অশুভ সংকেতের পর – ১১

এগারো

তেরো বছরের ছেলের যেমন হওয়া দরকার তেমিন গাঢ় ঘুমে ডেমিয়েন অচেতন।

অ্যানও শক্তিতেই ঘুমাচ্ছে।

কিন্তু রিচার্ডের চোখে ঘুম নেই। মার্কও জেগে রয়েছে।

লেক সাইডের বাড়িতে জেগে আছে ওরা দু’জন।

ক্লান্ত অবসন্ন দেহে তার স্টাডিতে বসে আছে থর্ন। কাপড়ও ছাড়েনি সে। টেবিলে কনুই রেখে দু’হাতে মাথা চেপে ধরে ভাবছে কি করা যায়। তার সামনেই খোলা অবস্থায় বিছানো রয়েছে বুগেনহাগেনের না পাঠানো চিঠিটা। পুরো চিঠিটা কয়েকবার খুঁটিয়ে পড়েছে সে। প্রকাণ্ড একটা ইঙ্গিত রয়েছে চিঠিতে। কিন্তু ব্যাপারটা এতই অবিশ্বাস্য যে পুরোপুরি উপলব্ধি করে উঠতে পারছে না। চিন্তা করার জন্য আরও অনেক সময় দরকার।

চিঠির পাতাগুলো ড্রয়ারে ভরে রেখে ডেস্কের তালা লাগাল রিচার্ড। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভেঙে জানালার কাছে এগিয়ে গেল। দূরে তুষারে ঢাকা পুবের পাহাড়গুলোর উপর দিয়ে সূর্যটা সোনালি আলো ছড়ানো শুরু করেছে। না, এ হতেই পারে নাঃ মনে মনে ভাবল সে। মানুষের মনে ছাড়া আর কোথাও শয়তানের অস্তিত্ব নেই।

দোতলার শোবার ঘরের দিকে রওনা হল থর্ন। এখনও চেষ্টা করলে হয়ত ঘন্টা দুই ঘুমিয়ে বিশ্রাম নেয়া যাবে।

থর্ন জানে না, মার্কও তারই মত সারা রাত জেগে কাটিয়েছে। ঘুমের ভান করে পড়ে ছিল সে। অন্যেরা ঘুমিয়ে পড়তেই চুপি চুপি উঠে লাইব্রেরি ঘরে ঢুকে শেলফ থেকে বাইবেলটা নামিয়ে রেভিলেশন পড়তে শুরু করেছিল।

এখন দিনের আলো ফুটে উঠেছে দেখে বাইবেল থেকে মুখ তুলে জানালার দিকে চাইল। চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ছে—কাঁদছে ও। একে রাত জাগার ক্লান্তি, তার ওপর যে ভয়ানক সত্য সে জেনেছে, তাতে আর নিজেকে সংযত রাখা ওর পক্ষে অসম্ভব।

এখন মার্ক পুরোপুরি বিশ্বাস করে যে ডেমিয়েন সত্যিই শয়তানের ছেলে।

গত কয়েক মাসে ডেমিয়েনের অদ্ভুত চালচলেনের কথা ভাবল সে। ইতিহাস ক্লাসে কিছুদিন আগেই অবাক কাণ্ড ঘটিয়েছে সে। খেলার মাঠে কোন খেলাতেই কেউ ওর সাথে পারে না।

সেদিনের দুর্ঘটনার কথাও একবার ভাবল মার্ক! বিষাক্ত গ্যাসে একমাত্র ডেমিয়েনেরই কোন ক্ষতি হয়নি। প্যাসারিন, অ্যাদারটন, আন্ট মেরিয়ন সহ তাদের আশেপাশের মানুষগুলো হঠাৎ অসাধারণ ভাবে মারা পড়েছে। কোন ব্যাখ্যা নেই।

শেষ পর্যন্ত ডেমিয়েনের কথা ভাবল মার্ক। ওকে সে ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে—রীতিমত ভক্তিই করে বলা যায়। হতে পারে অন্য মানুষ, যারা ঘৃণ্য আর ভয়ানক, তারাও একটু ভিন্ন ভাবে ওর ভক্ত।

বাইবেলটা যেখান থেকে নিয়েছিল সেখানেই ওটাকে যত্ন করে রেখে দিয়ে পা টিপে টিপে হল ঘরে এল। আলনা থেকে তার ভারি ওভারকোটটা তুলে নিল মার্ক। কোট গায়ে চাপিয়ে চুপিসারে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল সে। কিছুক্ষণের জন্যে দূরে চলে যেতে হবে তাকে-কি করবে ভাবতে হবে…

.

‘কি বললে?’ ডিম ভাজি করতে করতে রিচার্ডের দিকে ঘুরে তাকাল অ্যান। ‘তুমি কি বিশ্বাস কর যে ডেমিয়েন-’

‘আমি বিশ্বাস করি তা আমি বলিনি, অ্যান,’ বাধা দিয়ে বলে উঠল রিচার্ড। রান্নাঘরের দরজায় বুগেনহাগেনের চিঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে সে। ‘চার্লস বলছিল। আর এই চিঠিতেও একই কথা লেখা আছে।’

‘কিন্তু তাই বলে তুমি নিউ ইয়র্কে ছুটবে চিলের পিছনে!’ ফ্রাইপ্যান থেকে ভাজা ডিম তুলে প্লেটে রাখল অ্যান। ‘তার মানে তুমিও—

‘না!’ চেঁচিয়ে উঠল রিচার্ড। রাত জাগার ক্লান্তিতে বদমেজাজী হয়ে উঠেছে সে। ‘ব্যাপারটা অত্যন্ত বিরক্তিকর আর নিরর্থক-ওসব মোটেও বিশ্বাস করি না আমি। কিন্তু ডেমিয়েনকে চার্চে নিয়ে ছুরি মারার আগের মুহূর্তেই রবার্টকে গুলি করা হয়েছিল, আর—

‘তোমার ভিতরেও তাহলে সন্দেহ ঢুকিয়ে গেছে ওয়ারেন।’ প্লেটগুলো নিয়ে টেবিলের ওপর রাখল অ্যান। ‘সে-ই বিষ ঢুকিয়ে গেছে,’ এগিয়ে এসে ওর হাত থেকে বুগেনহাগেনের চিঠিটা নিয়ে টেবিলের ওপর রাখল অ্যান। তারপর রিচার্ডের হাত দুটো নিজের হাতে তুলে নিয়ে বলল, ‘তোমার মনকে কিছুতেই বিষিয়ে যেতে দেব না আমি। কোথাও যাওয়ার দরকার নেই, কাজ করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছ তুমি। তোমার বিশ্রাম দরকার। ভুলে যাও চার্লসের সাথে তোমার—’

‘অ্যান-’

‘না, ওই পর্ব শেষ। মনে করে নাও একটা বিচ্ছিরি গল্প শুনেছ তুমি-ব্যস ওখানেই শেষ।’ হঠাৎ কান্নায় ভেঙে পড়ল অ্যান। ‘ওহ্, রিচার্ড, আমাদের এ কি হচ্ছে? আমরা কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?’

ওকে টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরল রিচার্ড। ‘কেঁদো না,’ আন্তরিক গলায় বলল সে। ‘তোমার কথাই ঠিক। আমি ক্লান্ত। সত্যি খুব খারাপ লাগছে আমার। তোমাকে—

‘ঈশ্বর, দয়া কর,’ রিচার্ডের বুকে মুখ গুঁজে অস্ফুট কণ্ঠে বলল অ্যান।

‘লক্ষ্মী, আমার লক্ষ্মী,’ আদর করে অ্যানের পিঠ চাপড়ে দিল রিচার্ড। ‘না, যাব না আমি।

‘আর ডেমিয়েনকে—ওকে ভিন্ন চোখে দেখবে না তো তুমি?’

‘অবশ্যই না!’

‘যীশু?’

‘যীশু বলছি।’

অ্যানকে বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগে অল্প অল্প করে দুলছে রিচার্ড। ভাবছে, কি আশ্চর্য! এমন আচ্ছন্ন কেন হয়েছিল সে? জানালা দিয়ে বাইরে চোখ পড়ল ওর। দেখল ডেমিয়েন পিছনের উঠান পেরিয়ে বনের দিকে যাচ্ছে।

ওকে দেখেই কেমন যেন আতঙ্কিত হয়ে উঠল থর্ন।

‘মার্ক কোথায়?’ গলার স্বর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল সে।

‘মনে হয় সকালে বেড়াতে বেড়িয়েছে ও,’ নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে জবাব দিল অ্যান। ‘সকালে কাগজ আনতে গিয়ে দেখলাম ওর কোটটা নেই।

‘চল আমরাও সকালে একটু হেঁটে বেড়িয়ে আসি,’ প্রস্তাব দিল রিচার্ড

‘নাস্তা খাবে না?’

‘না, নাস্তার চেয়ে আমার মুক্ত হাওয়ার বেশি দরকার।

স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে কি যেন বোঝার চেষ্টা করল অ্যান। থর্নকে বিয়ে করার সময়েই সে জানত অনেক কিছুই মানিয়ে নিতে হবে তার। তখন ভেবেছিল সে তা পারবে—কিন্তু এখন সন্দিহান হয়ে পড়েছে।

‘ঠিক আছে, চল,’ বলল সে।

টেবিলেই পড়ে থাকল ওদের নাস্তা।

.

বাসা থেকে অনেক দূরে একটা গাছের তলায় বসে আছে মার্ক। দুশ্চিন্তায় ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। চোখ দুটো রুগ্ন-বয়সের তুলনায় অনেক বড় দেখাচ্ছে ওকে। ভয়ে দুই হাতে শক্ত করে হাঁটু জড়িয়ে ধরে বসে আছে সে। জীবনে কোনদিন এত ভয় পায়নি ও।

মনের কথা কাউকে বলবে সে উপায়ও নেই। আগে কিছু হলেই ডেমিয়েনের কাছে যেত, কিন্তু এখন সেটা আর সম্ভব নয়। এটার সমাধান তাকে একাই করতে হবে।

পায়ের শব্দ শুনতে পেল মার্ক। কে যেন ডাকল, ‘মার্ক? এই মার্ক!’

ডেমিয়েন। সব সময়ে সবখানেই ডেমিয়েন।

চট করে উঠে নিঃশব্দে আরও গভীর বনের দিকে চলল সে।

পায়ের চিহ্ন দেখে ওকে অনুসরণ করছে ডেমিয়েন।

ছুটতে শুরু করল মার্ক

‘এই মার্ক!’

থামল না মার্ক, ছুটেই চলল। সে জানে গতরাতে সারারাত জেগে এখন আর এভাবে বেশিক্ষণ দৌড়াতে পারবে না—ক্লান্তি আর ভয় ওর ওপর ভর করেছে। শেষ পর্যন্ত থামতে হল। একটা বড় গাছের পিছনে লুকাল, হাঁপাচ্ছে সে।

কয়েক মিনিট পার হয়ে গেল। আবার সে ডেমিয়েনের গলা শুনতে পেল। বেশ কাছে, ঠিক গাছের উল্টো ধার থেকে ডেমিয়েন বলল, ‘আমি জানি তুমি ওখানে আছ।‘

কেঁপে উঠল মার্ক। ‘চলে যাও তুমি,’ বলল সে। নিজের কানেই দুর্বল শোনাল ওর গলা।

গাছটাকে ঘুরে ছয় ফুট দূরে মার্কের সামনে এসে দাঁড়াল ডেমিয়েন। ‘আমাকে ভয় করে পালাচ্ছ কেন তুমি?’ আহত সুরে প্রশ্ন করল সে।

অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে শেষে নিচু ফ্যাসফ্যাসে গলায় মার্ক বলল, ‘আমি…আমি জানি তুমি কে!

‘তাই নাকি?’ হাসল ডেমিয়েন।

মাথা ঝাঁকাল মার্ক। ড. ওয়ারেনও জানেন, ধীর গলায় বলল সে। ‘আব্বার সাথে তাঁর কথা হয়েছে—সব শুনেছি আমি।’

একটু মেঘাচ্ছন্ন হল ডেমিয়েনের মুখ। ‘কি বলেছে সে?’ কথাটা আদেশের মতই শোনাল।

‘উনি বলছিলেন,’—ভাষা খুঁজছে মার্ক— ‘উনি বলছিলেন যে মানুষের মাঝে আত্মপ্রকাশ করতে পারে শয়তান।

‘তারপর?’

মুখ ফিরিয়ে নিল মার্ক। ওর চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে।

‘চুপ করে থেক না, বল?’ শান্ত গলায় বলল ডেমিয়েন।

কষ্ট করে একটা ঢোক গিলল মার্ক। ‘বলছিলেন…তুমি শয়তানের ছেলে।

.

বনের মধ্যে অ্যান আর রিচার্ডও বেড়াতে বেড়িয়েছে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে যেন প্রেমিক প্রেমিকা পরস্পরের বাহুপাশে রাত কাটিয়ে সকাল বেলা বেড়াতে বেড়িয়েছে।

কিন্তু যে লোকটা তার সঙ্গিনীকে নিয়ে বেরিয়েছে তার চোখ দুটো রক্ত জমে লাল হয়ে উঠেছে দুশ্চিন্তা আর ক্লান্তিতে। ওর মনের মধ্যে ঝড় চলেছে। আজ সে যা দেখতে বেরিয়েছে, তা না দেখতে পেলেই বরং সে খুশি হয়…নিষ্পলক চোখে ডেমিয়েন চেয়ে আছে মার্কের দিকে। ‘বলে যাও,’ বলল সে।

এবার গড়গড় করে বেরিয়ে এল সব। ‘নেফের অফিসের সামনে সেদিন টেডিকে তুমি কি করেছিলে দেখেছি,’ চেঁচাচ্ছে মার্ক। ক্লাসে কি হয়েছিল, অ্যাদারটন, প্যাসারিন, ওদের কি হয়েছে—সব দেখেছি আমি! তোমার বাবা তোমাকে শেষ করতে চেষ্টা করেছিল! লোকে বলে তাঁর মাথা খারাপ হয়েছিল— কিন্তু আসলে তা না—উনি জানতে পেরেছিলেন!’ হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল মার্ক। থরথর করে কাঁপছে সে।

বিচলিত হয়ে উঠছে ডেমিয়েন। মার্ককে আঘাত দিতে চায় না সে।

‘মার্ক-’ আরম্ভ করল ডেমিয়েন

‘নাআআআআ…’ বিলাপ করে উঠল মার্ক।

‘আমার ভাই তুমি! আমি ভালবাসি—’

‘ভাই ডেক না আমাকে!’ চেঁচিয়ে প্রতিবাদ করল মার্ক। শয়তানের কোন ভাই নেই!’

মার্কের কাঁধে হাত রাখল ডেমিয়েন। কথা শোন,’ বলল সে।

মাথা নাড়ল মার্ক। ‘স্বীকার কর,’ ঝোঁকের মাথায় বলে চলল সে। তুমিই মেরেছ তোমার মা’কে!’

আর পারল না ডেমিয়েন। ওর সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল। ‘আমার মা ছিল না লে. আমার মা—

‘—শিয়াল ছিল!’

‘হ্যাঁ!’ গর্বের সাথে জোর গলায় জানাল ডেমিয়েন। গমগম করে উঠল বন। পুরো শক্তি এখন ওর নিয়ন্ত্রণে এসে গেছে। চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ওর মুখ থেকে একটা অপার্থিব আভা বেরুচ্ছে। ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে জন্মেছি আমি,’ বলল ডেমিয়েন। ওর গলা ধীরে ধীরে তীক্ষ্ণ হয়ে উঠছে। ‘ইবলিস! তার মহত্ত্ব কেড়ে নিয়ে তাকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। কিন্তু সে আবার আমার মধ্যে জেগেছে। আমার শরীর ধারণ করেছে—আমার চোখ দিয়েই সব দেখছে সে!

মরিয়া হয়ে এদিক ওদিক চাইল মার্ক। ভয়ের শেষ সীমা আগেই অতিক্রম করেছে সে ছটফট করছে কিন্তু নড়ার শক্তি নেই। সবটাই একটা ভয়ানক দুঃস্বপ্নের মত মনে হচ্ছে তার। এর কোন শেষ নেই—এ থেকে মুক্তি নেই!

আমার দলে চলে এসো,’ বলল ডেমিয়েন। ‘আমি তোমাকে সাথে নেব।’ চোখ তুলে ওর দিকে চাইল মার্ক। কাঁপুনি বন্ধ হয়ে গেছে ওর। একদৃষ্টে অনেকক্ষণ ভাই-এর দিকে চেয়ে থেকে ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে সে বলল, ‘না।’

‘এখনও সময় আছে, মত বদলাও।’

না!’ নিজের সিদ্ধান্তে মার্ক অটল।

হঠাৎ লাফিয়ে উঠে প্রাণপণে ছুটল মার্ক। ওই অনমনীয় জবাব যেন তাকে নতুন শক্তি জোগাল।

‘মার্ক!’ চেঁচিয়ে ডাকল ডেমিয়েন।

ছুটে চলতে চলতেই মার্ক জবাব দিল, দূর হও তুমি!’

‘মার্ক!!’ আবার ডাকল ডেমিয়েন। কিন্তু এবার তার গলার স্বর সম্পূর্ণ ভিন্ন। এর আগে মাত্র একবারই ডেমিয়েনের এই স্বর সে শুনেছে-নেফের অফিসের সামনে।

থমকে থেমে দাঁড়াল মার্ক। নড়তে পারছে না সে। ‘চলে যাও,’ করুণ স্বরে অনুরোধ করল মার্ক

আর একবার তোমাকে সুযোগ দিচ্ছি,’ বলল ডেমিয়েন। ‘আমার সাথে এসো–আমার হও!’

ধীর ভাবে ঘুরে ডেমিয়েনের মুখোমুখি দাঁড়াল মার্ক। ‘না,’ শান্ত গলায় জবাব দিল সে। ‘নিয়তিকে তুমি খণ্ডাতে পারবে না, ডেমিয়েন, আমিও পারব না,’ কোন অদৃশ্য-শক্তি যেন ওকে দিয়ে কথাগুলো বলাচ্ছে। ‘তোমার যা করতে হবে তুমি কর।’ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মার্ক—অপেক্ষা করছে সে

প্রত্যাখ্যানের জ্বালায় দপ করে জ্বলে উঠল ডেমিয়েনের চোখ। সিধে হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেমিয়েন। মার্কের কাছে বিশাল মনে হচ্ছে ওকে। চোখ ফেটে পানি বেরিয়ে এল। মার্কের গাল বেয়ে। আকাশের দিকে চেয়ে বাঁশপাতার মত কাঁপছে ও…

.

অ্যান আর রিচার্ড তুষারের ওপর ছেলেদের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছে। অনুসরণ করছে ওরা। অত্যন্ত শাস্ত ভাবে স্বামীর পাশেপাশে হেঁটে চলেছে অ্যান। কিন্তু রিচার্ড বারবার মুখ তুলে চাইছে। বাতাসে বিপদের গন্ধ পাচ্ছে সে।

.

হঠাৎ শব্দটা মার্কের কানে গেল। ঠিক একই শব্দ টেডি শুনেছিল অ্যাকাডেমির অফিস ঘরের সামনে। একটা পটপট শব্দ, যেন ধাতব দুটো সরু স্কেল পরস্পর বাড়ি খাচ্ছে।

দাঁড়কাকের ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ।

দুই হাত মাথার ওপরে তুলে অদৃশ্য আক্রমণকারী থেকে নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করছে মার্ক। চিৎকার করে কেঁদে উঠে পালাতে চেষ্টা করল সে। কিন্তু অদৃশ্য পাখিটা ঠুকরে খামচে ওর মাথা থেকে রক্ত বের করে দিল। নাক, কান, চোখ দিয়ে ওর রক্ত ঝরছে। ব্যথায় হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে পড়ল। রক্ত ধারার ভিতর দিয়ে ডেমিয়েনের অশুভ মূর্তিটা দেখতে পাচ্ছে মার্ক। ওর মাথা ঘিরে আলো ছড়াচ্ছে ভোরের সূর্য।

পাখিটা ওর মগজ ঠুকরে দিল। যন্ত্রণায় চিৎকার করে তুষারের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ল মার্ক। চোখ উল্টে গেল ওর।

শব্দটা থেমে গেল। নিচের দিকে চেয়ে চিৎকার করে উঠল ডেমিয়েন। ওর সামনেই পড়ে আছে মার্কের মৃতদেহ। ওর মাথার কাছে তুষার রক্তে লাল হয়ে উঠেছে। মার্কের কাছে ছুটে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসল ডেমিয়েন। মার্কের নির্জীব দেহটা তুলে নিয়ে তাকে সজীব করার চেষ্টা করল সে।

ডেমিয়েনের চিৎকার অ্যান আর রিচার্ডের কানে গেছে। তারা পৌছে দেখল মার্কের প্রাণহীন দেহের ওপর ঝুঁকে পড়ে বিলাপ করছে ডেমিয়েন, মার্ক, ওহ, মার্ক….

অ্যানের আর্তচিৎকারে মুখ তুলে চাইল ডেমিয়েন। বলল, ‘আমরা দু’জনে হাঁটছিলাম—মার্ক পিছলে পড়ে গেল—’

‘বাড়ি যাও!’ খেঁকিয়ে উঠল রিচার্ড। তারপর তাড়াতাড়ি অ্যানের পাশে গিয়ে দাঁড়াল।

প্রতিবাদ করল ডেমিয়েন। ‘আমি কিছু করিনি।’

‘এখনও দাঁড়িয়ে আছ তুমি? বাড়ি যাও!’ রাগে কাঁপছে রিচার্ড।

ঘুরে বাড়ির দিকে ছুটল ডেমিয়েন। অঝোর ধারায় পানি পড়তে শুরু করেছে ওর চোখ দিয়ে। যেতে যেতে ঘাড় ফিরিয়ে চিৎকার করে সে বলল, ‘আমি কিছু করিনি—পড়ে গেছে ও!’ বাড়ির দিকে দৌড়ে চলল ডেমিয়েন।

ওর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে দু’হাতে অ্যানকে ধরে দাঁড় করাল রিচার্ড। একটু অপেক্ষা করে যখন বুঝল অ্যানের পড়ে যাওয়ার ভয় নেই তখন নিচু হয়ে ছেলের দেহটা পাঁজাকোলা করে তুলে নিল সে।

উঠে দাঁড়িয়ে অ্যানের দিকে চাইল রিচার্ড। ওর চোখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে অভিযোগ।

মাথা নেড়ে অ্যান বলল, ‘ডেমিয়েন কিছু করেনি। সে—’

কথাটা শেষ করতে পারল না অ্যান। ছেলের রক্তাক্ত মুখের ওপর নিজের মুখ চেপে ধরে এগিয়ে চলল রিচার্ড।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *