অশুভ সংকেতের পর – ১৫

পনেরো

‘থাম রিচার্ড,’ অনুরোধ করল অ্যান। ‘আমার মাথার দিব্যি, তুমি থাম!’

কিন্তু কে কার কথা শোনে? চাঁড় দিয়ে ড্রয়ারটা খুলে ফেলল রিচার্ড। বিকৃত একটা খুশির ভাব ফুটে উঠেছে ওর চেহারায়। ভিতরে দেখা যাচ্ছে সাতটা শাণিত ছুরি-বাতির আলোয় চিকচিক করছে।

চওড়া মার্বেল পাথরের সিঁড়ি দিয়ে ছুটে নেমে আসছে ডেমিয়েন। অস্পষ্ট কথাবার্তার আওয়াজ পেল সে। আকুলি-বিকুলি করছে অ্যান রিচার্ড মানছে না। ডেমিয়েনের চেহারা নির্বিকার। এগিয়ে চলল সে।

লাফিয়ে ড্রয়ারের ওপর পড়ল অ্যান। রিচার্ড আর ছুরিগুলোর মাঝখানে দাঁড়িয়ে সে। ‘কিছুতেই দেব না!’ চিৎকার করে উঠল অ্যান।

স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে চাইল রিচার্ড। ‘ছুরিগুলো আমাকে দাও, অ্যান।’

মাথা নাড়ল অ্যান। চোখের জলে ওর গাল দুটো ভেসে যাচ্ছে।

‘অ্যান!’ প্রত্যেকটা শব্দের ওপর আলাদা ভাবে জোর দিয়ে উচ্চারণ করে সে বলল, ‘ওগুলো আমাকে দাও।’

চোখেচোখে চেয়ে আছে ওরা মনে হচ্ছে যেন অনন্তকাল কেটে গেল। শেষ পর্যন্ত চোখ নামিয়ে নিল অ্যান। বিষাদে বুকটা ফেটে যাচ্ছে ওর। একটু একটু করে রিচার্ডের দিকে পিছন ফিরে ঘুরে দাঁড়াল সে। তারপর ধীরে, খুব ধীরে টেনে ড্রয়ারটা পুরো খুলল।

দরজার বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে ডেমিয়েন। আচ্ছন্ন হয়ে মনোযোগ দিয়ে কিছু শুনছে সে। চোখ বুজে থরথর করে কাঁপতে শুরু করল এবার।

ইতস্তত করছে অ্যান। যেন ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ তাকে কিছু করাতে চাইছে— বাধা দিচ্ছে সে। তার ভিতরে আর একটা স্বর কথা বলছে। অনেক শক্তিশালী ওটা। ড্রয়ার থেকে ছুরিগুলো মুঠো করে তুলে নিয়ে ঘুরে স্বামীর মুখোমুখি দাঁড়াল অ্যান।

ছুরিগুলো নেয়ার জন্য হাত বাড়াল রিচার্ড।

এগিয়ে গেল অ্যান—ভূতে পেয়েছে যেন—ওর চেহারা বিকৃত ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে। ঝুঁকে রিচার্ডের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে সে বলল, ‘এই যে, নাও তোমার ছুরি।’ একসাথে সবকটা ছুরি ঢুকিয়ে দিল অ্যান রিচার্ডের দেহে!

আতঙ্কে রিচার্ডের চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে গেল। ‘অ্যান!’ বলে মুখ থুবড়ে মেঝেতে পড়ল সে। দেহের ভারে ছুরিগুলো আরও ভিতরে ঢুকে গেল।

বিজয় উল্লাসে অ্যানের মাথাটা পিছনে হেলে গেল। চোখ বুজে আছে সে—ঠোঁটে লেগে আছে হাসির ছোঁয়া। হঠাৎ বিকট চিৎকার করে একটা শব্দ উচ্চারণ করল সে।

‘ডেমিয়েন!’

কাঁপা বন্ধ হয়ে গেল, চোখ খুলল ডেমিয়েন। দরজার হাতল ঘুরিয়ে দরজা খুলতে গিয়েও থেমে গেল। কয়েক সেকেণ্ড গভীর চিন্তামগ্ন থেকে সিদ্ধান্ত পাল্টাল সে। তারপর লঘু পায়ে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে ফিরে চলল।

বয়লার ঘরে বয়লারটা একটা অশুভ ইঙ্গিতে কেঁপে উঠতে শুরু করেছে…

অফিস ঘরে স্থির দাঁড়িয়ে আছে অ্যান। খুশির ঘোরে উদ্ভাসিত ওর চেহারা।

আরও তাড়াতাড়ি হাঁটতে শুরু করেছে ডেমিয়েন।

বয়লার রূমে একটা চুল্লী শব্দ তুলে ফেটে গেল। জ্বলন্ত তেল চারপাশে ছিটকে পড়ল। ভেন্টিলেটার দিয়ে পাশের ঘরে অ্যানের গায়ে এসে পড়ল কিছু তেল। দাউ দাউ করে আগুন ধরে গেল ওর কাপড়ে।

তার কাজ শেষ করে বাইরের দিকে রওনা হল ডেমিয়েন। ওর চারপাশে কান-ফাটানো শব্দে আগুন জ্বলার বিপদ সংকেত বেজে চলেছে।

শেষ পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয় আগুন নেভানোর কাজ চালু হল। বাষ্প ঘিরে ফেলল অ্যানের দেহ।

দেরি হয়ে গেছে।

মরণেও বেদনার চিহ্ন নেই অ্যানের মুখে। উপর দিকে মুখ তুলে সে চিৎকার করল, ‘ডেমিয়েন! ডেমিয়েন!! ডে-মি-য়ে—ন!!!’

মিউজিয়মের দরজার কাছে থেমে দাঁড়িয়ে একবার পিছন ফিরে চাইল ডেমিয়েন। ওর চোখে বেদনার ছায়া। তারপর দরজা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে এল সে।

ওর সামনে রাতের শিকাগো আলোয় ঝলমল করছে। দূরে দমকলের সাইরেন শোনা গেল। আগুন নেভাতে ছুটে আসছে ওরা।

মিউজিয়মের দোরগোড়ায় থর্নের সুন্দর কালো লিমোসিনটা অপেক্ষা করছে ওর জন্য। বিশ্বস্ত শোফার মারে গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়াল।

তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নেমে গাড়িতে উঠে বসল ডেমিয়েন। ভিতরে পল বুহের আর সার্জেন্ট নেফও রয়েছে—ওদের দু’জনের মুখেই তৃপ্তির হাসি।

শোফারকে গাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে গাড়ির পিছনের জানালা দিয়ে একবার মিউজিয়মের দিকে চাইল ডেমিয়েন। পুরোটাই আগুনে জ্বলছে। গাড়ির জানালায় প্রতিফলিত হচ্ছে আগুনের লিকলিকে শিখার নাচ।

ডেমিয়েনের চোখ দুটো খুশিতে হাসছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *