বিনোদ ডাক্তার

বিনোদ ডাক্তার

আমার চাকরিই এই রকমের। এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় ঘুরে বেড়ানো। ব্যাঙ্কের হিসাব দেখা। কোথাও তিন-চার দিনেই কাজ হয়ে যায়, আবার কোথাও দিন কুড়িও লেগে যায়। এটা নির্ভর করে ব্যাঙ্কের হিসাবের জট কেমন পাকিয়েছে তার ওপর।

আগে ব্যাঙ্কের শাখা কেবল বড়ো বড়ো শহরেই থাকত। কিন্তু এখন চাষিদের সুবিধার জন্য আধা শহরে, গ্রামেও শাখা হচ্ছে। আমাকে বেশিরভাগ সময় এইসব আধা শহরেই যেতে হত।

এই ধরনের কাজে একবার বিরামপুরে যেতে হয়েছিল। সকালে অফিসে গিয়ে শুনলাম বেলা তিনটের গাড়িতে রওনা হতে হবে। আমার এক প্রস্থ বিছানা বাঁধাই থাকত। সুটকেস গুছিয়ে নিয়ে ট্রেনে চড়ে বসলাম।

বিরামপুর স্টেশনে যখন নামলাম সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। চারদিকে কেরোসিনের আলো জ্বলে উঠেছে। রাস্তায় লোকচলাচল বিশেষ নেই।

ব্যাঙ্ক থেকে একটি লোক আমায় নিতে এসেছিল। আমরা দুজনে সাইকেল-রিকশায় চড়ে বেশ কিছুটা গিয়ে একতলা লাল রঙের বাড়ির সামনে পৌঁছোলাম।

সঙ্গের লোকটি বলল, ‘নামুন স্যার, এখানেই আপনার থাকবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

দু-খানা ঘর, মাঝখানে ছোটো উঠান, ওপাশে রান্নাঘর। একজনের পক্ষে যথেষ্ট।

দরজার কাছে একটি লোক বসেছিল। সে আমাদের দেখে উঠে দাঁড়াল।

ব্যাঙ্কের লোকটি বলল, ‘স্যার, আপনার রান্নাবান্না, বাসন মাজা, ঘরদোর ঝাড়ামোছার কাজ এ-ই করবে।’

রাত ন-টার মধ্যেই খাওয়া শেষ করে শোবার আয়োজন করলাম। কাজের লোকটা চলে গেছে। এখান থেকে তার বাড়ি চার মাইল দূরে। আবার কাল ভোর ছ-টায় আসবে। শোবার মিনিট দশেকের মধ্যে পেটের যন্ত্রণা শুরু হল। অসহ্য যন্ত্রণা! শরীর একেবারে কুঁকড়ে যায়। মনে হয় দমবন্ধ হয়ে যাবে।

এরকম আমার মাঝে মাঝে হয়। সেইজন্য সবসময় ওষুধ কাছে রাখি।

হ্যারিকেনের শিখাটা বাড়িয়ে দিয়ে সুটকেসটা খুললাম। তন্নতন্ন করে খুঁজলাম। সর্বনাশ! ওষুধের শিশিটা ফেলে এসেছি। বেশ মনে আছে, শিশিতে গোটা আটেক বড়ি ছিল।

এখন উপায়! বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে করতে হঠাৎ মনে পড়ে গেল, আসবার সময় কাছেই একটা ডাক্তারখানা চোখে পড়েছিল। ডাক্তারখানার নামটা অদ্ভুত। আরাম ঘর। তখন ডাক্তারখানা বন্ধ ছিল।

হাতঘড়িতে সময় দেখলাম ন-টা চল্লিশ। এত রাতে এই মফসসল শহরে ডাক্তারখানা কি খোলা থাকবে? যাই হোক, আমাকে একবার চেষ্টা করে দেখতেই হবে। যন্ত্রণা ক্রমেই অসহ্য হয়ে উঠছে।

যদি ডাক্তারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েই থাকে, তাহলে খোঁজ করে দেখতে হবে ডাক্তার হয়তো ওই বাড়িতেই থাকে। দরজা ধাক্কা দিয়ে তাঁকে উঠিয়ে একটা ব্যবস্থা করতে বলতে হবে।

কোনোরকমে উঠে দরজায় তালা লাগিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। চারদিক অন্ধকার। রাস্তার বাতিগুলো নিভিয়ে দিয়েছে।

দু-হাতে পেট চেপে প্রায় কুঁজো হয়ে এগিয়ে গেলাম। বরাত ভালো। আরাম ঘর খোলা। টিমটিমে আলো দেখা যাচ্ছে।

ঢুকতেই দেখা হয়ে গেল। পরনে কালো রং-এর সুট। কালো টাই। ময়লায় তেলচিটে অবস্থা। একমাথা পাকা চুল। প্রায় কাঁধ পর্যন্ত নেমে এসেছে। তোবড়ানো মুখ। দুটি চোখ রক্তের মতন লাল।

‘কী চাই?’

রোগা চেহারা হলে হবে কী, বাজখাঁই গলার আওয়াজ। পেটের যন্ত্রণার কথা বললাম।

আমার কথা শেষ হবার আগেই ডাক্তার ধমক দিয়ে উঠল, ‘বুঝেছি, বুঝেছি, অম্লশূল। বসুন, ওই বেঞ্চটায়।’

বসলাম।

ডাক্তার পিছনের কাচভাঙা আলমারি থেকে একটা শিশি বের করে কাগজে ঢেলে আমাকে দিল, ‘খেয়ে নিন।’

তামাকের গুঁড়োর মতন কালো রং। বিশ্রী গন্ধ। ভয় হল, কেমন ডাক্তার জানি না, কী ওষুধ ঠিক নেই। খাওয়া কি ঠিক হবে?

‘সন্দেহ হলে ফেলে দিন। খেতে হবে না।’

ডাক্তার গর্জন করে উঠল। টেবিল, বেঞ্চ, আলমারি সেই আওয়াজে থরথর করে কেঁপে উঠল।

সঙ্গে সঙ্গে আমি ওষুধটা গালে ঢেলে দিলাম।

কী আশ্চর্য, মিনিট পাঁচেকও লাগল না, ব্যথাটা একবারে সেরে গেল! জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনাকে কত দিতে হবে?’

আবার বোমা ফাটল।

‘কে মশাই আপনি, বিনোদ ডাক্তারকে পয়সা দিতে চাচ্ছেন? কত লাখ টাকার মালিক আপনি? জানেন না, আমি পয়সা নিয়ে চিকিৎসা করি না।’

নিজের দোষ কাটাবার জন্য মৃদুকণ্ঠে বললাম, ‘কিছু মনে করবেন না। আমি এখানে নতুন এসেছি। এসব জানা ছিল না। আপনার ডাক্তারখানা কতক্ষণ খোলা থাকে?’

‘সারারাত,’ বলেই বিনোদ ডাক্তার খিঁচিয়ে উঠল, ‘আপনার আর কিছু দরকার আছে? না-থাকে তো উঠে পড়ুন! আমার অন্য রোগীরা আসবে।’

বাড়ি চলে এলাম। অনেক রাত অবধি বিনোদ ডাক্তারের কথা চিন্তা করলাম। ভালো ওষুধ হয়তো দেয়, কিন্তু মেজাজটা রুক্ষ। ভালোভাবে কথা পর্যন্ত বলতে পারে না।

দিন দুয়েক পর ব্যাঙ্কের হিসাব দেখতে দেখতে ম্যানেজার অনিলবাবুকে কথাটা বললাম।

‘ছোটো জায়গা হলে কী হবে মশাই, এখানকার ডাক্তার একেবারে ধন্বন্তরি।’

‘কার কথা বলছেন?’

‘ওই যে আরাম ঘর-এর বিনোদ ডাক্তার।’

আমার উত্তর শুনে অনিলবাবু কিছুক্ষণ আমার দিকে একদৃষ্টে দেখল, তারপর জিজ্ঞাসা করল, ‘বিনোদ ডাক্তারের সঙ্গে দেখা হল কোথায়?’

বললাম, ‘দিন দুয়েক আগে পেটে একটা ব্যথা হয়েছিল। এরকম আমার মাঝে মাঝে হয়। বিনোদ ডাক্তারের একটা বড়িতেই সেরে গেলাম। আশ্চর্য ওষুধ!’

অনিলবাবু আর কিছু বলল না, কিন্তু লক্ষ করলাম সারাটা দিন আমকে যেন এড়িয়ে চলল।

ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না। বিনোদ ডাক্তার তার বদমেজাজের জন্য বোধ হয় এ এলাকায় কারও প্রিয়পাত্র নয়। এইজন্য অনিলবাবুও সম্ভবত তাকে পছন্দ করে না। তাই আমার বিনোদ ডাক্তারের কাছে যাওয়াটা অনিলবাবু ভালো চোখে দেখেনি।

কিন্তু আমার অবস্থা আমিই জানি। সারাটা রাত সেই নিদারুণ যন্ত্রণা সহ্য করে পরের দিনই অনিলবাবুর পছন্দসই ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

দিন কয়েক পর হঠাৎই খেয়াল হল বিনোদ ডাক্তারের সঙ্গে একবার দেখা করে আসি। খাওয়াদাওয়া শেষ। গরমের জন্য ঘুমও আসছে না। আরাম ঘর তো অনেক রাত অবধি খোলা থাকে।

দরজায় তালা দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় জনমানব নেই। এ সময় থাকবারও কথা নয়।

আরাম ঘর-এর কাছাকাছি যেতেই হাসির শব্দ কানে এল। অনেক লোকের মিলিত কণ্ঠের হাসি। খুব উচ্চরোলে।

তাহলে কি এই সময় বিনোদ ডাক্তারের বন্ধুরা আড্ডা জমায়? আড্ডা দেবার অদ্ভুত সময় তো!

সামনের দিকে কেউ নেই। আওয়াজ আসছে ভিতরের ঘর থেকে। ঘরও ঠিক বলা যায় না। আলমারি দিয়ে একটা ঘরই আলাদা করা।

কৌতূহল হল। দুটো আলমারির ফাঁক দিয়ে ভিতরে উঁকি দিলাম। পিঠের শিরদাঁড়া বেয়ে যেন বরফের স্রোত নেমে গেল। পা দুটো কেঁপে উঠল থরথর করে।

টেবিলের ওপর একটা কঙ্কাল শুয়ে। বিনোদ ডাক্তার স্টেথোসকোপ দিয়ে তার বুক পরীক্ষা করতে করতে বলছে, ‘মগ ডালে ডালে বেড়িয়ো না, তোমার বুকের হাড় খুবই দুর্বল। কোনোদিন মট করে ভেঙে যাবে। প্লাস্টার করে শুইয়ে রাখব, তখন মজাটা টের পাবে।’

বিনোদ ডাক্তারের কথা শুনে কঙ্কালটার সে কী হাসি!

ওপরের দিকে চেয়ে দেখি একটা কঙ্কাল শূন্যে দোল খাচ্ছে।

বিনোদ ডাক্তার তার দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলল, ‘রোজ এইরকম ব্যায়াম করবি, তবে দেহ মজবুত হবে।’

হঠাৎ হাসির শব্দে চোখ ফিরিয়ে দেখলাম, কোণের দিকে বেঞ্চের ওপর বসে একটা কঙ্কাল শিশি থেকে বড়ি নিয়ে অনবরত মুখে ফেলছে আর হাসছে। অদ্ভুত হাসি। ঠিক দুটো হাড়ে ঠোকাঠুকি করলে যেমন শব্দ হয়, তেমনই।

কঙ্কালটা হাসতে হাসতেই বলল, ‘বিনোদ ডাক্তার তোমার চোগা চাপকান খুলে আমাদের মতন হালকা হও দেখি। তোমার গরমও লাগে না।’

কঙ্কালটা আচমকা থেমে গেল। আর কথা বলতে পারল না।

বিনোদ ডাক্তার বলল, ‘কী হল হে?’

কঙ্কালটা অনেক কষ্টে উচ্চারণ করল, ‘গলায় বড়িটা আটকে গেছে।’

বলেই কঙ্কালটা দুটো হাত দিয়ে নিজের গলাটা মোচড়াল। মাথাটা গলাসুদ্ধ তার হাতে খুলে এল।

সেটা বার কয়েক বেঞ্চে ঠুকেই বলল, ‘ব্যস, বড়িটা নেমে গেছে।’

ব্যাপার দেখে আমার অবস্থা কাহিল। ভয়ে মুখ থেকে একটা আর্তনাদ বের হয়ে পড়ল।

সঙ্গে সঙ্গে কঙ্কালগুলো সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল, ‘কে কে ওখানে?’

আমি আর তিলমাত্র দেরি না-করে ছুটতে শুরু করলাম। প্রাণপণ শক্তিতে। কোনোদিকে না-চেয়ে।

পিছনে অনেকগুলো হাড়ের খটমট শব্দ। ক্রমেই কাছে আসছে।

তাড়াতাড়ি তালা খুলে ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। বুকটা দুপদুপ করছে। এখনই বুঝি দম বন্ধ হয়ে যাবে।

সারাটা রাত বিছানায় বসে কাটালাম। কেবল মনে হল খটখট শব্দ যেন বাড়ির চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখনই হয়তো দরজায় কড়া নাড়বে। তারই বা দরকার কী? এরা তো দরকার হলে বন্ধ দরজার মধ্যে দিয়েই চলে আসতে পারে।

আমি খুব ভীতু এমন অপবাদ কেউ দেবে না। ভূত, আত্মা এসবে আমার চিরদিনই আস্থা কম। কিন্তু চোখের সামনে যে দৃশ্য দেখেছি, তাকে অস্বীকার করি কী করে?

ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। জোর খটখট শব্দে চমকে জেগে উঠলাম।

না, ভয়ের কিছু নেই। কাজের লোকটা দরজা ঠেলছে।

উঠে দরজা খুলে দিতে সে জিজ্ঞাসা করল, ‘বাবুর কি শরীর খারাপ?’

‘কেন বলো তো?’

‘চেহারাটা কেমন দেখাচ্ছে। তা ছাড়া আপনি তো খুব ভোরে ওঠেন।’

ছোটো করে শুধু বললাম, ‘রাত্রে ভালো ঘুম হয়নি।’

একটা সুবিধা, আজ রবিবার। ছুটির দিন। খাওয়াদাওয়ার পর সারাটা দুপুর ঘুমাব। তাহলেই শরীর ঠিক হয়ে যাবে।

কিন্তু আগের রাতে দেখা সেই বীভৎস দৃশ্য চোখের সামনে থেকে তাড়াব কী করে?

বিনোদ ডাক্তারের সম্বন্ধে সবকিছু আমাকে জানতেই হবে।

কাজের লোকটির নাম যোগেন।

যখন দুপুরে যোগেন ভাতের থালা রাখছিল তখন তাকে প্রশ্ন করলাম, ‘আচ্ছা যোগেন, তুমি কতদিন এখানে আছ?’

‘কোথায় বাবু?’

‘এই বিরামপুরে।’

মাথা চুলকে যোগেন বলল, ‘তা বিশ-বাইশ বছর হবে বাবু। কেন, বলুন তো?’

‘তুমি বিনোদ ডাক্তারকে চেন?’

বিনোদ ডাক্তারের নামটা কানে যেতেই যোগেনের মুখের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। চোখের দৃষ্টিতে ভয়ের ছাপ।

‘চিনতাম বাবু। উনি এলাকার নামকরা ডাক্তার ছিলেন। ওঁর ওষুধ যেন কথা বলত।’

‘ছিলেন বলছ কেন? এখন নেই।’

‘না বাবু। বছর পাঁচেক হল মারা গেছেন।’

‘সেকী!’

‘হ্যাঁ, বাবু, চার বন্ধু মিলে পাশা খেলছিলেন, হঠাৎ ঝড় উঠেছিল। যেমন হাওয়ার জোর, তেমনই বৃষ্টির দাপট। কত বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছিল, কত গাছ যে উপড়ে পড়েছিল, তার আর ঠিকঠিকানা নেই।

আরাম ঘরের পাশে বিরাট একটা বট গাছ ছিল। সেই বট গাছ শিকড়সুদ্ধ উপরে পড়েছিল আরাম ঘরের ছাদের ওপর। ব্যস, বিনোদ ডাক্তার আর তিন বন্ধু খতম। কেউ একটু চেঁচাবারও অবকাশ পাননি। শিকড়ের মধ্যে এমনভাবে চার বন্ধুর দেহ চাপা পড়ে গিয়েছিল, যে পরের দিন তাঁদের দেহ কেটে বের করতে হয়েছিল।

বাধা দিয়ে বললাম, ‘কিন্তু আমি বিনোদ ডাক্তারকে যে দেখেছি।’

‘অনেকেই দেখে বাবু। রাত বিরেতে আরাম ঘরের পাশ দিয়ে যাদের যেতে হয়, তারাই দেখেছে, বিনোদ ডাক্তার বন্ধুদের ওষুধ দিচ্ছে, কিংবা চারজনে মিলে পাশা খেলছে। তা ছাড়া দিনের বেলাতেও দেখা যায়, আরাম ঘরের সামনের বেল গাছটা, ঝড় নেই, বাতাস নেই, ডালপালাসুদ্ধু খুব দুলছে। ওই গাছেই ওঁদের বাস কিনা।’

কথা শেষ করে যোগেন দুটো হাত কপালে ঠেকাল।

চুপ করে শুনে গেলাম। অন্যসময় হলে যোগেনের একটা কথাও বিশ্বাস করতাম না, কিন্তু আমি নিজের চোখেই তো সব দেখেছি।

সেদিন বিকাল হতে, সূর্যের আলো থাকতে থাকতে বের হয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য, দিনের আলোয় ভালো করে আরাম ঘরটা দেখব। যদি সম্ভব হয়, বিনোদ ডাক্তারকেও দেখব। ওইখানেই তো ডাক্তারের আস্তানা।

আরাম ঘরের সামনে গিয়েই থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম।

আরাম ঘরের দরজাই দেখা গেল না। তার সামনে আগাছার জঙ্গল। আকন্দ আর ফণীমনসার ঝোপে বোঝাই। বুঝতেই পারা যায়, বহুদিন এ দরজা খোলা হয়নি। খোলা সম্ভব নয়।

একটু এগিয়ে যেতে তক্ষক ডেকে উঠল। অস্বাভাবিক রুক্ষ স্বর। ঠিক যেন বিনোদ ডাক্তারের গলা।

পিছিয়ে আসতেই চোখে পড়ল।

চারদিক থমথমে। কোথাও ছিঁটেফোঁটা বাতাস নেই। অথচ সামনের বেল গাছের উঁচু দিকের কয়েকটা ডাল সবেগে দুলছে। ঠিক মনে হল, বিনোদ ডাক্তারের অশরীরী বন্ধুরা ব্যায়াম করছে নিজেদের দেহের খাঁচা ঠিক রাখার জন্য।

বাড়ি ফিরে এলাম। আরাম ঘরের কাছাকাছি থাকতে আর সাহস হল না। বিরামপুরেও নয়।

শরীর হঠাৎ খুব খারাপ হয়ে পড়েছে, এখানে থাকা সম্ভব নয়, এই কথা চিঠিতে লিখে যোগেনকে বললাম পরের দিন সকালে চিঠিটা ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের হাতে দিতে।

সন্ধ্যার ঝোঁকেই সাইকেল-রিকশা ডেকে বিছানা সুটকেস নিয়ে স্টেশনের দিকে রওনা হয়ে পড়লাম।

আমার পক্ষে বিরামপুরে থাকা আর সম্ভব নয়। আবার যদি কোনো রাতে পেটের যন্ত্রণা শুরু হয়, তাহলে যন্ত্রণায় পাগল হলে হয়তো সব ভুলে বিনোদ ডাক্তারের কাছে গিয়েই দাঁড়াব।

কিন্তু তার দেওয়া ওষুধ কি আর খেতে পারব? খেতে সাহস হবে?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *