দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই – ১৯

অধ্যায় উনিশ

উইকার বারটা নিউইয়র্কের অন্যতম বিলাসবহুল সেটন হোটেলে অবস্থিত। আগে প্রায়ই যেতাম ওখানে, তবে পরে আর যাইনি বেশি। ধীরে ধীরে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলাম। এটা এমন একটা জায়গা যেখানে খুবই মার্জিত পরিবেশ বিরাজমান থাকে, কিন্তু চারপাশ জুড়ে পুরোটাতেই ছড়িয়ে থাকে ধাপ্পাবাজ হারামজাদারা। তাদের ওখানে টিনা ও জেনিন নামের দুই ফ্ৰেঞ্চ মেয়ে কাজ করত। প্রতিরাতে তারা তিনবার করে পিয়ানো বাজিয়ে গান গাইতো। এদের একজন পিয়ানো বাজাতো, আরেকজন গান গাইতো। তাদের গানগুলোর অর্ধেকই থাকত অশ্লীল আর অর্ধেক ফ্রেঞ্চ ভাষার। পিয়ানো বাজানো মেয়েটা ছিল খুবই ফালতু। আর যে মেয়েটা গান গাইতো, মানে জেনিন সে সবসময়ই গান শুরুর আগে মাইক্রোফোনে ফিসফিস করে বলত, ‘আমরা আপনাদের মাঝে আমাদের প্রিয় ফ্রান্সের মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিতে এসেছি। এটা একটা কম বয়সী ফ্রেঞ্চ মেয়ের গল্প যে ফ্রান্স থেকে বড়ো শহর নিউইয়র্কে এসে ব্রুকলিনের এক ছেলের প্রেমে পড়েছিল।’ ফিসফিস করে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কথা বলে কিউট সেজে এরপর গাইতো ফালতু গান, যার অর্ধেক থাকত ইংরেজিতে, বাকি অর্ধেক ফরাসিতে। তবে তার এই গান শুনেই বারের সব হারামিরা একদম আনন্দে উল্লসিত হয়ে যেত। যদি কেউ ওখানে বসে লম্বা সময় ওইসব ধাপ্পাবাজের তালি বাজানো শুনে, তাহলে সে নিশ্চিতভাবেই পৃথিবীর সব মানুষকে ঘৃণা করা শুরু করবে। আমি কসম খেয়ে বলছি এটা। ওখানের বারটেন্ডারটাও ছিল ফাজিল এক লোক। কেউকেটা বা সেলিব্রেটি গোত্রের কেউ না হলে সে কারো সাথে ঠিকমতো কথাই বলত না। কোনো কেউকেটা ধনী ব্যক্তি বা সেলিব্রেটি বারে গেলে তার ধাপ্পাবাজির পরিমাণ আরো কয়েকগুণ বেড়ে যেত। সে তখন বার থেকে বেরিয়ে এগিয়ে এমন মেকি আচরণে তাদের সাথে কথা বলত যেন সে তাদের অনেক দিনের পরিচিত বন্ধু। এই যেমন—’হেই, কানেটিকাট কেমন লাগলো?’ বা ‘ফ্লোরিডার কী অবস্থা?’ বারটা খুবই বাজে একটা জায়গা। মজা করছি না, আসলেই খুব বাজে একটা জায়গা। এজন্যই আমি ধীরে ধীরে ওখানে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলাম।

ওখানে অবশ্য ঐদিন কিছুটা আগেভাগেই চলে গিয়েছিলাম। জায়গাটাতে ও বেশ ভীড় ছিল। তাই বারে বসে কয়েকটা স্কচ আর সোডা অর্ডার করলাম। অর্ডার করার সময় উঠে দাঁড়িয়ে করেছিলাম যাতে তারা আমাকে লম্বা দেখে কম বয়সী হিসেবে ভেবে না বসে। তারপর ড্রিংক করতে করতে চারপাশের ধাপ্পাবাজদের ধাপ্পাবাজি দেখছিলাম। আমার ঠিক পাশেই থাকা ছেলেটা এক মেয়ের সাথে অনবরত গুল মেরে যাচ্ছিল। বারবার সে মেয়েটাকে বলছিল মেয়েটার হাত নাকি খানদানি হাত। খুবই হাস্যকর ছিল ব্যাপারটা। বারের শেষপ্রান্তের দিকে দলবেঁধে ছিল বেশ কিছু হোমো (সমকামী)। তাদেরকে দেখে যদিও হোমো মনে হচ্ছিল না—মানে তাদের চুলগুলো অতটা লম্বা ছিল না ঠিকই—তবে তাদেরকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল যে তারা হোমো। এরকম বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর অবশেষে এসে হাজির হলো লুস।

কার্ল লুস। চমৎকার এক লোক। হুটনে আমার স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজর হওয়ার কথা ছিল তার। তবে অ্যাডভাইজর হিসেবে সে আমাদের সাথে সেক্স নিয়েই বেশি আলাপ করেছে। প্রায়ই গভীর রাতে তার রুমে ছেলেদের আড্ডা জমতো তার থেকে এসব শোনার জন্য। সে আসলে সেক্স নিয়ে বেশ ভালোই জানতো, বিশেষ করে বিকৃত যৌনকামীদের ব্যাপারে। সে সবসময়ই আমাদের এমন কিছু বিকৃতমনাদের ব্যাপারে বলত যারা ভেড়ার সাথে সঙ্গম করত, যারা হ্যাটের লাইনিং ছিড়ে… মানে কী বুঝাতে চাচ্ছি বুঝতেই তো পারছেন। আর বলত হোমো এবং লেসবিয়ানদের নিয়ে। লুস যুক্তরাষ্ট্রের সব হোমো আর লেসবিয়ানকেই চিনতো। তাকে শুধু কারো নাম বলে দিলেই সে জানিয়ে দিতো যে ঐ মানুষটা হোমো বা লেসবিয়ান কি না। মাঝেমধ্যে তার কথা বিশ্বাস করা বেশ কঠিন। তার বলা হোমোদের তালিকায় অনেক মুভি অ্যাক্টরও ছিল, আবার অনেকেই ছিল বিবাহিত। অবিশ্বাসের সুরে তাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করা হতো, ‘জো ব্লোকে তুমি হোমো বলছো? জো ব্লো? মুভিতে গ্যাংস্টার বা কাউবয়ের অভিনয় করা বিশালদেহী লোকটা হোমো?’ সবসময়ই তাকে এই ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হতো। আর জবাবে সে বলত, ‘নিশ্চয়ই।’ সে সবসময়ই ‘নিশ্চয়ই’ শব্দটা বলে। সে বলেছিল বিবাহিত বা অবিবাহিত কোনো ফ্যাক্টরই না হোমোদের ক্ষেত্রে। তার মতে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক বিবাহিত পুরুষই নাকি হোমো, এমনকি অনেকক্ষেত্রে তারা নিজেরাই নাকি এটা জানে না। সে বলেছিল নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে নাকি যে কেউ রাতারাতি হোমো হয়ে যেতে পারবে। আমাদেরকে প্রচণ্ড ভয় পাইয়ে দিতো সে এইসব বলে। আমি নিজেই তো মনে করতাম আমি হোমো হয়ে যাচ্ছি। তবে লুসের ব্যাপারে মজার ব্যাপারটা হলো, আমি একসময় তাকে আংশিক হোমো বলে ভাবতাম। সে সবসময়ই বলত, ‘সাইজের জন্য এটা চেষ্টা করো,’ তারপর করিডোর ধরে যেতে থাকলে হুট করে লাফিয়ে উঠতো শরীরের ওপর। এমনকি সে টয়লেটে গেলেও দরজা খোলা রেখে যেত এবং ঐসময় বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে ব্রাশ করতে থাকলে তার সাথে কথাও বলত। এগুলো আমার কাছে হোমোদের বৈশিষ্ট্যই মনে হয়। আসলেই। আমি যে স্কুলগুলোতে পড়েছি সেগুলোতে আসলেই সত্যিকারের কিছু হোমো ছিল, তারা সবসময়ই লুসের মতো ওসব করত। এজন্যই লুসের ব্যাপারে সবসময়ই আমার মনে একটা সন্দেহ রয়ে গেছে। তবে, যাই হোক, লুস খুবই বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের একজন। আসলেই।

দেখা হলে সে কখনোই কাউকে হ্যালো বলে না। ঐদিনও বলেনি আমাকে। ঐদিন সে আমার পাশের সিটে বসে প্রথমেই বলেছিল যে সে মাত্র অল্প কয়েক মিনিট থাকতে পারবে আমার সাথে। তার নাকি পরে ডেট ছিল ঐদিন। তাই সে শুধু ড্রাই মার্টিনি অর্ডার দিল। বারটেন্ডারকে এটাও বলে দিয়েছিল যে তার ড্রিংকে যেন জলপাই না দেয়।

‘হেই, তোমার জন্য একটা হোমো দেখে রেখেছি,’ বললাম তাকে। ‘বারের শেষ মাথায়। এখন তাকিয়ো না। তোমার জন্য রেখে দিয়েছি তাকে।’

‘ভেরি ফানি,’ সে বলল। ‘এখনো দেখি আগের মতোই আছো, কলফিল্ড। বড়ো হবে কবে তুমি?’

আমার কথায় সে বিরক্ত হতো কিছুটা। আসলেই আমি বিরক্ত করতাম তাকে। তবে সে ঠিকই মজা দিতো আমাকে। সে হলো এমন একজন লোক যার কথা শুনলে আমি মজা পাই।

‘তো সেক্স লাইফ কেমন চলছে তোমার?’ জিজ্ঞেস করলাম। সে এইসব প্রশ্ন খুব অপছন্দ করত।

‘রিল্যাক্স,’ সে বলল। ‘শান্ত হয়ে বসে ড্রিংক করো আগে।’

‘আমি রিল্যাক্সই আছি,’ বললাম। ‘কলাম্বিয়া কেমন? তোমার ভালো লাগে ওখানে?’

‘নিশ্চয়ই। আমার ভালো না লাগলে আমি কখনোই সেখানে যেতাম না,’ সে বলল। মাঝেমধ্যে সে কিছুটা বিরক্তকর আচরণ করত।

‘মজা করছ কী নিয়ে?’ জিজ্ঞেস করলাম। ‘বিকৃতমনা যৌনকামীদের নিয়ে?’

‘তুমি ঠাট্টা করার চেষ্টা করছ?’

‘আরে না। এমনিই মজা করছিলাম শুধু,’ বললাম। ‘আচ্ছা, শুনো, লুস। আমার দেখা সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষদের একজন তুমি। তোমার উপদেশ দরকার আমার। আমি খুবই বাজ…’

আমার কথা শেষ হবার আগেই সে গুঙিয়ে উঠে বলল, ‘কলফিল্ড, তুমি যদি এখানে বসে শান্তি, নীরবে ড্রিংক করতে চাও আর শান্তশিষ্টভাবে আলাপ…’

‘আচ্ছা, আচ্ছা,’ বললাম। ‘রিলাক্স।’ তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল যে আমার সাথে কোনো সিরিয়াস বিষয়ে কথা বলার মুডে নেই। বুদ্ধিমান মানুষদের সাথে কথা বলার সমস্যা এই একটাই। তারা কখনোই নিজেদের ইচ্ছা না করলে কারো সাথে কোনো সিরিয়াস বিষয়ে আলাপ করতে চায় না। তাই আপাতত আমি সাধারণ ব্যাপারগুলো নিয়ে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। ‘মজা করছি না, তোমার সেক্স লাইফের কী অবস্থা?’ জিজ্ঞেস করলাম। ‘তুমি কি এখনো হুটনে থাকতে যে মেয়েটার সাথে ডেট করতে তার সাথেই আছো? ঐ যে ঐ মেয়েটা—’

‘আরে না,’ সে বলল।

‘কেন? কী হয়েছে তার?’

‘আমার বিন্দুমাত্র ধারণাও নেই। আমি শুধু এটুকু বলতে পারবো যে সে হয়তো এখন নিউ হ্যাম্পশায়ারের সবচেয়ে বড়ো পতিতায় পরিণত হয়েছে। তুমি জিজ্ঞেস করার পর মনে পড়লো ওর কথা।’

‘এটা তো ভালো কিছু না। সে যেহেতু তোমার সাথে তোমার পছন্দমতো সবকিছু করেছে, তাই তোমার অন্তত এখন তার ব্যাপারে এভাবে কথা বলা উচিৎ না।’

‘ওহ, খোদা!’ লুস বলল। ‘তো তুমি কি তোমার মতো এই গৎবাধা কথাই বলে যাবে? আমার এটা জানা দরকার।’

‘না,’ বললাম, ‘তবে এটা বলাটা ঠিক না। সে তো ভালোভাবেই তোমার সব চাহিদা— ‘

‘আমাদেরকে এখন জোর করে আগের ইতিহাস টানতেই হবে?’

কিছু বললাম না। আসলে ভয় পাচ্ছিলাম যদি কিছু বলি তাহলে হয়তো সেখান থেকে উঠে চলে যাবে। তাই কিছু না বলে আরেকটা ড্রিংক অর্ডার করলাম শুধু। প্রচণ্ড মাতাল হওয়ার ইচ্ছা করছিল আমার তখন।

‘এখন কার সাথে আছো তাহলে?’ জিজ্ঞেস করলাম। ‘এটা তো বলা যাবে নাকি?’

‘তুমি চিনবে না।’

‘জানি, তবে কে? চিনলে চিনতেও তো পারি।

‘গ্রামে থাকে। ভাস্কর্য বানায়।’

‘তাই? বয়স কেমন? মজা করছি না, সিরিয়াস।’

‘আমি তাকে কখনো জিজ্ঞেস করিনি। এটা জিজ্ঞেস করা যায় নাকি?’

‘আচ্ছা, বয়স কত বলে মনে হয় তোমার?

‘আমি বললে বলবো বয়স ত্রিশের কোঠার শেষ দিকে,’ বলল লুস।

‘কী? ত্রিশের কোঠার শেষ দিকে?’ বললাম। ‘তুমি কি এতো বেশি বয়স্কদের পছন্দ করো?’ এটা জিজ্ঞেস করার কারণ সেক্সের ব্যাপারে লুসের জ্ঞান যথেষ্ট সমৃদ্ধ। সে তার ভার্জিনিটি হারিয়েছিল মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে নান্টাকেটে। আসলেই।

‘আমি পরিণত মানুষ পছন্দ করি, এটাই যদি তোমার প্রশ্ন হয়ে থাকে। নিশ্চয়ই পছন্দ করি।’

‘আসলেই? কেন? মজা করছি না, তারা সেক্সের জন্য ভালো?’

‘শুনো, একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে বলে দিই, আমি কিন্তু তোমার এসব গত্বাঁধা প্রশ্নের আরো কোনো উত্তর দেবো না। তুমি আসলে কবে একটু বড়ো হবে?’

কিছু বললাম না। পরের কয়েকটা মিনিট চুপ করে রইলাম। এরপর লুস আরেকটা মার্টিনি অর্ডার করল, বারটেন্ডারকে বলল এবারের ড্রিংকটা আরো বেশি ড্রাই করে দিতে।

‘তো, কতদিন ধরে এই মহিলা ভাস্করের সাথে আছো তুমি?’ জানতে চাইলাম। আমার আসলেই জানতে আগ্রহ হচ্ছিল। ‘হুটনে পড়ার সময় কি তাকে চিনতে?’

‘না। মাত্র কয়েকমাস আগেই সে এই দেশে এসেছে।’

‘তাই? কোথা থেকে এসেছে?’

‘সাংহাই থেকে খুব সম্ভবত।’

‘কী, আসলেই? মহিলা চাইনিজ?’

‘অবশ্যই।’

‘সিরিয়াসলি! তুমি এটা পছন্দ করো? মানে চাইনিজদের?’

‘অবশ্যই।’

‘কেন? আমার আসলে জানতে আগ্রহ হচ্ছে—সত্যিই।’

‘আমার আসলে পশ্চিমা দর্শন থেকে পূর্বের দর্শনটাকেই বেশি সন্তোষজনক মনে হয়।’

‘তাই? ‘দর্শন’ বলতে কী বুঝাচ্ছো তুমি? মানে সেক্সের কিছু? তুমি বলতে চাচ্ছো চীনের ধরণটা বেশি ভালো?’

‘আসলে ঠিক চীনের কথাই বলছি না, আমি বলছি পূর্বের অঞ্চলটার ব্যাপারে। তোমার কি এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলতেই হবে?’

‘আরে, আমি সিরিয়াস,’ বললাম। ‘মজা করছি না। পুবের দিকের দর্শনটা ভালো কেন?’

‘এটা বলতে গেলে অনেক বেশি বলা হয়ে যাবে,’ লুস বলল। ‘তারা আসলে সেক্সকে শারিরীক ও আত্মিক সন্তুষ্টি উভয় হিসেবেই বিবেচনা করে। তোমার যদি মনে হয় আম…‘

‘আমিও এটাই মনে করি। মানে শারীরিক ও আত্মিক উভয় সন্তুষ্টি হিসেবেই বিবেচনা করি। আসলেই। তবে এটা আসলে নির্ভর করছে আমি ওটা কার সাথে করছি। যদি ওটা এমন কারো সাথে করি যাকে আমি একদম চিনিই না—’

‘আরে, এতো জোরে না, আরো আস্তে আস্তে বলো, কলফিল্ড। তুমি যদি নিজেই তোমার গলার স্বর নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারো, তাহলে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলাই বাদ—’

‘আচ্ছা, তবে শুনো,’ বললাম। আমি আসলে তখন একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম, তাই জোরে জোরে কথা বলতে শুরু করেছিলাম। মাঝেমধ্যে উত্তেজনায় জোরেই কথা বলে ফেলি। ‘আমি কিন্তু এটাই বুঝাতে চেয়েছি,’ বললাম। ‘আমি জানি সন্তুষ্টির জন্য এটার অবশ্যই শারীরিক, আত্মিক এবং আর্টিস্টিক হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমি যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে—প্রতিদিন তো এমনটা হওয়া সম্ভব না। সব মেয়ের থেকেই নিশ্চয় এই অভিজ্ঞতা পাওয়া সম্ভব না। তাই না?’

‘বাদ দাও তো,’ লুস বলল। ‘বাদ দিলে কি তোমার কোনো সমস্যা আছে?’

‘আচ্ছা। তোমার আর ঐ চাইনিজ মেয়েটার ব্যাপারেই বলো—তোমাদের দুজনের মধ্যে সবচেয়ে ভালো দিক কোনটা?’

‘বাদ দিতে বলেছি আমি।’

বুঝতে পারছিলাম যে আমি আসলেই একটু বেশি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা শুরু করেছিলাম। তবে লুসের সবচেয়ে বিরক্তিকর স্বভাব এটাই। হুটনে থাকতেও সে সবসময়ই তার সবচেয়ে ব্যক্তিগত ব্যাপারটা আমাদেরকে বর্ণনা করে বলত, আর এরপর ওসব তাকে কেউ প্রশ্ন করা শুরু করলেই সে ক্ষেপে যেত। এই বুদ্ধিমান লোকরা আসলে তাদের নিজেদের মর্জি মতো না হলে কারো সাথে বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা করতে চায় না। তারা সবসময়ই চায় তারা চুপ করলেই যেন বাকিরাও চুপ মেরে যায়; তারা রুমে ফিরে গেলেই যেন অন্যরাও তাদের রুমে ফিরে যায়। হুটনে থাকতে আমাদের সাথে সেক্স টক লুস তার রুমে ফিরে যাওয়ার পরও আমরা ঐসব নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতাম, অথবা অন্য কারো রুমে বসে আলাপ করতাম। লুস কিন্তু এই ব্যাপারটা অপছন্দ করত। তাকে দেখলেই বুঝা যেত যে সে তাকে ছাড়া কেউ ওসব নিয়ে আলোচনা করুক তা চায় না। সে সবসময়ই চাইতো সে আলোচনা শেষে রুমে ফিরে যাওয়া পর যেন অন্যরাও যে যার মতো রুমে গিয়ে চুপ করে বসে থাকে। সে ভয় পেতো কেউ হয়তো ওসব বিষয় তার থেকেও স্মার্ট কিছু বলে ফেলবে। তাকে নিয়ে ভাবলে আসলেই মজা লাগে আমার।

‘হয়তো আমার চীনে যাওয়া উচিৎ। আমার সেক্স লাইফ খুবই বাজে,‘ আমি বললাম।

‘এমনই হওয়ার কথা। তোমার মন তো খুবই ইম্যাচিউর।’

‘আসলেই। আমি জানি এটা,’ বললাম। ‘তুমি জানো আমার সমস্যাটা কী? আমি আসলে কখনো অতটা উত্তেজিত হতে পারি না—মানে কোনো মেয়ের সাথে আর কী। মানে আমার মনে হয় আমার ঐ মেয়েটাকে অনেক পছন্দ করতে হবে। যদি আমি অতটা পছন্দ করতে না পারি, তাহলে আমি ঐ মেয়ের ব্যাপারে আগ্রহ অনেকটাই হারিয়ে ফেলি। খোদা, এটা আসলেই আমার সেক্স লাইফকে পান্তাভাত করে দিয়েছে।’

‘স্বাভাবিকভাবেই। আমি তো তোমাকে আগেরবারই বলে দিয়েছি তোমার কী দরকার।’

‘মানে সাইকোঅ্যানালিস্টের কাছে যাওয়া?’ বললাম। সে আমাকে এটাই বলেছিল। তার বাবা একজন সাইকোঅ্যানালিস্ট।

‘এটা তোমার ব্যাপার, কলফিল্ড। তুমি তোমার লাইফ নিয়ে কী করবে সেটা তো আর আমি বলতে পারবো না।’

কিছুক্ষণের চুপ করে রইলাম। ভাবছিলাম।

‘ধরো আমি তোমার বাবার কাছে সাইকোঅ্যানালাইজের জন্য গেলাম,’ বললাম। ‘তখন তিনি আমার কী করবেন? মানে তিনি আমার সাথে কী করবেন?’

‘বাবা তোমার সাথে কিছুই করবে না। বাবা শুধু তোমার সাথে কথা বলবে, আর তুমি কথা বলবে বাবার সাথে। আরেকটা ব্যাপার হলো, বাবা তোমার সাথে কথা বলে তোমার মনের চিন্তাভাবনার প্যাটার্নটা বলে দিতে পারবে।’

‘কী?’

‘তোমার মনের চিন্তাভাবনার প্যাটার্ন। মানে তোমার মনটা কীভাবে চলে—শুনো, আমি তোমাকে সাইকোঅ্যানালাইসিসের জ্ঞান দিতে পারবো না। যদি তোমার আগ্রহ থাকে, তাহলে বাবাকে কল দিয়ে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নাও। যদি আগ্রহ না থাকে, তাহলেও আমার এতে কোনো সমস্যা নেই। তোমার ব্যাপার এটা।’

তার কাঁধে হাত রাখলাম। আসলেই তার কথা অনেক ভালো লাগতো আমার। ‘তুমি আসলেই খুব ভালো একজন বন্ধু,’ বললাম। ‘তুমি জানো এটা?’

সে তার ঘড়িতে সময় দেখলো একবার। বলল, ‘এখন জানলাম।’ এরপর উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘তোমার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো।’ তারপর বারটেন্ডারকে তার চেকটা দেওয়ার জন্য বলল।

‘হেই,’ কাউন্টার থেকে চলে যাওয়ার আগে ডাকলাম তাকে। ‘তোমার বাবা কি কখনো তোমার সাইকোঅ্যানালাইজ করেছে?’

‘আমার? এটা কেন জানতে চাচ্ছো?’

‘এমনি। তিনি কি তোমার অ্যানালাইজ করেছেন?’

‘ঠিক ওভাবে না। বাবা আমার চিন্তাধারার একটা প্যাটার্ন ধরিয়ে দিতে সাহায্য করেছে ঠিকই, পূর্ণ অ্যানালাইজ কখনো করেনি। কেন?’

‘এমনি। জানতে ইচ্ছা করছিল।’

‘আচ্ছা, শান্ত হও এখন,’ বলে কাউন্টারে টিপ রেখে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে যাচ্ছিল লুস।

‘আরেকটা ড্রিংকের জন্য থাকো,’ বললাম। ‘প্রচণ্ড একা লাগছে আমার। মজা করছি না, সত্যিই।’

সে জানালো থাকতে পারবে না। এমনিতেই নাকি তার অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। তাই চলে গেল।

আহ, লুস। সে সবসময়ই যন্ত্রণাদায়ক এক ছেলে, তবে তার শব্দের জ্ঞান অনেক ভালো। আমি পড়ার সময় হুটন স্কুলের ছেলেদের মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভোকাবুলারি ছিল লুসের। আসলে এটা আমার মত না, স্কুল থেকে তারা আমাদের এই বিষয়ে পরীক্ষা নিয়েছিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *