রাতটুকু আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে কাটাতে হয়।

আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগেকার কথা।

আমি তখন লোচনপুর হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। এক ইতিহাস ছাড়া অন্য সব বিষয়গুলোর মোটামুটি ভালোই ছিলাম, অঙ্কে বিশেষ ভালো, অনেক চেষ্টা করেও ইতিহাসের সাল তারিখগুলো কিছুতেই কণ্ঠস্থ করতে পারতাম না। মোঘল আর পাঠান বাদশাহের নামগুলো গোলমাল হয়ে যেত। সতীদাহ প্রথা বোধ হয় বেন্টিঙ্ক না ডালহৌসি কার অক্ষয় কীর্তি, সেটা মাথা চুলকে চুল উঠিয়ে ফেললেও মনে রাখতে পারতাম না। ফলে ইতিহাসের পরীক্ষার দিন আমার অবস্থা রীতিমতো সঙ্গীন হয়ে দাঁড়াত। বাড়ি থেকে স্কুল যাওয়ার পথে যতগুলো মন্দির পড়ত, সবগুলোতে মাথা ঠেকাতাম। রাস্তার দু-পাশের বড়ো সাইজের পাথরের নুড়িও বাদ দিতাম না।

আমার সঙ্গে পড়ত পশুপতি সামন্ত। ইয়া জাঁদরেল চেহারা। অমাবস্যাকেও হার মানানো গায়ের রং। ছেলেবেলায় মা-বাবা দুজনেই মারা গিয়েছিল। থাকত দূর সম্পর্কের এক পিসির কাছে। সেখানে তার লাঞ্ছনা-গঞ্জনা অন্ত ছিল না।

এই পশুপতি অন্যসব বিষয়ে জুত করতে পারত না, কিন্তু ইতিহাসে একেবারে নাম-করা ছাত্র। ইতিহাসের শিক্ষক নিবারণবাবু পর্যন্ত তাঁর ভক্তর তারিফ না-করে পারতেন না। আমরা যখন এক পানিপথের যুদ্ধেই আধমরা হবার উপক্রম হয়েছি, তখন পশুপতি সমস্ত প্রশ্নপত্রের উত্তর দিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে যেত।

কিন্তু অঙ্কে পশুপতি সামন্তের অবস্থা কাহিল। সোজা সোজা অঙ্কগুলো কষতেও সে হিমসিম খেয়ে যেত। একটা বানর চর্বি মাখানো বাঁশে ঘণ্টায় দু-ফিট উঠছে আর নামছে এক ফিট, বাইশ ফিট বাঁশে উঠতে তার কত দেরি হবে। এমন একটা নিরীহ প্রশ্নে পশুপতি মুখটা এমন করে বসে থাকত, মনে হত তার অবস্থা ওই বানরবর্গর চেয়েও মারাত্মক। গরমের ছুটিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পশুপতি অঙ্কের পর অঙ্ক কষে গেছে, গোটাদুয়েক খাতা শেষ, তাতেও বিশেষ সুবিধা করতে পারত না। বেচারী নিজেই বলত, আমার দ্বারা হবে না ভাই। অঙ্কটা কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকবে না।

আমাদের আমলে প্রাইভেট টিউটর রাখার এত রেওয়াজ ছিল না। তবু আমরা পশুপতিকে বলেছিলাম, একটা ভালো দেখে অঙ্কের মাস্টার বাড়িতে রেখে দে বরং।

পশুপতি কোনো উত্তর দেয়নি। ছলছল চোখে আমাদের দিকে চেয়েছিল। তার মনের ব্যথাটা বুঝতে আমাদের অসুবিধা হয়নি। পিসি কোনোরকমে বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছে। দু-বেলা দু-মুঠো ভাত আর সাধারণ জামা কাপড়ের বদলে তাকে দিয়ে রাজ্যের কাজ করিয়ে নেয়। ছুটির দিন আমরা দেখেছি, পশুপতি বসে বসে বেড়া বাঁধছে। এরপর প্রাইভেট টিউটরের বাড়তি খরচের কথা বললে পিসি তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়েই দেবে।

মনে মনে আমি কিন্তু পশুপতিকে হিংসে করতাম। কারণ যে ইতিহাসের লবণাক্ত সমুদ্রের আমি হাবুডুবু খাই, কূল পাই না, সেই ইতিহাসের যে তারিখগুলো আমার কাছে হুলের শামিল সেইসব সন তারিখগুলো পশুপতি এমনভাবে আওড়ে যায় যেন অতি সাধারণ ব্যাপার।

আর একটা কারণও ছিল। আমি আশা করেছিলাম পশুপতি আমায় অনুরোধ করবে। আমি অঙ্কে ভালো, মাঝে মাঝে তাকে যাতে অঙ্কের ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি। কিন্তু পশুপতি এ বিষয়ে কোনোদিন একটি কথাও বলেনি, অনুরোধ তো দূরের কথা!

আমরা ক্লাসে সবশুদ্ধ আটচল্লিশ জন ছেলে। তার মধ্যে টেস্টে পাশ করলাম চল্লিশ জন। পশুপতিও একজন। অঙ্কে সে পাশ করেনি, কিন্তু হেডমাস্টারের হাতে-পায়ে ধরে ফাইনালে বসার অনুমতি পেল। প্রতিশ্রুতি দিল, মাঝখানের সময়টা সব ছেড়ে শুধু অঙ্ক করবে।

আমার অবস্থা ঠিক বিপরীত। ইতিহাসে ফেল করলাম না বটে, তবে কোনোরকমে কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেলাম। একেবারে টলমলে অবস্থা। আমিও ঠিক করলাম, ছুটির বেশি সময়টুকু ইতিহাসেই নিয়োজিত করব।

প্রবেশিকা পরীক্ষা হত শহরে। বিবিগঞ্জে। আমাদের গ্রাম থেকে চার মাইল দূরে। বাবার এক আলাপী উকিল ছিল সেই শহরে, আমি পরীক্ষার আগের দিন সেখানে গিয়ে উঠলাম। ক্লাসের অন্য ছেলেরা কে কোথায় উঠেছিল খোঁজ রাখিনি। তখন খোঁজ রাখার মতো মনের অবস্থাও নয়।

পরীক্ষার হলে সকলের সঙ্গে দেখা হল। ইংরেজি, বাংলা দুটো পরীক্ষা নির্বিবাদে শেষ হল, পশুপতির সিট পড়েছে ঠিক আমার সিটের পিছনে।

তৃতীয় দিন অঙ্ক। হলে ঢোকবার মুখেই পশুপতির সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। একেবারে সামনাসামনি। কপালে আধুলি সাইজের টিপ। পকেট বোঝায় ফুল আর বেলপাতা। এতরকম অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়েও পশুপতি মুখে নির্ভীক ভাব ফোটাতে পারেনি। দুটি চোখে বিষণ্ণ বিপদের ছায়া।

পরীক্ষা আরম্ভ হল। চারটি অঙ্ক শেষ করে পাঁচ নম্বর অঙ্কটি শুরু করেছি, হঠাৎ চেয়ারটি নড়ে উঠল।

পিছনে পশুপতি। ভাবলাম পা সরাতে গিয়ে চেয়ারে হয়তো লেগে গিয়েছে। আবার পরীক্ষার খাতায় মনোনিবেশ করলাম।

আবার নড়ে উঠল চেয়ার। আড়চোখে পিছনে দেখতেই কানে ফিসফিস করে শব্দ হল।

‘অঙ্কগুলো দেখা না। আমি একটাও পারছি না।’

গোটা তিনেক গার্ড অবশ্য এধার-ওধারে ছিলেন। তাঁরা খুব কড়া এমন মনে হল না। দুজন তো হাতে খোলা বই নিয়ে পায়চারি করছেন। ছাত্রদের দিকে নয়, তাঁদের নজর বইয়ের পাতায়। আর একজন একেবারে কোণের দিকে দাঁড়িয়ে আছেন।

আমি যদি একপাশে একটু সরে বসি আমার খাতা দেখে অঙ্কগুলো টুকে নিতে পশুপতির কোনো অসুবিধা হবে না। সব টোকবার দরকার নেই। গোটা চার-পাঁচ অঙ্ক টুকে নিলেই যথেষ্ট। পাশ নম্বর হয়ে যাবে। কিন্তু আমি নিজেই শরীরটা দিয়ে খাতাটা আরও ঢেকে বসলাম। যাতে কোনোদিকে কোনো ফাঁক না থাকে। পশুপতি আমার কষা একটা অঙ্কও দেখতে না পায়।

মনকে বোঝালাম দুর্নীতির প্রশ্রয় দেওয়া কিছুতেই উচিত নয়। ধরা পড়লে দুজনেরই সর্বনাশ।

অবশ্য এসব নীতিকথার অন্তরালে আমার মনের হিংসেটাই প্রকট হয়ে উঠেছিল। পশুপতি আমার পিছনে, কাজেই ইতিহাসের দিন তার কাছ থেকে বিশেষ সাহায্য পাব এমন ভরসা কম। তা ছাড়া নিতান্ত বেখাপ্পা প্রশ্ন যদি না-আসে, তাহলে ইতিহাস হয়তো কোনোরকমে আমি পাশ করে যেতে পারি। কিন্তু পশুপতির খেদোক্তি শুনে মনে হচ্ছে, একটা অঙ্কও শেষ পর্যন্ত ঠিক করতে পারেনি।

আরও কয়েক বার চেয়ারটা নড়ে উঠল, পশুপতির করুণ অনুনয়ের সুর কানে এল। আমি অনড় অটল।

দেখলাম সময় শেষ হবার আধঘণ্টা আগে পশুপতি অঙ্কের খাতা জমা দিয়ে টলতে টলতে বাইরে চলে এল।

পরের দিন ইতিহাস। আমার অগ্নিপরীক্ষার দিন। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে ইতিহাসের বইগুলো নিয়ে বসলাম। দরকার হলে অনেক রাত অবধি পড়ব। মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পতন।

কিন্তু যখন পড়তে লাগলাম মনে হল বিশেষ সুবিধা করতে পারছি না। মোগল সম্রাটদের ছুঁচালো দাড়িগুলো যেন সর্বাঙ্গে ফুটতে লাগল। আগে বাবর না আকবর কিছুতেই মনে করে উঠতে পারলাম না! দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গেল হর্ষবর্ধনের বাপের নাম গোবর্ধন।

ফরাসিদের পীঠস্থান ফরাসডাঙা পটলডাঙার কাছে কিনা সেটা নিয়েও চিন্তিত হয়ে পড়লাম।

আসল কথা, একে ইতিহাসের জ্ঞান খুব গভীর নয়, তার ওপর আসন্ন বিপদের উত্তেজনা সব মিলে যেটুকু এত কষ্ট করে এতদিন ধরে কণ্ঠস্থ করেছিলাম সব বেমালুম ওলোটপালোট করে দিল।

সর্বনাশ, একেবারে মাথায় হাত দিয়ে বসলাম।

হঠাৎ খুট করে শব্দ! দরজার দিকে চেয়েই চমকে উঠলাম।

চৌকাঠের ওপর পশুপতি। সেই কপালে সিঁদুরের ফোঁটা, পকেট ভরতি ফুল, বেলপাতা।

‘এ কীরে তুই?’

‘চলে এলাম। একটা গোপনীয় খবর আছে।’

‘গোপনীয় খবর?’ প্রশ্ন করতে গিয়ে মনে পড়ে গেল রাত ন-টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে উকিলবাবুদের গেট বন্ধ হয়ে যায়। বাইরে থেকে লোক ঢোকার কোনো উপায় নেই।

‘তুই ঢুকলি কী করে?’

‘গেটের কাছে চাকর দাঁড়িয়েছিল একটা, তাকে তোর কথা বলতে গেট খুলে দিল।’ কথা বলতে বলতে পশুপতি এগিয়ে এসে আমার তক্তপোশের ওপর বসল।

‘আমার তো এ শহরে চেনাজানা কেউ নেই। আমি এখানে এক চায়ের দোকানের পিছনে চারপাই পেতে আশ্রয় নিয়েছি। একটু আগে সেখানে দুজন শিক্ষক এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন সম্ভবত আমাদের ইতিহাসের প্রশ্নপত্র করেছেন। চায়ের দোকানে বসে তাঁরা সেই বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। আমি পার্টিশনের আড়াল থেকে বসে বসে শুনেছি।’

‘বলিস কী?’ আমি উত্তেজনায়, আনন্দে টান হয়ে বসলাম।

‘আমি প্রশ্নগুলো বলছি তুই লিখে নে। তোর কথাই আগে মনে পড়ল। তা ছাড়া তোকে এ-বাড়িতে ঢুকতে দেখেছি। তোর অস্তানা চিনি, তাই ছুটে আগে তোর কাছেই এলাম।’

পশুপতির এত কথা কানে গেল না। আমি কাগজ পেনসিল নিয়ে একেবারে তৈরি। হাতে সময় কম। প্রশ্নগুলো জানতে পারলে সারারাত ধরে একবার চেষ্টা করব।

‘লেখ, অশোকের রাজ্যপ্রণালী, আকবর ও আওরঙ্গজেবের তুলনামূলক সমালোচনা, মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ, শিবাজীর সাম্রাজ্য বিস্তার কাহিনি, লর্ড কর্নওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত— এই কটাই আমি শুনতে পেয়েছি।’ পশুপতি বলল।

‘যথেষ্ট, যথেষ্ট,’ উৎসাহে আমি চেঁচিয়ে উঠলাম, ‘এই ক-টা ঠিকমতো লিখতে পারলেই হয়ে যাবে।’ পাশ করার ভাবনা গেল। হয়তো ভালো নম্বরও পেয়ে যেতে পারি।

এতক্ষণ পরে পশুপতির জন্য আমার মায়া হল। বেচারীকে কয়েকটা অঙ্ক দেখালেই হত। ইতিহাসের প্রশ্ন জানতে পেরে ছুটে আগে তো আমার কাছেই এসেছে।

জিজ্ঞাসা করলাম, ‘অঙ্ক কেমন হল?’

স্পষ্ট দেখতে পেলাম পশুপতির মুখে বিষণ্ণ একটা ছায়া নামল। একটু যেন বিমর্ষ ভাব।

অন্যদিকে চেয়ে বলল, ‘ওই একরকম। যা হয়ে গেছে তার কথা আর ভাবছি না। পিছন দিকে দেখলে নিজের বড়ো ক্ষতি হয়। আমি চলি। তুই পড়।’

পশুপতি বেরিয়ে গেল। প্রায় সারা রাতই পড়ালাম। ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। উঠতে দেরি হয়ে গেল। কোনোরকমে স্নান সেরে, দুটি মুখে দিয়ে ছুটতে ছুটতে হলে যখন গিয়ে পৌঁছোলাম, তখন পরীক্ষা শুরু হতে আর মিনিট দুয়েক।

বেশ খুশি হয়েই প্রশ্নপত্রটা টেনে নিলাম। তারপর অনেকক্ষণ আর চোখের সামনে কিছু দেখতে পেলাম না। পুঞ্জীভূত ধোঁয়া কখনো গাঢ়, কখনো একটু তরল!

সারা প্রশ্নপত্রে অশোকের নাম নেই। বাবর আর আকবরের তুলনার বদলে সাজাহানের সৌন্দর্যপ্রিয়তার প্রশ্ন রয়েছে। মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ নয়, মারাঠা রাজ্যের পতনের কারণ নির্ণয় করতে দেওয়া হয়েছে। শিবাজীর জীবনী কোথাও নেই, তার পরিবর্তে হায়দার আলীর উত্থানের কাহিনি।

মোটকথা পশুপতির বলা একটি প্রশ্নও আসেনি।

কিছুক্ষণ পর গোটা প্রশ্নপত্রটাই চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম দু-চোখ জলে ভরে এসেছে।

এমন করেই বুঝি পশুপতি আমার উপর প্রতিশোধ নিল।

কিন্তু বিস্মিত হবার আমার আরও একটু বাকি ছিল।

ঘণ্টা বাজতে কোনোরকমে খাতাটা জমা দিয়ে বাইরে চলে এলাম। একটু দাঁড়ালাম যদি পশুপতির সঙ্গে দেখা হয়!

পশুপতিকে দেখতে পেলাম না, রাজীব এসে সামনে দাঁড়াল। আমাদের হেডমাস্টারের ছেলে।

‘ব্যাপারটা শুনেছ?’

‘কী ব্যাপার?’

‘পশুপতি কাল পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে রেলের তলায় মাথা দিয়েছে।’

সমস্ত শরীরটা কেঁপে উঠল। জড়ানো কণ্ঠে বললাম, ‘কে বললে?’

‘বাবাকে খবর পাঠানো হয়েছিল। বাবা পশুপতির পিসিকে নিয়ে আজ সকালে এসে পৌঁছেছেন। বাবার কাছেই শুনলাম কোমর থেকে একেবারে দু-খণ্ড হয়ে গেছে।’

‘কটার সময় হয়েছে এটা?’

‘আকন্দপুর এক্সপ্রেস এখান দিয়ে ছ-টা তিরিশে যায়, সেই সময়েই।’

‘কিন্তু ও যে—’ কথাটা বলতে গিয়েই থেমে গেলাম। যে পশুপতি সাড়ে ছ-টায় শেষ হয়ে গিয়েছে সে রাত সাড়ে ন-টায় বহাল তবিয়তে আমার ঘরে গিয়ে আমাকে ইতিহাসের একগাদা প্রশ্ন বলে এসেছে। এমন আজগুবি কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। বরং আমাকেই মাতাল সাব্যস্ত করবে।

মাথা নীচু করে আস্তে আস্তে সরে এলাম।

শেষ মুহূর্তে হলে ঢুকেছিলাম, সারাক্ষণ উত্তেজিত অবস্থা, কাজেই পিছনের সিটে পশুপতি এসেছে কিনা সেটা আদৌ লক্ষ করিনি।

কিন্তু একটা কথা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারলাম না।

মৃত্যুর পরেও কি পরলোকগত আত্মার বিদ্বেষ, প্রতিহিংসার প্রবৃত্তি থাকে? তা যদি নাই থাকবে, তবে পশুপতি ওভাবে প্রতিশোধ নিতে কেন আবার আমার কাছে এসে দাঁড়াবে!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *