অমৃত কুম্ভের সন্ধানে – ১৭

১৭

সত্যি, আবার লোক বাড়তে আরম্ভ করেছে। মাঝে ভাঙন ধরেছিল, ফিরে যাওয়ার তাড়া পড়েছিল একটা। কিন্তু দ্বিগুণ করে ফিরে আসার তাড়া পড়েছে। ঠাণ্ডা কমেছে, হিমপ্ৰবাহ সরে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। আবার রোদ হাসতে আরম্ভ করেছে। প্রত্যহ নতুন নতুন সাধুবাহিনী হাতি, ঘোড়া ও নিশানের মিছিল নিয়ে ছুটে আসছে দূর-দূরান্তর থেকে।

এই প্রথম দেখলাম, উলঙ্গ সন্ন্যাসী উন্মুক্ত কৃপাণ হস্তে ছুটে আসছে অশ্ব-সওয়ার হয়ে। বিশেষ নাগাদেরই এ রুদ্রমূর্তিতে দেখা যাচ্ছে বেশি। তাদের চেহারায়, অস্ত্রে, সর্বদাই তারা ভয়ংকর। কখন থেকে এদের উৎপত্তি, জানি নে। তবে শুনেছি, নগ্নতা বহুদিনের। কৃপাণ কয়েক-শো বছর আগের। অসহায় সাধুদের রক্ষার জন্য চৌদ্দশ’ শকে বালানন্দজী সাধু সংরক্ষণী সশস্ত্র সাধুসেনাবাহিনী তৈরি করেছিলেন। এমনকি এরা অনেক সময় রাষ্ট্রের যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছে।

সাধু ও মানুষের ভিড়ে মেলা আবার জমে উঠলো। সামনে অমাবস্যা। মৌনী অমাবস্যা। সেইদিন পূর্ণকুম্ভ স্নান।

একদিন রাত্রিবেলা পাঁচুগোপাল বললো, ‘তুমি সব লিখবে, এখানকার সব কথা?’

বললাম, ‘যদি লিখি?’

‘আমার কথাও লিখবে?’ চেয়ে দেখি, পাঁচুগোপালের সেই চোখে আবার পাগলামির ছায়া। বললাম, ‘লিখতে পারি।’

কেউ ছিল না। তবুও চারিদিক দেখে সে চাপা গলায় বললো, ‘তবে লিখে দিও আমি বলেছি সেইভাবে নয় কিন্তু! লিখে দিও, যদি সে একবার এসে বলে, বাবামণি, তুমি আমায় মাফ কর, তবে, তবেই আমি তাকে…’

কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হলো তার। দুপ্-দাপ্ শব্দে চলে গেল সামনে থেকে। ‘সে’ মানে তার মেয়ে শিউলি। যে তার বাবাকে ছেড়ে গিয়েছে। জানি নে, সে কোথায় আছে। কিন্তু আমি লিখে দিলে যদি সে পাঁচুগোপালকে এসে বাবামণি বলে ডাকে, তবে লিখে দেব। নিশ্চয়ই লিখে দেব। লিখে দেব, ‘শিউলি! কোথায় ফুটেছ, কোথা থেকে ছড়াচ্ছ এত গন্ধ! ডক্টর পাঁচুগোপাল পাগল হয়ে ফিরছে পথে পথে। একবার বাবামণি বলে ডেকে তার কোল ভরে দিয়ে যাও।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *