অমৃত কুম্ভের সন্ধানে – ৭

রোদ উঠেছে। রোদ তো নয়, যেন কাঁচা সোনা। শীতে অড়ষ্ট শরীরটি যেন কার দুই উয় বাহুতে ধরা পড়ল। সরে গিয়ে দাঁড়ালাম বেড়ার সামনে একলা একলা, খানিকটা রোদ ভোগের জন্য। সরু সরু তল্লা বাঁশের বেড়া। বেশ খানিকটা ফাঁক ফাঁক।

রাতে মেলা, দিনে মেলা। মেলা দেখছি অষ্টপ্রহর জেগেই আছে। এর মধ্যেই ভেসে আসতে আরম্ভ করেছে মাইক-নিনাদ। মানুষের ভিড় দেখতে পাচ্ছি চারিদিকে। ভিড় যেন একটু বেশি বেশি লাগছে। এর মধ্যেই টাঙ্গাওয়ালার চিৎকার, গাধার ভেঁপু, লরি আর প্রাইভেট কারও দু-চারটে ছুটতে দেখা যাচ্ছে বালুচরের রাস্তায়। বালুচরে রাস্তা তৈরি হয়েছে। বালুর বুকে সাজিয়ে দিয়েছে বিচুলির মতো একরকম ঘাস। তার উপরে মাটি। কিন্তু মাথা খারাপ হয়ে যায় ভাবলে, ওই রাস্তার উপরেও ঝাড়ু, হাতে কেন ঝাড়ুদারনীদের উৎপাত। ধুলো ওড়া তো আছেই। মাটিটুকুও যে বালিতেই মিশে যাবে।

ঘোমটা খসা একদল মেয়ে চলেছে বেড়ার পাশ দিয়ে। কেউ কেউ গান করছে গলা ছেড়ে, কেউ হাসছে খিলখিল করে। মস্ত মস্ত গাই-গোরু নিয়ে চলেছে গোয়ালা। হাঁকছে, ‘দোধ, দোধ চাহি।’ আর ‘গরম গরম দোধ’ হাঁকছে, বড় বড় হাঁড়ি কাঁধে দুধ-ওয়ালারা। মুখে গুঁজেছি টুথব্রাশ। এ সময়ে একটু চায়ের হাঁক শুনতে পাইনে?

‘বাবু! মেরী বাবু।’

চমকে উঠলাম নারীকণ্ঠে! একেবারে কাছে। ব্যাকুল আর ব্যস্ত কণ্ঠ। চকিত ত্রস্ত।

‘বাবু, মেহেরবানি বাবু।’

বলতে না বলতেই গায়ে এসে ঠেকল হাত। বেড়ার ফাঁক দিয়ে। ময়লা হাত, কিন্তু ফর্সা, কিছুটা তামাটে। নখে ময়লা। কিন্তু সরু সরু পুষ্ট আঙুল। মণিবন্ধে কয়েকটা রঙিন কাচের চুড়ি।

তাকিয়ে দেখি, একটি মেয়ে। এলো চুল ঘাড়ের পাশে ছড়ানো। পাশ দিয়ে উঠেছে ছোট্ট ঘোমটা। চোখের অস্থির তারা দু’টিতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। ঠোঁটের কোণে হাসি। সরু নাকে ময়লা পেতলের নাকছাবি। সকালের রৌদ্রদীপ্ত মুখে পড়েছে বাঁশের বেড়ার ছায়া। ছায়ার ঝিলিমিলি।

জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী চাও?’

আঙুল দিয়ে টিপুনি দিল গায়ে। আর এক হাত স্পর্শ করলো কপালে। ঠোঁটে যেন এক নতুন রোশনাই। একটি বঙ্কিম ঝিলিক চকিতে দিল দেখা। ওই হাসিকে কী নাম দেওয়া যায়, জানি নে।

হাসি মুখে করুণ স্বরে বললো, ‘দুঠে পাইসা, মেরী বাবু।’

পয়সা। অর্থাৎ ভিক্ষে। তাই ভালো। ভেবেছিলুম, না জানি কী ঘটতে চলেছে! ভিক্ষে চাওয়ার এ কি রীতি?ঠোঁটে হাসি, চোখে আলো। গায়ে হাত। ভিক্ষের কারুণ্য কোথায়? গলায়? সেটুকু আব্দার বললেই বা ক্ষতি কী?

পকেটে হাত দিয়ে দেখতে চেষ্টা করলাম তার আপাদমস্তক। শাড়িখানি মিলের, কিন্তু পাতলা। পালতোলা নৌকো চলেছে কালো পাড়ের ঢেউ তুলে। পরেছে কুঁচিয়ে, ডানদিকে আঁচল এলিয়ে। গায়ে লাল টুকটুকে সস্তা কাপড়ের জামা। একহারা গড়ন। পুষ্ট দেহ। একটু বা বন্য।

ভিখারিনী বটে! পকেটে হাত দিয়ে পয়সা-না-তুলতেই কানে এলো আর্ত চিৎকার, ‘ওগো। সমলাও সেই সর্বনাশী এসেছে গো, সেই হারামজাদী।’

পরমুহূর্তেই নারীবাহিনীর কলকণ্ঠের কোরাস। ঘটনাটা কলের কাছেই। ফিরে তাকাবার আগে হাতে উঠে এলো দুয়ানি একটি। সেটি ভিখারিনীকে দিয়ে ফিরে তাকাতেই সামনে দেখি নারীবাহিনী। আমি ব্যুহমধ্যে বন্দী। আর বেড়ার বাইরে তীক্ষ্ণ নারীকণ্ঠের হাসি, যেন সমস্ত কোলাহলকে খান খান করে হারিয়ে গেল বালুচরে।

প্রথমেই, সেই বিপুলকায়া খনপিসি ঠেলে এলো সামনে। বললো, ‘ভিক্ষে দিয়েছ বেটিকে?’

সমস্ত ঘটনাটি ঘটল এত চকিতে যে, ঠাহর করতে পারলাম না কিছু। খনপিসির ভয়ংকর মুখের দিকে তাকিয়ে হকচকিয়ে গেলাম। চারিদিকে ক্ষুব্ধ সন্দেহান্বিত কৌতূহলী রকমারী মুখ। কোতোয়ালজীও ছুটে এসেছে।

খনপিসি মুখখানা আরও ভয়ংকর করে জিজ্ঞেস করলো, ‘দিয়েছ কি না?’

ভিক্ষে চেয়েছে। মন চেয়েছে দিতে। দেব না কেন? খানিকটা ঝিমুনো সুরেই বললাম, ‘হ্যাঁ দিয়েছি।’

‘কত?’

‘দু-আনা।’

‘দু-আ—না!’ খনপিসি চোখ কপালে তুলে খালি বললো, ‘মুখ দেখে দিয়েছ বুঝি?’ রীতিমতো ভৎসনার সুর তার গলায়।

‘মুখ দেখে নয়। আপাদমস্তক দেখেই দিয়েছি। কিন্তু অপরাধ?’

একটি নারীকণ্ঠের চাপাধ্বনি, ‘মা গো! কী বলে দিলে?’

সামনে দেখি ব্রজবালা। দিদিমা। সকলের চোখেই অবাক দৃষ্টি।

ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী হয়েছে?’

খনপিসি ঝামটা দিয়ে উঠলো, ‘কী হয়েছে? ও হারামজাদী যে নষ্ট মেয়েমানুষ, চোর, সর্বনাশী, তা জানো না?’

সর্বনাশী? ও। সে-ই, শুধু চোর নয়, ছেলে-চোর মেয়ে! সর্বনাশ! তা জানবো কী করে? ভুলেই গিয়েছিলাম। তাই তো, মুখে যে অনেক সর্বনাশের দ্যুতি ছিল।

তাকিয়ে দেখি, ছি ছি! সকলের চোখে ছিঃ ছিঃ কারোর তীক্ষ্ণ খোঁচা। তবু, দেখে ভোলবার অবসর পাই নি। কোনোরকমে ভিক্ষে দিয়েছি মাত্র। কিন্তু মূঢ় বিস্ময়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কী বা উপায় আছে আমার

জীবনে এমন বিব্রতবোধ আর কখনো করেছি কিনা, মনে পড়ে না। তাও ভিক্ষে দিয়ে। আগে জানলে পয়সা দিয়ে কে ওই মহৎ কাজটুকু করতে যেত! মহত্ত্বের অমৃতে যে এত বিষ ছিল, তা জানতাম না। জানতাম না, আমার মধ্যে গোপন ছিল এত কলঙ্ক। কালিমা তার ফুটে বেরুবে এতগুলি মহিলার তীক্ষ্ণ চোখের ধিক্কারে।

মুখ থেকে ব্রাশ নামিয়ে, একটা কিছু বলে ব্যাপারটার ইতি টেনে দিতে গেলাম। হলো না। ততক্ষণে গুঞ্জনের গতি পরিবর্তিত হয়েছে। বলবো কাকে, শুনবে কে! আলোচনা চলছে নিজেদের মধ্যে, কার চোখে প্রথম ধরা পড়েছিল এ দুর্ঘটনা। যে যা-ই বলুক, খনপিসির চোখেই যে প্রথম ধরা পড়েছিল, সেটা প্রমাণ করে দিল তার বিপুল দেহ ও সর্বোচ্চ কন্ঠ, ‘ওমা! জল ভরব কী? তাকিয়ে দেখি, ছুঁড়ি ফিকফিক করে হাসছে আর কী বলছে

যত বলে, ততই সকলের ধিকৃত নজর যেন একরাশ তীরের মতো এসে বেঁধে আমার সর্বাঙ্গে। যেন প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, সর্বনাশের দাগ আছে আমারও গায়ে। আমার চোখে মুখে আমার সর্বাঙ্গে। কারো কারো খ্যাতিকে অকলঙ্ক বলে। কেউ কুখ্যাত হয় কলঙ্কের ডালি মাথায় নিয়ে। এ দু’দিনের মধ্যে বড় একটা চোখে পড়িনি কারুর। আজ সকালের এ সামান্য ঘটনা আশ্রমের সকলের সামনে যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমাকে। বিশেষ করে বাঙালি মহলে। তার চেয়েও বেশি নারীমহলে। এমন জাদুকরী ক্ষমতা শুধু কলঙ্কেরই আছে। তাই তো। দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীর করতে সময় লাগে। লেবুর ফোঁটায় ছানা কাটে চকিতে।

ফিসফিস হলো, খিলখিল হলো। সাড়া পড়ে গেল। কে আমি, কোথাকার ছেলে। কার সঙ্গে এসেছি, থাকি কার কাছে! কেন-বা এসেছি এ-ভরা বয়সে!

জটিল প্রশ্ন, কূট তর্ক, সন্দেহ নেই। অথচ আশ্চর্য! ভিক্ষেই দিয়েছি। সর্বনাশীর মুখখানা তো মনে পড়ে না। কানে ভাসছে শুধু তার নির্ভীক তীক্ষ্ণ হাসি।

বলরামের হাসিতে ছিল এক বিচিত্র আনন্দ। শ্যামার হাসিতে চাপা বেদনার ছটফটানি। আর এ হাসি! যেন দুস্তর তেপান্তরের সেয়ানা পাখির ডাক। ডাকে তার আচমকা অট্টহাসি, কে হো কে হো করে ওঠে। একলা পথিক চমকে তাকায় ফিরে। নিরালা ধুধু মাঠের অদৃশ্যচারিণী ভয়ংকরী খেলায় মাতে পথিককে নিয়ে।

ভাবি, যদি সে মেয়ে না হয়ে পুরুষ হতো! চোর হোক, না হয় যদি হত মেয়ে-চোর-ই। হত যদি তেমনি এক সর্বনেশে! তবে কি এমনি করে সবাই মিলে খাউ খাউ করে আসত আমাকে?

ইস্! তাকানো যায় না ব্রজবালার চোখের দিকে। তার কিশোরী চোখে পরিষ্কার, ছি ছি তোমার মনে এই ছিল! আর ডেকো না আমাকে বৌঠান বলে।

যাওয়ার আগে বলে গেল তার দিদিমা, ভিক্ষে দেওয়ার আর লোক পেলে না?

কোতোয়ালজী হাসল একটু বাঁকা মিঠে হাসি। একটু সমবেদনার আভাস। বললো, ‘সাংঘাতিক মেয়ে মশাই। চিতা-বাঘিনীর মতো। চলে ডালে ডালে, পাতায় পাতায়। দৈনিক এমনি মেয়ে পুরুষ কত ধরা পড়ছে জানেন? পঞ্চাশ ষাট তো বটেই। একশ’ জনও হয়। মেলায় সব ওত পেতে আছে। একটু অসাবধান হয়েছেন তো, গেল।’

তারপর একেবারে অ-সন্ন্যাসীজনোচিত হেসে বললো, ‘ভাল লোককেই পাকড়েছিল।’ বলে, একটু অর্থপূর্ণ হাসি হেসে চলে গেল। কী ভাগ্যি, প্রহ্লাদ কিংবা পাঁচুগোপাল নেই। তাহলে সমালোচনার ভাষা আর একটু সরস হত নিঃসন্দেহে।

ধন্য সর্বনাশী। ঝুসির সর্বনাশী। তাড়াতাড়ি ফিরতে গেলাম তাঁবুর দিকে। কলের দিকে যাওয়ার দুঃসাহস আর হলো না। ফিরতে গিয়ে থামলাম।

সামনে শুধু দু’টি অতিকায় মুগ্ধ চোখ। পথরোধ করেছে একটি মহিলা। ঘাড় হেলিয়ে রয়েছে মুখের দিকে। চোখে নজর কম। তাই, নজর চড়াতে গিয়ে ঠোঁট দু’টি বেশ খানিকটা ফাঁক হয়ে গিয়েছে। মোটা লেন্সের আড়ালে চোখ দু’টি অস্বাভাবিক বড় হয়ে উঠেছে। বলিরেখাবহুল ফর্সা মুখ। মাথায় কাঁচা-পাকা চুল। পাকা অংশই বেশি। পরনে থান। ফিরতে গেলাম। বললো, ‘দাঁড়াও বাবা।’

ঘরপোড়া গোরুর চোখে সিদুরে মেঘ। দাঁড়ালাম। কী বলবে আবার! বললাম, ‘কী বলছেন।’ জবাব পেলাম না। দেখলো খানিকক্ষণ অমনি করে। তারপর কোমল গলায় বললো, ‘বেশ করেছ। এখানে এসে দেবে না তো, কোথায় দেবে? আর দিয়ে আনন্দ ভোগ করে কজনা?’

অবাক হলাম। চকিতে মনটিও উঠলো ভরে নতুন আবেশে। চারিদিকে এত সন্দেহ ও ভর্ৎসনা, নিজের দুঃখ ও বিদ্রুপ-হাসির মধ্যে গুটিয়ে ছিল মনের পাপড়ি। তা যেন নতুন রসে হাওয়া ও রৌদ্রে মেলে দিল দল। কলঙ্কে লাগলো গৌরবের স্পর্শ। মুখ ফুটে বলতে পারলাম না কিছু।

সে আবার বললো, ‘যে দিতে পারে না, তার চেয়ে দুঃখী এ সংসারে কে আছে বল তো বাবা।’

বলে সে তাকালে, লেন্সের আড়ালে তার সেই বিশাল দু’টি চোখ মেলে। একটি লেন্স আবার ফাটা। দেখলাম, তার সেই চোখ দু’টি যেন জলভারে টলমল করছে। অথচ সপ্রশ্ন দৃষ্টি। সামান্য কথা, কিন্তু কী জবাব দেব, ভেবে পেলাম না।

বোধ হয় পানদোক্তা খায়। ঠোঁট দুটিতে লাল ছোপ। গায়ের রঙটি বেশ ফর্সা। আবার হেসে বললো, ‘যে দেয়, সে-ই তো নেয়। সংসারে সবাই আসে দিতে। দিতে আর নিতে। আগে দেও পরে নেও, না-কি বল বাবা, অ্যাঁ? মা ছেলেকে দেয়। আবার ছেলের কাছ থেকে মা হাত পেতে নেয়। বসুমতীকে তুমি দেও, মা বসুমতী তোমাকে দেবে ঘর ভরে। বিদ্বানে তো বিদ্যা দেয়। দেওয়ার চেয়ে সুখ কী আছে?’

মন ভরে উঠলো সঙ্কোচে, আত্মধিক্কারে। ভিখারিনীকে দু-আনা ভিক্ষে দিয়েছি। কিন্তু এত বড় দেওয়া, এত মস্ত দেওয়া তো দিই নি জীবনে কোনদিন। সংসারকে কিছু দেওয়া, সে তো আসল দেওয়া। সে দেওয়ার কানাকড়িটি আছে কিনা নিজের কাছে তা-ই জানি নে। দেব কি! যার আছে থলি ভরতি, সে দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি ফিরছি শূন্য থলি নিয়ে। ভরব বলে। পাব বলে। পেলেও দিতে পারে কজন? পাওয়ার গুমরে মন যে ঠুটো জগন্নাথ সেজে বসে থাকে।

কী কথার থেকে কী! কোন্ দেওয়ার থেকে কোন্ দেওয়ার কথা। একেবারে মাটি থেকে আকাশে। সীমা থেকে অসীমে। আপনি খাটো হয়ে এলো, নুইয়ে এলো মাথা।

সে আবার বললো, ‘দেওয়ার সুখ আছে, বড় ঘেন্নাও আছে বাবা। দিয়ে যার মাটিতে পা পড়ে না। দিয়েছি তো মাথা কিনেছি। দ্যাখো, ক-ত্তো দিয়েছি। ওই হলো ঘেন্না। আবার যার আছে, সে দিতে জানে না। দেওয়ার রীতি জানে না। সে বড় অভাগা। আমি তো এই বুঝি। তুমি কী বল বাবা, অ্যাঁ?’

কী বলব! চোখে তার সেই মুগ্ধ সপ্রশ্ন দৃষ্টি। একটু যেন আত্মভোলা। কণ্ঠে সেই কোমলতা। সকলের আড়ালে কোথাও দাঁড়িয়েছিল সে, আমার দু-আনার দানকে গৌরবান্বিত করবে বলে। তার নাম জানি নে, ধাম জানি নে। থুথুড়ে বুড়ি হলে মনে আসে ঠাকমা দিদিমার কথা। সে তা নয়। যেন খানিকটা মায়ের মতো। কথা তার মায়ের চেয়েও বড়। তার গৌরবে ও সম্মানে যে আমি বাক্যহারা। কী বলব!

বললাম, ‘যা বলেছেন। এর বাড়া আর কি বলব?’

সে তাড়াতাড়ি অসঙ্কোচে আমার হাত ধরে বললো, ‘না না, অমন কথা বোল না বাবা। এখেনে এয়েছেন কত বামুন-কায়েতের মা-বোনেরা। আমার কথার বাড়া সংসারের বড় কথা। ছোট কথাটিও। আমি গয়লার বেটি, গয়লার বেধবা। ছেলে আমাকে যা-ই বলুক আমি গয়লার মা। লোকে আমাকে হিদে গয়লার মা বলে জানে।’

মনে মনে বললাম, জানুক। যে-হিদে গয়লার-ই মা হোক সে, ‘হিদয়ে’ যার সবকিছু সঁপে দেওয়ার অমন ব্যাকুলতা, তার চেয়ে হৃদয়বতী কে আছে! ভাবি, জানি নে হিদের মা কী দিয়ে কত দিয়েছে। কিন্তু যে অমনি করে বলতে পারে, সে দিতেও পারে। তার কথার বাড়া আর কি কথা আছে!

হাত-ধরা হয়ে রইলাম হিদের মা’র। নড়তে পারলাম না। ওদিকে বুঝতে পারছি, খনপিসি বাহিনী দেখছে এ আদিখ্যেতা। তাদের মধ্যে ঘোরতর আলোচনা চলেছে এ নিয়ে। তারপর হিদের মা বললো, ‘তোমাকে বড় ভালো লাগছে বাবা। দিও বাবা, মন চাইলে, থাকলে অমনি দিও যত খুশি।’

বলে, আবার জিজ্ঞেস করলো, নামধাম পরিচয়। জিজ্ঞেস করলো, ‘বাপ-মা আছে?’

বললাম, ‘বাবা নেই।’

সে বললো, ‘আহা, আসলটিই নেই। লোকে বলে, মায়ের চেয়ে বড় কিছু নেই। কিন্তু আমি বলি, না। না বাবা? বাপ থাকলে ছেলের মাথায় ছাদ থাকে। কিন্তু মা যে, কেউ নয়, কেউ নয়।’

বলে, একটু চুপ করে থেকে বললো, ‘তোমাকে বড় ভালো লাগছে বাবা। দু’টো মনের কথা বলি। বসবে?’

বসব? তাই তো, কেমন যেন লজ্জা করছে। খনপিসি-বাহিনী না জানি কি ভাবছে। কিন্তু হিদের মাকে নিরাশ করতে মন চাইল না। বসলাম বালুর উপরে। বললাম, ‘বলুন।’

সে বসলো। বললো, ‘বাবা, ঘরে জ্বালা তাই বাইরে আসি। বাইরে এসে দেখি আরও জ্বালা। অমনি ঘরে ছুটি। কোথা গেলে যে দু-দণ্ড শান্তি পাই! ঘর-বার আমার সমান হয়ে গেছে। বাবা, লোকে আমাকে বলে হিদের মা। কিন্তু হিদে আমাকে মা বলে ডাকে না।’

বলতে বলতে হাসি ও কান্নায় বিচিত্রভাবে থরথর করে কেঁপে উঠলো তার ঠোঁট। পুরু লেন্সের আড়ালে ভেসে উঠলো বিশাল চোখ দু’টি। প্রস্তুত ছিলাম না এমন কথা শোনবার জন্য। বিস্মিত ব্যথায় চমকে উঠলো মনটা। বললাম, ‘কেন?’

সে বললো, ‘আমি যে মায়ের মতো মা নই। আমি যে বউকাটকী, আমি যে ছেলে ভোলানী, আমি যে ঝগড়ুটে, হিংসুটে, লাগানী-ভাঙানী।’

জানি, এর মধ্যে আমার কোনো কথা নেই। তবু না বলে পারলাম না, ‘কে বলে এসব কথা?’

সে বললো, ‘যে বলার। যাদের বলার। নিজেও বলি। বলি, নইলে যে-হিদে আমার হাতে ছাড়া খেত না, সে একবার ডেকে কথা বলে না। তবু আমি মুখপুড়ি এখনো এ হাত পুড়িয়ে খাই। হিদে আমার লেখাপড়া শিখেছে। কলকাতার আপিসে চাকরি করে। কিন্তু ঝি বলেও দু’টো পয়সা দেয় না। কেন? আমি যে তার মা নই।

কিছু বলতে পারলাম না। জানি নে হিদের কথা। জানি নে তাদের ঘরকন্না, কেন বা পুত্রস্নেহ থেকে বঞ্চিত হিদের মা! সব মিলিয়ে সেখানে কোন্ পরিবেশ, কতখানি অবিচার, কে জানে! তবু হিদের মা’র জন্য মনটা ভার হয়ে উঠলো।

নিজের মনেই অভিমান উঠলো সে, ‘না-ই বা ডাকলো, না-ই বা দিল। নিজে দুধ বেচি, খাই। আমার আছ তোমরা, আমার ভাবনা কী? এই তো চলে এসেছি। কে রাখছে তার খবর, কে দেখছে? ওকে হাতে করে না খাওয়লে কী হয়েছে আমার?’

চোখের থেকে চশমা খুলে জল মুছল সে আঁচল দিয়ে। বললো, ‘দিন রাত-ই বলি, মনে বলি। তোমাকেও বললুম, বড় ভালো লাগলো তোমাকে। আমাকে দু-চার আনা পয়সা দেবে বাবা?’

পয়সা? নিজের কানকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারলাম না। আমার কাছে পয়সা চাইছে হিদের মা? বললাম, ‘কী বলছেন?’

তেমনি বিশাল মুগ্ধ চোখ দু’টি তুলে বললো, ‘আমাকে দু-চার আনা পয়সা দেবে?’

আচমকা আক্রান্ত শামুকের শুঁড়ের মতো মনটা গুটিয়ে গেল হঠাৎ। এত বলে শেষে পয়সা! জিজ্ঞেস করতে গেলাম, ‘কেন?’ কিন্তু পারলাম না। সেই উন্মুক্ত মুখ, সেই চোখ, তেমনি ঘাড় কাত করা সরল অভিব্যক্তি। ভাবান্তরের লক্ষণ নেই কোথাও। তবু সন্দেহ বিরক্তিতে সিটনো মন খাটো হয়ে গেল বড়। আমাদের ভদ্রতায়, শিক্ষায়, আলাপনে, ভাবনায়, চিন্তায়, আত্মসন্তুষ্টির যে বেড়াখানি দিয়েছি বেড় দিয়ে জীবনের চারপাশে, তার বাইরে গেলেই আমরা পেছিয়ে আসি। দল-মেলা মন আসে গুটিয়ে। আপন গণ্ডিতে আমরা উদার। বাইরে অস্বাভাবিক।

অবকাশ নেই মন যাচাইয়ের। চিরাভ্যস্ত মন-চোখ আমার দেখলো, হিদের মা’র এই সারল্যের পেছনে যেন একটি বাঁকা হাসি রয়েছে উঁকি মেরে। এত যে দানের কথা, মিষ্টি কথা, তার পেছনে কি শুধু ওই দু’-চার আনার অধ্যবসায়! ভাবলে নিজেকেই যেন খাটো লাগে। কলঙ্কে লাগলো আমার দ্বিগুণ অপমানের স্পর্শ। হয়তো এখুনি না চেয়ে, দু-দিন বাদে চাইলে এতখানি মনে লাগত না। দু-দিন কেন, ওবেলা হলেও এতখানি মনে হত না বোধ হয়।

মনের ভাব গোপন করে বললাম, ‘দেব। তাতে কী হয়েছে! দিচ্ছি, এখুনি দিচ্ছি।’ বলে, পকেটে হাত দিতে গেলাম। হিদের মা তাড়াতাড়ি হাত ধরে বললো, ‘দিও’খনি। তাড়া কসের? পালিয়ে তো যাচ্ছ না!’

তা যাচ্ছি না। কিন্তু তাড়া আছে বৈকি। হিদের মা’র কাছে থেকে চলে যাওয়ার তাড়া। সে আবার বললো, ‘তোমার পকেটে ওটি কী বাবা? কলম? কী যে বলে ওটাকে? যাতে আপনি আপনি লেখা যায়?’

কলমে তার আবার কী প্রয়োজন? বললাম, ‘হ্যাঁ, ফাউন্টেন পেন।’

একটু বা অপ্রতিভ হেসে বললো সে, ‘হ্যাঁ, ফাউন্টেন পেন। হিদে লেখে ওই দিয়ে। তা বাবা, আমাকে একখানা চিঠি লিখে দিতে হবে। দেবে তো?’

মন বিমুখ হয়ে উঠেছিল। তবু বললাম, ‘দেব।’

হিদের মা তাড়াতাড়ি কোমরে-গোঁজা আঁচল খুলে বার করলো একটি কাগজ। ভাঁজ-করা, দলা-মোচড়া।

খুলতে দেখলাম, একটি দু-আনা পোস্টেজের খাম। আঁচলে তার হাল এমনি হয়েছে, যেন কুড়িয়ে এনেছে কোথা থেকে।

উঠে দাঁড়িয়েছিলাম চলে যাওয়ার জন্য। কৌতূহল হলো ভেবে, কাকে চিঠি দেবে হিদের মা! বললাম, ‘কাকে লিখবেন?’

সে বললো, ‘হিদেকে। একটু জানিয়ে দিই, কেমন করে আমার হাড় জুড়োচ্ছে এখানে এসে। নইলে আমার মনে শান্তি পাব না।

তা বটে। যাকে যত বেশি দুঃখ দিতে প্রাণ চায়, তাকেই তো দিতে হয় সুখের সংবাদ। তবে হিদের মা’র চোখ দু’টি অমন ভেসে উঠছে কেন!

তাঁবুর দিকে এগিয়ে গেলাম। খনপিসি-বাহিনী তাকিয়ে দেখছে কটকট করে। ওই দৃষ্টিতে দাহিকা শক্তি থাকলে পুড়ে মরতাম নিঃসন্দেহে। ভাবছি, যখন তারা জানবে হিদের মাকে পয়সা দিয়েছি, তখন যদি মুখের সামনে এসে তারা হাসে, তবে আর মুখ লুকোবার জায়গা পাব না।

হঠাৎ নজরে পড়লো ব্রজবালাকে। চোখে-মুখে তার ক্রোধ ও শঙ্কা। এত লোকের মাঝে তাকাতে পারছে না। কিন্তু ভ্রু-জোড়া উঠেছে কপালে।

পেছনে আমার হিদের মা। তাঁবুতে এসে ব্যাগ খুলে কাগজ বার করছি। পেছন থেকে ব্রজবালা এক ঘটি জল নিয়ে এসে দাঁড়াল। মুখ ধোয়ার জল।

জলের ঘটি নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই শঙ্কিত গলায় ফিসফিস করে বললে ব্রজবালা, ‘সেই কিপটে বুড়ি। খবোদ্দার, একটি পয়সাও দিও না।’

বলে, ঘটি হস্তান্তরিত করে চলে গেল। হাসি, বিস্ময়, দুঃখে আমার মনের এক বিচিত্র ভাব। সত্যি, ব্রজবালাই দেখছি আমার প্রকৃত সাথী। এই কিপটে বুড়ির কথা, ওই সর্বনাশীর কথা, গতকাল তো সে আমাকে বলেছিল। আমারই মনে ছিল না।

মুখ ধুয়ে বসলাম কাগজ নিয়ে। বললাম, ‘বলুন, কী লিখতে হবে?’

হিদের মা খামখানি দিয়ে বললো, ‘আগে ঠিকানা লেখো। লেখো, ছিরি হিদয়রাম ঘোষ।’

অর্থাৎ হৃদয়রাম ঘোষ। ঠিকানা লেখা হলো। আবার বললো, ‘এই আশ্রমের ঠিকানাটা চিঠিতে দেও।’

তাই দিলুম। তারপর বললো, ‘লেখো, বাবাজীবন, হিদু বাবা—’

বলে, চুপ করে রইলো অনেকক্ষণ। বুঝলাম, পাতা-ভরতি ইতিহাস লিখতে হবে। এখনো একটু চা জোটেনি এই দারুণ শীতের সকালে। মন ছটফট করছে বেরুবার জন্য। আটকা পড়ে গেলাম। না, নতুন আশ্রমের সন্ধান করতে হবে দেখছি।

হিদের মা হঠাৎ বললো, ‘লিখেছ? এবার লেখো, তোর পায়ে পড়ি বাবা হিদে, নেদো, গোপাল, পারুল, সকলে মিলে কেমন আছিস, ধর্মত জানাস। ইতি তোর—’

ব্যাস? একেবারে ইতি? সে কি! যার মুখের ‘পরে জানিয়ে দিতে হবে সুখের কথা, শেষে তারই একটু সংবাদের জন্য এত ব্যাকুলতা? বললাম, ‘আর কিছু না?’

সে বললো, ‘আর কী আছে বাবা? আমার কথা? পথে পথে, ঘাটে ঘাটে, ঠাকুরের দোরে বলেছি। না বললেও যে শুনতে পায়, সে যখন শোনে নি, তখন চেঠিতে লিখে কী ফল পাব? লেখা অনেক হয়েছে, আর থাক। ওই লিখে দেও।

তাই দিলাম। লিখে দিলাম। কেবল কানের মধ্যে বেজে রইলো হিদের মা’র ক্লান্ত ব্যথিত স্বর। সংসারে আছে কত সুখ দুঃখ। কত রূপে তা কত করুণ ও বিচিত্র। ঘরে বাইরে, মনের গঠনে, সংসারের কাঠামোতে রয়েছে তার জড়। কখনো তার সমূল শেষ দেখি কান্নাতে, কখনো হাসিতে। গতিবিধি তার মানুষের হৃদয় ও মনোজগতে। এর বিজ্ঞান আছে, কিন্তু সীমা নেই।

হিদের মা ঠাকুরের দোরে দোরে বলছে। ঠাকুরের কানে না পৌঁছুক, সে বলা যদি হিদের কানেও পৌঁছুত, হিদের মা’র ঘরে থাকত অমৃতকুম্ভ। হাহাকার করে ছুটে আসত না এখানে। কিন্তু ওইখানে যে সব গণ্ডগোল। সোজা পথ তো সোজা নয়। কখন সে বাঁক নিয়ে নতুন দিকে মোড় ফিরছে, অচিন পথিক তার কী জানে!

চিঠি লিখে দিয়ে পকেটে হাত দিলাম। বিমুখ মন খানিকটা ভিজে উঠেছিল। পকেটে দু’-আনা আছে, চার আনাও আছে। পথের কড়ি, হাত দিলেই হিসেব করতে মন যায়। জানি নে, ভিক্ষে করা হিদের মা’র অভ্যাস কিনা। তবু, একটি টাকা তুলে দিলাম তার হাতে। অস্বীকার করবো না, মনের মধ্যে কিঞ্চিৎ করুণা ও অনুগ্রহের ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু না দিলে মন তৃপ্ত হত না।

হিদের মা চোখ তুলে বললো, ‘পুরো একটি ‘টাকা দিলে বাবা?’

বললাম, ‘হ্যাঁ। তাতে কী হয়েছে!’

হিদের মা আঁচলে বেঁধে বললো, ‘বেশ! সকলের কাছে তো চাই নে। যার কাছে মন চায়। বড় অল্প পুঁজি আমার। বড় ভয় করে, তাই আগে থেকেই সামলে চলি।’

আশ্চর্য! এত সামলাসামলি হিদের মায়ের। তবু দেওয়ার কথায় পঞ্চমুখ সে। কিন্তু আর দেরি নয়। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম। বাইরে আসতেই দেখি, ব্রজবাল মুখভার করে তাকিয়ে রয়েছে আকাশের দিকে। মাথায় অর্ধেক ঘোমটা। ও! হিদের মাে টাকা দিয়েছি বলে রাগ হয়েছে তার। হতেই পারে। সে যে আমার সত্যি সখী। পেছনে আমার হিদের মা। দৃপ্ত ক্রুদ্ধ চোখে তার দিকে তাকালো ব্রজবালা। আমি হাসি গোপন করে চলতে উদ্যত হলাম।

ব্রজবালা বললো, ‘দিমা তোমাকে খেয়ে বেরুতে বলেছে।’

‘এখুনি?’

‘হ্যাঁ। আমরা আজ বেরুব।

খুব রাগ করেছে ব্রজ! বললাম, ‘ফিরে আসি, তারপর খাব।’

সে বললো, ‘আমরা এক্ষুনি বেরিয়ে যাব। দেরি হলে, তোমার খাবার ঢাকা দেওয়া থাকবে তাঁবুতে।’

হেসে বললাম, ‘তথাস্তু।’ মনে মনে বুঝলাম, ব্রজর রাগ বাগ মানল না তাতে।

এমন সময় হিদের মা চেঁচিয়ে উঠলো, ‘বউমা। অ বউমা।’

বলতে বলতে ছুটে গেল গেটের দিকে। অমনি ব্রজ আমার কাছে ছুটে এসে বললো, ‘ওই যে সে-ই।’

‘সে-ই? সেই কে?’

কোথায় ব্রজর রাগ! বয়স যাবে কোথায়! সে চোখ ঘুরিয়ে বললো, ‘সেই যে গো, সেই বউটা। সোয়ামী যার সাধু হয়ে বেরিয়ে গেছে। সেই বউ! সঙ্গে ওই লোকটা ওর দেওর।’

ও! মনে পড়েছে। স্বামী-সন্ধানী বউ। তাকিয়ে দেখলাম। দীর্ঘাঙ্গী এক মহিলা। ফর্সা রঙ। বেশভুষায় আধুনিকা। নীল শাড়ির উপরে হাল্কা গোলাপী রঙের লেডিজ কোট। ঘোমটা ভেঙে পড়েছে ঘাড়ের কাছে। তাকিয়েছে এই দিকে। সকালের সূর্যালোকে ঝকঝক করছে কপালের ও সিঁথির সিঁদুর। পাশে একটি ভদ্রলোক, যুবক। স্বাস্থ্যবান। গায়ে অলেস্টার, চোখে আঁটা সোনালী ফ্রেমের চশমা। মুখে হাসি। হেসে যেন কী বলছে মহিলাটিকে। দাঁড়িয়েছিল হিদের মা’র জন্য। তারপর তিনজনে মিশে গেল জনারণ্যে।

ব্রজ বললো, ‘ওদের দু’টিকে বেশ দেখায় না?’

সত্যি দেখায়। ঠিক কথাটি দেখছি বয়স মানে না! কেন বললো ব্রজ, কে জানে। মনে মনে ভাবলাম, দেখায় হয়তো, মানায় কিনা কে জানে! মানানো যে আলাদা। কিন্তু, হিদের মা দেখছি ভারি ভাব জমিয়ে নিয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *