দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই – ১৪

অধ্যায় চৌদ্দ

সানি চলে যাওয়ার পর আরো বেশ কিছুক্ষণ চেয়ারে বসে সিগারেট টানলাম। বাইরে তখন দিনের আলো ফুটতে শুরু করেছিল। খোদা, প্রচণ্ড বিষণ্ণ লাগছিল আমার। কেউ কল্পনাও করতে পারবে না কতটা হতাশ লাগছিল। চেয়ারে বসে সিগারেট টানতে টানতে জোরে জোরে কথা বলছিলাম শুধু। এলির সাথে কথা বলছিলাম। খুব বেশি হতাশ লাগলে আমি প্রায়ই একা একা এলির সাথে কথা বলি। আমি তাকে বারবারই বলছিলাম বাসায় গিয়ে তার বাইক নিয়ে এসে ববি ফেলনের বাসার সামনে এসে আমার সাথে দেখা করতে। কয়েক বছর আগে মেইনে আমাদের বাসার খুব কাছেই থাকত ববি ফেলনরা। যাই হোক, একদিন ববি আর আমি বাইকে করে লেক সেডেবেগোতে যাচ্ছিলাম। সাথে করে লাঞ্চ আর বিবি গান মানে খেলনা বন্দুকও নিয়েছিলাম আমরা। ঐ বয়সে আমরা ভেবেছিলাম খেলনা বন্দুক দিয়ে হয়তো কোনো কিছু লক্ষ্য করে গুলি করতে পারবো। যাই হোক, এলি আমাদের যাওয়ার ব্যাপারটা শুনে ফেলেছিল, সেও যেতে চেয়েছিল আমাদের সাথে। তবে আমি তাকে নিতে চাচ্ছিলাম না। বলেছিলাম যে সে বাচ্চা ছেলে, আমাদের সাথে তার যাওয়া ঠিক হবে না। তবে সে যেতেই চাচ্ছিল আমাদের সাথে। সেজন্য প্রায়ই খুব বেশি হতাশ লাগলে এলিকে সেদিন সান্ত্বনা দিয়ে যা বলেছিলাম তা-ই বলতে থাকি, ‘আচ্ছা, বাসায় যাও, গিয়ে তোমার বাইক নিয়ে এসো। ববি ফেলনের বাসার সামনে পাবে আমাকে। জলদি করো।’ এমন না যে আমি কোথাও গেলে এলিকে সাথে করে নিয়ে যেতাম না। তাকে প্রায়ই আমার সাথে করে নিয়ে যেতাম। তবে ঐদিনটায় তাকে নিয়ে যাইনি। এলি অবশ্য এতে মন খারাপ করেনি। সে আসলে কখনোই কোনো কিছু নিয়ে মন খারাপ করত না। তারপরও খুব বেশি হতাশ লাগলে আমার প্রায় সবসময়ই ঐদিনের কথাটা মনে পড়ে।

অনেকক্ষণ বসে থাকার পর অবশেষে কাপড়চোপড় ছেড়ে বিছানায় গেলাম। মনে হচ্ছিল বিছানায় শুয়ে আমার কোনো প্রার্থনা করা দরকার। তবে কোনো প্রার্থনাই করতে পারিনি। আসলে ইচ্ছা করলেই আমি সবসময় প্রার্থনা করতে পারি না। এর কারণ প্রথমত, আমি এক প্রকারের নাস্তিক। যীশুকে আমি পছন্দ করি ঠিকই, তবে বাইবেলের অন্যান্য অনেক কিছুই আমার তেমন একটা ভালো লাগে না। এই যেমন ডিসাইপেল, মানে যীশুর শিষ্যদের কথাই বলা যাক, আমি তাদেরকে সহ্যই করতে পারি না। সত্যি বলতে তাদেরকে বিরক্তি লাগে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে যীশু মারা যাওয়ার পর ভালো কাজ করা শুরু করেছিল, তবে যীশু বেঁচে থাকার সময় তারা কোনো কাজেরই ছিল না। সত্যি বলতে বেশির ভাগ সময়ই যীশুকে খর্ব করত তারা। এই শিষ্যরা ছাড়া বাইবেলের প্রায় অন্য সব চরিত্রকেই পছন্দ করি আমি। যীশুর পর আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ সমাধিতে বাস করা এবং নিজেকে সর্বদা পাথর দিয়ে আঘাত করা পাগল লোকটা। শিষ্যদের থেকে ঐ পাগলটাকে দশগুণ বেশি পছন্দ করি আমি। হুটন স্কুলে পড়াকালে আর্থার চাইল্ডসের সাথে প্রায়ই আমার এটা নিয়ে অনেক তর্ক হতো। আমাদের করিডোরেই থাকত চাইল্ডস। ছেলেটা খুবই ধার্মিক গোছের, সবসময়ই বাইবেল পড়ে। আচার-আচরণও খুব ভালো ওর, ওকে বেশ পছন্দ করতাম। তবে বাইবেল নিয়ে আলোচনার সময় তার চোখে চোখ রেখে কথা বলা খুব কঠিন ছিল, বিশেষ শিষ্যদের নিয়ে আলোচনায়। সে আমাকে সবসময়ই বলত আমি যদি শিষ্যদের পছন্দ না করি, তাহলে আমি নাকি যীশুকেই পছন্দ করি না। কারণ যীশু নিজেই তার শিষ্যদের বেছে নিয়েছিল, সেজন্যই আমাদের অবশ্যই তাদেরকে পছন্দ করা উচিৎ। বলতাম আমি জানি যীশু নিজেই তার শিষ্যদের বেছে নিয়েছিল, তবে যীশু তো সব দিক বিবেচনা করে বেছে নেয়নি, সবার ব্যাপারে খুঁটিনাটি বিবেচনা করার মতো পর্যাপ্ত সময়ই ছিল না যীশুর এমন না যে আমি এটার জন্য যীশুকে দোষারোপ করছি। হাতে সময় না থাকাটা যীশুর কোনো দোষ না। আমার মনে আছে চাইল্ডসকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সে কি মনে করে যীশুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা জুডাস আত্মহত্যা করার পর নরকে গিয়েছিল কি না। চাইল্ডস বলেছিল, অবশ্যই জুডাস নরকে প্রেরিত হয়েছে। ঠিক এই জায়গাতেই আমার সমস্যাটা। আমি বলেছিলাম আমি হাজার টাকা বাজি ধরে বলতে পারি যীশু জুডাসকে নরককে পাঠায়নি। আমার কাছে এখন হাজার টাকা থাকলে আমি এখনো এই কথাই বলবো। আমার ধারণা শিষ্যদেরই কেউ তাকে নরকে পাঠিয়েছিল এবং দ্রুতই, পাঠিয়েছিল, তবে যীশু এই কাজটা করেইনি। এটা শুনে চাইল্ডস বলত চার্চ বা প্রার্থনালয়ে না যাওয়াটাই নাকি আমার সমস্যা। একদিক কথাটা ঠিকই। আমার বাবা-মা ছিল ভিন্ন ধর্মের, আর আমরা ভাই-বোনদের কেউই ধর্মে অতটা বিশ্বাসী না। সত্যি বলতে আমি ধর্ম যাজকদের সহ্য করতে পারি না। আমি যতগুলো স্কুলে পড়েছি সবগুলোতেই ধর্মযাজক ছিল। ধর্ম নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার এমন পবিত্র স্বরের ভানে কথা বলত যে, খোদা, আমি একদমই সহ্য করতে পারতাম না। আমি বুঝি না নিজেদের সাধারণ কণ্ঠে বক্তৃতা দিলে তাদের কী ক্ষতি হবে। পুরোটাই লোক দেখানো ধাপ্পাবাজি শুধু।

যাইহোক, শুয়ে কোনো প্রকার প্রার্থনাই করতে পারছিলাম না। যতবারই কিছু নিয়ে প্রার্থনা শুরু করছিলাম, ততবারই শুধু সানির রুক্ষ আচরণটার কথা মনে পড়ছিল। শেষমেশ না পেরে উঠে বসে আরেকটা সিগারেট ধরালাম। সিগারেটটা বিস্বাদ লাগছিল। পেন্সি থেকে বেরুনোর পর প্রায় দুই প্যাকেটের মতো সিগারেট টেনেছি, সেজন্যই হয়তো তখন সিগারেটও ভালো লাগছিল না।

হঠাৎ করেই সিগারেট টানা অবস্থায় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। আশা করছিলাম টোকাটা যেন আমার দরজায় না হয়, কিন্তু জানতাম যে আমার দরজাতেই কড়া নাড়ছে কেউ। জানি না যে কীভাবে জানতাম, তবে জানতাম ঠিকই। আমি এটাও জানতাম যে দরজায় কে কড়া নাড়ছে। আমি অনেকটা সাইকিক টাইপের।

‘কে?’ বললাম। প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছিলাম। আমার কাপুরুষতার ব্যাপারে তো আগেই বলেছিল।

দরজার ওপাশ থেকে আবারো কড়া নাড়ার শব্দ এলো, এবার আরো জোরে।

শেষমেশ বিছানা থেকে নেমে দরজা খুললাম। তখন শুধু পায়জামাই পরে রেখেছিলাম। দরজা খোলার জন্য রুমের লাইট জ্বালানো লাগেনি আমার, তখন রীতিমতো দিনের আলোতেই আলোকিত হয়েছিল রুম। দরজা খুলেই দেখি সানি আর এলিভেটরের সেই দালাল মরিস দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।

‘কী ব্যাপার? কী চাও?’ বললাম। খোদা, আমার কণ্ঠস্বর তখন ভয়ে শুধু কাঁপছিল।

‘তেমন কিছুই না,’ মরিস বলল, ‘শুধু পাঁচ ডলার মাত্র।’ দুইজনের হয়ে একাই কথা বলছিল ও। সানি শুধু নীরবে দাঁড়িয়েছিল তার পাশে।

‘আমি টাকা দিয়ে দিয়েছি তাকে। পাঁচ ডলার দিয়েছি। জিজ্ঞেস করে দেখো ওকে,’ বললাম। আসলেই আমার গলা প্রচুর কাঁপছিল তখন।

‘খরচ তো দশ ডলার, বন্ধু। আমি তোমাকে আগেই বলেছি। একবারের জন্য দশ ডলার, দুপুর পর্যন্ত পনেরো। আমি তো বলেই দিয়েছিলাম।’

‘তুমি এটা বলোনি আমাকে। তুমি বলেছিলে একবারের জন্য পাঁচ ডলার, দুপুর পর্যন্ত পনেরো ডলার। আমার স্পষ্ট মনে আছে…’

‘দরজা খুলো, বন্ধু।‘

‘কিসের জন্য?’ জিজ্ঞেস করলাম। খোদা, ভয়ে আমার হৃৎপিন্ড রীতিমতো বেরিয়ে আসতে চাইছিল তখন। অন্ততপক্ষে কাপড়চোপড় পরা থাকলেও হতো, তখন এটাই ভাবছিলাম শুধু। এমন কিছু ঘটার সময় শুধু পায়জামা পরা থাকলে কোনোভাবেই সাহস দেখানো সম্ভব না।

‘টাকাটা দিয়ে দাও, বন্ধু,’ মরিস বলল। তারপর ধাক্কা দিয়ে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে দিলো আমাকে। আরেকটু হলে প্রায় উল্টে পড়ে যেতে বসেছিলাম। মরিস লোকটা একটা আস্ত হারামজাদা ছিল। এরপর দেখলাম যে সে আর সানি দু’জনই আমার রুমে ঢুকে পড়েছে। রুমের ভেতরে এমনভাবে হাঁটে যেন তারা এই জায়গাটার মালিক। সানিকে দেখলাম জানালার পাশে গিয়ে বসতে, আর মরিসকে দেখলাম বড়ো চেয়ারটায় বসে তার কলার লুজ করছে। এলিভেটর অপারেটারের ইউনিফর্ম পরেই আমার রুমে এসেছিল মরিস। কিন্তু, আমার কেন যেন প্রচণ্ড নার্ভাস লাগছিল।

‘আচ্ছা, বন্ধু, টাকাটা দিয়ে দাও। আমাকে আবার কাজে ফিরে যেতে হবে।’

‘আমি তোমাকে প্রায় দশবার বলেছি যে আমার তোমাদের কাছে এক পয়সাও পাওনা নেই। আমি তাকে পুরো পাঁচ ডলারই দিয়ে…’

‘অযথা কথা বাদ দাও তো। টাকাটা দিয়ে দাও শুধু।’

‘আমি তাকে আরো পাঁচ ডলার দেবো কেন?’ বললাম। আমার গলার স্বর পুরোপুরিই কাঁপছিল তখন। ‘তুমি তো ডাকাতি করার চেষ্টা করছ।’

মরিস ততক্ষণে ইউনিফর্ম কোটের কলারটা পুরোপুরিই খুলে ফেলেছে। কোটের নিচে একটা কমদামি শার্টের কলার ছিল শুধু, তবে কোনো শার্ট বা এরকম কিছু ছিল না। বিরাট ভুড়িওয়ালা লোমশ শরীর ছিল মরিসের।

‘কেউই তোমাকে ডাকাতি করার চেষ্টা করছে না,’ সে বলল। ‘টাকাটা দিয়ে দাও, বন্ধু।’

‘না।’

আমি না বলতেই দেখলাম চেয়ার থেকে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে মরিস। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল হয় সে খুবই ক্লান্ত হয়ে আছে অথবা সে খুব বিরক্ত হয়ে আছে। খোদা, প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছিলাম তখন। শুধু মনে আছে কোনোরকমে হাত ভাঁজ করে রেখেছিলাম। আমার মনে হয় যদি তখন শুধু পায়জামা পরে না থাকতাম, তাহলে হয়তো অতটা ভয় পেলাম না। হয়তো মরিসও অতটা সাহস দেখাতো না।

‘টাকাটা দিয়ে দাও, বন্ধু,’ বলে আমার একদম সামনে এসে দাঁড়ালো মরিস। আর বারবার একটা কথাই বলছিল ও, ‘টাকা দিয়ে দাও।’ আসলেই একটা হারামজাদা ছিল ও।

‘না।’

‘বন্ধু, তোমার ওপর হাত তুলতে বাধ্য করো না আমাকে। আমি এই কাজটা করতে চাই না, কিন্তু তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে ওটাই করা লাগবে,’ সে বলল। ‘যাই হোক, তোমার কাছে পাঁচ ডলার পাওনা আছে আমাদের।’

‘তোমরা আমার কাছে এক পয়সাও পাও না,’ আমি বললাম। ‘আর তুমি যদি আমার গায়ে হাত দাও, তাহলে আমি গলা ছেড়ে চেঁচানো শুরু করবো। চেঁচিয়ে পুরো হোটেলকে জাগিয়ে ফেলবো। পুলিশও কিন্তু আসবে তখন।’ বলছিলাম ঠিকই, তবে আমার গলার কাঁপুনি থামছিল না কোনোভাবেই।

‘আচ্ছা, চেঁচাও তাহলে। ডেকে তুলো সবাইকে,’ মরিস বলল। ‘চেঁচিয়ে কি তোমার বাবা-মাকে জানাতে চাও যে তুমি এক পতিতার সাথে রাত কাটিয়েছো? তোমার মতো উচ্চ-শ্রেণির পরিবারের ছেলে?’ হারামি হলেও মরিসের বুদ্ধি খুবই প্রখর ছিল। আসলেই।

‘আমাকে একা ছেড়ে দাও। তুমি যদি দশ ডলার বলতে তাহলে আলাদা কথা ছিল। কিন্তু তুমি স্পষ্ট…’

‘তুমি কি আমাদেরকে টাকাটা দেবে?’ বলে আমাকে প্রায় দরজায় ঠেকিয়ে ধরলো মরিস।

‘আমাকে একা ছেড়ে দাও। এক্ষুনি বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে,’ আমি বললাম। তখনো হাত ভাঁজ করে রেখেছিলাম। খোদা, খুবই কাপুরুষ গর্দভের মতো হয়েছিলাম তখন।

তখন হুট করে কথা বলে উঠলো সানি। ‘হেই, মরিস, আমি কি তার ওয়ালেটটা নেব?’ সে বলল। ‘ড্রয়ারের ওপরই আছে ওটা।’

‘হ্যাঁ, নাও ওটা।’

‘আমার ওয়ালেটে হাত দেবে না।’

‘ইতোমধ্যেই হাত দিয়ে ফেলেছি,’ সানি বলল। এরপর আমাকে পাঁচ ডলার দেখিয়ে বলল, ‘দেখো, আমি শুধু আমার পাওনা পাঁচ ডলারই নিচ্ছি। আমি কোনো ডাকাত না।’

তখন হঠাৎ করেই কাঁদতে শুরু করলাম। না কাঁদলে আমি তখন যেকোনো কিছুই করতে পারতাম, কিন্তু আমি কেঁদে দিয়েছিলাম। ‘না, তোমরা ডাকাত না, আমি বললাম, ‘কিন্তু তোমরা ঠিকই আমার থেকে পাঁচ ডলার চুরি কর..’

‘চুপ,’ মরিস বলে ধাক্কা দিলো আমাকে।

‘হেই মরিস, ছেড়ে দাও তো ওকে,’ সানি বলল। ‘আমরা আমাদের পাওনা টাকা পেয়ে গেছি। ছেড়ে দাও। চলো এখন, বেরিয়ে যাই।’

‘হ্যাঁ, আসছি,’ বলল মরিস, তবে সে বেরুলো না।

‘মরিস, যথেষ্ট হয়েছে, এখন চলো। ওকে মেরো টেরো না।’

‘কে কাকে মারবে?’ নিষ্পাপ কণ্ঠে বলল মরিস। তারপর হুট করেই তার হাত দিয়ে আমার পায়জামার ওপর মোচড় দিলো ও, আমি বলবো না ঠিক কোথায় মোচড় দিয়েছিল, তবে ব্যথায় প্রায় মরে যাওয়ার দশা হয়েছিল আমার। গুঙিয়ে উঠে তাকে হারামজাদা বলে গালি দিয়ে উঠলাম। সেটা শুনেও সে না শোনার ভান করে কানের ওপর হাত রেখে বলল, ‘কী? আমি কী?’

আমি প্রায় কাঁদছিলাম তখন। প্রচণ্ড নার্ভাস আর ক্ষেপেছিলাম তখন। কোনোরকমে তাকে আবারো বললাম, ‘তুই একটা হারামজাদা। ডাকাত একটা তুই। বছর দুই পর তুই ঐ লোকদের একজন হবি যারা রাস্তা কফি খাওয়ার জন্য টাকা ভিক্ষা করে। তুই ভিক্ষা চাইবি, কিন্তু মানুষ শুধু থুতু ছিটাবে তোর গায়ে। আর তুই..’

হুট করেই ঘুষি মারলো মরিস। আমি আসলে এটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। বুঝার আগেই টের পেলাম যে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা করছে আমার। আসলেই অনেক জোরে ঘুষি মেরেছিল মরিস।

যদিও জ্ঞান হারাইনি, তবে ঘুষি খেয়ে ধপ করে মেঝেতে পড়ে গিয়েছিলাম। মেঝেতে পড়া অবস্থায়ই দেখলাম সানি আর মরিস রুম থেকে বেরিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে গেছে। তারা বেরিয়ে যাওয়ার পরও লম্বা সময় ধরে মেঝেতে পড়েছিলাম। স্ট্র্যাডলেটার ঘুষি খেয়ে যেভাবে পড়েছিলাম, ঠিক সেভাবেই। মনে হচ্ছিল আমি তখন মারা যাচ্ছি। আসলেই এমন মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন আমি ডুবে যাচ্ছি। সমস্যাটা হলো আমি একদমই শ্বাস নিতে পারছিলাম না। অনেকক্ষণ পড়ে থাকার পর কোনোরকমে উঠে দাঁড়িয়ে পেটে হাত চেপে বাথরুমের দিকে এগোতে শুরু করলাম।

আমি প্রচুর পাগলাটে স্বভাবের। আসলেই। বাথরুমে যাওয়ার সময়টায় কল্পনা করছিলাম আমার পেটে গুলি লেগেছে। মরিস গুলি করেছে আমাকে। আর তখন আমি বাথরুমে যাচ্ছিলাম এক ঢোক বারবন বা কোনো মদ খেয়ে নিজের স্নায়ুকে শান্ত করার জন্য। কল্পনা করছিলাম আমি বাথরুম থেকে বেরিয়ে পোশাক পরে পকেটে করে অটোমেটিক পিস্তলটা নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে রুম থেকে বেরুচ্ছি। এলিভেটরের বদলে এভাবেই সিঁড়ির রেলিং ধরে হেঁটে হেঁটে নিচ তলায় যাচ্ছি, যাওয়ার সময় আমার ঠোটের কোণ থেকে রক্ত পড়ছে একটু একটু করে। এভাবেই পেট চেপে ধরে রেখে হোটেলের মেঝে রক্তে রাঙিয়ে কয়েক ফ্লোর নিচে নেমে এলিভেটরে বোতাম চাপ দিচ্ছি। আর এলিভেটরের দরজা খুলতেই মরিস দেখলো যে আমি একটা অটোমেটিক পিস্তল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। পালানোর কোনো জায়গা না থাকায় সে ভয়ার্ত গলায় আমার কাছে প্রাণভিক্ষা চাচ্ছিল, বলছিল ক্ষমা করে দিতে, কিন্তু আমি তারপরও ঠিকই গুলি করলাম তাকে। ম্যাগাজিনে থাকা ছয়টা বুলেটের ছয়টাই ঢুকিয়ে দিলাম তার লোমশ মোটা ভূড়িতে। তারপর পিস্তল থেকে আঙুলের ছাপ মুছে সেটা ফেলে দিলাম এলিভেটরের ভেতর। এরপর কোনোভাবে হামাগুড়ি দিয়ে ফিরে এলাম আমার রুমে, এসে ফোন করলাম জেনকে যেন সে এসে আমার পেটে ব্যান্ডেজ করে দেয়, যেন আমার সেবা-শুশ্রুষা করে। এমনকি আমি এটাও কল্পনা করছিলাম শরীর থেকে অনবরত রক্তক্ষরণের পরও সে আমার ঠোঁটে একটা সিগারেট ধরিয়ে দিয়েছে।

খোদা, হতচ্ছাড়া মুভির বাচ্চা! ওগুলো আসলে মানুষের কল্পনা পুরোপুরিই নষ্ট করে দেয়। মজা করছি না, সত্যিই

একঘণ্টা বাথরুমেই পড়েছিলাম, সাথে গোসলও সেরে নিয়েছিলাম। তারপর বেরিয়ে আবারও বিছানায়া শুয়ে পড়লাম। যদিও ঘুম আসতে আরো কিছুটা সময় লেগেছিল। আমি অতটা ক্লান্ত ছিলাম না। তবে শেষমেশ ঘুম এলো ঠিকই। আমার তখন সত্যিই ইচ্ছা করছিল সুইসাইড করতে। ইচ্ছা করছিল জানালার ধার থেকে ঝাঁপ দিতে। হয়তো তাই করতাম, যদি আমি নিচে পড়ার পরই আমার কাছে দৌড়ে আসার মতো কেউ থাকত। নিচে থেতলে পড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় স্টুপিড পোশাক পরা লোকদের বিনোদনের কোনো বস্তু হওয়ার ইচ্ছা ছিল না আমার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *