গ্রন্থভূক্ত কবিতা (কাব্যগ্রন্থ)
গান
অগ্রন্থিত কবিতা
গল্প
চলচ্চিত্র কাহিনী ও চিত্রনাট্য
সম্পাদকীয়, গদ্য ও বক্তৃতা
সাক্ষাৎকার
1 of 2

জাতীয় কবিতা পরিষদের ভূমিকা

জাতীয় কবিতা পরিষদের ভূমিকা

১৯৮৭ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে টিএসসি ভবনের বাইরের লনে, দুপুরের রোদে পিঠ দিয়ে আধডজনের সামান্য বেশি কিছু তরুনের যে উদযোগটি পরবর্তী পর্যায়ে একটি ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম দেয় তার নাম ‘জাতীয় কবিতা উৎসব’। ওই সময় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কবিদের নিয়ে সরকারি উদযোগে একটি উৎসব হতে যাচ্ছিলো, যার সঙ্গে দেশের প্রধান, অন্যতম এবং তরুন কবিদের কোনো সংযোগ ছিলো না। তার কারণ, দেশে বিরাজমান স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনে উপরোক্তগন অন্তত মানসিকভাবে হলেও জড়িত ছিলো।

রাজনীতিতে বিরোধী-শিবির যে মুহূর্তে বিভক্ত, ব্যর্থ এবং আপোসমুখি, ঠিক সেই সময় সরকারের একটি কর্মসূচিকে চ্যালেঞ্জ কোরে কবিদের মতো নিরীহ প্রকৃতির প্রানিকুল যে আর একটি বিরোধী ব্যাপক প্লাটফর্ম গড়তে পেরেছে, এই উদ্দীপনায় সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ বেশ কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আর্থিক সাহায্য দিয়ে পাশে দাঁড়ায় এবং সমাজের বিভিন্ন কোন থেকে অসংখ্য সহযোগিতার হাত এগিয়ে আসে। জাতীয় দৈনিকগুলোর উচ্চকন্ঠ প্রচারে দেশব্যাপি সাড়া প’ড়ে যায়। অনুষ্ঠানটি ছিল অভাবনীয়।

দুই দিন ধ’রে চার শতাধিক কবি বিক্ষুব্ধ কণ্ঠে কবিতা পড়ে। সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে অধিকাংশ কবির কবিতা গালাগালিপূর্ন হয়ে ওঠে এবং উপস্থিত বিপুল সংখ্যক (হাজার দশেক) শ্রোতা প্রচন্ড হাততালি দিয়ে গালাগালিগুলো অভিনন্দিত করে। স্বৈরশাসনের প্রতি সাধারন মানুষ যে কী পরিমান বিরক্ত এবং ক্ষিপ্ত তা আপাত- নিরীহ এই ছোট ঘটনাটির মধ্য দিয়েও প্রকাশ পায়। উৎসবের ক’দিন পর কবিতা উৎসবকে পরিষদে রূপান্তরিত কোরে একটি সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করানো হয়।

দ্বিতীয় উৎসবেও একই রকম জমজমাট অবস্থা এবং কবিতায় গালিগালাজের প্রাধান্য অব্যাহত থাকে। তবে এবার প্রাথমিক পর্যায়ের কয়েকজন উদ্যোক্তা তরুনকে স’রে যেতে দেখা যায়। অনুষ্ঠানমঞ্চে সংগঠনের ভেতরকার স্বৈরাচারের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়।

তৃতীয় উৎসব একই চাকচিক্য এবং চরিত্রে উদ্যাপিত হয়। এবার পরিষদের দু’একজন কর্মকর্তার ভেতরকার বিরোধ উৎসবমঞ্চে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। উৎসব শেষে বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটে।

চতুর্থ উৎসবের আগে পরিষদের অভ্যন্তরীন বিরোধ, ক্ষোভ এবং সংকট প্রবল আকার ধারন করে। তবে শেষে সমস্যাটি ধামাচাপা দিয়ে উৎসব সুষ্ঠুভাবেই শেষ হয় এবং কবিতার নামে অনুষ্ঠানে গালিগালাজ উচ্চারন বন্ধ করা হয়। চারটি উৎসব ছাড়া কবিতা পরিষদ আর যে সব কর্মকান্ডে যুক্ত হয়েছে তা হলো বর্ষবরন, রবীন্দ্র- নজরুলজয়ন্তী, স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবস উদযাপন। এছাড়াও সভাপতির চাকরিচ্যুতি বিষয়ক আন্দোলন, যুগ্ম-সম্পাদকের কারাবরন (যদিও অন্য অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়) বিষয়ক প্রচারনা এবং কিছু মিছিল বা জমায়েতে অংশগ্রহন। উৎসব ছাড়া বাকি সব অনুষ্ঠানে কবি হিশেবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের অংশগ্রহন ছিলো একেবারেই সামান্য। এ সব অনুষ্ঠানে তরুনরাই অগ্রগামী ছিলো।

ইতিমধ্যে সারাদেশে পরিষদের শতাধিক জেলা বা আঞ্চলিক শাখা পরিষদ গঠিত হয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে উৎসব আয়োজন করছে এবং কেন্দ্র থেকে নির্বাহী পরিষদের সদস্যদের কেউ কেউ সেখানে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন এবং কবিতা পাঠ করতে যাচ্ছে।

প্রতি উৎসবে যে তিন বা চার শতাধিক কবিতা পঠিত হয় তার শতকরা দশটি কবিতাকেও কাব্যবিচারের যে-কোনো একটি মাত্র দিক বিবেচনা কোরেও কবিতা বলা যাবে না। অথচ এই কবিতাগুলো জাতীয় কবিতামঞ্চে পাঠ করা হচ্ছে। উপস্থিত হাজার হাজার শ্রোতা এই জাতীয় কবিতা শ্রবন করছে। জাতীয় কবিতা পরিষদের সদস্য না- হওয়ার কারনে মফস্বলের, এমন কি ঢাকার অনেক প্রকৃত কবি এই জাতীয় কর্মকান্ড থেকে বাদ প’ড়ে যাচ্ছে।

পক্ষান্তরে কাব্যক্ষমতাহীন অথচ সাংগঠনিক ক্ষমতাসম্পন্ন কবি-যশোপ্রার্থী কিছু তরুন বা বৃদ্ধ পরিষদে অন্তর্ভুক্ত থাকার কারনে কবি হিশেবে পরিচিতি পাচ্ছে। নির্বাহী পরিষদে এমন অনেকেই আছে যাদের কাব্যক্ষমতা ইতিমধ্যে কোথাও কোনোভাবেই পরীক্ষিত বা প্রমানিত নয়। সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগের কারনে তারা পরিষদে স্থান পেয়েছে। মফস্বলের আঞ্চলিক উৎসবগুলোতে এদেরই যাতায়াত বেশি। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ার কারনে সেখানে তারা অত্যন্ত সমাদরে গৃহীত হয় এবং সম্মানিত হয়। যথার্থ ব্যক্তিরা কি সম্মানিত হচ্ছে?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *