দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই – ১৮

অধ্যায় আঠারো

স্কেটিং রিং থেকে বের হয়ে টের পেলাম যে প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে আমার। তাই একটা ড্রাগস্টোরে ঢুকে সুইস চিজ স্যান্ডউইচ খেয়ে নিলাম। তারপর গেলাম ফোন বুথে। ভাবছিলাম জেনের বাসায় ফোন করে জানতে চাইবো সে বাসায় এসে পৌঁছেছে কি না। মানে তখন আমার পুরো সন্ধ্যাটা একদম ফ্রিই ছিল। জেন যদি বাসায় এসে থাকে তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করবো যে সে কি আমার সাথে কোথাও ড্যান্সিং-এ যেতে পারবে কি না। তাকে অনেকদিন ধরে চিনলেও তার সাথে কখনো ড্যান্স করা হয়নি। যদিও ফোর্থ অব জুলাইয়ে একটা ক্লাবে তাকে একবার নাচতে দেখেছি। ঐদিন দেখে তাকে খুবই ভালো ড্যান্সার বলে মনে হয়েছিল আমার। ঐসময়টায় তাকে খুব একটা ভালো করে চিনতাম না, তাই আর ঐদিন নাচের সময় তার ডেটের কাছে থেকে তাকে ছিনিয়ে নেইনি। সে তখন শোয়্যাটের আল পাইক নামের একজনের সাথে ডেট করছিল। ছেলেটাকে আমি অতটা ভালো করে চিনতাম না, তবে ছেলেটা সবসময়ই সুইমিং পুলের মধ্যে পড়ে থাকত। তার পরনেও থাকত ল্যাস্টেক্সের সুইম স্যুট, সবসময়ই হাই ডাইভ দিতো ছেলেটা। সারাদিন জুড়েই এক জাতের হাফ গেইনার ডাইভ দিতো ও। সে আসলে ঐ এক জাতের ডাইভই পারতো, তবে তার ভাবটা এমন ছিল যে ঐটা খুবই কঠিন একটা কাজ। ছেলেটার শুধু পেশিবহুল শরীরই ছিল, কিন্তু কোনো মগজ ছিল না। যাই হোক, ঐ রাতে আল পাইকই ছিল জেনের ডেট। আমি আসলে কিছুতেই ব্যাপারটা হজম করতে পারছিলাম না। আসলে সত্যি বলতে বুঝতেই পারছিলাম না। জেনের সাথে সম্পর্ক কিছুটা ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে সে কীভাবে আল পাইকের মতো আত্মহংকারী শো-অফ করা হারামজাদার সাথে ডেট করতে রাজি হয়েছিল। জবাবে সে বলেছিল ছেলেটা নাকি শো-অফ করে না। তার মতে ছেলেটা নাকি হীনমন্যতায় ভুগছিল। জেনের ভাবটা এমন ছিল যে ছেলেটার জন্য প্রচুর মায়া তার। জেন নাকি এই মায়াতেই তার সাথে ডেটে গিয়েছিল। মেয়েদের এই ব্যাপারটা আমার কাছে খুব হাস্যকর লাগে। যখনই কেউ তাদেরকে বলে কোনো ছেলে খুবই রুক্ষ বা দাম্ভিক, তখন মেয়েরা বলে উঠে যে ছেলেটার নাকি হীনমন্যতার সমস্য রয়েছে। হয়তো আল পাইক আসলেই হীনমন্যতায় ভুগছিল, তবে তারপরও সে কিন্তু হারামি স্বভাবেরই ছিল। অন্তত আমার কাছে এমনটাই লেগেছে। আর মেয়েরা, হাহ! তারা যে কখন কী ভাবে সেটা কখনোই আন্দাজ করা যায় না। আমি একবার রবার্তা ওয়ালশের রুমমেটের সাথে আমার এক বন্ধুর ডেট ফিক্সড করে দিয়েছিলাম। ছেলেটার নাম বব রবিনসন আর ওর আসলেই হীনমন্যতার সমস্যা ছিল। তাকে দেখেই বুঝা যেতো যে সে তার বাবা-মাকে নিয়ে খুবই লজ্জিত কারণ তারা সঠিকভাবে কথাবার্তা বলতে পারে না এবং তারা খুব একটা ধনীও ছিল না। তবে ছেলেটা হারামী টাইপের ছিল না। বব ছিল খুবই ভালো একটা ছেলে। কিন্তু রবার্তা ওয়ালশের রুমমেট ববকে একদমই পছন্দ করেনি। মেয়েটা রবার্তাকে বলেছিল যে বব নাকি খুবই দাম্ভিক প্রকৃতির, আর তার কাছে এটা মনে হয়েছে কারণ বব নাকি মেয়েটাকে বলেছিল যে সে বিতর্ক দলের ক্যাপ্টেন। শুধু এই একটা কথাই, আর এতেই মেয়েটা তাকে দাম্ভিক উপাধি দিয়ে দিয়েছিল। মেয়েদের একটা সমস্যা হলো, তারা যদি কোনো ছেলেকে পছন্দ করে তাহলে তারা যতই হারামজাদা প্রকৃতির হোক না কেন তারা তাদেরকে হীনমন্যতায় ভুগছে বলে রায় দিয়ে দেবে। আর যদি তাদের কোনো ছেলেকে ভালো না লাগে, তাহলে ছেলেটা যতই ভালো হোক না কেন বা যতই হীনতায় ভুগতে থাকুক না কেন তারা তাদেরকে দাম্ভিক-আত্মাভিমানী প্রকৃতির বলে ঘোষণা করে বসবে। এমনকি বুদ্ধিমতী মেয়েরাও এই কাজটা করে।

যাইহোক, আমি আরেকবার ফোন দিলাম জেনকে, তবে কেউ ফোনের জবাব দিচ্ছিল না, তাই ফোনটা রেখে দিলাম। তারপর আমার অ্যাড্রেস বুকের নামগুলো দেখলাম একবার। এই নামগুলোর মধ্যে সন্ধ্যায় কে ফ্রি থাকতে পারে ভাবছিলাম। সমস্যাটা হলো আমার অ্যাড্রেস বুকে মাত্র তিনটা নামই ছিল। জেন, এল্কটন হিলসের টিচার মি. অ্যান্টোলিনি আর আমার বাবার অফিসের নম্বর। অ্যাড্রেস বুকটায় কারো নাম্বার লিখতে কখনোই মনে থাকে না আমার। যাইহোক, শেষমেশ কার্ল লুসকে ফোন দিলাম। আমি চলে আসার পর হুটন স্কুল থেকে পাশ করে বেরিয়েছে কার্ল। বয়সে আমার থেকে প্রায় তিন বছরের বড়ো কার্ল। কার্ল ছিল হুটন স্কুলের সবচেয়ে ভালো আইকিউ’র ছেলে। তাই আমি ভাবলাম যে ডিনারের সময় তাকে ডেকে তার সাথে বসে বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা করা যাবে। মাঝেমধ্যে কার্ল খুবই জ্ঞানীদের মতো কথা বলতে পারে। তাই তাকে ফোন দিলাম। স্কুল থেকে পাশ করার পর সে কলাম্বিয়ায় চলে গিয়েছিল, তবে সে থাকত সিক্সটি ফিফথ স্ট্রিটে। আমি জানতাম যে সে বাসাতেই আছে। ফোনে তাই তাকে পেতে কোনো সমস্যাই হলো না। ফোন ধরে কার্ল জানালো যে সে ডিনারের জন্য সময় করতে পারবে না, তবে রাত দশটার দিকে ড্রিঙ্কের জন্য ফিফটি ফোর্থ স্ট্রিটের উইকার বারে দেখা করতে পারবে আমার সাথে। আমার কাছে মনে হয় সে আমার ফোন পেয়ে বেশ চমকে গিয়েছিল। স্কুলে পড়ার সময় আমি একবার তাকে মোটকা হারামজাদা বলে গালি দিয়েছিলাম।

রাত দশটার আগে অনেক সময় ছিল আমার হাতে। তাই মুভি দেখার জন্য রেডিও সিটিতে চলে গেলাম আবার। জানি আমার হয়তো মুভিতে যাওয়াটা উচিৎ হয়নি, কিন্তু আমার ওখান থেকে রেডিও সিটিটাই ছিল কাছে, আর মাথায়ও অন্য কিছুর কথা আসছিল না।

যখন রেডিও সিটিতে গিয়ে পৌছাই তখন স্টেজ শো চলছিল। দ্য রকেটস তাদের একজন আরেকজনের কোমড়ে হাত পেঁচিয়ে ধরার পারফম্যান্সে দর্শকদের মন মাতিয়ে রেখেছিল। দর্শকরা পাগলের মতো করতালি বাজাচ্ছিল তখন। আমার পিছনে থাকা এক লোক তো বারবারই স্ত্রীকে বলছিল, ‘জানো এটা কী? এটা হচ্ছে নিখুঁত পারফম্যান্স।’ বিরক্তিকর ছিল লোকটা। দ্য রকেটস যাওয়ার পর রোলার স্কেট পরে মঞ্চে এলো টাক্সিডো পরা এক লোক। মঞ্চে এসে একটার পর ছোটো ছোটো টেবিলের নিচ দিয়ে স্কেট করছিল লোকটা আর কৌতুক বলছিল। লোকটা খুবই ভালো স্কেটার ছিল, তবে আমি তাকে খুব একটা উপভোগ করতে পারিনি। কারণ আমি কল্পনা করছিলাম লোকটা স্টেজে কীভাবে রোলার স্কেটে করে চলতে হয় সেটার প্র্যাক্টিস করছে। তার পারফম্যান্স খুবই স্টুপিড লাগছিল আমার কাছে। হয়তো আমার আসলে তখন ওসব উপভোগ করার মুডই ছিল না। সে যাওয়ার পর শুরু হলো ক্রিসমাসের থিমের নাটক। রেডিও সিটি প্রতিবারই এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মঞ্চের পুরোটা জুড়েই ছিল অনেক বাক্স, আর বাক্সগুলো থেকে একের পর এক দেবদূত বেরিয়ে আসছিল। পুরোটা মঞ্চ জুড়েই মানুষজন দৌড়াচ্ছিল ক্রুশ নিয়ে, আর কয়েকজন মিলে সম্মিলিত গলায় পাগলের মতো গাচ্ছিল—আসলে কয়েকজন না, কয়েক হাজার জন—’কাম অল ইউ ফেইথফুল!’ আহ, কী অনুষ্ঠান। আমি জানি ঐ অভিনয়টার মূল উদ্দেশ্য ছিল দর্শকদের মুগ্ধ করা আর ধর্মের মাধুর্যতা ছড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু স্টেজের ওপর দিয়ে অভিনেতাদেরকে ক্রুশ নিয়ে দৌড়ানো দেখাটা আমার কাছে অতটা মুগ্ধ করার মতো কিছু বা ধর্মের মাধুর্যতা ছড়ানোর মতো কিছু মনে হচ্ছিল না। অভিনয় শেষে অভিনেতারা আবার যখন বাক্সে ঢুকছিল তখন তাদেরকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল যে তারা মঞ্চ থেকেই নেমেই প্রথমে সিগারেট টানবে। আগের বছর আমি এই নাটকটা দেখেছিলাম স্যালি হায়েসের সাথে। সে নাটকটা দেখে বারবারই বলছিল নাটকটা খুবই চমৎকার, কস্টিউমগুলো খুবই সুন্দর। আমি তখন তাকে বলেছিলাম যে যীশু যদি এইসব দামী দামী কস্টিউম দেখতো তাহলে হয়তো বমি করে দিতো। স্যালি তখন বলেছিল আমি নাকি পাষাণ হৃদয়ের এক নাস্তিক। হয়তো আমি আসলেই ওরকম। আমার কাছে মনে হয় যীশু হয়তো এই নাটকের অর্কেস্ট্রায় কেটল ড্রাম বাজানো লোকটাকেই একমাত্র পছন্দ করত। আট বছর বয়স থেকেই আমি ঐ লোকটাকে ড্রাম বাজাতে দেখছি। বাবা-মায়ের সাথে এলে আমি আর আমার ভাই এলি আমার সিট সরিয়ে লোকটাকে কাছ থেকে দেখার জন্য মঞ্চের আরো কাছে চলে যেতাম। আমার দেখা সেরা ড্রামার ঐ লোকটা। পুরো নাটকের সময় লোকটার আসলে ড্রাম বাজানোর সুযোগ পায় খুবই কম সময়, তারপরও লোকটার মধ্যে কোনো বিরক্তভাব দেখিনি আমি। আর যখন ড্রামে বাড়ি দেওয়ার সময় হতো তখন লোকটা উদ্বেগভরা চেহারায় খুবই শান্ত ও মিষ্টভাবে আঘাত করত ড্রামে। একবার বাবার ওয়াশিংটনে গিয়েছিলাম আমরা, তখন এলি লোকটার উদ্দেশ্যে একটা পোস্টকার্ড পাঠিয়েছিল। তবে আমার সন্দেহ আছে লোকটা ঐ পোস্টকার্ড কখনো পেয়েছিল কি না। আমরা আসলে লোকটার ঠিকানার ব্যাপারে অতটা নিশ্চিত ছিলাম না।

ক্রিসমাসের নাটকটা শেষ হওয়ার পর শুরু হলো মুভি। মুভিটা এতো বাজে ছিল যে ঠিকমতো চোখই রাখতে পারছিলাম না পর্দায়। মুভিটা ছিল এক ইংরেজ লোককে নিয়ে। অ্যালেক কী যেন নাম ছিল লোকটার। যুদ্ধে গিয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে হাসপাতালে পড়েছিল লোকটা। বেশ কিছুদিন হাসপাতালে থাকার পর ছাড়া পেয়ে লাঠিতে ভর করে পুরো লন্ডন জুড়ে ঘোরা শুরু করে লোকটা। নিজের পরিচয় না জেনেই পুরো লন্ডন জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল লোকটা। লোকটা আসলে একজন ডিউক ছিল, কিন্তু যুদ্ধে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলায় সে আর ওটা জানতো না। এভাবেই হুট করে একদিন বাসে উঠতে গিয়ে এক চমৎকার মেয়ের সাথে দেখা হয় তার। বাসে উঠার সময় মেয়েটার মাথা থেকে টুপিটা উড়ে গিয়েছিল, আর অ্যালেক সেই টুপিটা তুলে এনে আবার ফিরিয়ে দেয় মেয়েটাকে। ওটাই তাদের পরিচয়। এরপর তারা বাসে উঠে সিটে বসে আলাপ শুরু করে চার্লস ডিকেন্সকে নিয়ে। তাদের দুইজনেরই প্রিয় লেখক চার্লস ডিকেন্স। অ্যালেকের সাথে এমনকি অলিভার টুইস্ট-এর একটা কপিও ছিল তখন, মেয়েটার সাথেও ছিল। কাহিনি দেখে আমার প্রায় বমি করার দশা হয়েছিল। যাই হোক, একসময় একে-অপরের প্রেমে পড়ে যায় তারা দু’জন। তাদের প্রেমে পড়ার মূল কারণ তারা দুজনই চার্লস ডিকেন্সের অন্ধভক্ত এবং অ্যালেক মেয়েটাকে তার প্রকাশনার ব্যবসা চালানোয় সাহায্য করছিল। মেয়েটা আসলে একজন প্রকাশক। তার ব্যবসার অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। মেয়েটার মাতাল ভাই তাদের সব টাকা-পয়সা অযথাই উড়িয়ে নষ্ট করে ফেলেছিল। ঐ ভাইটা খুবই রুক্ষ স্বভাবের ছিল। যুদ্ধের সময় মেয়েটার ভাই ডাক্তার ছিল, তবে যুদ্ধে লোকটার নার্ভে গুলি লাগায় তার পক্ষে আর ডাক্তারি অপারেশন করা সম্ভব ছিল না। সেজন্যই দুঃখে সারাদিন ধরে শুধু মদ খেতো লোকটা। তবে লোকটা বেশ রসিক ছিল। যাইহোক, অ্যালেক একসময় একটা বই লেখে আর মেয়েটা সেই বই ছাপায়। ঐ বই থেকে প্রচুর পরিমাণ টাকা আয় করে ওরা। ততদিনে অ্যালেক আর মেয়েটার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে, তারা বিয়ে করবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে—ঠিক তখনই মার্সিয়া নামের একজন এসে হাজির হয় দৃশ্যপটে। স্মৃতি হারানোর আগে মার্সিয়া ছিল অ্যালেকের বাগদত্তা। এক দোকানে অ্যালেককে বইয়ে অটোগ্রাফ দেওয়ার সময় তাকে চিনে ফেলে মার্সিয়া। সে এসে অ্যালেককে বলে যে অ্যালেক আসলে একজন ডিউক, তবে অ্যালেক তার কোনো কথাই বিশ্বাস করেনি, এমনকি মার্সিয়ার কথামতো তার মাকেও দেখতে যেতে রাজি হয়নি। অ্যালেকের মা ছিল অন্ধ। তবে অন্য মেয়েটা মানে প্রকাশক মেয়েটা অ্যালেককে রাজি করায়। মেয়েটা আসলেই খুব ভালো ছিল। মেয়েটার কথামতো অ্যালেক তার মাকে দেখতে যায়। মাকে দেখেও অ্যালেকের স্মৃতি ফিরে আসেনি, এমনকি তার পুরোনো গ্রেট ডেন কুকুরটা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেও তার স্মৃতি ফিরে আসেনি। তার মা অনেকবার অ্যালেকের মুখ হাতিয়ে আদর করেও স্মৃতি ফেরাতে পারেনি। এমনকি পারেনি অ্যালেকের ছোটোবেলার সবচেয়ে প্রিয় খেলনা টেডি বিয়ারটাও। তারপর একদিন অ্যালেক লনে বসে বাচ্চাদের ক্রিকেট খেলা দেখছিল। তখন হুট করে ক্রিকেট বল এসে আঘাত করে তার মাথায়। সাথে সাথেই স্মৃতি ফিরে আসে অ্যালেকের। স্মৃতি ফিরে পেয়েই সে ছুটে যায় তার মাকে জড়িয়ে ধরতে। এরপর আবারো ডিউক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে অ্যালেক। ঐসময় প্রকাশক মেয়েটার কথা অ্যালেক ভুলেই গিয়েছিল একদম। এরপরের কাহিনিটাও বলতে পারি, তবে বললে হয়তো আমি নিজেই বমি করে দিতে পারি। এমন না যে কাহিনি স্পয়েল করে দিচ্ছি বা এমন কিছু। আসলে স্পয়েল করার মতো কোনো কাহিনিই তো না এটা। যাই হোক, মুভির শেষে অ্যালেক আর প্রকাশক মেয়েটার বিয়ে হয়, মেয়েটার ভাইয়ের নার্ভও ঠিক হয়ে যায়, নার্ভ ঠিক হওয়ার পর অপারেশন করে সে অ্যালেকের মায়ের দৃষ্টিশক্তিও ফিরিয়ে আনে। ততদিনে মার্সিয়ার সাথেও সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়। মুভির শেষ দৃশ্যে তারা সবাই এক লম্বা ডিনার টেবিলে বসে গ্রেট ডেনকে একগুচ্ছ কুকুরছানা নিয়ে ঢুকতে দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। আমার মনে হয় তারা সবাই ঐ কুকুরটাকে পুরুষ কুকুর বা এরকম কিছু ভেবেছিল। যাই হোক, আমি এটুকুই বলতে পারি যে ঐ মুভি দেখে কারো বমি আটকে রাখাটা খুবই কঠিন হবে।

তবে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো, আমার পাশের সিটে বসা মহিলাই এই মুভি দেখে বাচ্চা মেয়েদের মতো কাঁদতে কাঁদতে নিজেকে ভাসিয়ে ফেলেছিল। মুভির কাহিনি যতই ফালতুর দিকে গড়িয়েছে ততই কান্নার গতি বেড়েছে মহিলার। শুনে মনে হতে পারে মহিলা হয়তো খুবই নরম, দয়ালু হৃদয়ের। তবে আমি তো মহিলার পাশের সিটেই ছিলাম, মহিলা কোনোভাবেই দয়ালু হৃদয়ের না। মহিলার সাথে থাকা বাচ্চাটা মুভি দেখে আমার মতোই বিরক্ত হয়ে বাথরুমে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু মহিলা তাকে নিয়ে যেতে রাজি হয়নি। মহিলা বারবারই বাচ্চাটাকে বলছিল যেন সে তার সিটে শান্ত হয়ে বসে থাকে। ঐ মহিলার হৃদয় আসলে বুনো নেকড়ের মতোই নরম ছিল। আসলে যেইসব মানুষ ফালতু মুভি দেখে হলে বসে কাঁদতে কাঁদতে ভাসিয়ে দেয়, বেশির ভাগ সময় সেইসব মানুষ আসলে খুবই হারামি টাইপের হয়। আসলেই, মজা করছি না, এটা সত্য।

মুভি শেষ হওয়ার পর উইকার বারের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। কার্ল লুসের সাথে ওখানেই দেখা করার কথা আমার। হাঁটার সময় যুদ্ধ নিয়ে ভাবছিলাম। যুদ্ধের কোনো মুভি দেখার পর আমার মাথায় প্রতিবারই এসব ভাবনা ঢুকে যায়। মনে হয় না যুদ্ধে গেলে আমি টিকে থাকত পারবো। আসলেই যুদ্ধে গেলে টিকতে পারবো না। ব্যাপারটা এমন না যে শত্রুপক্ষ আমাকে ধরে নিয়ে যাবে বা গুলি করে মেরে ফেলবে, এমনটা হলে বরং আমার জন্য ভালোই হবে। আমার আসলে যুদ্ধের সময় লম্বা সময় আর্মিতে থাকা লাগবে ভেবেই মরে যেতে ইচ্ছা করে। এটাই হলো মূল সমস্যা। আমার ভাই ডি.বি. চার বছর আর্মিতে ছিল। যুদ্ধেও গিয়েছিল সে। তবে মনে হয় সে যুদ্ধের থেকেও আর্মিকে বেশি ঘৃণা করে। ঐ সময়টায় আমি বলতে গেলে প্রায় বাচ্চাই ছিলাম, তবে এখনো মনে আছে যুদ্ধের সময় মাঝেমধ্যে ডি.বি. ছুটি নিয়ে বাসায় এলে শুধু তার বিছানাতেই শুয়ে থাকত। এমনকি লিভিং রুমেও আসতো না অতটা। ছুটি শেষে আবার বিদেশে যুদ্ধে ফিরে গেলেও সে কখনো কাউকে গুলি করত না বা নিজেও আহত হতো না। যুদ্ধে তার কাজ ছিল শুধু কয়েকজন জেনারেলকে নিয়ে সারাদিন কমান্ড গাড়ি চালানো। সে একবার আমাকে আর এলিকে বলেছিল যে, তাকে যদি যুদ্ধে বন্দুক দেওয়া হতো, তাহলে সে নিশ্চিত হতে পারতো না কাকে আগে মারবে। সে বলেছিল আর্মির সেনারা নাৎসিদের মতোই অনেক বড়ো হারামি। আমার মনে আছে এলি একবার তাকে জিজ্ঞেস করেছিল যুদ্ধে যাওয়ায় তার কোনো উপকার হয়েছে কি না—যেহেতু সে লেখালেখি করে, যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিশ্চয় তাকে লেখালেখির অনেক উপকরণই দিয়েছে। ডি.বি. তখন এলিকে দিয়ে তার বেসবল গ্লাভস আনিয়ে জিগেস করেছিল সবচেয়ে সেরা রণ কবিতা কে লেখে, রুপার্ট ব্রুক নাকি এমিলি ডিকিনস। এলি জবাবে বলেছিল এমিলি ডিকিনসনের কথা। আমি আসলে ওসব ব্যাপারে খুব একটা ভালো জানি না, আমি তেমন একটা কবিতা পড়ি না। তবে এটা জানি যে আমাকে যদি আর্মিতে যোগ দিয়ে অ্যাকলি, স্ট্র্যাডলেটার, মরিসের সাথে সবসময় মার্চ করা লাগে, তাহলে আমি পাগল হয়ে যাব। একবার এক সপ্তাহের জন্য বয় স্কাউটের সাথে ছিলাম। ঐসময়টায় কখনোই আমার সামনে দাঁড়ানো ছেলেটার ঘাড়ের দিকে তাকাতে পারিনি। তারা আমাকে সবসময় বলেছে চোখ তুলে আমার সামনের জনের ঘাড়ের দিকে তাকাতে, কিন্তু আমি পারিনি। সত্য বলছি, আবার যদি কখনো যুদ্ধ হয় তাহলে তারা চাইলে আমাকে ধরে-বেঁধে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে ঠেলে দিতে পারবে—এতে আমার কোনো আপত্তিও নেই। ডি.বি.’র যে ব্যাপারটা আমার অদ্ভুত লাগে সেটা হলো সে যুদ্ধকে খুব ঘৃণা করলেও গত গ্রীষ্মে আমাকে অ্যা ফেয়ারওয়েল টু আর্মস পড়ার জন্য এনে দিয়েছিল। বলেছিল বইটা নাকি খুবই চমৎকার। আমি এটাই বুঝতে পারিনি। বইয়ে লেফটেন্যান্ট হেনরি নামের একটা লোক ছিল যে আচার-আচরণে খুবই ভালো। আমি আসলে এটাই বুঝতে পারিনি যে ডি.বি. যুদ্ধ আর আর্মিকে এতো ঘৃণা করলেও কীভাবে ঐ বইয়ের মতো ফালতু একটা বই পছন্দ করতে পারে। মানে উদাহরণস্বরূপ, সে কীভাবে একই সাথে ঐ ধরনের বাজে একটা বইয়ের সাথে সাথে রিং গার্ডনারের বইগুলো বা দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’র মতো বই পছন্দ করতে পারে। দ্য গ্রেট গ্যাটসবি বইটা তো তার সবচেয়ে প্রিয় বই। আমি এটা বলার পর ডি.বি. বেশ মন খারাপ করে বলেছিল যে আমার বয়স কম বলে আমি নাকি এটা বুঝতে পারবো না। তবে আমার এরকমটা মনে হয় না। তাকে বলেছিলাম আমার রিং গার্ডনার এবং দ্য গ্রেট গ্যাটসবি বেশি পছন্দ। আসলেই ওগুলো আমার অনেক পছন্দের। বিশেষ করে দ্য গ্রেট গ্যাটসবি। ওহ্, গ্যাটসবি, ওল্ড স্পোর্ট। এটা আমি কখনো বুঝতে পারিনি। যাই হোক, পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার হওয়ায় আমি অনেক খুশি। যদি আরেকবার কখনো যুদ্ধ হয়, তাহলে আমি নিজে ঐ বোমার ওপরে চড়ে ঐ যুদ্ধে যাবো। সত্য বলছি, আমি নিজে ওটার স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *