দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই – ৬

অধ্যায় ছয়

কি ব্যাপার মনে করা বেশ কষ্টকর। এখন আমি ভাবছি জেনের সাথে ডেটের পর স্ট্র্যাডলেটারের ফিরে আসার কথাটা মনে নেই। মানে আমার এখন আসলে ঠিক মনে নেই করিডোরে স্ট্র্যাডলেটারের পদশব্দ শোনার সময় আমি আসলে কী করছিলাম। খুব সম্ভবত তখনো জানালা দিয়ে বাইরের দিকেই তাকিয়েছিলাম, কিন্তু ঠিকঠাক মনে নেই আমার। আমি আসলে তখন খুবই উদ্বিগ্ন হয়েছিলাম, সেজন্যই কিছু মনে নেই। আমি যখন কোনোকিছু নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকি, তখন আসলে আমার অন্য কিছুর দিকে মনোযোগ থাকে না। দুঃশ্চিন্তা করার সময় কখনো কখনো আমার বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়লেও যাই না। আমি কখনো আমার উদ্বেগকে বাধা দিতে চাই না। কেউ যদি স্ট্র্যাডলেটারকে চিনে থাকে, তাহলে সেও আমার মতোই উদ্বেগে থাকত। ঐ হারামজাদার সাথে বেশ কয়েকবার ডাবলডেটে গিয়েছি আমি, তাই জানি আমি কী নিয়ে উদ্‌বিগ্ন ছিলাম। একদম নির্লজ্জ মানুষ ও। আসলেই নির্লজ্জ।

যাই হোক, করিডোরটা ছিল লিনোলিয়ামের, আর ওটার ওপর দিয়ে স্ট্র্যাডলেটারের রুমের দিকে হেঁটে আসার শব্দটা একদম স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল। আমার আসলে মনেও নেই তখন আমি কোথায় বসেছিলাম—জানালার ধারে নাকি আমার চেয়ারে না তার চেয়ারে। সত্যি বলছি, আমার আসলেই মনে নেই।

ঠান্ডাকে গালি দিতে দিতে রুমে এসে ঢুকলো স্ট্র্যাডলেটার। তারপর বলল, ‘মানুষজন সব কই গেছে? পুরো জায়গাটা তো প্রায় মর্গ হয়ে আছে দেখি।’ তাকে কোনো উত্তর দিলাম না। এমনিতেই ওটা ছিল শনিবার। শনিবার রাতে সবাই কী করে? হয় বাইরে কোথাও ঘুরতে যায় নয়তো ঘুমিয়ে পড়ে অথবা উইকএন্ডে বাসায় চলে যায়। এটা না বুঝার মতো স্টুপিড তো আর সে না। আর যদি স্টুপিড হয়েই থাকে, তাহলে তো তাকে উত্তর দিয়েও কোনো লাভ নেই। এরপর পোশাক খুলতে শুরু করল ও। রুমে ঢোকার পর একবারও সে জেনের ব্যাপারে কিছু বলেনি। একটা শব্দও না। আমিও কিছু বলিনি। আমি শুধু তাকে দেখছিলাম। সে শুধু তাকে কোটটা দেওয়ার জন্য একবার ধন্যবাদ জানালো। এরপর কোটটা হ্যাঙারে ঝুলিয়ে রেখে দিল ক্লজেটে।

এরপর সে টাই খুলতে খুলতে আমাকে জিজ্ঞেস করল কম্পোজিশনটা লিখে শেষ করেছি কি না? ওটা তার বিছানার ওপর রাখা আছে, জানালাম। এগিয়ে গিয়ে কম্পোজিশনটা হাতে নিলো। শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে কম্পোজিশনটা পড়ে দেখছে। কম্পোজিশনটা পড়ছে আর আঙুল দিয়ে তার উন্মুক্ত বুক আর পেটে টোকা দিচ্ছে। সে সবসময়ই এই কাজটা করত। নিজেকে নিয়ে খুবই পাগল ছিল ও।

তারপর হঠাৎ করে সে বলে উঠলো, ‘ওহ খোদা, হোল্ডেন। এটা তো দেখি বেসবল গ্লাভস নিয়ে লেখা।’

‘তো কী হয়েছে?’ বললাম। একদম শীতল গলায়।

‘তো কী হয়েছে মানে? আমি তো তোমাকে বলেছিই যে লেখাটা হতে হবে রুম বা বাড়ি বা এমনকিছু নিয়ে।

‘তুমি আমাকে বলেছো বর্ণনামূলক করে লিখতে। তো সেই লেখাটা বেসবল গ্লাভস নিয়ে হলে সমস্যা কই?’

‘ধ্যাত্তোরি!’ প্রচণ্ড ক্ষেপে গেলো স্ট্র্যাডলেটার। আসলেই অনেক রেগে গিয়েছিল সে। ‘তুমি সবসময়ই ভুল কাজ করো,’ বলে তাকালো আমার দিকে। ‘এটা অবাক করা কিছু না যে তুমি এখন বহিষ্কৃত হচ্ছো। কোনো কিছুই তুমি ঠিকঠাক মতো করতে পারো না। আসলেই, একটা কাজও তুমি সঠিকভাবে করতে পারো না।

‘আচ্ছা, আচ্ছা, ওটা আমাকে দিয়ে দাও তাহলে,’ বলে তার হাত থেকে কম্পোজিশনটা কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেললাম।

‘ওটা ছিঁড়লে কেন এখন?’ বলল ও।

তাকে কোনো উত্তর দিলাম না। কাগজের ছেঁড়া টুকরোগুলো ওয়েস্টবাস্কেটে ফেলে রাখলাম শুধু। তারপর গিয়ে শুয়ে পড়লাম আমার বিছানায়। দুইজনই অনেকক্ষণ কোনো কথা বললাম না। স্ট্র্যাডলেটারও ততক্ষণে শুধু শর্টস ছাড়া গায়ের সব পোশাকই খুলে ফেলেছে। বিছানায় শুয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। ডর্মের ভেতরে সিগারেট টানার অনুমতি ছিল না। তবে গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে বা কেউ গন্ধ টের না পাওয়ার মতো অবস্থায় থাকলে সিগারেট টানা যেত। তাছাড়া আমি তখন সিগারেট ধরিয়েছিলাম শুধু স্ট্র্যাডলেটারকে বিরক্ত করার জন্য। নিয়ম ভাঙলে স্ট্র্যাডলেটার খুব ক্ষেপে যেতো। সে কখনো ডর্মে সিগারেট খায়নি। শুধু আমি খেতাম।

তখন পর্যন্ত সে জেনকে নিয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি। তাই শেষমেশ আমিই জিজ্ঞেস করলাম, ‘শুনেছিলাম তো জেন মাত্র সাড়ে নয়টা পর্যন্ত থাকবে। কিন্তু তুমি তো দেখি এর অনেক পরে ফিরেছো। তাকে কি দেরি করতে রাজি করতে পেরেছিলে?’

স্ট্র্যাডলেটার তখন তার বিছানার ধারে বসে পায়ের নখ কাটছিল। আমার প্রশ্ন শুনে বলল, ‘হ্যাঁ, কয়েক মিনিট। শনিবার রাতে কোন পাগলটা মাত্র সাড়ে নয়টা পর্যন্ত বাইরে থাকতে চায় বলো!’ খোদা, কথা শুনে তার ওপর শুধু ঘৃণা লাগছিল আমার।

‘নিউইয়র্ক গিয়েছিলে?’ আমি বললাম।

‘পাগল নাকি তুমি? সাড়ে নয়টার মধ্যে কি নিউইয়র্কে গিয়ে ফিরে আসা সম্ভব?’

‘হুম, ব্যাপারটা বেশ কঠিন।’

আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো ও। ‘শুনো,’ সে বলল, ‘তোমার যদি রুমে সিগারেট খাওয়াই লাগে, তাহলে অন্তত টয়লেটে চলে যাও। তুমি হয়তো এখান থেকে চলে যাচ্ছো, তবে গ্রাজুয়েশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাকে এখানেই থাকতে হবে।’

তার কথাটা শুনেও না শোনার ভাব করলাম। বরং তার কথার পর সিগারেট টানা আরো বাড়িয়ে দিলাম। একপাশে ঘুরে তার দিকে তাকিয়েই সিগারেট টানছিলাম আর তার পায়ের নখ কাটা দেখছিলাম। কী এক অদ্ভুত স্কুল! ওখানে সবসময়ই কাউকে না কাউকে পায়ের নখ কাটতে বা ব্রণ চিমটাতে বা এমন কিছু একটা করতে দেখা লাগতো।

জেনকে কি আমার শুভেচ্ছা জানিয়েছিলে?’ আমি জিজ্ঞেস করলাম।

‘হ্যাঁ!’

জানিয়েছে না ছাই!

‘কী বলেছে সে?’ জিজ্ঞেস করলাম। ‘তাকে কি জিজ্ঞেস করেছো সে এখনো তার রাজাগুলোকে পিছনের সারিতে সাজিয়ে রাখে কি না?’

‘না, আমি তাকে জিজ্ঞেস করিনি। তোমার কি মনে হয় পুরোটা সময় আমরা চেকার্স খেলেছি?’

তার কথার কোনো জবাবই দিলাম না। প্রচণ্ড ঘৃণা লাগছিল তার ওপর।

‘যদি নিউইয়র্কে না যাও, তাহলে কোথায় গিয়েছিলে তাকে নিয়ে?’ কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলাম। কণ্ঠের কাঁপা কাঁপা ভাবটা কোনোভাবেই দূর করতে পারছিলাম না। খোদা, প্রচণ্ড নার্ভাস হয়েছিলাম। তখন শুধু মনে হচ্ছিল, আমার কোথাও কোনো একটা সমস্যা হয়েছে।

স্ট্র্যাডলেটারের ততক্ষণে তার পায়ের নখ কাটা শেষ হয়ে গেছে। শর্ট পরা অবস্থাতেই বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ পায়চারি করল রুমে, তারপর হঠাৎ করেই আমার সাথে ফাজলামো করার শখ জেগে উঠলো ওর। আমার বিছানার দিকে এগিয়ে এসে আমার ওপর ঝুঁকে মোজা খুলে আমার কাঁধে রাখা শুরু করল। ‘ঐ, ফাজলামি করো না তো,’ বললাম। ‘নিউইয়র্ক না গেলে কোথায় গিয়েছিলে তার সাথে?’

‘কোথাও না। আমরা শুধু একটা গাড়িতেই বসেছিলাম।’ তারপর অন্য মোজাটাও খুলে রাখলো আমার কাঁধের ওপর।

‘বাদ দাও তো এসব,’ বললাম। ‘কার গাড়িতে?’

‘এড ব্যাঙ্কির।’

এড ব্যাঙ্কি ছিল পেন্সির বাস্কেটবল কোচ। স্ট্র্যাডলেটার ছিল কোচের বেশ পছন্দের একজন। সে সবসময়ই তার টিমের সেন্টারে থাকত, আর সবসময়ই স্ট্র্যাডলেটারের যেকোনো প্রয়োজনে কোচ তাকে তার গাড়ি ধার দিতো। যদিও স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী ফ্যাকাল্টির কারো থেকে ছাত্রদের গাড়ি ধার করার কোনো অনুমতি ছিল না, তবে খেলাধুলায় জড়িতরা সবসময়ই একসাথে আঠার মতো লেগে থাকত। তাই তাদের এসব নিয়ম ভাঙায় কোনো সমস্যা হতো না। আমি যতগুলো স্কুলে গিয়েছি সবগুলোতেই দেখেছি খেলাধূলায় জড়িতরা সবসময়ই একটি পাল হয়ে থাকে।

স্ট্র্যাডলেটার তখনো খেলাচ্ছলে আমার কাঁধে ঘুষি মারার ভঙ্গি করে যাচ্ছিল। সেই সাথে টুথব্রাশও ঢুকিয়ে রেখেছিল তার মুখে। ‘তো কী করেছো তুমি?’ আমি বললাম। ‘এড ব্যাঙ্কির গাড়িতে কি তাকে সেরা সময়টাই দিয়েছো?’ আমার কণ্ঠস্বর তখন খুবই বাজেভাবে কাঁপতে শুরু করেছিল।

‘বাহ, কী এক প্রশ্ন! তুমি কি চাও আমি তোমার মুখ সাবান দিয়ে ধুয়ে দিই?’

‘দিয়েছো কী?’

‘বন্ধু, ওটা তো একটা সিক্রেট।’

এরপরের ঘটনাটা আমার অতটা ভালোভাবে মনে নেই। শুধু মনে আছে আমি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে খুব সম্ভবত টয়লেট বা কোথাও যাচ্ছিলাম, তারপর হুট করেই তাকে ঘুষি মেরে বসলাম। আমি চাচ্ছিলাম শরীরের সর্বশক্তিতে ঘুষি মেরে টুথব্রাশটা স্ট্র্যাডলেটারের গলার আরো ভেতরে ঢুকিয়ে দিই, যাতে তার কণ্ঠনালী ছিঁড়ে যায়। তবে আমার ঘুষিটা লক্ষ্যভেদ হয়নি। ঘুষিটা গিয়ে লেগেছিল তার মাথার বা কানের এক পাশে। ওটাতে সম্ভবত সে কিছুটা ব্যথাও পেয়েছিল, তবে আমি যতটা চাইছিলাম ঠিক ততটা পায়নি। হয়তো আরো বেশি ব্যথা পেতো ও, কিন্তু আমি ঘুষিটা মেরেছিলাম ডান হাতে। ডান হাতে আমি অতটা ভালো করে মুষ্টি পাকাতে পারি না। জানালা ভাঙতে গিয়ে হাত ভাঙার গল্পটা তো আগেই বলেছি আপনাদের।

যাই হোক, এরপরের যে ব্যাপারটা আমার মনে আছে তা হলো, আমি পড়েছিলাম মেঝেতে আর স্ট্র্যাডলেটার বসেছিল আমার বুকের ওপর। পুরো মুখ লাল হয়েছিল তার। তার হাঁটু দিয়ে আমার বুকে চাপ দিয়ে রেখেছিল সে, মনে হচ্ছিল যেন আমার বুকের ওপর কয়েকটন ওজনের পাথর রেখে দিয়েছে কেউ। সেই সাথে আমার কবজিগুলোও ধরে রেখেছিল, যাতে আমি আর কোনো ঘুষি দিতে না পারি তাকে। অবশ্য ছেড়ে রাখলে আমি সম্ভবত তাকে মেরেই ফেলতাম।

‘সমস্যাটা কী তোমার?’ বারবার বলে যাচ্ছিল ও, আর তার মুখটাও লাল থেকে আরো তীব্র লাল হতে শুরু করেছিল।

‘আমার বুক থেকে পা সরাও তোমার,’ বললাম। প্রায় চেঁচাচ্ছিলাম বলা যায়। আসলেই। ‘পা সরা, হারামাজাদা। আমার ওপর থেকে পা নামা।’

যদিও সে হাঁটু নামায়নি। আমার হাতের কবজিগুলোও আটকে রেখেছিল। তারপরও আমি শুধু তাকে শুয়োরের বাচ্চা, হারামজাদা এসব গালিই দিয়ে যাচ্ছিলাম অনেকক্ষণ ধরে। আমার আসলে ঠিক মনেও নেই যে তাকে কী কী বলেছিলাম। খুব সম্ভবত বলেছিলাম, সে নিজেকে কী ভাবে, সে যাকে চাইবে তাকেই সময় দিতে পারবে। আরো বলেছিলাম, একটা মেয়ে তার রাজাগুলো পিছনের সারিতে সাজিয়ে রাখে কি না সেটা নিয়েও তো কোনো পাত্তা দেয় না ও। আর সে ওসবে পাত্তা দিতো না কারণ সে একটা গর্দভ। তাকে কেউ গর্দভ বললে স্ট্র্যাডলেটার সেটা সহ্য করতে পারতো না। অবশ্য কোন গর্দভটাই বা নিজেকে গর্দভ ডাকলে সহ্য করতে পারে।

‘চুপ করো, হোল্ডেন,’ স্ট্র্যাডলেটার বলে উঠলো। ‘চুপ করো এখন।’

‘শালা গর্দভ, তুই তো মেয়েটার প্রথম নাম জেন না জিন সেটাও জানিস না!’

‘অনেক হয়েছে, হোল্ডেন, এখন চুপ করো। আমি সাবধান করে বলে দিচ্ছি,’ স্ট্র্যাডলেটার বলল। আসলেই তাকে প্রচুর ক্ষেপিয়ে দিয়েছিলাম। ‘তুমি যদি চুপ না করো, তাহলে কিন্তু আমি আচাড় মারবো তোমাকে।’

‘আমার বুক থেকে তোর পা নামা হারামি!’

‘আমি যদি পা নামাই, তাহলে কি তুমি তোমার মুখ বন্ধ রাখবে?’

কোনো উত্তর দিলাম না।

সে আবারো বলল, ‘হোল্ডেন, আমি যদি পা নামাই, তাহলে কি তুমি তোমার মুখ বন্ধ রাখবে?’

‘হ্যাঁ!’

আমার ওপর থেকে সরে গেল ও, সাথে সাথে আমিও উঠে দাঁড়ালাম। তার হাঁটুর চাপে আমার বুকে ধাঁ ধাঁ করে ব্যথা করছিল তখন। ‘তুই একটা হারামি শুয়োরের বাচ্চা, গর্দভ,’ আমি বললাম।

সাথে সাথেই প্রচণ্ড ক্ষেপে গেল স্ট্র্যাডলেটার। কড়া গলায় আঙুল তুলে আমাকে শাসিয়ে বলল, ‘হোল্ডেন, খোদার দোহাই লাগে, থামো। এই শেষবারের তোমাকে সতর্ক করছি। যদি তুমি তোমার মুখ বন্ধ না করো, তাহলে আমি—’

‘কেন মুখ বন্ধ রাখবো আমি?’ বললাম। বলতে গেলে তখন প্ৰায় চেঁচাচ্ছিলাম। ‘তোমাদের সব গর্দভদের সমস্যা এই একটাই। তোমরা কখনোই কিছু নিয়ে আলোচনা করতে চাও না। অবশ্য এই আচরণটা দেখেই স্টুপিডদের চেনা যায়। তারা কখনোই বুদ্ধিমানের মতো কিছু নিয়ে আলোচনা করতে চায় না- ‘

এরপর সত্যি সত্যিই আমাকে মেরে বসলো ও। এরপর আমার যেটা মনে আছে, আমি আবারো মেঝেতে পড়েছিলাম। মনে নেই সে কি আমাকে মেরে অজ্ঞান করে ফেলেছিল কি না, তবে মনে হয় না আমি অজ্ঞান হয়েছিলাম। মারটা আসলে যে কাউকেই বেহুশ করে ফেলার মতো কড়া ছিল, অবশ্য মুভি- টুভির কথা আলাদা। আমার নাক ফেঁটে রক্ত পড়ছিল শুধু। স্ট্র্যাডলেটারের দিকে তাকাতেই দেখি সে আমার ওপর চড়ে বসে আছে। বগলের নিচে তার টয়লেট কিটও ছিল তখন। ‘আমি যখন চুপ করতে বললাম, তখন চুপ করোনি কেন?’ সে বলল। তাকে অনেকটা নার্ভাস শোনাচ্ছিল তখন। সে হয়তো ভয় পাচ্ছিল তার আঘাতে মেঝেতে পড়ার সময় আমার হয়তো মাথা-টাথা ফেটে গেছে। ইশশ, মাথাটা ফাটলেই ভালো হতো। ‘তুমি নিজেই এটা ডেকে এনেছো তোমার ওপর,’ বলল ও। তাকে প্রচণ্ড উদ্‌বিগ্ন দেখাচ্ছিল তখন।

পড়ার পর আমি আর উঠে বসিনি। ওভাবেই বেশ কিছুক্ষণ মেঝেতে পড়েছিলাম, আর অনবরত গালি দিয়ে যাচ্ছিলাম স্ট্র্যাডলেটারকে। এতোটাই ক্ষীপ্ত ছিলাম যে বলতে গেলে প্রায় চেঁচাচ্ছিলাম তখন।

‘উঠো! উঠে বাথরুম থেকে মুখটা ধুয়ে আসো,’ স্ট্র্যাডলেটার বলল। ‘শুনতে পাচ্ছো আমার কথা?’

জবাবে তাকেই বাথরুম থেকে তার স্টুপিড মুখটা ধুয়ে আসার কথা বললাম। যদিও কথাটা খুব ছেলেমানুসির মতো শোনাচ্ছে, তবে আমি তখন আসলেই অনেক রেগেছিলাম। তাকে এটাও বলেছিলাম যে টয়লেটে যাওয়ার সময় যেন সে থেমে মিসেস শ্মিটকেও সময় দিয়ে যায়। মিসেস শ্মিট ছিল আমাদের জ্যানিটরের স্ত্রী। মহিলার বয়স তখন ছিল প্রায় পয়ষট্টির কাছাকাছি।

একসময় রুম থেকে বেরিয়ে করিডোর দিয়ে টয়লেটের দিকে পা বাড়ালো স্ট্র্যাডলেটার। সে বের হয়ে যাওয়ার পরও আরো কিছুক্ষণ মেঝেতে পড়েছিলাম। এরপর উঠে দাঁড়ালাম। উঠে দাঁড়িয়ে প্রথমে এদিক-ওদিক তাকালাম আমার হান্টিং টুপিটার জন্য। কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না টুপিটা। অবশেষে একসময় খুঁজে পেলাম। বিছানার নিচে ছিল টুপিটা। টুপিটা বের করে মাথায় লাগালাম, ঝুঁটিটা বাঁকিয়ে নিলাম পিছনের দিকে। ঝুঁটিটা আমি ওভাবে রাখতেই পছন্দ করতাম। আর তারপর আয়নার সামনে গিয়ে আমার স্টুপিড মুখটার দিকে তাকালাম একবার। পুরো মুখ, থুতনিজুড়েই রক্ত লেগেছিল তখন, এমনকি নাইটড্রেস, বাথরোবেও রক্ত লেগেছিল। আমার জীবনে আমি মাত্র দুইবারই মারামারি করেছি। দুইটার কোনোটাতেই জিততে পারিনি। আমি আসলে খুব একটা শক্তিশালী মানুষ না। যদি সত্যিটা জানতে চান, আমি আসলে একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ।

কী কারণে যেন আমার শুধু মনে হচ্ছিল যে অ্যাকলি তখনো ঘুমায়নি। খুব সম্ভবত আমাদের মারপিট-তর্কাতর্কির শব্দও সে শুনেছে। তাই সে কী করছে দেখার জন্য শাওয়ারের পর্দা সরিয়ে তার রুমে গেলাম। তার রুমে আসলে খুব একটা বেশি যেতাম না। তার রুমটাতে সবসময়ই একটা বাজে গন্ধ লেগে থাকত। তার নোংরামি স্বভাবটার জন্যই রুমে সবসময় বাজে গন্ধ থাকত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *