মোর অঙ্গে অঙ্গে যেন আজি বসন্ত-উদয় কত পত্রপুষ্পময় । যেন মধুপের মেলা গুঞ্জরিছে সারাবেলা , হেলাভরে করে খেলা অলস মলয় । ছায়া আলো অশ্রু হাসি নৃত্য গীত বীণা বাঁশি , যেন মোর অঙ্গে আসি বসন্ত-উদয় কত পত্রপুষ্পময় । তাই মনে হয় আমি পরম সুন্দর , আমি অমৃতনির্ঝর । সুখসিক্ত নেত্র মম শিশিরিত পুষ্পসম , ওষ্ঠে হাসি নিরুপম মাধুরীমনথর । মোর পুলকিত হিয়া সর্বদেহে বিলসিয়া বক্ষে উঠে বিকশিয়া পরম সুন্দর , নব অমৃতনির্ঝর । ওগো , যে তুমি আমার মাঝে নূতন নবীন সদা আছ নিশিদিন , তুমি কি বসেছ আজি নব বরবেশে সাজি , কুন্তলে কুসুমরাজি , অঙ্কে লয়ে বীন , ভরিয়া আরতিথালা জ্বালায়েছ দীপমালা , সাজায়েছ পুষ্পডালা নূতন নবীন — আজি বসন্তের দিন । ওগো তুমি কি উতলাসম বেড়াইছ ফিরে মোর হৃদয়ের তীরে ? তোমারি কি চারিপাশ কাঁপে শত অভিলাষ , তোমারি কি পট্টবাস উড়িছে সমীরে ? নব গান তব মুখে ধ্বনিছে আমার বুকে , উচ্ছ্বসিয়া সুখে দুখে হৃদয়ের তীরে তুমি বেড়াইছ ফিরে । আজি তুমি কি দেখিছ এই শোভা রাশি রাশি ওগো মনোবনবাসী । আমার নিশ্বাসবায় লাগিছে কি তব গায় , বাসনার পুষ্প পায় পড়িছে কি আসি । উঠিছে কি কলতান মর্মরগুঞ্জরগান , তুমি কি করিছ পান মোর সুধারাশি ওগো মনোবনবাসী । আজি এ উৎসবকলরব কেহ নাহি জানে , শুধু আছে তাহা প্রাণে । শুধু এ বক্ষের কাছে কী জানি কাহারা নাচে , সর্বদেহ মাতিয়াছে শব্দহীন গানে । যৌবনলাবণ্যধারা অঙ্গে অঙ্গে পথহারা , এ আনন্দ তুমি ছাড়া কেহ নাহি জানে — তুমি আছ মোর প্রাণে ।